নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০৪ এএম, ২৩ এপ্রিল, ২০১৮
ভাটির মাটি, কাদা ও জলে মাখামাখি করে বড় হয়ে ওঠা একজন খাঁটি মাটির মানুষ । তাঁর কথা বলার ভঙ্গি, রসিকতার ছলে বক্তব্য দেওয়া তাঁকে অনন্য উচ্চতায় আসন দিয়েছে। তিনি ইটনা, অষ্টগ্রাম আর মিঠামইন অঞ্চলের চার পুরুষের নেতা। ভাটি অঞ্চলের মানুষের হৃদয়ের অতি আপনজন। দরদী এই মানুষটি ভাটি অঞ্চলের সকলের অত্যন্ত প্রিয় হামিদ ভাই।
মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ ১৯৪৪ সালের পয়লা জানুয়ারি কামালপুরের মিঠামইন উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম হাজী মো. তায়েব উদ্দিন এবং মা মোছা. তমিজা খানম। পাঁচ ভাই তিন বোনের মধ্যে মো. আব্দুল হামিদ তৃতীয়। রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ স্কুল জীবন থেকে ছাত্ররাজনীতির সাথে যুক্ত হয়।
আমার শৈশব কাল থেকেই আমি অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল হামিদ ভাইকে চিনি। তিনি কিশোরগঞ্জ কোর্টে প্র্যাকটিস করতেন আর রাজনীতি করতেন। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অনেক স্নেহধন্য ছিলেন এবং বঙ্গবন্ধুর চরিত্রের অনেক বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলিও মো. আব্দুল হামিদের মধ্যে আমরা লক্ষ্য করি।
কিশোরগঞ্জের যেকোনো মানুষ যে মো. আব্দুল হামিদের সান্নিধ্যে এসেছে একবার, অল্প কিছু সময়ের ব্যবধানেই সে তাঁর আত্মীয়তার সম্পর্কে আবদ্ধ হয়ে যেত। মানুষকে আপন করে নেওয়ার অসাধারণ ক্ষমতা আছে আমাদের রাষ্ট্রপতির। যে গুণটি ছিল হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের।
মো. আব্দুল হামিদ অত্যন্ত সাদামাটা জীবনে অভ্যস্ত। সাধারণ মানুষদের ভাগ্যের উন্নয়নের জন্যেই তিনি রাজনীতি করেন। তাঁর নিজের ব্যক্তিগত সুখ সুবিধার কথা তিনি কোনোদিন ভাবেন না। রাষ্ট্রপতি হবার আগে একবার নির্বাচন চলাকালীন সময়ে চোখে সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু তিনি নির্বাচনের প্রচারণা ছেড়ে চোখের চিকিৎসা করাতে রাজি নয়। তাঁকে সেই সময় আমরা এক প্রকার জোর করেই ঢাকা এনে চোখের চিকিৎসা করাই। ঘটনাটা উল্লেখ করলাম রাজনীতি ও মানুষের প্রতি মো. আব্দুল হামিদ কতটা নিবেদিত প্রাণ তা বোঝানোর জন্য। আমার সৌভাগ্য যে আমি তাঁর এবং তাঁর স্ত্রী রাশিদা বেগমের চিকিৎসা করেছি।
রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের বাড়ি কিশোরগঞ্জের প্রতিটা মানুষের জন্য ছিল উম্মুক্ত। সন্ধার পর তাঁর বাসায় চলত রাজনৈতিক আলোচলা, হাসি ঠাট্টা ও আড্ডা। সেই আড্ডা শেষ হত গভীর রাতে। কিশোরগঞ্জের রাজনীতি মো. আব্দুল হামিদকে ঘিরেই আবর্তিত হত। মো. আব্দুল হামিদ কিশোরগঞ্জের উন্নয়নের জন্য নানা রাজনৈতিক দিক নির্দেশনা ও পরামর্শ দিতেন যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে।
কিশোরগঞ্জের মাটি এখনো বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের নৌকার ঘাঁটি। হাওড় বেষ্টিত কিশোরগঞ্জের মানুষের মধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের আদর্শ প্রচার ও অনুপ্রাণিত করে সে আদর্শ এখনো ধরে রেখেছেন যে ব্যক্তিটি তাঁর নাম মো. আব্দুল হামিদ।
মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ কিশোরগঞ্জে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ মেডিকেল কলেজ। এই মেডিকেল কলেজে অত্র অঞ্চলের গরিব ও দরিদ্র মানুষদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। এই মেডিকেল কলেজে সুনামের সহিত ছাত্রছাত্রীরা লেখাপড়া করে।
অত্র এলাকার লোকজন কিশোরগঞ্জের মানুষদের অভিভাবক মনে করেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদকে। কিশোরগঞ্জের মানুষ বিপদে আপদে রাষ্ট্রপতির শরণাপন্ন হন। রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদও তাঁর শত ব্যস্ততার মাঝেও সময় দেন তাঁদেরকে। মানুষের দুঃখ দুর্দশার কথা শোনেন মনোযোগ দিয়ে এবং চেষ্টা করেন সমাধানের। আবার অনেক লোক আছে যাদের কোন চাওয়া পাওয়া নেই রাষ্ট্রপতির কাছে, একবার একটুখানি দেখা করে কথা বললেই তাঁরা খুশি। ৩০ বছর আগের মো. আব্দুল হামিদ আর বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের মাঝে কোনো পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায় না।
মো. আব্দুল হামিদের সবচেয়ে বড় গুণ হলো উনি অতি সহজেই ছোট বড় সকল মানুষের সাথে খুব সহজেই কম সময়ে মিশে যেতে পারেন। রাষ্ট্রপতি হবার পরেও স্যার বলাটা তিনি পছন্দ করেন না। তাই প্রায় সকলেই তাঁকে ভাই বলেই সম্মেধন করে।
আরেকটি কথা রাষ্ট্রপতি সমন্ধে না বললেই নয়। তিনি অনেক সময়ই তাঁর বক্তব্যে বলেন যে, তিনি ছাত্র হিসেবে খুব ভাল ছিলেন না। কথাটি আমরা যারা তাঁকে কাছে থেকে জানি বা চিনি তাঁরা জানেন মো. আব্দুল হামিদ কতটা মেধাবী, বুদ্ধিমান ও দুরদর্শী।
আমার জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য ও স্মরণীয় ঘটনা দিয়ে এই লেখার সমাপ্তি করতে চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দান করেন। আমি মহাখালিতে মহাপরিচালকের চেয়ারে বসার আগ মুহূর্তে রাষ্ট্রপতির পিএসকে ফোন দিয়ে রাষ্ট্রপতির দোয়া নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করি। মহামান্য রাষ্ট্রপতি সাথে সাথে আমার সাথে কথা বলে আমাকে দোয়া ও উপদেশ দেন। সেই সাথে আমার সফলতাও কামনা করেন। সেদিন সেখানে উপস্থিত সকল কর্মকর্তাবৃন্দ রাষ্ট্রপতির সেই কথা ও উপদেশ শোনেন। সেদিনের ঘটনা আমার জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য ও ঐতিহাসিক ঘটনা ছিল। আমার মতো একজন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সামান্য ইচ্ছা প্রকাশে, রাষ্ট্রপতির মত এত ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও সাড়া দেওয়া থেকে বোঝা যায় আমাদের রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ মানুষের ভালবাসার কি পরিমাণ গুরুত্ব প্রদান করেন।
হাওড় অঞ্চলের মানুষের প্রতি ভালবাসার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মো. আব্দুল হামিদ। মো. আব্দুল হামিদের মত জনসম্পৃক্ত এবং জনপ্রিয় রাষ্ট্রপতি তাঁর কর্মের মাধ্যমেই তিনি বাংলাদেশ ও তার প্রিয় হাওড়বাসীর হৃদয়াকাশে উজ্জ্বলতম নক্ষত্র হিসেবে স্থান করে নিয়েছেন।
লেখক: খ্যাতনামা চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. দ্বীন মোহাম্মদ নূরুল হক। তিনি জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক, দ্বীন মোহাম্মদ আই হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান।
বাংলা ইনসাইডার/আরকে/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আমদের দেশে এখন গ্রীষ্মকাল, প্রচন্ড গরম, তার সাথে মাঝে মাঝে বর্ষাকালের বৃষ্টি যার ফলে কিছু জেলার বাসিন্দারা বিধ্বংসী বন্যা পরিস্থিতিতে দারুন অসুবিধার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন! সমস্ত জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র এবং বাধা সত্ত্বেও, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আনন্দময় মুহূর্ত অনেক আশা এবং অনুপ্রেরণা দিচ্ছে, ঠিক তখন কোভিডের কারণে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে হাতে গুনা অল্প কিছু লোক সংক্রামিত হওয়া এবং কোনো মৃত্যু না দেখে, ভাবতে শুরু করেছিলাম যে হয়ত আমরা কোভিড-১৯, মহামারীর প্রাদুর্ভাবের পর থেকে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে দারুন ভোগান্তির পর কোভিডকে আমাদের পিছনে ফেলে আসতে পেরেছি। আর বার বার কোভিডের "নতুন তরঙ্গের" কারনে কোভিড সংক্রামিত মানুষের এবং মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার কথা সম্ভবত কেউ আর শুনতে চায়নি। কি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা কিন্তু নিষ্ঠুর বাস্তবতা হল সাম্প্রতিক বাংলাদেশের তথ্য ইঙ্গিত করছে ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট, BA.4 এবং BA.5-এর সাবলাইনেজ, সংক্রমণ বিশ্বজুড়ে অন্যান্য অনেক দেশের মত বাংলাদেশেও একটি নতুন তরঙ্গ শুরু করেছে।
আজকাল এখন আর কোভিডের তথ্য সংবাদপত্র বা টেলিভিশন সংবাদের বড় শিরোনাম নয়, মহামারীটি আর সংবাদের উপর আধিপত্য বিস্তার করছে না যেভাবে কিছুদিন আগেও তা করেছিল, তবুও আমরা কোভিড নিয়ে কোথায় আছি এবং আমাদের কী করা দরকার তা নিয়ে জরুরিভাবে আলোচনা আর মূল্যবান সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার। আমাদের আত্মতুষ্ট হওয়া উচিত নয় বরং নতুন তরঙ্গের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আমাদের জাতীয় কৌশল কী হওয়া উচিত সবাই বসে তা নিয়ে আলোচনা করা আর জরুরি সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার। আজ ২৮শে জুন সরকার ২০৮৭ জনের সংক্রামিত হওয়ার এবং ৩ জনের মৃত্যুর সংবাদ দিয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে বলে মনে হচ্ছে। তাই বলে আতঙ্কে, আমাদের তাড়াতাড়ি এবং ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়।
সুসংবাদ, ওমিক্রনের এই বৈচিত্রগুলি খুব একটা গুরুতর নয়, তবে সমস্যা হল ওমিক্রনের এই বৈচিত্রগুলির লোকেদের পুনরায় সংক্রামিত করার সক্ষমতা রয়েছে, এমনকি যারা পূর্বে ওমিক্রনের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন, বা যারা সম্পূর্ণ টিকা পেয়েছেন বা যারা বুস্টার ডোজও পেয়েছেন তারাও সংক্রামিত হতে পারেন। ফাইজার ভ্যাকসিনের পর পর তিনটি ডোজ পাওয়ার পরেও আমি খুবই হালকা দুই দিনের লক্ষণগুলি সহ ওমিক্রনে সংক্রামিত হয়েছি এবং পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছি। তাই আমাদের মনে রাখতে হবে যে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে "হার্ড ইমিউনিটি" (যেখানে পর্যাপ্ত লোকদের টিকা দেওয়া হয়েছে বা যারা ইতিমধ্যে সংক্রামিত হয়েছে সেখানে আরও সঞ্চালন বন্ধ করা জন্য প্রাকৃতিক অনাক্রম্যতা) পৌঁছানো সম্ভবত অসম্ভব। সাংহাই এবং বেইজিং শহরে চীনা কর্তৃপক্ষের অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিত লকডাউনের পরেও ওমিক্রনের বিস্তার বন্ধ করতে সেখানে অসুবিধার কথা আমাদের ভবিষ্যতের কৌশলগত পরিকল্পনার জন্য বিবেচনা করতে হবে।
যদিও ইদানিং বাংলাদেশে কোভিড রোগের দ্রুত সঞ্চালন উদ্বেগের কারন হতে পারে, কিন্তু সবচেয়ে আশ্বাসের বিষয় হল কোভিডের মুখোমুখি এবং যুদ্ধ জয়ে আজ আমাদের কাছে মোতায়েন করার জন্য প্রচুর বৈজ্ঞানিক জ্ঞান এবং সরঞ্জাম রয়েছে। এছাড়াও, গবেষণা বিশ্লেষণ ইঙ্গিত করে যে ওমিক্রন প্রকৃতপক্ষে হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুর ক্ষেত্রে যথেষ্ট পরিমাণে ডেল্টার চেয়ে হালকা। বেশিরভাগ মানুষের জন্য, কোভিড-১৯ মৌসুমী ফ্লু থেকে, বিশেষত পশ্চিমা দেশগুলিতে, কম প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে। ডেল্টার তুলনায় ওমিক্রনের তীব্রতা হ্রাস পেয়েছে, কারণ সফল টিকা দেওয়ার পরে বেশিরভাগ মানুষ উচ্চ মাত্রার অনাক্রম্যতা অর্জন করেছে। তবে, বিপুল সংখ্যক লোক সংক্রামিত হওয়ার কারণে এবং এর দীর্ঘমেয়াদী বিরূপ পরিণতি হওয়ার পরিনিতি, সফল আর সময় মত এর পরিচালনা, চিকিত্সা যত্নের প্রাপ্যতা এবং বিশাল ব্যয় সম্পর্কে আমাদের এখনি নজর দেওয়া দরকার।
অবশ্যই, এই রোগের সাথে সম্পর্কিত দীর্ঘকালের নেতিবাচক স্বাস্থ্যের ফলাফলের ক্রমবর্ধমান সংখ্যার কথা বিবেচনা করে আমাদের সকলের এবং সরকারের উচিত হবে বারবার কোভিড-১৯ দ্বারা আক্রান্ত হওয়া এড়ানোর কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া। বড় চ্যালেঞ্জ হল জীবন ও জীবিকার মধ্যে আমরা কতটা বা কিভাবে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারি এবং কি ভাবে কোভিডকে সম্পূর্ণরূপে এড়াতে পারি? মজার বিষয় হল, এই রোগের বাহক আর সংক্রমণের কারন হল আমাদের চেনা জানা অন্যান্য লক্ষণহীন সংক্রামক মানুষ, যাদেরকে আমরা দেখতে, যাদের কাছাকাছি থাকতে, কোলাকুলি করতে, সমাজিকতা বজায় রাখতে বা কাজের কারণে তাদের সম্পর্কে আসাটা আমরা উপভোগ করি। মানুষ হল সামাজিক প্রাণী, এবং তাই অনেক লোকের জন্য আমাদের জীবনের মানের একটি বড় অংশ হল অন্যদের সাথে স্বাধীন ভাবে মেশা - যেমনটি উত্সব, উদযাপন এবং সামাজিক ইভেন্টগুলিতে দ্রুত ফিরে আসা এবং সেই সময় গুলো উপভোগ করা। আর এই কারণেই ভাইরাসটি শীঘ্রই আমাদের ছেড়ে চলে যাবে না, অদূর ভবিষ্যতেও নয়। আমরা ভাইরাসটির সাথে কীভাবে ভালো ভাবে বাঁচতে পারি তা আমাদের শিখতে হবে। কারন একই সাথে আমরা বেঁচে থাকতে এবং আমাদের জীবিকা বজায় রাখতে চাই।
মুখোশ এবং বায়ুচলাচল এখনও গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা যা আমরা মেনে চলতে পারি। একটি মেডিকেল-গ্রেড মাস্ক পরা শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করার একটি কার্যকর উপায়, বিশেষ করে জনাকীর্ণ সমাবেশ গুলোয়। আপনি যদি এমন একটি জায়গায় যান, বা চলাচল করেন বা যাএি হন যেখানে অনেক লোক একসাথে আপনার সাথে থাকবে, যা আপনার জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপুর্ন সেখানে যাবার আগে হয় আপনার পকেটে বা হ্যান্ডব্যাগে বা ব্রিফকেসে মাস্ক রাখবেন এবং সেখানে থাকাকালিন মুখোশ পরে থাকবেন। এখন থেকে আমরা ভবিষ্যতের বাঙ্গালী সামাজিক আদর্শ হিসাবে এটি গ্রহণ করা শিখতে পারি। আর আমাদের সঠিক এবং পর্যাপ্ত ইনডোর বায়ুচলাচল নিশ্চিত করতে হবে। যাদিও, একমাএ উপযুক্ত বায়ুচলাচল ব্যাবস্থা দ্বারা সংক্রমণের একটি তরঙ্গ বন্ধ করার সম্ভাবনা কম, তবুও আমাদের ইনডোর এবং বদ্ধ পরিবেশে উপযুক্ত পর্যাপ্ত বায়ুচলাচল নিশ্চিত করা দরকার।
বাংলাদেশের চমৎকার প্রচেষ্টা এবং বিপুল ব্যয়ের জন্য ধন্যবাদ, দেশটি তার বেশিরভাগ জনসংখ্যাকে কার্যকর কোভিড ভ্যাকসিনের দুই ডোজ সরবরাহ করতে সক্ষম হয়েছে। দেশ সমান সংখ্যক লোককে বুস্টার ডোজ প্রদানের ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্যভাবে ভাল করছে। ভবিষ্যতে বিশেষ করে শুধু মাএ জনসংখ্যার সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর মানুষকে আবারও বুস্টার ডোজ (বার্ষিক হতে পারে) প্রদানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের সব রকম পরিকল্পনা আর প্রস্তুতি থাকতে হবে।
কোভিড টিকা দেওয়ার প্রাথমিক অসাধারণ সাফল্য পর, ভবিষ্যতে আবারও কোভিড ভ্যাকসিনের গণ টিকা প্রচারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমি আরও আলোচনার এবং বৈজ্ঞানিক প্রমাণের জন্য অপেক্ষা করার অনুরোধ করব। ধনী দেশ এবং কোম্পানিগুলোর মেধা সম্পত্তি অধিকার (intellectual Property Right) মওকুফ করতে সম্মত হওয়ার অপেক্ষায় থাকাকালীন পুনরায় এই জাতীয় সমস্ত জাতি প্রশস্ত টিকা প্রদানের বহুল ব্যয়ের কৌশলের কার্যকারিতা বিবেচনা করতে হবে। অন্যান্য অবকাঠামোগত বিকাশ অবশ্যই আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার হতে হবে। আমি পূর্ণভাবে বিশ্বাস করি আমঅবকাঠামোগত বিকাশে বিনিয়োগ আমাদের জীবিকা নির্বাহ এবং শেষ পর্যন্ত জীবন বাঁচাতে সহায়তা করবে। আজ সমৃদ্ধ পশ্চিমা দেশগুলো ধার নিতে এবং প্রচুর পরিমাণে অর্থ কোভিড প্রোগ্রামে ব্যয় করতে পারে কারণ তারা তাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার আমঅবকাঠামো শক্ত ভাবে তৈরি করেছে। মনে রাখতে হবে, বিদ্যমান সক্ষমতা নিয়ে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল অনেক দেশের সেই ভ্যাকসিন তৈরির সক্ষমতা আছে এবং তারা সল্প ব্যায়ে তা উৎপাদন করতে পারে, এবং তার ফলে টিকা প্রদানের খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা সম্ভব। আসুন সেই ধনী দেশগুলি এবং সংস্থাগুলিকে দরিদ্র দেশ এবং তাদের নাগরিকদের জীবন আর জীবিকার ব্যয়ে প্রচুর মুনাফা করার বিরুদ্ধে সজাগ হই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ এবং গাভিকে অবশ্যই মেধা সম্পত্তির অধিকার মওকুফ করা নিশ্চিত করতে কঠোর হতে হবে এবং একসাথে কাজ করতে হবে এবং অপ্রাকৃত মুনাফা অর্জনের বিরুদ্ধে তাদের আওয়াজ তুলতে হবে।
যখন আমরা আমাদের নিজস্ব ভ্যাকসিন তৈরি করতে সক্ষম হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি সে সময়ে আমাদের কৌশল কী হওয়া উচিত সে সম্পর্কে আমি আমার পূর্ববর্তী নিবন্ধে "পরীক্ষা এবং চিকিত্সা" কৌশল গ্রহণ করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। সমস্ত ফার্মেসি, হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং প্রাইভেট মেডিকেল প্র্যাকটিশনার জায়গা গুলোতে ফাইজার এবং মার্কের অ্যান্টিভাইরাল সরবরাহ করা উচিত, যাতে একটি "চিকিৎসা করার জন্য পরীক্ষা" স্কিম চালু করা যায়, যেখানে কোভিড পজিটিভ পরীক্ষার পরেই, সবাই বিশেষ করে যারা দুর্বল এবং বয়স্ক গোষ্ঠী, যাদের ভ্যাকসিনগুলি কম কার্যকর হতে পারে, তারা কার্যকর চিকিত্সার সেই ওষুধগুলি আর্থিক সীমাবদ্ধতা ছাড়া পান। এটি কেবল হাসপাতালে ভর্তি হ্রাস করবে না তবে জীবন বাঁচাবে এবং জীবিকা নির্বাহ চালিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা বজায় রাখবে।
জনস্বাস্থ্য হল এমন সমস্ত বিষয় যা জনগনকে সুস্থ ও সুখী জীবনযাপন করতে সাহায্য করে। জীবন এবং জীবিকার সুষম কৌশল সম্পর্কে পরামর্শ দেয়। যখন আমাদের "কোভিডের সাথে বাঁচতে পারি" বা “ বাঁচতে পারবো কিনা” সে বিষয়ে জোরালো মতামত প্রকাশ করা অব্যাহত রয়েছে, বাস্তবতা হল এই গ্রহের প্রায় প্রতিটি দেশই, ধনী বা দরিদ্র, উন্নত বা উন্নয়নশীল দেশ এই মহামারী দ্বারা সমানভাবে প্রভাবিত হয়েছে। মানুষ বা দেশ হিসাবে আমরা প্রতিদিন যে সমস্ত সমস্যাগুলির মুখোমুখি হই, অন্যান্য সমস্ত সমস্যাগুলির মধ্যেও এই ভাইরাস বিষয়ে আমরা প্রতিদিন আরও শিখছি এবং এই সংক্রমণ দ্বারা আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া বিশাল সমস্যাটি কাটিয়ে উঠতে কার্যকর শক্তিশালী ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। আমাদের একমত হতে হবে, কোভিড পরিস্থিতি জটিল, এর কোনও দ্রুত এবং সহজ প্রতিকার নেই। না, আমরা এখনও কোভিড-১৯ সমাধান করি নি, তবে আমরা এই রোগটি পরিচালনা করতে আরও চৌকস এবং আরও ভাল হয়ে উঠছি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষ দূত ডাঃ ডেভিড নাভারো কোভিড-১৯ ভাইরাস নিয়ে বলেছেন: “এখন আমাদের অনেকের জন্য, কোভিড-১৯ এর অসুস্থতা জীবন হুমকির পরিবর্তে একটি সাধারন অসুবিধার কারণ হবে, তবে মনে রাখবেন, কিছু লোক বিশেষত দুর্বল, যারা অন্যান্য সহ-অসুস্থতার সাথে বসবাস করছেন এবং এখনও টিকা নিতে অস্বীকার করছেন বা কোন কোভিড ভ্যাকসিন পাননি, কোভিড এখনও তাদের জন্য প্রাণঘাতী হতে পারে।”
আসুন কোভিড নিয়ে বাঁচতে শিখি, মাস্ক ব্যবহার করি, যত সম্ভব ভিড়ের পরিবেশ এড়িয়ে চলি, যখন আমাদের কোভিডের লক্ষণ থাকে, অবিলম্বে পরীক্ষা করি এবং যদি আমাদের ইতিবাচক পরীক্ষা করা হয় তবে নিজেকে আলাদা করি, মানুষকে আমাদের পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন করি। আসুন জাতীর আর আমাদের প্রজন্মের উন্নত ভবিষ্যৎ আর জীবন আর জীবিকার উন্নতির জন্য এক সাথে কাজ করি। আমরা একটি গর্বিত জাতি এবং আমরা বারবার প্রমাণ করেছি যে আমরা এটি করতে পারি।
(এই নিবন্ধটি অন্যান্য প্রকাশনাগুলির সহায়তায় প্রস্তুত করা)
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
গ্রামীণ ব্যাংকের প্রাক্তন এমডি ড. ইউনূসের পক্ষে গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠানো হয়েছে। এতে গ্রামীণ ব্যাংক সম্পর্কিত আইনের নানা ভুল ব্যাখ্যা এবং অসত্য তথ্য দেয়া হয়। গ্রামীণ ব্যাংক কোন বেসরকারি ব্যাংক নয়, এটি একটি statutory public authority বা সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ/প্রতিষ্ঠান। সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ বলতে সে সকল প্রতিষ্ঠানকে বুঝায়, যে প্রতিষ্ঠান কোন নির্দিষ্ট আইনের দ্বারা সৃষ্ট এবং আইনে উল্লেখিত বিধানাবলীর আলোকে ঐ প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়...
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরদিন সকালে আমার আশি উর্ধো বয়সী মা’র ফোন পেলাম। সালাম বিনিময়ের পর মা বললেন, ‘বাবা, পদ্মাসেতু দেখতে যামু’। আমি বললাম, ‘এখনতো ভীড়, কয়েকদিন পর যাই, মা’। উত্তরে মা বললেন, ‘কাইল-পরশু চলো পদ্মাসেতু দেখতে যাই। গাড়ী দিয়া পদ্মা পার হইয়া বাপের বাড়ি যামু, তোমার দাদা বাড়ি যামু’। আমার মা আবেগ তাড়িত হয়ে স্মৃতিপট থেকে তুলে এনে জানালেন, মা’র বিয়ের পর প্রথম যখন আমার বাবার সাথে ঢাকা আসেন তখন আমি তার কোলে, ১০ মাসের শিশু আমার বড় ভাই আবুল হোসেন ৪ বছর বয়সে ডায়ারিয়া হয়ে যথাযথ চিকিৎসার অভাবে মারা গেছেন। তাই তড়িঘড়ি করে আমাকে নিয়ে ঢাকা আসা।
আমদের দেশে এখন গ্রীষ্মকাল, প্রচন্ড গরম, তার সাথে মাঝে মাঝে বর্ষাকালের বৃষ্টি যার ফলে কিছু জেলার বাসিন্দারা বিধ্বংসী বন্যা পরিস্থিতিতে দারুন অসুবিধার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন! সমস্ত জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র এবং বাধা সত্ত্বেও, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আনন্দময় মুহূর্ত অনেক আশা এবং অনুপ্রেরণা দিচ্ছে, ঠিক তখন কোভিডের কারণে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে হাতে গুনা অল্প কিছু লোক সংক্রামিত হওয়া এবং কোনো মৃত্যু না দেখে, ভাবতে শুরু করেছিলাম যে হয়ত আমরা কোভিড-১৯, মহামারীর প্রাদুর্ভাবের পর থেকে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে দারুন ভোগান্তির পর কোভিডকে আমাদের পিছনে ফেলে আসতে পেরেছি।
সীতাকুণ্ড ট্রাজেডির পরদিন সন্ধ্যায় ফেসবুকে আমি একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। '২৫ জুন পর্যন্ত হরতাল বা নাশকতার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না!' দেশের সমসাময়িক রাজনীতির ধারা হিসাব করলে এমন সম্ভাবনা আসলেই উড়িয়ে দেয়া যায় না। তারপর কি হলো? ৫ জুন পাবনার বেড়ার কিউলিন ইন্ডাস্ট্রি। ৬ জুন রাজধানীর বছিলার জুতার কারখানা। ১০ জুন রাজধানীর নর্দ্দা এলাকায়...