ইনসাইড থট

আহমদিয়া সম্প্রদায়রাও এদেশের নাগরিক

প্রকাশ: ১১:০০ এএম, ১০ মার্চ, ২০২৩


Thumbnail

অগ্নিঝরা মার্চের তিন তারিখ (২০২৩) শুক্রবার জুমার নামাজের পর পঞ্চগড় শহরের প্রাণকেন্দ্র চৌরঙ্গী মোড়ে সংঘর্ষ, সহিংসতা ও প্রাণনাশের যে নিন্দনীয় ঘটনা ঘটেছে তা এদেশের নাগরিক হিসেবে আহমদিয়া সম্প্রদায়দের মৌলিক অধিকারে আঘাতের নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। ৪ ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে পঞ্চগড় শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় মুসল্লিরা শহরে অবস্থিত আহমদিয়া মুসলিম জামাতের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িতে লুটপাট এবং ট্রাফিক পুলিশ বক্স, ট্রাফিক অফিসে রক্ষিত বিপুলসংখ্যক মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী জুমার নামাজের পর বিভিন্ন মসজিদের শত শত মুসল্লি পঞ্চগড় শহরের শেরেবাংলা নগর পার্ক এলাকায় অবস্থান নিয়ে আহমদিয়া মুসলিম জামাতের সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে। সংঘর্ষের একপর্যায়ে মুসল্লিরা আহমদিয়া জামাত অনুসারীদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। মুসল্লিদের দাবি, ‘আহমদিয়া মুসলিম জামাতের অনুসারীরা গোলাম আহম্মদকে নবী মনে করে তাই তারা কাফের। ইসলামের নামে কোনো জলসার আয়োজন ধর্মপ্রাণ মুসল্লি মেনে নিতে পারে না। প্রশাসনকে এ ধরনের জলসা বন্ধ করতে হবে।’

উপরের তথ্য থেকে পাঠকগণ লক্ষ্য করে থাকবেন নামাজ শেষে ওই সহিংসতার শুরু হয় উগ্র মুসলিম জনগোষ্ঠীর দ্বারা। আহমদিয়া জামাত অনুসারীদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে লুটপাটও করে তারা।তাহলে ধর্মপ্রাণ মুসল্লি বলে আমরা যাদের চিহ্নিত করি তারা অবলীলায় অন্যের অধিকার হরণে লিপ্ত হয়-এটা দৃশ্যমান হলো। এমনকি ধর্মবিশ্বাস লালন ও ধর্মপালনে মানুষের যে মৌলিক অধিকার রয়েছে তার ওপর হস্তক্ষেপ ও মারমুখি আচরণ করা হয়েছে নিরীহ সম্প্রদায়কে টার্গেট করে। উল্লেখ্য, প্রতিবছরের মতো এবারও পঞ্চগড়ের ফুলতলায় অবস্থিত আহমদ নগরে শুক্রবার থেকে তিন দিনব্যাপী বার্ষিক সালানা জলসার আয়োজন করে আহমদিয়া মুসলিম জামাত।অন্যদিকে তৌহিদী জনতার ব্যানারে স্থানীয় মুসল্লিরা তা প্রতিহতের চেষ্টা করে হামলা চালায়। এ নিয়ে উভয়পক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কারণে সংর্ঘষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের পর পুলিশ শহরে মাইকে ঘোষণা দিয়ে জানায় যে, ‘সালানা জলসা বন্ধ করা হয়েছে।’

দেশের কয়েকটি এলাকার বিভিন্ন মসজিদের মুসল্লিদের ‘অনৈসলামিক কার্যকলাপ প্রতিরোধ কমিটি’ গঠন করা কিংবা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাবের টহল অব্যাহত রাখা- এ উভয় বিষয়ের মধ্যে প্রথমটি নিয়ে আমাদের আপত্তি আছে। কারণ ‘অনৈসলামিক কার্যকলাপ প্রতিরোধ কমিটি’ গঠন করে আইন নিজেদের হাতে তুলে নেওয়ার এ ধরনের প্রবণতা কখনই একটি দেশের সাংবিধানিক ভিত্তিকে মজবুত করতে পারে না।আহমদিয়া জামাতকে অমুসলিম কিংবা কাফের ঘোষণার মধ্যেও আছে অপরের অধিকার হরণের অপচেষ্টা।তবে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা-অগ্নিসংযোগ-লুটপাট, হত্যা এবং এর ধারাবাহিকতায় গুজব সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির ঘটনায় ৩টি মামলা হয়েছে। ওই ঘটনায় পুলিশ ২৪ জনকে গ্রেফতার করেছে। আর মামলায় সাড়ে ৬ থেকে ৭ হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।দেশের নানা জায়গায় হামলা, লুটপাট এবং গুজব ছড়িয়ে যে ঘটনাগুলো তৈরি করা হয়েছে তা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নির্মাণের পরিপন্থী।এখানে আহমদিয়া জামাত সম্পর্কে বিস্তারিত বলা দরকার।

২.

ঊনবিংশ শতকে ভারতবর্ষে ব্যাপক খ্রিষ্টান ও আর্য সমাজবাদী ধর্মপ্রচারের জবাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত একটি আন্দোলন হিসেবেই গড়ে ওঠে আহমদীয়া সম্প্রদায়। পত্রিকা, অনলাইন এবং বিশ্বকোষ সূত্র মতে, মুসলিম ধর্মীয় পুনর্জাগরণ অথবা মসিহবাদী এই আন্দোলনের উদ্ভব হয়েছিল ব্রিটিশ ভারতের কাদিয়ান এলাকার মির্যা গোলাম আহমদের জীবন ও শিক্ষার ভিত্তিতে। মির্যা গোলাম আহমদ (১৮৩৫-১৯০৮) দাবি করেছিলেন যে আল্লাহ তাকে আখেরী জামানায় প্রতিশ্রুত ও মুসলমানদের প্রতীক্ষিত ইমাম মাহদী ও প্রতিশ্রুত মসীহ (যীশু বা ঈসা) উভয় হিসেবেই প্রেরণ করেছেন ইসলামের চূড়ান্ত বিজয় শান্তিপূর্ণভাবে সংঘটিত করতে এবং অন্যান্য ধর্মীয় মতবাদের প্রতীক্ষিত পরকালতাত্ত্বিক ব্যক্তিত্বদের মূর্ত করতে। নবী মোহাম্মদের বিকল্প নাম ‘আহমদ’ থেকে এই আন্দোলন ও সদস্যগণ (‘আহমদী মুসলিম’ বা সংক্ষেপে ‘আহমদী’) নিজেদের নামকরণ করলেও সাধারণভাবে মুসলিম বিশ্বে তাদের প্রতিষ্ঠাতার জন্মগ্রহণকারী অঞ্চলের নাম কাদিয়ান এর নামে কাদিয়ানী হিসেবেই আখ্যায়িত করা হয়।অবশ্য ১৮৮৯ সালে ভারতের পাঞ্জাব অঞ্চলে আহমদীয়া আন্দোলনের প্রতিষ্ঠা হলেও ‘আহমদীয়া' নামটি রাখা হয় আরও এক দশক পর। ১৯০০ সালের ৪ নভেম্বরের একটি ইস্তেহারে গোলাম আহমদের ভাষ্যে নামটি নিজের নাম ‘আহমদ’-কে ইঙ্গিত করছে। ‘আহমদ’ নামটি নবীজির মক্কা জীবনকালে তার খোতবার সৌন্দর্য, শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ এবং উদ্যম ও ধৈর্য বহন করে এবং ‘মোহাম্মদ’ ও ‘আহমদ’-এর মধ্যে দ্বিতীয়টি বেশি মনোযোগ দখল করে। উপরন্তু তিনি বলেন বাইবেলের পুরাতন নিয়মে মোশির (নবী মুসার) মত নবী বলে নবী মোহাম্মদের আগমনের উল্লেখ আছে এবং কোরআনে নবী ঈসা সেই নবীর ব্যাপারে ইঙ্গিত করেন ‘আহমদ’ নামটি দ্বারা। তাই ‘মোহাম্মদ’ নামটিকে নবী মুসার জুলুমের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামী কর্মকাণ্ড এবং ‘আহমদ’-কে নবী ঈসার শান্তিপূর্ণ ধর্মোপদেশ কার্যের সঙ্গে তিনি যুক্ত করেন এবং মুসলিম বিশ্বে অন্যান্য আন্দোলন থেকে আলাদা করতে তিনি ‘আহমদীয়া’ নামটি বেছে নেন-‘যে নামটি এই আন্দোলনের সবচেয়ে উপযোগী এবং আমার ও আমার জামাতের জন্যে আমি পছন্দ করি তা হল ‘আহমদীয়া বর্গের মুসলমানগণ’। তবে এটি ‘আহমদী মাজহাবের মুসলমানগণ’ হিসেবে উল্লেখ হলেও তা গ্রহণযোগ্য।’(মাজমু'আ ইশ্তেহারাত, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩৬৪)২৩ মার্চ ১৮৮৯ তারিখে পাঞ্জাবের লুধিয়ানায় তার বাড়িতে মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী তার সহচরী অনুসারীদের কাছ থেকে (মুসলমানদের নেতা মাহদী হিসেবে) ইমামত বা খেলাফতের বায়াত (আনুগত্যের শপথ) গ্রহণ করেন। এর পূর্ব তিনি সুত্র অনুযায়ী তার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ওহী বা আপ্তবাক্য পেতে শুরু করেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে তিনি নিজেকে মোজাদ্দেদ (মুসলিম বিশ্বে প্রতি একশত বছর পর আগত ইসলামের পুনরুদ্ধারকারী), রূপক অর্থে মসীহের পুনরাগমন এবং মুসলমানদের প্রতীক্ষিত মাহদী হিসেবে দাবি করেন এবং ব্রিটিশ ভারতের যুক্তপ্রদেশ (বর্তমানে উত্তরাখণ্ড ও উত্তর প্রদেশ), পাঞ্জাব ও সিন্ধুপ্রদেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অনুসারী লাভ করেন। তিনি ও তার অনুসারীরা দাবি করেন যে নবী মোহাম্মদসহ বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ তার আগমনের ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন। মির্যা গোলাম আহমদ নিজে আহমদীদের বিশ্বাসের ব্যাপারে বলেছেন, ‘আমরা ঈমান রাখি, খোদা তা‘লা ব্যতীত কোন মা‘বুদ নাই এবং সৈয়্যদানা মুহাম্মাদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়া সাল্লাম আল্লাহ্‌র রসূল এবং খাতামুল আম্বিয়া। আমরা ঈমান রাখি, কুরআন শরীফে আল্লাহ্ তা‘আলা যা বলেছেন এবং আমাদের নবী (সা.)-এর পক্ষ থেকে যা বর্ণিত হয়েছে উল্লিখিত বর্ণনানুসারে তা সবই সত্য। আমরা এ-ও ঈমান রাখি, যে ব্যক্তি এই ইসলামী শরীয়ত থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত হয় অথবা যে বিষয়গুলি আবশ্যকরণীয় বলে নির্ধারিত তা পরিত্যাগ করে এবং অবৈধ বস্তুকে বৈধকরণের ভিত্তি স্থাপন করে, সে ব্যক্তি বে-ঈমান এবং ইসলাম বিরোধী। আমি আমার জামা‘তকে উপদেশ দিচ্ছি, তারা যেন বিশুদ্ধ অন্তরে পবিত্র কলেমা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্’-এর উপর ঈমান রাখে এবং এই ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করে। কুরআন শরীফ হতে যাদের সত্যতা প্রমাণিত, এমন সকল নবী (আলাইহিমুস সালাম) এবং কিতাবের প্রতি ঈমান আনবে। নামায, রোযা, হজ্জ ও যাকাত এবং এতদ্ব্যতীত খোদা তা‘লা এবং তাঁর রসূল (সা.) কর্তৃক নির্ধারিত কর্তব্যসমূকে প্রকৃতপক্ষে অবশ্য-করণীয় মনে করে যাবতীয় নিষিদ্ধ বিষয়সমূহকে নিষিদ্ধ মনে করে সঠিকভাবে ইসলাম ধর্ম পালন করবে। মোট কথা, যে সমস্ত বিষয়ে আকিদা ও আমল হিসেবে পূর্ববর্তী বুজুর্গানের ‘ইজমা’ অর্থাৎ সর্ববাদী-সম্মত মত ছিল এবং যে সমস্ত বিষয়কে আহলে সুন্নত জামা’তের সর্বাদি-সম্মত মতে ইসলাম নাম দেয়া হয়েছে, তা সর্বতোভাবে মান্য করা অবশ্য কর্তব্য। যে ব্যক্তি উপর্যুক্ত ধর্মমতের বিরুদ্ধে কোন দোষ আমাদের প্রতি আরোপ করে, সে তাকওয়া বা খোদা-ভীতি এবং সততা বিসর্জন দিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ রটনা করে। কিয়ামতের দিন তার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযোগ থাকবে, কবে সে আমাদের বুক চিরে দেখেছিল, আমাদের এই অঙ্গীকার সত্বেও অন্তরে আমরা এসবের বিরুদ্ধে ছিলাম?’

১৯১৩ সনের দিকেই আহমদীয়া জামাত বিদেশে তাদের প্রচার কর্ম শুরু করে (যেমন লন্ডনে ফজল মসজিদ নির্মাণ)। অনেক ঐতিহাসিকের মতে, আহমদীয়া আমেরিকায় ‘সিভিল রাইটস মুভমেন্ট’ বা নাগরিক অধিকার আন্দোলনের অগ্রদূত। এটি ১৯৫০ পর্যন্ত ‘আফ্রিকান-আমেরিকান ইসলামে তর্কসাপেক্ষে সবচেয়ে প্রভাবশালী সম্প্রদায়’ হিসেবে বিবেচিত এবং বিশেষ করে আফ্রিকা মহাদেশে বিপুল একটি ধর্মমত।

স্পষ্টত দেখা যাচ্ছে মির্যা গোলাম আহমদ মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি এবং তিনি নিজের অনুসারীদেরও পবিত্র কলেমা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্’-এর উপর ঈমান রাখার কথা বলে গেছেন।অথচ দেশ-বিদেশের ধর্মীয় উগ্রবাদীরা তাদের বিরুদ্ধে মানুষকে লেলিয়ে দিয়ে ইসলাম রক্ষার নামে অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে। বাংলাদেশে আহমদীয়া জামাতের ১০৩টি শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ৪২৫টি স্থানে আহমদীদের বসবাস বা কার্যক্রম রয়েছে। পঞ্চগড়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সুন্দরবন, আহমদনগর-শালসিঁড়ি, রাজশাহী, কুমিল্লা এবং জামালপুর-ময়মনসিংহ অঞ্চলে আহমদীদের সংখ্যা উল্ল্যেখযোগ্য। জামাতের সাংগঠিক কার্যক্রম স্বেচ্ছাসেবকদের দ্বারা পরিচালিত হয়। জামাতের ৬৫জন মোবাল্লেগ রয়েছে যারা জামাতের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে। এই জামা’ত ১৯২০ সন থেকে বাংলাদেশের প্রাচীনতম পাক্ষিক পত্রিকা ‘আহ্‌মদী’ নিয়মিতভাবে বের করে আসছে। অঙ্গসংগঠনসমূহের নিজস্ব ম্যাগাজিন/বুলেটিন রয়েছে।

৩.

পঞ্চগড়ে সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে ৫ মার্চ ( ২০২৩) কালের কণ্ঠ সম্পাদকীয়তে লিখেছে-‘মহান মুক্তিযুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পেছনের চালিকাশক্তি ছিল অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য।সারা পৃথিবী আজ ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদের উগ্র আক্রমণের বিষয়ে উদ্বিগ্ন। ধর্মকে অপব্যবহার করা হচ্ছে রাজনৈতিক ঘুঁটির চাল হিসেবে। বাংলাদেশেও এক শ্রেণির রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠী এই স্পর্শকাতর হাতিয়ার ব্যবহার করেছে।বাংলাদেশকে একটি সাম্প্রদায়িক দেশের তকমা লাগানোর জন্য দেশের অভ্যন্তরের একটি চিহ্নিত গোষ্ঠীর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী অত্যন্ত সক্রিয়।কখনো জঙ্গিবাদকে উসকে দিয়ে, কখনো আগুন সন্ত্রাস করে তারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চেয়েছে।...কায়েমি স্বার্থের টানে বিভিন্ন সময়ে ঘটেছে ভিন্ন সম্প্রদায়ের ওপর হামলা। এ ধরনের ঘটনা কেমন নির্মম, কদর্য ও ক্ষতিকারক হতে পারে সেটা আমরা সবাই জানি।... বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে ঘৃণ্য সাম্প্রদায়িকতার স্থান ছিল না, আজও নেই এবং ভবিষ্যতেও থাকবে না—এই বোধ আজ নতুন করে ছড়িয়ে দিতে হবে সবার মাঝে।’

আসলে ৩ এবং ৪ মার্চ সংঘটিত সহিংসতা আমাদের রাষ্ট্রের মৌল চেতনাকে আঘাত করেছে। কারণ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করা বাংলাদেশের মৌল লক্ষ্য।পবিত্র সংবিধান সকল ধর্ম পালনে সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করেছে।সেখানে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা এবং স্বাধীনভাবে প্রত্যকের ধর্ম পালনের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।আর লেখাবাহুল্য, ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। অপরদিকে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি ইসলাম সমর্থন করে না।তাছাড়া রাষ্ট্র কোন সম্প্রদায় বা ব্যক্তিকে তার ধর্মবিশ্বাস বা বিশেষ ধর্মীয় আচার পরিপালনের কারণে ‘কাফের' বা অমুসলিম বলতে পারে না। এজন্য কাদিয়ানিদের মতবাদ নিয়ে অন্য কারো বাড়াবাড়ি করা সমীচীন নয়। ধর্মের নামে কোন ব্যক্তি বা সম্প্রদায় সন্ত্রাসী কার্যকলাপে লিপ্ত না হলে, জঙ্গীবাদে সম্পৃক্ত না থাকলে কিংবা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বা রাষ্ট্র বিরোধী কোন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত না হলে কারও বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে না সরকারের প্রশাসন। কারণ জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও গোত্র নির্বিশেষে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিণির্মাণে সকল নাগরিককে একীভূতভাবে এগিয়ে আসতে হবে।আবহমানকাল ধরে বাঙালি সমাজ অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধারণ করে এসেছে। কে কোন ধর্মের অনুসারী, কিংবা কে মুসলিম, কে খ্রিষ্টান, কে হিন্দু আর কে অনুসারী নয়- এটা বলার বা ঘোষণা দেয়ার অধিকার সরকার কিংবা কোন দল বা কোন ব্যক্তির নেই। ধর্মের অনুসরণ নিয়ে মতের ভিন্নতা থাকতেই পারে, তবে আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধান করা দরকার।সকল মতাদর্শীদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান একটি পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা ও ধর্মপালনের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য- একদল লোকের ধর্মবিশ্বাস অন্যের সঙ্গে না মিললেও তার জন্যে তাকে আঘাত করা যাবে না।মনে রাখা দরকার, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন নিজেদেরকে মুসলমান বলেই চিহ্নিত করে।

প্রত্যেকে নিজের মতো ধর্ম পালন করবেন, যেমন আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন ওদের মতো পালন করে থাকেন। এজন্য জোর করে, আক্রমণ করে, হত্যা করে অপরের কণ্ঠ রুদ্ধ করা, তাদের ধর্মীয় আচার-আচরণে বাধা দেওয়া দুঃখজনক।এটা অন্যায়-অপরাধ ও রাষ্ট্রবিরোধী কাজ। আমাদের প্রত্যাশা, এসব ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের সবাইকে অতিদ্রুত বিচারের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা।

(লেখক : ড. মিল্টন বিশ্বাস, অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, বাংলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বিশিষ্ট লেখক, কবি, কলামিস্ট, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ email-drmiltonbiswas1971@ gmail.com)



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বাংলাদেশে আর কোন অবৈধ সরকার আসবে না


Thumbnail

আজ ২৪ মার্চ। দিনটিকে অন্য কোন দিনের মত সাধারণ মনে হলেও বাংলাদেশের ইতহাসে দিনটি মোটেও সাধারণ নয়। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ প্রত্যুষে বাংলাদেশে সামরিক আইন জারি করে সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ লে. জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ একটি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে সরিয়ে দেশের কর্তৃত্ব নেন। ‘জনগণের ডাকে সাড়া দিতে হইয়াছে, ইহা ছাড়া জাতির সামনে আর কোনো বিকল্প ছিল না।’ এই ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশে সামরিক শাসন জারি করে নিজেকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ঘোষণা করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ১৯৮২ সালের এই দিন শুরু হয় স্বাধীন বাংলার ইতিহাসে নতুন এক কালো অধ্যায়।

বাংলাদেশের সামরিক আইন জারি করা কিংবা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের দৃষ্টান্ত এটিই প্রথম নয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর সামরিক বাহিনী ষড়যন্ত্রের অন্যতম অংশীদার খন্দকার মোশতাক আহমদ নিজেকে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট বলে ঘোষণা করে। তার ভাষায়, ‘আমি খন্দকার মোশতাক আহমেদ, আমাকে অর্পিত সর্বময় ক্ষমতাবলে এই মর্মে ঘোষণা করছি যে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের প্রভাত হতে আমি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হলাম ও রাষ্ট্রপতির অফিস অধিগ্রহণ করলাম।’ নিজেই নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করার এক নোংরা ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল খন্দকার মোশতাক।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর হত্যার পেছনে অনেকের হাত থাকলেও তাদের সবার একজন গুরু ছিল। তিনি হচ্ছেন জিয়াউর রহমান। কুমিল্লাতে বসে তারা এ সকল ষড়যন্ত্র করত। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ থেকেই তাদের এ ষড়যন্ত্র চলতে থাকে। সেই ষড়যন্ত্রের চুড়ান্ত ফলাফল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে বাঙালির ইতিহাসের আরেকটি লজ্জাজনক অধ্যায়ের সূচনা করেছিল খুনি জিয়াউর রহমান। ১৯৭৭ সালের ৩০মে সেনাপ্রধানের পদে থেকে লাশের মিছিলের উপর দাঁড়িয়ে এককভাবে নির্বাচনের আয়োজন করেন তিনি। রাজনৈতিক দলগুলোকে কোণঠাসা করে নিজেই ‘জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল’ নামের একটি দল গঠন করে। এরপর ‘হ্যাঁ-না’ ভোটের নামে প্রহসনের নির্বাচন করে নিজেই নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। জিয়া নিজেই এক সামরিক ফরমান জারি করে নিজেকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক তো ঘোষণা করেছিলেনই, আবার নিজেই আরেক ফরমান জারি করে ঘোষণা দেন তিনি দেশের ‘প্রেসিডেন্ট’। কে তাকে প্রস্তাব দিল? কে তাকে ভোট দিল? কোনো কিছুরই প্রয়োজন পড়ল না! শুধু সামরিক ফরমান জারি করে বলেছিলেন, ‘এখন থেকে তিনিই দেশের প্রেসিডেন্ট’। জিয়াউর রহমান এ দেশ থেকে গণতন্ত্রকে চিরকালে শেষ করে দিয়ে বাংলাদেশকে পেছনে নিয়ে গিয়েছিলেন যাতে বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানে পরিণত করা যায়।

শুধু বিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশে নয়, একবিংশ শতাব্দীতেও অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলের ইতিহাস রয়েছে এই দেশে। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি একটি রাজনৈতিক যুগ সন্ধিক্ষণের সময় এক-এগার সরকার ক্ষমতায় আসে। সেনা সমর্থিত সুশীল নিয়ন্ত্রিত ওই সরকার ক্ষমতায় এসে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সংস্কারের কথা বলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিয়ম ছিল যে, ৯০ দিনের মধ্যে তারা একটি নির্বাচন সম্পন্ন করবে। রুটিন কাজের বাইরে তারা অন্য কোনো কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একমাত্র দায়িত্ব ছিল একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করা। কিন্তু ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাষ্ট্র কাঠামো পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিভিন্ন অভিযোগ দায়ে দেশের প্রধান দুই দলের দুই নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াসহ শীর্ষ নেতাদের প্রায় সবাইকেই গ্রেপ্তার করা হয়। যার ফলে বিরাজনীতিকরনের পথ সুগম হয় এবং সুশীল সমাজের ক্ষমতায় থাকার পথ প্রশস্ত হয়। সংবিধানে ৯০ দিনের কথা থাকলেও সেনা সমর্থিত এই অবৈধ সরকার প্রায় ২ বছর দেশের ক্ষমতা দখল করে রাখে। 

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫২ বছরের ইতিহাসে সাংবিধানিকভাবে গ্রহণযোগ্য সরকার ক্ষমতায় এসেছে কেবল দুইজনের হাত ধরে। তাদের একজন হলেন সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং আরেকজন হলেন বঙ্গবন্ধুরই কন্যা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। এর মাঝে যারা এসেছে সবাই অবৈধ এবং অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতায় এসেছে। যতবার এ দেশে অসাংবিধানিক সরকার ক্ষমতায় এসেছে ততবার দেশ পিছিয়েছে। ততবার দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের দিকে এগিয়েছে। বিএনপি’র এক সময়ের অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান বলেছিলেন, গরীব দেশ থাকাইতো ভালো, তাতে সাহায্য পাওয়া যায়। এই ছিল তাদের মানসিকতা। জিয়াউর রহমানের সময় এবং খালেদা জিয়ার সময়ও দেশে দারিদ্রের হার, শিক্ষা, মাথাপিছু আয় সকল মাপকাঠিই একদম তলানিতে ছিল। এবং এরশাদ সাহেবের আমলে এই দেশটি লুটের রাজত্ব ছিল। এই লুটের রাজনীতির সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান এবং এটাকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন এরশাদ সাহেব।

বিগত ১৪ বছর যাবৎ দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার দেশে গণতন্ত্রের ভিত্তিকে শক্তিশালী করতে এবং প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। অসাংবিধানিকভাবে যাতে কেউ রাষ্ট্রের ক্ষমতা দখল করতে না পারে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সেটি নিশ্চিত করেছেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। শুধু তাই নয়। দেশকে তিনি আজ অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছেন। যে বাংলাদেশকে আগে বলা হত তলাবিহীন ঝুড়ি, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেই বাংলাদেশ আজ সাড়া বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। এটি প্রমাণিত যে, একমাত্র সাংবিধানিক পথে যদি ক্ষমতায় আসা যায় তাহলেই দেশের উন্নতি হয়, অর্থনীতির উন্নতি হয়, রাজনৈতিক উন্নতি হয়, গণতন্ত্রের উন্নতি হয়। সে জন্যই গণতন্ত্রকে নিশ্চিত করতে অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতায় আসার পথ বন্ধ করে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। অসাংবিধানিক পথে বাংলাদেশে আর কেউ ক্ষমতায় আসতে পারবে না। আগত নির্বাচনে যারা ক্ষমতায় আসার আশা রাখেন তাদেরকেও সংবিধানের মাধ্যমেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। দ্বিতীয় কোন পথ তাদের জন্য খোলা নেই।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বিদেশ থেকে ফিরে এসে খুব কম বয়সে এ দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। ২১ বছর পর নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে তিনি কারফিউ বন্ধ করলেন এবং একের পর এক দীর্ঘ পথ অতিক্রম করলেন। তার ২১ বছরের পথচলা মোটেও সহজ ছিল না। তাকে হত্যা করার চেষ্টা থেকে শুরু করে সব ষড়যন্ত্রই করা হয়েছে এবং ষড়যন্ত্র এখনও চলছে। কিন্তু আল্লাহর রহমতে তিনি তার বিবেক, বুদ্ধি, মেধা এবং তার দীর্ঘদিনের রাজনীতিক অভিজ্ঞতা দিয়ে সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আসছেন। এরশাদের মত রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করা কিংবা ফখরুদ্দিনের মত পেছন থেকে বেআইনিভাবে ক্ষমতা দখলের দিন এখন আর নেই। ক্ষমতায় আসতে হলে এখন সাংবিধানিক পথেই আসতে হবে। কে ক্ষমতায় আসবে সেই সিদ্ধান্ত জনগণই নেবে।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বাংলাদেশকে চাপে রাখতে আমেরিকার নতুন কৌশল


Thumbnail

যতদিন বাংলা ভাষা থাকবে ততদিন কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত তার অমিত্রাক্ষর ছন্দে লিখা কবিতার জন্য বেঁচে থাকবেন। আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্ট ২০২২ সালের বাংলাদেশের মানবাধিকার রিপোর্টে ২০১৮ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত নির্বাচন সম্পর্কে মূল্যায়ন প্রতিবেদন করলেন। এই প্রতিবেদন দেখে আমার মাইকেল মধুসূদন দত্তের একটি কবিতার লাইন মনে পড়ল। 
“এতক্ষণে –অরিন্দম কহিলা বিষাদে
শুনেছি, রাক্ষসপতি, মেঘের গর্জনে;…”

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেভাবেই ২০১৮ সালে গণতান্ত্রিক নির্বাচনকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্রে নেমেছে এবং গোয়েবলসের তত্ব অনুযায়ী মিথ্যাকে বারবার সত্যি বলে উপস্থাপন করছে, যাতে করে সেটি সত্য বলেই প্রতিষ্ঠিত হয়। 

২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় আমি দেশেই ছিলাম। কিছু কিছু কেন্দ্রে ভোটে হয়ত কিছু গণ্ডগোল হতেই পারে। কিন্তু এটিই সত্য যে, বিএনপি ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে, প্রার্থী দিয়েছে এবং তারা বিপুলভাবে পরাজিত হয়েছে। 

২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হবার পর তৎকালীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান এবং অনেক মার্কিন কূটনীতিকরা বাংলাদেশ সফরেও আসেন। এতদিন এ বিষয়ে কেউ কথা বললেন না। কিন্তু এখন হঠাৎ ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তাদের কাছে অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি বলে তারা যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এটি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সস্তা ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই না। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এখানে লবিস্টের মাধ্যমে কোন লেনদেন হয়েছে। আমাদের দেশে যেটি ঘুষ, আমেরিকায় সেটি লবিস্ট। মূলত শব্দ আলাদা কিন্তু কাজ একই। সুতরাং এটি বাংলাদেশকে চাপে রাখার জন্য আমেরিকার একটি কৌশল বলেই আমার মনে হয়। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এটি মনে রাখা প্রয়োজন যে, সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা এখন রাষ্ট্র প্রধান। বঙ্গবন্ধু যে রকম বাংলাদেশের জন্য মাথানত করেননি, বঙ্গবন্ধুর কন্যাও কোথাও মাথানত করবেন না।

রাজনীতি করতে হয় নীতি এবং আদর্শ রেখে। যারা নীতি এবং আদর্শ রেখে রাজনীতি করে, তাদের নীতি এবং আদর্শ অনন্তকাল মানুষের মধ্যে বেঁচে থাকে। ঠিক এ কারণেই আওয়ামী লীগ এখনও টিকে আছে। নীতি এবং আদর্শ আছে বলেই বঙ্গবন্ধুর গড়া সংগঠন ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ এখনও টিকে আছে। দার্শনিক শেখ হাসিনাও নীতি এবং আদর্শের জায়গায় অনড়। তাই তার ভয়ের কিছু নেই। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সিএনএন’কে দেয়া সাক্ষাৎকারে অনেক প্রশ্ন এসেছে এবং তিনি খুব স্পষ্টভাবে সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। কোন প্রশ্নই তিনি পাশকাটিয়ে যেতে চাননি যা অনেক রাজনীতিবিদই করে থাকেন। 

সুতরাং, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এটি একটি ষড়যন্ত্রের অংশ। কিন্তু এই কাচা ষড়যন্ত্র করে কোন লাভ হবে না। কারণ জনগণ এত বোকা না। তারা এসব ষড়যন্ত্র ঠিকই বোঝেন। আমেরিকার এমন কাঁচা ষড়যন্ত্রের দুই পয়সারও দাম নেই। এসব ষড়যন্ত্র করে তারা শেখ হাসিনার কিছুই করতে পারবে না। আমি তাদেরকে বলব যে, অযথা টাকা নষ্ট না করে বরং আপনাদের দেশে যারা খেতে পারে না, চিকিৎসা নেয়ার সামর্থ যাদের নেই তাদের পেছনে খরচ করুন। তাতে আপনাদের দেশের মানুষই উপকৃত হবে।

বাংলাদেশ   আমেরিকা  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র এবং চাপমুক্ত শেখ হাসিনা


Thumbnail

দেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে। গত ১৩ মার্চ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশকে একটি মহল অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে। তবে তিনি বলেছেন, এমন কোনো চাপ নেই যা শেখ হাসিনাকে দিতে পারে। নির্ভার এবং আত্মবিশ্বাসী প্রধানমন্ত্রী। তার এ আত্মবিশ্বাসী মনোভাবই জাতিকে স্বস্তি দেয়। সাহস দেয়। আওয়ামী লীগ সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন। ঐতিহাসিকভাবে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানী আওয়ামী লীগ গঠন করলেও আমরা এখন যে আওয়ামী লীগ দেখি সেই আওয়ামী লীগের সত্যিকারের প্রাণভোমরা ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এমনকি ডাকসাইটে আওয়ামী লীগের নেতারাও তাকে ছয় দফা দেওয়ার পর ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। তারপরও তিনি আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করেছিলেন এবং সেই সুসংগঠিত আওয়ামী লীগ দ্বারাই তিনি দেশকে স্বাধীন করেছেন। কোনো চাপের কাছে জাতির পিতা নতি স্বীকার করেননি। শেখ হাসিনাও সে রকম ভয়হীন একজন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক। একজন বিশ্বনেতা। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে তিনি আজকের জায়গায় এসেছেন। প্রতিকূলতাকে জয় করেই তিনি সাফল্যের শিখরে।

সাম্প্রতিককালে অনেক বুদ্ধিজীবী এখন শেখ হাসিনাকে খাটো করার চেষ্টা করছেন। তাদেরই একজন খালেদা জিয়ার রাজনীতির ব্যাপারে লিখেছেন- খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে আসাটা এমন ছিল না যে ‘এলাম, দেখলাম এবং জয় করলাম’। তিনি হয়তো ভুলে গেছেন যে, খালেদা জিয়া যে দলে এলেন সেই দল তো ক্যান্টনমেন্টে জন্মগ্রহণ করা দল। সেই সঙ্গে তিনি তুলনা করেছেন যে, শেখ হাসিনা দেশের বাইরে থাকতেই ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ তাকে সভানেত্রী নির্বাচিত করেছিলেন। তিনি এখানে উদাহরণ দিয়েছেন যে, শেখ হাসিনা ‘এলাম দেখলাম এবং জয় করলাম’- এর মতো ১৯৮১ সালে রাজনীতিতে এসেছেন।

শেখ হাসিনার রাজনীতিতে আসাটা ‘এলাম, দেখলাম এবং জয় করলাম’-এর মতো কখনোই ছিল না। স্কুলজীবনেই রাজনৈতিক কর্মকান্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। ১৯৬২-তে স্কুলের ছাত্রী হয়েও আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন। আজিমপুর গার্লস স্কুল থেকে তাঁর নেতৃত্বে মিছিল গিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, স্কুলের ছাত্রী হিসেবে সরাসরি তখনকার একটি রাজনৈতিক সভায় যোগ দেওয়া শুধু তাঁর সাহসিকতাই নয়, তাঁর রাজনৈতিক সচেতনতারও পরিচয় বহন করে। সেই সময়ের কথা চিন্তা করলে এটি অত্যন্ত কঠিন কাজ ছিল। সুতরাং শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবনের সূচনা ১৯৮১ সালে নয় বরং ১৯৬২ সালে। তাঁর পিতা শেখ মুজিব থেকে বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির পিতা হয়েছেন। তাঁর কন্যা হিসেবে স্বাভবিকভাবেই তাঁর পিতার কাছ থেকে রাজনীতি শিখেছেন। ইচ্ছা না থাকলেও শিখেছেন। কারণ পরিবেশটাই ছিল একটি রাজনীতির কারখানা। তার মা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবও ছিলেন অত্যন্ত রাজনীতিক-সচেতন। যখন মেয়েদের মধ্যে ছাত্রলীগ ছিল না বললেই চলে তখন শেখ হাসিনা গভর্নমেন্ট ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজে (বর্তমানে বদরুননেসা সরকারি মহিলা কলেজ) অধ্যয়নকালে ১৯৬৬-৬৭ শিক্ষাবর্ষে কলেজ ইউনিয়নের সহসভাপতি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। আমি তখন মেডিকেলে পড়ি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি। এ নির্বাচনে দাঁড়ালে শেখ হাসিনা শুধু হারবেনই না কতটা খারাপভাবে হারবেন সেটি নিয়ে আমি তখন ভীষণ চিন্তিত। আমি তাকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু তিনি মানতে নারাজ। আমাকে জেদ না দেখালেও তাঁর কথায় বুঝতে পারলাম তিনি ভীষণ জেদি। তিনি বললেন, আমি নির্বাচনে দাঁড়াব এবং জয়ী হব। আপনারা যদি আমাকে নির্বাচনে পোস্টার লাগানো থেকে শুরু করে কোনো সহায়তা করতে পারেন তাহলে ভালো, না পারলে করবেন না। তখন তো মোনায়েম খানের কঠিন যুগ এবং তার পিতা তখন ছয় দফা দিয়েছেন। তারপরও তিনি সহসভাপতি নির্বাচনে দাঁড়ালেন। ইতোমধ্যে মোনায়েম খান পাবলিকলি বললেন যে, শেখ মুজিবের মেয়ে যদি নির্বাচনে বিজয়ী হয় তাহলে এটা ছয় দফার জন্য ম্যান্ডেট হয়ে যাবে। এ অবস্থার মধ্যেই তিনি নির্বাচন করলেন। তখনকার সময়ে ছাত্রলীগ কর্মীরা একে অপরের ভাই-বোনের মতোই ছিল এবং আমি একজন ছাত্রলীগকর্মী হিসেবে আরেকজন ছাত্রলীগকর্মীকে যতটুকু পেরেছি সহায়তা করেছি। কিন্তু যখন নির্বাচন শেষ হয়ে গেল এবং নির্বাচনের ফল প্রকাশিত হবে তখন আমি এবং আমার সঙ্গে দুই ছাত্রলীগের বড় ভাই মাঠে বসে বাদাম খাচ্ছি আর ভাবছি বেশি খারাপভাবে যেন শেখ হাসিনা না হারে। এর মাঝে খবর এলো শেখ হাসিনা নির্বাচনে জিতে গেছেন। আমি প্রথমে এটাকে বিশ্বাস করিনি। পরে আরেকটু খোঁজ নিয়ে দেখলাম এটা সত্য ঘটনা। তার আরও কিছু পরে জানা গেল তিনি শতকরা ৭৩ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। শেখ হাসিনার তখন থেকেই যে অরগানাইজিং ক্যাপাসিটি এবং নির্বাচনে যে তিনি এভাবে জিততে পারেন এটা আমাদের কারও চিন্তায়ও ছিল না।

বঙ্গবন্ধু যখন কঠিন সময়ে জেলে তখন গুরুত্বপূর্ণ যেসব বার্তা সেগুলো অনেক সময় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব দিতেন। তাকে জেলে যেতে না দিলে গুরুত্বপূর্ণ খবরাখবরগুলো দলের জন্য শেখ হাসিনাই বহন করতেন এবং সেই খবরগুলো এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে, তখনকার সরকার বা তার এজেন্টরা যদি জানতে পারত তাহলে শেখ হাসিনাকে হত্যাই করে ফেলত। কিন্তু সেই সময়ও তিনি সাহস দেখিয়েছেন যেটি একটি রাজনীতিবিদের জন্য থাকা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। কঠিন সময়ে সাহস যারা দেখাতে পারে না তারা রাজনীতিবিদ হতে পারে না। তার প্রমাণ হয়েছে ১৯৭৫-এ, এক-এগারোতে এবং আরও অনেক কঠিন কঠিন সময়ে। সেই সময় শেখ হাসিনা তাঁর বুদ্ধিমত্তা এবং রাজনৈতিক সাহস দেখিয়েছেন।

১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলের সভাপতি হন এবং দলকে সুসংগঠিত করে ২১ বছর পরে প্রতিবিপ্লবীদের প্রতিহত করে আবার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনেন। প্রতিবিপ্লবীদের প্রতিহত করে ক্ষমতায় আসার ইতিহাস সমগ্র বিশ্বে খুব কমই আছে। তাদের মধ্যে একজন হচ্ছেন শেখ হাসিনা। সুতরাং শেখ হাসিনাকে যদি কেউ ‘এলাম দেখলাম জয় করলাম’ মনে করে পত্রিকায় লেখা ছাপায় তাহলে তারা হচ্ছেন সত্যিকার অর্থে টাকার জন্য নিজেকে বিক্রি করা ব্যক্তি।

শেখ হাসিনার উত্তরণ এবং বিকাশ কোনো ম্যাজিক নয়। বরং সততা, ন্যায়-নিষ্ঠা এবং আদর্শের জন্যই তিনি সব প্রতিকূলতাকে জয় করে আজকের জায়গায় এসেছেন। নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র অতীতেও হয়েছে। কিন্তু সেই ষড়যন্ত্রে লাভ হয়নি। আগামী নির্বাচন নিয়েও ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহল নানা খেলা খেলছে। ড. ইউনূসও মাঠে নেমেছে। কিন্তু আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এসব চাপকে জয় করেই গণতন্ত্র রক্ষা করবেন শেখ হাসিনা।


লেখক : সাবেক উপদেষ্টা, চেয়ারম্যান, বিএমআরসি।

ইমেইল : modasseraliey@gmail.com


নির্বাচন   ষড়যন্ত্র   শেখ হাসিনা  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

যাঁর আলোয় আলোকিত বাংলাদেশ


Thumbnail

নিপীড়িত, নিষ্পেষিত আর অধিকার বঞ্চিত বাঙালিকে নির্মম শাসন- শোষণ, অমানবিক নির্যাতন,সর্বোপরি দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে যিনি মুক্ত করেছিলেন, তিনিই বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আজকের এই সুজলা - সুফলা, শস্য - শ্যামলা স্বাধীন দেশটি তাঁরই স্বপ্নের ফসল।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের আজকের দিনে ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার পাটগাতি ইউনিয়নের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে  জন্মগ্রহণ করেন।আজ জাতির পিতার  ১০৩ তম জন্মবার্ষিকী।  তাঁর বাবা শেখ লুৎফর রহমান গোপালগঞ্জ দায়রা আদালতের সেরেস্তাদার (যিনি আদালতের হিসাব সংরক্ষণ করেন) ছিলেন। মাতা সায়েরা খাতুন। এই দম্পতির চার কন্যা এবং দুই পুত্রের সংসারে মুজিব ছিলেন তৃতীয় সন্তান। তার বড় বোন ফাতেমা বেগম, মেজ বোন আছিয়া বেগম, সেজ বোন হেলেন ও ছোট বোন লাইলী;তার ছোট ভাইয়ের নাম শেখ আবু নাসের।

টুঙ্গিপাড়া নামক  অজপাড়াগাঁয়ে জন্ম নেয়া শেখ পরিবারের সেই ছোট্ট খোকাই হয়ে উঠেছেন একটি জাতির মুক্তির মহানায়ক।

বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস দ্বন্দ্ব-সংগ্রামের ইতিহাস। ২৩ বছরের রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রাম ও দীর্ঘ ৯ মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতি তাদের সোনালি অর্জন স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে আনতে সচেষ্ট হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ডানাতে  ভর করেই বাঙালি বিশ্ব মানচিত্রে নিজেদের জন্মভূমিকে জায়গা করে দিয়েছে। পরাধীনতার এই শৃঙ্খল থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্ত করার অদম্য সাহস জুগিয়েছিলেন জাতির পিতা।  রাজনৈতিক জীবনের প্রথম লগ্ন থেকেই নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন দেশের জন্য। দেশ এবং দেশের মানুষের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দেয়াই ছিল তার প্রধান ব্রত। তাঁর এই দেশপ্রেম তাকে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও বাংলাদেশের জাতির জনক হিসেবে পরিচিত করে বিশ্বব্যাপী। ৫৫ বছরের সংগ্রামী জীবনে বঙ্গবন্ধু ৪ হাজার ৬৮২ দিন কারাভোগ করেছেন। যা তাঁর জীবনের সিকিভাগ। জেল-জুলুমের অমানবিক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে এবং ভাষা আন্দোলন ও বাঙালির মুক্তি সংগ্রামে অবিস্মরণীয় অবদান রেখে তিনি পরিণত হন জাতির জনক ও বিশ্ব নেতৃত্বে।জাতির পিতার সমগ্র শৈশব পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই, তিনি তাঁর শৈশব অতিবাহিত করেছেন এ বাংলার জল, কাদা আর পানিতে।মানুষের অত্যন্ত কাছাকাছি থেকেছেন সেই শিশুকাল থেকেই।শৈশব থেকেই তিনি মানুষের হৃদয়ের গভীরে ঠাঁই করে নিয়েছিলেন।যার প্রতিফলন আমরা তাঁর সমগ্র রাজনৈতিক জীবনে লক্ষ্য করি।   শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানের সংবর্ধনায় বঙ্গবন্ধু উপাধি পান। ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় বলেন, '... জনগণের পক্ষ থেকে আমি ঘোষণা করছি ... আজ থেকে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশটির নাম পূর্ব পাকিস্তানের পরিবর্তে শুধু বাংলাদেশ।'৭১- এর ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু তাঁরঐতিহাসিক ভাষণে বাঙালিকে ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন - "এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম;এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম"। বঙ্গবন্ধুর ঐ ডাকে বাংলার আপামর জনতা মুক্তিযুদ্ধে প্রস্তুত হয়েছিল।তাঁরই প্রেরণায় এবং বজ্রকণ্ঠে অনুপ্রাণিত হয়ে নিরস্ত্র বাঙালি আমজনতা পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।  ২৬ মার্চ পাকবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগেই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। তিরিশ লক্ষ শহীদের রক্তের সাগরে উদিত হয়েছিল বাংলার স্বাধীনতার লাল সূর্য। কয়েক লক্ষ মা-বোনের লুণ্ঠিত সম্ভ্রম ও কোলশূন্য আর্তনাদে বিষাদময় আকাশে-বাতাসে উড্ডীন হয় স্বাধীন সোনার বাংলার লাল সবুজের পতাকা।

পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে বাঙালি মুক্তি লাভ করল। প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তান সরকার তাদের কারাগারে রাখতে পারল না। বন্দিজীবন থেকে তাঁকে মুক্তি দিতে বাধ্যই হয়েছিল পাকিস্তান সরকার। পাকি সরকারের বন্দিশালা থেকে সদ্য মুক্ত হওয়ার পর সাংবাদিকরা বঙ্গবন্ধুকে প্রশ্ন করেছিলেন-  " আপনি যে আপনার বাংলাদেশে ফিরে যাবেন সেই দেশ তো এখন ধ্বংসস্তূপ! তখন বঙ্গবন্ধু জবাবে বলেছিলেন, "আমার বাংলার মানুষ যদি থাকে, বাংলার মাটি যদি থাকে, একদিন এই ধ্বংসস্তূপ থেকেই আমি আমার বাংলাদেশকে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, শস্য- শ্যামলা সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করব"।

বঙ্গবন্ধু সারাটি জীবন দেশের  মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের তাগিদে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। তিনি মনে - প্রাণে চেয়েছিলেন এদেশের খেটে খাওয়া,মেহনতি  মানুষ যেন সুখে থাকে, পেটে অন্ন থাকে, হাতে পয়সা থাকে। এককথায় বাঙালির জীবন যেন হাসি- খুশিতে ভরপুর থাকে। বঙ্গবন্ধু এমন একজন স্বাপ্নিক সত্ত্বা যিনি স্বপ্ন দেখতেন দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ নিজস্ব অর্জন দিয়ে সাফল্য লাভ করবে। এমনকি পৃথিবীর বুকে নিজস্ব - অর্জন, সম্পদ,কৃতিত্ব দিয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করবে। জাতির পিতা শোষণহীন- বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন। তিনি প্রতিনিয়ত ভাবতেন বাংলার মানুষ উন্নত জীবন পাবে। দারিদ্র্যের গ্লানি থেকে মুক্তি পাবে, বেকারত্ব ঘুঁচে যাবে,সমূলে উৎপাটন হবে  দুর্নীতির বিষদাঁত।সদ্য স্বাধীন দেশকে সোনার বাংলায় পরিনত করতে স্বপ্ন দেখেছেন।উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে পুনর্গঠন করতে বহুমুখী পরিকল্পনাও করেছিলেন।

বঙ্গবন্ধু চিরকাল মানুষকে  যোগ্য  সম্মান ও মর্যাদা দেয়ার কথা অকপটে বলে গেছেন। প্রতিটি নাগরিকের মর্যাদা নিশ্চিত করতে তাইতো বলেছেন, "এই স্বাধীন দেশে মানুষ যখন পেট ভরে খেতে পাবে,পাবে মর্যাদাপূর্ণ জীবন; তখনই শুধু এই লাখো আত্মা তৃপ্তি পাবে। প্রতিটি নাগরিকের মর্যাদা নিশ্চিত করা খুব জরুরি "।শেখ মুজিবুর রহমান আপাদমস্তক একজন সত্যিকারের বীর বাঙালি। তিনি চেয়েছিলেন সম্মানের সঙ্গেই  বাঙালি জাতি বেঁচে থাকবে। বাংলার  মানুষ প্রতিনিয়ত  বিভিন্ন ভাবে প্রাপ্ত সম্মান ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিশেষ করে  অফিস,আদালতসহ সরকারি - বেসরকারি বিভিন্ন সেক্টরে। সাধারণ জনগণ সরকারি- বেসরকারি বিভিন্ন  কর্মচারীর কাছে ইদানিং যেভাবে অপদস্থ হচ্ছে সেটা জাতির পিতাও  পছন্দ করতেন না।তাঁর এই উক্তিতে বিষয়টি স্পষ্টভাবে ফুটে উঠে। " সরকারি কর্মচারীদের অনুরোধ করে বলেন, যাদের অর্থে আমাদের সংসার চলে, তাদের সেবা করুন"।

বঙ্গবন্ধু বাংলার সাধরণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দেখলে কখনো স্বাভাবিক থাকতেন না। দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর,চোরাকারবারীদের কারণে বাংলার সহজ সরল মানুষগুলো যখন দুর্ভোগ পোহায় তখন অভিভাবক হয়ে এটা মানতে পারতেন না। তাই তো তিনি বলেছিলেন, " দীর্ঘ ৩ বছর পর্যন্ত এদের আমি অনুরোধ করেছি,আবেদন করেছি, হুমকি দিয়েছি, চোরে নাহি শুনে  ধর্মের কাহিনী। কিন্তু আর না। বাংলার মানুষের জন্য জীবনের যৌবন আমি কারাগারে কাটিয়ে দিয়েছি। এ মানুষের দুঃখ দেখলে আমি পাগল হয়ে যাই"।বঙ্গবন্ধু এমনই ছিলেন, দেশ ও দেশের মানুষের জন্য তাঁর মন হু হু কাঁদত।বঙ্গবন্ধু মনে-প্রাণে গণতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন। গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তিনি বলেছিলেন, " আমি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি।জনগণের ভোটে জনগণের প্রতিনিধিরা দেশ চালায়, এর মধ্যে কারও কোনো হাত থাকা উচিত নয়"।

যুগে যুগে ধর্ম নিয়ে বহুদেশে হানাহানি,সংঘাত,রক্তপাত এমনকি জীবনও দিতে হয়েছে মানুষকে। জাতির জনক সবসময় একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছেন। " আমার রাষ্ট্র হবে ধর্মনিরপেক্ষ। মানে ধর্মহীনতা নয়।মুসলমান তার ধর্ম- কর্ম করবে, হিন্দু তার ধর্ম- কর্ম পালন করবে বুদ্ধিস্ট তার ধর্ম-কর্ম পালন করবে, খ্রিষ্টান তার ধর্ম-কর্ম পালন করবে। কেউ কাউকে বাধা দিতে পারবে না। কিন্তু ধর্মের নামে আর ব্যবসা করা যাবে না"।বাঙালি এই কথায় বঙ্গবন্ধুর চোখে  ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের স্বপ্নই দেখতে পেয়েছিল।  বাংলা,বাংলার ইতিহাস ও শেখ মুজিবুর রহমান তিনটি অবিচ্ছিন্ন সত্ত্বা। একটি ছাড়া অন্যটি যেমন অসম্পূর্ণ তেমনি একটি ছাড়া অন্যটি ব্যাখ্যা করা যায় না।অসাম্প্রদায়িক বঙ্গবন্ধু কখনো সাম্প্রদায়িকতাকে প্রশ্রয় দেন নি।বঙ্গবন্ধু যে সবসময়ে সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী ভূমিকা পালন করেছেন, তা ১৯৬৪ সালে পাকিস্তানি শাসকদের মদতে পূর্ব পাকিস্তানে, বিশেষ করে ঢাকায় একটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়।সেই দাঙ্গাতে হিন্দু পরিবারকে নিরাপত্তা দেয়ার মাধ্যমে তাঁর অসাম্প্রদায়িক চেতনার পরিচয় আমরা পাই । এই যে মানুষের বিপদে এগিয়ে আসা, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাকারীদের সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করা এগুলো অসাম্প্রদায়িকতার চমৎকার উদাহরণ। বাংলার কৃষক,মজুর আজ বেশি লাঞ্চিত ও অবহেলিত। একশ্রেণির মুনাফালোভী, কালোবাজারী স্বার্থান্বেষী মহলের ন্যায্য মূল্য না দেয়া নামক  বিষাক্ত ছোবলে অতিষ্ঠ আমার কৃষক ভাইয়েরা। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা সেদিনই হবে  যেদিন থেকে বাংলার কৃষক ভাইয়েরা ফসলের ন্যায্য মূল্য পাবে। মনে রাখতে হবে কৃষক বাঁচলেই বাংলাদেশ বাঁচবে। কৃষকই দেশের আসল নায়ক। যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আমাদের মুখের অন্ন জোগায়। বঙ্গবন্ধুর আজীবনের লালিত স্বপ্ন ছিল শোষিত, বঞ্চিত, অবহেলিত কৃষকের মুখে হাসি ফোটানো। তাই তিনি সার্বিক কৃষিখাতকে বেশি গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন।

নারীর প্রতি যথাযথ আস্থা ও সম্মান প্রদর্শনের ব্যাপারে তিনি অধিক জোর দিয়েছিলেন। পুরুষের সফলতা বা কোন অর্জনে কোন না কোন নারীর ভূমিকা থাকেই।একজন পুরুষের জীবনে নারীর অবদান অনস্বীকার্য। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের দিকে দৃষ্টপাত করলেই সেটা আমরা উপলব্ধি করতে পারি। বঙ্গবন্ধু পুরুষদের উদ্দ্যেশে তাই বলেছেন, " পুরুষ ভাইরা আমার যখন কোনো রকমের সংগ্রাম করে নেতা হন বা দেশের কর্ণধার হন তাদের মনে রাখা উচিত, তাদের মহিলাদেরও যথেষ্ট দান রয়েছে এবং তাদের স্থান তাদের দিতে হবে "।শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি উন্নতি করতে পারে না। শিক্ষার মাধ্যমেই সত্যিকার উন্নতি সম্ভব।  এই মহান নেতা দেশের মানুষকে  সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে,উন্নত রাষ্ট্রে পরিনত করার স্বপ্ন দেখতেন।নকল করে শিক্ষিত না হয়ে, বরং প্রকৃৃত জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে শিক্ষিত হওয়ার কথা বলেছেন। তাই ছাত্রদের এবং অভিভাবকদের উদ্দ্যেশে তিনি বলেছেন,  " ছাত্র ভাইয়েরা লেখাপড়া করেন। আপনাদের লজ্জা না হলেও আমার মাঝে মধ্যে লজ্জা হয় যখন নকলের কথা শুনি"।অভিভাবকদের উদ্দ্যেশে বলেন, " আমি খবর পাই বাপ- মা নকল নিয়া ছেলেদের - মেয়েদের এগিয়ে দিয়ে আসে। কত বড় জাতি! উঁহু!  জাতি কত নিচু হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু নকল মুক্ত শিক্ষার স্বপ্ন দেখতেন।বঙ্গবন্ধুর দেশে কোন বেকার থাকুক এটা  তিনি কোনভাবেই মানতে পারতেন না। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে যুবক ভাইদের মুক্ত করার চেষ্টা উনি প্রতিনিয়ত করেছেন। তিনি বলেছিলেন, "এই স্বাধীনতা পূর্ণ হবে না যদি এদেশের মানুষ যারা আমার যুবক শ্রেণি আছে তারা চাকরি না পায় বা কাজ না পায়"। বাংলার যুবকরা বেকারত্বের হিংস্র থাবায় নিঃশেষ হোক এমনটা জাতির পিতা কখনো চাননি। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বদা  দুর্নীতি, চুরি, লুটপাট, অনিয়মের বিরুদ্ধে ছিলেন।দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন।

বঙ্গবন্ধু তাই বলেছিলেন, "এখনো কিছু সংখ্যক লোক এত রক্ত যাওয়ার পরেও যে সম্পদ আমি ভিক্ষা করে আনি, বাংলার গরিবকে দিয়ে পাঠাই, তার থেকে কিছু অংশ চুরি করে খায়।... এই চোরের দলকে বাংলার মাটিতে শেষ করতে হবে "। অত্যন্ত  দুঃখজনক এই যে, চুরি ও  দুর্নীতিমুক্ত দেশ আজও আমরা পাইনি। চুরি, দুর্নীতি নামক অপছায়া আজও বাংলার মাটিতে  জিইয়ে আছে।

বঙ্গবন্ধু ছিলেন মনেপ্রাণে তরুণ বাঙালি। অন্যায়ের কাছে তিনি কোনোদিন মাথা নত করেননি। শোষণহীন রাষ্ট্র ও সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। তিনি দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি উৎখাত করার দৃঢ়প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেছেন একাধিক বক্তৃতায়।সামাজিক বৈষম্য কমাতে চেয়েছিলেন, চেয়েছিলেন দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার নির্মূল করতে। বঙ্গবন্ধু মনেপ্রাণে স্বীকার করতেন তিনি একজন বাঙালি, তার ভাষা বাংলা এবং দেশ বাংলাদেশ'।

৭৫- এর ১৫ আগস্ট ঘাতকের বুলেটে আমাদের স্বাধীনতার স্থপতিকে পরিবার পরিজনসহ হত্যা করা হয়।জাতির পিতার হত্যার বিচার সম্পন্ন হয়েছে। ঘাতকদের দণ্ডাদেশ কার্যকর হয়েছে। দণ্ডপ্রাপ্ত কয়েকজন ঘাতক বিভিন্ন দেশে পলাতক আছে। দুই দশকের বেশি সময় ধরে ভারতে আত্মগোপন করা বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি আবদুল মাজেদকে ঢাকার মিরপুর থেকে আটক এবং তার ফাঁসি কার্যকর মুজিববর্ষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপহার। তিনি আজ জীবিত থাকলে হয়তো খুবই খুশি হতেন।

জাতির পিতার অসামান্য আত্মত্যাগ আর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আমরা দেখেছি আলোর মুখ।মূলত তাঁরই আলোয় আলোকিত বাংলাদেশ।

"তোমার কীর্তির চেয়ে তুমি মহৎ/তাই তব জীবনের রথ /পশ্চাতে ফেলিয়া যায় কীর্তিরে তোমার /বারম্বার/তাই/চিহ্ন তব পড়ে আছে, তুমি হেথা নাই "।- (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

তিনি নেই ঠিকই কিন্তু তাঁর আদর্শ,তাঁর চেতনা,তাঁর মহৎ কীর্তি, তাঁর স্বপ্ন বুকে ধারণ করে তাঁরই সুযোগ্য কন্যা, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে অগ্রসরমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে,  পৃথিবীর বুকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড় করিয়েছেন।হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলে অভিহিত করেছিলেন।বাংলাদেশ আজ তলাবিহীন ঝুড়ি নাই। পিতা মুজিবের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নে তাঁরই সুযোগ্য উত্তরসূরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলা দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে, দারিদ্র্যতা দূর করেছেন।তাঁর নেতৃত্বেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনীতির প্রতিটি সূচকে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে রোল মডেল। শেখ হাসিনা সন্ত্রাস এবং জঙ্গি দমনেও সফল। এছাড়া মিয়ানমারে জাতিগত দাঙ্গায় পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে মানবতার অনন্য এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি। বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত হয়েছে,২০২১ সালের ডেল্টা প্ল্যানের মত মেগা প্ল্যান হাতে নিয়েছে। পদ্মা সেতু,মেট্রোরেল, বঙঙ্গবন্ধু টানেল,এলিভেটেড এক্সপ্রেস,৪ লেনের মহাসড়ক  সর্বোপরি জাতির পিতার প্রদর্শিত পথেই এগিয়ে যাচ্ছে আজকের বাংলাদেশ।

"সাবাস বাংলাদেশ / এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়/জ্বলে-পুড়ে ছারখার /তবু মাথা নোয়াবার নয় "।- (সুকান্ত ভট্টাচার্য)।

জাতির পিতার বাংলাদেশ কারো কাছে মাথা নোয়ায়নি আর নোয়াবেও না।

 আজকের তরুণ প্রজন্ম আগামী দিনের কাণ্ডারি হয়ে যে যার অবস্থান থেকে দেশের অগ্রযাত্রায় কাজ করবে। তাই আজ আমরা যারা নতুন প্রজন্ম আছি, তারা সবাই বঙ্গবন্ধুর অদম্য সাহস ও প্রজ্ঞায় অনুপ্রাণিত হয়ে হাজারো বঙ্গবন্ধু হয়ে বাংলার মাটিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকবো।আমরা যেন বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের মাধ্যমে জাতিকে উপহার দিতে পারি অর্থনৈতিক মুক্তি, দিতে পারি মানবিক মূল্যবোধের প্রকৃত স্বাধীনতা, নির্মূল করতে পারি জঙ্গিবাদ আর দূর করতে পারি হানাহানি।একই সঙ্গে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে তাঁর সুযোগ্য কন্যাকে সহায়তা করবো।জাতির পিতা জন্মদিনে এই হোক প্রত্যয় এই হোক অঙ্গীকার।

মো.আহসান হাবিব

তরুণ কলামিস্ট, সদস্য
বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম
সাবেক শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

১৭ মার্চ: বাঙা‌লি জাতি ও ইতিহাসের কালজয়ী এক মহাপুরুষের আনন্দ আগমণ


Thumbnail

এমন মহাপুরুষ একটি যুগে, একটি কালে, একটি দেশে, একটি জাতির পথ প্রদর্শক রূপে , সর্বোপরি পৃথিবীর ইতিহাসের আলোকিত সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হয়ে একজনই আসেন।

“ইতিহাসের মহানায়ক “ হওয়ার মতো যোগ্যতা সম্পন্ন মানুষ সর্বকালের , সব যুগে জন্ম গ্রহন করেন না  । যুগ যুগান্তরের পরিক্রমায় হাতে গোনা দু-একজন মানুষই শুধু  “ইতিহাসের মহানায়ক “ হতে উঠতে পারেন । ইতিহাস তার আপন গতিতেই সৃষ্টি করে মহানায়কের ।আর সেই মহানায়কই হয়ে উঠেন তার কালের প্রধান কারিগর ও স্হপতি । বঙ্গবন্ধু ছিলেন তেমনই একজন কালজয়ী মহাপুরুষ । যিনি একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং জাতিকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন । আবার সেই স্বপ্নের “ স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাও করেছিলেন । বাঙালির মহান মু‌ক্তিদাতা, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, কালজয়ী মহাপুরুষ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

১৯২০ সালের ১৭ মার্চ রাত ৮টার দিকে মা সায়েরা খাতুনের কোল আলোকিত করে আসেন এই মহাপুরুষ। কোমল অথচ তেজস্বী বাংলা মায়ের মতোই তাঁর শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আজ, ১৭ মার্চ বাঙা‌লির এক অপার আন‌ন্দের দিন। বঙ্গবন্ধুর জন্মের সাথে সাথে বাংলাদেশ ও বাঙালির জন্মের সূচনা হয়েছিল সেই দিনই।

বাঙালির অধিকার-স্বাধীনতা-মুক্তির লড়াইয়ে আত্মপ্রাণ নিবেদিত এবং আত্মত্যাগী-অক্লান্ত-অকুতোভয় তিনিই এই বাংলায় একজন। তিনি বাঙালি জাতির জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতার স্বপ্নের কথা বলেছেন, তাঁর জাদুতে বাংলাদেশের মানুষ পেয়েছিল ঐশ্বরিক শক্তি, তাঁর প্রচেষ্টাতেই স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের পৃথিবীর বুকে উজ্জ্বল অবস্থান।

মহৎপ্রাণ মহাপুরুষ শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের ব্রত ছিল দুঃখিনী বাংলার মুখে হাসি ফোটানো, বাংলার মানুষের যোগ্য সম্মান-প্রাপ্য অধিকার আদায়, তাতে নিজের লাভ বা কারো ক্ষতির চিন্তাও তার চেতনায় ছিল না কখনো।  যতদিন পৃথিবীর নশ্বর বুকে ছিলেন তিনি ততদিন বাঙালি অবাঙালি সর্বোপরি সমগ্র মানবজাতির শুভকামনা নিয়ে দাপিয়ে-কাঁপিয়ে ছিলেন জগৎময়।

আজ জাতি আনন্দ-‌বেদনায় উদযাপন কর‌ছে বাংলার অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ও স্থপ‌তি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্ম‌দিন। ১৯৯৭ সাল থেকে তাঁর জন্মদিনটি জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।

১৯৩৮ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলাএ কে ফজলুল হক এবং শ্রমমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সামনে সাহসী উপস্থাপনায় সহপাঠী ও বিদ্যালয়ের ন্যায্য দাবি আদায়ে নেতৃত্ব দি‌য়ে যি‌নি কি‌শোর ছাত্রনেতা হিসেবে আবির্ভূত হলেন । ১৯৪৩ সালে বাংলার দুর্ভিক্ষে অজস্র সহায়হীন  মানুষেরপ্রাণ বাঁচা‌ন তিনি । ১৯৪৬ এর দাঙ্গা প্রতিরোধে অগ্রণী যে কণ্ঠস্বর, ১৯৪৮ ও ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন থেকে আজ পর্যন্ত বাংলার প্রতিটি মানুষের প্রতিটি মুখের বুলিতে নতুন করে জন্ম নিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু । ১৯৫৪ থেকে ১৯৬৩ অবহেলিত বাঙালির স্বায়ত্তশাসনের একুশ দফায় থেকে স্বাধীনতার সূর্য হয়ে তিনি জন্মেছেন । ‘৫৮, '৬৬, '৬৯, '৭০, '৭১ এই যে ধারাবা‌হিক সংগ্রা‌মের ইতিহাসে বাংলার মানুষের স্বাধীনতা-স্বাধিকারে বেঁচে থাকার প্রতিদি‌নের অনুপ্রেরণা হ‌য়ে মিশে আছেন তিনি ।

১৯৭১ সাল। স্বাধীনতার দাবিতে উত্তাল বাংলাদেশ। ৭ মার্চে ঐতিহাসিক ভাষণ দিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।অসহযোগ আন্দোলন চলমান। ১৯৭১-এর ১৭ মার্চ ছিল বঙ্গবন্ধুর ৫২তম জন্মদিন। ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে আলোচনা শেষে দুপুরে ধানমন্ডির বাসভবনে সাংবাদিকরা তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করছিল । তাঁর কণ্ঠ বেদনার্ত হয় একপর্যায়ে। তিনি বলেন, "আমি জন্মদিন পালন করি না। আমার জন্মদিনে মোমের বাতি জ্বালি না, কেকও কাটি না। এদেশে মানুষের নিরাপত্তা নাই। আপনারা আমাদের জনগণের অবস্থা জানেন।অন্যের খেয়ালে যে-কোনো মুহূর্তে তাদের মৃত্যু হতে পারে। আমি জনগণেরই একজন, আমার জন্মদিনই কি, আর মৃত্যুদিনই কি? আমার জনগণের জন্য আমার জীবন ও মৃত্যু ।"

নিজের জন্মদিন নিয়ে কোনোদিন আলাদা করে ভাবার কোনো প্রয়োজন মনে করেননি তিনি। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে তাঁর মনে এক ভাবনা, মানবতার কল্যাণ কামনা । তাঁর জন্মদিনে তাঁর কাছ থে‌কে মানবতার সেবা ও জয়গান আমাদের প্রাপ্তি। শৈশবে রাস্তার পাশে শীতে কাতর হওয়া বৃদ্ধের গায়ে  নিজের চাদর জড়িয়ে দিয়ে, দুর্দশা পীড়িত মানুষের মনে সাহস যোগাতেন তিনি। ১৯৩৭ সালে  মুষ্টিভিক্ষা করে 'মুসলিম সেবা সমিতি'র মাধ্যমে গ‌রিব ছাত্র-ছাত্রী‌দের পা‌শে দাঁড়ান তিনি । জন্মদিনে এক সাংবাদিক বঙ্গবন্ধুকে প্রশ্ন করেন, "আপনার ৫২তম জন্মদিনে আপনার সবচাইতে বড়ো ও পবিত্র কামনা কী ?  উত্তরে বঞ্চিত বাঙালির অবিসংবাদিত নেতার দ্বিধাহীন উত্তর, "জনগণের সার্বিক মুক্তি।"  প্রতিটি মুক্তির আকাঙ্ক্ষায়, মুক্তির প্রতিটি নিঃশ্বাসে জন্মে থাকেন জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান।

এক জনসভায় বক্তৃতা কালে তিনি বলেছিলেন, "একজন মানুষ আর কী চাইতে পারে- আমি যখন ভাবি দূরে এক জনশূন্য পথের ধারে আলো-ছায়ায় এক লোক লণ্ঠন হাতে দাঁড়িয়ে আছে শুধু আমাকে এক নজর দেখবে বলে, তখন মনে হয়, একজন মানুষের পক্ষে আর কী চাওয়া-পাওয়ার থাকতে পারে ।" অবহেলিত, বঞ্চিত, নিগৃহীত, অত্যাচারিত প্রতিটি মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ছিল প্রগাঢ় ভালোবাসা । সেটি প্রতিফলিত হয়েছে, তাঁর প্রতিটি কর্মে এবং চিন্তায়।


তিনি শুধুই যে বাঙালির জন্য ভাবতেন তা নয় । তার চিন্তা-চেতনা-বোধ ছিল বিশ্বজনীন । ইনিই তো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যিনি রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হয়েও সরকারি বাসভবনে থাকতেন না। খুব সাধারণ ৩২ নম্বরের বাড়িটিতেই আমৃত্যু থেকেছেন। ধানমন্ডিতে যখন প্লট বরাদ্দ দেয়া হয় তখন ভালো একটি প্লট নেয়ার জন্য সবার শত অনুরোধ সত্ত্বেও বলেছিলেন, "আগে সবাইকে দাও, তারপর যদি থাকে তখন দেখা যাবে।" আবার বঙ্গবন্ধুই  ১৯৭৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর, আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে বক্তৃতায় বলেছিলেন, "বিশ্ব আজ দু'ভাগে বিভক্ত শোষক আর শোষিত; আমি শোষিতের পক্ষে ।"

বঙ্গবন্ধু এমন বিশাল হৃদয়ের মানুষ ছিলেন যার হৃদয়তলে আমরা দাঁড়াতে পারি, কিন্তু সমকক্ষ হতে পারি না কেউ। ইতিহাসে অনেক নন্দিত নেতার নাম আছে, কেউ কি আছেন মানব কল্যাণে এত বিস্তৃতভাবে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন । জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই অমর অবিসংবাদিত সেই সংগ্রামী নেতা যিনি বলেন, 'একজন মানুষ হিসাবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি ।একজন বাঙালি হিসাবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায় । এই নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালোবাসা - অক্ষয় ভালোবাসা- যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে ।'

১৯৭১ সালের ৫ এপ্রিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউজউইক পত্রিকা শেখ মুজিবুর রহমানকে “রাজনীতির কবি” বলে আখ্যায়িত করে লিখেছিলেন, “তিনি লক্ষ লক্ষ মানুষকে আকর্ষণ করতে পারেন, সমাবেশে এবং আবেগময় বাগ্মিতায় তরঙ্গের পর তরঙ্গে তাঁদের সম্মোহিত করে রাখতে পারেন । তিনি রাজনীতির কবি।” পুরোবিশ্ব তাঁর মাহাত্ম্য উপলব্ধি করেছে । বিশ্বব্যাপী তাঁর মানবতার জয়গান শোনা যায়।

কিউবার ফিদেল কাস্ত্রো ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে জোট-নিরপেক্ষ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্বকে হিমালয় পর্বতমালার সাথে তুলনা করে বলেন, ' আই হ্যাভ নট সিন দ্য হিমালয়েজ । বাট আই হ্যাভ সিন শেখ মুজিব । ইন পারসোনালিটি অ্যান্ড ইন কারেজ, দিস ম্যান ইজ দ্য হিমালয়াজ। আই হ্যাভ হ্যাড দ্য এক্সপিরিয়েন্স অব উইটনেসিং দ্য হিমালয়েজ ।' 

২০০৪ সালের বিবিসি বাংলা সারা বিশ্বে জরিপ চালিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে নির্বাচিত করে । ২০১৯ সালের ১৬ আগস্ট জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে কূটনীতিকেরা তাকে ‘ফ্রেন্ড অব দ্য ওয়ার্ল্ড' আখ্যা দেয় ।

বিশ্ব শান্তি পরিষদের সাবেক মহাসচিব রমেশ চন্দ্র বলেছিলেন -‘শেখ মুজিব ছিলেন একজন শান্তির মানুষ, একজন স্বাধীনতার মানুষ এবং একজন বিশ্বমানব। তিনি শুধু বঙ্গবন্ধু (বাংলাদেশের বন্ধু) নন, তিনি বিশ্ববন্ধুও (বিশ্ববন্ধু)।’

বিশ্ব শান্তি পরিষদ ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গবন্ধু  শেখ মুজিবুর রহমানকে জুলিও ক্যুরি শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যা করা হয়। যারা হত্যাকাণ্ড ঘটায়, তারা ভেবেছিল বঙ্গবন্ধুকে বাংলার মাটি থেকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলবে । কিন্তু চক্রান্তকারীরা জানে না, বঙ্গবন্ধু কখনো মরেন না । সেদিন বঙ্গবন্ধুর শরীর থেকে যে রক্ত ওরা ঝরিয়েছে সেই রক্তেই আবার নতুন করে জন্ম নিয়েছে বাংলাদেশ। হন্তারকের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের দেহ থেকে রক্ত গ‌ড়ি‌য়ে গ‌ড়ি‌য়ে বাংলার অবারিত প্রকৃ‌তি, প্রতিটি মানুষ, প্রতিটি শ্বাসে-প্রশ্বাসে আরও বেশি করে জে‌গে উ‌ঠেছেন তিনি ।

বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে হলে, প্রকৃত দেশপ্রেম নিয়ে সচেতনতার সঙ্গে আমাদের সকলকে দেশের জন্য কাজ করতে হবে । সেটাই হবে জন্মশতবর্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা ওসম্মান প্রদর্শনের শ্রেষ্ঠ উপায় । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কোনো মৃত্যু নেই, তিনি শুধুই জন্ম নেন,  ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ থেকে আজকের ১৭ই মার্চ পর্যন্ত তিনি আছেন এবং থাকবেন ততদিন পর্যন্ত যতদিন পৃথিবীতে শুভ কর্ম ও চিন্তার জন্ম থাকবে । মানু‌ষের মঙ্গল ও শুভচিন্তার কুঁড়িতে তাঁর অবস্থান । কুঁড়ি প্রস্ফুটিত মানবতার ফুলে মর্ত্যে সর্বক্ষণ হেসে থাকেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে তিনি প্রতিটি শুদ্ধচর্চায় বেঁচে থাকবেন অন্ততকাল।

স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন যেমন দেখেছিলেন তেমনি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ার প্রচেষ্টায় তিনিই ছিলেন সদাসচেষ্ট। ১৯৭১সালে পাকিস্তানি জান্তার ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা বাংলাকে '৭২থেকে '৭৫ এর প্রতিটি দিনের পরিশ্রমে নতুন জীবন দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। এখনও পর্যন্ত তার সুযোগ্য কন্যা বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতেই বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, পৃথিবীর ইতিহাস যত দিন থাকবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একইভাবে প্রজ্জ্বলিত হবেন প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে, প্রতিটি মুক্তিকামী, শান্তিকামী, মানবতাবাদীর হৃদয়ে । বঙ্গবন্ধুর জীবন দর্শন চিরকাল বাঙালি জাতিকে অনুপ্রাণিত করবে- পথ দেখাবে । বাঙালি জাতি শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতাও ভালোবাসায় বাংলাদেশের ইতিহাস বিনির্মাণের কালজয়ী এ মহাপুরুষকে চিরকাল স্মরণ করবে ।

আজকের এই ১০৩তম জন্মদি‌নে গভীর শ্রদ্ধা জানাই কালজয়ী মহাপুরুষ বাঙা‌লির মু‌ক্তির মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।


লেখক : মাহবুবউল আলম হানিফ
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক,
বাংলা‌দেশ আওয়ামী লীগ।



মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন