[পর্ব-১]
সত্তুর সালে পাকিস্তানের শেষ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয়েও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে তালবাহানা চলছিল ভুট্টো ও পাকিস্তানী সামরিক জান্তার সম্মিলিত কূটচালে। এই সময়ে বাঙালীর আশা আকাঙ্খার প্রতীক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এক পরিণত নেতৃত্ব শক্তিতে আবির্ভূত হন। আজকের দিনে সেসব তথ্য ও ঘটনাবলীর স্বাক্ষ্য প্রমাণাদি পর্যালোচনা করলে অবিশ্বাস্য নেতৃত্বের আধিকারী বঙ্গবন্ধুর যে পরিচয় আমরা পাই, পৃথিবীর ইতিহাসে তা বিরল। উপমহাদেশের রাজনীতিতে এমন শক্তিধর নেতার আর দ্বিতীয় কোন উদাহরণ নেই যিনি সাড়ে সাত কোটি মানুষের একটি দেশের সম্পুর্ণ নেতৃত্ব করায়ত্ত করে নিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালের জানুয়ারী থেকে মার্চের মধ্যেই এই শক্তিধর মানুষটির পরিচয় পেয়েছিল পাকিস্তান সরকার থেকে শুরু করে গোটা পৃথিবী, এমনকি সুদূর মার্কিন মুল্লুকের পররাষ্ট্র বিষয়ক নীতি নির্ধারক পাকিস্তান-গুরু হেনরী কিসিঞ্জারও।
১৯৭১ সালের জানুয়ারী মাসের ৩ তারিখে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে রেসকোর্স ময়দানে একটি বিরল ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত ১৫১ জন জাতীয় পরিষদ সদস্য এবং ২৬৮ জন প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য ৬ দফা ও ১১ দফা বাস্তবায়নের সংকল্প ঘোষণা করে শপথ গ্রহণ করেন। ৪ জানুয়ারী তারিখের ইত্তেফাক পত্রিকা এই তথ্য জানিয়ে লিখেছে, “সম্ভবতঃ পার্লামেন্টারী গণতন্ত্রের ইতিহাসে এই ধরণের গণশপথ গ্রহণ এই প্রথম”। ইত্তেফাক পত্রিকা আরও লিখেছে, “শেখ মুজিবের ডানপার্শ্বে জাতীয় পরিষদের সদস্যগণ এবং বাম পার্শ্বে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যগণ দাড়াইয়া শপথ গ্রহণ করেন। প্রত্যেকের বাম হাতে শপথনামা এবং ডান হাত শপথের ভঙ্গীতে উদিত ছিল। নেতার সঙ্গে সঙ্গে সকল সদস্য শপথনামা পাঠ করেন। শপথ পাঠ করার পূর্বে শেখ মুজিব ঘোষণা করেন জনপ্রতিনিধিগণ জনগণের সামনে জনসাধারণকে স্বাক্ষী রাখিয়া শপথ গ্রহণ করিতেছেন। শপথ গ্রহণ শেষ হইলে বিশাল জনতা উল্লাসে ফাটিয়া পড়ে”।
বঙ্গবন্ধুর এই দৃঢ় নেতৃত্বগুণই তাঁকে মার্চের অবশ্যম্ভাবী রাষ্ট্রনায়কের ভূমিকায় পৌঁছে দিয়েছিল। বিশেষ করে নভেম্বর নির্বাচনের পরে কুচক্র পাকিস্তানী নেতাদের ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় ও ক্ষমতা হস্তান্তরের তালবাহানার কারণে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত আন্দোলন সংগ্রামে বঙ্গবন্ধু পরিমিতিবোধে অনবদ্য এক ধৈর্যশীল ও উদ্ভাবনী নেতৃত্বের পরিচয় দেন। উপরোল্লিখিত শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান সেসবের অন্যতম উদাহরণ।
ইতিহাস স্বাক্ষ্য দেয়, ১৯৭০-৭১ সালে এক শ্রেণীর সন্ত্রাসী তথাকথিত বাম রাজনীতিক দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করছিল, যে কারণে একই সাথে পাকিস্তানী চক্র এই অপরাজনীতির প্রভাবের কথা সুকৌশলে প্রচার করে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন স্বাধীকার আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ খুঁজছিল। ৩ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু এ সম্পর্কে তাঁর অবস্থান সুস্পষ্ট করেন যা ৪ তারিখের ইত্তেফাক পত্রিকায় ছাপা হয়। বঙ্গবন্ধু বলেন, “ইউনিয়নে ইউনিয়নে, মহল্লায় মহল্লায় আওয়ামী লীগ গঠন করুন এবং রাতের অন্ধকারে যারা ছোরা মারে তাদের খতম করার জন্যে প্রস্তুত হোন। রাতের অন্ধকারে যারা মানুষ হত্যা করে, সেইসব বিপ্লবীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, চোরের মত রাতের অন্ধকারে মানুষ হত্যা করিয়া বিপ্লব হয়না। বিপ্লব চোরের কাজ নয়”। ইত্তেফাক আরও লিখেছে, “সন্ত্রাসবাদী ও সন্ত্রাসবাদের দালালদের খতম করার জন্যে প্রত্যেক নাগরিককে বাঁশের এবং সুন্দরী কাঠের লাঠি বানাইবার পরামর্শ দিয়া শেখ সাহেব বলেন, প্রত্যেকের হাতে আমি হয় বাঁশের নয় সুন্দরী কাঠের লাঠি দেখিতে চাই। কিন্তু খবরদার আমার হুকুম ছাড়া সেগুলি ব্যবহার করবেন না”।
জানুয়ারী থেকে মার্চের সময়কালের পত্র-পত্রিকাগুলোয় অনুসন্ধান করলে দেখা যায় বঙ্গবন্ধু খুবই পরিশীলিত ধাপে তাঁর চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাবার কাজ করছেন। একই সময় পাকিস্তানের জুলফিকার আলী ভুট্টো নানারকম কূট কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন, পত্র-পত্রিকায় মন্তব্য-বিবৃতি পাঠাচ্ছেন যাতে জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা আওয়ামী লীগ ও তার অসিংবাদিত নেতা শেখ মুজিবর রহমানের কাছে কোনভাবেই ক্ষমতা হস্তান্তর না করা হয়। ভূট্টোর এসব উস্কানীমূলক বক্তৃতা–বিবৃতির জবাবে বঙ্গবন্ধু ধীরস্থির, পরিণত ও শক্ত অবস্থান জানান দিয়ে পাল্টা বক্তব্য দিতেন। এরকম একটি বক্তব্য জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারী পার্টিসমূহের যৌথ অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু দেন যার সারাংশ ইত্তেফাক পত্রিকায় ছাপা হয় ১৬ ফেব্রুয়ারী- “জনগণের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর ব্যবস্থা বানচাল করার উদ্দেশ্যে তৎপর গণতান্ত্রিক রায় নস্যাৎকারীদের প্রতি আগুন লইয়া খেলা হইতে বিরত থাকার জন্য তিনি কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, আমার ও ৬-দফার মোকাবিলার জন্য সমগ্র পশ্চিম পাকিস্তানকে ঐক্যবদ্ধ করার চক্রান্ত চলছে...সাতকোটি বাঙ্গালীর বুকের উপর মেশিনগান বসিয়েও কেহ ঠেকাতে পারবে না”। ১৮ ফেব্রুয়ারী মর্নিং নিউজ পত্রিকাও বঙ্গবন্ধুর একটি বক্তব্য প্রচার করে যার সংবাদ শিরোনাম ছিল, “বাংলাদেশের মানুষের আন্দোলনকে কোন শক্তিই থামাতে পারবে না বলে শেখ মুজিবের ঘোষণা”।
একই সময়কালে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠনগুলো ৬-দফা ও স্বায়ত্তশাসন দেয়া-নেয়া নিয়ে নানারকম বক্তব্য-বিবৃতি প্রচার করছিল। গ্রহণযোগ্য প্রায় সকল যুক্তিই বঙ্গবন্ধু আমলে নেন ও তার বক্তব্যের মাধ্যমে সেগুলো স্পষ্ট করে ব্যাখ্যা করেন। ফলে বাঙ্গালীর মুক্তির যে অভীষ্ট লক্ষ্য অনিবার্যভাবেই একটি সম্মিলিত ও সমন্বিত আয়োজনে স্বাধীনতা সংগ্রামের উদ্দেশ্য অর্জনের দিকে ধাবিত হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, ২৫ ফেব্রুয়ারী তারিখে কমিউনিস্ট পার্টির কিছু প্রস্তাব আলোচনায় আসে যেখানে সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে পার্টি সুস্পষ্টভাবে এই মর্মে উপসংহারে আসে যে, “এই সংগ্রাম স্বাধীন জাতীয় গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য সন্মুখে রাখিয়া আমাদের প্রচেষ্টা হইবে এই সংগ্রামকে সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও একচেটিয়া পুঁজির তথা দেশি-বিদেশী প্রতিক্রিয়াশীলদের চক্রান্তের বিরুদ্ধে পরিচালিত করা”।
এরকম নানা মত ও পরামর্শ, ভুট্টোর উদ্বেগ, অপপ্রচার ও হুমকীর জবাব দেন বঙ্গবন্ধু ২৮ ফেব্রুয়ারী ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের সম্বর্ধনা সভায় যার বিস্তারিত ছাপা হয় পরদিন ১ মার্চ তারিখে ইংরেজী ডন পত্রিকায়। চলমান সংগ্রামের মাধ্যমে ছয় দফা কর্মসূচী অর্জনের লক্ষ্যে তিনি বিশদ বিশ্লেষণ করে এই অনুষ্ঠানে একটি দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন। ইতিপূর্বে ভুট্টোর দেয়া বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীকার আন্দোলনকে ‘সংখ্যাগরিষ্ঠের একনায়কতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম হিসেবে ব্যাঙ্গ করার প্রত্যুত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেন যে, “যারা এসব কথা বলে তারা আসলে সঙ্খ্যালগিষ্ঠের একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। এসব মন্তব্য শুধু আপত্তিকরই নয়, দেশের ভবিষ্যতের জন্যেও অনিশ্চয়তা তৈরি করছে”। বঙ্গবন্ধু সতর্ক করে বলেন, “যারা আওয়ামী লীগের সরকার গঠনে বাধা সৃষ্টি করছে ও গণতন্ত্রের জন্যে হুমকি হয় এমন কাজ করছেন তার ফলাফল এমন কিছু হতে পারে যার জন্যে আমরা দায়ী থাকবো না”। এই আলোচনায় তিনি তাঁর সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির চিন্তা বিশ্লেষণ করে নতুন সরকারের জন্যে তাঁর এই অর্থনৈতিক দর্শনকে কোন বিপ্লবের মাধ্যমে নয় ক্রম বিবর্তনের মাধ্যমে বা ধাপে ধাপে সে পর্যায়ে উন্নীত করার স্বপ্ন ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি হবে জনকেন্দ্রিক, যাতে সাধারণ মানুষ, শ্রমিক, কৃষক অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার পায়”। একই আলোচনায় তিনি ২৩ বছরের পাকিস্তানী নিষ্পেষণের বিবরণ দিয়ে বলেন, “এই ২৩টি বছর গেছে আমাদের প্রতারণা, হতাশা ও দুঃখের মধ্যে। আমরা এই নিস্পেষণ থেকে মুক্তি পেতে ও বাংলাদেশের মানুষকে একটি ভালো জীবন উপহার দিতে আমাদের সংগ্রাম আব্যাহত রেখেছি”। এই ভাষণের শেষের দিকে এসে বঙ্গবন্ধু ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানের একটি অনুপম ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, “এই শ্লোগান কোন রাজনৈতিক শ্লোগান নয়, এই শ্লোগান বাংলাদেশের স্বাধিকার অর্জন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির শ্লোগান। এই শ্লোগান আমাদের বেঁচে থাকার অধিকার ও সাংস্কৃতিক মুক্তিরও শ্লোগান”।
আমাদের প্রাক মুক্তিসংগ্রামের চূড়ান্ত মহেন্দ্রক্ষণ এসে উপস্থিত হয় ৭ই মার্চ যেদিন বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দিয়ে বাঙালী জাতিকে দিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন। কিন্তু জানুয়ারী ১৯৭১ থেকে ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক সভার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যাদি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ৭০ সালের নির্বাচনের পরে আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা না দিতে যেসব হঠকারী কাজকর্ম পাকিস্তান সরকার ও ভুট্টো মিলে করেছে তাতে বঙ্গবন্ধু অসীম ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর বিচক্ষণ বক্তব্য, ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ হঠকারী ভুট্টোর পক্ষে হজম করা কঠিন ছিল যে কারণে তাদের ক্ষমতার মোহ, ক্ষোভ ও ব্যাক্তিগত পরাজয়ের অস্থিরতা মিলে পুরো বাঙালী জাতিকে ধ্বংস করার প্রবৃত্তির জন্ম দেয়। লোপ পায় মানবিকতা। তাদের জিঘাংসার কাছে বলী হতে হয় ত্রিশ লক্ষ বাঙ্গালীর জীবন ও দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রম। কিন্তু ইতিহাস তাদের পরাজিত করে। বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামই শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়।
যেসব তথ্যাদি এখন পাওয়া যায় সেগুলো নিয়ে বিস্তর গবেষণার
সুযোগ আছে। যারা আগ্রহী বিশেহ করে তরুণ সমাজ তাদের অবশ্যই টেবিল ঘুরিয়ে বসতে হবে।
এই বাংলাদেশটা এমনি এমনি হয়নি বা “কারও দানে পাওয়া নয়”। এই বাংলাদেশ এমনই এক দেশ
যে দেশে শেখ মুজিবর রহমান নামে এক পরাক্রমশালী ব্যাক্তিত্বের জন্ম হয়েছে নিতান্তই
এক অজ পাড়া গাঁয়ে যিনি পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র নেতা- শুধুমাত্র সংগ্রামের জীবনকেই
বেছে নিয়েছিলেন একটি দেশের মানুষকে স্বাধীনতার আনন্দ এনে দিতে।
রেজা সেলিম, পরিচালক, আমাদের গ্রাম গবেষণা প্রকল্প
ই-মেইলঃ rezasalimag@gmail.com
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:০৬ পিএম, ১৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।
তবুও, অনেকেই বলছেন বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যাপকভাবে বয়কট করা হয়েছে। এর মূল কাওন হিসেবে তারা বলছেন, বিরোধী দলে নির্বাচন বয়কট এবং বিরোধীদের বয়কটের আহ্বানের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে সাধারণ জনগণের ভোট বর্জন।
অংশগ্রহণ নাকি বয়কট?
দেশটির প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং তার মিত্ররা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও সব বিরোধী দল অবশ্য তাদের অনুসরণ করেনি। নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সাতাশটি দল প্রার্থী দিয়েছিল। এছাড়া প্রায় ৩০০ আসনের বিপরীতে প্রায় ১৯০০ স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। তাই নির্বাচনে বিএনপির অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও, একাধিক নির্বাচনী এলাকার ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হয়েছে এবং ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করেছে।
নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৪১.৮ শতাংশ। গত নির্বাচনের তুলনায় এই সংখ্যা কম হলেও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সংখ্যাকে কম বলার সুযোগ নেই। অনেকে এটিকে বিরোধী দলের নির্বাচন বয়কট জনমনে প্রতিফলিত হয়েছে বলে দেখছে। বিরোধীদের বয়কট নিঃসন্দেহে ভোটার উপস্থিতিতে প্রভাব ফেলেলেও, কম ভোটার উপস্থিতি মানেই জনগণ ভোটকে প্রত্যাখ্যান করেছে এওনটি ভাবার কোন সুযোগ নেই। মূলত বিএনপির বিভিন্ন নির্বাচন বিরোধী কর্মসূচী, বিক্ষোভ, সমাবেশ, গাড়িতে ট্রেনে বাসে অগ্নিসংযোগ, ভোটের আগের দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার হরতাল-অবরোধের ডাক দেশের পরিস্থিতিকে অস্থির করে তোলে। যার ফলে নিজদের নিরাপত্তার জন্যই অনেক ভোটার নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে বাড়িতে থাকতে বাধ্য হয়েছে।
তবে যে সব নির্বাচনী এলাকায় একাধিক জনপ্রিয় প্রার্থী নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থিতি ছিল ৬০ শতাংশের বেশি। আবার যেস এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা কম ছিল সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থতি ছিল কম। অর্থাৎ ভোটাররা বিএনপির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে নির্বাচন বর্জন করেনি; প্রতিদ্বন্দ্বিতাই মূলত ভোটার উপস্থিতিকে প্রভাবিত করেছে।
তবে নির্বাচন কমিশনের রিপোর্ট করা ভোটারদের পরিসংখ্যান নিয়ে বিভ্রান্তি রয়ে গেছে। দুপুরে নির্বাচন কমিশনের করা প্রেস ব্রিফিংয়ে ভোটার উপস্থিতি মাত্র ২৭ শতাংশ ঘোষণা করা হলেও, শেষে ৪১.৮ শতাংশ চূড়ান্ত ভোটার উপস্থিত ঘোষণা করা হয়। এর কারণ হিসেবে নির্বাচন কমিশন জানায়, দুপুরের সংখ্যাটি প্রকৃত সময়ে ছিল না। যেহেতু বাংলাদেশে ম্যানুয়াল পেপার ব্যালট সিস্টেম ব্যবহার করা হয় যেখানে ভোটগুলি হাতে গণনা করা হয় এবং গ্রামীণ এলাকা থেকে ফলাফল প্রেরণে কয়েক ঘন্টা পিছিয়ে ছিল। যা দুপুরের ভোটার উপস্থতি এবং সর্বশেষ ভোটার উপস্থিতির মধ্যে ব্যবধান ব্যাখ্যা করে। সেক্ষেত্রে মোট ভোটের ১৪ শতাংশ শুধু শেষ সময়ে দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ সত্য নয়।
নির্বাচন কমিশন হয়ত সঠিক। কিন্তু যেহেতু সন্দেহের তীর ছোড়া হয়েছে সেহেতু, নির্বাচন কমিশন সমস্ত ভোটকেন্দ্রের প্রতি ঘণ্টায় ভোট গণনার বিস্তারিত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে সন্দেহের সমাধান করতে পারে। এ ধরনের স্বচ্ছতা ভোটদানের প্রশ্নে স্পষ্টতা প্রদান করবে এবং যেকারো বিভ্রান্তি দূর করতে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে কাজ করবে।
বাংলাদেশ কি একদলীয় রাষ্ট্র?
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আরেকটি নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর অনেকেই বাংলাদেশ একটি একদলীয় রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন। ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসনে এবং আওয়ামী লীগের অনুগত স্বতন্ত্ররা আরও ৬২টি আসনে জয়লাভ করে। যার ফলে সংসদে ৯৫ শতাংশ নির্বাচিত সংসদ সদস্যই আওয়ামী লীগের পক্ষে এবং সংসদে কোন অর্থবহ বিরোধী দলের অস্তিত্ব নেই।
তবে বিষয়টি এত সরল নয়। প্রথমত, সংসদের স্বতন্ত্র সদস্যদের আওয়ামী লীগের ল্যাপডগ বলে উপেক্ষা করা বাংলাদেশের রাজ্নৈতিক প্রেক্ষাপটে কতটা যৌক্তিক সে প্রশ্ন থেকে যায়। কারণ প্রত্যেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লী প্রার্থীর সাথে তীব্র নির্বাচনী লড়াইয়ের পরই বিজয়ী হয়েছেন। তারা সংসদে তাদের ভোট এবং তাদের বক্তৃতায়র পুরো স্বাধীনতা ভোগ করবেন। বাংলাদেশের সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্যদের তাদের দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী কোন দলের অধীনে না থাকায় তারা এই বিধিনিষেধের বাইরে। এই প্রেক্ষাপটে, শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকা সত্ত্বেও, নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আ.লীগ প্রশংসার যোগ্য। আ.লীগ দলের সিনিয়র ব্যক্তিদের স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি দিয়ে, অবশ্যই সম্ভাব্য অন্তর্দলীয় বিরোধের ঝুঁকিতে পড়েছে। তবুও, এটি ভোটারদের প্রকৃত নির্বাচনী বিকল্প প্রদান এবং সংসদে মত বৈচিত্র্যকে প্রসারিত করেছে।
উপরন্তু, একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি অপ্রতিরোধ্য সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা একটি দল একদলীয় রাষ্ট্রের সমতুল্য নয়। বাংলাদেশকে একদলীয় রাষ্ট্র না বানিয়ে অতীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একই রকমের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। একইভাবে ভারত ও জাপান বহুদলীয় গণতন্ত্র না হারিয়ে একদলীয় আধিপত্য অর্জন করেছে। মূল প্রশ্ন হল আওয়ামী লীগ নিজে এই অতি সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদের আয়োজন করেছিল নাকি বিএনপির নির্বাচন বয়কটের কারণে এটি অনেকটা অনিবার্য ছিল।
বিএনপি যদিও যুক্তি দেবে—যে কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কখনোই ছিল না এবং ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের পর বিএনপি নেতাদের দমন-পীড়ন ও গণগ্রেপ্তার সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ এবং তাদের অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করেছে। তবে, ২৮ অক্টোবরের আগেও বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রত্যাখ্যান করে ইতিমধ্যেই নির্বাচনে নিজেদের অপ্রাসঙ্গিক করে তুলেছিল। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন কমিশনের ডাকা একটি নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার জন্যই ২৮ অক্টোবরের বিক্ষোভ করেছিল দলটি। ফলে সেই সময়ে কমিশনের কর্তৃত্বের অধীনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, অরাজকতা দমনে এবং নির্বাচনের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে শক্তি প্রয়োগ করেছিল। এটি কোনভাবে নির্বাচন বর্জনের কারণ হতে পারে। বলপ্রয়োগের অসামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবহার আলাদা মূল্যায়নের প্রয়োজন, তবে এটি নির্বাচনী নয় বরং আইন-শৃঙ্খলার চোখে দেখাই উত্তম।
দায়বদ্ধতা
এমন উদ্বেগজনক দাবি করার পরিবর্তে, পর্যবেক্ষকদের জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল যে প্রাথমিক বিরোধী দল বিএনপি কেন মাঠ হারাল। সরকার যেমন শক্তিপ্রয়োগের জন্য যাচাই-বাছাইয়ের পরোয়ানা দেয়, তেমনি বিএনপিকে তার গণতান্ত্রিক দায়িত্ব পালনের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
১৭ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী একটি প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির দায়িত্ব ছিল সংসদে ভোটারদের আওয়াজ দেওয়া। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না এমন অনুমানের উপর ভিত্তি করে নির্বাচন বর্জন করে, তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং জনগণের অধিকারকে উপেক্ষা করেছে। তর্কের খাতিরে আ. লীগের অধীনে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না ধরে নিলেও, বিএনপি’র তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত মে ২০১১ সালে এটিকে অসাংবিধানিক রায় দিয়েছিল। তাছাড়া, পূর্ববর্তী তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা তার ম্যান্ডেটকে অতিক্রম করেছিল, জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করেছিল এবং দলীয় নেতাদের বন্দী করেছিল রাজনীতিকে বাধাগ্রস্থ করেছিল।
নির্বাচন বয়কট শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সুফল এনে দিয়েছে। বিএনপি নির্বাচনের মাধ্যমে জনসাধারণের ম্যান্ডেট অনুসরণ করার চেয়ে তত্ত্বাবধায়ক শাসনের মধ্যে একটি সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরির উচ্চাকাঙ্ক্ষা করেছিল। গণতন্ত্রের প্রতি ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গীকার নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও মূলত বিএনপি’র এই আত্ম বিধ্বংসী এবং অপরিপক্ক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই আওয়ামী লীগের ক্ষমতার পথ সুগম করেছে।
বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যাপক বয়কট সর্বজন গৃহীত
মন্তব্য করুন
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর
‘এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ।/তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/ বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক/যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে-যাওয়া গীতি/ অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক/ মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,/ অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’ অর্থাৎ ১৪৩১ বঙ্গাব্দে পুরাতন স্মৃতি মুছে যাক, দূরে চলে যাক ভুলে যাওয়া স্মৃতি, অশ্রুঝরার দিনও সুদূরে মিলাক। আমাদের জীবন থেকে বিগত বছরের ব্যর্থতার গ্লানি ও জরা মুছে যাক, ঘুচে যাক; নববর্ষে পুরাতন বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক। রমজান ও ঈদের পর দেশের মানুষের জীবনে আরো একটি উৎসবের ব্যস্ততা নতুন বছরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় উদ্ভাসিত।ফিলিস্তিনবাসীর উপর হামলা আর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে এর মধ্যে মারা গেছেন অসংখ্য মানুষ।তবু মৃত্যুর মিছিলে জীবনের গান ফুল হয়ে ফুটেছে। যুদ্ধের সংকট আমাদের পরাস্ত করতে পারেনি কারণ পৃথিবীর মৃত্যু উপত্যকা পেরিয়ে এদেশে বৈশাখ এসেছে নতুন সাজে।
সমাজ, রাষ্ট্রে নেতার ছড়াছড়ি। নেতাদের পোস্টার, ফেস্টুনে ভরে গেছে শহর, গ্রাম। তবে এদের বেশিরভাগই সুবিধাভোগী, অর্থলোভী। এদের মধ্যে আদর্শের লেশমাত্র নেই। সততা, দেশপ্রেম এবং জনগণের প্রতি ন্যুনতম দায়বদ্ধতা নেই। এদের কোনো পেশা নেই। রাজনীতি কে এরা অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। নেতা নয়, বরং এদেরকে নির্দ্বিধায় চাঁদাবাজ, দখলদার, মাদক ব্যাবসায়ী বলা যায়। রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে এরা হেন অপকর্ম নেই যা করে না। এদের অনেকে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে দখল এবং মাদক ব্যাবসার মত জঘন্য কাজের সাথে সম্পৃক্ত। এসব আদর্শহীন, অসৎ, সুবিধাভোগী, অর্থলোভী নেতাদের ভীড়ে সৎ, দেশপ্রেমিক, আদর্শিক নেতাদের দেখা পাওয়া দুষ্কর। সমাজ, রাষ্ট্রে এমন নেতাও আছেন যারা দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য তাদের সর্বস্ব উজাড় করে দেন। ষাট, সত্তর, আশি এবং নব্বইয়ের দশকে এমন নেতার সংখ্যা ছিল বেশি। বর্তমানে হাজারো অসৎ নেতার মধ্যে এমন সৎ, আদর্শিক, দেশপ্রেমিক নেতা খুঁজে পেতে মাইক্রোস্কোপের প্রয়োজন হয়। দিন দিন যেভাবে রাজনীতিতে অসৎ নেতাদের দাপট বাড়ছে, আগামিতে প্রকৃত নেতাদের খুঁজতে হয়ত ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ প্রয়োজন হবে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।