[পর্ব-২]
সাতই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের পরে বাংলাদেশ ভূখণ্ডের জনগণ ব্যাপকভাবে আন্দোলিত হয় ও দৃশ্যত দেশের নিয়ন্ত্রণভার বঙ্গবন্ধুর হাতেই এসে পড়ে। সমমনা আন্দোলনরত রাজনৈতিক সংগঠনগুলো একে একে বঙ্গবন্ধুর আহবানের মৌলিক তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে থাকে ও স্বাধীকার অর্জনের দিকে নিজেদের অবস্থান প্রকাশ্য ও স্পষ্ট করতে থাকে। ৮ মার্চ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদ সভাশেষে কিছু যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত প্রস্তাবাকারে পেশ করে জানায়, “আগামী কাউন্সিল অধিবেশন পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের পরিবর্তে শুধুমাত্র ‘ছাত্রলীগ’ নাম ব্যবহৃত হইবে”। এটি ছিল ছাত্রলীগের ইতিহাসের এক গৌরবময় অধ্যায়। একই প্রস্তাবে ছাত্রলীগ আরও জানায়, “প্রত্যেক জেলা শহর হতে প্রাথমিক শাখা পর্যন্ত শাখার সভাপতিকে আহ্বায়ক, সাধারণ সম্পাদককে সম্পাদক করিয়া এবং ৯ জন সদস্য সর্বমোট ১১ জনকে নিয়া ‘স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করার প্রস্তাব করিতেছে। সংগ্রাম পরিষদ গঠনের ব্যাপারে কলেজ ছাত্র সংসদের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করার নির্দেশ প্রদান করিতেছে...বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সদস্যদের উপর দায়িত্ব অর্পণ করিতেছে”। প্রস্তাবের শেষে উল্লেখ করা হয়, “দেশের সকল প্রেক্ষাগৃহে পাকিস্তানী পতাকা প্রদর্শন, পাকিস্তানী সঙ্গীত বাজানো এবং উর্দু বই প্রদর্শন বন্ধ রাখার ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতেছে এবং বঙ্গবন্ধু নির্দেশিত সিনেমা করও প্রদান না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতেছে”।
৯ মার্চ পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি একটি বিবৃতিতে দেয় যার শিরোনাম ছিল, “শত্রু বাহিনীকে মোকাবেলায় প্রস্তুত হউন, গণস্বার্থে স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম অব্যাহত রাখুন”। কমিউনিস্ট পার্টি তার অবস্থান পরিষ্কার করে এভাবে যে, “বাংলাদেশের জনগণ আজ গণতন্ত্র ও নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে এখানে একটা পৃথক ও স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র কায়েম করিতে বদ্ধপরিকর হইয়াছেন ও এই জন্য এক গৌরবময় সংগ্রাম চালাইতেছেন...পূর্ব বাংলার জনগণ আজ অনেক ঘটনার ঘাত-প্রতিঘাতের ভিতর দিয়া পূর্ব বাংলায় একটি পৃথক ও স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের যে দাবী উত্থাপন করিয়াছেন, আমরা উহাকে ন্যায্য মনে করি, তাই পূর্ব বাংলার জনগণের বর্তমান সংগ্রামে আমরাও সর্বশক্তি লইয়া শরিক হইয়াছি”। একই তারিখে (৯ মার্চ) দৈনিক পাকিস্তান একটি সম্পাদকীয় অভিমত প্রকাশ করে যেখানে উল্লেখ করা হয়, “গত রবিবার রমনা রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়াছেন তাহাতে প্রতিফলিত হইয়াছে মুক্তিপাগল প্রতিটি বাঙ্গালীর মনোভাব”। এখানে বর্তমানকালের সংশয়ী সমাজের জন্য আবশ্যিক তথ্য হলো, ৭ মার্চের ভাষণের দুইদিনের মধ্যেই তখনকার সংবাদমাধ্যম এই ভাষণকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে আখ্যায়িত করেছিল, সেসব সংশয়ী বেত্তাবর্গের জন্যে ইতিহাসের এইসব তথ্যগুলোয় একবার চোখ ঘুরিয়ে নেয়া খুবই দরকার ছিল।
৯ মার্চ তারিখেই মওলানা ভাসানী একটি প্রচার-পত্রে লিখেন, “আজ আমি সাত কোটি পূর্ব বাংলার সাধারণ মানুষের কাছে এই জরুরী আহ্বান জানাইতে বাধ্য হচ্ছি যে, আপনারা দল, মত, ধর্ম, ও শ্রেণী নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষ একত্রে এবং একযোগে একটি সাধারণ কর্মসূচী গ্রহণ করুন, যার মূল লক্ষ্য হবে, ২৩ বৎসরের অমানুষিক এবং শোষণকারী শাসক গোষ্ঠীর করাল কবল থেকে পূর্ব বাংলাকে সম্পূর্ণ চূড়ান্তভাবে স্বাধীন ও সার্বভৌম করা”। সেদিন পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় ন্যাপের জনসভা। ন্যাপ প্রধান মওলানা ভাসানী ১৪ দফা কর্মসূচী ঘোষণা করেন যার অন্যতম ছিল, “শেখ মুজিবুর রহমান খাজনা, ট্যাক্স বন্ধের যে আহ্বান জানিয়েছেন তা যাতে সুষ্ঠুভাবে পালিত হয় তজ্জন্য সংগ্রাম পরিষদের মাধ্যমে লবণ শুল্ক, নগর শুল্ক, হাট-বাজারের তোলা, খাজনা, ইনকাম ট্যাক্স, কৃষি ট্যাক্সসহ সমুদয় ট্যাক্স প্রদান সুসংগঠিতভাবে বন্ধ রাখা”।
ওইদিন বিকেলে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ একটি ব্যাখ্যাপত্র প্রদান করেন যাতে কখন কোন প্রতিষ্ঠান খোলা বা বন্ধ থাকবে ও জরুরী সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো কেমন করে জনস্বার্থে দায়িত্ব পালন করবে সেসবের সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়।
১০ মার্চ বিবিসি-র সূত্রে দৈনিক ইত্তেফাক একটি সংবাদ প্রকাশ করে যে, জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর নিয়োগ করা হয়েছে ও তিনি ৭ মার্চ ঢাকা এসে পৌঁছালেও ঢাকা হাইকোর্টের কোন বিচারপতি তার শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করতে সম্মত ছিলেন না। সংবাদটি ছিল এরকম যে, “আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশ অনুযায়ী ঢাকা হাইকোর্টে হরতালের দরুন কোন বিচারপতি পূর্ব পাকিস্তানের নবনিযুক্ত সামরিক গভর্ণরের শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করিতে সম্মত হইতেছেন না”। এখানে উল্লেখ্য যে, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি বি এ সিদ্দিকী ১৯৭১ সালের ৯ মার্চ গভর্নর হিসেবে জেনারেল টিক্কা খানের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।
এসময়ে ঢাকার সংবাদপত্রগুলো ভুট্টোর ভূমিকার সমালোচনায় মুখর ছিল। বাংলাদেশে রক্তপাতের জন্যে ভুট্টোকে দায়ী করে একাধিক সংবাদ ভাষ্য প্রচারিত হয়। মার্চের ১১ তারিখে তাজউদ্দীন আহমেদ আরও একটি বিবৃতিতে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সচল রাখতে বঙ্গবন্ধুর অতিরিক্ত কিছু নির্দেশনা সংবাদ-মাধ্যমে প্রেরণ করেন বিশেষ করে ব্যাঙ্কগুলো খোলা রাখার সময়সূচী ও লেনদেন সম্পর্কে বিশদ নির্দেশনা এই বিবৃতির মাধ্যমে দেয়া হয়। স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছিলো দেশের সমুদয় কর্মভার বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ও পরামর্শে পরিচালিত হচ্ছিলো। ফলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রামে দেশের জনগণের শক্তিকে সু্সংহত করে বঙ্গবন্ধু তাঁর লক্ষ্যে পৌঁছাবার কাজ প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছিলেন। এইসব আন্দোলিত আয়োজনে ভুট্টোও কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়েন যা করাচীতে ১৪ মার্চের জনসভায় দেয়া বক্তব্যে কিছুটা বুঝা যায়। পিপিআই সূত্রে দৈনিক পাকিস্তান ১৫ মার্চ এই মর্মে সংবাদ প্রকাশ করে যে, “পাকিস্তান পিপলস পার্টি প্রধান জনাব জেড এ ভুট্টো আজ পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে দুই সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরামর্শ দিয়েছেন।...তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ প্রধানের কাছে তার তারবার্তাটি পশ্চিম পাকিস্তানের জনসাধারণের পক্ষ থেকে একটি আবেদন”। বলা বাহুল্য, ভূট্টোর এই আবেদনে বঙ্গবন্ধু বা বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে কোন সাড়া দেয়া হয়নি। আন্দোলন আরও তীব্রতর হয় ও বস্তুত পুরো বাংলাদেশ ভুখন্ডের প্রশাসন বঙ্গবন্ধুর তর্জনীর নীচে সতঃস্ফূর্তভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের লক্ষ্য অর্জনে অবিচল থাকে।
সাতই মার্চের মহাআন্দোলনের ডাকের পরে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো ১৪ মার্চ বঙ্গবন্ধুর আহবানের বিস্তারিত কর্মসূচী ঘোষণা। এদিন তিনি সংবাদপত্রে একটি বিবৃতি পাঠান। সেখানে স্পষ্ট ভাষায় বঙ্গবন্ধু উল্লেখ করেন, “বাংলাদেশের মুক্তি স্পৃহাকে স্তব্ধ করা যাবে না। আমাদের কেউ পরাভূত করতে পারবে না, কারণ প্রয়োজনে আমাদের প্রত্যেকে মরণ বরণ করতে প্রস্তুত। জীবনের বিনিময়ে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের স্বাধীন দেশের মুক্ত মানুষ হিসেবে আর আত্ম-মর্যাদার সাথে বাস করার নিশ্চয়তা দিয়ে যেতে চাই। মুক্তির লক্ষ্যে না পৌঁছা পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম নবতর উদ্দীপনা নিয়ে অব্যাহত থাকবে। আমি জনগণকে যে কোন ত্যাগের জন্যে এবং সম্ভাব্য সবকিছু নিয়ে যে-কোন শক্তির মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে আবেদন জানাই”। এই বিবৃতির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু মোট ৩৫টি নির্দেশ জারি করেন যেসব নির্দেশমালা অনুসরণ করেই ঐতিহাসিক অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত থাকে।
১৫ মার্চ দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায় ছাপা এই কর্মসূচীর পূর্ণাংগ ভাষ্য পর্যালোচনা করলে একটি বিষয় স্পষ্ট হয় যে, দেশের দায়িত্ব তখন প্রকৃতই বঙ্গবন্ধুর হাতে। জাতীয় নির্বাচনে ম্যান্ডেট দেয়া ছাড়াও তাঁকেই দেশের আপামর জনসাধারণ মুক্তির ত্রাতা হিসেবে গণ্য করেছে ও স্বীকৃতি দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর অঙ্গুলী হেলনে সকল দিগন্ত একরৈখিক হতে বাধ্য হয়েছিল যা বাংলাদেশকে স্বাধীনতার সংগ্রামকে চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছে দিয়েছিল।
রেজা
সেলিম, পরিচালক, আমাদের গ্রাম গবেষণা প্রকল্প
ই-মেইলঃ
rezasalimag@gmail.com
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:২৬ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:০৬ পিএম, ১৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই।
বারো বছর আগের কথা। ডেভিড ক্যামেরুন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদিন তিনি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লেন। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর সাথে ছবি তুলতে গেলেন। বাঁধ সাধলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক। জীবাণু প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি ওই কাজটি করছিলেন। ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন সাথে সাথে। ক্ষমা চাইলেন এবং ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন।
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর