প্রতি
বছর ঐতিহাসিক ৭ জুন তথা
‘ছয় দফা দিবস’ আমরা
যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করি। এ
বছর ৭ জুন, তথা
ছয় দফা দিবসের ৫৭তম
বার্ষিকী। বঙ্গবন্ধুর নিঃশর্ত মুক্তি ও ছয় দফা
দাবির বাস্তবায়নে ১৯৬৬-এর ৭
জুনের কর্মসূচি পালনে মনু মিয়া, মুজিবুল্লাহসহ
অসংখ্য শহীদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল ঐতিহাসিক ছয় দফা। ছয়
দফা ও ৭ জুন
অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে বিধায় জাতীয়
মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম। পরবর্তীতে ’৬৯-এর গণ
আন্দোলনের সূচনালগ্নে এ ছয় দফা
দাবি দাঁড়ি-কমা-সেমিকোলনসমেত ১১
দফা কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রবল গণ
আন্দোলন-গণ অভ্যুত্থানের মধ্য
দিয়ে তথাকথিত ‘সংখ্যা-সাম্য’ বাতিল করে ‘এক মাথা
এক ভোট’ দাবি ও
জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনের হিসসা আদায় করে, জাতির
জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের
নেতৃত্বে ’৭০-এর ঐতিহাসিক
নির্বাচনে জনগণের ম্যান্ডেটের মাধ্যমে রাজনৈতিক বৈধতা নিয়ে এক সাগর
রক্তের বিনিময়ে আমরা এক দফা
তথা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। বঙ্গবন্ধু বিচক্ষণ ও দূরদর্শী নেতা
ছিলেন। তাঁর হৃদয়ের গভীরে
সততই প্রবহমান ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা ছাড়া ভিন্ন কোনো
চিন্তা তাঁর ছিল না।
জেল-জুলম-অত্যাচার-নির্যাতন
সহ্য করে পরাধীনতার নাগপাশ
থেকে বাংলাদেশকে তিনি স্বাধীন করেছেন।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন গণতান্ত্রিক-অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রবক্তা। তিনি চেয়েছিলেন বাংলাদেশ
হবে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের অভিপ্রায় থেকেই তিনি জাতির উদ্দেশে
ছয় দফা কর্মসূচি প্রদান
করেছিলেন। যে কারণে ছয়
দফাকে বলা হয় ‘জাতির
মুক্তিসনদ’।
স্বৈরশাসক
আইয়ুব খান এ দেশের
গণতান্ত্রিক শক্তি নিশ্চিহ্ন করে সংখ্যাগুরু বাঙালি
জাতিকে গোলামির শৃঙ্খলে শৃঙ্খলিত করার জন্য ষড়যন্ত্র
করেছিল। এর বিপরীতে বাংলার
প্রাণপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিব ’৬৬-এর ৫
ফেব্রুয়ারি লাহোরে সম্মিলিত বিরোধী দল আহূত কনভেনশনে
সাবজেক্ট কমিটির সভায় ‘ছয় দফা’ উত্থাপন
করে তা বিষয়সূচিতে অন্তর্ভুক্তির
প্রস্তাব করেন। কিন্তু সভার সভাপতি চৌধুরী
মোহাম্মদ আলী ‘ছয় দফা
দাবি’ অন্তর্ভুক্ত করতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন
করলে ১১ ফেব্রুয়ারি দেশে
ফিরে ঢাকা বিমানবন্দরে সংবাদ
সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু এ বিষয়ে বিস্তারিত
তুলে ধরেন ও ২০
ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটি ‘ছয় দফা’ দলীয়
কর্মসূচি হিসেবে গ্রহণ করে। ‘ছয় দফা’ দলীয়
কর্মসূচি হিসেবে গৃহীত হওয়ার পর জনমত সংগঠিত
করতে বঙ্গবন্ধু তাঁর সফরসঙ্গীসহ ’৬৬-এর ২৫ ফেব্রুয়ারি
চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানের জনসভায় ‘ছয় দফা’কে
‘নূতন দিগন্তের নূতন মুক্তিসনদ’ হিসেবে
উল্লেখ করে চট্টগ্রামবাসীর উদ্দেশে
বলেন, ‘একদিন সমগ্র পাক-ভারতের মধ্যে
ব্রিটিশ সরকারের জবরদস্ত শাসনব্যবস্থাকে উপেক্ষা করে এই চট্টগ্রামের
জালালাবাদ পাহাড়েই বীর চট্টলার বীর
সন্তানরা স্বাধীনতার পতাকা উড্ডীন করেছিলেন। আমি চাই যে,
পূর্ব পাকিস্তানের বঞ্চিত মানুষের জন্য দাবি আদায়ে
সংগ্রামী পতাকাও চট্টগ্রামবাসীরা চট্টগ্রামেই প্রথম উড্ডীন করুন।’ চট্টগ্রামের জনসভার পর দলের কাউন্সিল
সামনে রেখে ‘ছয় দফা’র
যৌক্তিকতা তুলে ধরতে তিনি
একের পর এক জনসভা
করেন। এরই অংশ হিসেবে
২৭ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালীর মাইজদী, বেগমগঞ্জ, ১০ মার্চ ময়মনসিংহের
মুক্তাগাছা, ১১ মার্চ ময়মনসিংহ
সদর ও ১৪ মার্চ
সিলেটে অনুষ্ঠিত জনসভায় জনতার দরবারে তাঁর বক্তব্য পেশ
করেন।
‘ছয়
দফা’ প্রচার ও প্রকাশের জন্য
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ছয় সদস্যবিশিষ্ট ‘উপকমিটি’
গঠন এবং তাঁরই নামে
‘আমাদের বাঁচার দাবি : ছয় দফা কর্মসূচি’
শীর্ষক একটি পুস্তিকা মুদ্রিত
ও প্রকাশিত হয়। একই বছরের
১৮, ১৯ ও ২০
মার্চ ছিল আওয়ামী লীগের
কাউন্সিল অধিবেশন। এদিন কাউন্সিল সভায়
পুস্তিকাটি বিলি করা হয়।
দলের সিনিয়র সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের
সভাপতিত্বে সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা
আমি তোমায় ভালোবাসি’ গীত হয়। সেদিনের
কাউন্সিল সভায় আগত ১
হাজার ৪৪৩ জন কাউন্সিলর
বঙ্গবন্ধুকে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি, তাজউদ্দীন আহমদকে সাধারণ সম্পাদক ও মিজানুর রহমান
চৌধুরীকে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচিত করেন।
‘ছয় দফা’র ভিত্তিতে
সংশোধিত দলীয় গঠনতন্ত্রের একটি
খসড়াও অনুমোদন করা হয়। ‘ছয়
দফা’ কর্মসূচি প্রদানের সঙ্গে সঙ্গে ‘ছয় দফা’র
ভিত্তিতে দলীয় গঠনতন্ত্র এবং
নেতৃত্ব নির্বাচনে যে পরিবর্তন সাধিত
হয় তা পরবর্তীকালে ‘ছয়
দফা’র চূড়ান্ত পরিণতি
এক দফা তথা স্বাধীন
ও সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠনের ইঙ্গিতবাহী ছিল। ‘ছয় দফা’ কর্মসূচি
দলীয় কর্মীদের মধ্যে বিশেষ করে আমাদের মতো
অপেক্ষাকৃত তরুণ ছাত্রলীগ নেতৃত্বের
মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে ‘ছয়
দফা’ এতই জনপ্রিয় হয়ে
উঠেছিল যে, বাংলার প্রতিটি
ঘরে এ পুস্তিকা সযত্নে
রক্ষিত হয়। ‘ছয় দফা’
সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু বলতেন, ‘সাঁকো দিলাম, স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতায় উন্নীত
হওয়ার জন্য।’ বস্তুত, ‘ছয় দফা’ ছিল
স্বাধীনতা-সংগ্রামের বীজমন্ত্র তথা অঙ্কুর। কাউন্সিল
অধিবেশনের শেষ দিন অর্থাৎ
২০ মার্চ চরম প্রতিকূল আবহাওয়ার
মধ্যে ঢাকার পল্টন ময়দানের জনসভায় দলীয় নেতা-কর্মী
ও দেশবাসীর উদ্দেশে উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘চরম ত্যাগস্বীকারের এই
বাণী লয়ে আপনারা দিকে
দিকে ছড়িয়ে পড়ুন। পূর্ব পাকিস্তানের প্রত্যন্ত প্রদেশের প্রতিটি মানুষকে জানিয়ে দিন, দেশের জন্য,
দশের জন্য, অনাগতকালের ভাবী বংশধরদের জন্য
সবকিছু জেনেশুনেই আওয়ামী লীগের নেতা ও কর্মীরা
এবার সর্বস্ব পণ করে নিয়মতান্ত্রিক
পথে ছয় দফার ভিত্তিতে
দেশব্যাপী আন্দোলনের জন্য এগিয়ে আসছে।’
আওয়ামী
লীগের এ কাউন্সিল অধিবেশনটি
ছিল বাঙালির ইতিহাসে বাঁক পরিবর্তন; যা
’৬৯-এর মহান গণ
অভ্যুত্থান, ’৭০-এর ঐতিহাসিক
নির্বাচন ও ’৭১-এর
মহত্তর মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি তৈরি করেছিল। কাউন্সিল
সভার সমাপনী জনসভায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘ছয় দফার প্রশ্নে
কোনো আপস নাই। রাজনীতিতেও
কোনো সংক্ষিপ্ত পথ নাই। নেতৃবৃন্দের
ঐক্যের মধ্যেও আওয়ামী লীগ আর আস্থাশীল
নয়। নির্দিষ্ট আদর্শ ও সেই আদর্শ
বাস্তবায়নের জন্য নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের
ঐক্যেই আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে।
আওয়ামী লীগ নেতার দল
নয়- এ প্রতিষ্ঠান কর্মীদের
প্রতিষ্ঠান। শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের
মাধ্যমে এই ছয় দফা
আদায় করতে হবে। কোনো
হুমকিই ছয় দফা আন্দোলনকে
প্রতিরোধ করতে পারবে না।
ছয় দফা হচ্ছে বাঙালির
মুক্তিসনদ।’ স্বভাবসুলভ কণ্ঠে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের, ‘যদি তোর ডাক
শুনে কেউ না আসে,
তবে একলা চলো রে’
উদ্ধৃত করে বলেছিলেন, ‘এই
আন্দোলনে রাজপথে যদি আমাদের একলা
চলতে হয় চলব। ভবিষ্যৎ
ইতিহাস প্রমাণ করবে বাঙালির মুক্তির
জন্য এটাই সঠিক পথ।’
সফলভাবে সমাপ্ত আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনের পর বঙ্গবন্ধু সারা
দেশ চষে বেড়ান। ২৬
মার্চ সন্দ্বীপ এবং ২৭ মার্চ
সাতকানিয়ার বিশাল জনসভায় ‘ছয় দফা’ কর্মসূচি
ব্যাখ্যা করে বক্তৃতা করেন।
এরপর ৭ এপ্রিল উত্তরাঞ্চল
সফরে পাবনা ও নগরবাড়ীর জনসমাবেশে
বক্তৃতা করেন। এরপর এপ্রিলের ৮
বগুড়া, ৯ রংপুর, ১০
দিনাজপুর, ১১ রাজশাহী, ১৪
ফরিদপুর, ১৫ কুষ্টিয়া, ১৬
যশোর এবং ১৭ তারিখ
খুলনায় বিশাল সব জনসভায় ছয়
দফার বিস্তারিত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণসহ বক্তৃতা করেন। এভাবে সারা দেশে ৩৫
দিনে মোট ৩২টি জনসভায়
তিনি বক্তৃতা করেন। বিপুলসংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত জনসভায় প্রদত্ত বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতায় ‘ছয় দফা’র
সপক্ষে জনমত প্রবল হয়ে
ওঠে। ফলে বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবসহ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের ওপর
নেমে আসে স্বৈরশাসক আইয়ুবের
নির্মম গ্রেফতার-নির্যাতন। প্রতি জেলায় অনুষ্ঠিত সভায় প্রদত্ত বক্তৃতার
প্রতিপাদ্য বিষয়বস্তুর ওপর ভিত্তি করে
বঙ্গবন্ধুকে প্রতি জেলা থেকে জারিকৃত
ওয়ারেন্ট বলে লাগাতার গ্রেফতার
প্রক্রিয়া চলতে থাকে। ১৭
এপ্রিল রাত ৪টায় খুলনার
জনসভায় ভাষণদান শেষে ঢাকা ফেরার
পথে রমনা থানার জারিকৃত
ওয়ারেন্ট অনুযায়ী পাকিস্তান দেশরক্ষা আইনের ৪৭(৫) ধারাবলে
পুলিশ বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে। যশোর মহকুমা
হাকিমের এজলাস থেকে তিনি জামিন
পান। ওই দিনই রাত
৯টায় সিলেটে গ্রেফতার, পুনরায় জামিনের আবেদন এবং ২৩ এপ্রিল
জামিন লাভ। ২৪ এপ্রিল
ময়মনসিংহে গ্রেফতার, ২৫ এপ্রিল জামিন।
‘ছয় দফা’ প্রচারকালে তিন
মাসে বঙ্গবন্ধুকে সর্বমোট আটবার গ্রেফতার করা হয়। এভাবেই
আইয়ুবের দমননীতি অব্যাহত থাকে। একই বছরের ৮
মে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় ঐতিহাসিক ‘মে দিবস’ স্মরণে
শ্রমিক-জনতার এক বিরাট সমাবেশে
শ্রমিকরা বঙ্গবন্ধুকে বিপুল সংবর্ধনা জ্ঞাপন করে। ভাষণদান শেষে
রাত ১টায় তিনি যখন
বাসায় ফেরেন তখন পাকিস্তান দেশরক্ষা
আইনের ৩২(১) ‘ক’
ধারাবলে তাঁকে এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ
রাজনৈতিক সহকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়। ‘ছয়
দফা’ দেওয়াকে অপরাধ গণ্য করে স্বৈরশাসক
আইয়ুব বঙ্গবন্ধুকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ হিসেবে অভিহিত করে দেশরক্ষা আইনের
আওতায় আওয়ামী লীগের ওপর অব্যাহত গ্রেফতার-নির্যাতন চালায়। সামরিক সরকারের এহেন কার্যকলাপের বিরুদ্ধে
আওয়ামী লীগের আহ্বানে ১৩ মে সমগ্র
প্রদেশে ‘প্রতিবাদ দিবস’ পালিত হয়। প্রতিবাদ দিবসের
জনসভায় ‘ছয় দফা’র
প্রতি গণমানুষের বিপুল সমর্থন প্রকাশ পায়। হাজার হাজার
শ্রমিক এদিন স্বতঃস্ফূর্তভাবেই হরতাল পালন
করে এবং পল্টনে অনুষ্ঠিত
জনসভায় উপস্থিত হয়ে সরকারের দমননীতির
তীব্র প্রতিবাদ করে। দলের নবনির্বাচিত
সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদকে গ্রেফতার করা হলে সাংগঠনিক
সম্পাদক মিজান চৌধুরী অস্থায়ী সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
স্বাধিকারের
দাবিতে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবসহ সব রাজবন্দির মুক্তি
ও নেতৃবন্দের গ্রেফতার-নির্যাতনের প্রতিবাদে ’৬৬-এর ২০
মে আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে ‘৭ জুন’ সর্বব্যাপী
হরতাল আহ্বান করা হয়। বাংলার
গণমানুষ ৭ জুন আওয়ামী
লীগের নেতৃত্বে পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সর্বব্যাপী হরতাল পালন করেছিল। ৭
জুনের হরতালে সমগ্র পূর্ব বাংলা যেন অগ্নিগর্ভ। বিক্ষুব্ধ
মানুষ স্বাধিকার ও বঙ্গবন্ধুসহ সব
রাজবন্দির মুক্তি দাবিতে সোচ্চার হয়েছিল। আমি তখন ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ছাত্রলীগের সার্বক্ষণিক কর্মী, ইকবাল হল (বর্তমানে শহীদ
সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ছাত্র
সংসদের নির্বাচিত ভিপি। সর্বজনাব শেখ ফজলুল হক
মণি, সিরাজুল আলম খান, আবদুর
রাজ্জাক, আমির হোসেন আমু,
সৈয়দ মাজহারুল হক বাকী, আবদুর
রউফ, খালেদ মোহাম্মদ আলী, নূরে আলম
সিদ্দিকীসহ আরও অনেকে- আমরা
সেদিন হরতাল কর্মসূচি পালনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করি। সেদিনের হরতাল
কর্মসূচিতে ধর্মঘটী ছাত্র-জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য সরকারের
নির্দেশে পুলিশ বাহিনী নির্বিচার গুলিবর্ষণ করে। পুলিশের গুলিতে
তেজগাঁওয়ে শ্রমিক মনু মিয়া, আদমজীতে
মুজিবুল্লাহসহ ১১ জন শহীদ
হন এবং প্রায় ৮০০
লোককে গ্রেফতার করা হয়। তেজগাঁও
শিল্পাঞ্চলে হরতাল সফল করার দায়িত্বে
ছিলেন ছাত্রনেতা খালেদ মোহাম্মদ আলী ও নূরে
আলম সিদ্দিকী। তাঁরা সেখানে বক্তৃতা করেন। প্রকৃতপক্ষে ৭ জুন ছিল
স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতার পথের
আরম্ভস্থল তথা যাত্রাবিন্দু। আর
আমরা যারা ছাত্রলীগের কর্মী
ছিলাম, আমাদের স্বাধীনতার চেতনার ভিত্তিও স্থাপিত হয়েছিল এই দিনটিতেই।
১৯৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারির
মহান ভাষা আন্দোলন থেকে
শুরু করে ’৬২-এর
১৭ সেপ্টেম্বরের ‘শিক্ষা আন্দোলন’; ’৬৬-এর ৭
জুন ‘ছয় দফা আন্দোলন’;
’৬৯-এর ১৭ থেকে
২৪ জানুয়রির ‘গণ আন্দোলন-গণ
অভ্যুত্থান’; ৯ ফেব্রুয়ারি ১১-দফা বাস্তবায়ন ও
বঙ্গবন্ধুর মুক্তি দাবিতে ‘শপথ দিবস’ পালন;
স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের পদত্যাগ, আগরতলা মামলা প্রত্যাহার ও বঙ্গবন্ধুসহ সব
রাজবন্দির নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে ১৫, ১৬, ১৭,
১৮, ১৯, ২০ ও
২১ ফেব্রুয়ারি লাগাতার সংগ্রাম শেষে ২৪ ঘণ্টার
আলটিমেটাম প্রদান; এরপর ২২ ফেব্রুয়ারি
সব রাজবন্দির মুক্তির পর বঙ্গবন্ধুর মুক্তিলাভ
এবং ২৩ ফেব্রুয়ারি ঐতিহাসিক
রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ১০ লক্ষাধিক মানুষের
উপস্থিতিতে ‘মুক্তমানব শেখ মুজিব’কে
‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি প্রদান। পঞ্চাশের দশক থেকে বাঙালির
জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের লক্ষ্যে গড়ে তোলা সব
আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্রলীগ। এসব মহিমান্বিত সংগ্রামের
মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগ অর্জন
করেছে গণতান্ত্রিক তথা নিয়মতান্ত্রিক আচরণ
ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং জয় করেছে
বাংলার মানুষের হৃদয় আর সৃষ্টি
করেছে ইতিহাস। অতীতে আমাদের সময়ে ছাত্রলীগের সম্মেলন
গঠনতন্ত্র মোতাবেক প্রতি বছর ২১ মার্চের
মধ্যে সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা ছিল।
তা না হলে তিন
সদস্যবিশিষ্ট কমিটির কাছে নেতৃত্ব তুলে
দিতে হতো। এটাই ছিল
বিধান এবং গঠনতান্ত্রিক বিধিবিধানের
অন্যথা হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল
না। আজ অতীতের সেই
সোনালি দিনগুলোর দিকে যখন ফিরে
তাকাই স্মৃতির পাতায় দেখি, সেদিনের ছাত্রলীগ ছিল বাংলার গণমানুষের
অধিকার আদায় তথা ‘মুজিবাদর্শ’
প্রতিষ্ঠার ভ্যানগার্ড। মূলত বঙ্গবন্ধু মুজিবের
নির্দেশে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের নেতৃত্বই
সেদিন সারা দেশে ৭
জুনের কর্মসূচি সফলভাবে পালন করে স্বাধিকারের
পথে এক অনন্য নজির
স্থাপন করে। আর বাংলার
মেহনতি মানুষ আত্মত্যাগের অপার মহিমার দৃষ্টান্ত
স্থাপন করে পাকিস্তান শাসক
গোষ্ঠীসহ সমগ্র বিশ্বকে জানিয়ে দেয় যে, বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিব প্রদত্ত ‘ছয় দফা’ই
হচ্ছে বাঙালি জাতির মুক্তিসনদ।
আজ ৭ জুন অনেক
স্মৃতি আমার মানসপটে ভেসে
ওঠে। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি
আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। বঙ্গবন্ধুর
স্নেহে আমার জীবন ধন্য।
৭ জুন শহীদের রক্তের
সিঁড়ি বেয়ে জাতির পিতার
সংগ্রামী চেতনার ভিত্তিতে, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে
আজ আমরা উন্নয়নের নবদিগন্তের
সূচনা করেছি। বর্তমান সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন
যুদ্ধ ও অনাকাক্সিক্ষত বিভিন্ন
রকম বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। দেশের
অর্থনীতিতেও তার প্রভাব পড়েছে।
তবে আমি মনে করি
এটি সাময়িক। ধৈর্যসহকারে বাস্তবভিত্তিক কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করলে এ সংকট
উত্তরণ সম্ভব। বর্তমানে বহুল আলোচিত বিষয়
‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর সফল বাস্তবায়নের
পথ ধরেই এবারের লক্ষ্য
‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’
কর্মসূচিতে কী আছে এবং
কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে তা
নিয়ে সুধীসমাজে আলোচনা হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,
‘২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ।’
‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এর রূপরেখা ঘোষণা
করে তিনি এর চারটি
স্তম্ভের কথা বলেছেন- (১)
স্মার্ট সিটিজেন; (২) স্মার্ট গভর্নমেন্ট;
(৩) স্মার্ট ইকোনমি এবং (৪) স্মার্ট
সোসাইটি। প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করে আরও বলেছেন,
‘২০৪১ সালের মধ্যে সারা দেশের সর্বস্তরের
জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী
লীগের নেতৃত্বে একটি সাশ্রয়ী, টেকসই,
বুদ্ধিদীপ্ত, জ্ঞানভিত্তিক ও উদ্ভাবনী বাংলাদেশ
গড়ে উঠবে।’ এসব কর্মসূচি সফলভাবে
বাস্তবায়ন করতে হলে ‘স্মার্ট
সিটি ও স্মার্ট ভিলেজ
বাস্তবায়নের জন্য স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা,
স্মার্ট ট্রান্সপোর্টেশন, স্মার্ট ইউটিলিটিজ, নগর প্রশাসন, জননিরাপত্তা,
কৃষি, ইন্টারনেট কানেকটিভিটি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে
তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর করতে হবে।’ এজন্য
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবটিক্স, মাইক্রোচিপ ডিজাইনিং অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং ও সাইবার সিকিউরিটি-
এ চারটি প্রযুক্তিতে আমাদের মনোযোগী হতে হবে। আওয়ামী
লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনে
দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়তে চারটি ভিত্তির
কথা পুনরুল্লেখ করে বলেছেন, ‘বাংলাদেশের
জনশক্তিকে স্মার্ট হতে হবে, প্রতিটি
কাজ অনলাইনে করতে শিখতে হবে,
ইকোনমি হবে ই-ইকোনমি
যাতে সম্পূর্ণ অর্থ ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল
ডিভাইসে করতে হবে।’
আমি
বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা উদ্দীপনামূলক যে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মনোভাব
নিয়ে উদয়াস্ত কাজ করছেন, তাঁর
নির্দেশমালা যদি আমরা অক্ষরে
অক্ষরে পালন করি, তবে
ডিজিটাল বাংলাদেশের মতো ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এর কর্মসূচিও সফলভাবে
বাস্তবায়ন করতে পারব। আসলে
তিনি তাঁর পিতার মতোই
অন্তর থেকে যা বিশ্বাস
করেন, তা-ই বলেন
এবং বাস্তবায়নের আপ্রাণ চেষ্টা করেন। বঙ্গবন্ধু দুটি লক্ষ্য নিয়ে
রাজনীতি করেছেন। একটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা,
আরেকটি অর্থনৈতিক মুক্তি। তিনি আমাদের স্বাধীনতা
দিয়েছেন কিন্তু অর্থনৈতিক মুক্তি দিয়ে যেতে পারেননি।
সেই কাজটি দক্ষতা, সততা ও নিষ্ঠার
সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করে
চলেছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে
উত্তরণের স্বপ্ন নিয়ে নবপ্রজন্ম আজ
প্রগতির পথে ধাবমান। প্রকৃতপক্ষে
জাতীয় অগ্রগতির এ অভিযাত্রার প্রারম্ভ
বিন্দু ছিল ঐতিহাসিক ৭
জুন। আর তাই স্বাধিকার,
স্বাধীনতা ও আর্থসামাজিক উন্নয়ন
চেতনার প্রারম্ভ বিন্দু ঐতিহাসিক ৭ জুনের শহীদদের
অমর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন আমার পবিত্র কর্তব্য
বলে মনে করি।
লেখক : আওয়ামী লীগ নেতা; সংসদ সদস্য; সভাপতি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি
মন্তব্য করুন
পটভূমি
সিএনএন
এর সাংবাদিক ট্যাপার, জন বোল্টনকে জিজ্ঞাসা
করেছিল, "কোন দেশে অভ্যুত্থানের
চেষ্টা করার জন্য একজনকে
কি মেধাবী হতে হবে না?"
বোল্টন উত্তর দিয়েছিল: "আমি এমন একজন
যে ভিন্ন দেশে, এখানে নয়, অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা
করতে সাহায্য করেছি। তাই আমি বলতে
পারি অভ্যুত্থান/শাসন পরিবর্তনের জন্য অনেক পরিকল্পনা
আর কাজ করতে হয়”।
সুতরাং
এটি কেবল কথার কথা
বা ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের,
যাকে তারা পছন্দ করে
না বা যারা তাদের
স্বার্থের বিরুদ্ধে যাওয়ার সাহস করে, তার
বিরুদ্ধে পরিকল্পনা করে শাসন পরিবর্তন
করার অভিজ্ঞতা আর ক্ষমতা তাদের
রয়েছে। আসুন কিছু অতীত
এবং সাম্প্রতিক শাসন পরিবর্তন এবং
অভ্যুত্থান সম্পর্কে কথা বলি।
ইরান:
ক্ষমতায়
বসার পর নির্বাচিত ইরানের
প্রধানমন্ত্রী মোসাদ্দেঘের প্রথম কাজগুলির মধ্যে একটি ছিল নিজস্ব
গ্যাস এবং জ্বালানী থেকে
উপকৃত হতে অ্যাংলো-ইরানীয়
তেল কোম্পানিকে জাতীয়করণ করা (যা পরে
BP হয়ে ওঠে)। এই
কাজটি অবিলম্বে যুক্তরাজ্যের সাথে তাদের সম্পর্কের
মধ্যে একটি সংকট তৈরি
করে। MI6 এবং CIA একত্রে ১৯৫৩ সালে ইরানের
পেট্রোলিয়াম সম্পদের পশ্চিমা নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে এবং সোভিয়েত
ইউনিয়নকে ইরানের তেলের প্রতিযোগিতা থেকে বিরত রাখতে
ইরানের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করার জন্য একটি
সমন্বিত বিদ্রোহ এবং অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা
করে। কিছু ইরানী আলেম
পশ্চিমা গুপ্তচর সংস্থাকে সহযোগিতা করেছিল কারণ তারা মোসাদ্দেগের
ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের প্রতি অসন্তুষ্ট ছিল। ২০০০ সালে,
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ জেমস রাইজেন
উইলবার অভ্যুত্থানের পূর্ববর্তী গোপন সিআইএ সংস্করণটি
হাতে পান। তিনি এর
বিষয়বস্তুগুলিকে সংক্ষিপ্ত করে প্রকাশ করেন
যার মধ্যে নিম্নলিখিতগুলি তথ্য অন্তর্ভুক্ত ছিল:
“আগস্টের শুরুতে, সিআইএ তার চাপ বাড়ায়।
মিথ্যা কমিউনিস্ট নেতার ভান করে সিআইএর
ইরানি কর্মীরা ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে কমিউনিস্ট-বিরোধী মনোভাব জাগিয়ে তুলার জন্য মুসলিম নেতাদের
এই বলে হুমকি দেয়
"মোসাদেঘের বিরোধিতা করলে তাদের বর্বর
শাস্তি দেওয়া হবে”। এছাড়া,
গোপন ইতিহাস আরো বর্ননা করে
- “কমিউনিস্ট বলে পরিচয় দিয়ে
সিআইএর দেশী এজেন্টরা অন্তত
একজন বিশিষ্ট মুসলিমের বাড়িতে বোমা ফোটায়। এই
হামলায় কেউ হতাহত হয়েছে
কিনা তা বলা যায়
না। সিআইএ বিভিন্ন ভাবে তার নেতিবাচক
প্রচার প্রচারণা জোরদার করে। একজন শীর্ষস্থানীয়
সংবাদপত্রের মালিককে প্রায় $৪৫,০০০ এর
ব্যক্তিগত ঋণ দেওয়া হয়,
"এই বিশ্বাসে যে তার সংবাদপত্র
জনমত এবং আন্দোলন তৈরি
করতে সিআইএর মিথ্যা বর্ণনা প্রতিফলিত করে সংবাদ এবং
নিবন্ধ প্রকাশ করবে।” মোসাদ্দেগকে ক্ষমতাচ্যুত করে তাদের পুতুল
শাহকে বসানো হয়।
মিশর:
ইউসি
বার্কলে ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং প্রোগ্রাম দ্বারা প্রাপ্ত নথিগুলিতে দেখা যায় মধ্যপ্রাচ্য
অঞ্চলে গণতন্ত্রকে উন্নীত করার একটি প্রোগ্রামে
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট অর্থায়ন করে। ফেব্রুয়ারী ২০১১
সালে একটি জনপ্রিয় অভ্যুত্থানে
স্বৈরাচারী রাষ্ট্রপতি হোসনি মুবারককে ক্ষমতাচ্যুত করার পর এই
প্রোগ্রামটি সক্রিয়ভাবে নির্বাচিত সরকার বিরধী কর্মী এবং রাজনীতিবিদদের সমর্থন
করে মিশরে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের
ফেডারেল সরকারের কয়েক ডজন নথির পর্যালোচনা
করে দেখা যায় যে
ওয়াশিংটন নিঃশব্দে মিশরের সিনিয়র বিরোধী ব্যক্তিদের অর্থায়ন করেছে যারা দেশটির বর্তমান
ক্ষমতাচ্যুত রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ মুরসির পতনের আহ্বান জানিয়েছিল। বিরোধী কর্মসূচীর জন্য অর্থায়ন করা
কর্মীদের মধ্যে রয়েছেন একজন নির্বাসিত মিশরীয়
পুলিশ কর্মকর্তা যিনি মুরসি সরকারকে
সহিংসভাবে উৎখাতের ষড়যন্ত্র করেছিল; ছিল একজন ইসলামবিরোধী
রাজনীতিবিদ যিনি মসজিদ বন্ধ
করার এবং প্রচারকদের জোর
করে টেনে নিয়ে যাওয়ার
পক্ষে ছিলেন আর সেইসাথে ছিল
বিরোধী রাজনীতিবিদদের একটি দল যারা
মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য চাপ
দিয়েছিল। তারপর দেশের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত দল আর নেতাকে,
সামরিক বাহিনি ক্ষমতাচুত করে। গণতন্ত্রকে গলাটিপে
মারা হয়।
ইউক্রেন:
যুক্তরাষ্ট্রের
স্টেট ডিপার্টমেন্টের উপদেষ্টা ল্যারি ডায়মন্ডের সফল প্রযোজনাগুলির মধ্যে
একটি হল "আমি একজন ইউক্রেনীয়"
ভিডিও যা ২০১৩-১৪
সঙ্কটের সময় ভাইরাল হয়েছিল।
এটি তরুণ ইউক্রেনীয়দের একটি
দুর্নীতিগ্রস্ত শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য উত্তেজিত
হয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসার চেতনা দেয়।
ইউএস ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি (দুষ্টু
লোকেরা এটিকে ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর রেজিম চেঞ্জ
নামেও পরিচিত করে) দ্বারা অর্থায়নে
একটি প্রযোজনা সংস্থা ভিডিও টি তৈরি করে।
ইউক্রেনে ফেব্রুয়ারী ২০১৪ সালের বিদ্রোহের মূল মার্কিন খেলোয়াড় ছিলেন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামার সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড। ফাঁস হওয়া টেপগুলি দেখে এটা এখন স্পষ্ট যে যুক্তরাষ্ট্র সেখানে বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে এবং ইউক্রেনের অভ্যুত্থানকে একটি দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত বিদ্রোহ হিসাবে চিত্রিত করার জন্য পশ্চিমা মিডিয়াগুলিকে কাজে লাগিয়েছে। তারপরের ঘটনা সবার জানা।
এখন
বাংলাদেশে উদ্ঘাটিত ঘটনা, চলমান নাটকের প্রতিটি অধ্যায় সম্পর্কে কথা বলা যাক:
প্রথম
অধ্যায়, একটি নতুন এজেন্ডা
নিয়ে নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত
বাংলাদেশে আসেন। আর তা হল
বাক স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা, সুষ্ঠু নির্বাচন অন্য কথায় গণতন্ত্র
ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখার কথা বলে সরকারের
উপর চাপ সৃষ্টি করা
যাতে বাংলাদেশ চীনের ওপর নির্ভরশীল না
হয় আর যাতে বাংলাদেশ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বলয়ের মধ্যে থাকে তা নিশ্চিত
করা। তদনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শক্তি এবং প্রভাবের উপর
পূর্ণ আস্থা রেখে নুতন রাষ্ট্রদূত
কূটনৈতিক নিয়ম আর শালীনতার বাইরে
গিয়ে বাংলাদেশের ভাইসরয়ের মতো কাজ করতে
শুরু করে।
পরবর্তীতে
র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ
করা হয়। এই র্যাব প্রতিষ্ঠানটি বিএনপি
সরকার তৈরি করে এবং
তখনকার র্যাডের একজন
প্রধান, একটি প্রেস ব্রিফিংএ
ক্রস ফায়ার এবং বিচারবিহীন হত্যাকে
ন্যায়সঙ্গত বলে দাবী করেছিল।
কিন্তু সেসময় আশ্চর্যজনকভাবে তার উপর কোনও
নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি।
এরপর
আসে ভিসা প্রত্যাহারের নীতি।
যুক্তরাষ্ট্র জানে বাংলাদেশের অনেক
ধনী বিজনেস টাইকুন যারা রাজনৈতিক অর্থ
যোগান দেয়, উচ্চপদস্থ সরকারী এবং সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত
বা চাকরিরত কর্মকর্তা, তথাকথিত বুদ্ধিজীবী, বিচারক, আইনজীবীসহ অন্যান্য কর্মকর্তা; বিদেশী অর্থায়নের উপর নির্ভরশীল দেশী
ও আন্তর্জাতিক এনজিওগুলির বাংলাদেশের কর্মকর্তারা, সংবাদপত্র, টেলিভিশনের মালিক ও সম্পাদক; শাসক
এবং বিরধী রাজনৈতিক নেতাদের অনেকের যুক্তরাষ্ট্রে রিরাট অংকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আর সম্পত্তি আছে
এবং তাদের পরিবার ও সন্তান-সন্ততি
সেখানে বসবাস করে। এই গোষ্ঠীর
প্রত্যেকের উপর ভিসা প্রত্যাখ্যান,
নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং ইউএস
ব্যাঙ্কে জমা রাখা তাদের
বিশাল ডলারের ক্ষতির ভীতী তৈরি করা
হয়। দুর্ভাগ্যবশত এই ক্ষুদ্র সুবিধাবাদী
গোষ্ঠীগুলো বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা রাখে। আমাদের কোন সন্দেহ থাকা
উচিত নয় যে এই
গোষ্ঠীর কিছু লোকেরা মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রে তাদের অর্থ আর সম্পত্তি
সংরক্ষণের জন্য যা করতে
বলা হবে তাই করতে
কোন দ্বিধা করবে না। তাদের
অর্থ ও ক্ষমতার লোভে
প্রভাবিত করা কোন কঠিন
কাজ না।
গণতন্ত্র,
বাকস্বাধীনতা ও মানবাধিকার, দুর্নীতি
দমনের একই নাটকের গান
গাইতে একের পর এক
উচ্চ পর্যায়ের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বাংলাদেশ সফর শুরু করে।
এখন অক্টোবরে তাদের আরেকটি দল বাংলাদেশ সফরে
আসবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, তাদের গানের সাথে তাল মিলিয়ে
একই গান গাইছে এবং
ঘোষণা করেছে যে তারা কোনো
নির্বাচনী পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। হঠাৎ তাদের
বাংলাদেশের প্রতি এত বড় আগ্রহ
কেন? তাদের কি অন্য আর
কোন বৈশ্বিক নিরাপত্তা অগ্রাধিকারের চিন্তা নেই?
বাংলাদেশে
যে খাদ্য উৎপাদন কম, তা নয়,
তাহলে হঠাৎ করে কেন
আমরা দেখতে পাই সিন্ডিকেট করে
নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে!!? কারা
এর পিছনে কাজ করছে? নিত্যপণ্যের
দাম বাড়ার কারনে সাধারন মানুষ বিশেষ করে শক্তিশালী মধ্যবিত্ত
লোকেরা ক্ষুব্ধ হচ্ছে এবং সরকার সম্পর্কে
নেতিবাচক কথা বলতে শুরু
করেছে?
শুধু
বাংলাদেশ নয়, ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার
ব্যয়ও ইউরোপীয় মানুষকে মরিয়া করে তুলছে। কিন্তু
বাংলাদেশের কিছু ভালো প্রচলনের
সংবাদপত্রের দিকে তাকান, দেখবেন
প্রথম পৃষ্ঠায় দিনের পর দিন খাদ্যের
মূল্য বৃদ্ধি, দৈনন্দিন জীবন সংগ্রাম, দুর্নীতি,
মেগাপ্রজেক্টের ব্যর্থতা, চীনের কাছে বাংলাদেশ বিক্রি
বা ভারতের নিপীড়ন সম্পর্কে কথা বলে দেশে
সংশয়, উত্তেজনা ও অস্থিরতা সৃষ্টি
করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে বিদেশে এবং
বাংলাদেশে বসবাসকারীরা গুজব ও ঘৃণা
ছড়াচ্ছে। আমি অবাক হব
না যদি তারা প্রধানমন্ত্রীকে
স্বৈরশাসক, দুর্নীতিবাজ হিসাবে চিত্রিত করতে শুরু করে,
যা ইতিমধ্যেই কিছু বিরধীদলের নেতা
অহরহ বলা শুরু করেছে।
পশ্চিমা
অর্থের ওপর নির্ভরশীল আন্তর্জাতিক
মানবাধিকার সংস্থাগুলো বাংলাদেশ নিয়ে নেতিবাচক বক্তব্য দিচ্ছে। হঠাৎ করে ডঃ
ইউনুস ও আদিলুর রহমানের
ইস্যু এখন বড় খবর।
বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক ব্যক্তিরা তাদের সম্পর্কে লিখছেন, প্রায় বাংলাদেশকে তাদের মামলা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিচ্ছেন। মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ নিয়ে লিখছে,
তাদের মুক্তি দাবি করছে। তথাকথিত
কিছু বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীরাও আওয়াজ তুলছেন। তারা পণ্যের উচ্চ
মূল্য সম্পর্কে তাদের উদ্বেগের কথাও লিখছেন। এ
যেন একই শুরে গাওয়া
একই নাটকের গান।
জানলাম,
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী এজেন্ট,
বিচারক, আইনজীবী এবং রাজনৈতিক নেতাদের
ভিসা প্রত্যাহারের নীতি/নিষেধাজ্ঞা আরোপ
শুরু করেছে। এর মানে তারা
তাদের লিখিত নাটকের শেষ কয়েকটি পর্ব
ইতিমধ্যে শুরু করেছে।
এখন
বিএনপি ও জামায়াত তাদের
পেশী শক্তি ঝাঁকাতে শুরু করেছে, ঢাকাকে
রক্তাক্ত করার চেষ্টা করছে।
বাস, সম্পত্তি এবং মানুষ পোড়ানো
এবং সম্পত্তি ধ্বংসের পরিকল্পনা করছে। এটি সুষ্ঠু নির্বাচন,
বাকস্বাধীনতা বা মানবাধিকার নয়,
চূড়ান্ত লক্ষ্য তৃতীয় শক্তির ক্ষমতা দখলের জন্য বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি
করা। এই সব ধীরে
ধীরে ঘটা কিন্তু প্রতিদিনই
বৃদ্ধি হয়া সুপরিকল্পিত এবং
সমন্বিত শাসন পরিবর্তনের প্রচেষ্টার
একই নাটকের যদি অংশ না
হয়, তাহলে আমার আর বলার
কিছু নাই।
পত্রিকায়
ছবি দেখে অবাক হলাম,
মার্কিন রাষ্ট্রদূত নির্বাচন কমিশন পরিদর্শনের পর সংবাদ সম্মেলনে
রাষ্ট্রদূত যখন সাংবাদিকদের সাথে
কথা বলছিলেন তখন আমাদের নির্বাচন
কমিশনার, মার্কিন রাষ্ট্রদূতের পিছনে অসহায় ভাবে দাঁড়িয়ে আছেন।
মনে হতে পারে ইসি
যেন রাষ্ট্রদূতের অধীনে কাজ করেন। আমি
তাকে জিজ্ঞাসা করতে চাই তার
আত্মমর্যাদা কোথায় ছিল? ইসি তার
অফিসে রাষ্ট্রদূতের সাথে আলোচনা করে
যথেষ্ট সৌজন্য দেখিয়েছেন, তাহলে ইসির একসাথে সংবাদ
সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার কি দরকার ছিল?
রাষ্ট্রদূত চলে যাওয়ার পর
তিনি একাই সাংবাদিকদের মুখোমুখি
হতে পারতেন। আমাদের ভুলে গেলে চলবে
না নির্বাচন কমিশনার সাংবিধানিকভাবে একজন স্বাধীন কর্মকর্তা।
আ.লীগ নেতারা মার্কিন
রাষ্ট্রদূতের সাথে গদ গদ
হয়ে হাসিমুখে ফুল দিয়ে ছবি
তুলে সামাজিক মাধ্যমে পাঠান, তার বাসভবনে ভোরের,
দিনের বা রাতের খাবারের
জন্য ছুটে যান। বিরোধী
দলের নেতারা রাষ্ট্রদূতদের ভগবান হিসেবে ভাবতে শুরু করেছেন, যেন
জনগন নয় ক্ষমতাবান বিদেশারা
তাদের ক্ষমতায় বসাবেন।
সিঙ্গাপুরের
সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিআইএ-এর একজন আমেরিকান
এজেন্টকে গ্রেফতার করেছিলেন কারণ সেই এজেন্ট
তার এক উচ্চ নিরাপত্তা
কর্মকর্তাকে ঘুষ দিতে চেয়েছিল।
আমেরিকাকে গোপনে মামলাটি নিষ্পত্তি করতে হয়েছিল। কিন্তু
আমাদের সমস্যা হল আমাদের দেশে
আগেও ছিল এবং এখনও
কিছু মিরজাফর আছে। এমন কিছু
মানুষ আছে যারা এখনও
আমাদের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না এবং
আমাদের অগ্রগতি, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি ক্ষুণ্ন
করার জন্য যেকোনো কিছু
করতে তারা প্রস্তুত। ক্ষমতা
এবং অর্থের বিনিময়ে সহজেই কেনা যায় এমন
অনেক লোক আমাদের মাঝে
আছে। কিছু মানুষ আছে
যারা চোখ থাকতেও অন্ধ
এবং আমরা যে বিশাল
অগ্রগতি করেছি তা তারা দেখতে
পান না। তারা আমাদের
জাতি এবং এর আত্মসংকল্পকে
অবমূল্যায়ন করতে পেরে গর্বিত
বোধ করে। তারা বিশ্বাস
বা পছন্দ করে না মাথা
উঁচু করে এবং পারস্পরিক
সম্মান নিয়ে বাঁচতে। কিন্তু কখনোই আমাদের বাঙ্গালী সাধারণ মানুষের শক্তিকে অবমূল্যায়ন করবেন না। তারা কখনই
পরাধীনতা মেনে নেবে না।
আমি
মনে করি, বিদেশী এজেন্ট,
স্বার্থান্বেষী, দুর্নীতিবাজ, ক্ষমতার ক্ষুধার্ত, স্বার্থপর ব্যক্তিদের দলগুলো নিখুঁত আর সুপরিকল্পিত নাটকের
খেলা ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছে।
আমাদের একমাত্র ভরসা স্বাধীন মনের
সাহসী প্রধানমন্ত্রী আর আমাদের নীরব
কিন্তু শক্তিশালীর ৯০% জনসংখ্যা, যারা
শান্তিতে, সমমর্যাদা, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে সহ
বাঁচতে চায়।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
সম্প্রতি
(১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩)বাংলাদেশের তথাকথিত
একটি মানবাধিকার সংস্থা ‘‘অধিকার’’-এর সম্পাদক আদিলুর
রহমান খান এবং পরিচালক
নাসির উদ্দিন এলানকে দুই বছর করে
কারাদণ্ড দিয়েছে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল। ২০১৩ সালে মতিঝিলের
শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের সরিয়ে
দেওয়ার অভিযানে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে 'বিভ্রান্তি ছড়ানোর' অভিযোগে মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল।একই সাথে
তাদেরকে ১০ হাজার টাকা
করে জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে
আরো এক মাসের সাজার
আদেশ দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য,
২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে
পুলিশি অভিযানের পর সরকার বিরোধী
রাজনৈতিক দলগুলো অভিযোগ তুলেছিল যে পুলিশের অভিযানে
'বহু মাদ্রাসার ছাত্র নিহত' হয়েছে। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা প্রচারণাও চালিয়েছিল
সরকার বিরোধীরা।তখন মানবিধকার সংস্থা অধিকার তাদের রিপোর্ট প্রকাশ করে। সেখানে বলা
হয়, শাপলা চত্বরে পুলিশের অভিযানে ৬১জন নিহত হয়েছে।
এই মিথ্যা তথ্য নিয়ে তীব্র
প্রতিক্রিয়া আসে সরকারের তরফ
থেকে। এরপর মামলা দায়ের
করা হয় মানবাধিকার সংস্থা
অধিকার-এর দুই শীর্ষ
কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। রায় ঘোষণার পর
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, "৬১ জনের তালিকা
প্রকাশ করে তিনি শুধু
বাংলাদেশ না বরং সারা
বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের মুসলমানদের মধ্যে একটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া
সৃষ্টি করেছেন। এটা অত্যন্ত জঘন্যতম
একটা অপরাধ করেছেন মিথ্যা তথ্য দিয়ে।"
২০১৩
সালের ৫ এবং ৬ই
মে ঢাকার মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ এবং সেখানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানকে ঘিরে অসত্য তথ্য
প্রচারের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছিল মানবাধিকার
সংগঠন, অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খানের বিরুদ্ধে।এর জের ধরে একই
বছরের ১১ই অগাস্ট গ্রেফতার
করা হয়েছিল তাকে। পরে জামিনে মুক্তি
পান তিনি।সেসময় পুলিশ জানিয়েছিল, মানবাধিকার সংস্থা অধিকার মতিঝিল শাপলা চত্বরে হেফাজত ইসলামের সমাবেশে আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর
অভিযানে ৬১ জন নিহত
হওয়ার যে তালিকা প্রকাশ
করেছে তা অসত্য এবং
বিকৃত। সরকারের পক্ষ থেকে নিহতের
সংখ্যা ১৩ বলে জানানো
হয়।এরপর সরকারের পক্ষ থেকে বলা
হয়েছে যে তারা অধিকারের
কাছে ‘নিহত’ ৬১ জনের নাম
পরিচয় চেয়ে চিঠি দিলেও অধিকার
তথ্য দিতে অস্বীকার করে।এ
প্রসঙ্গে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক টুইটে বলেছে,
দণ্ড প্রদানের মধ্য দিয়ে ‘‘ক্ষমতাসীনদের
বিরুদ্ধে সত্য বলার অধিকারের
উপর হামলা’’র সত্যতা প্রকাশ
করা হয়েছে।অবশ্য একথা সত্য “মানবাধিকার
লঙ্ঘনের ঘটনা নথিবদ্ধ করাটা
কোন অপরাধ নয়।’’ অন্যদিকে বলা হয়েছে- “গণতন্ত্রের
অপরিহার্য অংশ হিসেবে আমরা
মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং প্রাণবন্ত নাগরিক
সমাজকে অব্যাহতভাবে সমর্থন করি এবং মৌলিক
অধিকার নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টার বিরোধিতা করি।”
অথচ
শেখ হাসিনা সরকার সৎ মানুষের সংগঠনের
অধিকার এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা
রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে
২০০৯ সাল থেকে।গণতান্ত্রিক সমাজের
গুরুত্বপূর্ণ অংশ মত প্রকাশের
স্বাধীনতাকে সবসময় গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।তাছাড়া তথ্য
ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৭ ধারার মামলায়
আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ রয়েছে। অবশ্য তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল সত্য। আদিলুর
ও নাসির উদ্দিন ৬১ জনের মৃত্যুর
‘বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা’ তথ্যসংবলিত
প্রতিবেদন তৈরি ও প্রচার
করে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি করেন, আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নের অপচেষ্টা চালান এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী
বাহিনী, সরকার ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি
দেশে-বিদেশে চরমভাবে ক্ষুণ্ন করেন।পাশাপাশি তাঁরা মুসলমানদের মনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী
বাহিনীর বিরুদ্ধে বিরূপ মনোভাবের সৃষ্টি করেন, যা তথ্য ও
যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭(১) ও
(২) ধারায় অপরাধ। আসামিরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে মুসলমানদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির
অবনতি ঘটানোর এবং সরকারকে অন্য
রাষ্ট্রের কাছে হেয়প্রতিপন্ন করার
চেষ্টা চালান, যা দণ্ডবিধির ৫০৫
সি ও ডি এবং
৫০৫ এ ধারায় অপরাধ।
পশ্চিমারা
বলে থাকেন, ‘যারা নিপীড়ন চালাতে
রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করবে, তাদের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র কথা বলবে।’ মানুষের
অধিকার রক্ষায় সদাসচেষ্ট শেখ হাসিনা সরকার।
এজন্য রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই
এ সরকারের। বরং সংবিধান মেনে
দেশের মানুষের মঙ্গল করে চলেছেন আওয়ামী
লীগের নেতৃবৃন্দ।
অধিকারের
মতো প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ নিয়ে
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মানবাধিকারের
চিন্তা পুরোটাই হাস্যকর। কারণ তাদের নিজেদের
দেশেই রয়েছে কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ ও আইন
বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড।২০২০ সালের জুন মাসে আমেরিকার
মিনিয়াপোলিসে পুলিশের নির্মমতায় প্রাণ হারানো কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু
ছিল সেদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘৃণ্য ঘটনা।সেসময় যখন দেশটির নানা
জায়গায় প্রতিবাদ বিক্ষোভ চলছে, তখন সেসব বিক্ষোভের
সময়ও পুলিশি নির্মমতার বেশ কিছু ভিডিও
মানুষকে স্তম্ভিত করেছে।মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও পাকিস্তানের
মতো জঙ্গিবাদী রাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের রয়েছে নিবিড় যোগাযোগ।আর আমেরিকার বন্দিদের প্রতি আচরণের কথা তো বিশ্ববাসী
জানে।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূ-খণ্ডের
বাইরে কিউবার দক্ষিণ-পূর্ব পাশে ক্যারিবীয় সাগরে
স্থাপিত(২০০২) গুয়ানতানামো কারাগার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি কারাগার যা
বন্দীদের ওপর অমানুষিক নির্যাতনের
জন্য কুখ্যাত। এই কারাগারে বন্দীদের
বিনাবিচারে আটক রাখা হয়
এবং তথ্য আদায়ের লক্ষ্য
নিয়ে বন্দীদের ওপর যৌন অত্যাচার,
'ওয়াটার বোর্ডিং'-সহ বিবিধ আইনবহির্ভূত
উপায়ে নির্যাতন চালানো হয়।নির্যাতনের প্রকার ও মাত্রা এতই
বেশি যে এই কারাগারকে
‘মর্ত্যের নরক’ বলে আখ্যায়িত
করা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ সত্ত্বেও এই কারাগারটিকে অব্যাহতভাবে
নির্যাতনের জন্য ব্যবহার করতে
থাকায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে একে মার্কিনীদের ‘লজ্জা’
হিসাবে অভিহিত করা হয়েছে।
পত্রিকান্তরে
প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, আন্তর্জাতিক
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বা এইচআরডব্লিউ
মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের
কঠোর সমালোচনা করে চলেছে প্রতিনিয়ত।
এক প্রতিবেদনে তারা বলেছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রে
শ্বেতাঙ্গ এবং কৃষ্ণাঙ্গ উভয়
বর্ণের মানুষ সমপরিমাণে মাদক সংক্রান্ত অপরাধে
জড়িত রয়েছে। এ সত্ত্বেও মাদক
সংক্রান্ত অপরাধের দায়ে কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকহারে
আটক এবং বিচার করা
হয়।আমেরিকার জনসংখ্যার মাত্র ১২ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ
জনগোষ্ঠী হলেও মাদক সংক্রান্ত
অপরাধের দায়ে আটক ব্যক্তিদের
২৯ শতাংশই কৃষ্ণাঙ্গ। আমেরিকায় সাদাদের তুলনায় কালো মানুষদের ছয়
গুণ বেশি আটকের ঘটনা
ঘটে। পুলিশের হাতে অধিক হারে
নিরস্ত্র আফ্রিকান-আমেরিকান হত্যার বিষয়টিও যুক্তরাষ্ট্রের জঘন্য ঘটনা।
আসলে
নানা অপকর্মর জন্য পশ্চিমাদের ‘লজ্জা’থাকলেও তারা অপর দেশের
সমস্যা নিয়ে বেশি উদ্বেগ
প্রকাশ করে হরহামেশায়।যেমন, ২০২১
সালের ১০ ডিসেম্বরে তারা
আসলে মানবাধিকারের কথা বলতে গিয়ে
‘‘র্যাব’কে টার্গেট করেছিল।মনে
রাখা দরকার যুক্তরাষ্ট্র এর আগেও বাংলাদেশের
এলিট ফোর্স র্যাব নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য
ছড়িয়ে বিশ্ববাসীকে ভুল বার্তা দিতে
চেয়েছিল।যেমন, ১৯ জানুয়ারি ২০১৭
সালে নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার
রায়ের পর বাংলাদেশ সরকারের
‘র্যাব’ বিলুপ্ত করা উচিত বলে
মন্তব্য করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। র্যাবকে তারা ‘ইন হাউজ ডেথ
স্কোয়াড’ বলেছিল এবং বিচার বহির্ভূত
হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন ও গুমের ঘটনায়
তাদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে সরকারের ভূমিকারও
সমালোচনা করেছিল। অথচ নারায়ণগঞ্জে সাত
খুনের দায়ে এই বাহিনীর
২৫ সদস্য শাস্তি পেয়েছে। তাদের মধ্যে ১৬ জনের মৃত্যুদণ্ড
এবং নয় সদস্যের বিভিন্ন
মেয়াদে কারাদণ্ড হয়েছে। ফলে ১৪ বছরে
অর্জিত র্যাব-এর বিভিন্ন সাফল্যকে
ছোট করে দেখার প্রবণতা
লক্ষ করা গিয়েছিল। কিন্তু
এই সংস্থাটির ব্যর্থতার পাল্লার চেয়ে সাফল্যের দৃষ্টান্ত
বেশি। এজন্য র্যাব একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা।
আসলে
এদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর
সদস্যরা মানবাধিকার লঙ্ঘনের চেয়ে সব সময়
মানবাধিকার রক্ষা করে থাকেন।যারা সন্ত্রাসী
কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে, খুন করে,
ধর্ষণ করে, মাদক ব্যবসা
চালায়, দেশ এবং জনগণের
স্বার্থেই তাদের আইনের আওতায় আনা হয়। অপরাধীকে
আইনের আওতায় আনা নিশ্চয় মানবাধিকার
লঙ্ঘন নয়।দেশের স্বার্থেই কাজ করতে হয়
তাদের।২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের
উচ্ছৃঙ্খল আচরণ ও ধ্বংসযজ্ঞ
মোকাবেলা করে জানমালের নিরাপত্তা
বিধান করার জন্য যে
অপারেশন পরিচালিত হয়েছিল তা ছিল নিয়ম
মাফিক এবং স্বচ্ছ। এজন্য
অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খানরা অপপ্রচার চালিয়েও ৬১ জনের মৃত্যুর
বিষয়টি প্রতিষ্টা করতে পারেননি। বরং
মামলায় সঠিক তথ্যপ্রমাণ হাজির
না করতে পারায় শাস্তি
ভোগ করতে হচ্ছে তাদের।
সরকারের
বাহিনীগুলোর কাজ হলো-আইনশৃঙ্খলার
বিধান বলবৎ ও কার্যকর
করা। দেশের বিচারব্যবস্থার কাছে অপরাধীকে তুলে
দেওয়া। দেশকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের কবল
থেকে মুক্ত রাখা। সাইবার-ক্রাইম রোধ করা। সহিংসতা
রোধে মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় তাদের সব সময় আইনের
পথে পরিচালিত হতে হয়। বলা
হয়ে থাকে, দোষী ব্যক্তিকে আইনের
মাধ্যমে শাস্তি প্রদান করলে অপরাধ কমে
যাবে; নির্মূল হবে অরাজকতা। আইন-কানুনের বৈধতা দিয়ে অপরাধীকে কারারুদ্ধ
করলে সমাজ থেকে অপরাধ
ক্রমান্বয়ে অপসৃত হবে। সকল নাগরিককে
বসবাস ও কাজের সুন্দর
এবং নিরাপদ আঙিনা তৈরি করে দেওয়া।
এ কাজে আইনের শাসন
প্রতিষ্ঠা করা, নাগরিকদের নিরাপত্তা
ও জানমাল রক্ষা করা, অপরাধ রোধ
করা, অপরাধীকে বিচারের সম্মুখীন করা তাদের প্রধান
কাজ। জনজীবনে শান্তি ও সুখ আনয়নে
এ সমস্ত ব্যবস্থাকে সর্বদা গুরুত্ব দিতে বাধ্য শেখ
হাসিনা সরকার।
মানুষের
অধিকার নিশ্চিত করতে হলে আইনশৃঙ্খলা
ভালো হতে হবে সেই
ব্যবস্থা বহাল রাখার জন্য
পুলিশ ও র্যাবের ভূমিকা
অনন্য। দুর্ধর্ষ অভিযানে গিয়ে সন্ত্রাসী মারা
পড়লে কিংবা বোমা ও বিস্ফোরক
উদ্ধারে জীবন বাজি রেখে
অপারেশন চালালে তার প্রশংসা পান
না তারা। অথচ এই সদস্যরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তথ্যপ্রযুক্তি অপরাধীদের
শনাক্ত করতে সক্ষম হচ্ছেন।
সমাজে স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখার জন্য
তাদের কৃতিত্ব অনেক বেশি। অপরাধ
দমন করে মানুষকে নিরাপদ
জীবন নির্বাহ করার অক্লান্ত পরিশ্রম
সার্থক হবে তাদের প্রতি
আস্থার জায়গাটি চির জাগরুক থাকলে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
গত মাসে একজন উপদেষ্টা হিসাবে, আমি জেনেভাতে একটি ডব্লিউএইচও উপদেষ্টা গ্রুপ মিটিংয়ে অংশ করি, যেখানে ছয়টি মহাদেশের বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিল। একজন মহিলা ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞ, নারী অধিকারের প্রচারক এবং প্রবক্তা, সেও সেই বৈঠকে যোগ দিয়েছিল। আমি দীর্ঘদিন ধরে তাকে চিনি, অনেক সময় একসাথে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য বিষয় সম্পর্কে কাজ করেছি। আমি তাকে এবং তার প্রেমিককে (এখন স্বামী) ১৯৯০ এর দশকের মাঝামাঝি একটি আন্তর্জাতিক এনজিও কর্মী হিসেবে ঢাকা, বাংলাদেশে কাজ করার সময় থেকে চিনি। তাই বাংলাদেশ সম্পর্কে তার কিছুটা সখ্যতা রয়েছে। মধ্যাহ্নভোজের বিরতির সময় আমি এবং সে ডব্লিউএইচও রেস্টুরেন্টে গেলাম। দুপুরের খাবারের সময় আমাদের কথোপকথন শুরু হল। সে আমার দিকে তাকিয়ে বললো: “বাংলাদেশে কী হচ্ছে মনির? প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান সরকার চরম স্বৈরাচারী হয়ে উঠছে। বাংলাদেশে বাকস্বাধীনতা নেই, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে এবং বাংলাদেশে এখন কোন গণতন্ত্র নেই”। আমি জিজ্ঞেস করলাম সে এই তথ্য গুলো কোথায় পেয়েছে? সে বললো যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশের কয়েকজনের সাথে কথা বলে, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদন এবং কিছু পশ্চিমা মিডিয়া থেকে তথ্য গুলো পেয়েছে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম সে শেষ কবে বাংলাদেশে গিয়েছিল? বললো ১৯৯০ এর দশকে শেষের দিকে বাংলাদেশ ছাড়ার পর আর সে বাংলাদেশে যাইনি। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম বাংলাদেশে থাকা কালিন পুলিশ দ্বারা হয়রানির যে ঘটনা সে আমাকে বলেছিল তা তার মনে আছে কিনা? ঘটনাটা হল, সে এবং তার তৎকালীন প্রেমিক (দুই শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশ নাগরিক) তারা যখন নিরবে সন্ধ্যায় একটি পার্কে অন্তরঙ্গভাবে একসাথে বসেছিল এবং জিজ্ঞাসার পর, পুলিশকে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি যে তারা বিবাহিত দম্পতি, পুলিশ তাদের লাঞ্ছিত করেছিল? আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম এখন বাংলাদেশে গিয়ে বাংলাদেশের নারীমুক্তি আর অধিকারের বিস্তার দেখার জন্য। বাংলাদেশের নারীরা কিভাবে সমান অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশের উন্নয়নের সব ক্ষেত্রে অবদান রাখছে? সমস্ত সংগ্রাম এবং কুসংস্কার অতিক্রম করে, কিভাবে বাংলাদেশের নারী ফুটবল, ক্রিকেট খেলোয়াড় এবং শান্তিরক্ষা বাহিনী গর্বিতভাবে বিশ্বব্যাপী তাদের পদচিহ্ন তৈরি করছে। বর্তমানের বৃহত্তর, সেনানিবাসে একজন সামরিক স্বৈরশাসক দ্বারা তৈরি বিরোধী দল, চরম ডানপন্থী জামাত নেতাদের ক্ষমতায় আনে, যারা উন্নয়নের সমান অংশীদার হিসেবে নারীর স্বাধীনতা ও তাদের অধিকারে বিশ্বাসী নয়। শুরু হয়, ধর্ম নিয়ে রাজনীতি আর নিপিরন, তাকি কি সে জানে? সে কি আর্টিজেন রেস্তোরাঁর নৈশভোজে জড়ো হওয়া নিরীহ বিদেশী বিশেষজ্ঞদের হত্যা সম্পর্কে পড়েছে? আরো অনেকের মত, যারা চরমপন্থী ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর মতাদর্শে বিশ্বাস করে না, সে কি জানে আমার আপন খালাতো ভাই এবং তার বন্ধুকে আমার খালার সামনে সেই গোষ্ঠীর লোক জবাই করেছিল? তাদের দোষ তারা বিভিন্ন যৌন অভিমুখে বিশ্বাসী এবং তারা তাদের অধিকারের জন্য লড়াই করছিল! সে কি মানবাধিকার গোষ্ঠীকে এই জঘন্য কর্মকাণ্ডকারীদের নিন্দা করতে বা কারো পছন্দ এবং মেলামেশার স্বাধীনতা প্রচার করার জন্য তাদের জীবন হারানো, তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কথা বলতে কখন শুনেছে?
সে কি জানে আজ কৃষকরা তাদের ফসলের সঠিক দাম পাচ্ছে এবং তাদের সন্তানদের শিক্ষিত করতে, এবং খেয়ে পরে শান্তিতে বসবাস করতে সক্ষম হচ্ছে? সে কি জানে সারা দেশে আজ প্রায় সব বাড়িতেই বিদ্যুৎ আছে? সে কি জানে বাংলাদেশে আজ মা, নবজাতক ও শিশুমৃত্যু ভারতের তুলনায় অনেক কম? সে কি জানে যে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু এখন ৭২ বছর যা ভারত ও পাকিস্তানের চেয়েও বেশি? সে কি জানে যে বেশীর ভাগ মহিলারা এখন সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে তারা কখন এবং কতবার গর্ভবতী হতে চায় এবং পরিবার পরিকল্পনার জন্য সহজে গর্ভনিরোধক পেতে পারে? আজ মোট উর্বরতা ( women total fertility) ৬ থেকে ২ এর নিচে নেমে এসেছে? সে কি জানে যে আজ বাংলাদেশের প্রতিটি কোণায় মোবাইল, ইন্টারনেট এবং ওয়াইফাই পরিষেবা পাওয়া যায় এবং মহিলারা এই সুবিধাটি সমান ভাবে উপভোগ করছে ? সে কি জানে আজ পুরুষ:মহিলা অনুপাত প্রায় ৫০:৫০, সেখানে পরিবারের কোন মেয়ে বা ছেলে অগ্রাধিকারের পছন্দ নেই। ছেলে মেয়েরা মাধ্যমিক পর্যন্ত বিনামূল্যে বইসহ শিক্ষা পাচ্ছে? জনসংখ্যার সাক্ষরতার হার এখন ৭৫%। গ্রাম ও শহর উভয় ক্ষেত্রেই দারিদ্র্যতা কমেছে। ২০২২ সাল নাগাদ, গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারী ২০.২% বাংলাদেশি দারিদ্র্যের মধ্যে ছিল যখন শহর এলাকায় এই পরিসংখ্যান ১৪.৭% ছিল (যা ১৯৯০সালে ছিল প্রায় ৫৭%); ২০২২ সালে চরম দারিদ্র্যের পরিসংখ্যান নেমে আসে গ্রামীণ এলাকায় ৬.৫% এবং শহরাঞ্চলে ৩.৮%। সে কি জানে বাংলাদেশে আজ ক্ষুধায় কেউ মরে যায় না? সে কি জানে শত শত ভূমিহীন পরিবার বিনামূল্যে ঘর পাচ্ছে? সে যখন বাংলাদেশে ছিল তখন বিভিন্ন জেলায় যাওয়ার জন্য তাকে কত সময় ব্যায় করতে হত, আর এখন মেয়ে মানুষ হয়েও সে একা একাই বাংলাদেশের প্রতিটি কোণায় খুব সহজে এবং খুব অল্প সময়ে যেতে পারবে? অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ এখন আর তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ নয়, বাংলাদেশের জিডিপি মাথাপিছু ২৬৮৮ মার্কিন ডলার বা সমগ্র দেশের জন্য ৪৬০.২০বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। তাই বাংলাদেশ বর্তমানে প্রধান অর্থনীতির ৩৪তম স্থানে রয়েছে, ২০৪০ সালে হবে ২০তম। আমি তাকে বললাম, তুমি বলতে পারো, প্রধানমন্ত্রী স্বৈরাচারী, তুমি বলতে পারো বাকস্বাধীনতা বা মানবাধিকারের অভাব আছে কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও দৃঢ় নেতৃত্ব এবং তার নিষ্ঠা ও অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে বাংলাদেশ বদলে গেছে। আপামর বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ তাকে নিয়ে গর্বিত। ১৯৯০ এর দশকে তুমি যে বাংলাদেশকে দেখছো, বা চিনতে, বাংলাদেশ এখন সেই দেশ নেই। বাংলাদেশের মানুষ আজ গর্ব নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে এবং অন্যদের দ্বারা সম্মানিত হয়।
আমি জানতে চাইলাম সে কি আমাকে প্রমান সহ দেখাতে পারবে যে আমাদের দেশে কত শতাংশ মানুষ বাকস্বাধীনতা, মানবাধিকার এবং গণতন্ত্র খর্ব হবার কথা বলছে (সম্প্রতি একটি আমেরিকান সংস্থার বাংলাদেশে ১০০০ জন উত্তরদাতার মধ্যে করা জরিপে দেখা গেছে যে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ গণতন্ত্র দেখতে চায়। আমি জানতে চাই যে ১০০০ জন যারা সাড়া দিয়েছেন তারা কোন গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে এবং সমীক্ষার আত্মবিশ্বাসের ব্যবধান (confidence of interval) কী)। গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা এবং মানবাধিকারের অস্ত্র যদি ভাগ্যবান কয়েকজনকে আরো উন্নীত করার জন্য ব্যবহার করা হয়, তাহলে ৯০% নীরব মানুষকে, যাদের কণ্ঠস্বর শোনা যায় না বা তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করার কোন সুযোগ নেই, তাদের কে পিছনে ফেলে, বাংলাদেশের জন্য কী লাভ আনবে? হ্যাঁ, স্বীকার করি বাংলাদেশ এখনও নিখুঁত নয়, বাকস্বাধীনতা, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রে ফাঁক রয়েছে কিন্তু বাংলাদেশের জন্য তার বিকল্প কী আছে? সেনা অভ্যুত্থান ও সেনানিবাসে সৃষ্ট দলগুলোকে ফিরিয়ে আনা? অথবা অনির্বাচিত তথাকথিত ধনী বুদ্ধিজীবীদের দ্বারা শাসিত হওয়া? আমাদের কি ধর্মনিরপেক্ষ নীতি পরিত্যাগ করা উচিত এবং সেই চরম পন্থির ধর্মান্ধ দল গুলোকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনা উচিত, যারা নারীমুক্তি, অঞ্চলের স্বাধীনতা, চলাফেরার স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না? যাদেরকে তারা পছন্দ করে না তাদের হত্যা করে? ভিন্ন ধর্মের লোককে হত্যা করে , যারা এখনো আমাদের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না? যারা বাংলাদেশকে তালেবান রাষ্ট্রে রূপান্তর করতে চায়? প্রশ্ন করেছিলাম পশ্চিমা মতাদর্শীরা আমাদের সেই বিকল্পের দিকে ঠেলে দিতে চায় কিনা?
বাকস্বাধীনতা, মানবাধিকার এবং গণতন্ত্র বলতে কী বোঝায় যখন নারীদের সমান ক্ষমতা নেই বা বলা যায়, যখন নীরব সংখ্যাগরিষ্ঠের নিজস্ব ঘর নেই, খাবার থালায় খাবার নেই, কৃষকরা তাদের ন্যায্য মূল্য পাচ্য় না, শিক্ষা নেই বা চাকরি ও অর্থনীতিতে প্রবেশাধিকার নেই, যারা তাদের বিশ্বাস ও ধর্মকে শান্তিপূর্ণভাবে অনুসরণ করে সমানভাবে সমৃদ্ধি করে সবার সাথে একই কাতারে চলতে চায় কিন্তু তাদের অধিকার খর্ব করা হয়? একটি দেশ কি সেই অল্প সংখ্যক উচ্চ শিক্ষিত এবং ধনীদের জন্য, নাকি নীরব সংখ্যাগরিষ্ঠদের জন্য হওয়া উচিত যারা পিছিয়ে থাকতে চায় না? দুটি বড় ক্যান্টনমেন্টের দল দীর্ঘকাল বাংলাদেশ শাসন করেছে, তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরাও দুই বছরের বেশি সময় ধরে দেশ শাসন করেছে, তাদের বাংলাদেশের মানব উন্নয়নের অর্জন কী? সে বা তার মতো পশ্চিমা সুবিধাপ্রাপ্ত বুদ্ধিজীবীরা বাংলাদেশের জন্য কী বিকল্প প্রস্তাব করছে? আমার ব্রিটিশ সহকর্মী আমার প্রশ্নের উত্তর দেননি বা দিতে পারেননি এবং আমরা আমাদের খাবার শেষে বৈঠকে ফিরে যাওয়া পর্যন্ত নীরব ছিলাম। এখনও আমরা দুই বন্ধু। বাংলাদেশ সম্পর্কে এমন ধারণা থাকার জন্য আমি আমার বৃটিশ সহকর্মীকে দোষ দেই না, সে যে তথ্য পাচ্ছে তার মাধ্যমে সে তার মতামত তৈরি করছে। প্রশ্ন হল এই ধরনের তথ্য কে বা কারা দারুন সফল ভাবে ছড়াচ্ছে, আর আমরা যারা বাংলাদেশ এবং এর উন্নয়নের প্রতি বিশ্বস্ত, তাঁরাইবা কি করছি বা প্রচেষ্টা চালাচ্ছি সেই মিথ্যা সম্প্রসারণ বন্ধ বা প্রতিহত করতে?
পশ্চিমের সব দেশেই আমাদের দূতাবাস আছে, সেসব দেশে প্রেস অ্যাটাশে আছে? প্রশ্ন করা দরকার ওই লোকেরা তাহলে কি করছেন? জেনেভা এবং অন্যান্য দেশে কাজ করার সময় আমি অনেক বাংলাদেশের কূটনীতিক এবং রাষ্ট্রদূতদের সাথে দেখা করার এবং কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। সেখানে আমি অনেক প্রতিভাবান ও নিবেদিতপ্রাণ কূটনীতিক এবং রাষ্ট্রদূতদের দেখেছি। কিন্তু তাদের প্রয়োজন সময়মত সমন্বিত সহায়তা ও তথ্য। গতকাল রাতে ৭১ টেলিভিশনের ভূরাজনীতি ও বাংলাদেশ নিয়ে একটি টকশো শুনছিলাম। সেখানে দুজন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব, একজন সাবেক পুলিশ প্রধান ও রাষ্ট্রদূত, দুইজন অর্থনীতিবিদ, একজন সমাজ বিজ্ঞানী এবং একজন সাবেক প্রেস অ্যাটাশে ছিলেন। প্রাক্তন সাংবাদীক অ্যাটাশে ভারতে ছিলেন, যেখানে বেশিরভাগ আমেরিকান এবং পশ্চিমা মিডিয়ার আঞ্চলিক দপ্তর আর কর্মকর্তারা অবস্থিত। তিনি বলছিলেন অনেক আমেরিকান ও পশ্চিমা মিডিয়া আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার নিতে চেয়েছিল কিন্তু বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তিনি তেমন সমর্থন পাননি। যদিও প্রধানমন্ত্রীর সাথে তার খুব ভাল যোগাযোগ এবং বোঝাপড়া ছিল কিন্তু তুবুও সরকারি কর্মকর্তারা অনিচ্ছুক ছিলেন। তাই যদি হয়, তাহলে আমরা কীভাবে বিশ্ব সম্প্রদায়কে আমাদের কথা জানাব? আমি শুনছি ক্ষমতাসীন দলের নেতা বা মন্ত্রীরা বার বার অভিযোগ করেন বিদেশে বাংলাদেশের বিরোধীরা বাংলাদেশীদের বিরুদ্ধে লবিস্ট বিনিয়োগ করে যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিমা দেশ এমনকি ইইউ পার্লামেন্টে মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রভাব বিস্তার করছে। বিরোধীরা যদি তা করতে পারে তাহলে ক্ষমতাসীন দল কেন তা করতে পারছে না? বর্তমান সরকার এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারণে বাংলাদেশী অনেক বিজনেস টাইকুন প্রচুর অর্থ উপার্জন করেছেন, তারা কি করছেন? ভবিষ্যতে উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত রাখতে তারা কেন সত্য প্রচারে বিনিয়োগ করছেন না? আমাদের অনেক প্রবাসী রয়েছে, যারা প্রধানমন্ত্রীর সাথে সেলফি তুলতে এবং সেই ছবিগুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতে আগ্রহী, তারা সেলফি তোলা ছাড়া আর কী করছেন? আমাদের শাসক দলের প্রবাসীরা বা এমনকি যারা আমাদের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে তারা ভবিষ্যতের আরো সুযোগ খোঁজা বা পাওয়া ছাড়া আর কী করছেন? আমি পড়ে খুব খুশি হয়েছি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি রাজ্যে বাংলাদেশী আমেরিকানরা একটি বৈঠকের আয়োজন করেছিল যেখানে একজন প্রজাতন্ত্রী কংগ্রেস সদস্য তার হতাশার কথা বলেছিল যে মার্কিন সরকার আমাদের জাতির পিতার আত্মস্বীকৃত খুনিকে নির্বাসন দেয়নি বলে। লন্ডন বা প্যারিস বা ব্রাসেলসে কেন আমরা সেই কাজগুলো দেখতে পাচ্ছি না? আমি জানি যে কয়েকটি পশ্চিমা দেশ বাংলাদেশের অগ্রগতি এবং ভবিষ্যতকে ক্ষুণ্ন করার জন্য একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং সেই কর্মকাণ্ডে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করছে, তবুও আমরা চুপ করে বসে থাকতে পারি না।
আমি মনে করি, সময় এসেছে আক্রমণাত্মক হওয়ার যা টকশোতে সাবেক পুলিশ প্রধান ও রাষ্ট্রদূত বার বার বলছিলেন। চুপ করে বসে থাকার সময় এখন না, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাই সব মোকাবেলা করবেন ভেবে আমরা নিষ্ক্রিয় থাকতে পারি না। আমাদের সর্বশক্তি দিয়ে সেই বাংলাদেশ বিরোধীদের মোকাবেলা করতে হবে এবং তাদের প্রতিহত করতে হবে। এটা আমাদের দেশ, ৯০% নীরব সংখ্যাগরিষ্ঠদের নিয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে বাংলাদেশের জন্য কি ভালো? গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা এবং মানবাধিকারের অজুহাতে, সেই ১০% ধনী এবং সুবিধাভোগীদের জন্য লড়াই না করে, নীরব সংখ্যাগরিষ্ঠের জন্য লড়াই করতে হবে যারা শান্তি, সম্মান এবং সমৃদ্ধিতে নিয়ে বাঁচতে চায়। আমার বৃটিশ সহকর্মীকে দোষারোপ না করে বরং আমাদের প্রচারণা ঘাটতির দিকে নজর দেওয়া উচিত এবং সেই ঘাটতিগুলো মেটাতে পদক্ষেপ নেওয়া আজই দরকার। আসুন সিঙ্গাপুরের পূর্ববর্তী প্রধানমন্ত্রীর মতো আগ্রাসী হয়ে উঠি এবং স্বার্থপর হয়ে নিজেদের ভালো, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য লড়াই করি। সিঙ্গাপুরের মত, যখন আমরা উন্নতি করব এবং সমৃদ্ধির সিঁড়ি বেয়ে উঠব তখন আমাদের সবাই সম্মান করবে, আমাদের সাথে সমান আচরণ করবে, আমাদের অধিকার সমুন্নত থাকবে। আমি খুব আত্মবিশ্বাসী বাঙ্গালী জাতি পরাধিনতা সহ্য করবে না।
মন্তব্য করুন
সিএনএন এর সাংবাদীক ট্যাপার, জন বোল্টনকে জিজ্ঞাসা করেছিল, "কোন দেশে অভ্যুত্থানের চেষ্টা করার জন্য একজনকে কি মেধাবী হতে হবে না?" বোল্টন উত্তর দিয়েছিল: "আমি এমন একজন যে ভিন্ন দেশে, এখানে নয়, অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করতে সাহায্য করেছি। তাই আমি বলতে পারি অভ্যুত্থান/শাসন পরিবর্তনের জন্য অনেক পরিকল্পনা আর কাজ করতে হয়”।
পৃথিবী ব্যাপী খাদ্য, জ্বালানী ও নির্মাণ সামগ্রীর দাম উর্ধ্বমুখী। বিশেষ করে খাদ্যসামগ্রীর মূল্যস্ফীতি অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। এ জন্য খাদ্যসামগ্রীর মূল্য পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই বেড়েছে রেকর্ড হারে। বাংলাদেশ ও তার বাইরে নয়। খাদ্য, জ্বালানী ও নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধিতে সীমিত আয়ের বেশিরভাগ মানুষ তাই কষ্টে আছেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন ও অর্জন ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। তাই এই মুহূর্তে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে 'তলাবিহীন ঝুড়ি' হিসেবে আখ্যায়িত করেন। মার্কিন অর্থনীতিবিদ জে আর পার্কিনসন এবং নরওয়ের অর্থনীতিবিদ জাস্ট ফাল্যান্ড একই সময়ে লন্ডনে প্রকাশিত 'বাংলাদেশ দ্য টেস্ট কেস ফর ডেভেলপমেন্ট' বইয়ে বলেছেন, বাংলাদেশ উন্নয়নের প্রমাণস্থল। বাংলাদেশ যদি তার উন্নয়নের চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রম করতে পারে, তাহলে এটা উপলব্ধি করতে হবে যে প্রতিটি জাতিই এগিয়ে যেতে পারে। ২০৩৫ সালের মধ্যে, একসময়ের তলাবিহীন ঝুড়ি হিসাবে পরিচিত দেশটি, বিশ্বের ২৫ তম বৃহত্তম অর্থনীতি হবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে।
গত মাসে একজন উপদেষ্টা হিসাবে, আমি জেনেভাতে একটি ডব্লিউএইচও উপদেষ্টা গ্রুপ মিটিংয়ে অংশ করি, যেখানে ছয়টি মহাদেশের বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিল। একজন মহিলা ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞ, নারী অধিকারের প্রচারক এবং প্রবক্তা, সেও সেই বৈঠকে যোগ দিয়েছিল। আমি দীর্ঘদিন ধরে তাকে চিনি, অনেক সময় একসাথে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য বিষয় সম্পর্কে কাজ করেছি।