আমি আমার মূল বিষয়ে যাওয়ার আগে প্রথমে কয়েকটি বিষয় পরিস্কার করতে চাই। এনসাইক্লোপিডিয়া অনুসারে, "সাম্রাজ্যবাদ" বোঝায় "রাষ্ট্রীয় নীতি, অনুশীলন, বা ক্ষমতা ও আধিপত্য বিস্তার করা, বিশেষ করে সেই বিস্তার করা সরাসরি আঞ্চলিক অধিগ্রহণ বা অন্যান্য এলাকার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ লাভের মাধ্যমে।" তদুপরি, সাম্রাজ্যবাদ "সর্বদা শক্তির ব্যবহার, সামরিক বা অর্থনৈতিক বা কিছু সূক্ষ্ম রূপের কৌশল প্রয়োগ করার সাথে জড়িত।" অন্য কথায়, সাম্রাজ্যবাদ হল একটি নিজ দেশের সীমানার বাইরের অন্য দেশের ভূমি থেকে নিয়ন্ত্রণ এবং অর্থনৈতিক সুবিধা বল পুর্বক দখলের প্রচেষ্টা বা লুটপাট করা।
তারপর আসুন দেখা যাক কেন শতাব্দী ধরে একের পর এক সাম্রাজ্যবাদী শক্তির পতন বা শক্তি দ্বারা একই লক্ষ্যে প্রতিস্থাপিত হয় অন্য সাম্রাজ্যবদী তাঁর কিছু প্রধান বা মূল কারণ গুলো। বিভিন্ন কারণের মধ্যে প্রধান কারণ গুলো হতে পারে: ১) অতিরিক্ত সম্প্রসারণ এবং সামর্থের অতিরিক্ত সামরিক ব্যয়; ২) অর্থনৈতিক সমস্যা এবং মুদ্রাস্ফীতি, ৩) সরকারী দুর্নীতি এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা; ৪) ফলাফল সামরিক ও অর্থনৈতিক আধিপত্য দুর্বল হওয়া; ৫) ঐতিহ্যগত মূল্যবোধের অবক্ষয়; ৬) অন্যান্য শক্তির উত্থান।
এবার আসুন শতাব্দী ধরে কিছু সাম্রাজ্যিক শক্তির উত্থান-পতনের কথা বলা যাক।
রোমান সাম্রাজ্য: রোমান সাম্রাজ্য, একটি প্রাচীন সাম্রাজ্য যা রোম শহরকে কেন্দ্র করে বিস্তার করে। যে সাম্রাজ্য ২৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমান প্রজাতন্ত্রের মৃত্যুর পরে এবং ৫ম শতাব্দীতে পশ্চিমের সাম্রাজ্যের চূড়ান্ত গ্রহণের পর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তার সর্বোচ্চ মহিমান্বিত সময়ের মধ্যে, রোমান সাম্রাজ্য আটলান্টিক মহাসাগর থেকে মধ্যপ্রাচ্যের ইউফ্রেটিস নদী পর্যন্ত বিস্তৃত হয়, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর এবং শক্তিশালী সাম্রাজ্য শক্তির পতন শুরু হয়। রোমান সাম্রাজ্য এত বিশাল হয়ে ওঠে যে সেই বিস্তারিত বিশাল সাম্রাজ্যে শাসন করা কঠিন হয়ে পড়ে, সর্বোপরি অকার্যকর এবং অসংলগ্ন নেতৃত্ব সমস্যাটিকে আরো বড় করে তুলে। পশ্চিম রোমের ভাগ্য তৃতীয় শতাব্দীর শেষভাগে আংশিকভাবে খর্ব হয়, যখন সম্রাট ডায়োক্লেটিয়ান সাম্রাজ্যকে দুটি ভাগে বিভক্ত করেন - মিলান শহরে অবস্থিত পশ্চিম সাম্রাজ্য এবং বাইজেন্টিয়ামের পূর্ব সাম্রাজ্য, যা পরে কনস্টান্টিনোপল নামে পরিচিত। যদিও এই বিভাগটি স্বল্প মেয়াদে সাম্রাজ্যকে আরও সহজে নিয়ন্ত্রণযোগ্য করে তুলেছিল, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে দুটি অংশ আলাদা হয়ে যায়। পূর্ব ও পশ্চিম বাইরের হুমকির মোকাবিলায় পর্যাপ্তভাবে একসঙ্গে কাজ করতে ব্যর্থ হয়, এবং প্রায়ই তাদের মধ্যে সম্পদ এবং সামরিক সাহায্য বিতরন এবং অধিগ্রহণ নিয়ে বিবাদ শুরু হয়।
সাম্রাজ্যের এই বিশাল অঞ্চল শাসন করার জন্য প্রয়োজনিয় একটি প্রশাসনিক এবং সময় মত সমন্বিত সরঞ্জামের/লজিস্টিক পদ্ধতি দুঃস্বপ্নের মুখোমুখি হয়ে পড়ে। এমনকি তাদের চমৎকার রাস্তা ব্যবস্থা থাকা সত্তেও দ্রুত বা কার্যকরভাবে যোগাযোগ করা অসম্ভব হয়ে উঠে। রোম সাম্রাজ্যের স্থানীয় বিদ্রোহ এবং বাইরের আক্রমণ থেকে তার সীমানা রক্ষা করার জন্য ক্রমবর্ধমানভাবে যথেষ্ট সৈন্য এবং সম্পদের প্রয়োজন হতে থাকে। আর্থিক চাহিদা মেটাতে সাম্রাজ্যকে তাদের স্বর্ণমুদ্রায় স্বর্ণের পরিমাণ কমাতে হয়, যারফলে তাদের মুদ্রা মূল্য আর আত্মবিশ্বাস হারাতে শুরু করে, মুদ্রাস্ফীতি শুরু হয়। সাম্রাজ্যের সামরিক রক্ষণাবেক্ষণে বেশি বেশী তহবিল ব্যায় করতে বাধ্য হওয়ায়, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি মন্থর হয়ে পড়ে এবং রোমের বেসামরিক অবকাঠামো ভেঙে পড়ে।
ক্রমাগত যুদ্ধ, অতিরিক্ত ব্যয় এবং দুর্নীতি সাম্রাজ্যের কোষাগারকে উল্লেখযোগ্যভাবে হালকা করে এবং নিপীড়নমূলক কর এবং মুদ্রাস্ফীতি ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধানকে প্রশস্ত করে। করদাতাকে এড়ানোর আশায়, ধনী শ্রেণীর অনেক সদস্য এমনকি গ্রামাঞ্চলে পালিয়ে গিয়ে নিজেদের স্বাধীন এলাকা স্থাপন করে। রোমের অর্থনীতি এবং এর সামরিক শক্তি ঐতিহ্যগতভাবে মুলত দাসদের উপর নির্ভর ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় শতাব্দীতে যখন রাজত্ব সম্প্রসারণ বন্ধ হয়ে যায়, তখন রোমের ক্রীতদাস এবং অন্যান্য যুদ্ধের ধন সরবরাহ শুকিয়ে যেতে শুরু করে। রোমান সাম্রাজ্য তার গৌরব ও আধিপত্য হারাতে শুরু করে।
অটোমান সাম্রাজ্যের পতন, ১৫৬৬-১৯২২: অটোমান সাম্রাজ্য একসময় বিশ্বের বৃহত্তম সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তি ছিল। প্রথম সুলেমান, দ্যা ম্যাগনিফিসেন্ট তার রাজত্বকে উসমানীয় মহিমার শিখরের নিয়ে যায়। ১৫০০ এর দশকে অটোমান সাম্রাজ্য যখন তার শীর্ষে, তখন সেই সাম্রাজ্য ছিল বিশ্বের বৃহত্তম সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তিগুলির মধ্যে একটি। নিয়ন্ত্রণ করত একটি বিস্তৃতি এলাকা, তার ঘাঁটি কেবল এশিয়া মাইনরে নয় বরং দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার অনেক অংশও অন্তর্ভুক্ত ছিল। দানিউব থেকে নীল নদ পর্যন্ত প্রসারিত ছিল সেই সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রন। তারা একটি শক্তিশালী সামরিক, লাভজনক বাণিজ্য, এবং স্থাপত্য থেকে শুরু করে জ্যোতির্বিদ্যা পর্যন্ত ক্ষেত্রগুলিতে চিত্তাকর্ষক সাফল্য অর্জন করে।
কিন্তু তা স্থায়ী হয়নি। যদিও অটোমান সাম্রাজ্য ৬০০ বছর ধরে টিকে ছিল, আধুনিকীকরণের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, দীর্ঘ, ধীর পতন শুরু হয়। সাম্রাজ্যের নিজের মধ্যে ধীর কিন্তু অবিচলিত দুর্বলতার লক্ষণগুলো তার পতনের সূচনা করে। পতনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল সুলতানদের ক্ষমতা ও ক্ষমতার ক্রমবর্ধমান অভাব। তারা ১৬ এবং ১৭ শতকে সাম্রাজ্যে জর্জরিত ক্রমবর্ধমান কঠিন সমস্যাগুলি মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়। ১৬ শতকের শেষের দিকে অর্থনৈতিক অসুবিধা শুরু হয়, যখন ডাচ এবং ব্রিটিশের সমপসারন আর আধিপত্য, মধ্যপ্রাচ্যের মধ্য দিয়ে অটোম্যানের পুরানো আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পথ গুলি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়। ফলে মধ্যপ্রাচ্যের প্রদেশগুলোর সমৃদ্ধি হ্রাস পায়। আমেরিকা থেকে ইউরোপে মূল্যবান ধাতুর আগমন এবং পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে বাণিজ্যের ক্রমবর্ধমান ভারসাম্যহীনতার কারণে মুদ্রাস্ফীতির শুরু হয় আর তার কারণে অটোমান অর্থনীতি ব্যাহত এবং নষ্ট হতে শুরু করে। নিজস্ব মুদ্রা অবনমনের কারনে কোষাগার বেশি রাজস্ব হারায়, সাথে সাথে মুদ্রাস্ফীতি আরও খারাপ হতে থাকে। ফলে শাসক দ্রুত কর আরো বৃদ্ধি এবং সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে বাধ্য হয়, পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে থাকে। বেতনের উপর নির্ভরশীল সবাই কম বেতন পাওয়ার কারনে, চুরি আর দুর্নীতি ব্যাপক আকার ধারণ করে। দেশ ও সেনাবাহিনী পরিচালনার চাহিদা মেটাতে কোষাগারের আরো উপার্জনের প্রয়োজন দেখা দেয়, সাম্রাজ্য ভেঙে পড়তে শুরু করে। যদিও ইতিহাসবিদরা সম্পূর্ণ একমত নন তবে এখানে কিছু কারণ উল্লেখ করা যায়: ১) মূলত খুব কৃষিপ্রধান ছিল সাম্রাজ্য; ২) জাতিগত, ভাষা, অর্থনীতি এবং ভূগোলের ক্ষেত্রে সাম্রাজ্যের অসাধারণ বৈচিত্র্যের কারণে এটি যথেষ্ট সমন্বিত ছিল না; ৩) এর জনসংখ্যা ছিল স্বল্প শিক্ষিত; ৪) অন্যান্য দেশ ইচ্ছাকৃতভাবে সাম্রাজ্যকে দুর্বল করা; ৫) রাশিয়ার সাথে একটি ধ্বংসাত্মক প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হওয়া; ৬) জার্মানিকে সমর্থন করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ভুল দিক বেছে নেয়া।
ইউনাইটেড নেদারল্যান্ডস প্রজাতন্ত্রের পতন: নিয়ন্ত্রিত বিদেশী অঞ্চল এবং বাণিজ্য পোস্টগুলি নিয়ে গঠিত ডাচ ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য, ডাচ চার্টার্ড কোম্পানিগুলির - প্রধানত ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং ডাচ পশ্চিম ভারত কোম্পানি— দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল। পরবর্তীকালে ডাচ রিপাবলিক (১৫৮১-১৭৯৫), এবং ১৮১৫ সালের পর নেদারল্যান্ডসের আধুনিক রাজ্য দ্বারা পরিচালিত হয়। সাম্রাজ্য ১৭ সালে একটি বিশ্ব শক্তির অবস্থান অর্জন করে। দুই শতাব্দীতে বিকেন্দ্রীভূত রাষ্ট্রের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ হল্যান্ড প্রদেশ এবং অরেঞ্জের রাজপুত্রদের মধ্যে বারবার স্থানান্তরিত হয়েছে, যারা স্ট্যাডহোল্ডার পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং কেন্দ্রীয়করণের একটি বৃহত্তর মাত্রার প্রতিনিধিত্ব করেন। এই অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপ, ১৭ শতকে ডাচ প্রজাতন্ত্রের উচ্চতাকে বাধা দেয়নি, যা নিউজিল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল, ক্যারিবিয়ান এবং আমেরিকা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। এশিয়া এবং ইউরোপের মধ্যে নতুন বাণিজ্য পথের সন্ধানে, ডাচ নৌযানরা অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, তাসমানিয়া এবং উত্তর আমেরিকার পূর্ব উপকূলের কিছু অংশের মতো দূরবর্তী অঞ্চলগুলিতে তাদের আধিপত্য বিস্তার করে। ডাচরা ছিল ইউরোপের প্রথম দিকের সাম্রাজ্য, স্পেন ও পর্তুগালকে ডাচদের অনুসরণ করে। তাদের বিপুল সংখ্যক সমুদ্রগামী জাহাজের থাকার কারণে তারা ব্যবসায়িক ব্যবসায় উৎকর্ষ লাভ করে। ডাচরা ছিল সবচেয়ে ধনী, সবচেয়ে সফল এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও সংস্কৃতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শিল্প, বিজ্ঞান, সাহিত্য, গণিত এবং দর্শনের অর্জনগুলি এর সমৃদ্ধিতে অবদান রাখে। ডাচ প্রতিষ্ঠিত ব্যাংক অফ আমস্টারডামের অর্থের মূল্যের একটি আন্তর্জাতিক পরিমাপ তৈরি করে, যার ফলে আমস্টারডাম ইউরোপের আর্থিক কেন্দ্রে পরিণত হয়। এই "স্বর্ণযুগে" প্রজাতন্ত্র তার সম্পদের অনুপাতের বাইরে একটি বিশ্ব ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য গড়ে তুলে, আন্তর্জাতিক অর্থের কেন্দ্র হিসাবে আবির্ভূত হয এবং একটি উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসাবে কাজ করে।
অ্যাংলো-ডাচ যুদ্ধের ফলে ডাচ ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যের পতন শুরু হয়, যার ফলে ডাচ প্রজাতন্ত্র ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের কাছে তার অনেক ঔপনিবেশিক সম্পত্তি এবং বাণিজ্য একচেটিয়া অধিকার হারায়। ইংল্যান্ডই প্রথম বুঝতে পেরেছিল যে ডাচ প্রজাতন্ত্র দ্রুত ইংরেজদের বাণিজ্য ও অর্থনীতির জন্য একটি বড় হুমকি হয়ে উঠছে এবং তাই তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে সমুদ্রপথে ডাচ বাণিজ্য আক্রমণ করাই উত্তম হবে। ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ইংরেজ বাণিজ্য প্রতিযোগিতার সাথে এবং ইংরেজ ও ডাচদের মধ্যে একটি জোট তৈরির নিষ্ফলতা তিনটি অ্যাংলো-ডাচ যুদ্ধের কারণ হয়। ১৭৯৫ সালে ডাচ গণতান্ত্রিক বিপ্লব এবং ফরাসি সেনাদের আক্রমণের প্রভাবে প্রজাতন্ত্রের পতন ঘটে। দীর্ঘ যুদ্ধের কারনে ডাচ প্রজাতন্ত্রের নৌবহর অবহেলিত হয় এবং ডাচ ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য স্থবির হয়ে পড়ে। সর্বশেষে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক পলাশীর যুদ্ধে মুঘল বাংলার বিরুদ্ধে তাদের বিজয়, ইংরেজ সাম্রাজ্যের উত্থান ঘটায়।
ব্রিটিশ সাম্রাজ্য আর তার পতন: ১৯তম এবং ২০ শতকের প্রথম দিকে, ব্রিটেন পৃথিবীর অনেক অংশের উপর আধিপত্য বিস্তার করে, এটি বিখ্যাতভাবে বলা হত যে, "ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে কখনই সূর্য অস্ত যায় না।" তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের পর থেকে, সেই সূর্য ক্রমাগতভাবে দিগন্তের দিকে ডুবে যাচ্ছে। আজ সূর্যাস্ত সত্যিই তাদের হাতের মুঠোয়।
সবচেয়ে বিস্তৃতভাবে, ব্রিটিশ সাম্রাজ্য অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং ভারত থেকে ফিজি, পশ্চিম সামোয়া এবং টোঙ্গা পর্যন্ত ৫৭টি উপনিবেশ, আধিপত্য, অঞ্চল বা সুরক্ষার অংশ নিয়ে গঠিত হয়। ব্রিটিশ গবেষক স্টিফেন লুসকম্বের গণনা অনুসারে, লন্ডন থেকে, ব্রিটিশরা বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ শাসন করত এবং বিশ্বের ভূমির প্রায় ২৫ শতাংশ এলাকায় তাদের শাসন প্রসারিত হয়।
১৭৮৩ সালে আমেরিকান স্বাধীনতা যুদ্ধের ফলে ব্রিটেন উত্তর আমেরিকায় মত তার কিছু প্রাচীন এবং সবচেয়ে জনবহুল উপনিবেশ হারায়। ব্রিটিশদের মনোযোগ তখন এশিয়া, আফ্রিকা এবং প্রশান্ত মহাসাগরের দিকে চলে যায়। নেপোলিয়নিক যুদ্ধে ফ্রান্সের পরাজয়ের পর (১৮০৩-১৮১৫) ব্রিটেন ১৯শতকের প্রধান নৌ ও সাম্রাজ্যিক শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হয় এবং তার সাম্রাজ্যের অধিকারকে প্রসারিত করে। তারা চীন এবং জাপান এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অঞ্চলে বাণিজ্যর ছাড় অনুসরণ করে। আপেক্ষিক শান্তির সময়কাল (১৮১৫-১৯১৪) যে সময়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিশ্বব্যাপী আধিপত্যে পরিণত হয়।
২০ শতকের শুরুতে, জার্মানি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটেনের অর্থনৈতিক নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করতে শুরু করে। ব্রিটেন এবং জার্মানির মধ্যে সামরিক ও অর্থনৈতিক উত্তেজনা ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের একটা প্রধান কারণ, যে যুদ্ধ কালিন সময়ে ব্রিটেন তার সাম্রাজ্যের জনশক্তি, সেনাবাহিনী এবং ধনসম্পদ উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। যুদ্ধ তার সামরিক, আর্থিক এবং জনশক্তি সম্পদের উপর প্রচুর চাপ সৃষ্টি করে। যদিও ব্রিটিশ সাম্রাজ্য প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরপরই তার বৃহত্তম আঞ্চলিক ব্যাপ্তি অর্জন করেছিল, কিন্তু ব্রিটেন তার বিশ্বের প্রধান শিল্প বা সামরিক শক্তির পদ হারায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ব্রিটেনের উপনিবেশগুলো জাপান সাম্রাজ্যের দখলে চলে যায়। ব্রিটেন এবং তার মিত্রদের চূড়ান্ত বিজয় সত্ত্বেও, ব্রিটিশ প্রতিপত্তির ক্ষতি সাম্রাজ্যের পতনকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে। ১৯৪৫ সালে জাপান পরাজিত হওয়ার আগে পশ্চিমা ঔপনিবেশিকতার পিঠ ভেঙে জাপানি সেনারা ভারতের গেট এবং অস্ট্রেলিয়ার উপকূলে যাওয়ার পরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লন্ডনের সাম্রাজ্য ভেঙে পড়তে শুরু করে। দুটি বিশ্বযুদ্ধের কারনে সম্পূর্ণরূপে অর্থনৈতিকভাবে বিধ্বস্ত এবং আমেরিকার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। একটি জাতীয়তাবাদী উত্থান আর ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান থেকে প্রত্যাহার ঔপনিবেশিক যুগের অবসান ঘটায়। ১৯৫৬ সালের সুয়েজ সংকট বিশ্বশক্তি হিসেবে ব্রিটেনের পতন নিশ্চিত করে এবং ১ জুলাই ১৯৯৭ সালে হংকংকে চীনের কাছে হস্তান্তর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সমাপ্তি ঘটায়। বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকার অবকাঠামো এবং অর্থনীতি অটুট থাকে, বরং সমৃদ্ধ হয়। ঠান্ডা মাথার যুদ্ধ (Cold War) কালে পাশ্চাত্যের প্রধান স্থিতিশীল শক্তি হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্রুত যুক্তরাজ্যকে স্থানচ্যুত করে।
বর্তমানের আমেরিকান সাম্রাজ্য আর ভবিষ্যৎ: আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সীমানা ছাড়িয়ে আমেরিকান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, মিডিয়া এবং সামরিক প্রভাব বিস্তারকে বোঝায়। এই সাম্রাজ্যবাদ বিভিন্ন রঙ, আকৃতি এবং কর্মের সাথে ঘটছে।এই সাম্রাজ্যবাদ অন্তর্ভুক্ত আর বিস্তৃত করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সামরিক বিজয়; গানবোট কূটনীতি; অসম চুক্তি; পছন্দের দল বা দেশ গুলির ভর্তুকি; শাসন পরিবর্তন; বা ব্যক্তিগত কোম্পানীর মাধ্যমে অর্থনৈতিক অনুপ্রবেশ, বা তাদের স্বার্থগুলি হুমকির সম্মুখীন হলে সম্ভাব্যভাবে কূটনৈতিক বা জোরপূর্বক হস্তক্ষেপ করেছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ২০ শতকের গোড়ার দিকে পুয়ের্তো রিকো এবং ফিলিপাইনের উপনিবেশ থেকে শুরু করে কিউবা, পানামা এবং লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশগুলির সুরক্ষা এবং চীনের মতো উন্মুক্ত দ্বার নীতির মত বিভিন্ন রূপ নিয়েছিল। আনুষ্ঠানিক উপনিবেশগুলি মার্কিন-নিযুক্ত ঔপনিবেশিক গভর্নরদের দ্বারা শাসিত এবং মার্কিন সেনাদের দ্বারা সমর্থিত ছিল। আমেরিকা প্রোটেক্টরেট এবং বিদেশী সরকারগুলির তার তত্ত্বাবধানের খোলা দরজা নীতিগুলি মেনে চলা সক্রিয়ভাবে প্রয়োগ করে। এই চলার পথে কোন অর্থনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থের হুমকির ক্ষেত্রে, মার্কিন মেরিনদের মোতায়েনের মাধ্যমে বিদেশে ব্যবসার সম্প্রসারণকে উন্নীত করে। মার্কিন সাম্রাজ্য-নির্মাণে এই সমস্ত সাম্রাজ্যিক রূপ, বিদেশী জাতি এবং আমেরিকা উভয়ের জন্য জটিল সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক ইতিহাসকে প্রতিফলিত করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার অনেক বিদেশী অঞ্চল বা দেশকে স্বাধীনতা লাভের অনুমতি দেয়। উধারন সরুপ, ফিলিপাইন (১৯৪৬), মাইক্রোনেশিয়ার ফেডারেটেড স্টেটস (১৯৮৬), মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ (১৯৮৬), এবং পালাউ (১৯৮৪)। কিছু অঞ্চল বা দেশ যেমন গুয়াম, এবং পুয়ের্তো রিকো, সমস্ত অধিকার এবং রাষ্ট্রীয় সুবিধা ছাড়াই মার্কিন নিয়ন্ত্রণে থেকে যায়। যাইহোক, স্বাধীনতা মঞ্জুর করা সেই প্রাক্তন অঞ্চল বা দেশের বেশিরভাগেই মার্কিন ঘাঁটি রয়েছে, কখনও কখনও যেমন জাপানের ওকিনাওয়া, স্থানীয় জনপ্রিয় মতামত না থাকা সত্ত্বেও।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি সাম্রাজ্য যার বিশ্বব্যাপী ৩৬টিরও বেশি দেশে ৮০০ মত সামরিক ঘাঁটি আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প এবং কৃষি তার ব্যবহারের প্রয়োজনের বাইরে অনেক বেশী বেড়েছে। জেমস জি ব্লেইনের মতো শক্তিশালী ব্যবসায়িক এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা বিশ্বাস করেন যে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির জন্য বিদেশী বাজারগুলি বজায় রাখা এবং প্রসারিত করার জন্য আমেরিকার আরও আক্রমনাত্মক বৈদেশিক নীতি প্রচার করে অপরিহার্য।
যদিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শারীরিকভাবে পশ্চিম ইউরোপ জয় করতে পারেনি, তবে এটি ফরাসিদের "কোকা কোলা-উপনিবেশ" এর অভিযোগ করা থেকে বিরত করেনি। আজ পশ্চিমা দেশগুলো মার্কিন বাণিজ্য দ্বারা আচ্ছন্ন। আজ, বিশ্বের ব্যবসার মূল্য ডলার, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বের অর্থের প্রধান রিজার্ভ ব্যাংক। এগুলো আমেরিকান সাম্রাজ্যকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আরোপের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা দিয়েছে। তাদের আধিপত্যের, পথ, নির্দেশন বা নির্দেশ অনুসরণ করা ছাড়া ধনী বা দরিদ্র, উন্নয়নশীল বা উন্নয়নশীল দেশ, বা ইউনাইটেড নেশন এজেন্সি সহ বহুপাক্ষিক সংস্থার খুব বেশি বিকল্প নেই।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে মার্কিন সামরিক বাহিনী দেশে দেশে আক্রমণ, দখল সহ অবকাঠামো এবং জনগণের ব্যাপক ধ্বংস করেছে। তাদের বড় যুদ্ধগুলি সুপরিচিত: কোরিয়া, পানামা, ভিয়েতনাম, ইরাক, আফগানিস্তান। ছোট ছোট হস্তক্ষেপের ক্রমাগত প্রবাহ আগেও ছিল, আজও আছে। ১৯৪৫ সাল থেকে, মার্কিন সশস্ত্র বাহিনী ৬৭টি দেশে ২১১ বারের বেশী সংঘাত বা সম্ভাব্য সংঘাতের জন্য বিদেশে তার সামরিক বাহিনী মোতায়েন করেছে। কখনও, বা কোথাও যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার আধিপত্য, স্বার্থের চ্যালেঞ্জের বা হুমকির সম্মুখীন হলে বিভিন্ন দেশে অভ্যুত্থান বা বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে শাসন পরিবর্তন করেছে। আপনি চাইলে একে সাম্রাজ্যবাদ বা শান্তিরক্ষা বলতে পারেন, তবে স্পষ্টতই এটি এমন একটি দেশ নয় যে নিজের স্বার্থ রক্ষা এবং আধিপত্য বজায় রাখা ছাড়া সেই দেশ নিঃস্বার্থভাবে অন্য কিছু করেছে। বিশ্ব পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যাচ্ছে, অনেক দেশ অর্থনৈতিকভাবে উন্নত ও শক্তিশালী হচ্ছে। তারা আর হুকুম অনুসরণ না করার সাহস দেখাচ্ছ, পারস্পরিক সম্মান এবং সুবিধার সম্পর্ক দাবি করছে।
বিখ্যাত ইতিহাসবিদ আলফ্রেড ম্যাককয় স্বীকার করেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে যুক্তরাষ্ট্র এখন আর প্রভাবশালী বিশ্বশক্তি নয়, বিশ্ব অর্থনীতিতে এর অংশ ছোট হয়ে আসছে। প্রকৃতপক্ষে, গ্লোবাল গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্টের ( গ্লোবাল জিডিপি) মার্কিন অংশ ১৯৬০ সালের ৪০% থেকে কমে আজ ২২% নেমে এসেছে। মূলত, আমেরিকার অর্থনৈতিক ভূমিকা আগে যা ছিল এখন তার প্রায় অর্ধেক। ধারনা করা হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে, চীন এগিয়ে যাবে এবং বিশ্বের প্রধান অর্থনৈতিক পরাশক্তিতে পরিণত হবে।
একটি অসাধারণ নতুন পেন্টাগন সমীক্ষা এই উপসংহারে পৌঁছেছে যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার মার্কিন-সমর্থিত কাঠামো "বিপর্যস্ত" এবং এমনকি "ধ্বংস" হতে পারে, যার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব বিষয়ে তার "প্রাধান্য" এর অবস্থান হারাতে পারে। এই সমিক্ষা বলে যে এই নতুন "প্রাথমিকতা-পরবর্তী" পরিবেশে মার্কিন শক্তিকে রক্ষা করার জন্য তাদের প্রস্তাবিত সমাধানটি এখনও অবশ্য একই রকম: আরও নজরদারি, আরও প্রচারণা ("উপলব্ধির কৌশলগত হেরফের") এবং আরও সামরিক সম্প্রসারণবাদ বজায় রাখা। নথিটি উপসংহারে পৌঁছেছে যে বিশ্ব একটি মৌলিকভাবে পরিবর্তনের নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে, যেখানে মার্কিন শক্তি হ্রাস পাচ্ছে, আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা উন্মোচিত হচ্ছে এবং সর্বত্র সরকারের কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।মনে করা হচ্ছে ডলারের আধিপত্য ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে।
এই সময় কি চীন ও ভারতের?
স্মরণ করা যেতে পারে যে ১০০বছর আগে, ঔপনিবেশিক এবং আধা-ঔপনিবেশিক নিপীড়নের কারণে ভারত এবং চীন উভয়ই অনুন্নত ছিল। গত শতাব্দীর মাঝামাঝি ভারতের স্বাধীনতা এবং চীনের আধা-ঔপনিবেশিক অবস্থা থেকে স্বাধীনতার পরেই এই দুই দেশে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিন শুরু হয়।
নতুন সহস্রাব্দের সূচনা, চীন এবং ভারত, এশিয়ার দুটি বৃহত্তম দেশ বিরোধপূর্ণভাবে নিজেদেরকে এমন দেশ হিসাবে খুঁজে পায় যেখানে তারা পুরানো এবং নতুন উভয়ের প্রতিনিধিত্ব করছে। উভয় জাতি তাদের প্রাচীন সভ্যতার জন্য গর্বিত এবং একই সাথে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্যের জন্যও গর্বিত। অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রবর্তন এবং বহির্বিশ্বের জন্য অর্থনীতি উন্মুক্ত করার পর থেকে চীন উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বজায় রাখতে সফল হয়েছে। চীন এখন বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, মহাকাশ এবং পারমাণবিক প্রযুক্তিতে ক্রমবর্ধমানভাবে প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করছে। মহাকাশ ও ইলেকট্রনিক উদ্ভাবনে চীন পিছিয়ে নেই। বৈমানিক, জাহাজ নির্মাণ আর মোটর গাড়ি শিল্প অন্যদের চ্যালেঞ্জ করছে। চীন বড় আর্থিক ঋণদাতা হয়ে উঠেছে এবং ঋণ খেলাপি হওয়া থেকে কাটিয়ে উঠতে ঋণী দেশগুলোকে সাহায্য করছে। এটি বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফকে চ্যালেঞ্জ করতে শুরু করেছে। সরকারি ব্যয় অব্যাহত রাখার জন্য আমেরিকা এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলি চীন থেকে অর্থ ধার নিচ্ছে। চীনও সেসব দেশে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে। চীন আজ শুধু পারমাণবিক শক্তিই নয়, তার সামরিক ও নৌ শক্তি ধীরে কিন্তু উল্লেখযোগ্য শ্রেষ্ঠত্ব ও আধিপত্য তৈরি করছে। চীন আজ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এবং শীঘ্রই বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হতে পারে। চীনের অর্থনীতির অবস্থা আজ বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সম্প্রসারণ অনেকটা নির্ধারণ করে।
ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ, ভারতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মসৃণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়। অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভারতের অর্জনও বিস্ময়কর। গত দশকে এর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার মোটামুটি বেশি ছিল। ভারত একটি বিস্তৃত শিল্প ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। এর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাত উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে একটি শীর্ষস্থানীয় অবস্থান দখল করেছে। পরমাণু শক্তি, মহাকাশ এবং ইলেকট্রনিক্স ক্ষেত্রে ভারতের উন্নয়ন যথেষ্ট মাত্রায় পৌঁছেছে। তার সফ্টওয়্যার উত্পাদন বিজ্ঞাপন রপ্তানির দ্রুত বৃদ্ধির সাথে, ভারত শীঘ্রই একটি "সফ্টওয়্যার সুপার পাওয়ার" হয়ে উঠছে। ভারত আজ একটি পারমাণবিক শক্তি এবং তার সামরিক শক্তি প্রতিনিয়ত শক্তিশালী হচ্ছে। ভারত নিজস্ব সার্বভৌম পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা শুরু করেছে। যুক্তরাজ্যকে পেছনে ফেলে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে ভারত। অদূর ভবিষ্যতে ভারত আরো অন্যান্য অর্থনৈতিক শক্তিশালী দেশকে ছাড়িয়ে যেতে পারে।
উভয় দেশের জনসংখ্যার ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে যা শীঘ্রই মিলিত হয়ে ১ বিলিয়নেরও বেশি লোকে পরিণত হবে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বিশ্বের জনসংখ্যার চেয়ে বেশি। জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমানভাবে ক্রয় ক্ষমতা এবং অর্থনৈতিক শক্তির সাথে চীন আর ভারতের অর্থনীতি চলবে, টিকিয়ে রাখা যাবে। পশ্চিমা দেশগুলো তাদের অর্থনীতি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য চীন ও ভারতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠছে। ধাপে ধাপে পশ্চিমা বা অতীত এবং বর্তমান সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির সাথে তাদের ব্যবধান তৈরি হচ্ছে। এই নতুন শতাব্দীতে, চীন এবং ভারত উভয়ই বিশ্বশক্তিতে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্বকাপ ফুটবল গেমসের উদ্বোধনীতে গায়িকা সাকিরার গানটি মনে পড়ে, তিনি "এখন এটা আফ্রিকার সময় (its time for Africa)” গান গেয়েছিলেন। আমি মনে করি আমরা "এখন চীন এবং ভারতের সময় এসেছে" এই গানটিতে স্বাক্ষর করা শুরু করতে পারি। আশা করি এই দুই দেশ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেবে এবং একই ভুল করবে না। সাম্রাজ্যবাদী মানসিকতা এবং দুঃসাহসিকতা দীর্ঘস্থায়ী হয় না, সময়ের সাথে এটি সর্বদা পরাজিত হয়েছে। আরো আশা করি এই দুই দেশ তাদের মধ্যে সামরিক সম্প্রসারণ এবং যুদ্ধে অর্থ অপচয় করবে না বরং সকলের সাথে, পারস্পরিক শ্রদ্ধার সাথে, শান্তিপূর্ণ এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের একটি পরিবেশের দিকে মনোনিবেশ করবে। একই সময়ে, তাদের অগ্রগতি এবং পরবর্তী বিশ্ব শক্তির যোগদানকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করার জন্য অতীতের সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির মৃত্যুর শেষ লাথিটি উভয় দেশই সহ্য আর বিনা দন্দ্বে পরাস্ত করতে সক্ষম হবে। উভয় দেশ তাদের স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে একটি বহু-মেরুর বিশ্বকে উন্নীত করবে যেখানে উত্তর বা দক্ষিণ, পূর্ব বা পশ্চিমের প্রতিটি দেশ একে অপরের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করতে পারবে, তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে সাহায্য করতে এবং পরস্পর লাভবান হতে পারবে। মানব উন্নয়নে অংশীদার হয়ে, এবং অন্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করে, শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রচারে অংশীদার হবে।
(উপরের নিবন্ধটি বিভিন্ন প্রকাশনা এবং নিবন্ধ থেকে প্রস্তুত করা। এটি শতাব্দীর পুরানো ইতিহাসের একটি খুবই সরল বর্ণনার ছোট সংস্করণ হতে পারে, কিন্তু প্রধান লক্ষ্য ছিল সাম্রাজ্যবাদ চিরকাল স্থায়ী হয় না তা দেখানোর একটি সাহসী বা নির্বোধ প্রচেষ্টা।)
মন্তব্য করুন
তখন ছিল স্বৈরাচারী জিয়ার শাসন আমল। আমি তখন মেডিকেল কলেজের ছাত্র। আমরা কলেজের অধ্যক্ষের অনৈতিক আচরণের কারনে তার অপসারণের জন্য ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলাম। এক কলেজ ছাত্রের পরিবারের একজন সদস্য কলেজের অধ্যক্ষের বাসায় ফোন করে (যেহেতু হোস্টেলে কোনো টেলিফোনের সুবিধা ছিল না) তাকে অনুরোধ করে ছাত্রটিকে তার বাবার মৃত্যুর খবর জানাতে এবং তাকে অবিলম্বে বাড়িতে আসতে বলার অনুরোধ করার জন্য। অধ্যক্ষ গভীর রাতে তাকে ফোন করে বিরক্ত করার জন্য সেই পরিবারের লোকটির সাথে খুব খারাপ আচরণ করেন এবং তিনি ছাত্রকে কিছু জানাননি। ছাত্রটি কয়েকদিন পরে তার বাবার মৃত্যুর খবরের তথ্য পায় এবং তার বাবাকে শেষ বারের মত বিদায় জানাতে সময় মত বাড়ি যেতে পারেনি। ধর্মঘট চলতে থাকায় স্বাস্থ্য মন্ত্রী আমাদের তার সাথ আলোচনা করার জন্য ঢাকায় আসতে বলেন। আমি প্রতিনিধিদলের একজন ছিলাম। ডাঃ বদরুদ্দোজা চৌধুরী তখন স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং ডাঃ মতিন উপমন্ত্রী ছিলেন। সচিবালয়ে আমরা মন্ত্রীর সাথে আলোচনা করার সময় আমাদের দাবি সম্পর্কে মন্ত্রীকে অবহিত করি। মন্ত্রী আমাদের কথা মনোযোগ সহকারে শুনেন এবং আমাদের দাবিতে প্রায় একমত হন এবং আমাদের বললেন স্বাস্থ্য সচিবের সাথে দেখা করতে। এরপর আমরা স্বাস্থ্য সচিবের দপ্তরে যাই। অফিসের বাইরে আনেক সময় অপেক্ষা করার পর সচিব আমাদের ভিতরে ডাকলেন। তিনি আমাদের বসতে বললেন এবং ইংরেজিতে বললেন, "হ্যাঁ, তরুণরা, আমি তোমাদের জন্য কি করতে পারি (Young men what can I do for you all)"? আমরা তাকে মন্ত্রীর সাথে আমাদের আলোচনার বিষয়ে অবহিত করি এবং আমাদের চাহিদার তালিকা তাকে দেই। সচিব তখন জিজ্ঞাসা করলেন, “মন্ত্রী কি এ বিষয়ে তার মতামতের কোনো কাগজে স্বাক্ষর করেছেন?”। আমাদের কাছে এমন কোনো কাগজ ছিল না। তারপর সেক্রেটারি শান্তভাবে আমাদের মুখে উপর তার বুড়ো আঙুল নাড়তে নাড়তে বললেন: “তরুণরা, তোমরা তোমাদের কলেজে ফিরে যাও, লেখা পড়া করো, কারণ আমি কোনো স্বাক্ষরিত কাগজ ছাড়া কোনো ব্যবস্থা নেব না”। ওখানেই আমাদের আলোচনার সমাপ্তি এবং তিনি আমাদেরকে তার অফিস ছেড়ে যেতে বললেন। আমরা বুঝতে পারলাম রাজনীতিবিদ বা মন্ত্রীরা অনেক কিছু বলতে পারেন বা একমত হতে পারেন তবে কেবল প্রশাসনই তা বাস্তবে কার্যকর করতে পরেন। হাড়ে হাড়ে বুঝলাম, রাজনীতিবিদ বা মন্ত্রীদের কোনো প্রশাসনিক ক্ষমতা নেই। আমি এখন তাই লক্ষ্য করছি, প্রধানমন্ত্রী দেশ বা জনগণের স্বার্থে অনেক ভালো কিছু করার নির্দেশ দেন, কিন্তু প্রশাসন বা আমলারা হয় প্রক্রিয়াটি নানাভাবে বিলম্বিত করে বা অনুসরণ করে না। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে একা সময়মতো তার নির্দেশাবলীর তত্ত্বাবধান বা পর্যবেক্ষণ করা মানবিকভাবে সম্ভব নয়। বিশ্বের প্রতিটি দেশে তাই হচ্ছে। অন্য কথায় সহজ ভাবে বলা যায় সত্যিকার অর্থে আমলারাই দেশ চালান। আমরা স্বাধীনতার পর আরো দেখেছি তিন তিনবার বন্দুকের নলের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করতে।
আমার নিবন্ধের আসল বিষয়ে ফিরে আসা যাক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ, নিরাপত্তা আর প্রশাসনিক ক্যাডার, ব্যবসায়ী মালিক (বা তাদের পরিবারের সদস্যদের) যারা আগামী নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার সাহস করবে বা করবে তাদের ভিসা প্রদান বা অস্বীকার করার জন্য কিছু ধারা আরোপ করেছে বা হুমকি দিয়েছে। বিশ্বের একটি সার্বভৌম ক্ষমতাধর দেশ হিসেবে আমেরিকার অধিকার আছে তারা কাকে ভিসা দিতে চায় বা না দিতে চায়। এতে কারো কোনো আপত্তি নেই বরং আমেরিকার এই শুভ ইচ্ছাকে স্বাগত জানানো উচিত। কিন্তু তবুও কিছু প্রশ্ন থেকে যায়। অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে কূটনৈতিক রীতিনীতির বিরুদ্ধে তারা ক্রমাগত উচ্চস্বরে কথা বলে আসছে। তারা নির্বাচন কমিশনেও গেছেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রী জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে তার সফরের সময় বারবার বলেছেন যে তিনি নিশ্চিত করবেন ২০২৩/২৪ সালের নির্বাচন সুষ্ঠু হবে এবং তিনি ভোটের মাধ্যমে জনগণ যেন তাদের ইচ্ছা প্রকাশ করতে পারে তা নিশ্চিত করবেন। তাহলে নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে কেন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো? কেন হঠাৎ করে বাংলাদেশ? বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য কেন এটি প্রযোজ্য করা নয়? মিশরের সামরিক শাসক দ্বারা নির্বাচনের সময়ের আগে তো আমরা সেই হুমকি দেখিনি? ১৯৭৫ সালের “হা” “না” নির্বাচন বা পরবর্তী নির্বাচনের আগে কেন তা আরোপ করা হলো না? কেউ কেউ হয়তো বলবেন, আমেরিকা বিশ্বাস করে যে গত দুটি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি, সেজন্য তারা এই হুমকি দিয়ে আমাদের সাহায্য করার চেষ্টা করছে? সত্যিই কি তাই??!! এর মানে কি বাংলাদেশের নাগরিকদের নিজেদের নির্বাচন পরিচালনার জন্য অন্যদের নির্দেশ বা হুমকির প্রয়োজন? নির্বাচনের সুষ্ঠুতা পর্যবেক্ষণে নির্বাচন পর্যবেক্ষক পাঠাতে কোন বাঁধা নেই, তবে কেন ভিসাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে একটি সার্বভৌম দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় পরোক্ষভাবে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে? আমরা একটি উন্নয়নশীল দেশ এবং এখনও অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীল তাই আমরা কি আজ এই হুমকির সম্মুখীন? আমরা একবার ঔপনিবেশিক ক্ষমতার অধীনে ছিলাম প্রতিবারই কি আমাদের তা স্মরণ করিয়ে দিতে হবে?
বাংলাদেশের কত শতাংশ এবং কাদের আমেরিকার ভিসা প্রয়োজন? সর্বোচ্চ ১-২% বাংলাদেশিদের? তাদের মধ্যে কত শতাংশ রাজনীতিবিদ, প্রশাসনের কর্মকর্তা বা ব্যবসার মালিক? আমরা জানি অনেক উচ্চ বর্তমান বা অবসরপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা, জাতীয় বিভিন্ন নিরাপত্তার কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়িক ব্যক্তিদের বাড়ি, গ্রিন কার্ড, বিশাল ব্যাংক আমানত আমেরিকায় আছে এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা সেখানে শিক্ষার জন্য যান বা সেখানে বসবাস করছেন। বা যারা বাংলাদেশে ব্যবসা করেন কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে বার বার যান বা থাকেন এবং সেখানে বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা করেন। ব্যবসায়ীরা রাজনৈতিক দলগুলোকে বিপুল পরিমাণ অর্থ অনুদান প্রদান করে। নিরাপত্তা কর্মকর্তারা তাদের ভবিষ্যতের জন্য আরও প্রশিক্ষণের জন্য সেখানে যেতে চান। আমেরিকান ভিসা এই লোকদের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, যারা আসলে দেশ চালান বা জাতীয় অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক নিরাপত্তা বজায় রাখেন। বা রাজনৈতিক এজেন্ডায় প্রভাব বিস্তার করেন। অনেক শাসক বা প্রাক্তন রাজনীতিবিদদেরও একই কারণে আমেরিকান ভিসা প্রয়োজন। ভিসা বিধিনিষেধের এই অস্ত্রের কারণে এই দলগুলো সবচেয়ে বেশি হুমকির সম্মুখীন। অন্যান্য অনেক বাংলাদেশিরা সেখানে উন্নত জীবন ও আয়ের জন্য আছেন। তারা নির্বাচন প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত নন এবং তাদের এই হুমকির ভয় পাওয়ার কারণ নেই। অন্যদিকে ৯৬-৯৪% বাংলাদেশি মানুষ আমেরিকান ভিসা নিয়ে চিন্তা করেন না বা তাদের ভিসার অনুরোধ করার কোনো কারণ নেই (অনেকে এখনও উন্নত জীবন, শিক্ষা বা অর্থনৈতিক কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চান এবং তাদের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার কোনো ক্ষমতা নেই)। তাই আমরা বলতে পারি ভিসার হুমকির কারণে ওই গুটি কিছু স্বার্থান্বেষী লোক আমেরিকার হুকুম মানতে এমনকি বাংলাদেশের স্বার্থ ও তার ভাবমূর্তি বলিদান দিতেও যা কিছু করা তাই করবে। সংবিধান অনুযায়ী এবং গণতন্ত্রের স্বার্থে আওয়ামী লীগ শান্তিপূর্ণভাবে ২০০১ সালে ক্ষমতা হস্তান্তর করে এবং নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আমরা ২০০১ সালের সেই নির্বাচনের কথা ভুলে যাইনি। আরেকটা বিষয়, কাউকে ভিসা প্রত্যাখ্যান করার কারণগুলি প্রকাশ্যে ঘোষণা করা হয় না, তাই আমরা কখনও জানবো না কাকে এবং কী কারণে ভিসা প্রত্যাখ্যান করা হবে। তাই এই ভিসার হুমকিকে যদি অস্ত্র হিসেবে না দেখা হয়, একটি সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা বলা না হয় , আমি জানি না এটি অন্যথায় কীভাবে দেখা যেতে পারে!! গণতন্ত্র, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের জন্য সৎ ইচ্ছা আর একটি সৎ প্রচেষ্টা??!! অতীত ইতিহাস বিশ্লেষণ করে, আমরা দীর্ঘ দীর্ঘ সময়, ঘন্টার পর ঘন্টা তা নিয়ে কথা বলতে পারি!!
কিন্তু আমি লজ্জিত বোধ করি রাজনীতিবিদ এবং মিডিয়া এই ভিসা বিধিনিষেধ নিয়ে নানা ভাবে ব্যবহার করে বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার এবং সম্মানকে ক্ষুণ্ন করছে দেখে। ক্ষমতাসীন দলের ব্যর্থতা বা বর্তমান সরকারকে অগণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য কিছু রাজনীতিবিদ, মিডিয়া এবং ব্যক্তিত্ব এই হুমকি উল্লসিতভাবে প্রচার করছেন। কিছু আওয়ামী লীগ দলীয় সদস্যদের মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাড়িতে ছুটে যেতে দেখে আমিও লজ্জিত হয়েছি, কারণ তাদের জানা ছিল সেখানে নাস্তা বা রাতের খাবার বা গল্প করার জন্য ডাকা হয়নি, ভিসার সীমাবদ্ধতা ব্যাখ্যা করার বা হুমকির কথা বলার জন্য তাদের ডেকে পাঠানো হয়েছিল। মার্কিন রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ চালান না, তিনি তার নিজ দেশের স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করেন। তাই সম্পূর্ণ সম্মানের সাথে রাষ্ট্রদূতের উচিত ছিল নিজে বা তার প্রতিনিধির প্রতিটি দলের সদর দফতরে ব্যাখ্যার জন্য যাওয়া। আমি একজন আওয়ামী লীগ সদস্য যিনি বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন তাকে একটি টিভি টকশোতে বলতে শুনেছি, তিনি বললেন তিনি সেখানে গিয়েছিলেন কারণ তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বলে (যেন সাংস্কৃতিকভাবে আমরা কোনও আমন্ত্রণ অস্বীকার করার মত অভদ্র জাতী না)? বন্ধুত্বপূর্ণ ডিনারের জন্য? তিনি ভালো ভাবেই জানতেন কি আলোচনা করা হবে, তবুও কেন গেলেন সেখানে? মার্কিন রাষ্ট্রদূত গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসেন, মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে। এটাই নিয়ম, যদি আমরা সত্যিই আমাদের নিজেদেরকে বিশ্বাস করি এবং সামান্যতম আত্মসম্মানবোধ করি। আমিও আরো অবাক হই ভিসার হুমকি নিয়ে এত কথা বলা শুনে বা তোলপার দেখে? আমরা যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সবকিছু করি তাহলে আমাদের কেন মাথা ঘামাতে হবে। আমরা কি ভয় পাচ্ছি যে কেউ শাসন/শাসক পরিবর্তনের হুমকি দিচ্ছে? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সুবিধার জন্য তারা যা করতে চায় তাকে তা করতে দিন। আসুন আমরা আমাদের বিষয়গুলি নিজেরাই মোকাবেলা করার সাহস করি।
আমি জানি বাংলাদেশের অর্থনীতি কয়েকটি ধনী দেশের ভালো ইচ্ছার উপর নির্ভর করে কিন্তু এর মানে এই নয় যে আমাদের নতজানু হয়ে ভিক্ষা করতে হবে। স্বাধীনতার জন্য হাজার হাজার মানুষ তাদের জীবন দিয়েছিল, হাজার হাজার নাড়ীর লজ্জা হরন করা হয়েছিল। আমরা সাহসিকতার সাথে লড়াই করেছি স্বাধীনতার অর্জন করে, বুক উচু করে এবং সম্মানের সাথে বাঁচার জন্য। তাই বাংলাদেশকে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে সার্বভৌম এবং সম্মানিত করতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। আজ কেন আমরা দেখতে পাচ্ছি শক্তিশালী দেশগুলো, যারা বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ বলেছিল বা ক্ষুধা, বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ বলেছিল তারা আজ বাংলাদেশে আসছে, বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলছে, সমর্থনের পাশাপাশি হুমকি প্রদান করছে, বাংলাদেশকে তাদের নিজ নিজ ক্ষমতার বৃত্তে আনার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছে? কারন আজ বাংলাদেশ আমাদের প্রধানমন্ত্রীর প্রচেষ্টা ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে ভূ-রাজনৈতিকভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশে পরিণত হয়েছে।? তাই তারা কি ভাবছে, প্রধানমন্ত্রী খুব স্বাধীনচেতা হয়ে গেছেন, অন্যের দ্বারা অযথা হস্তক্ষেপ এবং আধিপত্যের বিরুধে হুমকি বা বাধা হয়ে দাডিয়েছে? প্রধানমন্ত্রী একা বাংলাদেশ কে আরো এগিয়ে নিতে পারবেন না, তার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে তার সম্মানিত দলীয় সদস্য, নেতা ও আমলাদের প্রয়োজন হবে। প্রয়োজন হবে নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের। আসুন আত্মসম্মান বজায় রাখি এবং আমাদের নিজেদের শক্তিতে বিশ্বাস রাখি, আমেরিকান ভিসা পাই বা না পাই।
আমি স্বীকার করি অনেকেই বলবেন বিদেশে বসবাস করে অনেক কিছু বলা যায় কিন্তু ঘরে বসে তা সব সময় সহজ নয়। আমি শ্রদ্ধার সাথে বলতে চাই আমি আপনার সাথে শতভাগে একমত।
Prof Dr Quazi Monirul Islam, MBBS, MPH, FRCOG
Epidemiology Department, Prince of Songkla University, Hat Yai, Thailand
Senior Specialist, International Centre for Migration, Health and Development
Former Senior Specialist (Maternal and Newborn), Liverpool School of Tropical Medicine, UK
Former WHO Director and Country Representative to Thailand and Namibia
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আমেরিকা আমার 'খুউব' পছন্দের দেশ। পছন্দের অন্যতম কারণ হলো, সে দেশের পররাষ্ট্র অনুষদের কর্মকান্ড। দেশটি তাদের নাগরিকদের খুব ভালোবাসে। তাদের নিরাপত্তায় সর্বদা উদ্বিগ্ন। নাগরিক বিদেশে গেলে সে দেশে কোথায় যাবে না যাবে, কোথায় নিরাপদ, কোথায় ঝুঁকিপূর্ণ, কেমন সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, তার একটি দিক নির্দেশনা সময়ে সময়ে দিয়ে থাকে। এমন নির্দেশনা সরকার তাদের নাগরিকদের দিলে সে নাগরিকের গর্ববোধ করা উচিত। সে জন্যই দেশটিকে 'খুউব' পছন্দ করি।
ঢাকার মার্কিন দূতাবাস গত ২১ মে সে দেশের নাগরিকদের জন্য একটি ভ্রমণ সতর্কবার্তা জারি করেছে। সতর্কবার্তার নাম দিয়েছে ‘ডেমোনস্ট্রেশন অ্যালার্ট’। বার্তায় বলা হয়েছে বাংলাদেশে নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। রাজনৈতিক সভা সমাবেশ বাড়তে পারে। বিক্ষোভ হতে পারে। বিক্ষোভের গতি তীব্র থেকে তীব্রতর হতে পারে। সংঘাতময় হয়ে উঠতে পারে। সহিংসতায় রূপ নিতে পারে। সে দেশের নাগরিকদের বড় সমাবেশ ও বিক্ষোভের স্থানগুলো এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। নাগরিকদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা পরিকল্পনা পর্যালোচনা করার উপদেশ দেয়া হয়েছে।
‘ডেমোনস্ট্রেশন অ্যালার্ট’টি যখন দেয়া হয়, তখন দেশের রাজনীতির আকাশে সংঘাত, সহিংসতা বা বিক্ষোভের কোন ঘনঘটা ছিল না। কিন্তু তার দুদিন পর রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে যে তুলকালাম ঘটে গেল তাতে অনুমেয় যে দূতাবাস একেবারে মোক্ষম সময়ে সতর্ক বার্তা জারি করেছে। তাদের গোয়েন্দা সক্ষমতা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ক্ষমতার তারিফ করতে হয়। দেশটির জনগণের প্রতি তাদের সরকার যে মায়া মমতা ও উদ্বিগ্নতা, সঠিক সময়ে সঠিক বার্তা, সেটি আজকের বিষয়বস্তু নয়। কোন দেশে এ ধরণের বা এর চেয়ে বেশি খারাপ পরিস্থিতি হলে আমাদের দূতাবাসগুলোর ভূমিকা বা নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে আলোকপাত করতে চাই। প্রায় সোয়া কোটি দেশি রেমিটেন্স যোদ্ধা রয়েছে বিদেশে। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশী যাচ্ছে বিদেশ ভ্রমণে। প্রতিনিয়ত সংঘাত, সহিংসতা, বিক্ষোভ চলছে দেশে দেশে। কখনো শুনি না যে দেশি দূতাবাস গুলো এ ধরনের সতর্কবার্তা দিয়েছে। বাংলাদেশ দূতাবাসগুলো এ ব্যাপারে সর্বদাই নিষ্ক্রিয়।
ফিরে যাই মার্কিন মুলুকে। সেখানে বন্দুক সহিংসতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। গত ৩২ বছরে দেশটিতে বন্দুক সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন ১১ লাখের বেশি মানুষ। ২০২১ সালে বন্দুকের গুলিতে মারা গেছে প্রায় ৪৯ হাজার, যা দেশের ইতিহাসে এক বছরে সার্বোচ্চ। আমেরিকান মেডিকেল এসোসিয়েশন প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে ৫২টি বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলায় ৯৮ জনের প্রাণহানি হয়েছে, আহত ২০৫। গত ফেব্রুয়ারিতে সেদেশে বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটেছে ৪০টি, নিহত ৪৬, আহত ১৫০। গত মার্চে বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটেছে ৩৯টি, নিহত ৫৬, আহত ১৩৬। গত এপ্রিলে বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটেছে ৫৬টি। এসব ঘটনায় নিহত ৬২, আহত ২৪৪। এপ্রিলের শেষ দিনে ১১টি ঘটনা ঘটেছে। ‘গান ভায়োলেন্স আর্কাইভ’ নামের একটি গবেষণা সংস্থার ওয়েবসাইটে এ তথ্য উঠে এসেছে।
সিডনি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত 'গান পলিসি' নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ২০০০ সালে বাংলাদেশে বন্দুক হামলায় মারা যায় দেড় হাজার জন। সে বছর যুক্তরাষ্ট্রে মারা যায় সাড়ে ২৮ হাজার জন। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা বাংলাদেশের দ্বিগুন। জনসংখ্যা অনুপাতে সেদেশে বন্দুক হামলায় মৃত্যুর সংখ্যা বাংলাদেশের চেয়ে দশগুণ বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রে এসব বন্দুক হামলার সংঘাতের ঘটনাস্থল সর্বত্র। শপিংমল, পার্ক, স্কুল, হাসপাতাল, মেডিকেল সেন্টার, রেল স্টেশন, ব্যাংক থেকে শুরু করে জন্মদিনের অনুষ্ঠান, মেমোরিয়াল ডে’র অনুষ্ঠানস্থল, স্বাধীনতা দিবসের কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান যেখানে প্রতিনিয়ত বন্দুক হামলা হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনেক বাংলাদেশী বাস করে, বেড়াতে যায়, কাজে যায়, সভা-সেমিনারে যায়। আমেরিকার ভিসা দপ্তরের তথ্যমতে, এ বছরের প্রথম তিন মাসে প্রায় ১২ হাজার বাংলাদেশী নন ইমিগ্রান্ট ভিসা পেয়েছে। তার মানে, গড়ে প্রতিমাসে প্রায় ৪ হাজার বাংলাদেশী যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে যায়। প্রায় সাড়ে ১০ হাজার বাংলাদেশি ছাত্র ছাত্রী সেখানে পড়াশুনা করে । এসব প্রবাসী বাংলাদেশী ছাত্র বা টুরিস্টদের প্রতি বাংলাদেশী দূতাবাসের কি কোন দয়া মায়া নেই ? উদ্বিগ্নতা নেই ? তারাও তো পারে যুক্তরাষ্ট্রে ক্রমবর্ধমান বন্দুক হামলার প্রেক্ষিতে সময়ে সময়ে আমাদেরকে সতর্কবার্তা দিতে। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশী দূতাবাস যুগ যুগ ধরে এ বিষয়ে নিষ্ক্রিয়তা দেখিয়ে যাচ্ছে। নিজ দেশের নাগরিকদের সতর্ক সংকেত দিচ্ছে না। শপিংমল, রেল স্টেশন, ব্যাংক, হাসপাতাল, স্কুল, পার্ক ইত্যাদি জনগুরুত্বপূর্ণ স্থান এড়িয়ে চলার বা সাবধানে চলার পরামর্শ দিচ্ছে না। কিন্তু কেন ? দেশের নাগরিকদের প্রতি তাদের কি কোন দায়িত্ববোধ নেই?
এ বি এম কামরুল হাসান
প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:৩০ পিএম, ২৭ মে, ২০২৩
যে বিষয়টির সাথে আমি নিজে জড়িত, সে বিষয়টি নিয়ে একটু অবতারণা করছি। বেশ কিছু
দিন আগে- প্রায় ছয় থেকে আট মাস আগে বাংলাদেশ প্রতিদিন কমিউনিটি ক্লিনিক নিয়ে একটি প্রতিবেদন
করে এবং তাতে বলা হয়, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক এমন জরাজীর্ণ অবস্থায়, যে কোনো সময় ভেঙ্গে
পড়ে যাবে। যারা সেবা গ্রহীতা, তারা আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে বা মৃত্যুবরণ করতে পারে- এ
ধরনের একটি সংবাদ তারা প্রকাশ করে।
তখন স্বাভাবিক নিয়মে আমার কমিউনিটি ক্লিনিকে যারা কাজ করেন, তারা বললেন, ‘স্যার
একটা প্রতিবাদ দিতে হয়।’
তখন আমি বললাম, আমিতো পড়েছি। আমি ভোরবেলাতে যে পত্রিকাগিুলো পড়ি, তার মধ্যে নঈম
নিজাম এবং এখনকার যে বুদ্ধিভিত্তিক কলামিস্ট আমার অনুজপ্রতীম সৈয়দ বোরহান কবিরের লেখাগুলো
পড়ি। তারা একটা রৈখনি নিয়ে এসেছে। একটা প্রতিবাদ, সরকারিভাবে যা লেখা হয়, এটা না, ওটা।
আমি বললাম, ‘তোমরা ওই কমিউনিটি ক্লিনিকটা শেষ কে কবে পরিদর্শন করেছ?
তারা কেউই সঠিকভাবে উত্তর দিতে পারে না। আমি বললাম, নঈম নিজাম এবং সৈয়দ বোরাহান
কবির- এরা কখনো ব্যক্তিগত সম্পর্কের সাথে তাদের যে পেশাগত সম্পর্ক সেটা জড়িয়ে ফেলে
না। উদাহরণসরূপ বলছি, আমি তখন জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের পরিচালক। তখন ‘পরিপ্রেক্ষিত’ অনুষ্ঠানটি
পরিচালনা করে সৈয়দ বোরহান কবির। আমার সাক্ষাৎকার নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির বিপক্ষে বেশ কিছু
বক্তব্য প্রচার করে। কিন্তু আমার সাথে তার যে ব্যক্তিগত সম্পর্ক, সে সেটা বিবেচনা না
করে পেশাগত দায়িত্ব থেকে সে এটা করেছে। সেটা নিয়ে তার সাথে আমার কোনোদিন আলাপ হয়নি।
কারণ হচ্ছে, সে তার পেশায় ঠিক আছে, আমি আমার পেশায় ঠিক আছি।
আমার কোনো ভুলভ্রান্তি হলে সেটা উল্লেখ করা তার দায়িত্ব। নঈম নিজামের পত্রিকায়
যেহেতু সংবাদ ছাপা হয়েছে। সুতরাং নঈম নিজামকে আমি আলাদা চোখে দেখি।
তারা বললো, ‘স্যার সিভিল সার্জনের সাথে কথা হয়েছে।’
আমি বললাম, সিভিল সার্জন নয়, একজন বিশ্বস্ত লোককে পাঠাও। তারপর প্রতিবাদ ছাপাতে
হয়, আর্টিকেল লিখতে হয়, আমি দেখবো।
তারপর একজনকে পাঠানো হলো। তিন দিনে রিপোর্ট দিলো। তারপর দেখা গেলো, বাংলাদেশ
প্রতিদিনে যা ছাপা হয়েছে। সেগুলো অক্ষরে অক্ষরে সত্য। তখন আমি এইটার ব্যবস্থা গ্রহণ
করলাম, যেন ওটা ঠিকমতো চলে এবং সমস্যাটির সমাধান করলাম। বাংলাদেশ প্রতিদিনে কোনো লেখা
বা নঈম নিজামকে ফোন করার আর কোনো প্রয়োজন পড়লো না। আমি দেখেছি, আমার ভুল-ভ্রান্তি হচ্ছে।
সুতরাং এর দায়-দায়িত্বও আমার। যেহেতু এটা আমার দায়-দায়িত্বের মধ্যে পড়ে, সুতরাং আমি
মনে করেছি, সে আমাকে সহায়তা করেছে। এখন আমার পক্ষে না বিপক্ষে গেলো, সেটা কোনো বিষয়
নয়।
সম্প্রতিককালে দেখলাম, আমাদের একটি মন্ত্রণালয়ের একজন মন্ত্রী এবং তাদের যে কাজের
গাফিলতি সম্পর্কে লিখেছে বলে তারা তার প্রতিবাদ পাঠিয়েছে। প্রতিবাদটি আমি পড়লাম। প্রতিবাদটি
বাংলাদেশ প্রতিদিনে ছাপা হয়েছে। আমার কাছে মনে হলো, অনেক আমলারা কাঁচা হাতের কাজ করে
সেরকম। এই প্রতিবাদটি ছাপানোর আগে, যে বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে, সে বিষয়গুলোর সমাধান
করাতো বেশি দরকার। এরা দেশের ভালো করতেছে না খারাপ করতেছে, সেটা বিচার করার সময় এসেছে।
আমারতো কোনো পত্রিকার সাথে কোনো জমি নিয়ে বা কোনো বিরোধ বা কোনো গন্ডগোল নেই, সে আমার
বিরুদ্ধে কেন লিখবে? লিখলে আমিসহ সকলে যে যেখানে দায়িত্বে আছে, সকলের প্রধান দায়িত্ব
হচ্ছে জিনিসটা সঠিক কি না, সেটার চুলচেরা বিচার করা।
দ্বিতীয়ত, যে বিষয়টি নিয়ে লিখেছে, সেটাকে অবশ্যই দেখাশোনা করা, যাতে ওই ভুলটটা
ভবিষ্যতে আর না হয়। নঈম নিজাম কেন, দুনিয়ার কেউই ভুলের উর্ধ্বে নয়। কিন্তু ভুলটা বুঝতে
পারা এবং ভুলটা সঠিক করা কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দুর্ভাগ্যবশত অনেকেই আমরা
এটা করতে পারি না। সেজন্য সবাইকে বলবো, যে কোনো মিডিয়াতে কোনো কিছু আসলে প্রতিবাদ পাঠানোর
আগে কি লিখেছে, বরং সেটার সমাধান আগে করে তারপর প্রতিবাদ পাঠান।
মন্তব্য করুন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ, নিরাপত্তা আর প্রশাসনিক ক্যাডার, ব্যবসায়ী মালিক (বা তাদের পরিবারের সদস্যদের) যারা আগামী নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার সাহস করবে বা করবে তাদের ভিসা প্রদান বা অস্বীকার করার জন্য কিছু ধারা আরোপ করেছে বা হুমকি দিয়েছে। বিশ্বের একটি সার্বভৌম ক্ষমতাধর দেশ হিসেবে আমেরিকার অধিকার আছে তারা কাকে ভিসা দিতে চায় বা না দিতে চায়। এতে কারো কোনো আপত্তি নেই বরং আমেরিকার এই শুভ ইচ্ছাকে স্বাগত জানানো উচিত। কিন্তু তবুও কিছু প্রশ্ন থেকে যায়। অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে কূটনৈতিক রীতিনীতির বিরুদ্ধে তারা ক্রমাগত উচ্চস্বরে কথা বলে আসছে। তারা নির্বাচন কমিশনেও গেছেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রী জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে তার সফরের সময় বারবার বলেছেন যে তিনি নিশ্চিত করবেন ২০২৩/২৪ সালের নির্বাচন সুষ্ঠু হবে এবং তিনি ভোটের মাধ্যমে জনগণ যেন তাদের ইচ্ছা প্রকাশ করতে পারে তা নিশ্চিত করবেন। তাহলে নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে কেন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো?
" মনোযোগ বলতে নির্দিষ্ট একটা বিষয়কে ফোকাস করাকে বুঝায় না, একই সাথে এটা অসংখ্য প্রতিযোগী তথ্য এবং উদ্দীপককে অগ্রাহ্য করাকেও বুঝায়। যা এ মুহূর্তে প্রাসঙ্গিক নয় সেটাকে এড়িয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের প্রতি আকর্ষিত হওয়াই মনোযোগ ( Kendra Cherry, 2022)। কোন পণ্যকে ভোক্তা কিভাবে মূল্যায়ন করবে সেটা অনেকাংশেই তাঁর প্রত্যক্ষণের উপর নির্ভর করে। মনোযোগ হচ্ছে প্রত্যক্ষনের একটি পূর্বশর্ত। কোন নির্দিষ্ট উদ্দীপকের প্রতি ইন্দ্রিয় বা ইন্দ্রীয় সমূহকে নিবদ্ধ করার নামই হলো মনোযোগ। যে মানসিক ক্রিয়ার মাধ্যমে একাধিক বিষয় থেকে চেতনাকে সম্পূর্ণ সরিয়ে নিয়ে একটি বিশেষ বিষয়ে চেতনাকে কেন্দ্রীভূত করা হয় তাকে মনোযোগ বলে।
ঢাকার মার্কিন দূতাবাস গত ২১ মে সে দেশের নাগরিকদের জন্য একটি ভ্রমণ সতর্কবার্তা জারি করেছে। সতর্কবার্তার নাম দিয়েছে ‘ডেমোনস্ট্রেশন অ্যালার্ট’। বার্তায় বলা হয়েছে বাংলাদেশে নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। রাজনৈতিক সভা সমাবেশ বাড়তে পারে। বিক্ষোভ হতে পারে। বিক্ষোভের গতি তীব্র থেকে তীব্রতর হতে পারে। সংঘাতময় হয়ে উঠতে পারে। সহিংসতায় রূপ নিতে পারে। সে দেশের নাগরিকদের বড় সমাবেশ ও বিক্ষোভের স্থানগুলো এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। নাগরিকদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা পরিকল্পনা পর্যালোচনা করার উপদেশ দেয়া হয়েছে।
আমেরিকার South Asia Perspectives পত্রিকায় ২৮ মে(২০২৩) প্রকাশিত মিথ্যাচারে পূর্ণ Jon Danilowicz এর U.S. Visa Policy: What Next? শিরোনামে লেখাটি মনোযোগ সহকারে পড়লে দেখা যাবে এক সময়ে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের এই সাবেক কর্মকর্তা কী কৌশলে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে মনগড়া তথ্য দিয়ে বিরোধী শিবিরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।তিনি যেভাবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিগুলো তুলে ধরেছেন এবং বিএনপি-জামায়াতের অপতৎপরতাকে এড়িয়ে গেছেন তা সৎ লেখকের কাজ নয়। তিনি যেন কোনো লবিস্ট কর্তৃক নিযুক্ত লেখক। যার নুন খান তার গুণগান করেন। এ ধারার জন ড্যানিলভিচ মার্কা লেখক ও বক্তারা পৃথিবীর অনেক জায়গায় বসে শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়ন ও অগ্রগতির চিত্রের কথা ব্যক্ত করার পরিবর্তে মিথ্যাভাষণে সরকার বিরোধী অপপ্রচারে লিপ্ত। এদের বিষয়ে বাংলাদেশের মানুষকে সচেতন থাকতে হবে।
যে বিষয়টির সাথে আমি নিজে জড়িত, সে বিষয়টি নিয়ে একটু অবতারণা করছি। বেশ কিছু দিন আগে- প্রায় ছয় থেকে আট মাস আগে বাংলাদেশ প্রতিদিন কমিউনিটি ক্লিনিক নিয়ে একটি প্রতিবেদন করে এবং তাতে বলা হয়, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক এমন জরাজীর্ণ অবস্থায়, যে কোনো সময় ভেঙ্গে পড়ে যাবে। যারা সেবা গ্রহীতা, তারা আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে বা মৃত্যুবরণ করতে পারে- এ ধরনের একটি সংবাদ তারা প্রকাশ করে।