অগ্নিঝরা মার্চের তিন তারিখ (২০২৩) শুক্রবার জুমার নামাজের পর পঞ্চগড় শহরের
প্রাণকেন্দ্র চৌরঙ্গী মোড়ে সংঘর্ষ, সহিংসতা ও প্রাণনাশের যে
নিন্দনীয় ঘটনা ঘটেছে তা এদেশের নাগরিক
হিসেবে আহমদিয়া সম্প্রদায়দের মৌলিক অধিকারে আঘাতের নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। ৪ ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে
পঞ্চগড় শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় মুসল্লিরা
শহরে অবস্থিত আহমদিয়া মুসলিম জামাতের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িতে লুটপাট
এবং ট্রাফিক পুলিশ বক্স, ট্রাফিক অফিসে রক্ষিত বিপুলসংখ্যক মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী জুমার নামাজের পর বিভিন্ন মসজিদের
শত শত মুসল্লি পঞ্চগড়
শহরের শেরেবাংলা নগর পার্ক এলাকায় অবস্থান নিয়ে আহমদিয়া মুসলিম জামাতের সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে। সংঘর্ষের একপর্যায়ে মুসল্লিরা আহমদিয়া জামাত অনুসারীদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে
হামলা চালায়। মুসল্লিদের দাবি, ‘আহমদিয়া মুসলিম জামাতের অনুসারীরা গোলাম আহম্মদকে নবী মনে করে তাই তারা কাফের। ইসলামের নামে কোনো জলসার আয়োজন ধর্মপ্রাণ মুসল্লি মেনে নিতে পারে না। প্রশাসনকে এ ধরনের জলসা
বন্ধ করতে হবে।’
উপরের তথ্য থেকে পাঠকগণ লক্ষ্য করে থাকবেন নামাজ শেষে ওই সহিংসতার শুরু
হয় উগ্র মুসলিম জনগোষ্ঠীর দ্বারা। আহমদিয়া জামাত অনুসারীদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে
হামলা চালিয়ে লুটপাটও করে তারা।তাহলে ধর্মপ্রাণ মুসল্লি বলে আমরা যাদের চিহ্নিত করি তারা অবলীলায় অন্যের অধিকার হরণে লিপ্ত হয়-এটা দৃশ্যমান
হলো। এমনকি ধর্মবিশ্বাস লালন ও ধর্মপালনে মানুষের
যে মৌলিক অধিকার রয়েছে তার ওপর হস্তক্ষেপ ও মারমুখি আচরণ
করা হয়েছে নিরীহ সম্প্রদায়কে টার্গেট করে। উল্লেখ্য, প্রতিবছরের মতো এবারও পঞ্চগড়ের ফুলতলায় অবস্থিত আহমদ নগরে শুক্রবার থেকে তিন দিনব্যাপী বার্ষিক সালানা জলসার আয়োজন করে আহমদিয়া মুসলিম জামাত।অন্যদিকে তৌহিদী জনতার ব্যানারে স্থানীয় মুসল্লিরা তা প্রতিহতের চেষ্টা
করে হামলা চালায়। এ নিয়ে উভয়পক্ষের
পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কারণে সংর্ঘষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের পর পুলিশ শহরে
মাইকে ঘোষণা দিয়ে জানায় যে, ‘সালানা জলসা বন্ধ করা হয়েছে।’
দেশের কয়েকটি এলাকার বিভিন্ন মসজিদের মুসল্লিদের ‘অনৈসলামিক কার্যকলাপ প্রতিরোধ কমিটি’
গঠন করা কিংবা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের
টহল অব্যাহত রাখা- এ উভয় বিষয়ের
মধ্যে প্রথমটি নিয়ে আমাদের আপত্তি আছে। কারণ ‘অনৈসলামিক কার্যকলাপ প্রতিরোধ কমিটি’
গঠন করে আইন নিজেদের হাতে তুলে নেওয়ার এ ধরনের প্রবণতা
কখনই একটি দেশের সাংবিধানিক ভিত্তিকে মজবুত করতে পারে না।আহমদিয়া জামাতকে অমুসলিম কিংবা কাফের ঘোষণার মধ্যেও আছে অপরের অধিকার হরণের অপচেষ্টা।তবে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা-অগ্নিসংযোগ-লুটপাট, হত্যা এবং এর ধারাবাহিকতায় গুজব
সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির ঘটনায় ৩টি মামলা হয়েছে। ওই ঘটনায় পুলিশ
২৪ জনকে গ্রেফতার করেছে। আর মামলায় সাড়ে
৬ থেকে ৭ হাজার ব্যক্তিকে
আসামি করা হয়েছে।দেশের নানা জায়গায় হামলা, লুটপাট এবং গুজব ছড়িয়ে যে ঘটনাগুলো তৈরি
করা হয়েছে তা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী
এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নির্মাণের পরিপন্থী।এখানে আহমদিয়া জামাত সম্পর্কে বিস্তারিত বলা দরকার।
২.
ঊনবিংশ শতকে ভারতবর্ষে ব্যাপক খ্রিষ্টান ও আর্য সমাজবাদী
ধর্মপ্রচারের জবাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত একটি আন্দোলন হিসেবেই গড়ে ওঠে আহমদীয়া সম্প্রদায়। পত্রিকা, অনলাইন এবং বিশ্বকোষ সূত্র মতে, মুসলিম ধর্মীয় পুনর্জাগরণ অথবা মসিহবাদী এই আন্দোলনের উদ্ভব
হয়েছিল ব্রিটিশ ভারতের কাদিয়ান এলাকার মির্যা গোলাম আহমদের জীবন ও শিক্ষার ভিত্তিতে।
মির্যা গোলাম আহমদ (১৮৩৫-১৯০৮) দাবি করেছিলেন যে আল্লাহ তাকে
আখেরী জামানায় প্রতিশ্রুত ও মুসলমানদের প্রতীক্ষিত
ইমাম মাহদী ও প্রতিশ্রুত মসীহ
(যীশু বা ঈসা) উভয়
হিসেবেই প্রেরণ করেছেন ইসলামের চূড়ান্ত বিজয় শান্তিপূর্ণভাবে সংঘটিত করতে এবং অন্যান্য ধর্মীয় মতবাদের প্রতীক্ষিত পরকালতাত্ত্বিক ব্যক্তিত্বদের মূর্ত করতে। নবী মোহাম্মদের বিকল্প নাম ‘আহমদ’
থেকে এই আন্দোলন ও
সদস্যগণ (‘আহমদী মুসলিম’
বা সংক্ষেপে ‘আহমদী’)
নিজেদের নামকরণ করলেও সাধারণভাবে মুসলিম বিশ্বে তাদের প্রতিষ্ঠাতার জন্মগ্রহণকারী অঞ্চলের নাম কাদিয়ান এর নামে কাদিয়ানী
হিসেবেই আখ্যায়িত করা হয়।অবশ্য ১৮৮৯ সালে ভারতের পাঞ্জাব অঞ্চলে আহমদীয়া আন্দোলনের প্রতিষ্ঠা হলেও ‘আহমদীয়া' নামটি রাখা হয় আরও এক দশক পর।
১৯০০ সালের ৪ নভেম্বরের একটি
ইস্তেহারে গোলাম আহমদের ভাষ্যে নামটি নিজের নাম ‘আহমদ’-কে ইঙ্গিত করছে।
‘আহমদ’
নামটি নবীজির মক্কা জীবনকালে তার খোতবার সৌন্দর্য, শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ এবং উদ্যম
ও ধৈর্য বহন করে এবং ‘মোহাম্মদ’
ও ‘আহমদ’-এর মধ্যে দ্বিতীয়টি
বেশি মনোযোগ দখল করে। উপরন্তু তিনি বলেন বাইবেলের পুরাতন নিয়মে মোশির (নবী মুসার) মত নবী বলে
নবী মোহাম্মদের আগমনের উল্লেখ আছে এবং কোরআনে নবী ঈসা সেই নবীর ব্যাপারে ইঙ্গিত করেন ‘আহমদ’
নামটি দ্বারা। তাই ‘মোহাম্মদ’
নামটিকে নবী মুসার জুলুমের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামী কর্মকাণ্ড এবং ‘আহমদ’-কে নবী ঈসার
শান্তিপূর্ণ ধর্মোপদেশ কার্যের সঙ্গে তিনি যুক্ত করেন এবং মুসলিম বিশ্বে অন্যান্য আন্দোলন থেকে আলাদা করতে তিনি ‘আহমদীয়া’
নামটি বেছে নেন-‘যে নামটি এই
আন্দোলনের সবচেয়ে উপযোগী এবং আমার ও আমার জামাতের
জন্যে আমি পছন্দ করি তা হল ‘আহমদীয়া
বর্গের মুসলমানগণ’। তবে এটি
‘আহমদী মাজহাবের মুসলমানগণ’
হিসেবে উল্লেখ হলেও তা গ্রহণযোগ্য।’(মাজমু'আ ইশ্তেহারাত, ৩য়
খণ্ড, পৃ. ৩৬৪)২৩ মার্চ ১৮৮৯
তারিখে পাঞ্জাবের লুধিয়ানায় তার বাড়িতে মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী তার সহচরী অনুসারীদের কাছ থেকে (মুসলমানদের নেতা মাহদী হিসেবে) ইমামত বা খেলাফতের বায়াত
(আনুগত্যের শপথ) গ্রহণ করেন। এর পূর্ব তিনি
সুত্র অনুযায়ী তার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ওহী বা আপ্তবাক্য পেতে
শুরু করেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে তিনি নিজেকে মোজাদ্দেদ (মুসলিম বিশ্বে প্রতি একশত বছর পর আগত ইসলামের
পুনরুদ্ধারকারী), রূপক অর্থে মসীহের পুনরাগমন এবং মুসলমানদের প্রতীক্ষিত মাহদী হিসেবে দাবি করেন এবং ব্রিটিশ ভারতের যুক্তপ্রদেশ (বর্তমানে উত্তরাখণ্ড ও উত্তর প্রদেশ),
পাঞ্জাব ও সিন্ধুপ্রদেশে উল্লেখযোগ্য
সংখ্যক অনুসারী লাভ করেন। তিনি ও তার অনুসারীরা
দাবি করেন যে নবী মোহাম্মদসহ
বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ তার আগমনের ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন। মির্যা গোলাম আহমদ নিজে আহমদীদের বিশ্বাসের ব্যাপারে বলেছেন, ‘আমরা ঈমান রাখি, খোদা তা‘লা ব্যতীত কোন
মা‘বুদ নাই এবং সৈয়্যদানা মুহাম্মাদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়া সাল্লাম আল্লাহ্র রসূল এবং
খাতামুল আম্বিয়া। আমরা ঈমান রাখি, কুরআন শরীফে আল্লাহ্ তা‘আলা যা বলেছেন এবং
আমাদের নবী (সা.)-এর পক্ষ থেকে
যা বর্ণিত হয়েছে উল্লিখিত বর্ণনানুসারে তা সবই সত্য।
আমরা এ-ও ঈমান
রাখি, যে ব্যক্তি এই
ইসলামী শরীয়ত থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত হয় অথবা যে বিষয়গুলি আবশ্যকরণীয়
বলে নির্ধারিত তা পরিত্যাগ করে
এবং অবৈধ বস্তুকে বৈধকরণের ভিত্তি স্থাপন করে, সে ব্যক্তি বে-ঈমান এবং ইসলাম বিরোধী। আমি আমার জামা‘তকে উপদেশ দিচ্ছি, তারা যেন বিশুদ্ধ অন্তরে পবিত্র কলেমা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু
মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্’-এর উপর ঈমান
রাখে এবং এই ঈমান নিয়ে
মৃত্যুবরণ করে। কুরআন শরীফ হতে যাদের সত্যতা প্রমাণিত, এমন সকল নবী (আলাইহিমুস সালাম) এবং কিতাবের প্রতি ঈমান আনবে। নামায, রোযা, হজ্জ ও যাকাত এবং
এতদ্ব্যতীত খোদা তা‘লা এবং তাঁর
রসূল (সা.) কর্তৃক নির্ধারিত কর্তব্যসমূকে প্রকৃতপক্ষে অবশ্য-করণীয় মনে করে যাবতীয় নিষিদ্ধ বিষয়সমূহকে নিষিদ্ধ মনে করে সঠিকভাবে ইসলাম ধর্ম পালন করবে। মোট কথা, যে সমস্ত বিষয়ে
আকিদা ও আমল হিসেবে
পূর্ববর্তী বুজুর্গানের ‘ইজমা’
অর্থাৎ সর্ববাদী-সম্মত মত ছিল এবং
যে সমস্ত বিষয়কে আহলে সুন্নত জামা’তের সর্বাদি-সম্মত মতে ইসলাম নাম দেয়া হয়েছে, তা সর্বতোভাবে মান্য
করা অবশ্য কর্তব্য। যে ব্যক্তি উপর্যুক্ত
ধর্মমতের বিরুদ্ধে কোন দোষ আমাদের প্রতি আরোপ করে, সে তাকওয়া বা
খোদা-ভীতি এবং সততা বিসর্জন দিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ রটনা করে। কিয়ামতের দিন তার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযোগ থাকবে, কবে সে আমাদের বুক
চিরে দেখেছিল, আমাদের এই অঙ্গীকার সত্বেও
অন্তরে আমরা এসবের বিরুদ্ধে ছিলাম?’
১৯১৩ সনের দিকেই আহমদীয়া জামাত বিদেশে তাদের প্রচার কর্ম শুরু করে (যেমন লন্ডনে ফজল মসজিদ নির্মাণ)। অনেক ঐতিহাসিকের
মতে, আহমদীয়া আমেরিকায় ‘সিভিল রাইটস মুভমেন্ট’
বা নাগরিক অধিকার আন্দোলনের অগ্রদূত। এটি ১৯৫০ পর্যন্ত ‘আফ্রিকান-আমেরিকান ইসলামে তর্কসাপেক্ষে সবচেয়ে প্রভাবশালী সম্প্রদায়’
হিসেবে বিবেচিত এবং বিশেষ করে আফ্রিকা মহাদেশে বিপুল একটি ধর্মমত।
স্পষ্টত দেখা যাচ্ছে মির্যা গোলাম আহমদ মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি এবং তিনি নিজের অনুসারীদেরও পবিত্র কলেমা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু
মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্’-এর উপর ঈমান
রাখার কথা বলে গেছেন।অথচ দেশ-বিদেশের ধর্মীয় উগ্রবাদীরা তাদের বিরুদ্ধে মানুষকে লেলিয়ে দিয়ে ইসলাম রক্ষার নামে অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে। বাংলাদেশে আহমদীয়া জামাতের ১০৩টি শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ৪২৫টি স্থানে আহমদীদের বসবাস বা কার্যক্রম রয়েছে।
পঞ্চগড়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সুন্দরবন, আহমদনগর-শালসিঁড়ি, রাজশাহী, কুমিল্লা এবং জামালপুর-ময়মনসিংহ অঞ্চলে আহমদীদের সংখ্যা উল্ল্যেখযোগ্য। জামাতের সাংগঠিক কার্যক্রম স্বেচ্ছাসেবকদের দ্বারা পরিচালিত হয়। জামাতের ৬৫জন মোবাল্লেগ রয়েছে যারা জামাতের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে। এই জামা’ত
১৯২০ সন থেকে বাংলাদেশের
প্রাচীনতম পাক্ষিক পত্রিকা ‘আহ্মদী’
নিয়মিতভাবে বের করে আসছে। অঙ্গসংগঠনসমূহের নিজস্ব ম্যাগাজিন/বুলেটিন রয়েছে।
৩.
পঞ্চগড়ে সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে ৫ মার্চ ( ২০২৩)
কালের কণ্ঠ সম্পাদকীয়তে লিখেছে-‘মহান মুক্তিযুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পেছনের চালিকাশক্তি ছিল অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য।সারা পৃথিবী আজ ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদের
উগ্র আক্রমণের বিষয়ে উদ্বিগ্ন। ধর্মকে অপব্যবহার করা হচ্ছে রাজনৈতিক ঘুঁটির চাল হিসেবে। বাংলাদেশেও এক শ্রেণির রাজনৈতিক
দল ও গোষ্ঠী এই
স্পর্শকাতর হাতিয়ার ব্যবহার করেছে।বাংলাদেশকে একটি সাম্প্রদায়িক দেশের তকমা লাগানোর জন্য দেশের অভ্যন্তরের একটি চিহ্নিত গোষ্ঠীর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী অত্যন্ত সক্রিয়।কখনো জঙ্গিবাদকে উসকে দিয়ে, কখনো আগুন সন্ত্রাস করে তারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চেয়েছে।...কায়েমি স্বার্থের টানে বিভিন্ন সময়ে ঘটেছে ভিন্ন সম্প্রদায়ের ওপর হামলা। এ ধরনের ঘটনা
কেমন নির্মম, কদর্য ও ক্ষতিকারক হতে
পারে সেটা আমরা সবাই জানি।... বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে ঘৃণ্য সাম্প্রদায়িকতার স্থান ছিল না, আজও নেই এবং ভবিষ্যতেও থাকবে না—এই বোধ আজ
নতুন করে ছড়িয়ে দিতে হবে সবার মাঝে।’
আসলে ৩ এবং ৪
মার্চ সংঘটিত সহিংসতা আমাদের রাষ্ট্রের মৌল চেতনাকে আঘাত করেছে। কারণ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করা বাংলাদেশের মৌল লক্ষ্য।পবিত্র সংবিধান সকল ধর্ম পালনে সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত
করেছে।সেখানে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা এবং স্বাধীনভাবে প্রত্যকের ধর্ম পালনের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।আর লেখাবাহুল্য, ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। অপরদিকে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি ইসলাম সমর্থন করে না।তাছাড়া রাষ্ট্র কোন সম্প্রদায় বা ব্যক্তিকে তার
ধর্মবিশ্বাস বা বিশেষ ধর্মীয়
আচার পরিপালনের কারণে ‘কাফের' বা অমুসলিম বলতে
পারে না। এজন্য কাদিয়ানিদের মতবাদ নিয়ে অন্য কারো বাড়াবাড়ি করা সমীচীন নয়। ধর্মের নামে কোন ব্যক্তি বা সম্প্রদায় সন্ত্রাসী
কার্যকলাপে লিপ্ত না হলে, জঙ্গীবাদে
সম্পৃক্ত না থাকলে কিংবা
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বা রাষ্ট্র বিরোধী
কোন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত না হলে কারও
বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে না সরকারের প্রশাসন।
কারণ জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও গোত্র নির্বিশেষে
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিণির্মাণে সকল নাগরিককে একীভূতভাবে এগিয়ে আসতে হবে।আবহমানকাল ধরে বাঙালি সমাজ অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধারণ করে এসেছে। কে কোন ধর্মের
অনুসারী, কিংবা কে মুসলিম, কে
খ্রিষ্টান, কে হিন্দু আর
কে অনুসারী নয়- এটা বলার বা ঘোষণা দেয়ার
অধিকার সরকার কিংবা কোন দল বা কোন
ব্যক্তির নেই। ধর্মের অনুসরণ নিয়ে মতের ভিন্নতা থাকতেই পারে, তবে আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধান করা
দরকার।সকল মতাদর্শীদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান একটি পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা,
চিন্তার স্বাধীনতা ও ধর্মপালনের স্বাধীনতা
রক্ষার জন্য- একদল লোকের ধর্মবিশ্বাস অন্যের সঙ্গে না মিললেও তার
জন্যে তাকে আঘাত করা যাবে না।মনে রাখা দরকার, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন নিজেদেরকে মুসলমান বলেই চিহ্নিত করে।
প্রত্যেকে নিজের মতো ধর্ম পালন করবেন, যেমন আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন ওদের মতো পালন করে থাকেন। এজন্য জোর করে, আক্রমণ করে, হত্যা করে অপরের কণ্ঠ রুদ্ধ করা, তাদের ধর্মীয় আচার-আচরণে বাধা দেওয়া দুঃখজনক।এটা অন্যায়-অপরাধ ও রাষ্ট্রবিরোধী কাজ।
আমাদের প্রত্যাশা, এসব ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের সবাইকে অতিদ্রুত বিচারের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা।
(লেখক : ড. মিল্টন বিশ্বাস, অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, বাংলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বিশিষ্ট লেখক, কবি, কলামিস্ট, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ email-drmiltonbiswas1971@ gmail.com)
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:২৬ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই।
বারো বছর আগের কথা। ডেভিড ক্যামেরুন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদিন তিনি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লেন। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর সাথে ছবি তুলতে গেলেন। বাঁধ সাধলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক। জীবাণু প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি ওই কাজটি করছিলেন। ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন সাথে সাথে। ক্ষমা চাইলেন এবং ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন।
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর