ইনসাইড থট

"মনোযোগের প্রতি মনোযোগী হোন"


Thumbnail

এরিক আর্থার ব্লেয়ার (১৯০৩-১৯৫০) কালউত্তীর্ণ  সাহিত্যিক ও রাজনৈতিক লেখক। ব্রিটিশভারতে জন্মগ্রহণকারী "এনিমেল ফার্ম" খ্যাত এই ইংরেজ লেখক জর্জ অরওয়েল ছদ্মনামেই সমধিক পরিচিত। তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস "1984" প্রকাশিত হয় ১৯৪৯ সালে। এই বিখ্যাত উপন্যাসটিতে যে সকল সংকটের কথা কল্পনা করা হয়েছিল এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি হচ্ছে তথ্যের স্বল্পতা। ভবিষ্যতের শাসকরা আরো বেশি করে তথ্য আটকে রাখবে, তথ্য পাওয়া যাবে না। কিন্তু বাস্তবে এমনটি ঘটেনি। তথ্যের স্বল্পতা ১৯৮৪ সালে প্রকট হয়নি। আর এখন তো সবচেয়ে সহজে যা পাওয়া যায়, সেটা হচ্ছে 'তথ্য'। অন্যান্য পণ্যের মতো তথ্যও উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণ করা যায়। পণ্য হচ্ছে, "anything that can be offered to a market for attention, acquisition, use or consumption that might satisfy want or need" (Kotler, 2022)। পণ্যের সংজ্ঞায় দখল, ব্যবহার এবং ভোগের আগেই 'মনোযোগ' শব্দটি গুরুত্ব পেয়েছে। William James তাঁর Principles of Psychology (1980) বইয়ে মনোযোগের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে লিখেছেন, "attention is the taking possession by the mind, in clear and vivid form, of one out of what may seem several simultaneously possible objects of trains of thought ... It implies withdrawal from something in order to deal effectively with others. 

" মনোযোগ বলতে নির্দিষ্ট একটা বিষয়কে ফোকাস করাকে বুঝায় না, একই সাথে এটা অসংখ্য প্রতিযোগী তথ্য এবং উদ্দীপককে অগ্রাহ্য করাকেও বুঝায়। যা এ মুহূর্তে প্রাসঙ্গিক নয় সেটাকে এড়িয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের প্রতি আকর্ষিত হওয়াই মনোযোগ ( Kendra Cherry, 2022)। কোন পণ্যকে ভোক্তা কিভাবে মূল্যায়ন করবে সেটা অনেকাংশেই তাঁর প্রত্যক্ষণের উপর নির্ভর করে। মনোযোগ হচ্ছে প্রত্যক্ষনের একটি পূর্বশর্ত। কোন নির্দিষ্ট উদ্দীপকের প্রতি ইন্দ্রিয় বা ইন্দ্রীয় সমূহকে নিবদ্ধ করার নামই হলো মনোযোগ। যে মানসিক ক্রিয়ার মাধ্যমে একাধিক বিষয় থেকে চেতনাকে সম্পূর্ণ সরিয়ে নিয়ে একটি বিশেষ বিষয়ে চেতনাকে কেন্দ্রীভূত করা হয় তাকে মনোযোগ বলে। ক্রেতার মনোযোগ আকর্ষণের খরচ গত দুই দশকের ৭ থেকে ৯ গুন বেড়ে গেছে। ব্র্যান্ডের প্রতি ক্রেতার মনোযোগ আকর্ষণ করা মার্কেটিংয়ের কাজ। মার্কেটিংয়ের চুম্বকীয় বার্তাকে এমনভাবে উপস্থাপন করতে হবে যাতে সেটা ক্রেতার মনোযোগ দখল করতে পারে। এই প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় হয়েও কোন লাভ হবে না, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কোন বিকল্প নেই (Rebecca Riserbalo,2021)। "মনোযোগ বারজাতকরণ" শব্দবন্ধ প্রথম ব্যবহার করেন Steve Jerry, পরবর্তীতে এটাকে জনপ্রিয় করে তোলেন Seth Godin. মনোযোগ বাজারজাতকরণের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে Rebecca Riserbalo বলেন, '"Attention marketing is the concept that marketing is all about capturing and engaging your audience's attention. This is usually done through non-invasive means, like social media. With attention marketing you'll focus on how to capture someone's limited attention"(Rebecca Riserbalo, "Attention Marketing", 2021)। Microsoft এর এক রিপোর্ট থেকে জানা গেছে গড়ে ব্যক্তির মনোযোগের স্থায়িত্বকাল ৪ সেকেন্ডে নেমে এসেছে। ২০০০ সালে একজন মানুষ একটানা গড়ে কোন বিষয়ে ১২ সেকেন্ড মনসংযোগ করতে পারতেন, ২০১৫ সালে এটা ছিল ৮ সেকেন্ড। এর মানে হচ্ছে বাজারজাতকরণকারীকে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ক্রেতার মনোযোগ আকর্ষণ করতে হবে, অন্যথায় সে স্করল (scorl) করে অন্যদিকে চলে যাবে। মনোযোগ হল কোন বিশেষ তথ্যের উপর কেন্দ্রীভূত মানসিক সংযোগ। তথ্য আমাদের  চেতনায় আসে। আমরা বিশেষ কোনো তথ্যের প্রতি মনোযোগ দেই এবং এরপর সিদ্ধান্ত নেই কোন পদক্ষেপ নিব কি, নিব না (Davenport & John, 2001)। মনোযোগ একটি সীমিত সম্পদ, যার অর্থনৈতিক মূল্য আছে (Crawford ,2015)। এক সাথে অনেকগুলো বিষয়ে মনোযোগ দেয়া প্রায় অসম্ভব। দানবীয় তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো (যেমন google, মেটা, Apple, আমাজন, মাইক্রোসফট) প্রায় বিনামূল্যে তথ্য সেবা দিচ্ছে। আর আমরা মনোযোগ দিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোকে লাভবান করছি। (একই প্রক্রিয়ায় দেশে বিদেশে অবস্থানকারী কিছু রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ইউটিউবারের (বাটপার) মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্ভট কন্টেন্ট দেখে দর্শকরা তাদের ভরণপোষণ করছে।

কেউ কেউ গত দুই দশকের অর্থনীতিকে "তথ্য অর্থনীতি" না বলে "মনোযোগের অর্থনীতি" হিসেবে অভিহিত করেছেন। মনোযোগের অর্থনীতি কথাটি বহু পুরাতন। আজ থেকে প্রায় সিকি শতাব্দী আগে, ১৯৯৭ সালে মাইকেল গোল্ডহেবার "Wired" সাময়িকীতে প্রকাশিত তাঁর "Attention Shoppers" নিবন্ধে প্রথম মনোযোগ অর্থনীতির বিষয়টির অবতারণা করেন। কোন অর্থনীতিতে অনেক মানুষ যখন তথ্য ব্যবস্থাপনা করে জীবিকা নির্বাহ করে সেটাকে তথ্য অর্থনীতি বলে। 

গোল্ডহেবার বলেন, তথ্য অর্থনীতি কথাটি সঠিক নয়। অর্থনীতি হল কোন সমাজ তার দুষ্প্রাপ্য সম্পদগুলো কিভাবে ব্যবহার করবে তার চর্চা। ("Economics is the science which studies human behaviour as a relationship between ends and scarce means which  have alternative uses"- Lionel Robbins)। আজকের দিনে তথ্য কোন দুষ্প্রাপ্য সম্পদ নয়। যেটা দুষ্প্রাপ্য সেটা হচ্ছে মনোযোগ। ইন্টারনেটের দুনিয়ায় অর্থনীতির মূল নির্ধারক মুদ্রা হল মনোযোগ, তথ্য নয়।

মানব ইতিহাসের সিংহভাগ জুড়ে তথ্য ছিল দুষ্প্রাপ্য। কয়েক দশক আগেও বেশিরভাগ মানুষ লেখাপড়া জানতো না। আধুনিক যুগে সবাই সবকিছু প্রায় বিনামূল্যে পড়ছে। মানুষের সময় এবং তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষমতা একটুও বাড়েনি। মনোযোগ একটি সীমিত মানসিক সম্পদ। একটি বিষয়ে মনোযোগ দিলে অন্যটির প্রতি মনোযোগ দেয়া সম্ভব নয়। প্রচুর তথ্য সম্পদ মনোযোগের দারিদ্র্য তৈরি করে। ১৯৭১ সালে অর্থনীতিতে নোবেলবিজয়ী মনোবিজ্ঞানী হারবার্ট সাইমন ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন, "একটি তথ্য সমৃদ্ধ বিশ্বে তথ্যের প্রাচুর্যের ফলে অন্য কিছুর ঘাটতি সৃষ্টি হবে, যা হলো তথ্য যা ভোগ করে। তথ্য কি ভোগ করে? এটা স্পষ্ট প্রতীয়মান তথ্য তার গ্রাহকের মনোযোগ ভোগ করে। মার্কেটিংয়ে তথ্য নিজেই একটি পণ্য, অপরদিকে এটি একটি মার্কেটিংয়ের কৌশলগত হাতিয়ার। মনোযোগ হচ্ছে বিনামূল্যে পাওয়া তথ্যের জন্য প্রদেয় ক্রেতার মূল্য (Herbert Simon, 1971)। তথ্য বিস্ফোরণ (information overload) বাজারজাতকরণকে সহজ করার পরিবর্তে জটিল করে তুলেছে। "Information overload is the difficulty in understanding an issue and effectively making decisions when one has too much information (TMI) about that issue,  and is generally associated with the excessive quantity of daily information". ১৯৭০ সালের প্রকাশিত বেস্ট সেলার বই "Future Shock" এর লেখক Alvin Toffler তথ্য বিস্ফোরণ বা information overload বিষয়টি নিয়ে সবাইকে মাথা ঘামাতে বলেন। মানুষের তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ক্ষমতার অতিরিক্ত তথ্য যখন তাঁর নিকট চলে আসে তখনই তথ্য বিস্ফোরণ ঘটে (infobesity), এর ফলে সিদ্ধান্তের মান কমে যায়। খুব বেশি তথ্য নিয়েই বরং ক্রেতা সমস্যায় পড়ে যায় (information anxiety), সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগে অথবা শেষ পর্যন্ত সঠিক সিদ্ধান্তটি নিতে পারেনা (Alvin Toffler,1970)।

বাজারজাতকরণকারীর সরবরাহকৃত তথ্য যাতে প্রতিযোগিতা করে অন্য কোম্পানির তথ্যের চেয়ে বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে সেজন্য তথ্যকে প্রাসঙ্গিক, আগ্রহজনক এবং ব্যক্তিবিশেষের আগ্রহ অনুযায়ী নির্বাচন ও উপস্থাপন করতে হবে। তথ্যের মাধ্যমে ক্রেতা আকর্ষণ করতে হলে তাঁকে একটা সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা প্রদান করতে হবে। বিক্রেতাকে অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ তথ্য প্রদানের মাধ্যমে ক্রেতার সাথে ঘনিষ্ঠতা (engagement) বাড়াতে হবে। মনোযোগ হচ্ছে প্রত্যক্ষনের পূর্বশর্ত। একই পরিস্থিতিকে বিভিন্ন লোক বিভিন্নভাবে প্রত্যক্ষণ করে। ভিন্ন প্রত্যক্ষণের কারণ হচ্ছে যদিও আমরা প্রত্যেকেই পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে তথ্য (উদ্দীপক) গ্রহণ করি, কিন্তু এ ইন্দ্রিয়ে সাড়া জাগানো তথ্যগুলোকে আমরা নিজেদের মতো গ্রহণ, সংগঠন এবং ব্যাখ্যা করি। প্রত্যক্ষন হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যার সাহায্যে ব্যক্তি জগতের অর্থবহ চিত্র (উদ্দীপক) থেকে তথ্য নির্বাচন, সংগঠন এবং ব্যাখ্যা করে। একই উদ্দীপক বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট বিভিন্ন প্রত্যক্ষণ সৃষ্টি করার কারণ হচ্ছে তিনটি প্রত্যক্ষণ প্রক্রিয়া (perceptual process): নির্বাচিত প্রভাবাধীন হওয়া( selective exposure), নির্বাচিত বিকৃতকরণ (selective distortion) এবং নির্বাচিত ধারণ (selective retention)। প্রত্যেক ব্যক্তি প্রতিদিন অসংখ্য উদ্দীপকের মুখোমুখি হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় একজন ব্যক্তি প্রতিদিন গড়ে কয়েক শত বিজ্ঞাপনের সম্মুখীন হয়। কোন ব্যক্তির পক্ষেই সবগুলো বিজ্ঞাপনের (উদ্দীপকের) প্রতি মনোযোগ দেয়া সম্ভব নয়। বেশিরভাগই পর্দার অন্তরালে চলে যায়। বাজারজাতকরণ যোগাযোগকারীর প্রকৃত চ্যালেঞ্জ হচ্ছে কোন্ উদ্দীপক মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারবে সেটা ঠিক করা। গবেষণা থেকে দেখা গেছে মানুষ তার বর্তমান প্রয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উদ্দীপকটির প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়। যে যেই সমস্যায় থাকে সে সেই সমস্যার সমাধানের প্রতি বেশি মনোযোগী হয়। ভুক্তভোগীর প্রত্যেকটি সমস্যার এক একটি সমাধানই হচ্ছে 'পণ্য' (product is a solution to customers problem)। তাঁরা প্রত্যাশিত উদ্দীপকের প্রতি বেশি মনোযোগী হয়। নির্বাচিত প্রভাবাধীন হওয়ার কথাটির তাৎপর্য হচ্ছে বাজারজাতকরণকারীকে ভোক্তা মনোযোগ আকর্ষণের জন্য বিশেষ করে চেষ্টা চালাতে হবে। তাঁদের অফার(offer) হয়তো এমন ব্যক্তিদের মাঝে হারিয়ে যেতে পারে যারা পণ্য গ্রহণের বাজারে নেই। অন্যদের অফারের সমুদ্রে নিজের অফারকে স্বাতন্ত্র্য (পৃথকীকরণকৃত) করতে না পারলে বাজারে অবস্থানকারী সম্ভাব্য ক্রেতাদেরদেরও মনোযোগ আকৃষ্ট হবে না। এমনকি যেসব উদ্দীপক ভোক্তার দৃষ্টি কাড়ে তাও আবার সব সময় সঠিকভাবে উপস্থাপিত হয় না। প্রত্যেক ব্যক্তি আগত তথ্যকে তাঁর পূর্বস্থিরকৃত মনের অবস্থা (মনের মাধুরী মিশিয়ে) দিয়ে মিলাতে চেষ্টা করে। নির্বাচিত বিকৃতকরণের অর্থ হচ্ছে তথ্যের ব্যক্তিগত অভিযোজন প্রবণতা। যোগাযোগকারী যাই বলুক না কেন বা দেখাক না কেন ভোক্তা তাঁর নিজের পূর্বস্থিতরকৃত মনের অবস্থা দ্বারা উপসংহারে আসবে। মানুষ উদ্দীপককে এমনভাবে ব্যাখ্যা করতে চায় যা সে ইতিমধ্যেই বিশ্বাস করে তা যেন সমর্থিত হয়। ধর্ম, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি, পোশাক, সংগীত, খাদ্য এসকল প্রায় সব ব্যাপারেই মানুষের একটা মনোভাব থাকে। মনোভাব দ্বারা ব্যক্তির কোন ধারণা সম্পর্কে তুলনামূলকভাবে দৃঢ় (consistent )মূল্যায়ন, অনুভূতি এবং প্রবণতা নির্ধারিত হয়। মনোভাব মানুষের মনে এমন একটি মানসিক কাঠামো তৈরি করে যার দ্বারা সে কোন কিছুকে পছন্দ করে ওই দিকে এগিয়ে যায় অথবা দূরে সরে আসে। নির্বাচিত বিকৃতকরণের তাৎপর্য হচ্ছে বারজাতকরণকারীকে ভোক্তার মনের পূর্বকথা এবং এগুলো কিভাবে বিজ্ঞাপন ও বিক্রয় তথ্যকে প্রভাবিত করবে তা অনুধাবন করা।

মানুষ যা শিখে তার অনেক কিছুই ভুলে যায়, যা তাদের বিশ্বাস এবং মনোভাবকে সমর্থন করে ওইসব তথ্য মনে রাখার প্রবণতা মানুষের মধ্যে বেশি থাকে। নির্বাচিত ধারণ( মনে রাখা) প্রবণতার কারণে ভোক্তা কোন পণ্যের ভালো গুণগুলোই বেশি মনে রাখবে,  প্রতিযোগী পণ্যের গুণাগুণ গুলো ভুলে যাবে। ক্রেতা তাঁর পছন্দের পণ্যের ভালো পয়েন্টগুলো মনে রাখে এবং পণ্য পছন্দের সময় ওই কথাগুলোই বারবার স্মরণ (rehearses) করে। তিনটি প্রত্যক্ষন উপাদান- নির্বাচিত প্রভাবাধীন হওয়া, বিকৃতকরন এবং ধারণের তাৎপর্য হচ্ছে বাজারজাতকরণকারীকে তার বার্তা সঠিকভাবে পৌঁছাতে হলে কঠোর অনুশীলন করতে হবে। এই উপাদানগুলো দ্বারা অভীষ্ট বাজারে বার্তা প্রেরণের পৌন:পুনিকতা, এবং নাটকীয়তার সামর্থনে ব্যাখ্যা দেয়া যায় । আরেকটি কৌতুহরী ব্যাপার হচ্ছে যদিও বেশিরভাগ বাজারজাতকরণকারী তাঁর আবেদন ভোক্তারা আদৌ প্রত্যক্ষণ করবে কিনা এ ব্যাপারে সন্দিহান থাকে, একই সময়ে একদল ভোক্তাও আবার শঙ্কিত থাকে এজন্য যে, তেমন কিছু না জেনেই বাজেজাতকরণ বার্তা দ্বারা সে ক্ষতিকরভাবে প্রভাবিত হবে কিনা।

মনোযোগ বরজাতকরণের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রথম কাজ হচ্ছে যাদের নিকট তথ্য পৌঁছানো হবে তাদের ব্যবহৃত সুনির্দিষ্ট তথ্য প্লাটফর্মটি নির্বাচন করা। তারপরের কাজ হচ্ছে অতি সুস্পষ্ট একটি বার্তা তৈরি করা। ক্রেতারা যে সকল বিষয়কে মূল্যবান( value) মনে করে কেবলমাত্র সেই বিষয়গুলোকেই অন্তর্ভুক্ত করা। এক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট ভ্যালু বিবৃতি তৈরি করতে হবে। বিবৃতি তৈরীর সময় যে ফরমেটটি এক্ষেত্রে সুপারিশ করা হয় সেটি হচ্ছে,  "To...our.. is ..that"  ফরম্যাট । এক্ষেত্র "To" হচ্ছে সুনির্দিষ্ট টার্গেট অডিয়েন্স । "our" হচ্ছে ব্র্যান্ডের নাম, "is" হচ্ছে জিনিসটি কি? আর "that" হচ্ছে এই জাতীয় অন্যান্য অফারের সাথে কোম্পানির অফারের পার্থক্য(POD)। বার্তা প্রেরণের জন্য একাধিক মাধ্যম ব্যবহার করলে এগুলোর মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে । বিভিন্ন 

মিডিয়ায় প্রচারিত বার্তায় একটি গল্প থাকতে হবে যার মধ্যে  বাজারজাতকরণের আবেগীয় আবেদনের উপাদান থাকতে হবে। কোম্পানির সাথে প্রতিযোগিতা করছে না এমন অন্য ব্র্যান্ডকেও ক্রেতার মনোযোগ মনোযোগ আকর্ষণের কাজে সহযোগী হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে(co-branding)। যেহেতু দেশের প্রায় ৭০% লোক ইন্টারেক্টিভ অনলাইনে সংযুক্ত অতএব মানুষের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য একটি আকর্ষণীয় ওয়েবসাইট থাকতেই হবে। মনোহারী যোগাযোগ এবং অন্যান্য উপায়ে ক্রেতার মনে অবস্থান( position) তৈরি করার বিষয়টি স্বীকার করেও বলা যায়, ক্রেতার মনোযোগ আকর্ষণের ক্ষেত্রে স্থান(place) এবং প্যাকেজিং এর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ । ওয়ালমার্টের একটি সুপারসেন্টারে প্রায় ১ লক্ষ ৪২ হাজার আইটেম থাকে। ক্রেতারা পণ্য ক্রয়ের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে প্রতি চারটির মধ্যে তিনটি সিদ্ধান্ত দোকানে গিয়ে গ্রহণ করে,  এবং এসময়ে তাঁরা প্রতি মিনিটে তিনশোটি আইটেম অতিক্রম করে। অসংখ্য প্রতিযোগী পণ্যের মধ্যে 

দোকানী আপনার পণ্যটি কোন্ রেকে (shelf) এবং রেকের কোন্ অবস্থানে (রেকের নিচের দিকে, চোখের সমান উচ্চতায়, মাথার উপরে) রেখেছে এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমন প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে বিক্রেতার জন্য ক্রেতার মনোযোগের আকর্ষণের সর্বশেষ হাতিয়ার হতে পারে পন্যের প্যাকেট। আকর্ষণীয় প্যাকেট মনোযোগ ছাড়াও পণ্যের সাথে ক্রেতার এংগেজমেন্ট বা ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে দেয়,  যা অন্য কোন মাধ্যমে সম্ভব নয়।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

কেন টেকসই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা প্রয়োজন?

প্রকাশ: ০৩:০০ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে 'তলাবিহীন ঝুড়ি' হিসেবে আখ্যায়িত করেন। মার্কিন অর্থনীতিবিদ জে আর পার্কিনসন এবং নরওয়ের অর্থনীতিবিদ জাস্ট ফাল্যান্ড একই সময়ে লন্ডনে প্রকাশিত 'বাংলাদেশ দ্য টেস্ট কেস ফর ডেভেলপমেন্ট' বইয়ে বলেছেন, বাংলাদেশ উন্নয়নের প্রমাণস্থল। বাংলাদেশ যদি তার উন্নয়নের চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রম করতে পারে, তাহলে এটা উপলব্ধি করতে হবে যে প্রতিটি জাতিই এগিয়ে যেতে পারে। ২০৩৫ সালের মধ্যে, একসময়ের তলাবিহীন ঝুড়ি হিসাবে পরিচিত দেশটি, বিশ্বের ২৫ তম বৃহত্তম অর্থনীতি হবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে।

অনুন্নত থেকে জাতি এখন উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। বাংলাদেশ আজ একটি নতুন ভূরাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের সংকীর্ণ ও বিপজ্জনক পথকে বর্তমান শক্তির অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য, কেবল মাত্র একজন ব্যক্তির এটি করার সাহস ছিল। এবং তার লক্ষ্য গুলি উপলব্ধি করে, তিনি জাতিকে প্রবৃদ্ধির পথে চালিত করেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বংশধর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই অখ্যাত নায়ক।

২০০৯ সালের ০৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে টানা তিন মেয়াদে তাদের দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনা করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে একটি উন্নয়নশীল বাংলাদেশের একটি নতুন বিবরণ লেখা হয়েছিল। বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য প্রতিকূল বেশ কয়েকটি গল্প সত্ত্বেও বাংলাদেশ অগ্রগতির জন্য আশাবাদ জাগিয়ে তুলেছে। করোনা প্রাদুর্ভাবের ধাক্কা কাটিয়ে বাঘা বাঘার অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান বাঘা অঞ্চলের দেশগুলোর অর্থনীতিকে ছাড়িয়ে গেছে। এবং পর্যবেক্ষকরা বিভিন্ন ভাবে পরিবর্তিত বাংলাদেশকে এভাবেই রেটিং দিচ্ছেন। তাদের দাবি, শেখ হাসিনার নির্ভীক নেতৃত্ব ও কৌশলগত অবস্থানে বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধির চূড়ায় পৌঁছেছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রাক্তন প্রধান অর্থনীতিবিদ যখন আইএমএফ তার পূর্বাভাস সংশোধন করে এবং ভারত পিছিয়ে পড়ে বিবৃতি দেয়। কৌশিক বসু বাংলাদেশের উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে যে কোনো দেশের অগ্রগতি একটি স্বাগত সংবাদ। মনে রাখতে হবে, মাত্র পাঁচ বছর আগেও বাংলাদেশের চেয়ে ভারতের জিডিপি সুবিধা ছিল ২৫ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের সাবেক উপদেষ্টা আবিদ হাসানও প্রায় একই গান গাইছেন। পাকিস্তানি সংবাদপত্র দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনালে প্রকাশিত 'এইড ফ্রম বাংলাদেশ' শিরোনামে একটি প্রবন্ধে তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক দক্ষতার প্রশংসা করে বলেন, ২০ বছর আগেও এটা কল্পনাও করা যায় না যে, ২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি পাকিস্তানের দ্বিগুণ হবে।

বর্তমান গতি অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি অর্থনৈতিক টাইটান হিসেবে আবির্ভূত হবে। তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানের বিদ্যমান অবস্থার উন্নতি না হলে বাংলাদেশকে ২০৩০ সালের মধ্যে সাহায্যের জন্য ভিক্ষা করতে হতে পারে। শেখ হাসিনা এমন একজন নেতা যিনি শুধু অর্থনৈতিক মুক্তি নয়, প্রতিটি ক্ষেত্রকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। প্রতিটি জায়গা স্বাধীনভাবে বেড়ে উঠেছে। তিনি মানুষের খাদ্য, বস্ত্র ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে তাদের জীবন রক্ষা করেছিলেন। তিনি স্বাধীনতার স্বাদ দিয়েছেন। তিনি দেশের নাগরিকদের বিশ্বকে কীভাবে দেখেন এবং তার মধ্যে একটি অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন ঘটিয়েছেন
রূপকল্প-২০২১ এর কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা করা হয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে পেরে অনেক সমালোচক আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। সাহসী নেতা অবশ্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। তিনি যা বলেছিলেন তা সত্য ছিলেন। একসাথে অনেক মেগা প্রকল্প মোকাবেলা করে ব্যাপক ও বহুমাত্রিক উন্নয়নের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন শুরু হয়। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রশাসন ইতোমধ্যে দেশব্যাপী ব্রডব্যান্ড অ্যাক্সেস বাস্তবায়ন করেছে এবং বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ কক্ষপথে স্থাপন করেছে। ১৬ কোটি মানুষ এখন ১৮ কোটি মোবাইল সিম ব্যবহার করছেন। তারা এখন প্রায়শই যোগাযোগ কেন্দ্র পরিষেবাদির জন্য ৯৯৯ নম্বর, সাধারণ তথ্যের জন্য ৩৩৩, কৃষক বন্ধু পরিষেবা, টেলিমেডিসিন পরিষেবা এবং সমন্বিত শিক্ষার জন্য ৩৩৩১ নম্বর ব্যবহার করে। তিনি পুরো জাতিকে কভার করার জন্য একটি ডিজিটাল শীট ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

এখন স্মার্ট বাংলাদেশ তার প্রবৃদ্ধির পথে নতুন ফোকাস। সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে 'স্মার্ট বাংলাদেশ' হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছে, যা দেশের ডিজিটালাইজেশনের ১৪ বছর পূর্তিতে বাস্তবায়ন করা হবে। বাংলাদেশ কিভাবে ২১ থেকে ৪১-এ বিকশিত হবে তার অবকাঠামো অনুযায়ী সকল স্তরের ব্যক্তিদের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের প্রত্যেক নাগরিক প্রযুক্তিপ্রেমী হবে। স্মার্ট অর্থনীতি এবং স্মার্ট নাগরিক। অন্য কথায়, আমরা অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করব। আমরা ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি সক্রিয় সরকারী পদক্ষেপ নিয়েছি। আমি ওটা অনুসরণ করবো। সামগ্রিকভাবে আমরা একটি স্মার্ট সমাজ গড়ে তুলব।

২০৪১ সালের মধ্যে 'স্মার্ট বাংলাদেশ' গড়ার সরকারের নতুন লক্ষ্যকে এগিয়ে নিতে এটুআই সারা বছর বিভিন্ন সরকারি সেবা সহজতর করার জন্য বেশ কয়েকটি ডিজিটাল প্রকল্প তৈরি ও বাস্তবায়ন করেছে। বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে রূপান্তরের লক্ষ্যে 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' সফলভাবে বাস্তবায়নের ফলে সরকার 'রূপকল্প ২০৪১' অনুযায়ী জ্ঞান ও উদ্ভাবনভিত্তিক 'স্মার্ট বাংলাদেশ' গড়ে তোলার নতুন লক্ষ্য গ্রহণ করেছে। ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ হবে অর্থনৈতিক, পরিবেশবান্ধব, বুদ্ধিমান, জ্ঞানী ও সৃজনশীল। স্মার্ট সিটি এবং স্মার্ট ভিলেজ গ্রহণের ফলে স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা, স্মার্ট পরিবহন, স্মার্ট ইউটিলিটি, নগর প্রশাসন, জননিরাপত্তা, কৃষি, ইন্টারনেট সংযোগ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত হবে।

করোনা থেকে শুরু করে ইউক্রেনের সংঘাত পর্যন্ত বেশ কিছু বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রভাবিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, প্রয়োজনীয় জিনিসগুলির জন্য ক্রমবর্ধমান আমদানি ব্যয় জাতীয় মুদ্রাস্ফীতি এবং রফতানির জন্য বাজার অস্থিতিশীলতায় অবদান রেখেছে। বাংলাদেশ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যা মোকাবেলা করেছে। ফলে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতি কম।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, মেট্রোরেল, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, কর্ণফুলী টানেল, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর, পায়রা বন্দর এবং মোংলা বন্দরের আধুনিকায়ন শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্বকে সম্মানিত করে এমন কয়েকটি চমৎকার প্রকল্প মাত্র। প্রবৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশকে বর্তমানে 'এশিয়ান টাইগার' বলা হয়। ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যকার সংঘাত, বৈশ্বিক মুদ্রা সংকট এবং মুদ্রাস্ফীতির প্রভাবে বাংলাদেশে সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীও সমস্যার সমাধান করতে পেরেছেন। দেশের বন্দরগুলি কয়লা বোঝাই জাহাজ পেয়েছে। সুবিধাগুলি বিদ্যুৎ উত্পাদন শুরু করেছে।

শেখ হাসিনার অধীনে বাংলাদেশের শাসনকাল ছিল চমৎকার। দেশের জন্য একটি সুবিধা। সোনার বাংলাদেশ অবিশ্বাস্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। একসময়ের "তলাবিহীন ঝুড়ি" নামে অভিহিত এই ঝুড়ি এখন বিশ্ব মঞ্চে উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য একটি উদাহরণ। 'ক্যারিশম্যাটিক নেত্রী' শেখ হাসিনাই একমাত্র ব্যক্তি যিনি এই বিস্ময়কর অগ্রগতির কৃতিত্ব পেয়েছেন।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

আমরা আর কতদিন চুপ থাকব? এখন আক্রমণাত্মক হওয়ার সময় এসেছে

প্রকাশ: ১১:০০ এএম, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

গত মাসে একজন উপদেষ্টা হিসাবে, আমি জেনেভাতে একটি ডব্লিউএইচও উপদেষ্টা গ্রুপ মিটিংয়ে অংশ করি, যেখানে ছয়টি মহাদেশের বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিল। একজন মহিলা ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞ, নারী অধিকারের প্রচারক এবং প্রবক্তা, সেও সেই বৈঠকে যোগ দিয়েছিল। আমি দীর্ঘদিন ধরে তাকে চিনি, অনেক সময় একসাথে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য বিষয় সম্পর্কে কাজ করেছি। আমি তাকে এবং তার প্রেমিককে (এখন স্বামী) ১৯৯০ এর দশকের মাঝামাঝি একটি আন্তর্জাতিক এনজিও কর্মী হিসেবে ঢাকা, বাংলাদেশে কাজ করার সময় থেকে চিনি। তাই বাংলাদেশ সম্পর্কে তার কিছুটা সখ্যতা রয়েছে। মধ্যাহ্নভোজের বিরতির সময় আমি এবং সে ডব্লিউএইচও রেস্টুরেন্টে গেলাম। দুপুরের খাবারের সময় আমাদের কথোপকথন শুরু হল। সে আমার দিকে তাকিয়ে বললো: “বাংলাদেশে কী হচ্ছে মনির? প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান সরকার চরম স্বৈরাচারী হয়ে উঠছে। বাংলাদেশে বাকস্বাধীনতা নেই, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে এবং বাংলাদেশে এখন কোন গণতন্ত্র নেই”। আমি জিজ্ঞেস করলাম সে এই তথ্য গুলো কোথায় পেয়েছে? সে বললো যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশের কয়েকজনের সাথে কথা বলে, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদন এবং কিছু পশ্চিমা মিডিয়া থেকে তথ্য গুলো পেয়েছে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম সে শেষ কবে বাংলাদেশে গিয়েছিল? বললো ১৯৯০ এর দশকে শেষের দিকে বাংলাদেশ ছাড়ার পর আর সে বাংলাদেশে যাইনি। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম বাংলাদেশে থাকা কালিন পুলিশ দ্বারা হয়রানির যে ঘটনা সে আমাকে বলেছিল তা তার মনে আছে কিনা? ঘটনাটা হল, সে এবং তার তৎকালীন প্রেমিক (দুই শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশ নাগরিক) তারা যখন নিরবে সন্ধ্যায় একটি পার্কে অন্তরঙ্গভাবে একসাথে বসেছিল এবং জিজ্ঞাসার পর, পুলিশকে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি যে তারা বিবাহিত দম্পতি, পুলিশ তাদের লাঞ্ছিত করেছিল? আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম এখন বাংলাদেশে গিয়ে বাংলাদেশের নারীমুক্তি আর অধিকারের বিস্তার দেখার জন্য। বাংলাদেশের নারীরা কিভাবে সমান অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশের উন্নয়নের সব ক্ষেত্রে অবদান রাখছে? সমস্ত সংগ্রাম এবং কুসংস্কার অতিক্রম করে, কিভাবে বাংলাদেশের নারী ফুটবল, ক্রিকেট খেলোয়াড় এবং শান্তিরক্ষা বাহিনী গর্বিতভাবে বিশ্বব্যাপী তাদের পদচিহ্ন তৈরি করছে। বর্তমানের বৃহত্তর, সেনানিবাসে একজন সামরিক স্বৈরশাসক দ্বারা তৈরি বিরোধী দল, চরম ডানপন্থী জামাত নেতাদের ক্ষমতায় আনে, যারা উন্নয়নের সমান অংশীদার হিসেবে নারীর স্বাধীনতা ও তাদের অধিকারে বিশ্বাসী নয়। শুরু হয়, ধর্ম নিয়ে রাজনীতি আর নিপিরন, তাকি কি সে জানে? সে কি আর্টিজেন রেস্তোরাঁর নৈশভোজে জড়ো হওয়া নিরীহ বিদেশী বিশেষজ্ঞদের হত্যা সম্পর্কে পড়েছে? আরো অনেকের মত, যারা চরমপন্থী ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর মতাদর্শে বিশ্বাস করে না, সে কি জানে আমার আপন খালাতো ভাই এবং তার বন্ধুকে আমার খালার সামনে সেই গোষ্ঠীর লোক জবাই করেছিল? তাদের দোষ তারা বিভিন্ন যৌন অভিমুখে বিশ্বাসী এবং তারা তাদের অধিকারের জন্য লড়াই করছিল! সে কি মানবাধিকার গোষ্ঠীকে এই জঘন্য কর্মকাণ্ডকারীদের নিন্দা করতে বা কারো পছন্দ এবং মেলামেশার স্বাধীনতা প্রচার করার জন্য তাদের জীবন হারানো, তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কথা বলতে কখন শুনেছে?

সে কি জানে আজ কৃষকরা তাদের ফসলের সঠিক দাম পাচ্ছে এবং তাদের সন্তানদের শিক্ষিত করতে, এবং খেয়ে পরে শান্তিতে বসবাস করতে সক্ষম হচ্ছে? সে কি জানে সারা দেশে আজ প্রায় সব বাড়িতেই বিদ্যুৎ আছে? সে কি জানে বাংলাদেশে আজ মা, নবজাতক ও শিশুমৃত্যু ভারতের তুলনায় অনেক কম? সে কি জানে যে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু এখন ৭২ বছর যা ভারত ও পাকিস্তানের চেয়েও বেশি? সে কি জানে যে বেশীর ভাগ মহিলারা এখন সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে তারা কখন এবং কতবার গর্ভবতী হতে চায় এবং পরিবার পরিকল্পনার জন্য সহজে গর্ভনিরোধক পেতে পারে? আজ মোট উর্বরতা ( women total fertility) ৬ থেকে ২ এর নিচে নেমে এসেছে? সে কি জানে যে আজ বাংলাদেশের প্রতিটি কোণায় মোবাইল, ইন্টারনেট এবং ওয়াইফাই পরিষেবা পাওয়া যায় এবং মহিলারা এই সুবিধাটি সমান ভাবে উপভোগ করছে ? সে কি জানে আজ পুরুষ:মহিলা অনুপাত প্রায় ৫০:৫০, সেখানে পরিবারের কোন মেয়ে বা ছেলে অগ্রাধিকারের পছন্দ নেই। ছেলে মেয়েরা মাধ্যমিক পর্যন্ত বিনামূল্যে বইসহ শিক্ষা পাচ্ছে? জনসংখ্যার সাক্ষরতার হার এখন ৭৫%। গ্রাম ও শহর উভয় ক্ষেত্রেই দারিদ্র্যতা কমেছে। ২০২২ সাল নাগাদ, গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারী ২০.২% বাংলাদেশি দারিদ্র্যের মধ্যে ছিল যখন শহর এলাকায় এই পরিসংখ্যান ১৪.৭% ছিল (যা ১৯৯০সালে ছিল প্রায় ৫৭%); ২০২২ সালে চরম দারিদ্র্যের পরিসংখ্যান নেমে আসে গ্রামীণ এলাকায় ৬.৫% এবং শহরাঞ্চলে ৩.৮%। সে কি জানে বাংলাদেশে আজ ক্ষুধায় কেউ মরে যায় না? সে কি জানে শত শত ভূমিহীন পরিবার বিনামূল্যে ঘর পাচ্ছে? সে যখন বাংলাদেশে ছিল তখন বিভিন্ন জেলায় যাওয়ার জন্য তাকে কত সময় ব্যায় করতে হত, আর এখন মেয়ে মানুষ হয়েও সে একা একাই বাংলাদেশের প্রতিটি কোণায় খুব সহজে এবং খুব অল্প সময়ে যেতে পারবে? অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ এখন আর তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ নয়, বাংলাদেশের জিডিপি মাথাপিছু ২৬৮৮ মার্কিন ডলার বা সমগ্র দেশের জন্য ৪৬০.২০বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। তাই বাংলাদেশ বর্তমানে প্রধান অর্থনীতির ৩৪তম স্থানে রয়েছে, ২০৪০ সালে হবে ২০তম। আমি তাকে বললাম, তুমি বলতে পারো, প্রধানমন্ত্রী স্বৈরাচারী, তুমি বলতে পারো বাকস্বাধীনতা বা মানবাধিকারের অভাব আছে কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও দৃঢ় নেতৃত্ব এবং তার নিষ্ঠা ও অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে বাংলাদেশ বদলে গেছে। আপামর বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ তাকে নিয়ে গর্বিত। ১৯৯০ এর দশকে তুমি যে বাংলাদেশকে দেখছো, বা চিনতে, বাংলাদেশ এখন সেই দেশ নেই। বাংলাদেশের মানুষ আজ গর্ব নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে এবং অন্যদের দ্বারা সম্মানিত হয়।

আমি জানতে চাইলাম সে কি আমাকে প্রমান সহ দেখাতে পারবে যে আমাদের দেশে কত শতাংশ মানুষ বাকস্বাধীনতা, মানবাধিকার এবং গণতন্ত্র খর্ব হবার কথা বলছে (সম্প্রতি একটি আমেরিকান সংস্থার বাংলাদেশে ১০০০ জন উত্তরদাতার মধ্যে করা জরিপে দেখা গেছে যে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ গণতন্ত্র দেখতে চায়। আমি জানতে চাই যে ১০০০ জন যারা সাড়া দিয়েছেন তারা কোন গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে এবং সমীক্ষার আত্মবিশ্বাসের ব্যবধান (confidence of interval) কী)। গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা এবং মানবাধিকারের অস্ত্র যদি ভাগ্যবান কয়েকজনকে আরো উন্নীত করার জন্য ব্যবহার করা হয়, তাহলে ৯০% নীরব মানুষকে, যাদের কণ্ঠস্বর শোনা যায় না বা তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করার কোন সুযোগ নেই, তাদের কে পিছনে ফেলে, বাংলাদেশের জন্য কী লাভ আনবে? হ্যাঁ, স্বীকার করি বাংলাদেশ এখনও নিখুঁত নয়, বাকস্বাধীনতা, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রে ফাঁক রয়েছে কিন্তু বাংলাদেশের জন্য তার বিকল্প কী আছে? সেনা অভ্যুত্থান ও সেনানিবাসে সৃষ্ট দলগুলোকে ফিরিয়ে আনা? অথবা অনির্বাচিত তথাকথিত ধনী বুদ্ধিজীবীদের দ্বারা শাসিত হওয়া? আমাদের কি ধর্মনিরপেক্ষ নীতি পরিত্যাগ করা উচিত এবং সেই চরম পন্থির ধর্মান্ধ দল গুলোকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনা উচিত, যারা নারীমুক্তি, অঞ্চলের স্বাধীনতা, চলাফেরার স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না? যাদেরকে তারা পছন্দ করে না তাদের হত্যা করে? ভিন্ন ধর্মের লোককে হত্যা করে , যারা এখনো আমাদের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না? যারা বাংলাদেশকে তালেবান রাষ্ট্রে রূপান্তর করতে চায়? প্রশ্ন করেছিলাম পশ্চিমা মতাদর্শীরা আমাদের সেই বিকল্পের দিকে ঠেলে দিতে চায় কিনা?

বাকস্বাধীনতা, মানবাধিকার এবং গণতন্ত্র বলতে কী বোঝায় যখন নারীদের সমান ক্ষমতা নেই বা বলা যায়, যখন নীরব সংখ্যাগরিষ্ঠের নিজস্ব ঘর নেই, খাবার থালায় খাবার নেই, কৃষকরা তাদের ন্যায্য মূল্য পাচ্য় না, শিক্ষা নেই বা চাকরি ও অর্থনীতিতে প্রবেশাধিকার নেই, যারা তাদের বিশ্বাস ও ধর্মকে শান্তিপূর্ণভাবে অনুসরণ করে সমানভাবে সমৃদ্ধি করে সবার সাথে একই কাতারে চলতে চায় কিন্তু তাদের অধিকার খর্ব করা হয়? একটি দেশ কি সেই অল্প সংখ্যক উচ্চ শিক্ষিত এবং ধনীদের জন্য, নাকি নীরব সংখ্যাগরিষ্ঠদের জন্য হওয়া উচিত যারা পিছিয়ে থাকতে চায় না? দুটি বড় ক্যান্টনমেন্টের দল দীর্ঘকাল বাংলাদেশ শাসন করেছে, তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরাও দুই বছরের বেশি সময় ধরে দেশ শাসন করেছে, তাদের বাংলাদেশের মানব উন্নয়নের অর্জন কী? সে বা তার মতো পশ্চিমা সুবিধাপ্রাপ্ত বুদ্ধিজীবীরা বাংলাদেশের জন্য কী বিকল্প প্রস্তাব করছে? আমার ব্রিটিশ সহকর্মী আমার প্রশ্নের উত্তর দেননি বা দিতে পারেননি এবং আমরা আমাদের খাবার শেষে বৈঠকে ফিরে যাওয়া পর্যন্ত নীরব ছিলাম। এখনও আমরা দুই বন্ধু। বাংলাদেশ সম্পর্কে এমন ধারণা থাকার জন্য আমি আমার বৃটিশ সহকর্মীকে দোষ দেই না, সে যে তথ্য পাচ্ছে তার মাধ্যমে সে তার মতামত তৈরি করছে। প্রশ্ন হল এই ধরনের তথ্য কে বা কারা দারুন সফল ভাবে ছড়াচ্ছে, আর আমরা যারা বাংলাদেশ এবং এর উন্নয়নের প্রতি বিশ্বস্ত, তাঁরাইবা কি করছি বা প্রচেষ্টা চালাচ্ছি সেই মিথ্যা সম্প্রসারণ বন্ধ বা প্রতিহত করতে?

পশ্চিমের সব দেশেই আমাদের দূতাবাস আছে, সেসব দেশে প্রেস অ্যাটাশে আছে? প্রশ্ন করা দরকার ওই লোকেরা তাহলে কি করছেন? জেনেভা এবং অন্যান্য দেশে কাজ করার সময় আমি অনেক বাংলাদেশের কূটনীতিক এবং রাষ্ট্রদূতদের সাথে দেখা করার এবং কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। সেখানে আমি অনেক প্রতিভাবান ও নিবেদিতপ্রাণ কূটনীতিক এবং রাষ্ট্রদূতদের দেখেছি। কিন্তু তাদের প্রয়োজন সময়মত সমন্বিত সহায়তা ও তথ্য। গতকাল রাতে ৭১ টেলিভিশনের ভূরাজনীতি ও বাংলাদেশ নিয়ে একটি টকশো শুনছিলাম। সেখানে দুজন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব, একজন সাবেক পুলিশ প্রধান ও রাষ্ট্রদূত, দুইজন অর্থনীতিবিদ, একজন সমাজ বিজ্ঞানী এবং একজন সাবেক প্রেস অ্যাটাশে ছিলেন। প্রাক্তন সাংবাদীক অ্যাটাশে ভারতে ছিলেন, যেখানে বেশিরভাগ আমেরিকান এবং পশ্চিমা মিডিয়ার আঞ্চলিক দপ্তর আর কর্মকর্তারা অবস্থিত। তিনি বলছিলেন অনেক আমেরিকান ও পশ্চিমা মিডিয়া আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার নিতে চেয়েছিল কিন্তু বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তিনি তেমন সমর্থন পাননি। যদিও প্রধানমন্ত্রীর সাথে তার খুব ভাল যোগাযোগ এবং বোঝাপড়া ছিল কিন্তু তুবুও সরকারি কর্মকর্তারা অনিচ্ছুক ছিলেন। তাই যদি হয়, তাহলে আমরা কীভাবে বিশ্ব সম্প্রদায়কে আমাদের কথা জানাব? আমি শুনছি ক্ষমতাসীন দলের নেতা বা মন্ত্রীরা বার বার অভিযোগ করেন বিদেশে বাংলাদেশের বিরোধীরা বাংলাদেশীদের বিরুদ্ধে লবিস্ট বিনিয়োগ করে যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিমা দেশ এমনকি ইইউ পার্লামেন্টে মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রভাব বিস্তার করছে। বিরোধীরা যদি তা করতে পারে তাহলে ক্ষমতাসীন দল কেন তা করতে পারছে না? বর্তমান সরকার এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারণে বাংলাদেশী অনেক বিজনেস টাইকুন প্রচুর অর্থ উপার্জন করেছেন, তারা কি করছেন? ভবিষ্যতে উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত রাখতে তারা কেন সত্য প্রচারে বিনিয়োগ করছেন না? আমাদের অনেক প্রবাসী রয়েছে, যারা প্রধানমন্ত্রীর সাথে সেলফি তুলতে এবং সেই ছবিগুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতে আগ্রহী, তারা সেলফি তোলা ছাড়া আর কী করছেন? আমাদের শাসক দলের প্রবাসীরা বা এমনকি যারা আমাদের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে তারা ভবিষ্যতের আরো সুযোগ খোঁজা বা পাওয়া ছাড়া আর কী করছেন? আমি পড়ে খুব খুশি হয়েছি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি রাজ্যে বাংলাদেশী আমেরিকানরা একটি বৈঠকের আয়োজন করেছিল যেখানে একজন প্রজাতন্ত্রী কংগ্রেস সদস্য তার হতাশার কথা বলেছিল যে মার্কিন সরকার আমাদের জাতির পিতার আত্মস্বীকৃত খুনিকে নির্বাসন দেয়নি বলে। লন্ডন বা প্যারিস বা ব্রাসেলসে কেন আমরা সেই কাজগুলো দেখতে পাচ্ছি না? আমি জানি যে কয়েকটি পশ্চিমা দেশ বাংলাদেশের অগ্রগতি এবং ভবিষ্যতকে ক্ষুণ্ন করার জন্য একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং সেই কর্মকাণ্ডে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করছে, তবুও আমরা চুপ করে বসে থাকতে পারি না।

আমি মনে করি, সময় এসেছে আক্রমণাত্মক হওয়ার যা টকশোতে সাবেক পুলিশ প্রধান ও রাষ্ট্রদূত বার বার বলছিলেন। চুপ করে বসে থাকার সময় এখন না, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাই সব মোকাবেলা করবেন ভেবে আমরা নিষ্ক্রিয় থাকতে পারি না। আমাদের সর্বশক্তি দিয়ে সেই বাংলাদেশ বিরোধীদের মোকাবেলা করতে হবে এবং তাদের প্রতিহত করতে হবে। এটা আমাদের দেশ, ৯০% নীরব সংখ্যাগরিষ্ঠদের নিয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে বাংলাদেশের জন্য কি ভালো? গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা এবং মানবাধিকারের অজুহাতে, সেই ১০% ধনী এবং সুবিধাভোগীদের জন্য লড়াই না করে, নীরব সংখ্যাগরিষ্ঠের জন্য লড়াই করতে হবে যারা শান্তি, সম্মান এবং সমৃদ্ধিতে নিয়ে বাঁচতে চায়। আমার বৃটিশ সহকর্মীকে দোষারোপ না করে বরং আমাদের প্রচারণা ঘাটতির দিকে নজর দেওয়া উচিত এবং সেই ঘাটতিগুলো মেটাতে পদক্ষেপ নেওয়া আজই দরকার। আসুন সিঙ্গাপুরের পূর্ববর্তী প্রধানমন্ত্রীর মতো আগ্রাসী হয়ে উঠি এবং স্বার্থপর হয়ে নিজেদের ভালো, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য লড়াই করি। সিঙ্গাপুরের মত, যখন আমরা উন্নতি করব এবং সমৃদ্ধির সিঁড়ি বেয়ে উঠব তখন আমাদের সবাই সম্মান করবে, আমাদের সাথে সমান আচরণ করবে, আমাদের অধিকার সমুন্নত থাকবে। আমি খুব আত্মবিশ্বাসী বাঙ্গালী জাতি পরাধিনতা সহ্য করবে না।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

রাষ্ট্রপতির অনুমতি ব্যতীত ড. ইউনূসের নোবেল প্রাইজ সংবিধানের লঙ্ঘন!

প্রকাশ: ১০:৪০ এএম, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩


Thumbnail রাষ্ট্রপতির অনুমতি ব্যতীত ড. ইউনূসের নোবেল প্রাইজ সংবিধানের লঙ্ঘন!

বিদেশি খেতাব প্রভৃতি গ্রহণ, নিষিদ্ধকরণ সম্পর্কিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৩০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রপতির পূর্বানুমোদন ব্যতীত কোনো নাগরিক কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নিকট হইতে কোনো উপাধি, সম্মান, পুরস্কার বা ভূষণ গ্রহণ করিবেন না।’

সংবিধানে এ শব্দাবলীর স্পষ্টত, নির্দেশনা হইতেছে, বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতির অনুমতি লইয়াই যে কোনো নাগরিককে বিদেশি রাষ্ট্রের উপাধি অথবা পুরস্কার গ্রহণ করিতে হইবে। বাংলাদেশের এ যাবৎকালের ইতিহাসে এ বিষয়ে কী সন্নিবেশিত হইয়াছে, কিংবা কী সংযোজন ঘটিয়াছে, তাহা আমার নখদর্পণে নেই। অবশ্য, আমার ক্ষুদ্রজ্ঞান ভাণ্ডারে সঞ্চিত তথ্য-উপাত্ত বলিতেছে, বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব বলিয়া খ্যাতিমান নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ও তার গ্রামীণ ব্যাংককে ২০০৬ সালের ১ অক্টোবর নরওয়ের নোবেল শান্তি কমিটি যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কারে মনোনিত করিলেও তাহা বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজউদ্দিন আহমেদকে অবগত করা হয়নি। অন্য লোক-সাধারণের মতনই মহামান্য, গণমাধ্যম হইতেই নোবেলজয়ের খবরখানা অবগত হইয়াছেন। পাঠকসমাজের মনে প্রশ্নের উদ্রেক করিতে পারে যে, রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দীন প্রয়াত হইয়াছেন, সুতরাং আমার উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়বস্থ প্রমাণ অযোগ্য। এই ছলাকলায় পাঠকসমাজকে করজোড় প্রার্থনা করিব, আপনারা আপনাদের দৃষ্টিভঙ্গী বঙ্গভবনের দিকেই ফিরাইতে পারেন। কেননা, রাষ্ট্রপতির সহিত সাক্ষাৎ প্রার্থী দেশি-বিদেশি সকল ব্যক্তিবিশেষের উপস্থিতিই বঙ্গভবনের নথিপত্রে অন্তর্ভুক্ত হইয়া যায়, এবং ইহা বঙ্গভবনের চিরাচরিত একটি প্রবেশমান রেওয়াজ। ১৩ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় ১৯ কোটি ৭২ লাখ) লাভকারী ড. মুহাম্মদ ইউনূস, হয়তোবা তাহার নোবেল জয়কে ‘বিশ্বজয়’ মনে করিয়া বাংলাদেশের সংবিধানে আরোপিত নাগরিক দায়িত্ব কর্তব্যের বিধিনিষেধকে হয় ভূলিয়া গিয়াছিলেন, নয় ‘গুরুত্বহীন বস্থ’ বলিয়া একে মস্তিষ্কেই প্রবেশাধিকার দেন নাই। এটাই তাহার বেলায় স্বাভাবিক হইতে পারে, কেননা নরওয়ের রাজধানী অসলোর সিটি হলে বিশ্ববরেণ্য বিদগ্ধজন এবং বহু রাষ্ট্রপ্রধানের সুরভিত উপস্থিতির রাজকীয় বর্ণাঢ্যের অভিজাত মিলনমেলা বলিয়া কথা। আলফ্রেড নোবেলের মহাপ্রয়াণ দিবসে অর্থাৎ ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দের ১০ ডিসেম্বর ড. ইউনূস নোবেল পুরস্কারটি দুই হস্তে কব্জা করিয়া অভিষিক্ত হইবার মুহূর্তে স্বদেশের মাটি ও মানুষের কথা ভূলিয়া যাইতেই পারেন। সাধারণের অজানা থাকিতে পারে, কিন্তু সংশ্লিষ্ট সুশীলরা অবশ্যই জানিয়া থাকিবেন, নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হইবার পূর্বে মনোনীত হইতে হয়। এজন্য অনেকে মনোনীত হইয়াও তাহা অধিকার করিতে পারেন নাই। এরকম ঘটনার উদহারণ দেওয়ার পূর্বে ড. ইউনূস প্রসঙ্গেই বলিয়া নেই। তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কারে মনোনীত হইয়াছিলেন, ৩ ডিসেম্বর আর পুরস্কারটি তাহার হস্তে তুলিয়া দেওয়া হয়, ১০ ডিসেম্বর, সেই হিসাবে পুরো সপ্তাহখানেক পরে। প্রসঙ্গক্রমে বলিয়া ফেলি, অহিংসবাদের প্রবক্তা মহাত্মা গান্ধীও নোবেল শান্তি পুরস্কারে মনোনীত হইয়াছিলেন কিন্তু পুরস্কারের ভূষণ গায়ে জড়াইয়া বিশ্ববাসীর অভিনন্দন কুড়াইবার পূর্বেই মুসলিম বিদ্বেষী চরমপন্থি নথুরাম গডসে তাহার প্রাণ কাড়িয়া লয়। নোবেল উইলপত্র-এ ‘মরণোত্তর’ পুরস্কারদানের বিধি আরোপিত না হইবার কারণে মহাত্মা গান্ধীকে মনোনীত হওয়ার আনন্দ লইয়াই ঈশ্বরের কৃপায় অগ্নিকুণ্ডে জ্বলিয়া অমরত্ব লাভ করিতে হইয়াছে। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে শান্তিতে কাউকেই নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় নাই, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ওরফে ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী রবীন্দ্রনাথের উপাধিসিক্ত ‘মহাত্মা’র প্রতি শ্রদ্ধাবনত: এক বাণী প্রচার করিয়া।

রাষ্ট্রপতির সহিত সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে ড. ইউনূসের সম্মুখে সময়ের কোনোপ্রকার অভাব ছিলো না। তিনি চাহিলেই নোবেল পুরস্কারে মনোনীত বা ভূষিত হইবার বিষয়টি স্বদেশের রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করিতে পারিতেন। পুরস্কারটি বিদেশের হইলেও নাগরিক হিসাবে স্বদেশকে উপেক্ষা করিবার কী কারণ থাকিতে পারে তাহা আমার বোধগম্য নহে। বরং এমন একটি বিশ্বজয়ের পুরস্কার, স্বদেশের মানুষকেই তো উৎসর্গ করিবার কথা। আর সেটাকেই তো মনে করা হইয়া থাকে, স্বদেশপ্রেম- দেশাত্মবোধ। যে দেশাত্মবোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটাইয়াছেন রবীন্দ্রনাথ তাহার ‘স্বদেশ’ কবিতাখানায়। ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ সে তো ‘স্বদেশ’ কবিতাখানার অন্তরেরই আদূরে পঙ্ক্তিমালা। যাহা লিখিয়াছেন, ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে, লর্ড কার্জনের প্রস্তাবে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ‘বঙ্গভঙ্গ’ আইন পাস করিয়া বঙ্গমাতার অঙ্গচ্ছেদ ঘটাইলে। গান্ধীর স্বদেশী আন্দোলনের মহীরুহ হইয়া উঠিয়াছিলেন, রবীন্দ্রনাথ। ‘আমি কান পেতে শুনি বাংলাদেশের হৃদয় হতে যখন আপনি... রচনাকালও স্বদেশী আন্দোলনকালীন। বঙ্গদেশের শাসক শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ ‘বঙ্গ’-কে ‘বাংলা’ নামে রূপান্তর করিয়া প্রকারান্তরে বাংলা ভাষাকেও সুষমামণ্ডিত করিয়াছিলেন। বিবিসি বাংলা জরিপে ইলিয়াস শাহের নামখানা উচ্চারিত না হইলেও তিনি সেইকালে ‘শাহ বাঙালিয়ান’ উপাধিতেই ভূষিত হইয়াছিলেন। ইলিয়াস শাহের সেই বাংলা প্রদেশকে যিনি প্রথম ‘বাংলাদেশ’ নামে ডাকতে বাঙালির হৃদয়ে সঙ্গীতের সুর তুলিয়া দিয়াছেন, তিনি রবীন্দ্রনাথ। ১৯০৫ সালের ২৩ অক্টোবর ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনি- তুমি এই অপরূপে বাহির হলে জননী।’ সঙ্গীতখানা রচনার আট বৎসরের মাথায় তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাইয়া বাঙালি জাতিকে বিশ্বের দরবারে পরিচয় করাইয়া দেন। আর তিনিও হইয়া উঠিলেন বিশ্বকবি। বিশ্বকবির সেই হৃদয়ের সুরকে আরো শ্রুতিমধুর করিয়া তুলিয়াছেন, কবি নজরুল ইসলাম ‘বাংলাদেশ’ নামক প্রবন্ধখানা রচনা করিয়া।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রবীন্দ্র-নজরুলকে একীভূত করিয়া রাখিয়াছেন, স্বদেশের নাম বাংলাদেশ নামকরণ করিয়া, স্বাধীন বাংলাদেশের আত্মা করিয়া। নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্বই বটে, কিন্তু আজঅবধি তাহারে দেখিতে পাইলাম না, কোনো বীরোচিতবেশে।

জাতীয় কবির রণসঙ্গীতের ধ্বনিতে- তালে তালে হাঁটিবার কোন সামরিক কুচকাওয়াজের অনুষ্ঠানে আর লালসবুজের জাতীয় পতাকা হাতে, জাতীয় সঙ্গীতের কণ্ঠধ্বনিতে! দেখিলাম না, ভাষা-শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনারের প্রভাতফেরিতে, কণ্ঠে তুলিতে আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীর ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভূলিতে পারি’- এই অমর ভাষাসঙ্গীতখানা!

রবীন্দ্রনাথ ‘আমার সোনার বাংলা’ ও ‘বাংলাদেশের হৃদয় হতে’ এ দুইখানা সঙ্গীত রচনার ১৫ বৎসর পর শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম। নজরুলের রণসঙ্গীতখানা ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে রচিত ও সুরারোপিত সন্ধ্যা কাব্যগ্রস্থের অন্তর্গত একটি সঙ্গীত।

আর আমার সোনার বাংলা ১৯০৫ সালের ৭ আগস্ট কলকাতার টাউনহলে পরিবেশিত হয় বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে। বিবিসি জরিপে সেরা বিশটি বাংলা গানের মধ্যে এটা প্রথম স্থান দখল করে। ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবিতে স্থান দিয়াছেন শহীদ বুদ্ধিজীবী জহির রায়হান। ২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিকে অংশগ্রহণকারী ২০৫টি দেশের জাতীয় সঙ্গীতের বিচারে দৈনিক গার্ডিয়ানের জরিপে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত দ্বিতীয় স্থান অধিকার করিয়া লয়। উরুগুয়ের জাতীয় সঙ্গীতখানা হইয়াছিল প্রথম। রবীন্দ্র-নজরুলের সেই ‘বাংলাদেশ’কে যিনি রক্তের আক্ষরে স্বাধীনতার মানচিত্রে আঁকিয়া দিয়াছেন, সেই বঙ্গবন্ধুর প্রতি নোবেল জয়ের পরিপ্রেক্ষিতে কিংবা কোন দিবসে ড. ইউনূস, কখনো- কোনোদিন ন্যূনতম শ্রদ্ধা প্রদর্শন করিয়াছেন, এমন দৃশ্যের অবতারণ ঘটিয়াছে বলিয়া আমার জানা নাই। জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাইতে কিংবা তাহার হত্যাকাণ্ডে শোকার্ত হইতে যে ব্যক্তির হৃদয় সায় দেয় নাই, সেই ব্যক্তি নোবেল প্রাইজ পাইতে পারেন, ইহা বৈদেশিক বিষয়, কিন্তু তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা পদক লাভের অধিকারী হইতে পারেন না। কিন্তু ইহাও সম্ভব হইয়াছে।

সর্বদলীয় সংগ্রামে অগ্নিগর্ভ ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দ। ওই বৎসর ড. ইউনূস সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদের বন্দনা করিয়া ‘স্বাধীনতা পদক’ হাতাইয়া লইলেন। যে বৎসর বিদ্রোহী যুবক নূর হোসেন সদম্ভে বুকে-পিঠে ‘গণতন্ত্র মুক্তিপাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক’ লিখিয়া পুলিশের গুলিকে আলিঙ্গন করিলেন। এরশাদের কাছ থেকে গ্রামীণ ব্যাংক করাইয়া নেওয়া ড. ইউনূস ১৯৭৮ সালে আরেক সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউর রহমানের কাছ হইতে ‘রাষ্ট্রপতি পদক’ অধিকার করিয়া লন।

ইউনূস সেন্টার সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৮ সাল হইতে অদ্যাবধি ড. ইউনূস প্রায় ১৪৫টি পুরস্কার অর্জন করিয়াছেন। সর্বশেষ পাইয়াছেন জাতিসংঘ ফাউন্ডেশনের ‘চ্যাম্পিয়ন অব গ্লোবাল চেঞ্জ’ পুরস্কার। গত ৯ই ডিসেম্বর নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত ‘উই দ্য পিপলস’ অনুষ্ঠানে ড. ইউনূসকে এই সম্মাননা প্রদান করা হইয়াছে। পূর্বেই বলিয়াছি, নোবেল বিজয়ী দুই হস্তে কব্জা করিবার পরও বাংলাদেশের মহামান্যের সান্নিধ্য লইতে বঙ্গভবনে ছুটিয়া যান নাই। হয়তোবা অসীম ভাবমূর্তিতে উচ্ছ্বসিত হইয়া মনস্তাত্ত্বিকভাবে এমন আকাশসম অবস্থানে অবতরণ করিয়া ফেলিয়াছেন যে, তাহার কাম্য হইয়া উঠিয়াছিলো- তিনি কেনো মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে ছুটিয়া যাইবেন? বরং স্বয়ং রাষ্ট্রপতিই তো তাহার স্বদেশে ফিরিবার খবর পাইয়া বিমানবন্দরে পৌঁছাইয়া যাইবেন এবং রাষ্ট্র তাহার সম্মানে বিছাইয়া রাখিবে বিমানবন্দর হইতে বঙ্গভবন পর্যন্ত লালগালিচা। যাহার উপর পা রাখিতেই বর্ষিত হইতে থাকিবে ফুলবৃষ্টি। বঙ্গভবনের গালিচায় কেবল নহে, গোটা রাজধানীর পুষ্পকাননে ফোটা সকল রংবেরঙের প্রজাতির ফুল তাহাকে শুভেচ্ছায় সুসিক্ত করিবে। কিন্তু বাস্তবে তাহা হয় নাই। হয়তো এই অপ্রাপ্তি হইতেই তাহার মাঝে রাজনীতিতে প্রবেশের ইচ্ছা অঙ্কুরিত হইতে দেখিয়াছি ওয়ান-ইলেভেনের সময় ইয়াজউদ্দিন-ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিনের মাথার উপরে ভর করিয়া।

নোবেল পুরস্কার পৃথিবীর সবচেয়ে গৌরবসূচক ও সম্মানজনক পুরস্কার। ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দ হইতে দেওয়া অর্থাৎ প্রায় ৯৫ বছরের মধ্যে এ পর্যন্ত তিনজন বাঙালিকে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করিয়াছে সুইডিশ একাডেমি। এর সূচনা হইয়াছিল কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যের মাধ্যমে ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে। ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পাইয়াছেন অমর্ত্য সেন এবং ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করিয়াছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

তন্মধ্যে ড. ইউনূস একটু ব্যতিক্রম। নোবেল পুরস্কার পাওয়ার ক্ষেত্রে শুধু নহে, ড. ইউনূসের মার্কিন ক্ষমতার মূলে যে বিল ক্লিনটন ও হিলারি, সেই তাদের লইয়াই একটা কথা বলি। আশা করি সকলেরই মনে রহিয়াছে, শেখ হাসিনার ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদের শাসনামলে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন বাংলাদেশ সফরে আসিয়াছিলেন। তিনি নিশ্চয়ই জানিতেন যে, ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রশ্নে পূর্বসূরি প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের ভূমিকার কথা। তাহার এটাও অজানা থাকিবার কথা নেহে যে, বাঙালি নিধনকল্পে মার্কিন সপ্তম নৌবহর আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়া বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত পৌঁছাইয়াছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের অষ্টম নৌবহরের হুমকিতে পশ্চাদপসারণ ঘটিয়াছিল। (পরবর্তীতে সেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনকেই মার্কিন আদালত আড়ি পাতা আইনে কারাদণ্ডে দণ্ডিত করিয়াছিল) যাহাই ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে ঘটুক না কেনো, ১৯৯৯ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন যখন বাংলাদেশ সফরে আসিলেন, তখন তাহাকেও ছুটিয়া যাইতে হইয়াছিলো সাভার স্মৃতিসৌধে। স্বাধীনতার বীর শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করিতে। কিন্তু নোবেল বিজয়ের পর ড. ইউনূস ছুটিয়া গেলেন না স্মৃতিসৌধে- শহীদদের শ্রদ্ধা জানাইতে! ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দে রাষ্ট্রপতি এরশাদ কর্তৃক এরশাদ স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হইবার পরও কোনোদিন স্মৃতিসৌধে গিয়াছেন এমন তথ্য কেহ দিতে পারিবেন না। কী বলিব ড. ইউনূস মুক্তিযুদ্ধকালে দেশেই ছিলেন না। আর যিনি স্বাধীনতা পদক দিয়াছেন, সেই এরশাদও মুক্তিযুদ্ধকালীন ছিলেন ভূমিকাহীন। তবে মৃত্যুর আগে অনুতাপ করিয়া গেছেন। জাতীয় সংসদে দাঁড়াইয়া বলিয়া গিয়াছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে আমি সেনাপ্রধান হতে পারতাম না, রাষ্ট্রপতি হতে পারতাম না, আমার দুঃখ নিয়ে মরতে হবে, আমারই কিছু লোকের বিরোধিতার কারণে আমি বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা ঘোষণা করতে পারিনি।’

কিন্তু এ সকল আচার-ব্যবহারে কোনোপ্রকার ফল লাভের কিছু নাই। এই সামরিক শাসক এরশাদই পূর্বসূরি সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের পদাঙ্ক অনূসরণ করিয়া ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে স্বাধীনতাবিরোধী শর্ষীনার পীর আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করেন। জেনারেল জিয়া ওই স্বাধীনতাবিরোধী আবু সালেহকে স্বাধীনতা পদক দেন ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে। ‘স্বাধীনতা পদক’ পাওয়া সেই শর্ষিনার পীর সমাজ ও শিক্ষায় কী সাংঘাতিক অবদান রাখিয়া ছিলেন, সেটা একটু বলছি। একাত্তরের নরঘাতক টিক্কা খানের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করিয়া তার মাদ্রাসার সকল ছাত্রকে রাজাকার বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করিয়া দিয়াছিলেন। একাত্তরের ১২ নভেম্বর পাঁচ শতাধিক রাজাকারসহ শর্ষিনার পীর সালেহ মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে প্রাণ ভিক্ষা চাহিয়াছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে ২৫৬ পৃষ্ঠার পীর ও মওলানাদের সম্পর্কে লিখিতে গিয়া বলিয়াছেন, পূর্ব বাংলার বিখ্যাত আলেম মওলানা শামসুল হক সাহেব আমার ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেছেন। আমার ধারণা ছিলো তিনি ইলেকশনে আমার বিরুদ্ধে যাবেন না। কিন্তু তিনি মুসলিম লীগে যোগ দান করলেন। জনসাধারণ তাকে খুবই ভক্তি করতো। কিন্তু স্পিডবোট নিয়ে ঘুরতে শুরু করলেন এবং এক ধর্মসভা ডেকে ফতোয়া দিলেন, আমাকে ভোট দিলে ইসলাম থাকবে না। ধর্ম শেষ হয়ে যাবে। শর্ষিনার পীর সাহেব... বরগুনার পীর সাহেব, শিবপুরের পীর সাহেব, রহমতপুরের শাহ সাহেব আমার বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়া বলিলেন, আমাকে যে ভোট দিলে ইসলাম থাকবে না, ধর্ম শেষ হয়ে যাবে। শর্ষীনার পীর স্বাধীনতা পদক পাওয়ার পর স্মৃতিসৌধে যেমন শহীদদের শ্রদ্ধা জানাইতে যান নাই, ঠিক তেমনি ড. ইউনূসও যান নাই। তবে যুদ্ধাপরাধ মামলায় ফাঁসিতে ঝুলে মৃত্যু হওয়া জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোজাহিদ মন্ত্রী হিসাবে শপথগ্রহণ করিবার পর গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়াইয়া স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করিয়াছিলেন।

প্রতিপক্ষ পাকিস্তানের কোনো রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান যখন বাংলাদেশে আসিয়াছেন, তাহারা স্বাধীনতার শহীদদের স্মরণ করিতে স্মৃতিসৌধে ছুটিয়া গিয়াছেন। এটাই রাষ্ট্রীয় শিষ্টাচার কিংবা কূটনৈতিক সংস্কৃতি। ব্যতিক্রম শুধু ড. ইউনূস। তিনি নিজেকে কখনো বাঙালি বলিয়া অভিষিক্ত করিয়াছেন কি না, তাহা অবগত হইতে পারি নাই। বরং বহু তথ্যউপাত্ত ঘাটাঘাটি করিয়া ক্লান্ত শ্রান্ত হইয়া পড়িয়াছি। আজব এক মানুষ তিনি। মাতৃগর্ভ হইতে তিনি তো মাতৃভূমিতেই ভূমিষ্ট হইয়াছেন- কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের মাটিতে নহে। প্রথম ‘মা’ বলেই কণ্ঠে স্বর তুলিয়াছেন। কিন্তু সেই মায়ের ভাষার জন্য যাহারা জীবন দিয়াছেন, তাহাদের কী কখনোই শ্রদ্ধা কিংবা স্মরণ করিয়াছেন? বাংলা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা। এ তো এক সুমহান মর্যাদা। কিন্তু ড. ইউনূস শহীদ মিনার চত্বরে গিয়াছেন কী?

২০০৭ সালে বাংলাদেশে ওয়ান ইলেভেন সংঘটিত করিয়াছিলেন তৎকালীন সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদ। তিনি রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনকে হটানোর প্রধান উপদেষ্টা পদে ড. ইউনূসকেই বসাইতে চাহিয়াছিলেন। কিন্তু তাহা নাকচ করিয়া দিয়াছিলেন ড. ইউনূসই। রাজনৈতিক দল গঠনের অভিলাষ ব্যক্ত করিয়াছিলেন। কিন্তু ব্যর্থতায় পর্যদস্থ হইয়া পড়েন। সাম্প্রতিক চারদিকের রটনা-রচনা, রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর মসনদে বসিবার জন্য তিনি মার্কিন মুল্লুক চষে বেড়িয়েছেন। কিন্তু তাহার বিরুদ্ধে মামলার ছড়াছড়ি। বিচার চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও তাহার পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিলারী ক্লিনটন ড. ইউনূসের বিচার স্থগিতকরণের দাবি জানান। এমনকি নোবেল বিজয়ীরা সেই দাবির দাবিদার। কী অদ্ভুত বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রের গণতন্ত্র!

জন মার্শাল যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিমকোর্টের প্রথম প্রধানমন্ত্রী বিচারপতি। মানুষের মৌলিক অধিকার সম্পর্কে একটি মামলায় তাহার একটি অবিস্মরণীয় উক্তি প্রণিধানযোগ্য। অধিকারের অর্থ এই নয় যে, একজন অধিকার প্রয়োগ করবেন, আরেকজন অধিকার হরণ করবে। অর্থাৎ ‘যে কোনো ব্যক্তি প্রতিপক্ষের উপরে অধিকার প্রয়োগের পূর্বে যেনো শতবার ভেবে নেন, তার অধিকার যেনো হরণ না হয়ে যায়।’

জন মার্শালের দেশের সহিত বাংলাদেশের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের পথে ড. ইউনূসকে বড় কাঁটা মনে করা হইতে ছিলো। কিন্তু এক সেলফিকলা উদ্ভাবনের মাধ্যমে মনে করা হইতেছে যে, বাংলাদেশ প্রশ্নে মার্কিন মুল্লুকের হুঁশ ফিরিয়া আসিয়াছে। জাতির মনও প্রফুল্ল হইয়া উঠিয়াছে। অপসারণ ঘটিয়াছে মনটার উপর জগদ্দল পাথর হইয়া চাপিয়া থাকা আতঙ্ক-আশঙ্কা। ইহাতে মস্তিষ্কের কোষগুলোতে রক্ত পরিসঞ্চালন শুরু হইয়াছে। কারণ বাঙালিরা চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র ভীতসন্ত্রস্ত হইয়া অগ্রসরমান অভিযাত্রায় বারবার হোঁচট খাইয়া আসিতেছে। সংক্রামক ব্যাধির ন্যায় সেইসকল চক্রান্ত বাঙালিকে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধিয়া রাখিয়াছে, যুগের পর যুগ। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সুমতিতে সেইসকল অনিষ্টের অপসারণ ঘটাইয়া গেলো। বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক সৌহার্দ্যের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করিয়া দিয়াছে। জো বাইডেনের ‘সেলফি’ তো নহে এ যেন দ্বিপক্ষীয় সাংস্কৃতিক সম্প্রীতির যে শিল্পকলা, ঠিক তাহারই ন্যায় এটিও এক ‘সেলফিকল’। জো বাইডেন তাহার মুখাবয়বে যে হাসির ফল্গুধারা ছড়াইয়া দিয়াছ, তাহার মাঝেই অন্তর্নিহিত রহিয়াছে বাংলাদেশের জন্য এক সমীহবার্তা। যাহা নির্বাচনমুখী গণমানুষের মাঝে প্রবল আশার সঞ্চার করাইয়া দিয়াছে। সেলফিখানা নিছক মামুলি বিষয় নহে। ইহা কেবলই আমেরিকার দৃষ্টিগোচরিত এক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছায়া। বিলম্বে হইলেও বাইডেনের মনোজগতে উপলব্ধ হইয়াছে যে, ‘শেখ হাসিনার মতন করিয়া বাংলাদেশটাকে কেহই ভালোবাসিতে পারিতেছে না। সুতরাং, শেখ হাসিনাই তাহার অবশিষ্ট লক্ষ্য পূরণের পথে হাঁটুক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হইতে বিশ্ব গণমাধ্যমে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই অভিনব ‘সেলফিকলা’ বাংলাদেশের রাজনীতির ওপর বিরাট ইতিবাচক প্রভাব পড়িয়াছে। দেশবিদেশের গণমাধ্যমেও এটি একখানা বিরাট সমাচার এখন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হাতের মুঠোয় লইয়া এতদিনকার যে বিএনপি ঘরনার রাজনীতিতে সরীসৃপের ফোঁসফোঁস শব্দ আনাচে-কানাচেতে শোনা যাইতো, সেই তাহাদেরও সেলফি কান্ড রাশ টানিয়া ধরিয়াছে। বাইডেন খুব করেই যেন কথিত মিত্রদের তাজ্জবনে পাঠাইয়া দিয়া, তাহাদের কর্ণগহীনে নির্বাচনি বার্তাটাই ঢুকাইয়া দিয়াছেন। আর নহে অগ্নিসন্ত্রাসে সাধারণ নরনারী হত্যা, আর নহে সংখ্যালঘু ধর্ষণ, আর নহে রাজনৈতিক হত্যা। সর্বোপরি কোনোভাবেই আর নহে ‘পনেরো আগস্টে’র পুনরাবৃত্তি। নহে কোন আর কোন ‘একুশে আগস্ট’।

আসন্ন নির্বাচনের পূর্বে ইহা শেখ হাসিনার পক্ষে শক্তি সঞ্চারিত একটি অমোঘ মন্ত্র। উন্নয়নের মহাসড়কে প্রদীপ্তি না নিভাইয়া সৌহার্দ্যরে সৌন্দর্যেই শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়ানোর কথাও উচ্চারিত হয়েছে ওই একঝলক কথোপকথনেই।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের এই সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যমূলক আচরণের মূলে অগ্নিমন্ত্রের কাজ হইয়াছে ভারতীয় ক্ষমতাসীন দল বিজিপির বাংলাদেশের পক্ষে বাইডেন প্রশাসনকে দেওয়া সাম্প্রতিক চিঠি। মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ তথা শেখ হাসিনা প্রশ্নে ভারত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভূমিকা তো রহিয়াছেই। উচ্ছ্বসিত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নরেন্দ্র মোদি ও শেখ হাসিনার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক এতটাই ফলপ্রসূ হইয়াছে যে, তাহা দুই প্রধানমন্ত্রীর চেহারা-সুরাতেই প্রোজ্জ্বল হইয়া উঠিয়াছে।

এটা না বুঝিবার আর কারণ নাই যে, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে প্রকারান্তরে ভারত সরকারের মতন মার্কিন প্রশাসনেরও শেখ হাসিনার পক্ষে চূড়ান্ত অবস্থানের এক কূটনৈতিক বার্তা।

বাংলাদেশ প্রশ্নে তথা শেখ হাসিনার বিষয়ে ঘূর্ণায়মান সংশয় ও সন্দেহের অবসান প্রশ্নে দ্বিপক্ষীয় আপস-মীমাংসা সেলফির মাঝেই নিহিত। সর্বোপরি বাংলাদেশের মানুষের রুদ্ধশ্বাসের আনুষ্ঠানিক অবসানের অবিশ্বাস্য কার্যকরণ হইল বাইডেনের এই সেলফিকলা। ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করছেন কীভাবে, তাহা তিনিই কেবল জানেন। বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দ্বন্দ্বের সূত্রধর তো তিনি। বিশ্বময় অবিস্মরণীয় বিচরণ তার। তার সুবিশাল ভাবমূর্তি ফুটিয়া উঠিয়াছে দেড় শতাধিক বিশ্ব ব্যক্তিত্বের শিশুতোষ আবদারে। আসলে বৃদ্ধ হইয়া গেলে নাকি মানুষ শিশু মনোবৃত্তিতে প্রত্যাবর্তন করিয়া বসে। বিবেক-বুদ্ধি, বিবেচনা, শিক্ষা লোপ পাইয়া যায়। তাহারা শিশুর মতো অবুঝ হইয়া পড়িয়াছেন কি না, জানা নাই। কিন্তু শিশুর মতোই তাহাদের দাবি। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্রে। ইহার সংবিধান রহিয়াছে, আইন রহিয়াছে। কার্যবিধি রহিয়াছে। কেহ অপরাধ কর্ম সংঘটিত করিলে প্রচলিত আইনে অভিযুক্ত ব্যক্তি বিচারে সোপর্দ হইবেন। এটাই স্বাভাবিক। অপরাধী কি না, তাহার ফয়সালা হইবে নিজস্ব গতিতে চলয়মান বিচারিক আদালতে। কিন্তু বহু নোবেল বিজয়ী বন্ধু সাজিয়া ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মামলা স্থগিত করিবার জন্য বাংলাদেশের উপর চাপ সৃষ্টি করিবার দৃষ্টান্ত স্থাপন করিয়াছেন। তাহারা একটিবারও ভাবিয়া দেখিলেন না যে, এইটা নেহাৎ নীতিবিরুদ্ধ কাজ। একটি ভিন দেশের প্রশ্নে নীতিবিগর্হিত আচরণ। একটি রাষ্ট্রের উপর সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের নামান্তর। ঔদ্ধত্যমূলক অসংবেদনশীল হস্তক্ষেপ বটে। না জানিয়া, না বুঝিয়া স্রেফ ব্যক্তিপ্রেমে সমষ্টির সর্বনাশ করিবার উদভ্রান্ত নীতি তো মধ্যযুগীয় বর্বরতা। বাংলাদেশের বিচারিক আদালত ইউনূসের মামলা স্থগিতাদেশের দাবির প্রতি শুনানি করিতে গিয়া বিব্রতবোধ করিবেন কি না জানি না, তবে পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের বিচারিক আদালত এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হইলে সমুচিত প্রতিত্তোর তাহারা পাইতেন। সাম্প্রতিক ড. ইউনূসের মামলা-মোকদ্দমার আইনি ভিত্তিমূল নিয়া বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন ওঠায় অনেক দিন পর সংবিধানের দিকে চোখ রাখিলাম। আর তাতেই কয়েকটি অনুচ্ছেদের ভাষা-পরিভাষার মর্মমূল আঁচ করিতে গিয়া বিস্মিত হইলাম। বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী।’

প্রসঙ্গত জো বাইডেনের প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিচারিক আদালতের সোপর্দ হইতে দেখিলাম দিন কতক পূর্বে। ঘণ্টা দেড়েক হাজতও খাটিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনের শাসন আমাদের জন্য শিক্ষনীয়। আমাদের অন্ধকার চোখে আলোকচ্ছটা ছড়াইয়া দেয় তাহাদের বিচারকার্য।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও লিওনিস্কি পরকীয়া প্রেমের পরিণতিও বিশ্ববাসী পরিলক্ষণ করিয়াছে। অভিশংসনের দাবি উত্থাপিত হইয়াছিল। সিন্ডিকেট ও সিনেট কক্ষে প্রধান বিচারপতি বসিয়া শুনানি অনুষ্ঠিত করিয়াছিলেন। ক্লিনটন দোষী সাব্যস্ত হইয়াছিলেন। দোষ স্বীকার করিয়া তিনি হাতজোড় করিয়া ক্ষমা প্রার্থনা করিয়া ছিলেন। তখন তাহাকে ক্ষমা প্রদর্শন করিলেও ধিক্কার জানানো হইয়াছিল। আমেরিকার মতো ভারতেও আইনের শাসন বিশ্ববাসীর জন্য অনুসরণীয়। ভারতের এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিদ্যুৎ দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হইয়াছিলেন। দণ্ডে দণ্ডিত হইয়াছিলেন, যাহা অবিস্মরণীয় এক রায়। ভারতের সুপ্রিমকোর্ট হাইকোর্ট বিভাগের কারাদণ্ডের পরিবর্তে এই মর্মে রায় প্রদান করিয়াছিলেন যে, অভিযুক্ত মন্ত্রীকে প্রতিদিন ভারতীয় জাতীয় গ্রস্থাগারে গিয়া মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী, নেতাজী সুভাসচন্দ্র বোস, নওরোজী দাদাভাই, গোপাল কৃষ্ণ গোখলে, ভ্রাতৃদ্বয় মওলানা মোহাম্মদ আলী ও মওলানা রহমত আলীর জীবনীগ্রন্থ পড়তে হবে। সকাল ৯ ঘটিকা হইতে বিকাল ৫ ঘটিকা পর্যন্ত। পুলিশি প্রহরায় ভারতীয় সেই মন্ত্রী ৫ বছর যাবত জাতীয় গ্রন্থাগারেই গ্রন্থ পড়িবার মাধ্যমেই তার শাস্তি ভোগ করিয়া প্রায়শ্চিত্ত করিয়াছিলেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে বিনয়ে বলিতেছি, আপনারা যাহারা বিশ্বনেতা তাহারা বিশ্ব শান্তি ও সমৃদ্ধির দেনদরবারে উপবিষ্ট। সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির মহা মিলনমেলায়। আপনাদের প্রতিই মনোযোগ বিশ্ববাসীর। কেন না, কেবল মার্কিন মুল্লুকের শুধু নহে, সাড়ে সাত শত কোটি আদম বা অ্যাডাম সন্তানের শ্বাসনিঃশ্বাসের নিশ্চয়তা পরাশক্তি নামক অক্সিজেনের উপর। আপনারা আগ্নেয়গিরি, আপনারা পারমাণবিক, যাহার উপরে দণ্ডায়মান বিশ্বের প্রতিটি প্রাণ। জো বাইডেন নিঃশব্দে সুচিন্তিত এক নজির স্থাপন করিয়া, নোবেলীয় বা ইউনূসীয় গোলকধাঁধায় না জড়াইয়া, সর্বোপরি ওবামা-হিলারির পথে না হাঁটিয়া যে বার্তাখানি- সেলফিকলার দ্বারা ছড়াইয়া দিয়াছেন। তাহা নিশ্চয়ই বাইডেনের বিজ্ঞানমনষ্ক চিন্তাধারার দ্রুততম প্রতিফলন। এই কর্মসম্পাদন করিয়া বাইডেন রিপাবলিকানদেরই কূটনৈতিক কর্মশৈলীতে সুনিপুণ শিল্পকলার সংযোজন ঘটাইয়া নবতর এক কৌশলের অবতারণ ঘটাইয়াছেন।

বাংলাদেশ-আমেরিকা সম্পর্কের অহেতুক টানাপড়েনের মূলে যে ইউনূসীয় প্রশ্ন বিষবৃক্ষের মতো বিশ্ব পরিমণ্ডলে নানাবিধ চক্রান্ত ষড়যন্ত্র কিংবা সংশয় সন্দেহের আমাদানি ঘটাইয়াছিল, তাহার মুখোশ উন্মোচন হইয়া গিয়াছে। জো বাইডেন এরকম একখানা কর্মসম্পাদনের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রাকৃতমনস্ক চিন্তাধারার মসনদে বসিয়া পড়িয়াছেন। অভিবাদন, জো বাইডেন।


ড. ইউনূস   নোবেল প্রাইজ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক: গৌরবের প্রতীক

প্রকাশ: ১১:০০ এএম, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

একুশ শতকে অবিনাশী যাত্রা শুরু করেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার কন্যা টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক। তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের মুখে ভস্ম ঢেলে নিজেকে জাগ্রত করেছেন উদ্দীপিত শিখার মতো। আর তাঁর নামটিও সার্থক। ‘টিউলিপ’ শীতপ্রধান দেশের ফুল, যার নীলাভ কিংবা লাল রঙ আগুনের প্রতীক। এদিক থেকে তাঁর নামটি আলোকিত প্রত্যাশার কথা বলে, মানুষের মঙ্গলে নিবেদিত জীবনের গান করে।

১৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের গর্ব এবং বঙ্গবন্ধু পরিবারের অহঙ্কার টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিকের জন্মদিন। মাত্র ৪১ বছর বয়সের আগেই তিনি বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন কেবল নিজের যোগ্যতা দিয়ে। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেবার পার্টির এই রাজনীতিবিদ তারুণ্যের প্রদীপ্ত শিখা। শেখ রেহানা ও শফিক সিদ্দিকের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ১৯৮২ সালে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকেই তাঁর মা শেখ রেহানা নিদারুণ দুর্দশার মধ্যে পড়ে বড় বোন শেখ হাসিনাসহ এক দেশ থেকে অন্য দেশে আশ্রয়ের সন্ধানে ঘুরেছেন। তারপর একাকী তিনি দিল্লি থেকে ১৯৭৬ সালে লন্ডনে পৌঁছান এবং ১৯৭৭ সালে লন্ডনে অবস্থানরত ড. শফিক সিদ্দিককে বিবাহ করেন। সেসময় টিউলিপের রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী মায়ের চাকরি খোঁজা, বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করা আর অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার দাবি’র লড়াই মিলেমিশে একাকার ছিল। জন্মের পর বড় হতে থাকা টিউলিপ পরদেশে আশ্রিত জীবনের বাস্তবতা পর্যবেক্ষণ করেছেন নিবিড়ভাবে। বঙ্গবন্ধুর রক্তধারা তাঁকে আদর্শবাদী রাজনীতি চর্চায় উৎসাহী করেছে। মাতামহ বঙ্গবন্ধু যেমন পাকিস্তান আমলে প্রবল প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে নিজেকে জনগণের নেতায় পরিণত করেছিলেন; অপরদিকে খালা শেখ হাসিনা যেমন বাংলাদেশে বারবার হত্যার সম্মুখীন হয়েও নিজেকে জননেত্রীতে পরিণত করেছেন; তেমনি আশ্রিত জীবনের দুঃখ-কষ্ট জয় করে টিউলিপ হয়ে উঠেছেন শেখ হাসিনার মতোই ফিনিক্স পাখি। বঙ্গবন্ধুর খুনিচক্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজে গৌরবান্বিত রাজনীতিবিদে পরিণত হয়েছেন; তেমনি বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে মর্যাদার সঙ্গে তুলে ধরেছেন। পিতামাতার সঙ্গে টিউলিপের শৈশব কেটেছে বাংলাদেশ, ভারত ও সিঙ্গাপুরে। ১৫ বছর বয়স থেকে তিনি হ্যাম্পস্টিড ও কিলবার্নে বসবাস করছেন। ওই এলাকায় স্কুলে পড়েছেন ও কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে পলিটিক্স, পলিসি ও গভর্নমেন্ট বিষয়ে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সে লেবার পার্টির সদস্য হওয়া টিউলিপ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গ্রেটার লন্ডন অথরিটি এবং সেইভ দ্য চিলড্রেনের সঙ্গেও কাজ করেছেন। তিনি ২০১৫ সালের ৭ মে অনুষ্ঠিত যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন নির্বাচনী এলাকায় লেবার পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন। ২০১৫ সালে এমপি হওয়ার আগে তিনি রিজেন্ট পার্কের কাউন্সিলর এবং ২০১০ সাল থেকে চার বছর ক্যামডেন কাউন্সিলের কালচার অ্যান্ড কমিউনিটির সদস্য ছিলেন। মূলত ২০১৫ সালে একই দল থেকে তিনজন বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত নারী বিজয়ী হন তার মধ্যে টিউলিপ ছিলেন ব্যতিক্রমী। তবে ব্রিটিশ এমপি রুশনারা আলী ও রূপা হকও আমাদের অহঙ্কার।

এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর টিউলিপ লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিনের ছায়া মন্ত্রিসভায় নিযুক্ত হন। পরে তিনি পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট বিলের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণপূর্বক লেবার পার্টির ছায়া মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত যুক্তরাজ্যের মধ্যবর্তী নির্বাচনে লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন নির্বাচনী এলাকায় লেবার পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। রাজনৈতিক জীবনে তাঁর এই সাফল্যের কারণ পরিশ্রম ও আদর্শবাদী কাঠামোর মধ্যে নিজেকে তৈরি করা। তিনি ২০১৫ সালে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউজ অব কমন্সে প্রথমবারের মত বক্তব্য রাখেন এবং প্রথম ভাষণেই নজর কাড়েন। ওই ভাষণে শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীদের প্রতি ব্রিটেনের সহৃদয়তার ওপর আলোকপাত করেন টিউলিপ সিদ্দিক। বিবিসির তৈরি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সবচেয়ে স্মরণীয় নবনির্বাচিতদের ভাষণের তালিকায়ও স্থান পায় তাঁর ওই ভাষণ। নিজেকে ‘একজন আশ্রয়প্রার্থীর কন্যা’ হিসেবে বর্ণনা করে সে সময় মা শেখ রেহানার দুর্দশার বিবরণ দেন তিনি।

২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে টিউলিপ যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে সাবেক প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে-এর ব্রেক্সিট চুক্তির বিপক্ষে ভোট দেওয়ার লক্ষ্যে দ্বিতীয় সন্তান জন্মদানের অস্ত্রোপচার পিছিয়ে বিশ্বব্যাপী সংবাদ শিরোনাম হয়েছিলেন। তখন পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে সাধারণত কোনও এমপি’র সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় আসন্ন হলে বা সদ্যোজাত সন্তানের কারণে বা অসুস্থতার কারণে  ভোটে অংশ নিতে না পারলে বিরোধী পক্ষেরও একজন সদস্য ভোটদান থেকে বিরত থাকতেন, যাকে ‘পেয়ার’ বলা হতো। কিন্তু ২০১৮ সালের জুলাইয়ে কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান ব্রান্ডন লুইস ওই প্রথা লঙ্ঘন করে ভোট দিয়েছিলেন। অতীতের এই ঘটনার কারণে ওই ব্যবস্থায় তাঁর আর আস্থা নেই জানিয়ে টিউলিপ সশরীরে পার্লামেন্টে গিয়ে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তার এই সাহসী সিদ্ধান্তের কারণে সন্তান-প্রত্যাশী ও নবজাতকদের মা-বাবার জন্য ঐতিহাসিক প্রক্সি ভোটিং পদ্ধতি চালু করতে বাধ্য হয় ব্রিটিশ সরকার।

এই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ মর্মে মূল্যায়ন করেছিল ‘ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ড’ পত্রিকা। আর এজন্যই লন্ডনের স্বনামধন্য সংবাদপত্র ‘ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ড’ কর্তৃক প্রকাশিত ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী রাজনীতিবিদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। উল্লেখ্য, টিউলিপের সঙ্গে ছিলেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, ডাচি অফ ল্যানকাস্টারের চ্যান্সেলর মাইকেল গভ, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক ও শিক্ষামন্ত্রী গেভিন উইলিয়ামসনের মতো লন্ডনের শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদগণ। উক্ত তালিকায় রাজনীতি ছাড়াও ব্যবসা, প্রযুক্তি, বিজ্ঞান, নকশা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন খাতের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ স্থান লাভ করেন। ‘ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ড’ প্রতিবছর লন্ডনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী ব্যক্তিদের নিয়ে ‘প্রোগ্রেস ১০০০’-শীর্ষক এই তালিকা প্রকাশ করে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক আদর্শ ও দর্শনের উত্তরাধিকারী হিসেবে তাঁর দৌহিত্রীর যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ বাংলাদেশের জনগণের জন্য এক গৌরবজনক অধ্যায়। টিউলিপের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা, সমাজের মূলধারায় অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্তকরণের উদ্যোগ, রাজনৈতিক মহলে ও সমাজের সর্বস্তরে গ্রহণযোগ্যতা এবং সাধারণ্যে জনপ্রিয়তা বাঙালি জাতিকে আরও গৌরবান্বিত করেছে। টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক লন্ডনের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনীতিবিদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সম্মানজনক অবস্থান আরও উন্নত ও সুসংহত হয়েছে। বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলতর হওয়ায় শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রিসভা ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিককে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জ্ঞাপন করেছে।

মূলত টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক লন্ডনের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনীতিবিদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সম্মানজনক অবস্থান আরও উন্নত ও সুসংহত হয়েছে। যেন ফিনিক্স পাখির মতো ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পরবর্তী বাংলাদেশকে পুনর্জাগরণে দীক্ষিত করেছেন তিনি। বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলতর হওয়ায় আমরা গর্বিত; তিনি আমাদের অহঙ্কার।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

'অধিকার' সম্পাদকের দন্ডে মার্কিন দূতাবাসের বিবৃতি কতটুকু যৌক্তিক?


Thumbnail

মানবাধিকার সংগঠন 'অধিকার' সম্পাদক আদিলুর রহমান খান শুভ্র এবং সংগঠনটির পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানের দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্ত্বরে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের সমাবেশ শেষে শর্তানুযায়ী সমাবেশস্থল ত্যাগ না করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করা এবং নির্বাচিত সরকার কে উৎখাত ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচালিত অভিযানে হেফাজত কর্মীদের মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগে আদিলুর ও এলানের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে করা মামলায় এই সাজা পান তারা। দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর পরে সকল আইনি প্রক্রিয়া শেষে গত ১৪ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত এ রায় ঘোষণা করেন। আদালত প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশের পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতিতে অত্যন্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বিচারক এই মামলার রায় ঘোষণা করেন।

অথচ মামলার রায়ের পরপরই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস! ১৪ সেপ্টেম্বর দূতাবাসের ওয়েবসাইটে এক বিবৃতির মাধ্যমে এই উদ্বেগের কথা প্রকাশ করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র মানুষের অধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার প্রচার ও সুরক্ষায় মানবাধিকারকর্মী এবং সুশীল সমাজ সংগঠনগুলোর কার্যক্রমকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে। আমাদের ‘২০২২ কান্ট্রি রিপোর্ট অন হিউম্যান রাইটস ইন বাংলাদেশ’ প্রতিবেদনে ‘অনলাইন এবং অফলাইনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সীমাবদ্ধতা’ এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো ‘বিশেষ সরকারি বিধিনিষেধের সাথে পরিচালিত’ হওয়ার কথা তুলে ধরা হয়েছে। এ অবস্থায় ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস মানবাধিকার সংগঠন অধিকার’-এর সম্পাদক আদিলুর রহমান খান এবং পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানের বিরুদ্ধে আজকের রায়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং মনে করছে এটি মানবাধিকারকর্মী এবং সুশীল সমাজের গুরুত্বপূর্ণ গণতান্ত্রিক ভূমিকা পালনের সদিচ্ছাকে আরও দুর্বল করে দিতে পারে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, যেই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, অধিকার কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছে এবং প্রতিবেদন তৈরি করেছে। গণতন্ত্রের অপরিহার্য অংশ হিসেবে আমরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং প্রাণবন্ত নাগরিক সমাজকে অব্যাহতভাবে সমর্থন করি এবং মৌলিক অধিকার নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টার বিরোধিতা করি।

এর আগে রায় প্রকাশের পর বিবৃতি দিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও। আদিলুরের রায় নিয়ে অ্যামনেস্টির বিবৃতিতে বলা হয়- অধিকার ২০১৩ সালে প্রতিবাদের প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্র কর্তৃক পরিচালিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের নথিভুক্ত একটি তথ্য-অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করার পরে মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল। অধিকার এবং এর নেতাদের ওপর রাষ্ট্রের নিরলস দমন ক্ষমতার কাছে সত্য বলার অধিকারের ওপর একটি আক্রমণ।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের নথিভুক্ত করা কোনো অপরাধ নয়। আমরা বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে এবং নিঃশর্তভাবে খান ও এলানকে মুক্তি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এ ধরণের বিবৃতি একটি স্বাধীন দেশের বিচার ব্যবস্থার উপর সরাসরি হস্তক্ষেপ নয় কি? একটি স্বাধীন দেশের বিচার ব্যবস্থা কি বিদেশী দূতাবাসের প্রেসক্রিপশনে চলবে? কার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হবে আর কার বিরুদ্ধে হবে না তা কি আমেরিকান দূতাবাস, এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং নোবেল বিজয়ীরা ঠিক করে দিবে? দেশের প্রচলিত আইনেই অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং অপরাধী এবং তাদের নিযুক্ত আইনজীবীদের উপস্থিতিতে আদালত মামলার রায় ঘোষণা করেছে। আদালত প্রাঙ্গণে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের পর্যবেক্ষকগণ আদালতের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেছেন। পর্যবেক্ষণে আদালতে কার্যক্রম নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে কিংবা আদালতের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের কোনো অভিযোগ থাকলে তারা সে বিষয়ে বিবৃতি দিতে পারতেন। কিন্তু তাদের বিবৃতি আসলে সরকারের বিরুদ্ধে। মানবাধিকার সংগঠনের নেতারা কি আইনের উর্ধ্বে? নোবেল বিজয়ীরা কি আইনের উর্ধ্বে? কিছুদিন পূর্বে আমরা নোবেল বিজয়ী ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুসের বিরুদ্ধে আদালতে চলমান একটি মামলা স্থগিত করার আহবান জানাতে দেখেছি বেশ কিছু নোবেল জয়ী সহ আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ব্যক্তিকে।

কোনো দেশের আইনেই কি অপরাধীদের এ ধরণের দায়মুক্তি দেওয়ার সুযোগ আছে? সরকার কিংবা আদালতের কাছে বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে অপরাধ, অপরাধী নয়। একই অপরাধে একজনের বিচার হলে অন্যজনের কেন নয়? এক্ষেত্রে অপরাধীর পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক কিংবা আন্তর্জাতিক অবস্থান বিবেচনায় নেওয়ার কোনো নজির কি যুক্তরাষ্ট্র কিংবা অন্য কোনো দেশের আদালতের আছে কি? আমরা কিছুদিন পূর্বেই দেখেছি যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কে একটি মামলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিভাবে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে? তখন কি ডোনাল্ড ট্রাম্পের মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়নি? তখন এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল কোথায় ছিল? তারা কি কোনো বিবৃতি দিয়েছিল ট্রাম্পের পক্ষে? মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপরাধে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার কে কি দায়ী করা হয়েছিল? যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের তখন কি ভূমিকা ছিল? এই প্রশ্ন কি আমরা করতে পারি তাদের কাছে? 

মার্কিন দূতাবাস মানবাধিকার সংগঠনের দুই নেতার আদালত কর্তৃক দন্ডপ্রাপ্ত হওয়ার ঘটনাকে মৌলিক অধিকার নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে, যা অত্যন্ত সাংঘাতিক অভিযোগ সরকারের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর অভিযোগ তো আরো মারাত্মক! তারা এই দন্ডকে 

'অধিকার' এবং এর নেতাদের ওপর রাষ্ট্রের নিরলস দমন হিসেবে এবং সত্য বলার অধিকারের ওপর আক্রমণ হিসেবে দাবি করেছে, যা সম্পূর্ণ মনগড়া এবং ভিত্তিহীন। এই মামলা পর্যালোচনা করলে বিষযটি স্পষ্ট হবে।

চার্জশিটের তথ্য মতে, ২০১৩ সালে ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজত ইসলাম সমাবেশ করে। শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ শেষে শর্ত ভঙ্গ করে সমাবেশস্থলে রাত্রিযাপনের ঘোষণা দেন সংগঠনের নেতারা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকারের পক্ষ থেকে তাদেরকে বারবার সমাবেশস্থল ত্যাগ করার আহবান জানানো হয়। কিন্তু তারা সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে সেখানেই অবস্থান নেন। রাতে তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দিতে যৌথ অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই অভিযানে ৬১ জন নিহত হয়েছেন-মর্মে প্রতিবেদনে উল্লেখ করে ‘অধিকার’। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এই প্রতিবেদন কে অসত্য এবং ভিত্তিহীন বলে ঘোষণা দেওয়া হয় এবং সত্যতা প্রমাণের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া হয় মানবাধিকার সংগঠনটির প্রতি। তবে তারা তাদের দাবির পক্ষে উপযুক্ত তথ্য, প্রমাণ উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়। 

অবশেষে ২০১৩ সালের ১০ আগস্ট গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন ডিবির তৎকালীন উপ-পরিদর্শক আশরাফুল ইসলাম। তদন্ত শেষে ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার আদালতে আদিলুর ও এলানের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়। চার্জশিটে সাক্ষী রাখা হয় ৩২ জনকে। ওই বছর ১১ সেপ্টেম্বর মামলাটি বিচারের জন্য অভিযোগ আমলে নেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল। ২০১৪ সালে দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। চার্জশিটে বলা হয়, আসামি আদিলুর ও এলান ৬১ জনের নিহত হওয়ার ‘বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা’ তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি ও প্রচার করে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করার অপচেষ্টা চালায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকার ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি দেশে-বিদেশে চরমভাবে ক্ষুন্ন করে।’ পাশাপাশি তারা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিরূপ মনোভাবের সৃষ্টি করে, যা তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ (১) ও (২) ধারায় অপরাধ। একইভাবে ওই আসামিরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে আইনশ্ঙ্খৃলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা চালায় এবং সরকারকে অন্য রাষ্ট্রের কাছে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চালায়। 

বিবৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে মামলার অভিযোগপত্র কি তারা আমলে নিয়েছেন? অপরাধ কে কি তারা বিবেচনায় নিয়েছেন? মার্কিন দূতাবাস, এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং নোবেল বিজয়ীদের এই বিবৃতি সম্পূর্ণ আইনবহির্ভূত, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নগ্ন হস্তক্ষেপ এবং সরাসরি বাধা হিসেবে মনে করি। একজন স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে এ ধরণের বিবৃতির তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং ভবিষ্যতে এ ধরণের বিবৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে আইনের খুঁটিনাটি দিকগুলো বিবেচনায় নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। 

 

মোঃ নজরুল ইসলাম, কলামিস্ট এবং তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, ১৬ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, খুলনা মহানগর।



মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন