বাঙালি ও বাংলাদেশের মানুষের
কাছে বছরে কয়েকটি দিন আসে যা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ,
স্মরণীয় আর শ্রদ্ধার দিন।
১৯৫২ সালে আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে রক্ষা করতে অনেক মানুষ প্রাণ দিয়েছিল। সেইদিনই বলা যায় শুধু আমাদের পরিচয়, আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে রক্ষা করা নয় সাথে সাথে
স্বাধীনতার সংগ্রামের বীজ রোপণ করা হয়েছিল। বাঙালি বিভিন্ন নিপীড়ন, প্রতিবন্ধকতা এবং ধ্বংসযজ্ঞ অতিক্রম করে, ভাষার জন্য যারা তাদের জীবন দিয়েছিলেন তাদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করতে, তাদের শ্রদ্ধা জানাতে একটি স্মৃতিস্তম্ভ শহীদ মিনার তৈরি করেছিল। সেই থেকে প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারী আমরা সবাই শহীদ মিনারে একত্রিত হই, যারা নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল, জীবন দিয়েছিল তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য। আজ ২১শে ফেব্রুয়ারি
আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস। আজ মাতৃভাষার অধিকার
রক্ষার লড়ায়ে বিশ্বের প্রতিটি মানুষের জন্য ২১শে ফেব্রুয়ারি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। আজ এই লড়াইয়ে
যারা প্রাণ দিয়েছেন সেই বাঙালিদের বিশ্ববাসী জানে এবং শ্রদ্ধা করে। আমি নিশ্চিত বাংলাদেশে এলে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে তারা যাবে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানি বর্বর সেনাবাহিনী গণহত্যা চালায়। স্বাধীনতার অর্জনের ঠিক কয়েকদিন আগে ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১
তারা আমাদের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে বধ্য ভূমিতে ফেলে দিয়েছিল। তাদের শ্রদ্ধা এবং তাদের স্মরণ করার জন্য, আমাদের মুক্তির পরের প্রজন্মের সন্তানরা যাতে স্বাধীনতার মুল্য বুঝতে পারে আর স্বাধীনতার জন্য
যারা জীবন উৎসর্গ করেছিল তাদের জীবন কথা না ভুলে যায়
তার জন্য জয়লাভের পর ঢাকায় একটি
অপুর্ব বিস্ময়কর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ তৈরি করা হয়। এটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আরেকটি ঐতিহাসিক স্থান। বাংলাদেশে ১৪ ডিসেম্বরকে শহীদ
বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে স্মরণ করা হয়। সেইদিন অনেক নেতা, দল আর মানুষ
সেখানে যায়। আমি বিশ্বাস করি যদি জায়গাটি উপযুক্ত করা হয়, তাহলে সেখানে প্রতিদিন দেশী, বিদেশী দর্শনার্থীসহ সব বর্ণের মানুষ
যেতে চাইবে।।
পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ স্থান হল সাভারে আমাদের
জাতীয় শহীদ সমৃতিস্তম্ভ। স্বাধীনতার সংগ্রাম এবং স্বাধীনতার জন্য আমাদের আত্মত্যাগের গল্প বলার তীর্থস্থান। বাংলাদেশের মানুষ ও বিশ্বনেতারা বাংলাদেশ
সফরে আসলে সেখানে যান তাদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য। ২৬শে মার্চ এই জায়গাটি হাজার
হাজার মানুষের সাথে পূর্ণ হয়ে ওঠে।
১৯৭৫ সালে জাতির পিতা ও তার পরিবারকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। দুঃখজনকভাবে তার মৃতদেহ তার প্রাপ্য সম্মান পায়নি। ঘাতক ও সামরিক শক্তি বিদ্রোহের ভয়ে তাকে ঢাকা থেকে অনেক দূরে টঙ্গী পাড়ায় সমাহিত করে। সামরিক স্বৈরশাসক ক্ষমতায় থাকাকালে কবরটি অবহেলিত ছিল। বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময়ও কবরটি অবহেলিত থাকে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জাতির পিতার প্রতি সঠিকভাবে অনেক মনোযোগী হয়।মানুষ যাতে আমাদের দেশ, আমাদের স্বাধীনতা ও স্বাধীনতার জন্য জাতির পিতার অবদান, স্বাধীনতা পরবর্তী উন্নয়ন এবং তার আত্মত্যাগ প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং স্মরণ করতে পারে তার জন্য একটি সম্মানজনক সহজ কিন্তু মহিমান্বিত জাতির পিতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ নির্মাণ করে। জাতীর পিতার জন্মদিন ছাড়া অন্য দিনে আমার মত দেশের প্রতিটি কোণ থেকে জাতির পিতার সমাধিতে হাতে গনা কিছু লোক প্রতিদিন সেখানে যান।
আমি এখানে কেবল উদাহরণ স্বরূপ আমাদের ইতিহাস, আমাদের সংগ্রাম এবং স্বাধীনতার কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থানের আলোকপাত করছি। আমি ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ ছেড়ে বিদেশে যাই। তখন থেকে আজ পর্যন্ত আমি
ছয়টি মহাদেশের ১১৫টি দেশে কাজ করার এবং দেখার অনন্য সুযোগ পেয়েছি। প্রতিটি দেশে আমি ইতিহাসের স্থান এবং স্মৃতিস্তম্ভ, তাৎপর্যপূর্ণ সমাধি দেখার চেষ্টা করি। যা দেখে নাগরিক
এবং দর্শনার্থীরা ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারে। আমি দেখেছি সেসব দেশের সরকার সেই জায়গাগুলির উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য
যতাযত বিনিয়োগ করেছে এবং ব্যবস্থা নিয়েছে। এই জায়গাগুলি সপ্তাহ
এবং বছরের প্রতিটি দিন দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। আমার মতো হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন সেই জায়গাগুলোতে যান। সব সময় কিছু
না কিছু উৎসবের আয়োজন করা হয় সেসব জায়গায়। সেই জায়গাগুলো অনেক স্বেচ্ছাসেবক সহ সশস্ত্র বাহিনী
পাহারা দেয়। স্কুলের বাচ্চাদের সেখানে নিয়ে যাওয়া হয় যাতে তারা তাদের ইতিহাস এবং সংগ্রাম দেখতে, বুঝতে, শিখতে পারে এবং সম্মান দেখাতে পারে। বিদেশী দর্শনার্থীরাও সেসব স্থান পরিদর্শন করে এবং সেই দেশ, এর মানুষ এবং
ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারে। প্রতিটি পর্যটন বইয়ে সেই স্থানগুলিকে অবশ্যই দর্শনীয় স্থান হিসাবে উল্লেখ করা হয়।
বাংলাদেশ থেকে যাবার পর ২০১৭ সাল
পর্যন্ত আমি প্রতি দুই বছরে অন্তত একবার এবং ২০১৭ সাল থেকে আমি বছরে অন্তত একবার বাংলাদেশ সফর করি (যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাজের জন্য আমি বেশ কয়েকবার বাংলাদেশে গিয়েছি)। আমি যখন
বাংলাদেশে যাই, আমি সবসময় চেষ্টা করি ওই চারটি এলাকা
ঘুরে দেখার জন্য। গত কয়েক দশকে
অসাধারণ উন্নয়ন দেখতে আর জানতে আমি
প্রতিবার ঢাকার বাইরে আমাদের গ্রামীণ এলাকাতেও যাই। ওই চারটি এলাকা
পরিদর্শন করে, অবহেলা দেখে আমার দারুন মন খারাপ হয়।
হ্যাঁ, জাতীয় শহীদ স্মৃতিসৌধে বিপুল সংখ্যক মানুষ সেখানে যান, বিদেশী বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও নেতাদের শ্রদ্ধা
জানাতে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই কারণেই সেই জায়গাটি সারা বছর ধরে কোনো না কোনোভাবে যুক্তিসঙ্গত
রাখা হয়। তবুও আমি এর চেয়ে অনেক
বেশি আশা করি।
২১শে ফেব্রুয়ারি, শহীদ মিনার রং করা হবে,
পরিষ্কার করা হবে, আল্পনা আঁকা হয় এবং সেইদিন
বিভিন্ন দলের নেতা আর হাজার হাজার
মানুষের মধ্যে লড়াই হয় কে প্রথমে
তাদের শ্রদ্ধা জানাতে পারে তাই নিয়ে। ২১শে ফেব্রুয়ারির পরের দিন, জায়গাটি অবহেলিত এলাকা বলে মনে হয়। আমি দেখেছি সেই জায়গাটা ময়লা-আবর্জনায় ভরা, কোন পাহারাদার নেই, রক্ষণাবেক্ষণের কোন পরিকল্পনা নেই। কিন্তু আমি নিজেকে প্রশ্ন করি কেন এমন হবে?
বধ্য ভূমি স্মৃতিসৌধ (শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ), একটি চমৎকার জায়গা কিন্তু এটিও একদিনের স্মরণীয় স্থানে পরিণত হয়েছে - শুধুমাত্র একদিনের সহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের এটি দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে। আমি সেখানে গরু-ছাগল ঘুরে বেড়াতে দেখেছি। জায়গাটা পরিষ্কার করা হয় না। দেখেছি কিছু তরুণ দম্পতি এখানে-সেখানে বসে রোমান্টিক সময় পার করছে। এক কোণায় অলসভাবে
বসে আছেন কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মী। কিন্তু আমি নিজেকে প্রশ্ন করি কেন এমন হবে?
সৌভাগ্যবশত সাভারে জাতীয় শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ একটি ভাল দর্শনীয় স্থান, তবুও শুধুমাত্র ২৬মার্চ নয় জায়গাটি সারা বছর আরো ভালো রক্ষণাবেক্ষণ করা যেতে পারে। আমি সেখানে এমন কোনো ট্যুরিস্ট গাইড দেখিনি যিনি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বা স্থাপত্যের অর্থ
বর্ণনা করতে পারেন।
বাংলাদেশের স্থপতি এবং জাতির পিতা তার জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়ে সংগ্রাম করেছেন যাতে আমরা একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ গর্বিত জাতি হতে পারি। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে ফিরে এসে তিনি দেশ পুনর্গঠন শুরু করেন। সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের আহ্বানে তিনি অভূতপূর্ব সাড়া পান। অর্থনীতি দ্রুত গতিতে উঠতে শুরু করে। উৎপাদন বাড়াতে শুরু হয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমতে থাকে। আশায় উদ্বুদ্ধ, লোকেরা স্বাধীনতার সুবিধাগুলিকে প্রতিটি দরজায় ধাপে প্রসারিত করতে সহায়তা করে। ঠিক তখন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীদের
সাথে মিলে মিথ্যা ও নোংরা প্রচারণা
ছড়ানো আর কিছু বিশ্বাসঘাতক
সামরিক কর্মকর্তা, কিছু বিদেশী শক্তি এবং বাংলাদেশের কিছু মিরজাফরদের সহায়তায় জাতির পিতাকে সপরিবারের নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। ঘোষণা করা হয় সামরিক আইন। গণতন্ত্র হরণ করে মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। শুরু হয় হত্যা, অভ্যুত্থান
ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি। জনগণের খাদ্য ও ভোটের অধিকার
কেড়ে নেওয়া হয়। সামরিক স্বৈরশাসকরা ক্ষমতা গ্রহণ করে এবং কয়েক দশক ধরে দেশ শাসন করে। স্বাধীনতা আর মুক্তির সব
নিদর্শন কেড়ে নেওয়া হয, জাতির পিতার কথা বলা নিষিদ্ধ করা হয়, যারা আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে এবং হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে তাদের ক্ষমতায় বসানো হয়। আমাদের অতীত বা জাতির পিতাকে
স্মরণ করার মতো কোনো প্রতীক বা স্থান আমাদের
কাছে ছিল না। তাই আজ জাতির পিতা
শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ একটি চমৎকার স্থান, একটি দুঃখ, শান্তি, শ্রদ্ধা ও প্রশান্তির এলাকা।
এটা আমাদের সংগ্রাম ও স্বাধীনতার জায়গা,
আমাদের ভবিষ্যতের জায়গা। সেখানের জাদুঘরটি আমাদের জাতির পিতা এবং সংগ্রামের গল্প বলার চেষ্টা করে। তবুও আমি অনুভব করি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ আরো অনেক বেশি সম্মানের যোগ্য। এটি শুধুমাত্র তার জন্মদিনে দেখার জায়গা হতে পারে না। জাতির পিতার সমাধি হল ইতিহাস, ত্যাগ
ও সংগ্রামের স্থান, শুধুমাত্র জন্মদিনে এটি দর্শন হতে পারে না। এটা বাঙালি ও বাংলাদেশের জন্য
প্রতিদিন মনে রাখার জায়গা। আমার জন্য এটি একটি তীর্থস্থান। বেড়াতে যেতে এবং শ্রদ্ধা জানাতে দেশের প্রতিটি কোণ থেকে আসার জন্য কেন ডেডিকেটেড পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সার্ভিস নেই। তাহলে মানুষ সেখানে যাবে কিভাবে? দুর থেকে আশা মানুষের রাত কাটার জায়গা সেখানে নই। সামরিক খুনি ও স্বৈরশাসকরা এটাই
চেয়েছিলেন, যাতে মানুষ সেখানে না যেতে পারে
এবং দুঃখজনকভাবে আমরা এখনও কোন মনোযোগ দিচ্ছি না। ভবিষ্যত প্রজন্মের সেখানে যাওয়া সহজ করার উপায় খুঁজে পাচ্ছি না! আমরা ভর্তুকি প্রদান করছি, এমনকি লোকসানকারী প্রতিষ্ঠানকেও কিন্তু কেন এই প্রচেষ্টায় বরাদ্দ
করতে পারছি না!
আমি একজন গর্বিত বাঙালি এবং বাংলাদেশী হতে চাই, আমি আমাদের গর্বিত ইতিহাস, আমাদের সংগ্রাম এবং আমাদের আত্মত্যাগের কথা প্রতিটি দিন স্মরণ করতে এবং বলতে চাই। জাতির পিতা আমাদের এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি সুযোগ দেওয়া হলে, সক্রিয়ভাবে দেশব্যাপী দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন এবং উদ্যোগ নেওয়া হলে বাংলাদেশের জনগণ, বৃদ্ধ এবং যুবক, নারী বা পুরুষ তাদের
শ্রদ্ধা জানাতে সেই স্থানগুলিকে স্মরণের জায়গা হিসাবে পরিদর্শন করতে যাবে। তারা ইতিহাসকে আলিঙ্গন করে প্রতিশ্রুতি করবে কখনই কউকে আমাদের দমন করতে, আমাদের স্বাধীনতা কেড়ে নিতে দেব না। বিদেশ থেকে আসা দর্শনার্থীরা সে জায়গা দেখার
জন্য কৌতুহলী হবে এবং সেখানের যাবার ইচ্ছা করবে এবং আমাদের ইতিহাস সম্পর্কে জানবে। যা আমি অন্য
অনেক দেশে দেখেছি, তাই ভাবি কেন আমাদের সেনাবাহিনী, নৌ, বিমান বাহিনী এবং বিডিআর বাহিনী তাদের সেনানিবাসের মতো তেমন সুন্দর রক্ষণাবেক্ষণের ধারাতে এই চারটি জায়গায়
স্থায়ীভাবে তাদের স্টেশন স্থাপন করে, সরকারী সহায়তায় এই স্থানগুলি পরিচালনার
সম্পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করে না? আমাদের সংগ্রাম ও মুক্তি এবং
আমাদের সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রাখতে তাদের বিশাল অবদান রয়েছে। কথার কথা তারা সেখানে সবচেয়ে অর্থবহ এবং আকর্ষণীয় প্রহরী পরিবর্তনের অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে পারে, লোকেরা তাদের দেখতে যাবে এবং একই সাথে তাদের শ্রদ্ধা জানাবে। কেন আমি বিমান বন্দরে এই চার সৌধের
ছবি দেখি না? কেন রাজনৈতিক দল, ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠন এবং শিক্ষা মন্ত্রনালয় পর্যায়ক্রমে ছাত্রদের এই জায়গায় যাওয়ার
আয়োজন করে না? আমরা কেন ইতিহাসের জন্য এবং যারা আমাদের জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য কিছু অর্থ ব্যয় করতে পারি না? কেন যুব ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো
সেখানে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে না? মনে রাখতে হবে, এই জায়গাগুলো আমাদের
বারবার মনে করিয়ে দেয় আমরা কোথায় ছিলাম এবং আজ কোথায় আছি।
আমাদের মনে রাখতে সাহায্য করবে কেন আমাদের স্বাধীনতা ও উন্নয়নের জন্য
লড়াই করতে একসঙ্গে দাঁড়াতে হবে। বার বার সতর্ক করবে যারা আমাদের ক্ষতি করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে কেন আমাদের দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে। সাহস দেবে কেন আমাদের জাতি, আমাদের ভাষা এবং আমাদের স্বাধীনতা নিয়ে গর্ব করা উচিত।
আমি যখন দেখি বাংলাদেশের মানুষের বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অভ্যন্তরের স্থান পরিদর্শন করার সচেতনতা এবং ইচ্ছা, তখন আমি খুব বিস্মিত এবং গর্ব বোধ করি। সামাজিক মিডিয়াগুলো তাদের দুঃসাহসিক গল্পে পূর্ণ। তারা তাদের বাড়ির চার দেয়ালে সীমাবদ্ধ থাকতে চায় না, তারা এখন আরও মোবাইল, তাদের সামাজিক ও আর্থিক উপায় বাড়ছে, তারা বিভিন্ন জায়গা দেখতে চায়, আমাদের ইতিহাস জানতে চায়। এখন অন্তত সেই চারটি জায়গাগুলিকে দেখার জন্য, সময় কাটানোর জন্য আরও আকর্ষণীয় করার দায়িত্ব আমাদের, সরকারের, সবার।আমি বিশ্বাস করতে চাই শহীদ মিনার, শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, সাভারে জাতীয় শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ শুধুমাত্র একটি দিনের জায়গা নয় বরং প্রতিটি দিনের শ্রদ্ধা ও স্মরণের জায়গা হক। আমরা যদি আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের মাতৃভাষা, যারা আমাদের জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং আমাদের জাতির পিতাকে বিশ্বাস করি তবে আমাদের সকলকে একত্রিত হতে হবে, আপনি যে রাজনৈতিক দলেরই হোন না কেন, সেই বিশ্বাসে আমাদের অবশ্যই একসাথে থাকতে হবে। আমরা একদিনের জন্য বাঙালি/বাংলাদেশী হতে চাই না। আমরা বাঁচতে চাই এবং সমৃদ্ধ হতে চাই, আমাদের ইতিহাস এবং আমাদের অতীত, বর্তমান নিয়ে গর্বিত হতে চাই এবং আমরা আমাদের আরো উন্নত ভবিষ্যতে বিশ্বাস করতে চাই। চিরদিন আমরা সবাই মনে প্রানে বাঙ্গালী, বাংলাদেশী হয়েই বাঁচতে চাই।
Prof
Monir Islam, MBBS, FRCOG, MPH
Senior
Specialist
International
Centre for Migration, Health and Development
Former
Senior Specialist, Maternal and Newborn Health
Liverpool
School of Tropical Medicine, Liverpool, UK
Former
WHO Director and Country Representative to Thailand and Namibia
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:২৬ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই।
বারো বছর আগের কথা। ডেভিড ক্যামেরুন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদিন তিনি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লেন। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর সাথে ছবি তুলতে গেলেন। বাঁধ সাধলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক। জীবাণু প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি ওই কাজটি করছিলেন। ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন সাথে সাথে। ক্ষমা চাইলেন এবং ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন।
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর