২০০৭ সালের ৭ মে শেখ হাসিনা সকল রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে দেশে ফিরেছিলেন। আজ থেকে ১৬ বছর আগে রাজনীতি থেকে তাঁকে ‘‘মাইনাস’’ করার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। সামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার তখন জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য তাঁর নামে দুর্নীতির বদনাম রটিয়েছিল। সবকিছুকে সৎ সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য তিনি দেশে ফিরে এসেছিলেন। তাঁর জন্য বাংলাদেশ আজ ধন্য হয়েছে। তিনি ফিরে না এলে ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে কে সরকার গঠন করত- আমাদের জানা নেই। কিন্তু তিনি ফিরে এসে হাল ধরেছিলেন গণতন্ত্রের। ফলে গত ১৪ বছর দেশের উন্নয়ন আকাশ ছুঁয়েছে। এদেশ প্রকৃতপক্ষে এগিয়েছে তাঁর অসীম সাহসিকতা ও যোগ্য নেতৃত্বের কারণে।
বলাবাহুল্য,
২০০৭ সালের ৭ মে
তিনি
ফিরে না এলে এদেশের
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হতো না। আর
২০০৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত
তাঁর নেতৃত্বের মহিমান্বিত রূপ দেখা যেত
না। বাঙালির
চিরঞ্জীব আশা ও অনন্ত
অনুপ্রেরণার উৎস শেখ হাসিনা
বর্তমানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধজনিত বিশ্ব সংকটে দেশের মানুষকে রক্ষার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রমে
দিনযাপন করছেন। ২০০৭ সালের ৭
মে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঘোষিত জরুরি অবস্থা চলাকালীন শত বাধা ও
হুমকি উপেক্ষা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে
চিকিৎসা শেষে আওয়ামী লীগ
সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ফিরে আসেন। সামরিক
সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে হাজার হাজার
মানুষের অভিনন্দনে সেদিন পুনরায় আপ্লুত হন তিনি। দেশে
ফিরে জনগণের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় শুরু করেন নতুন
সংগ্রাম। আর কয়েকদিন পর
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ৪২তম বার্ষিকী ১৭
মে উদযাপিত হবে। তবে ভারত
থেকে এই প্রথম প্রত্যাবর্তন
এবং আমেরিকা থেকে ৭ মে
দ্বিতীয় প্রত্যাবর্তন দিবস বাংলাদেশের ইতিহাসে
গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
২.
১৯৮১
সালের ১৭ মে শেখ
হাসিনা বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলেন। এটি
ছিল তাঁর প্রথম স্বদেশ
প্রত্যাবর্তন; তখন থেকেই বাংলাদেশের
পুনর্জন্ম ঘটে। তাঁর ফিরে
আসার পর বাংলাদেশ পুনরায়
বাংলাদেশ হয়ে উঠেছিল। ৪২
বছর পূর্বে তাঁর প্রত্যাবর্তন ছিল
অতি সাধারণ, কারণ সেভাবেই তিনি
দেশের জনগণের সামনে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন। তিনি এক বৃহৎ
শূন্যতার মাঝে এসে দাঁড়ালেন।
এখানে তাঁর ঘর নেই;
ঘরের আপনজনও কেউ নেই। তাই
সারা দেশের মানুষ তাঁর আপন হয়ে
উঠল। তিনি ফিরে আসার
আগে ছয় বছর স্বৈর
শাসকরা বোঝাতে চেয়েছিল তারাই জনগণের মুক্তিদাতা। কিন্তু সাধারণ মানুষ ক্ষণে ক্ষণে জেগে উঠছিল, বিচার
দাবি করছিল জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের। সেনা শাসকের হাতে
ক্ষমতা কুক্ষিগত থাকায় জনগণের শাসনের দাবি নিয়ে রাজনীতির
মাঠে রাতদিনের এক অক্লান্ত কর্মী
হয়ে উঠলেন শেখ হাসিনা। তিনি
নেতা কিন্তু তারও বেশি তিনি
কর্মী। কারণ দলকে ঐক্যবদ্ধ
করা, বঙ্গবন্ধু ও তাঁর শাসনকাল
সম্পর্কে অপপ্রচারের সমুচিত জবাব দেওয়া, পাকিস্তান
ও অন্যান্য দেশের ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করা তাঁর প্রাত্যহিক
কর্মে পরিণত হলো। দেশে ফেরার
প্রতিক্রিয়ায় আবেগসিক্ত বর্ণনা আছে তাঁর নিজের
লেখা গ্রন্থগুলোতে। তুলে ধরছি একটি
উদ্ধৃতি : ‘আমার দুর্ভাগ্য, সব
হারিয়ে আমি বাংলাদেশে ফিরেছিলাম।
লক্ষ মানুষের স্নেœহ-আশীর্বাদে
আমি সিক্ত হই প্রতিনিয়ত। কিন্তু
যাঁদের রেখে গিয়েছিলাম দেশ
ছাড়ার সময়, আমার সেই
অতি পরিচিত মুখগুলি আর দেখতে পাই
না। হারানোর এক অসহ্য বেদনার
ভার নিয়ে আমাকে দেশে
ফিরতে হয়েছিল।’(ড. আবদুল মতিন
চৌধুরী: আমার স্মৃতিতে ভাস্বর
যে নাম, বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের
জন্ম, পৃ ৭৪) আমরা
জানি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে ছাত্র জীবন থেকেই তিনি
ছিলেন রাজনীতি সচেতন। শেখ হাসিনার স্বদেশ
প্রত্যাবর্তনের (১৯৮১ সালের ১৭
মে) আগে ৫ মে
বিশ্বখ্যাত নিউজউইক পত্রিকায় বক্স আইটেমে তাঁর
সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়,
জীবনের ঝুঁকি আছে এটা জেনেও
তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন। ১৯৮৩ সালের ২৪
মার্চের সামরিক শাসন জারির দুইদিন
পর স্বাধীনতা দিবসে একমাত্র শেখ হাসিনাই সাভার
স্মৃতিসৌধে গিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘আমি সামরিক শাসন
মানি না, মানবো না।
বাংলাদেশে সংসদীয় ধারার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করবোই করবো।’ তাই তো কবি
ত্রিদিব দস্তিদার শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ
করে লিখেছেন, ‘আপনিই তো বাংলাদেশ’।
ঐতিহাসিক মুহূর্তটি কেবল পাকিস্তানের কারাগার
থেকে ১৯৭২ সালের ১০
জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সঙ্গেই তুলনীয়।
৩.
দুঃখী
রাজকন্যার মতো হৃত রাজ্য,
হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারের জন্য
শেখ হাসিনার জন্ম ও পুনর্জন্মের
খুব বেশি প্রয়োজন ছিল
দেশ ও জনতার। তাঁর
প্রথম প্রত্যাবর্তনের আগে নৈরাজ্যের যাঁতাকলে
পিষ্ঠ হচ্ছিল মানুষ। তেমনি ২০০৭ সালের ৭
মে’র আগে সামরিক
তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চালিয়ে, মামলা-মোকাদ্দমা করে রাজনীতিকে হত্যা
করতে চেয়েছিল।
১৯৮৩
সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে
২০০৭ সালের সামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল পর্যন্ত একাধিক
বার বন্দি অবস্থায় নিঃসঙ্গ মুহূর্ত কাটাতে হয়েছে তাঁকে। তিনি লিখেছেনÑ‘দেশ
ও জনগণের জন্য কিছু মানুষকে
আত্মত্যাগ করতেই হয়, এ শিক্ষাদীক্ষা
তো আমার রক্তে প্রবাহিত।
১৫ আগষ্ট ১৯৭৫-এর পর
প্রবাসে থাকা অবস্থায় আমার
জীবনের অনিশ্চয়তা ভরা সময়গুলোয় আমি
তো দেশের কথা ভুলে থাকতে
পারিনি? ঘাতকদের ভাষণ, সহযোগীদের কুকীর্তি সবই তো জানা
যেত।’ (নূর হোসেন, ওরা
টোকাই কেন, পৃ ৫৩)
২০০৬ থেকে ২০০৭ সালে
দেশে তখন শেখ হাসিনাকে
রাজনীতি থেকে মাইনাস করার
চেষ্টা চলছিল। দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ
করে দেওয়া হয়েছিল, রাজনীতিবিদদের বিশেষ আইনে কারান্তরীণ করে
রাখা হয়। এমন এক
পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের পথ সুগম হয়
শেখ হাসিনার আগমনে।
৪.
আসলে
১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশ
ও জনগণের কাছে প্রত্যাবর্তনের (জন্মান্তরের)
মতো শেখ হাসিনার ২০০৭
সালের ৭ মে আমেরিকা
থেকে দ্বিতীয় প্রত্যাবর্তনও (তৃতীয় জন্ম) ছিল আমাদের জন্য
মঙ্গলকর। ২০০৭ সালে ১১
জানুয়ারির পর তাঁর দেশে
ফেরার ওপর বিধিনিষেধ জারি
করে সামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তাঁকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার
সেই চক্রান্ত ব্যর্থ হয়। তিনি দেশে
প্রত্যাবর্তন করেন। কিন্তু ১৬ জুলাই যৌথবাহিনী
তাঁকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে ৩৩১ দিন
কারাগারে বন্দি করে রাখে। সেসময়
গণমানুষ তাঁর অনুপস্থিতি গভীরভাবে
উপলব্ধি করেছে। তাঁর সাবজেলের সামনে
দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের উদ্বেগ,
গ্রেফতারের সংবাদ শুনে দেশের বিভিন্ন
স্থানে চারজনের মৃত্যুবরণ, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের উৎকণ্ঠা আপামর জনগোষ্ঠীকে স্পর্শ করেছিল। কারণ সে সময়
আদালতের চৌকাঠে শেখ হাসিনা ছিলেন
সাহসী ও দৃঢ়চেতা; দেশ
ও মানুষের জন্য উৎকণ্ঠিত; বঙ্গবন্ধুর
কন্যা হিসেবে সত্যকথা উচ্চারণে বড় বেশি সপ্রতিভ।
২০০১ থেকে ২০০৬ সাল
পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার সন্ত্রাস,
দুর্নীতি, ধর্ষণ ও লুটপাটের মাধ্যমে
এদেশকে নরকে পরিণত করেছিল।
নেত্রীকে গ্রেনেড, বুলেট, বোমায় শেষ করতে চেয়েছিল।
কিন্তু তিনি ছিলেন নির্ভীক;
এখনো তেমনটাই আছেন। ২০০১ সালের নির্বাচনোত্তর
জোট সরকারের অত্যাচার-নির্যাতন-ধর্ষণ তাঁকে কতটা ব্যথিত করেছিল
তা এখনও বিভিন্ন সভা-সমাবেশের বক্তৃতায় শুনে থাকি আমরা।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা করে নতুন প্রজন্মকে
যথার্থ ইতিহাসের পথ দেখিয়েছেন তিনি
নিজেই।
৫.
২০০৭
সালের ৭ মে হাসিনা
ফিরে এসেছিলেন মাটি ও মানুষের
কাছে। এজন্য ‘আমার বাংলাদেশ, আমার
ভালোবাসা’ এই অমৃতবাণী তাঁর
কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে। তিনি নানা বিশেষণে
বিশেষায়িত। সততা, নিষ্ঠা, রাজনৈতিক দৃঢ়তা; গণতন্ত্র, শান্তি, সম্প্রীতি ও বিশ্বভ্রাতৃত্বের অনন্য
রূপকার আর মানব কল্যাণে
নিবেদিতপ্রাণÑ তার চেয়েও আরো
আরো অনেককিছু তিনি। এই দরদী নেতা
দুঃখী মানুষের আপনজন; নির্যাতিত জনগণের সহমর্মী তথা ঘরের লোক।
তিনি বলেছেন, ‘বাবার মতো আমাকে যদি
জীবন উৎসর্গ করতে হয়, আমি
তা করতে প্রস্তুত।’ শান্তির
অগ্রদূত শেখ হাসিনা দেশের
মানুষের জন্য নিজের প্রাণকে
তুচ্ছ করতে পারেন নির্দ্বিধায়।
সাধারণ মানুষের আস্থা ও ভরসার কেন্দ্রবিন্দু
তিনি। ধৈর্য ও সাহসের প্রতিমূর্তি
শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের মানসকন্যা, দেশরত্ন, কৃষকরত্ন, জননেত্রীÑ বহুমাত্রিক জ্যোতিষ্ক। তাঁকে কেন্দ্র করে, তাঁর নেতৃত্বে
আবর্তিত হচ্ছে বাংলাদেশ।
পদ্মাসেতু,
মেট্রোরেল, গভীর সমুদ্রবন্দর প্রভৃতি
বড় প্রকল্পের বাস্তবায়নই মনে করিয়ে দিচ্ছে
শেখ হাসিনা প্রকৃতপক্ষে আলাদা, ভিন্ন, স্বতন্ত্র ও নেতৃত্বের গৌরবজনক
আসনে সমাসীন। তিনি জনগণের ইচ্ছা
অনুযায়ী অর্থনৈতিক বিকাশ ত্বরান্বিত করেছেন; সংকট উত্তরণে অনন্য
ভূমিকা রেখেছেন। তিনি জনতার আকাঙ্ক্ষাসমূহ
এবং টিকে থাকার বাস্তবতার
মধ্যে সেতুবন্ধনের সাহায্যে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে এনেছেন। তাঁর নেতৃত্বের সাফল্যে
বাংলাদেশ আজ গৌরবজনক অধ্যায়ের
সূচনা করেছে। ১৯৭৪ সালে মুক্তিযুদ্ধোত্তর
বাস্তবতায় ও জাতির পিতা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের
শাসনামলে আমেরিকার তৎকালীন পররাষ্ট্র মন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে মন্তব্য করেছিলেন।
এ ধরনের মন্তব্য করেই ক্ষান্ত হননি
তিনিÑ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থাকে
পরামর্শ দেন বাংলাদেশকে কোনো
প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা না করার। তাদের
বিরোধিতা ও ষড়যন্ত্রের পরও
বাংলাদেশ আজ গৌরবজনক অবস্থানে পৌঁছেছে। শেখ হাসিনার শাসনামলেই
কিসিঞ্জারের পরবর্তী নেতৃবর্গ ভিন্ন সুরে কথা বলে
গেছেন। ‘এশিয়ার টাইগার’ তথা বাংলাদেশ এশিয়ার
একটি মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশকে ‘নাম্বার ওয়ান উন্নয়নমুখী দেশ’
বলেছেন অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি।
গত ১৪ বছরের শাসনামলে
দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের সফলভাবে মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছেন
শেখ হাসিনা। খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্ট থেকে সরিয়ে দেয়া
ছিল শেখ হাসিনার একটি
অনন্য কাজ। আধুনিক সিঙ্গাপুরের
‘উন্নয়নে’ প্রয়াত লি কুয়ান ইউ
সরকারের নেতৃত্বের সঙ্গে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের
তুলনা করা হয়। অন্যদিকে
মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মহাম্মদ ১৯৮১ সাল থেকে
পাঁচের অধিক সংসদ নির্বাচনে
জয়ী ছিলেন। এশিয়ার এই দুই নেতাই
দুটি দেশের প্রধান হিসেবে সকলের কাছে সম্মানীয়। লি
সিঙ্গাপুরের প্রথম তিন দশকের প্রধানমন্ত্রী
হিসেবে একটি দরিদ্র বন্দরকে
তৃতীয় বিশ্বের তলানি থেকে মাত্র এক
প্রজন্মের চেষ্টাতেই প্রথম বিশ্বের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। তিনি
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একনাগাড়ে ৩০ বছর (১৯৯০
সাল পর্যন্ত) দায়িত্ব পালন করেন। শেখ
হাসিনা ওই দুই শাসকের
মতো আরো সময় পেলে
এদেশের মানুষকে অধিকতর উত্তম জীবনব্যবস্থা দিতে পারবেন। বর্তমান
মানুষ অধিকতর সম্মান ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ
চায়Ñ শেখ হাসিনা তা
ভালই জানেন।
বর্তমান
প্রজন্মের কাছে শেখ হাসিনা
এক সাহসী রাজনীতিকের নাম; যাঁর সুদূরপ্রসারী
পরিকল্পনায় ভবিষ্যতের বাংলাদেশ উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে চলেছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি পাল্টে গেছে; বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার, জেল হত্যাকাণ্ডের বিচারসহ
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
তরুণ প্রজন্ম প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি-জামায়াতকে। বিএনপি-জামায়াতের সহিংস বীভৎসতাকে। অতীতে সহিংসতা আর জ্বালাও-পোড়াও
করে, পেট্রলবোমায় মানুষ হত্যা করে তারা থামাতে
পারেনি যুদ্ধাপরাধের বিচার। বরং কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীদের
ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ায়
জনগণ শেখ হাসিনাকে কৃতজ্ঞতা
জানিয়েছে, তারা স্বস্তির নিঃশ্বাস
ফেলেছে। দমে গেছে স্বাধীনতা
বিরোধী জামায়াতের রাজনৈতিক তৎপরতা। শুধু অভ্যন্তরীণ রাজনীতি
নয়, কূটনীতিক দিক থেকেও প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছেন। তিনি মেধা ও
প্রজ্ঞা দিয়ে সব বিরূপ
পরিস্থিতিকে নিজের অনুকূলে নিয়ে এসেছেন। তাঁর
মন্ত্রিসভায় যুক্ত হয়েছেন অভিজ্ঞ ও বর্ষীয়ান রাজনীতিক।
কিছু বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা সত্ত্বেও উন্নয়ন সহযোগী ও অংশীদার বানিয়ে
ফেলেছেন রাশিয়াসহ অন্য অনেক দেশকে।
প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধুত্বের বন্ধন আরো সুদৃঢ় হয়েছে।
পূর্বমুখী কূটনীতির অংশ হিসেবে চীনের
সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কোন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছেন। তাঁর সরকারের উন্নয়নের
মডেল অন্যান্য দেশের কাছে প্রশংসিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে
ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখিয়েছে। এছাড়া আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে
শান্তি, স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতি প্রতিষ্ঠায়
বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এজন্যই চীন-জাপান-ভারতের
রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানসহ
বিশ্বের সকল নেতৃবৃন্দ শেখ
হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন।
২০২০
সালে করোনা সংকট মোকাবেলায় শেখ
হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেছে মার্কিন ম্যাগাজিন ‘ফোর্বস’। অন্যদিকে ব্রিটেনের
‘দ্য ইকোনমিস্ট’ মহামারির মধ্যেও এদেশের অর্থনীতির নিরাপত্তা বিষয়ে ইতিবাচক প্রতিবেদন ছাপিয়েছে। আবার ২০২২ সালের
প্রথম মাস থেকেই ভ্যাকসিন
হিরোর দেশে পরিণত হয়
বাংলাদেশ। কারণ সকল কুসংস্কার
ও অপপ্রচার মুক্ত হয়ে দেশের মানুষকে
টিকা নিতে উৎসাহী করেছেন
স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দেশের
দুটি ধারার রাজনৈতিক বলয়ের একটির লক্ষ্য, বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করা। অন্যদিকে আরেকটি
শক্তির অভিলাষ, যে কোনো মূল্যে
১৫ কিংবা ২১ আগস্টের মতো
ঘটনার পুনরাবৃত্তি করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়
আসীন হওয়া। এসব দুষ্কৃতিকারী সবসময়
দেশের অগ্রগতিকে থামিয়ে দিতে চেয়েছে। বিশেষত
স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর থেকে একাধিকবার
শেখ হাসিনার প্রাণনাশের চেষ্টা করা হয়েছে। ১৯৮৩
সালের ১৬ আগস্ট জননেত্রীর
ওপর ঢাকায় গ্রেনেড হামলা করা হয়েছিল। ১৯৮৬
সালের ১৬ অক্টোবর তাঁর
বাসভবন আক্রান্ত হয়। ১৯৮৮ সালের
২৪ জানুয়ারি- শেখ হাসিনার নেতৃত্বে
চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে একটি বিরাট
মিছিল নগরীর দিকে এগিয়ে যাওয়ার
সময় তাঁর ওপর গুলিবর্ষণ
করা হয়। এতে ৪০
জন নিহত হন। ১৯৮৯
সালের ১১ আগস্ট ধানমন্ডি
৩২ নম্বরের বাসভবনে থাকাকালে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের সংগঠন ফ্রিডম পার্টির ক্যাডাররা শেখ হাসিনাকে হত্যার
উদ্দেশ্যে গুলি ছোড়ে। ১৯৯১
সালের ১১ সেপ্টেম্বর জাতীয়
সংসদের উপ-নির্বাচনের সময়
ধানমন্ডিতে তাঁর ওপর বন্দুকধারীরা
রাসেল স্কোয়ারে আক্রমণ চালায়। ১৯৯৪ সালের ২৩
সেপ্টেম্বর- ট্রেনে ভ্রমণকালে ঈশ্বরদী ও নাটোরে অজ্ঞাত
বন্দুকধারীরা জননেত্রীর ওপর গুলিবর্ষণ করেছিল।
এভাবেই দেশ-বিদেশে কখনো
গোপনে কখনো বা প্রকাশ্যে
চলেছে হত্যার ষড়যন্ত্র। ২০০০ সালের ২০
জুলাই পূর্ব নির্ধারিত জনসভাস্থল কোটালিপাড়া থেকে শেখ হাসিনাকে
হত্যার উদ্দেশ্যে ৭৬ কেজি বিস্ফোরকের
বোমা উদ্ধার করা হয়। ২০০৪
সালের ৫ জুলাই তুরস্কে
সফরের সময় জননেত্রীকে হত্যার
হুমকি দেয়া হয়েছিল। ২০০৪
সালের ২১ আগস্ট ছিল
ভয়াবহতম দিন। অজস্র গ্রেনেড
নিক্ষেপের পরও নেতাকর্মীদের মানবঢালের
বেষ্টনীর কারণে প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধু কন্যা।
তবে নিহত হন অনেক
আওয়ামী লীগের নিবেদিতপ্রাণ নেতা-কর্মী। এছাড়া
অনলাইন, ব্লগ এবং ফেসবুকে
জননেত্রীকে কটাক্ষ করে খাটো করার
চেষ্টা করা হয়েছে বারবার।
মূলত
হত্যার প্রচেষ্টা ও হুমকির মধ্যেও
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যেভাবে এগিয়ে
যাচ্ছে তাতে করোনা কবলিত
হয়েও বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত
হবেÑ এটা নিশ্চিত। তাই
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে সকল অশুভ শক্তির
মোকাবেলা করতে হবে। সামনে
বাধা এলে তা বঙ্গবন্ধুর
আদর্শকে ধারণ করে ধৈর্যের
সঙ্গে মোকাবেলায় সচেষ্ট থাকতে হবে। ৭১-এর
পরাজিত শক্তিরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে দেশের স্বাধীনতা
ও স্বপ্নকে হত্যা করতে চেয়েছিল। শেখ
হাসিনা জীবিত রয়েছেন। তিনিই তাঁর পিতার স্বপ্নের
সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য
চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু
৭১-এর পরাজিত শক্তিরা
বসে নেই; ষড়যন্ত্রকারীরা নতুন
নতুন ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে। তাই
সকলকে এ ব্যাপারে সতর্ক
থাকতে হবে। শেখ হাসিনার
নেতৃত্ব বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত
করেছে। তাঁর ধারাবাহিকতা ভবিষ্যতেও
বজায় থাকবে বলে আমরা বিশ্বাস
করি।
৬.
২০০৭
সালের ৭ মে শেখ
হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। কারণ
তিনি ‘আদর্শবাদী ও আত্মত্যাগী রাজনৈতিক
নেতা’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমানের যোগ্য উত্তরসূরি। বঙ্গবন্ধু আজীবন সংগ্রাম করে বাঙালি জাতিকে
স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, বিশ্বের
কাছে বাংলাদেশকে অনন্য মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছেন; সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছেন
ও বাস্তবায়নে অগ্রসর হয়েছেন; তাঁর সেই আদর্শিক
ধারায় স্নাত হয়ে শেখ হাসিনা
মেধা ও দূরদর্শিতাসম্পন্ন রাজনীতিক হিসেবে
জনগণের ভাগ্য বদলে দিয়েছেন। জননেত্রীর
নেতৃত্বে এ মুহূর্তে বাংলাদেশও
সকল সংকট মোকাবেলা করতে
সক্ষম হচ্ছে।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:০৬ পিএম, ১৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।
তবুও, অনেকেই বলছেন বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যাপকভাবে বয়কট করা হয়েছে। এর মূল কাওন হিসেবে তারা বলছেন, বিরোধী দলে নির্বাচন বয়কট এবং বিরোধীদের বয়কটের আহ্বানের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে সাধারণ জনগণের ভোট বর্জন।
অংশগ্রহণ নাকি বয়কট?
দেশটির প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং তার মিত্ররা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও সব বিরোধী দল অবশ্য তাদের অনুসরণ করেনি। নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সাতাশটি দল প্রার্থী দিয়েছিল। এছাড়া প্রায় ৩০০ আসনের বিপরীতে প্রায় ১৯০০ স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। তাই নির্বাচনে বিএনপির অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও, একাধিক নির্বাচনী এলাকার ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হয়েছে এবং ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করেছে।
নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৪১.৮ শতাংশ। গত নির্বাচনের তুলনায় এই সংখ্যা কম হলেও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সংখ্যাকে কম বলার সুযোগ নেই। অনেকে এটিকে বিরোধী দলের নির্বাচন বয়কট জনমনে প্রতিফলিত হয়েছে বলে দেখছে। বিরোধীদের বয়কট নিঃসন্দেহে ভোটার উপস্থিতিতে প্রভাব ফেলেলেও, কম ভোটার উপস্থিতি মানেই জনগণ ভোটকে প্রত্যাখ্যান করেছে এওনটি ভাবার কোন সুযোগ নেই। মূলত বিএনপির বিভিন্ন নির্বাচন বিরোধী কর্মসূচী, বিক্ষোভ, সমাবেশ, গাড়িতে ট্রেনে বাসে অগ্নিসংযোগ, ভোটের আগের দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার হরতাল-অবরোধের ডাক দেশের পরিস্থিতিকে অস্থির করে তোলে। যার ফলে নিজদের নিরাপত্তার জন্যই অনেক ভোটার নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে বাড়িতে থাকতে বাধ্য হয়েছে।
তবে যে সব নির্বাচনী এলাকায় একাধিক জনপ্রিয় প্রার্থী নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থিতি ছিল ৬০ শতাংশের বেশি। আবার যেস এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা কম ছিল সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থতি ছিল কম। অর্থাৎ ভোটাররা বিএনপির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে নির্বাচন বর্জন করেনি; প্রতিদ্বন্দ্বিতাই মূলত ভোটার উপস্থিতিকে প্রভাবিত করেছে।
তবে নির্বাচন কমিশনের রিপোর্ট করা ভোটারদের পরিসংখ্যান নিয়ে বিভ্রান্তি রয়ে গেছে। দুপুরে নির্বাচন কমিশনের করা প্রেস ব্রিফিংয়ে ভোটার উপস্থিতি মাত্র ২৭ শতাংশ ঘোষণা করা হলেও, শেষে ৪১.৮ শতাংশ চূড়ান্ত ভোটার উপস্থিত ঘোষণা করা হয়। এর কারণ হিসেবে নির্বাচন কমিশন জানায়, দুপুরের সংখ্যাটি প্রকৃত সময়ে ছিল না। যেহেতু বাংলাদেশে ম্যানুয়াল পেপার ব্যালট সিস্টেম ব্যবহার করা হয় যেখানে ভোটগুলি হাতে গণনা করা হয় এবং গ্রামীণ এলাকা থেকে ফলাফল প্রেরণে কয়েক ঘন্টা পিছিয়ে ছিল। যা দুপুরের ভোটার উপস্থতি এবং সর্বশেষ ভোটার উপস্থিতির মধ্যে ব্যবধান ব্যাখ্যা করে। সেক্ষেত্রে মোট ভোটের ১৪ শতাংশ শুধু শেষ সময়ে দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ সত্য নয়।
নির্বাচন কমিশন হয়ত সঠিক। কিন্তু যেহেতু সন্দেহের তীর ছোড়া হয়েছে সেহেতু, নির্বাচন কমিশন সমস্ত ভোটকেন্দ্রের প্রতি ঘণ্টায় ভোট গণনার বিস্তারিত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে সন্দেহের সমাধান করতে পারে। এ ধরনের স্বচ্ছতা ভোটদানের প্রশ্নে স্পষ্টতা প্রদান করবে এবং যেকারো বিভ্রান্তি দূর করতে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে কাজ করবে।
বাংলাদেশ কি একদলীয় রাষ্ট্র?
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আরেকটি নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর অনেকেই বাংলাদেশ একটি একদলীয় রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন। ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসনে এবং আওয়ামী লীগের অনুগত স্বতন্ত্ররা আরও ৬২টি আসনে জয়লাভ করে। যার ফলে সংসদে ৯৫ শতাংশ নির্বাচিত সংসদ সদস্যই আওয়ামী লীগের পক্ষে এবং সংসদে কোন অর্থবহ বিরোধী দলের অস্তিত্ব নেই।
তবে বিষয়টি এত সরল নয়। প্রথমত, সংসদের স্বতন্ত্র সদস্যদের আওয়ামী লীগের ল্যাপডগ বলে উপেক্ষা করা বাংলাদেশের রাজ্নৈতিক প্রেক্ষাপটে কতটা যৌক্তিক সে প্রশ্ন থেকে যায়। কারণ প্রত্যেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লী প্রার্থীর সাথে তীব্র নির্বাচনী লড়াইয়ের পরই বিজয়ী হয়েছেন। তারা সংসদে তাদের ভোট এবং তাদের বক্তৃতায়র পুরো স্বাধীনতা ভোগ করবেন। বাংলাদেশের সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্যদের তাদের দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী কোন দলের অধীনে না থাকায় তারা এই বিধিনিষেধের বাইরে। এই প্রেক্ষাপটে, শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকা সত্ত্বেও, নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আ.লীগ প্রশংসার যোগ্য। আ.লীগ দলের সিনিয়র ব্যক্তিদের স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি দিয়ে, অবশ্যই সম্ভাব্য অন্তর্দলীয় বিরোধের ঝুঁকিতে পড়েছে। তবুও, এটি ভোটারদের প্রকৃত নির্বাচনী বিকল্প প্রদান এবং সংসদে মত বৈচিত্র্যকে প্রসারিত করেছে।
উপরন্তু, একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি অপ্রতিরোধ্য সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা একটি দল একদলীয় রাষ্ট্রের সমতুল্য নয়। বাংলাদেশকে একদলীয় রাষ্ট্র না বানিয়ে অতীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একই রকমের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। একইভাবে ভারত ও জাপান বহুদলীয় গণতন্ত্র না হারিয়ে একদলীয় আধিপত্য অর্জন করেছে। মূল প্রশ্ন হল আওয়ামী লীগ নিজে এই অতি সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদের আয়োজন করেছিল নাকি বিএনপির নির্বাচন বয়কটের কারণে এটি অনেকটা অনিবার্য ছিল।
বিএনপি যদিও যুক্তি দেবে—যে কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কখনোই ছিল না এবং ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের পর বিএনপি নেতাদের দমন-পীড়ন ও গণগ্রেপ্তার সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ এবং তাদের অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করেছে। তবে, ২৮ অক্টোবরের আগেও বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রত্যাখ্যান করে ইতিমধ্যেই নির্বাচনে নিজেদের অপ্রাসঙ্গিক করে তুলেছিল। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন কমিশনের ডাকা একটি নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার জন্যই ২৮ অক্টোবরের বিক্ষোভ করেছিল দলটি। ফলে সেই সময়ে কমিশনের কর্তৃত্বের অধীনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, অরাজকতা দমনে এবং নির্বাচনের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে শক্তি প্রয়োগ করেছিল। এটি কোনভাবে নির্বাচন বর্জনের কারণ হতে পারে। বলপ্রয়োগের অসামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবহার আলাদা মূল্যায়নের প্রয়োজন, তবে এটি নির্বাচনী নয় বরং আইন-শৃঙ্খলার চোখে দেখাই উত্তম।
দায়বদ্ধতা
এমন উদ্বেগজনক দাবি করার পরিবর্তে, পর্যবেক্ষকদের জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল যে প্রাথমিক বিরোধী দল বিএনপি কেন মাঠ হারাল। সরকার যেমন শক্তিপ্রয়োগের জন্য যাচাই-বাছাইয়ের পরোয়ানা দেয়, তেমনি বিএনপিকে তার গণতান্ত্রিক দায়িত্ব পালনের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
১৭ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী একটি প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির দায়িত্ব ছিল সংসদে ভোটারদের আওয়াজ দেওয়া। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না এমন অনুমানের উপর ভিত্তি করে নির্বাচন বর্জন করে, তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং জনগণের অধিকারকে উপেক্ষা করেছে। তর্কের খাতিরে আ. লীগের অধীনে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না ধরে নিলেও, বিএনপি’র তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত মে ২০১১ সালে এটিকে অসাংবিধানিক রায় দিয়েছিল। তাছাড়া, পূর্ববর্তী তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা তার ম্যান্ডেটকে অতিক্রম করেছিল, জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করেছিল এবং দলীয় নেতাদের বন্দী করেছিল রাজনীতিকে বাধাগ্রস্থ করেছিল।
নির্বাচন বয়কট শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সুফল এনে দিয়েছে। বিএনপি নির্বাচনের মাধ্যমে জনসাধারণের ম্যান্ডেট অনুসরণ করার চেয়ে তত্ত্বাবধায়ক শাসনের মধ্যে একটি সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরির উচ্চাকাঙ্ক্ষা করেছিল। গণতন্ত্রের প্রতি ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গীকার নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও মূলত বিএনপি’র এই আত্ম বিধ্বংসী এবং অপরিপক্ক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই আওয়ামী লীগের ক্ষমতার পথ সুগম করেছে।
বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যাপক বয়কট সর্বজন গৃহীত
মন্তব্য করুন
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর
‘এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ।/তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/ বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক/যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে-যাওয়া গীতি/ অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক/ মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,/ অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’ অর্থাৎ ১৪৩১ বঙ্গাব্দে পুরাতন স্মৃতি মুছে যাক, দূরে চলে যাক ভুলে যাওয়া স্মৃতি, অশ্রুঝরার দিনও সুদূরে মিলাক। আমাদের জীবন থেকে বিগত বছরের ব্যর্থতার গ্লানি ও জরা মুছে যাক, ঘুচে যাক; নববর্ষে পুরাতন বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক। রমজান ও ঈদের পর দেশের মানুষের জীবনে আরো একটি উৎসবের ব্যস্ততা নতুন বছরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় উদ্ভাসিত।ফিলিস্তিনবাসীর উপর হামলা আর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে এর মধ্যে মারা গেছেন অসংখ্য মানুষ।তবু মৃত্যুর মিছিলে জীবনের গান ফুল হয়ে ফুটেছে। যুদ্ধের সংকট আমাদের পরাস্ত করতে পারেনি কারণ পৃথিবীর মৃত্যু উপত্যকা পেরিয়ে এদেশে বৈশাখ এসেছে নতুন সাজে।
সমাজ, রাষ্ট্রে নেতার ছড়াছড়ি। নেতাদের পোস্টার, ফেস্টুনে ভরে গেছে শহর, গ্রাম। তবে এদের বেশিরভাগই সুবিধাভোগী, অর্থলোভী। এদের মধ্যে আদর্শের লেশমাত্র নেই। সততা, দেশপ্রেম এবং জনগণের প্রতি ন্যুনতম দায়বদ্ধতা নেই। এদের কোনো পেশা নেই। রাজনীতি কে এরা অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। নেতা নয়, বরং এদেরকে নির্দ্বিধায় চাঁদাবাজ, দখলদার, মাদক ব্যাবসায়ী বলা যায়। রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে এরা হেন অপকর্ম নেই যা করে না। এদের অনেকে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে দখল এবং মাদক ব্যাবসার মত জঘন্য কাজের সাথে সম্পৃক্ত। এসব আদর্শহীন, অসৎ, সুবিধাভোগী, অর্থলোভী নেতাদের ভীড়ে সৎ, দেশপ্রেমিক, আদর্শিক নেতাদের দেখা পাওয়া দুষ্কর। সমাজ, রাষ্ট্রে এমন নেতাও আছেন যারা দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য তাদের সর্বস্ব উজাড় করে দেন। ষাট, সত্তর, আশি এবং নব্বইয়ের দশকে এমন নেতার সংখ্যা ছিল বেশি। বর্তমানে হাজারো অসৎ নেতার মধ্যে এমন সৎ, আদর্শিক, দেশপ্রেমিক নেতা খুঁজে পেতে মাইক্রোস্কোপের প্রয়োজন হয়। দিন দিন যেভাবে রাজনীতিতে অসৎ নেতাদের দাপট বাড়ছে, আগামিতে প্রকৃত নেতাদের খুঁজতে হয়ত ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ প্রয়োজন হবে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।