তখন ছিল স্বৈরাচারী জিয়ার শাসন আমল। আমি তখন মেডিকেল কলেজের ছাত্র। আমরা কলেজের অধ্যক্ষের অনৈতিক আচরণের কারনে তার অপসারণের জন্য ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলাম। এক কলেজ ছাত্রের পরিবারের একজন সদস্য কলেজের অধ্যক্ষের বাসায় ফোন করে (যেহেতু হোস্টেলে কোনো টেলিফোনের সুবিধা ছিল না) তাকে অনুরোধ করে ছাত্রটিকে তার বাবার মৃত্যুর খবর জানাতে এবং তাকে অবিলম্বে বাড়িতে আসতে বলার অনুরোধ করার জন্য। অধ্যক্ষ গভীর রাতে তাকে ফোন করে বিরক্ত করার জন্য সেই পরিবারের লোকটির সাথে খুব খারাপ আচরণ করেন এবং তিনি ছাত্রকে কিছু জানাননি। ছাত্রটি কয়েকদিন পরে তার বাবার মৃত্যুর খবরের তথ্য পায় এবং তার বাবাকে শেষ বারের মত বিদায় জানাতে সময় মত বাড়ি যেতে পারেনি। ধর্মঘট চলতে থাকায় স্বাস্থ্য মন্ত্রী আমাদের তার সাথ আলোচনা করার জন্য ঢাকায় আসতে বলেন। আমি প্রতিনিধিদলের একজন ছিলাম। ডাঃ বদরুদ্দোজা চৌধুরী তখন স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং ডাঃ মতিন উপমন্ত্রী ছিলেন। সচিবালয়ে আমরা মন্ত্রীর সাথে আলোচনা করার সময় আমাদের দাবি সম্পর্কে মন্ত্রীকে অবহিত করি। মন্ত্রী আমাদের কথা মনোযোগ সহকারে শুনেন এবং আমাদের দাবিতে প্রায় একমত হন এবং আমাদের বললেন স্বাস্থ্য সচিবের সাথে দেখা করতে। এরপর আমরা স্বাস্থ্য সচিবের দপ্তরে যাই। অফিসের বাইরে আনেক সময় অপেক্ষা করার পর সচিব আমাদের ভিতরে ডাকলেন। তিনি আমাদের বসতে বললেন এবং ইংরেজিতে বললেন, "হ্যাঁ, তরুণরা, আমি তোমাদের জন্য কি করতে পারি (Young men what can I do for you all)"? আমরা তাকে মন্ত্রীর সাথে আমাদের আলোচনার বিষয়ে অবহিত করি এবং আমাদের চাহিদার তালিকা তাকে দেই। সচিব তখন জিজ্ঞাসা করলেন, “মন্ত্রী কি এ বিষয়ে তার মতামতের কোনো কাগজে স্বাক্ষর করেছেন?”। আমাদের কাছে এমন কোনো কাগজ ছিল না। তারপর সেক্রেটারি শান্তভাবে আমাদের মুখে উপর তার বুড়ো আঙুল নাড়তে নাড়তে বললেন: “তরুণরা, তোমরা তোমাদের কলেজে ফিরে যাও, লেখা পড়া করো, কারণ আমি কোনো স্বাক্ষরিত কাগজ ছাড়া কোনো ব্যবস্থা নেব না”। ওখানেই আমাদের আলোচনার সমাপ্তি এবং তিনি আমাদেরকে তার অফিস ছেড়ে যেতে বললেন। আমরা বুঝতে পারলাম রাজনীতিবিদ বা মন্ত্রীরা অনেক কিছু বলতে পারেন বা একমত হতে পারেন তবে কেবল প্রশাসনই তা বাস্তবে কার্যকর করতে পরেন। হাড়ে হাড়ে বুঝলাম, রাজনীতিবিদ বা মন্ত্রীদের কোনো প্রশাসনিক ক্ষমতা নেই। আমি এখন তাই লক্ষ্য করছি, প্রধানমন্ত্রী দেশ বা জনগণের স্বার্থে অনেক ভালো কিছু করার নির্দেশ দেন, কিন্তু প্রশাসন বা আমলারা হয় প্রক্রিয়াটি নানাভাবে বিলম্বিত করে বা অনুসরণ করে না। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে একা সময়মতো তার নির্দেশাবলীর তত্ত্বাবধান বা পর্যবেক্ষণ করা মানবিকভাবে সম্ভব নয়। বিশ্বের প্রতিটি দেশে তাই হচ্ছে। অন্য কথায় সহজ ভাবে বলা যায় সত্যিকার অর্থে আমলারাই দেশ চালান। আমরা স্বাধীনতার পর আরো দেখেছি তিন তিনবার বন্দুকের নলের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করতে।
আমার নিবন্ধের আসল বিষয়ে ফিরে আসা যাক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ, নিরাপত্তা আর প্রশাসনিক ক্যাডার, ব্যবসায়ী মালিক (বা তাদের পরিবারের সদস্যদের) যারা আগামী নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার সাহস করবে বা করবে তাদের ভিসা প্রদান বা অস্বীকার করার জন্য কিছু ধারা আরোপ করেছে বা হুমকি দিয়েছে। বিশ্বের একটি সার্বভৌম ক্ষমতাধর দেশ হিসেবে আমেরিকার অধিকার আছে তারা কাকে ভিসা দিতে চায় বা না দিতে চায়। এতে কারো কোনো আপত্তি নেই বরং আমেরিকার এই শুভ ইচ্ছাকে স্বাগত জানানো উচিত। কিন্তু তবুও কিছু প্রশ্ন থেকে যায়। অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে কূটনৈতিক রীতিনীতির বিরুদ্ধে তারা ক্রমাগত উচ্চস্বরে কথা বলে আসছে। তারা নির্বাচন কমিশনেও গেছেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রী জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে তার সফরের সময় বারবার বলেছেন যে তিনি নিশ্চিত করবেন ২০২৩/২৪ সালের নির্বাচন সুষ্ঠু হবে এবং তিনি ভোটের মাধ্যমে জনগণ যেন তাদের ইচ্ছা প্রকাশ করতে পারে তা নিশ্চিত করবেন। তাহলে নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে কেন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো? কেন হঠাৎ করে বাংলাদেশ? বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য কেন এটি প্রযোজ্য করা নয়? মিশরের সামরিক শাসক দ্বারা নির্বাচনের সময়ের আগে তো আমরা সেই হুমকি দেখিনি? ১৯৭৫ সালের “হা” “না” নির্বাচন বা পরবর্তী নির্বাচনের আগে কেন তা আরোপ করা হলো না? কেউ কেউ হয়তো বলবেন, আমেরিকা বিশ্বাস করে যে গত দুটি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি, সেজন্য তারা এই হুমকি দিয়ে আমাদের সাহায্য করার চেষ্টা করছে? সত্যিই কি তাই??!! এর মানে কি বাংলাদেশের নাগরিকদের নিজেদের নির্বাচন পরিচালনার জন্য অন্যদের নির্দেশ বা হুমকির প্রয়োজন? নির্বাচনের সুষ্ঠুতা পর্যবেক্ষণে নির্বাচন পর্যবেক্ষক পাঠাতে কোন বাঁধা নেই, তবে কেন ভিসাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে একটি সার্বভৌম দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় পরোক্ষভাবে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে? আমরা একটি উন্নয়নশীল দেশ এবং এখনও অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীল তাই আমরা কি আজ এই হুমকির সম্মুখীন? আমরা একবার ঔপনিবেশিক ক্ষমতার অধীনে ছিলাম প্রতিবারই কি আমাদের তা স্মরণ করিয়ে দিতে হবে?
বাংলাদেশের কত শতাংশ এবং কাদের আমেরিকার ভিসা প্রয়োজন? সর্বোচ্চ ১-২% বাংলাদেশিদের? তাদের মধ্যে কত শতাংশ রাজনীতিবিদ, প্রশাসনের কর্মকর্তা বা ব্যবসার মালিক? আমরা জানি অনেক উচ্চ বর্তমান বা অবসরপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা, জাতীয় বিভিন্ন নিরাপত্তার কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়িক ব্যক্তিদের বাড়ি, গ্রিন কার্ড, বিশাল ব্যাংক আমানত আমেরিকায় আছে এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা সেখানে শিক্ষার জন্য যান বা সেখানে বসবাস করছেন। বা যারা বাংলাদেশে ব্যবসা করেন কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে বার বার যান বা থাকেন এবং সেখানে বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা করেন। ব্যবসায়ীরা রাজনৈতিক দলগুলোকে বিপুল পরিমাণ অর্থ অনুদান প্রদান করে। নিরাপত্তা কর্মকর্তারা তাদের ভবিষ্যতের জন্য আরও প্রশিক্ষণের জন্য সেখানে যেতে চান। আমেরিকান ভিসা এই লোকদের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, যারা আসলে দেশ চালান বা জাতীয় অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক নিরাপত্তা বজায় রাখেন। বা রাজনৈতিক এজেন্ডায় প্রভাব বিস্তার করেন। অনেক শাসক বা প্রাক্তন রাজনীতিবিদদেরও একই কারণে আমেরিকান ভিসা প্রয়োজন। ভিসা বিধিনিষেধের এই অস্ত্রের কারণে এই দলগুলো সবচেয়ে বেশি হুমকির সম্মুখীন। অন্যান্য অনেক বাংলাদেশিরা সেখানে উন্নত জীবন ও আয়ের জন্য আছেন। তারা নির্বাচন প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত নন এবং তাদের এই হুমকির ভয় পাওয়ার কারণ নেই। অন্যদিকে ৯৬-৯৪% বাংলাদেশি মানুষ আমেরিকান ভিসা নিয়ে চিন্তা করেন না বা তাদের ভিসার অনুরোধ করার কোনো কারণ নেই (অনেকে এখনও উন্নত জীবন, শিক্ষা বা অর্থনৈতিক কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চান এবং তাদের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার কোনো ক্ষমতা নেই)। তাই আমরা বলতে পারি ভিসার হুমকির কারণে ওই গুটি কিছু স্বার্থান্বেষী লোক আমেরিকার হুকুম মানতে এমনকি বাংলাদেশের স্বার্থ ও তার ভাবমূর্তি বলিদান দিতেও যা কিছু করা তাই করবে। সংবিধান অনুযায়ী এবং গণতন্ত্রের স্বার্থে আওয়ামী লীগ শান্তিপূর্ণভাবে ২০০১ সালে ক্ষমতা হস্তান্তর করে এবং নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আমরা ২০০১ সালের সেই নির্বাচনের কথা ভুলে যাইনি। আরেকটা বিষয়, কাউকে ভিসা প্রত্যাখ্যান করার কারণগুলি প্রকাশ্যে ঘোষণা করা হয় না, তাই আমরা কখনও জানবো না কাকে এবং কী কারণে ভিসা প্রত্যাখ্যান করা হবে। তাই এই ভিসার হুমকিকে যদি অস্ত্র হিসেবে না দেখা হয়, একটি সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা বলা না হয় , আমি জানি না এটি অন্যথায় কীভাবে দেখা যেতে পারে!! গণতন্ত্র, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের জন্য সৎ ইচ্ছা আর একটি সৎ প্রচেষ্টা??!! অতীত ইতিহাস বিশ্লেষণ করে, আমরা দীর্ঘ দীর্ঘ সময়, ঘন্টার পর ঘন্টা তা নিয়ে কথা বলতে পারি!!
কিন্তু আমি লজ্জিত বোধ করি রাজনীতিবিদ এবং মিডিয়া এই ভিসা বিধিনিষেধ নিয়ে নানা ভাবে ব্যবহার করে বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার এবং সম্মানকে ক্ষুণ্ন করছে দেখে। ক্ষমতাসীন দলের ব্যর্থতা বা বর্তমান সরকারকে অগণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য কিছু রাজনীতিবিদ, মিডিয়া এবং ব্যক্তিত্ব এই হুমকি উল্লসিতভাবে প্রচার করছেন। কিছু আওয়ামী লীগ দলীয় সদস্যদের মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাড়িতে ছুটে যেতে দেখে আমিও লজ্জিত হয়েছি, কারণ তাদের জানা ছিল সেখানে নাস্তা বা রাতের খাবার বা গল্প করার জন্য ডাকা হয়নি, ভিসার সীমাবদ্ধতা ব্যাখ্যা করার বা হুমকির কথা বলার জন্য তাদের ডেকে পাঠানো হয়েছিল। মার্কিন রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ চালান না, তিনি তার নিজ দেশের স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করেন। তাই সম্পূর্ণ সম্মানের সাথে রাষ্ট্রদূতের উচিত ছিল নিজে বা তার প্রতিনিধির প্রতিটি দলের সদর দফতরে ব্যাখ্যার জন্য যাওয়া। আমি একজন আওয়ামী লীগ সদস্য যিনি বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন তাকে একটি টিভি টকশোতে বলতে শুনেছি, তিনি বললেন তিনি সেখানে গিয়েছিলেন কারণ তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বলে (যেন সাংস্কৃতিকভাবে আমরা কোনও আমন্ত্রণ অস্বীকার করার মত অভদ্র জাতী না)? বন্ধুত্বপূর্ণ ডিনারের জন্য? তিনি ভালো ভাবেই জানতেন কি আলোচনা করা হবে, তবুও কেন গেলেন সেখানে? মার্কিন রাষ্ট্রদূত গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসেন, মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে। এটাই নিয়ম, যদি আমরা সত্যিই আমাদের নিজেদেরকে বিশ্বাস করি এবং সামান্যতম আত্মসম্মানবোধ করি। আমিও আরো অবাক হই ভিসার হুমকি নিয়ে এত কথা বলা শুনে বা তোলপার দেখে? আমরা যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সবকিছু করি তাহলে আমাদের কেন মাথা ঘামাতে হবে। আমরা কি ভয় পাচ্ছি যে কেউ শাসন/শাসক পরিবর্তনের হুমকি দিচ্ছে? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সুবিধার জন্য তারা যা করতে চায় তাকে তা করতে দিন। আসুন আমরা আমাদের বিষয়গুলি নিজেরাই মোকাবেলা করার সাহস করি।
আমি জানি বাংলাদেশের অর্থনীতি কয়েকটি ধনী দেশের ভালো ইচ্ছার উপর নির্ভর করে কিন্তু এর মানে এই নয় যে আমাদের নতজানু হয়ে ভিক্ষা করতে হবে। স্বাধীনতার জন্য হাজার হাজার মানুষ তাদের জীবন দিয়েছিল, হাজার হাজার নাড়ীর লজ্জা হরন করা হয়েছিল। আমরা সাহসিকতার সাথে লড়াই করেছি স্বাধীনতার অর্জন করে, বুক উচু করে এবং সম্মানের সাথে বাঁচার জন্য। তাই বাংলাদেশকে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে সার্বভৌম এবং সম্মানিত করতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। আজ কেন আমরা দেখতে পাচ্ছি শক্তিশালী দেশগুলো, যারা বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ বলেছিল বা ক্ষুধা, বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ বলেছিল তারা আজ বাংলাদেশে আসছে, বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলছে, সমর্থনের পাশাপাশি হুমকি প্রদান করছে, বাংলাদেশকে তাদের নিজ নিজ ক্ষমতার বৃত্তে আনার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছে? কারন আজ বাংলাদেশ আমাদের প্রধানমন্ত্রীর প্রচেষ্টা ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে ভূ-রাজনৈতিকভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশে পরিণত হয়েছে।? তাই তারা কি ভাবছে, প্রধানমন্ত্রী খুব স্বাধীনচেতা হয়ে গেছেন, অন্যের দ্বারা অযথা হস্তক্ষেপ এবং আধিপত্যের বিরুধে হুমকি বা বাধা হয়ে দাডিয়েছে? প্রধানমন্ত্রী একা বাংলাদেশ কে আরো এগিয়ে নিতে পারবেন না, তার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে তার সম্মানিত দলীয় সদস্য, নেতা ও আমলাদের প্রয়োজন হবে। প্রয়োজন হবে নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের। আসুন আত্মসম্মান বজায় রাখি এবং আমাদের নিজেদের শক্তিতে বিশ্বাস রাখি, আমেরিকান ভিসা পাই বা না পাই।
আমি স্বীকার করি অনেকেই বলবেন বিদেশে বসবাস করে অনেক কিছু বলা যায় কিন্তু ঘরে বসে তা সব সময় সহজ নয়। আমি শ্রদ্ধার সাথে বলতে চাই আমি আপনার সাথে শতভাগে একমত।
Prof Dr Quazi Monirul Islam, MBBS, MPH, FRCOG
Epidemiology Department, Prince of Songkla University, Hat Yai, Thailand
Senior Specialist, International Centre for Migration, Health and Development
Former Senior Specialist (Maternal and Newborn), Liverpool School of Tropical Medicine, UK
Former WHO Director and Country Representative to Thailand and Namibia
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১১:৫৯ এএম, ২৬ মার্চ, ২০২৪
যার গন্তব্য স্থান কোথায় সেটা ঠিক নাই, তিনি রাস্তায় গাড়ি বা রিক্সা যেভাবেই যান না কেন সে শুধু উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়াবেন। কারণ তার তো গন্তব্য ঠিক নাই। সে গুলশান যাবে, না নিউ মার্কেট যাবে কোথায় যাবে জানে না। বিএনপির অবস্থা এখন ঠিক তাই। তারা জানেই না তাদের আন্দোলনের গন্তব্য কোথায়। জানে না বলেই তারা একের পর এক ভুল করে রাজনীতির কানাগলিতে ঢুকে যাচ্ছে। এর একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ হলো হঠাৎ করে তারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা বুঝতে হবে যে, ভারতীয় পণ্য বর্জন সম্ভব কিনা? এখানে একটা কথা উল্লেখ্য করতে চাই যে, এদেশের জনগণ কার কথায় বিশ্বাস করেন? জনগণ বিশ্বাস করেন একমাত্র দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার কথা। কারণ তিনি যেটা বলেন সেটা করেন। তিনি যদি কোন প্রশ্নবোধক ডাকও দেন তাহলেও বহু লোক সেটাকে গ্রহণ করবে। কারণ তার প্রতি তাদের বিশ্বাস আছে। আর যে দলের নেতারা প্রায় সবাই হয় সাজাপ্রাপ্ত অথবা জামিনে আছে তাদের কথায় কোন লোক কানে দিবে না।
দ্বিতীয়ত হচ্ছে যারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের কথা বলছেন তারা তো ভোরে উঠেই আগে ভারতীয় টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করেন। দৈনন্দিন জীবনে যা ব্যবহার করি সবই তো ভারতীয় পণ্য। আমাদের বাজারে কোন জিনিস কিনতে গেলে তো ভারতীয় পণ্যটিই বেশি খুঁজি। তাহলে এখন কি আপনারা পেস্ট দিয়ে ব্রাশ না করে কয়লা ব্যবহার করতে চান? সেটা আপনারা করতে পারেন। কয়লার আজকাল দামও অনেক। আবার ঝামেলা হলো সহজে যাওয়া যায় না। সুতরাং সেটাও আপনাদের জন্য অসুবিধা।
কথায় আছে পাগলে কি না বলে ছাগলে কিনা খায়। সে ধরনের একটা রাজনৈতিক কর্মসূচি আপনারা দিয়ে দিলেন কোন কিছু না ভেবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এর মধ্য দিয়ে আপনারা আরও রাজনৈতিক গহ্বরে ঢুকে গেলেন। এখন ভাবে ঢুকছেন সেখান থেকে আর কোন দিন বের হতে পারবেন কিনা সেটা একটা প্রশ্ন।
আমরা এখন বিশ্বায়নের যুগে বাস করি। এখন বিশ্বের কোন দেশেরই নিজস্ব পণ্য বলে কিছু নেই। আমাদের সবাইকে সবার ওপর নির্ভর করতে হয়। সেখানে আপনারা ভারতকে বর্জন করবেন কি করে। ভারত তো সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশি দেশ। তার আগে আমাদের মনে রাখতে হবে ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা যুদ্ধ করেছি। সে সময় আমাদের ৩০ লাখ সহযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন। এর সাথে আরও ১০ থেকে ১৫ হাজজার ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশের জন্য বাংলাদেশের মাটিতে তাদের রক্ত ঝড়িয়েছেন। আামরা না হয় আমাদের দেশের জন্য রক্ত দিয়েছি। কিন্তু ভারতীয়রা তো জীবন দিয়েছে প্রতিবেশির জন্য। সুতরাং ভারতের সাথে আমাদের কন্ধনটা হলো রক্তের। রক্ত দিয়ে ভারতের জনগণের সাথে বাংলাদেশের জনগণের বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্ব আপনি পণ্য বর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ করবেন কি করে? বাসায় আপনার বউ থেকে শুরু করে বাসার কাজের মেয়ে সবাই ভারতের শাড়ি ব্যবহার করেন। তাহলে আগে তাকে বলবেন যে, আপনারা ভারতীয় পণ্য বর্জন করুন।
রিজভী সাহেব বঙ্গবাজার থেকে একটি চাদর কিনে এনে আগুনে পুড়িয়ে দিয়ে একটা নাটক করেছেন মাত্র। বঙ্গবাজারে আরও অনেক কিছু পাওয়া যায় যেগুলো ভারতের নামে চলে। এটা আমরা জানি। রমজান মাসে ইফতারে আপনি পিয়াজু রাখছেন। এটা বাঙালিদের ইফতারের একটা ঐতিহ্য বলতে পারেন। এটা আমরা খাবই। কিন্তু পেঁয়াজ তো আসে ভারত থেকে। তাহলে এখন তো আপনাকে ইফতারে পিয়াজুও বাদ দিতে হবে। এভাবে আপনি কত বাদ দিবেন। অনেক সময় ভারত থেকে ঝড় আসে। সে সময় তাহলে বাতাসও আপনি নিবেন না। এটা বর্জন করবেন। এটা কি সম্ভব? যদি সম্ভবই না হয় তাহলে পাগলের প্রলাপ বলে কি আর আন্দোলন হয়। পাগল তো তার নিজের ভালোটা বুঝে। আপনাদের ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান দিন শেষে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকেই লাভবান করবে। কারণ আপনাদের আন্দোলনের কোন গন্তব্যই নেই। কোন রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আন্দোলন করলে জনগণের কাছে যেতে পারবেন সেটাও আপনারা বুঝেন না। আপনারা পড়ে আছেন ভারতরে পণ্য বর্জনের ডাক নিয়ে। ফলে জনগণের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু এদিকে চাপা পড়ে যাবে। আর সরকারও মহা আরাশ আয়েশে চলবে। আমি জানি না, কোন উৎস থেকে টাকা পয়সা পেয়ে আপনারা নতুন করে এই স্লোগান শুরু করেছেন। কিন্তু আপনাদের এই ডাকে বেনিফিশিয়ারি আওয়ামী লীগই। কারণ আপনারা এবার বিএনপিকে দলগতভাবে কবরে নামানোর জন্য প্রচেষ্টায় নেমেছেন।
মন্তব্য করুন
একাত্তরের ২৫ মার্চের ভয়ালরাত্রি মর্মদাহিক চেতনা প্রবাহের কালখণ্ড।
২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালোরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর
বর্বরোচিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের এবং আন্তর্জাতিকভাবে
এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত
হয়েছে। এর আগে ২৫ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের দাবি ওঠে বাংলাদেশের
সর্বস্তরের মানুষের কাছ থেকে।
এ কথা সকলের কাছে পরিষ্কার যে, নয়মাসে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হওয়া নিয়ে
কোনো বিতর্ক চলতে পারে না। কারণ রবার্ট পেইন তার Massacre, The Tragedy of
Bangladesh গ্রন্থে ইয়াহিয়া খানের উদ্ধৃতি দিয়েছেন এভাবে- Kill three million of
them and the rest will eat out of our hands. পাকিস্তানি শাসকদের এই সিদ্ধান্তের কারণে
দৈনিক গড়ে ছয় হাজারের বেশি মানুষ খুন হয় সারা বাংলাদেশে। এজন্য ১৯৭১ সালে মার্কিন সিনেটর
এডওয়ার্ড কেনেডি ভারতের শরণার্থী শিবিরগুলো পরিদর্শন করে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে
সরাসরি গণহত্যা চালানোর অভিযোগ আনেন। ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’-এ বাংলাদেশের
হত্যাযজ্ঞকে বিশ শতকের ৫টি ভয়ঙ্কর গণহত্যার অন্যতম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০০২ সালে
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নিরাপত্তা বিষয়ক আর্কাইভ’ তাদের অবমুক্তকৃত
দলিল প্রকাশ করে। সেখানে বাংলাদেশের নারকীয় হত্যালীলাকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে চিহ্নিত
করা হয়। ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন কূটনৈতিকরা সেসময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ব্যাপক গণহত্যার
বর্ণনা দিয়ে ওয়াশিংটনে বার্তা প্রেরণ করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকরা
একাধিক লেখায় এবং বিশ্বখ্যাত পত্রিকা টাইম, নিউইয়র্ক টাইমস প্রভৃতির সম্পাদকীয়তে পাকিস্তানিদের
গণহত্যা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়। উপরন্তু ১৯৭২ সালে পাকিস্তানে গঠিত
‘হামাদুর রহমান কমিশন’ তাদের পরাজয় অনুসন্ধান করতে গিয়ে প্রমাণ পায় বাংলাদেশে পাকিস্তানি
সেনাদের ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ ও নারী নির্যাতনে ঘটনার। আর এই ভয়ঙ্কর গণহত্যায় কেঁপে উঠেছিল
বিশ্ববিবেক। জর্জ হ্যারিসন ও পণ্ডিত রবিশংকর ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ আয়োজন করেন। দার্শনিক
আঁদ্রে মালরোর নেতৃত্বে গঠিত হয় ‘আন্তর্জাতিক ব্রিগেড’। প্যারিস ও লন্ডনে সরব হয়ে ওঠেন
মানবতাবাদী নেতৃবৃন্দ। বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের দ্বারা সংঘটিত গণহত্যা ব্যাপক এবং নিষ্ঠুরতার
দলিল হিসেবে আজও বিশ্বকে নাড়া দেয়।
আসলে বিংশ শতাব্দীতেই ঘটেছে কোটি মানুষের প্রাণসংহার। বিশ্বযুদ্ধ
ও জাতিনিধনের সেই পরিকল্পিত ও ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ ‘জেনোসাইড’ অভিধা পেয়েছে। হিটলারের কনসেনট্রেশন
ক্যাম্প থেকে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিদের বন্দিশিবির সেই জেনোসাইডের নির্মম ইতিহাসের কথা
বলে। অ্যান্থনী মাসকারেনহাস তাঁর ‘দ্যা রেপ অব বাংলাদেশ’ গ্রন্থের ‘গণহত্যা’ অধ্যায়ে
লিখেছেন ‘সারা প্রদেশ জুড়ে হত্যাকাণ্ডের সুব্যবস্থার নমুনার সঙ্গে জেনোসাইড বা গণহত্যা
শব্দটির আভিধানিক সংজ্ঞার হুবহু মিল রয়েছে।’ তিনি প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা এবং পাকিস্তানি
সেনা কর্মকর্তার মুখ থেকে জেনেছিলেন গণহত্যার লক্ষবস্তু ছিল- ক) বাঙালি সৈনিক, পুলিশ,
আনসার প্রভৃতি খ) হিন্দু সম্প্রদায় গ) আওয়ামী লীগের লোক ঘ) কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী
ঙ) অধ্যাপক ও শিক্ষক যাঁরা বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। তবে তিনি এটাও লক্ষ
করেছিলেন যে সেনাবাহিনীর নৃশংসতা ছিল নির্বিচার। নিরপরাধ, সাধারণ মানুষকেও শত্রু হিসেবে
গণ্য করেছিল তারা। তাছাড়া তাদের গণহত্যা ছিল ‘শোধন প্রক্রিয়া’ যাকে শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক
সমস্যার সমাধান বলে মনে করত। সেই সঙ্গে এই বর্বরোচিত উপায়ে প্রদেশটিকে উপনিবেশে পরিণত
করাও ছিল এর অন্যতম উদ্দেশ্য। পাকিস্তানিদের ভাষ্য ছিল- ‘বিচ্ছিন্নতার হুমকি থেকে রক্ষা
করার উদ্দেশ্যে পূর্ব পাকিস্তানকে চিরদিনের জন্য পবিত্র করতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সেজন্য
যদি বিশ লাখ লোককে হত্যা করতে হয় এবং প্রদেশটিকে তিরিশ বছরের জন্য উপনিবেশ হিসেবে শাসন
করতে হয়, তবুও।’ শাসকদের এ ধরনের মানসিকতার সঙ্গে পশ্চিমাংশের মানুষের ঐক্য ছিল। আর
এজন্যই ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ বলেছিলেন, ‘পশ্চিম পাকিস্তানের
জনগণ হলেন গণহত্যার নীরব দর্শক।’
বাংলাদেশে ১৯৭১-এ পাকিস্তানি শাসক ও তাদের দোসর আলবদর, আলশামস ও রাজাকার বাহিনী পরিকল্পিতভাবে হত্যাযজ্ঞ, ব্যাপক ধ্বংসলীলা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, হিন্দু জনগোষ্ঠী নিধন ও বিতাড়ন, রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের নির্যাতন, মুক্তিযোদ্ধাদের নির্বিচারে হত্যা করেছিল। বাঙালি জাতির প্রতি বিদ্বেষ ও ঘৃণা থেকে তাদের ২৫ মার্চের ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু হয়েছিল। সুপরিকল্পিত গণহত্যা ও জাতিগত নিধনযজ্ঞ জেনোসাইড হিসেবে গণ্য হয়েছে। হিটলারের নাজি বাহিনী ইহুদি ও রাশিয়ার যুদ্ধবন্দিদের সঙ্গে যে বর্বরতা দেখিয়েছিল ঠিক একইরকম আচরণ ছিল পাকিস্তানিদের। নিষ্ঠুরতা, পাশবিকতা এবং সাম্প্রদায়িক দৃষ্টি ছিল ঠিক ইহুদিদের প্রতি নাজিদের মতো। নাজিরা ইহুদিদের নিচুজাতের মানুষ হিসেবে বিবেচনা করত এবং তাদের নিধনযজ্ঞের মধ্য দিয়ে ইউরোপের সমস্যা সমাধান করতে চেয়েছিল। অনুরূপভাবে পাকিস্তানি সেনা অফিসারদের মনোভাব ছিল Bengalees have been cleansed and selected properly for at least one generation. নাজিরা প্রথমে তরুণ, যুবক এবং সমর্থ পুরুষদের হত্যা দিয়ে নিধনযজ্ঞ শুরু করলেও শিশু, বৃদ্ধ, নারীদের নির্বিচারে নিধন করতে থাকে ১৯৪১ সালে বলকান অঞ্চল থেকে। যুদ্ধবন্দি হত্যাসহ অন্যান্য নিষ্ঠুরতায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছায় তারা। তাদের অত্যাচারের সঙ্গে পাকিস্তানের সেনাদের আরো মিল রয়েছে হিন্দু নিধনের ঘটনায়। একাত্তরে হিন্দুদের প্রতি শাসকদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সুচিন্তিত ও নির্মম।
কারণ তারা ধর্মভিত্তিক হত্যাকাণ্ডকে বৈধ করে তুলেছিল। তারা মনে করত পাকিস্তানের জন্ম হয়েছে এই উপমহাদেশের হিন্দু আধিপত্যের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র আবাসভূমির জন্য মুসলমানদের বিদ্রোহের কারণে। এই হিন্দু বিদ্বেষ মনোভাব বছরের পর বছর লালিত হয়ে এসেছে। এজন্য জেনোসাইডে হিন্দু নিশ্চিহ্ন অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। জনৈক গবেষকের ভাষায়- ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমণের পর গোটা দেশে কেবল একটি উদীয়মান ও অস্তগামী রাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধ হয়নি একাধিক জাতিগত দ্বন্দ্বও শুরু হয়ে যায়। এতে উভয়পক্ষের নির্যাতন শুরু হয় তবে এর সূত্রপাত ঘটে ২৫শে মার্চের আক্রমণের পর। পাকিস্তানি সরকারের পরিকল্পনার শিকার হয় দুই জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি। এর প্রথম শিকার হয় হিন্দু সম্প্রদায়, যাদের কেবল নির্যাতন করা হয়নি বরং তাকে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও পারিবারিক ভিত্তি ক্ষতিগ্রস্ত এমনকি ধ্বংসও করা হয়। হিন্দুরা তাদের হৃত অবস্থান কোনদিন উদ্ধার করতে পারেনি বাংলাদেশেও। সম্প্রদায়গতভাবে তারাই ১৯৭১ সালের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী।’ এমনকি ধর্ষণকেও তারা বৈধ বলে মনে করত। চীনের নানকিং-এ জাপানি সেনা কর্তৃক ধর্ষণ, রাশিয়াতে নাৎসিদের বলাৎকার এবং আর্মেনিয়া ও বসনিয়ার নারী নির্যাতনের সাযুজ্য রয়েছে বাঙালি নারী ধর্ষণের ঘটনায়। পাকিস্তানিদের বাঙালি নারী ধর্ষণের লক্ষ ছিল পরিবার, সম্প্রদায় ও জাতিকে মানসিকভাবে আহত ও পঙ্গু করা। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে গেরিলা যুদ্ধে পরাজিত ও বাঙালি জাতিকে বশীভূত করতে না পারার যাতনা তারা মিটাত নারী ধর্ষণ করে। এটা ছিল ভয়ঙ্কর মনোবিকারজাত। সার্বরা মুসলিম নারীদের ধর্ষণ করেছিল ইথনিক ক্লিনজিং-এর উপায় হিসেবে। দেশ-বিদেশী গবেষক ও সাংবাদিকদের রচনায় যুদ্ধকালীন এসব নির্মম বাস্তবতাই উন্মোচিত হয়েছে।
বিশ শতকের জেনোসাইডের তালিকায় পাকিস্তান একটি অপরাধী রাষ্ট্রের
নাম। কারণ লাখো বাঙালির প্রাণের বিনিময়ে তারা সেদিন তাদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে
চেয়েছিল। অথচ বাঙালি জাতিগোষ্ঠী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগে পশ্চিম পাকিস্তানের ওপর
কোনোরূপ অন্যায় পীড়ন করেনি। তবু বাঙালির প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের বর্বর ও
নৃশংস আচরণ বিশ্বের কাছে তাদের ঘৃণ্য মানসিকতাকে প্রকাশ করে দিয়েছিল। পাকিস্তানিদের
আক্রমণ ও হত্যাকাণ্ড ছিল ফ্যাসিস্টদের মতো। তাই তারা পোষণ করেছিল জাতি বা ধর্ম সম্প্রদায়
বিদ্বেষ; হত্যা করেছিল নিরীহ নিরপরাধ জনসাধারণকে। সেই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড আমাদের
২৫ মার্চের দাবিকে আরো বেশি তাৎপর্যবহ করে তুলেছে। ২৫ মার্চ ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’
হবে পৃথিবীর মানব জনগোষ্ঠীকে নির্মম নিধনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য উচ্চকণ্ঠ এবং
হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের একমাত্র ভরসার দিন। আশা করা যায় এই
দিবসের চেতনা গণহত্যার বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করবে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
যার গন্তব্য স্থান কোথায় সেটা ঠিক নাই, তিনি রাস্তায় গাড়ি বা রিক্সা যেভাবেই যান না কেন সে শুধু উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়াবেন। কারণ তার তো গন্তব্য ঠিক নাই। সে গুলশান যাবে, না নিউ মার্কেট যাবে কোথায় যাবে জানে না। বিএনপির অবস্থা এখন ঠিক তাই। তারা জানেই না তাদের আন্দোলনের গন্তব্য কোথায়। জানে না বলেই তারা একের পর এক ভুল করে রাজনীতির কানাগলিতে ঢুকে যাচ্ছে। এর একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ হলো হঠাৎ করে তারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা বুঝতে হবে যে, ভারতীয় পণ্য বর্জন সম্ভব কিনা? এখানে একটা কথা উল্লেখ্য করতে চাই যে, এদেশের জনগণ কার কথায় বিশ্বাস করেন? জনগণ বিশ্বাস করেন একমাত্র দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার কথা। কারণ তিনি যেটা বলেন সেটা করেন। তিনি যদি কোন প্রশ্নবোধক ডাকও দেন তাহলেও বহু লোক সেটাকে গ্রহণ করবে। কারণ তার প্রতি তাদের বিশ্বাস আছে। আর যে দলের নেতারা প্রায় সবাই হয় সাজাপ্রাপ্ত অথবা জামিনে আছে তাদের কথায় কোন লোক কানে দিবে না।
একাত্তরের ২৫ মার্চের ভয়ালরাত্রি মর্মদাহিক চেতনা প্রবাহের কালখণ্ড। ২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালোরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। এর আগে ২৫ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের দাবি ওঠে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছ থেকে।
বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করেছিলেন যে, দেশের উন্নয়নের জন্য চিকিৎসা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি সবচেয়ে জরুরি। চিকিৎসার যদি উন্নতি না হয়, চিকিৎসা ব্যবস্থার যদি উন্নতি না হয়, মানুষ যদি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী না হন তাহলে দেশ গড়া সম্ভব নয়। সেজন্য বঙ্গবন্ধু একটা সুন্দর নীতিমালা পরিকল্পনা গড়ে তোলেন। ওই সময়ই সেটা ছিল আধুনিক যুগোপযোগী এবং বিজ্ঞানসম্মত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল বঙ্গবন্ধু যে নীতিমালা তখন চালু করে গিয়েছেন সেই পদ্ধতিতে আজকের দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা একে এক করে বাস্তবায়ন করে চলেছেন। যার মূল ভিত্তি বঙ্গবন্ধু স্থাপন করেছেন।
সাম্প্রতি ‘স্বাধীনতা সুফল পেতে চাই চিকিৎসা বিজ্ঞান গবেষণা জাতির পিতার হাতে সূচনা, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা দিলেন দিক নির্দেশনা’ শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিপ্রেক্ষিতের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ বোরহান কবীর। বৈঠকে আলোচক হিসেবে অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন যে আলোচনা করেছেন তার চুম্বক অংশ প্রকাশ করা হলো।