আজ যাঁর নেতৃত্বগুণে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের মর্যাদায় বাংলাদেশ বিশ্বের রোল মডেল, সেই শেখ হাসিনাকে শুরুতেই রাজনীতিতে আসতে বাধাগ্রস্ত করছিল, কিছু সংবাদপত্র ও সাংবাদিক। তারা সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউর রহমানের তল্পিতল্পা হয়ে উঠেছিলেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দিল্লিতে থাকাকালীন আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং স্বদেশে ফেরার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তখনই রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংবাদপত্রে নেতিবাচক প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়।
উল্লেখ্য বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ১৯৭৫ সালের ২৯ জুলাই পুত্রকন্যা ও ছোটবোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন পশ্চিম জার্মানিতে। স্বামী পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার কাছে। শেখ হাসিনার ভাষায় আর এর ১৫ দিনের ব্যবধানে নেমে আসে বিষাদবেদনার খবর। মা-বাবা, ভাই-ভাবী, ছোট্ট আদুরে ভাই রাসেলসহ আত্মীয় পরিজন হারানোর খবর। ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডকে শেখ হাসিনা বর্ণনা করেছেন “রোজকেয়ামত” হিসেবে। কিন্তু তিনি যখন স্বদেশে ফিরে আসেন, তখন তাঁর কেড়ে নেয়া হলো নিজ বাড়িতে থাকার অধিকার। অর্থাৎ ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বর সড়কের ৬৭৭ নম্বরের বঙ্গবন্ধুর বাড়িটির সরকারের নিয়ন্ত্রণেই থাকলো। কিন্তু এর দুই সপ্তাহের ব্যবধানে জেনারেল জিয়া এক ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হন। উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তার অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্বগ্রহণের পর ১২ জুন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে বাড়িটি বুঝিয়ে দেন।
জেনারেল জিয়াউর রহমানের শাসনামলে শেষপ্রান্তে সারাদেশের আর্থসামাজিক রাজনৈতিক অস্থিরতা সর্বোপরি চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির মুখে বাংলাদেশে পা রেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশে ফেরেন মাত্র ৩৩ বছর বয়স যখন। ফেরার পরপরই শুরু হয় নানা ষড়যন্ত্র চক্রান্ত। এতে সরকারি মালিকানাধীন সংবাদ মাধ্যম ছাড়াও ব্যক্তিমালিকানাধীন অনেক পত্রিকা জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানোর নানাবিধ অপপ্রচার শুরু করে দেয়। শেখ হাসিনার স্বদেশে ফেরাকে বাধাগ্রস্ত করতে নানামুখী অপপ্রচার উল্লেখযোগ্য ঘটনা। সরকারি মালিকানাধীন সাপ্তাহিক বিচিত্রার সম্পাদক হিসাবে দেশবরেণ্য কবি শামসুর রাহমানের নাম ছাপা হলেও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসাবে শাহাদাত চৌধুরী কলকাঠি নাড়েন। তিনি মাহফুজ উল্লাহকে নয়াদিল্লিতে প্রেরণ করেন। ঢাকায় বসে মাহফুজ উল্লাহর তথ্যউপাত্তের ভিত্তিতে আহমেদ নূরে আলম, শেহাব আহমেদ ও জগলুল আলম বিভিন্ন রিপোর্ট প্রকাশ করেন।
“আওয়ামী লীগের প্রবাসী নেতৃত্ব ভারতের রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছি”-শিরোনামে সাপ্তাহিক বিচিত্রা প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে ১৯৮১ সালের ১৩ মার্চ সংখ্যায়। ভারতের আনন্দ বাজার পত্রিকার একটি সম্পাদকীয় থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে- তার আগে চার মার্চ এক প্রতিবেদনের শিরোনাম দেয় “শেখ হাসিনাকে কেন্দ্র করেই ভারত এখন স্বপ্ন দেখে”। প্রতিবেদনে বলা হয়, অকৃতজ্ঞ বাংলাদেশকে শিক্ষা দেয়ার জন্যই বাংলাদেশের সঙ্গে কঠোর ব্যবহার করবে। কেননা এই বাংলাদেশি জাতি ভারতের অবদান ও বন্ধুত্বকে ভুলে গেছে। ভারতের মস্কোপন্থী কমিউনিস্ট পার্টির দৈনিক প্যাট্রিয়টের একটি প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ন্যাপ ও কমিউনিস্ট পার্টির সমন্বয়ে গঠিত বাকশালের আদর্শ উদ্দেশ্যকেই গুরুত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
শেখ হাসিনা ও তাঁর স্বামী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করারও জন্য এক প্রতিবেদনে লেখা হয়, “কিন্তু স্ত্রীর নতুন পরিচয় তাঁর জন্য সুখকর নয়”। যেমন করেই হোক তিনি রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে জড়াতে চান না, ফিরেও আসতে চান না দেশে। কেননা যোগ্যতার মাপকাঠিতে চাকুরী একটা মিলবে অন্য কোথাও। তাঁর (ড. ওয়াজেদের) দুঃখ অন্যত্র। এক সময় সবাই বলতো বঙ্গবন্ধুর জামাই, আর এখন বলবে হাসিনার স্বামী।
বিচিত্রায় লেখা হয়, ভারতের সরকারের আশ্রয়ে শেখ হাসিনা অবস্থান করলেও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হওয়ার প্রেক্ষাপটে ভারত তাকে ও তার দলকে সমর্থন করছে না। দিল্লির পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে, বিশেষ করে যখন পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক উন্নয়ন হচ্ছে এবং মিসেস ইন্দিরা গান্ধী অভ্যন্তরীণ প্রতিকূল অবস্থার সম্মুখীন, তখন তিনি নতুন রাজনৈতিক ঝুঁকি নিতে রাজী নন। এছাড়া মিসেস গান্ধী নাকি মনে করেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব সমর্থন পাবার মতো সঠিক অবস্থানে নেই। শুধু তাই নয়, শেখ হাসিনা নাকি ভারতে বসে বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণা করছেন এমন প্রশ্ন পর্যন্ত উত্থাপন করা হয় বিচিত্রায়।
আওয়ামী লীগের ভবিষ্যত নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে বিচিত্রায় বলা হয়, “শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ভগ্নতরী ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ কাউন্সিল সমুদ্র জোড়াতালি দিয়ে পার হতে পেরেছে।” পেরেছে ভাঙ্গনকে সাময়িকভাবে ঠেকিয়ে রাখতে, কিন্তু অসমস্বত্ব মিশ্রণের এই ঐক্য কতদিন টিকবে সে সম্পর্কে আশাবাদ ব্যক্ত করা কঠিন। প্রতিটি কর্মতৎপরতা ও বক্তব্যে নেতাদের পরস্পরের প্রতি দেখা যাচ্ছে সন্দেহ ও অবিশ্বাস। আওয়ামী লীগের ডাকে সাড়া দিতে দলের সমর্থক কর্মীরাই এখন বাধাগ্রস্ত। তাদের এই নির্লিপ্ততা নেতাদের প্রথম হতাশাপীড়িত করে তুলছে। কাজেই আগামী দিনগুলোতে ঘটনাজাল আবার কোনদিকে মোড় নেবে তা হয়ে উঠেছে একরকম অনিশ্চিত।”
তৎকালীন জিয়া সরকার শেখ হাসিনা যাতে রাজনীতিতে না আসেন এবং আওয়ামী লীগ যাতে খন্ড বিখন্ড হয়ে নিঃশেষ হয়ে যায়, সেই পরিকল্পনা থেকেই কতিপয় সাংবাদিককে ব্যবহার করেন। কিন্তু শেখ হাসিনা সকল বাঁধা অতিক্রম করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করে আওয়ামী লীগের সরাসরি নেতৃত্ব গ্রহণ করেন।
শেখ দেশে ফিরে টুঙ্গিপাড়ায় সমাহিত জাতির পিতার কবরের পাশে এক সপ্তাহ কাটিয়ে ২৯ মে হযরত শাহজালাল ও হযরত শাহপরানের মাজার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সিলেট গমন করেন। ওদিন সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম রাজনৈতিক সমাবেশ করেন। একদিকে ঝড়বৃষ্টির অঝর ধারা আরেকদিকে মনের মাঝে পিতামাতা ভাইসহ স্বজনহারানোর বেদনার অশ্রুধারাকে সাথী করে শেখ হাসিনার বাংলাদেশের উৎকট রাজনৈতিক ময়দানে চলা শুরু হয়। দৈনিক ইত্তেফাকের রিপোর্টে বলা হয় শেখ হাসিনার ওই জনসভায় অন্তত তিন লাখ লোকের সমাগম ঘটেছিলো। শেখ হাসিনা ২৯ মে’র ওই সিলেট সমাবেশে বলেন, “ছয় বছর পর দেশে এসে যা দেখতে পাচ্ছি তা উদ্বেগজনক। অর্থনীতি দেউলিয়া, আইনশৃঙ্খলা বলতে কিছু নেই। দেশে সরকার আছে কিনা তা বলা মুশকিল। সার্বিক নৈরাজ্যকর অবস্থায় জনগণের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আন্দোলন ছাড়া আর পথ নেই। একমাত্র বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমেই জনগণকে বর্তমান অবস্থা থেকে মুক্ত করা সম্ভব। শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের ইতিহাস আন্দোলনের ইতিহাস। দেশের সংকটাবস্থায় অতীতে কখনও আওয়ামী লীগ বসে থাকেনি। এখনও বসে থাকবে না। অচিরেই জনগণকে সাথে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে। জনগণের মুক্তির লক্ষ্যে বাকশাল কর্মসূচি বাস্তবায়নই আন্দোলনের লক্ষ্য।
বাংলাদেশের জনগণ বঙ্গবন্ধু ও অন্যান্য নেতার হত্যার প্রতিশোধ নেবে। আর হত্যার রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। আমি পিতার অসমাপ্ত কাজ দ্বিতীয় বিপ্লব সম্পন্ন করার জন্য আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে দেশে ফিরেছি। দোয়া ও সমর্থন চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যদি জনগণের মুক্তি আনতে না পারি, আমি যদি ব্যর্থ হই, তবে পিতার কাছেই চলে যাবো। (দৈনিক সংবাদ, ৩০ মে ১৯৮১) ২৯ মে শেখ হাসিনা হযরত শাহজালালের মাজার জিয়াররতের মাধ্যমে সিলেটে প্রথম রাজনৈতিক সমাবেশে- “দেশে হত্যার রাজনীতির অবসান ঘটাতে হবে।”
পরের দিন ৩০ মে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নেমে আসে আরেকটি মহাবিপর্যয়। চট্রগ্রাম সার্কিট হাউজে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান এক সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হন।জরুরি অবস্থা জারি
জেনারেল জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর তৎকালীন উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তার অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসাবে শাসনভার গ্রহণ করে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেন। এমন অবস্থায় ৪ জুন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডকে পঁচাত্তরের পনেরই আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিজন এবং ৩ নভেম্বর কারারুদ্ধ চার নেতা হত্যার জঘন্য ও কলঙ্কময় অধ্যায়ে আরেকটি দুঃখজনক ঘটনার সংযোজন বলে উল্লেখ করা হয়। বিদেশী শক্তি ও তাদের দেশীয় এজেন্টদের দ্বারা হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে ক্ষমতাদখল বা দখলের প্রচেষ্টা জাতির জন্য বিষময় ফল ডেকে আনে, এ পরিণতির প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এরূপ জঘন্য অপরাধী যাতে বিচারের হাত থেকে রেহাই না পায়, সেজন্য সমগ্র জাতিকে সংকল্পবদ্ধ হতে হবে। (সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ৫ জুন)।
বৈঠকে এই মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, “বিরাজমান পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে সাংবিধানিক প্রক্রিয়া ও বর্তমান সীমিত গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থা নস্যাতের যে কোন চক্রান্তের ব্যাপারে সোচ্চার থাকবে আওয়ামী লীগ”। প্রস্তাবে বলা হয়, সশস্ত্র বাহিনীকে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যবহার করা উচিত নয়। প্রয়োজনবোধে সর্বশক্তি দিয়ে গনবিরোধী ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্রিসমুহের তৎপরতা ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহবান জানান শেখ হাসিনা। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তারের শাসনামলের শুরুতে ১২ জুন ’৮১ বত্রিশ নম্বরের বাড়িটি বুঝে পান শেখ হাসিনা।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:২৬ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই।