আমি আমার মূল বিষয়ে যাওয়ার আগে প্রথমে কয়েকটি বিষয় পরিস্কার করতে চাই। এনসাইক্লোপিডিয়া অনুসারে, "সাম্রাজ্যবাদ" বোঝায় "রাষ্ট্রীয় নীতি, অনুশীলন, বা ক্ষমতা ও আধিপত্য বিস্তার করা, বিশেষ করে সেই বিস্তার করা সরাসরি আঞ্চলিক অধিগ্রহণ বা অন্যান্য এলাকার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ লাভের মাধ্যমে।" তদুপরি, সাম্রাজ্যবাদ "সর্বদা শক্তির ব্যবহার, সামরিক বা অর্থনৈতিক বা কিছু সূক্ষ্ম রূপের কৌশল প্রয়োগ করার সাথে জড়িত।" অন্য কথায়, সাম্রাজ্যবাদ হল একটি নিজ দেশের সীমানার বাইরের অন্য দেশের ভূমি থেকে নিয়ন্ত্রণ এবং অর্থনৈতিক সুবিধা বল পুর্বক দখলের প্রচেষ্টা বা লুটপাট করা।
তারপর আসুন দেখা যাক কেন শতাব্দী ধরে একের পর এক সাম্রাজ্যবাদী শক্তির পতন বা শক্তি দ্বারা একই লক্ষ্যে প্রতিস্থাপিত হয় অন্য সাম্রাজ্যবদী তাঁর কিছু প্রধান বা মূল কারণ গুলো। বিভিন্ন কারণের মধ্যে প্রধান কারণ গুলো হতে পারে: ১) অতিরিক্ত সম্প্রসারণ এবং সামর্থের অতিরিক্ত সামরিক ব্যয়; ২) অর্থনৈতিক সমস্যা এবং মুদ্রাস্ফীতি, ৩) সরকারী দুর্নীতি এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা; ৪) ফলাফল সামরিক ও অর্থনৈতিক আধিপত্য দুর্বল হওয়া; ৫) ঐতিহ্যগত মূল্যবোধের অবক্ষয়; ৬) অন্যান্য শক্তির উত্থান।
এবার আসুন শতাব্দী ধরে কিছু সাম্রাজ্যিক শক্তির উত্থান-পতনের কথা বলা যাক।
রোমান সাম্রাজ্য: রোমান সাম্রাজ্য, একটি প্রাচীন সাম্রাজ্য যা রোম শহরকে কেন্দ্র করে বিস্তার করে। যে সাম্রাজ্য ২৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমান প্রজাতন্ত্রের মৃত্যুর পরে এবং ৫ম শতাব্দীতে পশ্চিমের সাম্রাজ্যের চূড়ান্ত গ্রহণের পর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তার সর্বোচ্চ মহিমান্বিত সময়ের মধ্যে, রোমান সাম্রাজ্য আটলান্টিক মহাসাগর থেকে মধ্যপ্রাচ্যের ইউফ্রেটিস নদী পর্যন্ত বিস্তৃত হয়, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর এবং শক্তিশালী সাম্রাজ্য শক্তির পতন শুরু হয়। রোমান সাম্রাজ্য এত বিশাল হয়ে ওঠে যে সেই বিস্তারিত বিশাল সাম্রাজ্যে শাসন করা কঠিন হয়ে পড়ে, সর্বোপরি অকার্যকর এবং অসংলগ্ন নেতৃত্ব সমস্যাটিকে আরো বড় করে তুলে। পশ্চিম রোমের ভাগ্য তৃতীয় শতাব্দীর শেষভাগে আংশিকভাবে খর্ব হয়, যখন সম্রাট ডায়োক্লেটিয়ান সাম্রাজ্যকে দুটি ভাগে বিভক্ত করেন - মিলান শহরে অবস্থিত পশ্চিম সাম্রাজ্য এবং বাইজেন্টিয়ামের পূর্ব সাম্রাজ্য, যা পরে কনস্টান্টিনোপল নামে পরিচিত। যদিও এই বিভাগটি স্বল্প মেয়াদে সাম্রাজ্যকে আরও সহজে নিয়ন্ত্রণযোগ্য করে তুলেছিল, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে দুটি অংশ আলাদা হয়ে যায়। পূর্ব ও পশ্চিম বাইরের হুমকির মোকাবিলায় পর্যাপ্তভাবে একসঙ্গে কাজ করতে ব্যর্থ হয়, এবং প্রায়ই তাদের মধ্যে সম্পদ এবং সামরিক সাহায্য বিতরন এবং অধিগ্রহণ নিয়ে বিবাদ শুরু হয়।
সাম্রাজ্যের এই বিশাল অঞ্চল শাসন করার জন্য প্রয়োজনিয় একটি প্রশাসনিক এবং সময় মত সমন্বিত সরঞ্জামের/লজিস্টিক পদ্ধতি দুঃস্বপ্নের মুখোমুখি হয়ে পড়ে। এমনকি তাদের চমৎকার রাস্তা ব্যবস্থা থাকা সত্তেও দ্রুত বা কার্যকরভাবে যোগাযোগ করা অসম্ভব হয়ে উঠে। রোম সাম্রাজ্যের স্থানীয় বিদ্রোহ এবং বাইরের আক্রমণ থেকে তার সীমানা রক্ষা করার জন্য ক্রমবর্ধমানভাবে যথেষ্ট সৈন্য এবং সম্পদের প্রয়োজন হতে থাকে। আর্থিক চাহিদা মেটাতে সাম্রাজ্যকে তাদের স্বর্ণমুদ্রায় স্বর্ণের পরিমাণ কমাতে হয়, যারফলে তাদের মুদ্রা মূল্য আর আত্মবিশ্বাস হারাতে শুরু করে, মুদ্রাস্ফীতি শুরু হয়। সাম্রাজ্যের সামরিক রক্ষণাবেক্ষণে বেশি বেশী তহবিল ব্যায় করতে বাধ্য হওয়ায়, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি মন্থর হয়ে পড়ে এবং রোমের বেসামরিক অবকাঠামো ভেঙে পড়ে।
ক্রমাগত যুদ্ধ, অতিরিক্ত ব্যয় এবং দুর্নীতি সাম্রাজ্যের কোষাগারকে উল্লেখযোগ্যভাবে হালকা করে এবং নিপীড়নমূলক কর এবং মুদ্রাস্ফীতি ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধানকে প্রশস্ত করে। করদাতাকে এড়ানোর আশায়, ধনী শ্রেণীর অনেক সদস্য এমনকি গ্রামাঞ্চলে পালিয়ে গিয়ে নিজেদের স্বাধীন এলাকা স্থাপন করে। রোমের অর্থনীতি এবং এর সামরিক শক্তি ঐতিহ্যগতভাবে মুলত দাসদের উপর নির্ভর ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় শতাব্দীতে যখন রাজত্ব সম্প্রসারণ বন্ধ হয়ে যায়, তখন রোমের ক্রীতদাস এবং অন্যান্য যুদ্ধের ধন সরবরাহ শুকিয়ে যেতে শুরু করে। রোমান সাম্রাজ্য তার গৌরব ও আধিপত্য হারাতে শুরু করে।
অটোমান সাম্রাজ্যের পতন, ১৫৬৬-১৯২২: অটোমান সাম্রাজ্য একসময় বিশ্বের বৃহত্তম সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তি ছিল। প্রথম সুলেমান, দ্যা ম্যাগনিফিসেন্ট তার রাজত্বকে উসমানীয় মহিমার শিখরের নিয়ে যায়। ১৫০০ এর দশকে অটোমান সাম্রাজ্য যখন তার শীর্ষে, তখন সেই সাম্রাজ্য ছিল বিশ্বের বৃহত্তম সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তিগুলির মধ্যে একটি। নিয়ন্ত্রণ করত একটি বিস্তৃতি এলাকা, তার ঘাঁটি কেবল এশিয়া মাইনরে নয় বরং দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার অনেক অংশও অন্তর্ভুক্ত ছিল। দানিউব থেকে নীল নদ পর্যন্ত প্রসারিত ছিল সেই সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রন। তারা একটি শক্তিশালী সামরিক, লাভজনক বাণিজ্য, এবং স্থাপত্য থেকে শুরু করে জ্যোতির্বিদ্যা পর্যন্ত ক্ষেত্রগুলিতে চিত্তাকর্ষক সাফল্য অর্জন করে।
কিন্তু তা স্থায়ী হয়নি। যদিও অটোমান সাম্রাজ্য ৬০০ বছর ধরে টিকে ছিল, আধুনিকীকরণের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, দীর্ঘ, ধীর পতন শুরু হয়। সাম্রাজ্যের নিজের মধ্যে ধীর কিন্তু অবিচলিত দুর্বলতার লক্ষণগুলো তার পতনের সূচনা করে। পতনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল সুলতানদের ক্ষমতা ও ক্ষমতার ক্রমবর্ধমান অভাব। তারা ১৬ এবং ১৭ শতকে সাম্রাজ্যে জর্জরিত ক্রমবর্ধমান কঠিন সমস্যাগুলি মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়। ১৬ শতকের শেষের দিকে অর্থনৈতিক অসুবিধা শুরু হয়, যখন ডাচ এবং ব্রিটিশের সমপসারন আর আধিপত্য, মধ্যপ্রাচ্যের মধ্য দিয়ে অটোম্যানের পুরানো আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পথ গুলি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়। ফলে মধ্যপ্রাচ্যের প্রদেশগুলোর সমৃদ্ধি হ্রাস পায়। আমেরিকা থেকে ইউরোপে মূল্যবান ধাতুর আগমন এবং পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে বাণিজ্যের ক্রমবর্ধমান ভারসাম্যহীনতার কারণে মুদ্রাস্ফীতির শুরু হয় আর তার কারণে অটোমান অর্থনীতি ব্যাহত এবং নষ্ট হতে শুরু করে। নিজস্ব মুদ্রা অবনমনের কারনে কোষাগার বেশি রাজস্ব হারায়, সাথে সাথে মুদ্রাস্ফীতি আরও খারাপ হতে থাকে। ফলে শাসক দ্রুত কর আরো বৃদ্ধি এবং সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে বাধ্য হয়, পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে থাকে। বেতনের উপর নির্ভরশীল সবাই কম বেতন পাওয়ার কারনে, চুরি আর দুর্নীতি ব্যাপক আকার ধারণ করে। দেশ ও সেনাবাহিনী পরিচালনার চাহিদা মেটাতে কোষাগারের আরো উপার্জনের প্রয়োজন দেখা দেয়, সাম্রাজ্য ভেঙে পড়তে শুরু করে। যদিও ইতিহাসবিদরা সম্পূর্ণ একমত নন তবে এখানে কিছু কারণ উল্লেখ করা যায়: ১) মূলত খুব কৃষিপ্রধান ছিল সাম্রাজ্য; ২) জাতিগত, ভাষা, অর্থনীতি এবং ভূগোলের ক্ষেত্রে সাম্রাজ্যের অসাধারণ বৈচিত্র্যের কারণে এটি যথেষ্ট সমন্বিত ছিল না; ৩) এর জনসংখ্যা ছিল স্বল্প শিক্ষিত; ৪) অন্যান্য দেশ ইচ্ছাকৃতভাবে সাম্রাজ্যকে দুর্বল করা; ৫) রাশিয়ার সাথে একটি ধ্বংসাত্মক প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হওয়া; ৬) জার্মানিকে সমর্থন করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ভুল দিক বেছে নেয়া।
ইউনাইটেড নেদারল্যান্ডস প্রজাতন্ত্রের পতন: নিয়ন্ত্রিত বিদেশী অঞ্চল এবং বাণিজ্য পোস্টগুলি নিয়ে গঠিত ডাচ ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য, ডাচ চার্টার্ড কোম্পানিগুলির - প্রধানত ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং ডাচ পশ্চিম ভারত কোম্পানি— দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল। পরবর্তীকালে ডাচ রিপাবলিক (১৫৮১-১৭৯৫), এবং ১৮১৫ সালের পর নেদারল্যান্ডসের আধুনিক রাজ্য দ্বারা পরিচালিত হয়। সাম্রাজ্য ১৭ সালে একটি বিশ্ব শক্তির অবস্থান অর্জন করে। দুই শতাব্দীতে বিকেন্দ্রীভূত রাষ্ট্রের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ হল্যান্ড প্রদেশ এবং অরেঞ্জের রাজপুত্রদের মধ্যে বারবার স্থানান্তরিত হয়েছে, যারা স্ট্যাডহোল্ডার পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং কেন্দ্রীয়করণের একটি বৃহত্তর মাত্রার প্রতিনিধিত্ব করেন। এই অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপ, ১৭ শতকে ডাচ প্রজাতন্ত্রের উচ্চতাকে বাধা দেয়নি, যা নিউজিল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল, ক্যারিবিয়ান এবং আমেরিকা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। এশিয়া এবং ইউরোপের মধ্যে নতুন বাণিজ্য পথের সন্ধানে, ডাচ নৌযানরা অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, তাসমানিয়া এবং উত্তর আমেরিকার পূর্ব উপকূলের কিছু অংশের মতো দূরবর্তী অঞ্চলগুলিতে তাদের আধিপত্য বিস্তার করে। ডাচরা ছিল ইউরোপের প্রথম দিকের সাম্রাজ্য, স্পেন ও পর্তুগালকে ডাচদের অনুসরণ করে। তাদের বিপুল সংখ্যক সমুদ্রগামী জাহাজের থাকার কারণে তারা ব্যবসায়িক ব্যবসায় উৎকর্ষ লাভ করে। ডাচরা ছিল সবচেয়ে ধনী, সবচেয়ে সফল এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও সংস্কৃতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শিল্প, বিজ্ঞান, সাহিত্য, গণিত এবং দর্শনের অর্জনগুলি এর সমৃদ্ধিতে অবদান রাখে। ডাচ প্রতিষ্ঠিত ব্যাংক অফ আমস্টারডামের অর্থের মূল্যের একটি আন্তর্জাতিক পরিমাপ তৈরি করে, যার ফলে আমস্টারডাম ইউরোপের আর্থিক কেন্দ্রে পরিণত হয়। এই "স্বর্ণযুগে" প্রজাতন্ত্র তার সম্পদের অনুপাতের বাইরে একটি বিশ্ব ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য গড়ে তুলে, আন্তর্জাতিক অর্থের কেন্দ্র হিসাবে আবির্ভূত হয এবং একটি উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসাবে কাজ করে।
অ্যাংলো-ডাচ যুদ্ধের ফলে ডাচ ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যের পতন শুরু হয়, যার ফলে ডাচ প্রজাতন্ত্র ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের কাছে তার অনেক ঔপনিবেশিক সম্পত্তি এবং বাণিজ্য একচেটিয়া অধিকার হারায়। ইংল্যান্ডই প্রথম বুঝতে পেরেছিল যে ডাচ প্রজাতন্ত্র দ্রুত ইংরেজদের বাণিজ্য ও অর্থনীতির জন্য একটি বড় হুমকি হয়ে উঠছে এবং তাই তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে সমুদ্রপথে ডাচ বাণিজ্য আক্রমণ করাই উত্তম হবে। ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ইংরেজ বাণিজ্য প্রতিযোগিতার সাথে এবং ইংরেজ ও ডাচদের মধ্যে একটি জোট তৈরির নিষ্ফলতা তিনটি অ্যাংলো-ডাচ যুদ্ধের কারণ হয়। ১৭৯৫ সালে ডাচ গণতান্ত্রিক বিপ্লব এবং ফরাসি সেনাদের আক্রমণের প্রভাবে প্রজাতন্ত্রের পতন ঘটে। দীর্ঘ যুদ্ধের কারনে ডাচ প্রজাতন্ত্রের নৌবহর অবহেলিত হয় এবং ডাচ ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য স্থবির হয়ে পড়ে। সর্বশেষে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক পলাশীর যুদ্ধে মুঘল বাংলার বিরুদ্ধে তাদের বিজয়, ইংরেজ সাম্রাজ্যের উত্থান ঘটায়।
ব্রিটিশ সাম্রাজ্য আর তার পতন: ১৯তম এবং ২০ শতকের প্রথম দিকে, ব্রিটেন পৃথিবীর অনেক অংশের উপর আধিপত্য বিস্তার করে, এটি বিখ্যাতভাবে বলা হত যে, "ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে কখনই সূর্য অস্ত যায় না।" তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের পর থেকে, সেই সূর্য ক্রমাগতভাবে দিগন্তের দিকে ডুবে যাচ্ছে। আজ সূর্যাস্ত সত্যিই তাদের হাতের মুঠোয়।
সবচেয়ে বিস্তৃতভাবে, ব্রিটিশ সাম্রাজ্য অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং ভারত থেকে ফিজি, পশ্চিম সামোয়া এবং টোঙ্গা পর্যন্ত ৫৭টি উপনিবেশ, আধিপত্য, অঞ্চল বা সুরক্ষার অংশ নিয়ে গঠিত হয়। ব্রিটিশ গবেষক স্টিফেন লুসকম্বের গণনা অনুসারে, লন্ডন থেকে, ব্রিটিশরা বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ শাসন করত এবং বিশ্বের ভূমির প্রায় ২৫ শতাংশ এলাকায় তাদের শাসন প্রসারিত হয়।
১৭৮৩ সালে আমেরিকান স্বাধীনতা যুদ্ধের ফলে ব্রিটেন উত্তর আমেরিকায় মত তার কিছু প্রাচীন এবং সবচেয়ে জনবহুল উপনিবেশ হারায়। ব্রিটিশদের মনোযোগ তখন এশিয়া, আফ্রিকা এবং প্রশান্ত মহাসাগরের দিকে চলে যায়। নেপোলিয়নিক যুদ্ধে ফ্রান্সের পরাজয়ের পর (১৮০৩-১৮১৫) ব্রিটেন ১৯শতকের প্রধান নৌ ও সাম্রাজ্যিক শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হয় এবং তার সাম্রাজ্যের অধিকারকে প্রসারিত করে। তারা চীন এবং জাপান এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অঞ্চলে বাণিজ্যর ছাড় অনুসরণ করে। আপেক্ষিক শান্তির সময়কাল (১৮১৫-১৯১৪) যে সময়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিশ্বব্যাপী আধিপত্যে পরিণত হয়।
২০ শতকের শুরুতে, জার্মানি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটেনের অর্থনৈতিক নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করতে শুরু করে। ব্রিটেন এবং জার্মানির মধ্যে সামরিক ও অর্থনৈতিক উত্তেজনা ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের একটা প্রধান কারণ, যে যুদ্ধ কালিন সময়ে ব্রিটেন তার সাম্রাজ্যের জনশক্তি, সেনাবাহিনী এবং ধনসম্পদ উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। যুদ্ধ তার সামরিক, আর্থিক এবং জনশক্তি সম্পদের উপর প্রচুর চাপ সৃষ্টি করে। যদিও ব্রিটিশ সাম্রাজ্য প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরপরই তার বৃহত্তম আঞ্চলিক ব্যাপ্তি অর্জন করেছিল, কিন্তু ব্রিটেন তার বিশ্বের প্রধান শিল্প বা সামরিক শক্তির পদ হারায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ব্রিটেনের উপনিবেশগুলো জাপান সাম্রাজ্যের দখলে চলে যায়। ব্রিটেন এবং তার মিত্রদের চূড়ান্ত বিজয় সত্ত্বেও, ব্রিটিশ প্রতিপত্তির ক্ষতি সাম্রাজ্যের পতনকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে। ১৯৪৫ সালে জাপান পরাজিত হওয়ার আগে পশ্চিমা ঔপনিবেশিকতার পিঠ ভেঙে জাপানি সেনারা ভারতের গেট এবং অস্ট্রেলিয়ার উপকূলে যাওয়ার পরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লন্ডনের সাম্রাজ্য ভেঙে পড়তে শুরু করে। দুটি বিশ্বযুদ্ধের কারনে সম্পূর্ণরূপে অর্থনৈতিকভাবে বিধ্বস্ত এবং আমেরিকার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। একটি জাতীয়তাবাদী উত্থান আর ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান থেকে প্রত্যাহার ঔপনিবেশিক যুগের অবসান ঘটায়। ১৯৫৬ সালের সুয়েজ সংকট বিশ্বশক্তি হিসেবে ব্রিটেনের পতন নিশ্চিত করে এবং ১ জুলাই ১৯৯৭ সালে হংকংকে চীনের কাছে হস্তান্তর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সমাপ্তি ঘটায়। বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকার অবকাঠামো এবং অর্থনীতি অটুট থাকে, বরং সমৃদ্ধ হয়। ঠান্ডা মাথার যুদ্ধ (Cold War) কালে পাশ্চাত্যের প্রধান স্থিতিশীল শক্তি হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্রুত যুক্তরাজ্যকে স্থানচ্যুত করে।
বর্তমানের আমেরিকান সাম্রাজ্য আর ভবিষ্যৎ: আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সীমানা ছাড়িয়ে আমেরিকান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, মিডিয়া এবং সামরিক প্রভাব বিস্তারকে বোঝায়। এই সাম্রাজ্যবাদ বিভিন্ন রঙ, আকৃতি এবং কর্মের সাথে ঘটছে।এই সাম্রাজ্যবাদ অন্তর্ভুক্ত আর বিস্তৃত করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সামরিক বিজয়; গানবোট কূটনীতি; অসম চুক্তি; পছন্দের দল বা দেশ গুলির ভর্তুকি; শাসন পরিবর্তন; বা ব্যক্তিগত কোম্পানীর মাধ্যমে অর্থনৈতিক অনুপ্রবেশ, বা তাদের স্বার্থগুলি হুমকির সম্মুখীন হলে সম্ভাব্যভাবে কূটনৈতিক বা জোরপূর্বক হস্তক্ষেপ করেছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ২০ শতকের গোড়ার দিকে পুয়ের্তো রিকো এবং ফিলিপাইনের উপনিবেশ থেকে শুরু করে কিউবা, পানামা এবং লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশগুলির সুরক্ষা এবং চীনের মতো উন্মুক্ত দ্বার নীতির মত বিভিন্ন রূপ নিয়েছিল। আনুষ্ঠানিক উপনিবেশগুলি মার্কিন-নিযুক্ত ঔপনিবেশিক গভর্নরদের দ্বারা শাসিত এবং মার্কিন সেনাদের দ্বারা সমর্থিত ছিল। আমেরিকা প্রোটেক্টরেট এবং বিদেশী সরকারগুলির তার তত্ত্বাবধানের খোলা দরজা নীতিগুলি মেনে চলা সক্রিয়ভাবে প্রয়োগ করে। এই চলার পথে কোন অর্থনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থের হুমকির ক্ষেত্রে, মার্কিন মেরিনদের মোতায়েনের মাধ্যমে বিদেশে ব্যবসার সম্প্রসারণকে উন্নীত করে। মার্কিন সাম্রাজ্য-নির্মাণে এই সমস্ত সাম্রাজ্যিক রূপ, বিদেশী জাতি এবং আমেরিকা উভয়ের জন্য জটিল সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক ইতিহাসকে প্রতিফলিত করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার অনেক বিদেশী অঞ্চল বা দেশকে স্বাধীনতা লাভের অনুমতি দেয়। উধারন সরুপ, ফিলিপাইন (১৯৪৬), মাইক্রোনেশিয়ার ফেডারেটেড স্টেটস (১৯৮৬), মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ (১৯৮৬), এবং পালাউ (১৯৮৪)। কিছু অঞ্চল বা দেশ যেমন গুয়াম, এবং পুয়ের্তো রিকো, সমস্ত অধিকার এবং রাষ্ট্রীয় সুবিধা ছাড়াই মার্কিন নিয়ন্ত্রণে থেকে যায়। যাইহোক, স্বাধীনতা মঞ্জুর করা সেই প্রাক্তন অঞ্চল বা দেশের বেশিরভাগেই মার্কিন ঘাঁটি রয়েছে, কখনও কখনও যেমন জাপানের ওকিনাওয়া, স্থানীয় জনপ্রিয় মতামত না থাকা সত্ত্বেও।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি সাম্রাজ্য যার বিশ্বব্যাপী ৩৬টিরও বেশি দেশে ৮০০ মত সামরিক ঘাঁটি আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প এবং কৃষি তার ব্যবহারের প্রয়োজনের বাইরে অনেক বেশী বেড়েছে। জেমস জি ব্লেইনের মতো শক্তিশালী ব্যবসায়িক এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা বিশ্বাস করেন যে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির জন্য বিদেশী বাজারগুলি বজায় রাখা এবং প্রসারিত করার জন্য আমেরিকার আরও আক্রমনাত্মক বৈদেশিক নীতি প্রচার করে অপরিহার্য।
যদিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শারীরিকভাবে পশ্চিম ইউরোপ জয় করতে পারেনি, তবে এটি ফরাসিদের "কোকা কোলা-উপনিবেশ" এর অভিযোগ করা থেকে বিরত করেনি। আজ পশ্চিমা দেশগুলো মার্কিন বাণিজ্য দ্বারা আচ্ছন্ন। আজ, বিশ্বের ব্যবসার মূল্য ডলার, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বের অর্থের প্রধান রিজার্ভ ব্যাংক। এগুলো আমেরিকান সাম্রাজ্যকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আরোপের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা দিয়েছে। তাদের আধিপত্যের, পথ, নির্দেশন বা নির্দেশ অনুসরণ করা ছাড়া ধনী বা দরিদ্র, উন্নয়নশীল বা উন্নয়নশীল দেশ, বা ইউনাইটেড নেশন এজেন্সি সহ বহুপাক্ষিক সংস্থার খুব বেশি বিকল্প নেই।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে মার্কিন সামরিক বাহিনী দেশে দেশে আক্রমণ, দখল সহ অবকাঠামো এবং জনগণের ব্যাপক ধ্বংস করেছে। তাদের বড় যুদ্ধগুলি সুপরিচিত: কোরিয়া, পানামা, ভিয়েতনাম, ইরাক, আফগানিস্তান। ছোট ছোট হস্তক্ষেপের ক্রমাগত প্রবাহ আগেও ছিল, আজও আছে। ১৯৪৫ সাল থেকে, মার্কিন সশস্ত্র বাহিনী ৬৭টি দেশে ২১১ বারের বেশী সংঘাত বা সম্ভাব্য সংঘাতের জন্য বিদেশে তার সামরিক বাহিনী মোতায়েন করেছে। কখনও, বা কোথাও যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার আধিপত্য, স্বার্থের চ্যালেঞ্জের বা হুমকির সম্মুখীন হলে বিভিন্ন দেশে অভ্যুত্থান বা বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে শাসন পরিবর্তন করেছে। আপনি চাইলে একে সাম্রাজ্যবাদ বা শান্তিরক্ষা বলতে পারেন, তবে স্পষ্টতই এটি এমন একটি দেশ নয় যে নিজের স্বার্থ রক্ষা এবং আধিপত্য বজায় রাখা ছাড়া সেই দেশ নিঃস্বার্থভাবে অন্য কিছু করেছে। বিশ্ব পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যাচ্ছে, অনেক দেশ অর্থনৈতিকভাবে উন্নত ও শক্তিশালী হচ্ছে। তারা আর হুকুম অনুসরণ না করার সাহস দেখাচ্ছ, পারস্পরিক সম্মান এবং সুবিধার সম্পর্ক দাবি করছে।
বিখ্যাত ইতিহাসবিদ আলফ্রেড ম্যাককয় স্বীকার করেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে যুক্তরাষ্ট্র এখন আর প্রভাবশালী বিশ্বশক্তি নয়, বিশ্ব অর্থনীতিতে এর অংশ ছোট হয়ে আসছে। প্রকৃতপক্ষে, গ্লোবাল গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্টের ( গ্লোবাল জিডিপি) মার্কিন অংশ ১৯৬০ সালের ৪০% থেকে কমে আজ ২২% নেমে এসেছে। মূলত, আমেরিকার অর্থনৈতিক ভূমিকা আগে যা ছিল এখন তার প্রায় অর্ধেক। ধারনা করা হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে, চীন এগিয়ে যাবে এবং বিশ্বের প্রধান অর্থনৈতিক পরাশক্তিতে পরিণত হবে।
একটি অসাধারণ নতুন পেন্টাগন সমীক্ষা এই উপসংহারে পৌঁছেছে যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার মার্কিন-সমর্থিত কাঠামো "বিপর্যস্ত" এবং এমনকি "ধ্বংস" হতে পারে, যার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব বিষয়ে তার "প্রাধান্য" এর অবস্থান হারাতে পারে। এই সমিক্ষা বলে যে এই নতুন "প্রাথমিকতা-পরবর্তী" পরিবেশে মার্কিন শক্তিকে রক্ষা করার জন্য তাদের প্রস্তাবিত সমাধানটি এখনও অবশ্য একই রকম: আরও নজরদারি, আরও প্রচারণা ("উপলব্ধির কৌশলগত হেরফের") এবং আরও সামরিক সম্প্রসারণবাদ বজায় রাখা। নথিটি উপসংহারে পৌঁছেছে যে বিশ্ব একটি মৌলিকভাবে পরিবর্তনের নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে, যেখানে মার্কিন শক্তি হ্রাস পাচ্ছে, আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা উন্মোচিত হচ্ছে এবং সর্বত্র সরকারের কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।মনে করা হচ্ছে ডলারের আধিপত্য ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে।
এই সময় কি চীন ও ভারতের?
স্মরণ করা যেতে পারে যে ১০০বছর আগে, ঔপনিবেশিক এবং আধা-ঔপনিবেশিক নিপীড়নের কারণে ভারত এবং চীন উভয়ই অনুন্নত ছিল। গত শতাব্দীর মাঝামাঝি ভারতের স্বাধীনতা এবং চীনের আধা-ঔপনিবেশিক অবস্থা থেকে স্বাধীনতার পরেই এই দুই দেশে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিন শুরু হয়।
নতুন সহস্রাব্দের সূচনা, চীন এবং ভারত, এশিয়ার দুটি বৃহত্তম দেশ বিরোধপূর্ণভাবে নিজেদেরকে এমন দেশ হিসাবে খুঁজে পায় যেখানে তারা পুরানো এবং নতুন উভয়ের প্রতিনিধিত্ব করছে। উভয় জাতি তাদের প্রাচীন সভ্যতার জন্য গর্বিত এবং একই সাথে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্যের জন্যও গর্বিত। অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রবর্তন এবং বহির্বিশ্বের জন্য অর্থনীতি উন্মুক্ত করার পর থেকে চীন উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বজায় রাখতে সফল হয়েছে। চীন এখন বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, মহাকাশ এবং পারমাণবিক প্রযুক্তিতে ক্রমবর্ধমানভাবে প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করছে। মহাকাশ ও ইলেকট্রনিক উদ্ভাবনে চীন পিছিয়ে নেই। বৈমানিক, জাহাজ নির্মাণ আর মোটর গাড়ি শিল্প অন্যদের চ্যালেঞ্জ করছে। চীন বড় আর্থিক ঋণদাতা হয়ে উঠেছে এবং ঋণ খেলাপি হওয়া থেকে কাটিয়ে উঠতে ঋণী দেশগুলোকে সাহায্য করছে। এটি বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফকে চ্যালেঞ্জ করতে শুরু করেছে। সরকারি ব্যয় অব্যাহত রাখার জন্য আমেরিকা এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলি চীন থেকে অর্থ ধার নিচ্ছে। চীনও সেসব দেশে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে। চীন আজ শুধু পারমাণবিক শক্তিই নয়, তার সামরিক ও নৌ শক্তি ধীরে কিন্তু উল্লেখযোগ্য শ্রেষ্ঠত্ব ও আধিপত্য তৈরি করছে। চীন আজ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এবং শীঘ্রই বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হতে পারে। চীনের অর্থনীতির অবস্থা আজ বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সম্প্রসারণ অনেকটা নির্ধারণ করে।
ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ, ভারতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মসৃণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়। অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভারতের অর্জনও বিস্ময়কর। গত দশকে এর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার মোটামুটি বেশি ছিল। ভারত একটি বিস্তৃত শিল্প ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। এর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাত উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে একটি শীর্ষস্থানীয় অবস্থান দখল করেছে। পরমাণু শক্তি, মহাকাশ এবং ইলেকট্রনিক্স ক্ষেত্রে ভারতের উন্নয়ন যথেষ্ট মাত্রায় পৌঁছেছে। তার সফ্টওয়্যার উত্পাদন বিজ্ঞাপন রপ্তানির দ্রুত বৃদ্ধির সাথে, ভারত শীঘ্রই একটি "সফ্টওয়্যার সুপার পাওয়ার" হয়ে উঠছে। ভারত আজ একটি পারমাণবিক শক্তি এবং তার সামরিক শক্তি প্রতিনিয়ত শক্তিশালী হচ্ছে। ভারত নিজস্ব সার্বভৌম পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা শুরু করেছে। যুক্তরাজ্যকে পেছনে ফেলে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে ভারত। অদূর ভবিষ্যতে ভারত আরো অন্যান্য অর্থনৈতিক শক্তিশালী দেশকে ছাড়িয়ে যেতে পারে।
উভয় দেশের জনসংখ্যার ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে যা শীঘ্রই মিলিত হয়ে ১ বিলিয়নেরও বেশি লোকে পরিণত হবে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বিশ্বের জনসংখ্যার চেয়ে বেশি। জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমানভাবে ক্রয় ক্ষমতা এবং অর্থনৈতিক শক্তির সাথে চীন আর ভারতের অর্থনীতি চলবে, টিকিয়ে রাখা যাবে। পশ্চিমা দেশগুলো তাদের অর্থনীতি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য চীন ও ভারতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠছে। ধাপে ধাপে পশ্চিমা বা অতীত এবং বর্তমান সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির সাথে তাদের ব্যবধান তৈরি হচ্ছে। এই নতুন শতাব্দীতে, চীন এবং ভারত উভয়ই বিশ্বশক্তিতে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্বকাপ ফুটবল গেমসের উদ্বোধনীতে গায়িকা সাকিরার গানটি মনে পড়ে, তিনি "এখন এটা আফ্রিকার সময় (its time for Africa)” গান গেয়েছিলেন। আমি মনে করি আমরা "এখন চীন এবং ভারতের সময় এসেছে" এই গানটিতে স্বাক্ষর করা শুরু করতে পারি। আশা করি এই দুই দেশ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেবে এবং একই ভুল করবে না। সাম্রাজ্যবাদী মানসিকতা এবং দুঃসাহসিকতা দীর্ঘস্থায়ী হয় না, সময়ের সাথে এটি সর্বদা পরাজিত হয়েছে। আরো আশা করি এই দুই দেশ তাদের মধ্যে সামরিক সম্প্রসারণ এবং যুদ্ধে অর্থ অপচয় করবে না বরং সকলের সাথে, পারস্পরিক শ্রদ্ধার সাথে, শান্তিপূর্ণ এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের একটি পরিবেশের দিকে মনোনিবেশ করবে। একই সময়ে, তাদের অগ্রগতি এবং পরবর্তী বিশ্ব শক্তির যোগদানকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করার জন্য অতীতের সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির মৃত্যুর শেষ লাথিটি উভয় দেশই সহ্য আর বিনা দন্দ্বে পরাস্ত করতে সক্ষম হবে। উভয় দেশ তাদের স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে একটি বহু-মেরুর বিশ্বকে উন্নীত করবে যেখানে উত্তর বা দক্ষিণ, পূর্ব বা পশ্চিমের প্রতিটি দেশ একে অপরের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করতে পারবে, তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে সাহায্য করতে এবং পরস্পর লাভবান হতে পারবে। মানব উন্নয়নে অংশীদার হয়ে, এবং অন্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করে, শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রচারে অংশীদার হবে।
(উপরের নিবন্ধটি বিভিন্ন প্রকাশনা এবং নিবন্ধ থেকে প্রস্তুত করা। এটি শতাব্দীর পুরানো ইতিহাসের একটি খুবই সরল বর্ণনার ছোট সংস্করণ হতে পারে, কিন্তু প্রধান লক্ষ্য ছিল সাম্রাজ্যবাদ চিরকাল স্থায়ী হয় না তা দেখানোর একটি সাহসী বা নির্বোধ প্রচেষ্টা।)
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:২৬ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই।
বারো বছর আগের কথা। ডেভিড ক্যামেরুন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদিন তিনি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লেন। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর সাথে ছবি তুলতে গেলেন। বাঁধ সাধলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক। জীবাণু প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি ওই কাজটি করছিলেন। ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন সাথে সাথে। ক্ষমা চাইলেন এবং ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন।
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর