নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০৮ এএম, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
সবুজ শ্যামল এই বাংলায় শীতকাল একটি বিশেষ সময় আমাদের ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবনে। শীতকালেই আমাদের দেশে জাতীয় নির্বাচন হয় আবার শীতকাল এলেই সবুজ শ্যামল বাংলার গাছেরা পাতা ঝরিয়ে হয় নিরাভরণ। বহিরাবরণ ঝেড়ে ফেলে স্বরূপে প্রকাশিত হয় অধিকাংশ সুন্দর বৃক্ষরাজি। একই কায়দায় শীতের সময় অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আমাদের নষ্ট, ভ্রষ্ট, অর্থ ও ক্ষমতালোভী, ছদ্মবেশী, বেঈমান রাজনীতিকগণ আস্তে আস্তে একটার পর একটা মেকি পোশাক খুলে নিরাভরণ হন ক্যাবারের ড্যান্সাদের মত।
চেতনা ব্যবসায়ী, ভণ্ড, ভ্রষ্ট, পোশাকি, অর্থ ও ক্ষমতালোভী, বেঈমান রাজনীতিক সবার কথা বলতে গেলে লেখার কলেবর একটা বইতে রূপান্তরিত হতে পারে তাই একজন তথাকথিত শীর্ষ ব্যক্তিকে নিয়েই আমার দেওয়া উপমাগুলোর সত্যতা খুঁজার চেষ্টা করা যেতে পারে। ডক্টর কামাল হোসেন নামের রাজনীতিকের জীবনের কিছু অংশের ব্যবচ্ছেদ করে দেখা যাক কী পাওয়া যায় তাতে।
ড. কামাল এদেশের এমন একজন ভণ্ড নক্ষত্র, যার নিজের রাজনৈতিক আলো নেই, যিনি আলোকিত হয়েছেন অপরের আলোয়। নিজস্ব কোনো আলো তাঁর কাছ থেকে কখনোই বিচ্ছুরিত হয় নি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর উদারতায় তাঁরই ছেড়ে দেওয়া আসনে ১৯৭০ ও ১৯৭৩ সালে। সেই তিনিই বলেন, এই সরকার অংশগ্রহণমূলক সরকার না, অনির্বাচিত সরকার। মন্ত্রীও হন বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার একাধিক মন্ত্রণালয়ের। আইন মন্ত্রী থাকার সময় পদাধিকার বলে উনি সংবিধান প্রণয়ন কমটির সভাপতি ছিলেন, তাই সংবিধান বিশেষজ্ঞ!
তিনি মুখে মুখে মুক্তিযুদ্ধ আর স্বাধীনতার কথা বললেও মনে প্রাণে প্রায় ষোলআনাই পাকিস্তানি। টাকার লোভে, খ্যাতির লোভে পাকিস্তানি এজেন্ট হয়ে কাজ করেছেন সারাজীবন। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পরেও তার আচরণ ছিল খুব সন্দেহজনক, যা বিখ্যাত সাংবাদিক আব্দুল গাফফার চৌধুরী তাঁর অনেক লেখায় উল্লেখ করেছেন। আমরা সে দিকে না গিয়ে সাম্প্রতিক ও অতীত কিছু ঘটনার দিকে দৃষ্টি দিতে পারি। হালের যুক্তফ্রন্ট করার আলোচনার শুরুতে তিনি বলেছেন, জামায়াতের সঙ্গে জোট থাকলে তিনি বিএনপি’র সঙ্গে জোট করবেন না। আসলে এটা কী টাকার জন্য বারগেনিং না অন্য কিছু! গত দুই দিন আগে জামাত ইস্যুতে তাঁর সুর উল্টে কিছুটা ফিকে হয়ে গেছে।
ড. কামাল হোসেনের মেয়ে ব্যারিস্টার সারা হোসেন মানবাধিকার সংগঠনের নামের আড়ালে নিজের ইহুদী স্বামীর সঙ্গে পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে লবিস্টের কাজ করেছেন, তাও জামায়াতের পক্ষে, মানবতাবিরোধীদের শাস্তি মওকুফের জন্য। এটা কি ড. কামাল হোসেন জানেন না? কেউ কি তা বিশ্বাস করবেন? আসল কথা হচ্ছে টাকা, তাও মোটা অঙ্কের টাকা। জামায়াত যে নিজেকে ইহুদী-নাসারা বিরোধী বলে জাহির করে, তাও চরম মিথ্যাচার তার প্রমাণ ব্যারিস্টার সারা হোসেনের ইহুদী স্বামীকে তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য লবিস্ট হিসেবে নিয়োগ।
পাকিস্তানপন্থী ডক্টর কামাল হোসেনের পাকিস্তানের এজেন্ট হয়ে কাজ করার আরও অনেক তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায় তাঁর অতীত ঘাটলে।
১। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. সা`দত হুসাইন বলেছেন, ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে, বিশেষ করে চরমপত্র অনুষ্ঠান থেকে ড. কামালকে তীব্র সমালোচনা বা প্রায় গালাগালি করে নানাবিধ প্রচার করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর পাশে ড. কামালকে কেমন যেন বেখাপ্পা মনে হচ্ছিল। তবুও বঙ্গবন্ধুর সিদ্ধান্ত। এনিয়ে নিজের মনে চুপিসারে প্রশ্ন তোলার উপরও সে দিনের সে পরিবেশে কোথায় যেন একটা মানসিক নিষেধাজ্ঞা ছিল।’
২। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং বঙ্গবন্ধুর সরকারের তথ্য, কৃষি ও যোগাযোগ মন্ত্রী শেখ আবদুল আজিজ তার লেখা বইয়ে বলেছেন, ‘... আমরা মন্ত্রিবর্গ, ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাহেব ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন সাহেবের নেতৃত্বে ১০ জানুয়ারি সকালে ঢাকা বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধুকে অভ্যর্থনা জানাই। রমনা ময়দানের জনসভাস্থলে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনার জন্য সকাল থেকেই মানুষের ঢল নেমেছিল।
আমরা মন্ত্রীরা জনসভার মঞ্চে উঠলাম। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ড. কামাল হোসেনও মঞ্চে উঠলেন। কামাল হোসেন মঞ্চে দাঁড়ানোর কারণে জনতা প্রতিবাদ জানায়। সে সময় বঙ্গবন্ধু আমাকে বললেন, `কামাল সম্পর্কে জনতাকে কি বলবো`? আমি তাকে বললাম, `তুমি যেটা ভালো মনে করো সেটাই বলো`।
বঙ্গবন্ধু বললেন, `ড. কামাল হোসেন আমার সঙ্গে জেলে ছিল`। আমি উত্তরে বলেছিলাম, `তাই বলো।’ বঙ্গবন্ধু বিক্ষিপ্ত জনতাকে বললেন, `আপনারা গোলমাল করবেন না। কামাল হোসেন আমার সঙ্গে জেলে ছিল।’
৩। সাবেক রাষ্ট্রদূত কামরুদ্দীন আহমদ তাঁর বইতে লিখেছেন, ‘... ঢাকায় যেদিন মুজিব ফিরে এলেন তার প্রথম কর্তব্য কাজ মনে হলো ড. কামাল হোসেনকে বাংলাদেশের বিরোধিতার অভিযোগ ও মুক্তি বাহিনীর সন্দেহ থেকে মুক্ত করা। যা তিনি প্রথম দিনকার জনসভায় বিচক্ষণতার সঙ্গেই করতে সক্ষম হয়েছিলেন।’
৪। ‘... শোনা যায়, কিসিঞ্জার চীন সফরে যাওয়ার পথে পাকিস্তানে বন্দী তার অন্যতম উপদেষ্টা ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। আদৌ বলেছিলেন কি? বলে থাকলে তার বিষয়বস্তু কি ছিল তাও জানা দরকার। ড. কামাল হোসেন এখনো জীবিত আছেন। তিনি এ ব্যাপারে আলোকপাত করলে আমাদের সমকালীন ইতিহাসের ঘাটতি কিছুটা হলেও হ্রাস পাবে।’ অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহর লেখা বই থেকে নেওয়া তথ্য।
৫। সাংবাদিক জাফর ওয়াজেদ তাঁর এক লেখায় বলেন, ‘Late Maj. Gen. A. O. Mitha (who was the ‘Father of SSG’- Special Services Group) of Pak Army. তার স্মৃতি কথা ❝Unlikely Beginnings❞ এ ডক্টর কামাল হোসেন সম্পর্কে লিখেছেন— ❝On 28 March, Aman told me that he had received a message from his brother-in-law Kamal Hussain, who had disappeared on 25 March with all of Mujib’s chief lieutenants. Kamal had not gone to India with the rest of the crowed; he wanted to be taken into custody, as he was worried that his life was in danger. I collected him from the home of one of his relations and put him in the divisional HQ Mess under guard. He was flown to West Pakistan next day. When I returned to West Pakistan, I used to visit him in Haripur Jail at least once a month because he was Aman’s brother-in-law and Aman was a good friend of mine. Kamal, I did not like, in fact I despised him after the meeting I have described at a dinner at Aman’s house. Despite all his and Rehman Sobhan’s rhetoric, neither of them sheds blood, and Kamal actually asked for sanctuary from those whom he considered his enemies. Later, when Mujib was assassinated, he and Sobhan repeated their performance; Kamal disappeared to the UK and Sobhan to the USA’.
৬। রইসউদ্দিন আরিফ তাঁর রাজনীতি, হত্যা ও বিভ্রান্ত জাতি বইতে বলেন, ‘... আপনাদের স্মরণ আছে কিনা জানিনা, `৭১-এ যুদ্ধকালীন সময়ে পুরো ৯ মাস টিক্কা-নিয়াজী-ইয়াহিয়া-ভুট্টো-মোনায়েম খাঁর সাথে সাথে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার দালাল হিসেবে কামাল হোসেনের নামটিও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র হতে ঘৃণাভরে উচ্চারিত হয়েছে। `স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র` থেকে এম আর আখতার মুকুল `চরম পত্রে`র ভাষায় `পাকিস্তানি জামাই কামাইল্লা` কে নিয়ে তিনটি চরমপত্র পাঠ করেছিলেন। এ ছাড়াও `৭০-এর নির্বাচনের পর শমসের নগর পরিত্যক্ত বিমান বন্দরে হেলিকপ্টারে বসে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার সাথে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগও রয়েছে কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে। ’
যাদের সঙ্গে মিলে মিশে ড. কামাল হোসেন ইদানীং ‘যুক্তফ্রন্ট’ করার চেষ্টা করছেন তাঁদের কয়েকজনের অতীত একটু জেনে নেওয়া যাক। সুজনের কর্তাদের বাসায় হয় ‘যুক্তফ্রন্ট’ গঠন পরিকল্পনা শুরুর দিকের অন্যতম বৈঠক। সুজন সভাপতি হাফিজ সাহেব হচ্ছেন আতাউর রহমান খান আর ‘লুকিং ফর শত্রুজ’ খ্যাত বাবর সাহেবের আত্মীয়। দৈনিক বাংলার খবরে বলা হয় যে, ১৯৭৬ এর ২৩ জানুয়ারি, বঙ্গভবনে জিয়ার উপস্থিতিতে স্বাধীনতা বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ভবিষ্যৎ রাজনীতি সুসংহত করার জন্য এক আলোচনা সভায় মিলিত হয়। বৈঠকে উপস্থিত নেতৃবৃন্দের মাঝে উল্লেখযোগ্য যারা ছিলেন তাঁরা হলেন-আতাউর রহমান খান, আবদুস সবুর খান, ড. আলীম আল রাজী, অলি আহাদ, কাজী জাফর আহমদ, সৈয়দ আজীজুল হক (নান্না মিয়া), মাওলানা সিদ্দিক আহমদ, মাওলানা আবদুর রহীম, মিসেস আমেনা বেগম। এখানে একদার কমরেড, পরবর্তীতে হেফাজতী কাজী জাফর ছাড়া কেউ স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি। হালের বিএনপি’র মহাসচিব পিতা চখা মিয়া ছিল কুখ্যাত কোলাবরেটর, আর বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রিজভীর বাবা ছিল ১৯৭১ সালে রাইফেলধারী রাজাকার। এদের সাথেই ইদানীং তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সৈনিক ড. কামাল হোসেনের উঠাবসা।
ড. কামাল হোসেন আর তার সাঙ্গপাঙ্গরা কিছুদিন আগে বিচারপতি সিনহার মাধ্যমে ‘ফতোয়া’ দিয়েছিলেন যে, ১৯৭২ সালে তার নেতৃত্বে তৈরি করা সংবিধান ভুল! তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সিনহার ঘাড়ে ভর করে ‘জুডিশিয়াল ক্যু’ করতে ব্যর্থ হয়ে ইদানীং তিনি হুংকার ছাড়ছেন, আগামীতে বিচারপতি সিনহার উপর করা অবিচারের বা খারাপ ব্যবহারের বিচার করার। বিচারপতিগণ যখন কোনো মামলার রায়ের ব্যাপারে সন্দিহান থাকেন তখন তাঁরা এমিকাস কিউরি নিয়োগ দেন। আসলে এমিকাস কিউরি নিয়োগ করা মামলার রায়ে থাকে এমিকাস কিউরিদের মারাত্মক প্রভাব। আসিয়ান সিটির এমডি নজরুল ইসলাম ভুঁইয়া উত্তরায় বাড়ি কিনে দিয়েছিলেন কোনো প্রধান বিচারপতিকে, মামলার রায় নিজের পক্ষে আনার জন্য? কত টাকা দিয়ে বাড়ি কিনে দিয়েছিলেন? সে খবর কি ড. কামাল হোসেন জানেন না? নাকি সব টাকার খেলা?
লেখক: উন্নয়ন কর্মী ও কলামিস্ট
Email: arefinbhai59@gmail.com
তথ্যঋণঃ বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল, সাংবাদিক জাফর ওয়াজেদ, রেজাউল করিম, নজরুল ইসলাম ভুঁইয়ার ড্রাইভার নিজাম।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৯ মার্চ, ২০২৪
বর্তমানে জামায়াত-বিএনপি এবং চরমপন্থী ডান এবং বাম এরা সবাই এক হয়ে গেছে। তারা প্রকাশ্যে এক হয়েছে কি হয়নি এটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে তাদের কাজকর্ম দেখে বুঝা যাচ্ছে যে, তারা এক হয়েছে এবং তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ওপর চরম আঘাত আনার চেষ্টা করবে। এজন্য তাদের দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারী পাকিস্তানি আইএসআই থেকে শুরু করে সব রকম সাহায্য সহযোগিতা সবই তারা পাবে। বিদেশি অনেক প্রবাসী বাংলাদেশিও তাদের টাকা পয়সা দেবে। দেশেরও বেশ কিছু ব্যবসায়ী তাদের দুকূল রক্ষার জন্য রাখার জন্য টাকা পয়সা দেবে। সুতরাং কোন দিক থেকে তাদের কোন অভাব হবে না। তারা এবার আগের চেয়ে তুলনামূলক ভাবে গুছিয়ে আন্দোলন শুরু করবে। আর এই কারণে তারা এখন ভারত বিরোধী স্লোগান তুলেছে। এই ভারত বিরোধী স্লোগান তোলার পিছনে শুধু বিএনপি-জামায়াত বা চরমপন্থী বাম কিংবা ডানরাই আছে এমন না, এর সাথে বাইরের শক্তিও জড়িত।
মনে রাখতে হবে, এই শক্তি যদি কিছুটা শক্তিও ধারণ করে সেটা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হবে। সেজন্য মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি যারা আছে তাদেরকে অবিলম্বে একতাবদ্ধ হতে হবে এই সমস্ত ষড়যন্ত্রকারী এবং ধর্মান্ধ ও চরমপন্থীদের প্রতিহত করার জন্য। আর এ ক্ষেত্রে আমি বলবো আওয়ামী লীগকেই এ কাজে এগিয়ে আসতে হবে। আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিতে হবে, যেমনটি আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধে দিয়েছিল। কমিউনিস্ট পার্টিকেও আমি আহ্বান করবো তারাও যেন এই জোটে এক হয়ে যায়। তবে আওয়ামী লীগকে এখানে বদান্যতা দেখাতে হবে। বাম দলগুলোর কার কত ভোট কিংবা জনসমর্থন এটা মূল বিষয় হওয়ার উচিত নয়। এখানে উচিত চরমপন্থীদের প্রতিহত করতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষকে এক হতে হবে। এই উদ্যোগ নিতে হবে আওয়ামী লীগকেই।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, এই মুহূর্তে এই দায়িত্ব দার্শনিক রাষ্ট্রনায়নক শেখ হাসিনা যদি আমির হোসেন আমুকে দেন তাহলে খুব ভালো হয়। কারণ আমু ভাই অত্যন্ত স্পষ্ট কথা বলেন। রাজনীতিতে চলার পথে ভুল ভ্রান্তি থাকবে। তার সমস্ত রাজনৈতিক জীবনে একটি মাত্র ভুল হয়েছে। তবে সেটা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখেছেন। সুতরাং সেটা আর কোন বিষয় হতে পারে না। আমরা মতে, আমু ভাই ছাড়া হেভিওয়েট কোন নেতা এখন আমির ভাইয়ের মতো সক্ষম নেই। ছাত্রজীবন থেকে আমরা আমু ভাইকে দেখেছি তিনি টকশোতে অত্যন্ত পারদর্শী। আর মুক্তিযুদ্ধের সমস্ত শক্তিকে এক করতে হলে এখানে আমাদের টকশো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আমু ভাইয়ের নেতৃত্বে রাশেদ খান মেমন, হাসানুল হক ইনু, শেখ সেলিম সাহেব, মনজুরুল আহসান খান এরা সবাই মিলে যদি এক সাথে থাকেন তাহলে আমরা যেকোন ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলা করতে পারব।
আমাদের নিজেদের মধ্যে যতই মতপার্থক্য থাকুক না কেন আমরা অবশ্যই মিটাতে পারব। একবার না হলেও দুবার বসতে হবে, দুবারে না হলে তিনবার বসতে হবে। কিন্তু নিজেরা বসে মিটমাট করতেই হবে। আমি কোন রাজনৈতিক দলকে বিলুপ্তের কথা বলছি না। যে যে রাজনৈতিক দল থাকবে। কিন্তু সকলের সামনে একই বিপদ। যদি এই চরমপন্থীরা আবার কোন রকম ভাবে আমাদের আঘাত করে তাহলে সেখানে কে আওয়ামী লীগ, কে জাসদ, কে কমিউনিস্ট পার্টি তারা এই সব বুঝবে না। তারা যাকেই সামনে পাবে তাকেই আঘাত করবে, পুরো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ওপর আঘাত হানবে। এবার উপজেলা নির্বাচনগুলোতে সেরকম ঘটনা ঘটলে অবাক হবার কিছু থাকবে না। কারণ সব চরমপন্থীরা এখন একত্র হচ্ছে। সেজন্য উপজেলা নির্বাচনে আমাদের একটা উপযুক্ত পলিসি নির্ধারণ করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের যিনি সবচেয়ে জনপ্রিয় সকলে একতাবদ্ধ হয়ে তাকে সমর্থন দিতে হবে। আমাদের আর সময় নষ্ট না করে একতাবদ্ধ হতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিগুলো যদি এক হয় তাহলে দেখা যাবে দেশের ১৮ কোটি জনগণ এক হয়ে গেছে। সুতরাং কার কতটা জোর আছে, কার কতটা জনসমর্থন আছে সেটি বিবেচনা না করে ১৪ দল সহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিগুলোকে একত্রিত হতে হবে। এটাই এখন মুখ্য বিষয়। তাহলেই আমরা চরমপন্থীদের নতুন ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে পারবো। আর আমাদের তো একজন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা আছেনই। তবে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে লড়তে আমাদের একত্রিত হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ।
অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী চরমপন্থী মুক্তিযুদ্ধ জামায়াত-বিএনপি ভারত বিরোধী আন্দোলন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১১:৫৯ এএম, ২৬ মার্চ, ২০২৪
যার গন্তব্য স্থান কোথায় সেটা ঠিক নাই, তিনি রাস্তায় গাড়ি বা রিক্সা যেভাবেই যান না কেন সে শুধু উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়াবেন। কারণ তার তো গন্তব্য ঠিক নাই। সে গুলশান যাবে, না নিউ মার্কেট যাবে কোথায় যাবে জানে না। বিএনপির অবস্থা এখন ঠিক তাই। তারা জানেই না তাদের আন্দোলনের গন্তব্য কোথায়। জানে না বলেই তারা একের পর এক ভুল করে রাজনীতির কানাগলিতে ঢুকে যাচ্ছে। এর একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ হলো হঠাৎ করে তারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা বুঝতে হবে যে, ভারতীয় পণ্য বর্জন সম্ভব কিনা? এখানে একটা কথা উল্লেখ্য করতে চাই যে, এদেশের জনগণ কার কথায় বিশ্বাস করেন? জনগণ বিশ্বাস করেন একমাত্র দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার কথা। কারণ তিনি যেটা বলেন সেটা করেন। তিনি যদি কোন প্রশ্নবোধক ডাকও দেন তাহলেও বহু লোক সেটাকে গ্রহণ করবে। কারণ তার প্রতি তাদের বিশ্বাস আছে। আর যে দলের নেতারা প্রায় সবাই হয় সাজাপ্রাপ্ত অথবা জামিনে আছে তাদের কথায় কোন লোক কানে দিবে না।
দ্বিতীয়ত হচ্ছে যারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের কথা বলছেন তারা তো ভোরে উঠেই আগে ভারতীয় টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করেন। দৈনন্দিন জীবনে যা ব্যবহার করি সবই তো ভারতীয় পণ্য। আমাদের বাজারে কোন জিনিস কিনতে গেলে তো ভারতীয় পণ্যটিই বেশি খুঁজি। তাহলে এখন কি আপনারা পেস্ট দিয়ে ব্রাশ না করে কয়লা ব্যবহার করতে চান? সেটা আপনারা করতে পারেন। কয়লার আজকাল দামও অনেক। আবার ঝামেলা হলো সহজে যাওয়া যায় না। সুতরাং সেটাও আপনাদের জন্য অসুবিধা।
কথায় আছে পাগলে কি না বলে ছাগলে কিনা খায়। সে ধরনের একটা রাজনৈতিক কর্মসূচি আপনারা দিয়ে দিলেন কোন কিছু না ভেবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এর মধ্য দিয়ে আপনারা আরও রাজনৈতিক গহ্বরে ঢুকে গেলেন। এখন ভাবে ঢুকছেন সেখান থেকে আর কোন দিন বের হতে পারবেন কিনা সেটা একটা প্রশ্ন।
আমরা এখন বিশ্বায়নের যুগে বাস করি। এখন বিশ্বের কোন দেশেরই নিজস্ব পণ্য বলে কিছু নেই। আমাদের সবাইকে সবার ওপর নির্ভর করতে হয়। সেখানে আপনারা ভারতকে বর্জন করবেন কি করে। ভারত তো সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশি দেশ। তার আগে আমাদের মনে রাখতে হবে ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা যুদ্ধ করেছি। সে সময় আমাদের ৩০ লাখ সহযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন। এর সাথে আরও ১০ থেকে ১৫ হাজজার ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশের জন্য বাংলাদেশের মাটিতে তাদের রক্ত ঝড়িয়েছেন। আামরা না হয় আমাদের দেশের জন্য রক্ত দিয়েছি। কিন্তু ভারতীয়রা তো জীবন দিয়েছে প্রতিবেশির জন্য। সুতরাং ভারতের সাথে আমাদের কন্ধনটা হলো রক্তের। রক্ত দিয়ে ভারতের জনগণের সাথে বাংলাদেশের জনগণের বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্ব আপনি পণ্য বর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ করবেন কি করে? বাসায় আপনার বউ থেকে শুরু করে বাসার কাজের মেয়ে সবাই ভারতের শাড়ি ব্যবহার করেন। তাহলে আগে তাকে বলবেন যে, আপনারা ভারতীয় পণ্য বর্জন করুন।
রিজভী সাহেব বঙ্গবাজার থেকে একটি চাদর কিনে এনে আগুনে পুড়িয়ে দিয়ে একটা নাটক করেছেন মাত্র। বঙ্গবাজারে আরও অনেক কিছু পাওয়া যায় যেগুলো ভারতের নামে চলে। এটা আমরা জানি। রমজান মাসে ইফতারে আপনি পিয়াজু রাখছেন। এটা বাঙালিদের ইফতারের একটা ঐতিহ্য বলতে পারেন। এটা আমরা খাবই। কিন্তু পেঁয়াজ তো আসে ভারত থেকে। তাহলে এখন তো আপনাকে ইফতারে পিয়াজুও বাদ দিতে হবে। এভাবে আপনি কত বাদ দিবেন। অনেক সময় ভারত থেকে ঝড় আসে। সে সময় তাহলে বাতাসও আপনি নিবেন না। এটা বর্জন করবেন। এটা কি সম্ভব? যদি সম্ভবই না হয় তাহলে পাগলের প্রলাপ বলে কি আর আন্দোলন হয়। পাগল তো তার নিজের ভালোটা বুঝে। আপনাদের ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান দিন শেষে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকেই লাভবান করবে। কারণ আপনাদের আন্দোলনের কোন গন্তব্যই নেই। কোন রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আন্দোলন করলে জনগণের কাছে যেতে পারবেন সেটাও আপনারা বুঝেন না। আপনারা পড়ে আছেন ভারতরে পণ্য বর্জনের ডাক নিয়ে। ফলে জনগণের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু এদিকে চাপা পড়ে যাবে। আর সরকারও মহা আরাশ আয়েশে চলবে। আমি জানি না, কোন উৎস থেকে টাকা পয়সা পেয়ে আপনারা নতুন করে এই স্লোগান শুরু করেছেন। কিন্তু আপনাদের এই ডাকে বেনিফিশিয়ারি আওয়ামী লীগই। কারণ আপনারা এবার বিএনপিকে দলগতভাবে কবরে নামানোর জন্য প্রচেষ্টায় নেমেছেন।
মন্তব্য করুন
একাত্তরের ২৫ মার্চের ভয়ালরাত্রি মর্মদাহিক চেতনা প্রবাহের কালখণ্ড।
২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালোরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর
বর্বরোচিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের এবং আন্তর্জাতিকভাবে
এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত
হয়েছে। এর আগে ২৫ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের দাবি ওঠে বাংলাদেশের
সর্বস্তরের মানুষের কাছ থেকে।
এ কথা সকলের কাছে পরিষ্কার যে, নয়মাসে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হওয়া নিয়ে
কোনো বিতর্ক চলতে পারে না। কারণ রবার্ট পেইন তার Massacre, The Tragedy of
Bangladesh গ্রন্থে ইয়াহিয়া খানের উদ্ধৃতি দিয়েছেন এভাবে- Kill three million of
them and the rest will eat out of our hands. পাকিস্তানি শাসকদের এই সিদ্ধান্তের কারণে
দৈনিক গড়ে ছয় হাজারের বেশি মানুষ খুন হয় সারা বাংলাদেশে। এজন্য ১৯৭১ সালে মার্কিন সিনেটর
এডওয়ার্ড কেনেডি ভারতের শরণার্থী শিবিরগুলো পরিদর্শন করে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে
সরাসরি গণহত্যা চালানোর অভিযোগ আনেন। ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’-এ বাংলাদেশের
হত্যাযজ্ঞকে বিশ শতকের ৫টি ভয়ঙ্কর গণহত্যার অন্যতম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০০২ সালে
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নিরাপত্তা বিষয়ক আর্কাইভ’ তাদের অবমুক্তকৃত
দলিল প্রকাশ করে। সেখানে বাংলাদেশের নারকীয় হত্যালীলাকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে চিহ্নিত
করা হয়। ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন কূটনৈতিকরা সেসময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ব্যাপক গণহত্যার
বর্ণনা দিয়ে ওয়াশিংটনে বার্তা প্রেরণ করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকরা
একাধিক লেখায় এবং বিশ্বখ্যাত পত্রিকা টাইম, নিউইয়র্ক টাইমস প্রভৃতির সম্পাদকীয়তে পাকিস্তানিদের
গণহত্যা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়। উপরন্তু ১৯৭২ সালে পাকিস্তানে গঠিত
‘হামাদুর রহমান কমিশন’ তাদের পরাজয় অনুসন্ধান করতে গিয়ে প্রমাণ পায় বাংলাদেশে পাকিস্তানি
সেনাদের ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ ও নারী নির্যাতনে ঘটনার। আর এই ভয়ঙ্কর গণহত্যায় কেঁপে উঠেছিল
বিশ্ববিবেক। জর্জ হ্যারিসন ও পণ্ডিত রবিশংকর ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ আয়োজন করেন। দার্শনিক
আঁদ্রে মালরোর নেতৃত্বে গঠিত হয় ‘আন্তর্জাতিক ব্রিগেড’। প্যারিস ও লন্ডনে সরব হয়ে ওঠেন
মানবতাবাদী নেতৃবৃন্দ। বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের দ্বারা সংঘটিত গণহত্যা ব্যাপক এবং নিষ্ঠুরতার
দলিল হিসেবে আজও বিশ্বকে নাড়া দেয়।
আসলে বিংশ শতাব্দীতেই ঘটেছে কোটি মানুষের প্রাণসংহার। বিশ্বযুদ্ধ
ও জাতিনিধনের সেই পরিকল্পিত ও ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ ‘জেনোসাইড’ অভিধা পেয়েছে। হিটলারের কনসেনট্রেশন
ক্যাম্প থেকে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিদের বন্দিশিবির সেই জেনোসাইডের নির্মম ইতিহাসের কথা
বলে। অ্যান্থনী মাসকারেনহাস তাঁর ‘দ্যা রেপ অব বাংলাদেশ’ গ্রন্থের ‘গণহত্যা’ অধ্যায়ে
লিখেছেন ‘সারা প্রদেশ জুড়ে হত্যাকাণ্ডের সুব্যবস্থার নমুনার সঙ্গে জেনোসাইড বা গণহত্যা
শব্দটির আভিধানিক সংজ্ঞার হুবহু মিল রয়েছে।’ তিনি প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা এবং পাকিস্তানি
সেনা কর্মকর্তার মুখ থেকে জেনেছিলেন গণহত্যার লক্ষবস্তু ছিল- ক) বাঙালি সৈনিক, পুলিশ,
আনসার প্রভৃতি খ) হিন্দু সম্প্রদায় গ) আওয়ামী লীগের লোক ঘ) কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী
ঙ) অধ্যাপক ও শিক্ষক যাঁরা বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। তবে তিনি এটাও লক্ষ
করেছিলেন যে সেনাবাহিনীর নৃশংসতা ছিল নির্বিচার। নিরপরাধ, সাধারণ মানুষকেও শত্রু হিসেবে
গণ্য করেছিল তারা। তাছাড়া তাদের গণহত্যা ছিল ‘শোধন প্রক্রিয়া’ যাকে শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক
সমস্যার সমাধান বলে মনে করত। সেই সঙ্গে এই বর্বরোচিত উপায়ে প্রদেশটিকে উপনিবেশে পরিণত
করাও ছিল এর অন্যতম উদ্দেশ্য। পাকিস্তানিদের ভাষ্য ছিল- ‘বিচ্ছিন্নতার হুমকি থেকে রক্ষা
করার উদ্দেশ্যে পূর্ব পাকিস্তানকে চিরদিনের জন্য পবিত্র করতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সেজন্য
যদি বিশ লাখ লোককে হত্যা করতে হয় এবং প্রদেশটিকে তিরিশ বছরের জন্য উপনিবেশ হিসেবে শাসন
করতে হয়, তবুও।’ শাসকদের এ ধরনের মানসিকতার সঙ্গে পশ্চিমাংশের মানুষের ঐক্য ছিল। আর
এজন্যই ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ বলেছিলেন, ‘পশ্চিম পাকিস্তানের
জনগণ হলেন গণহত্যার নীরব দর্শক।’
বাংলাদেশে ১৯৭১-এ পাকিস্তানি শাসক ও তাদের দোসর আলবদর, আলশামস ও রাজাকার বাহিনী পরিকল্পিতভাবে হত্যাযজ্ঞ, ব্যাপক ধ্বংসলীলা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, হিন্দু জনগোষ্ঠী নিধন ও বিতাড়ন, রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের নির্যাতন, মুক্তিযোদ্ধাদের নির্বিচারে হত্যা করেছিল। বাঙালি জাতির প্রতি বিদ্বেষ ও ঘৃণা থেকে তাদের ২৫ মার্চের ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু হয়েছিল। সুপরিকল্পিত গণহত্যা ও জাতিগত নিধনযজ্ঞ জেনোসাইড হিসেবে গণ্য হয়েছে। হিটলারের নাজি বাহিনী ইহুদি ও রাশিয়ার যুদ্ধবন্দিদের সঙ্গে যে বর্বরতা দেখিয়েছিল ঠিক একইরকম আচরণ ছিল পাকিস্তানিদের। নিষ্ঠুরতা, পাশবিকতা এবং সাম্প্রদায়িক দৃষ্টি ছিল ঠিক ইহুদিদের প্রতি নাজিদের মতো। নাজিরা ইহুদিদের নিচুজাতের মানুষ হিসেবে বিবেচনা করত এবং তাদের নিধনযজ্ঞের মধ্য দিয়ে ইউরোপের সমস্যা সমাধান করতে চেয়েছিল। অনুরূপভাবে পাকিস্তানি সেনা অফিসারদের মনোভাব ছিল Bengalees have been cleansed and selected properly for at least one generation. নাজিরা প্রথমে তরুণ, যুবক এবং সমর্থ পুরুষদের হত্যা দিয়ে নিধনযজ্ঞ শুরু করলেও শিশু, বৃদ্ধ, নারীদের নির্বিচারে নিধন করতে থাকে ১৯৪১ সালে বলকান অঞ্চল থেকে। যুদ্ধবন্দি হত্যাসহ অন্যান্য নিষ্ঠুরতায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছায় তারা। তাদের অত্যাচারের সঙ্গে পাকিস্তানের সেনাদের আরো মিল রয়েছে হিন্দু নিধনের ঘটনায়। একাত্তরে হিন্দুদের প্রতি শাসকদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সুচিন্তিত ও নির্মম।
কারণ তারা ধর্মভিত্তিক হত্যাকাণ্ডকে বৈধ করে তুলেছিল। তারা মনে করত পাকিস্তানের জন্ম হয়েছে এই উপমহাদেশের হিন্দু আধিপত্যের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র আবাসভূমির জন্য মুসলমানদের বিদ্রোহের কারণে। এই হিন্দু বিদ্বেষ মনোভাব বছরের পর বছর লালিত হয়ে এসেছে। এজন্য জেনোসাইডে হিন্দু নিশ্চিহ্ন অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। জনৈক গবেষকের ভাষায়- ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমণের পর গোটা দেশে কেবল একটি উদীয়মান ও অস্তগামী রাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধ হয়নি একাধিক জাতিগত দ্বন্দ্বও শুরু হয়ে যায়। এতে উভয়পক্ষের নির্যাতন শুরু হয় তবে এর সূত্রপাত ঘটে ২৫শে মার্চের আক্রমণের পর। পাকিস্তানি সরকারের পরিকল্পনার শিকার হয় দুই জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি। এর প্রথম শিকার হয় হিন্দু সম্প্রদায়, যাদের কেবল নির্যাতন করা হয়নি বরং তাকে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও পারিবারিক ভিত্তি ক্ষতিগ্রস্ত এমনকি ধ্বংসও করা হয়। হিন্দুরা তাদের হৃত অবস্থান কোনদিন উদ্ধার করতে পারেনি বাংলাদেশেও। সম্প্রদায়গতভাবে তারাই ১৯৭১ সালের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী।’ এমনকি ধর্ষণকেও তারা বৈধ বলে মনে করত। চীনের নানকিং-এ জাপানি সেনা কর্তৃক ধর্ষণ, রাশিয়াতে নাৎসিদের বলাৎকার এবং আর্মেনিয়া ও বসনিয়ার নারী নির্যাতনের সাযুজ্য রয়েছে বাঙালি নারী ধর্ষণের ঘটনায়। পাকিস্তানিদের বাঙালি নারী ধর্ষণের লক্ষ ছিল পরিবার, সম্প্রদায় ও জাতিকে মানসিকভাবে আহত ও পঙ্গু করা। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে গেরিলা যুদ্ধে পরাজিত ও বাঙালি জাতিকে বশীভূত করতে না পারার যাতনা তারা মিটাত নারী ধর্ষণ করে। এটা ছিল ভয়ঙ্কর মনোবিকারজাত। সার্বরা মুসলিম নারীদের ধর্ষণ করেছিল ইথনিক ক্লিনজিং-এর উপায় হিসেবে। দেশ-বিদেশী গবেষক ও সাংবাদিকদের রচনায় যুদ্ধকালীন এসব নির্মম বাস্তবতাই উন্মোচিত হয়েছে।
বিশ শতকের জেনোসাইডের তালিকায় পাকিস্তান একটি অপরাধী রাষ্ট্রের
নাম। কারণ লাখো বাঙালির প্রাণের বিনিময়ে তারা সেদিন তাদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে
চেয়েছিল। অথচ বাঙালি জাতিগোষ্ঠী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগে পশ্চিম পাকিস্তানের ওপর
কোনোরূপ অন্যায় পীড়ন করেনি। তবু বাঙালির প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের বর্বর ও
নৃশংস আচরণ বিশ্বের কাছে তাদের ঘৃণ্য মানসিকতাকে প্রকাশ করে দিয়েছিল। পাকিস্তানিদের
আক্রমণ ও হত্যাকাণ্ড ছিল ফ্যাসিস্টদের মতো। তাই তারা পোষণ করেছিল জাতি বা ধর্ম সম্প্রদায়
বিদ্বেষ; হত্যা করেছিল নিরীহ নিরপরাধ জনসাধারণকে। সেই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড আমাদের
২৫ মার্চের দাবিকে আরো বেশি তাৎপর্যবহ করে তুলেছে। ২৫ মার্চ ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’
হবে পৃথিবীর মানব জনগোষ্ঠীকে নির্মম নিধনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য উচ্চকণ্ঠ এবং
হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের একমাত্র ভরসার দিন। আশা করা যায় এই
দিবসের চেতনা গণহত্যার বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করবে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বর্তমানে জামায়াত-বিএনপি এবং চরমপন্থী ডান এবং বাম এরা সবাই এক হয়ে গেছে। তারা প্রকাশ্যে এক হয়েছে কি হয়নি এটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে তাদের কাজকর্ম দেখে বুঝা যাচ্ছে যে, তারা এক হয়েছে এবং তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ওপর চরম আঘাত আনার চেষ্টা করবে। এজন্য তাদের দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারী পাকিস্তানি আইএসআই থেকে শুরু করে সব রকম সাহায্য সহযোগিতা সবই তারা পাবে। বিদেশি অনেক প্রবাসী বাংলাদেশিও তাদের টাকা পয়সা দেবে। দেশেরও বেশ কিছু ব্যবসায়ী তাদের দুকূল রক্ষার জন্য রাখার জন্য টাকা পয়সা দেবে। সুতরাং কোন দিক থেকে তাদের কোন অভাব হবে না। তারা এবার আগের চেয়ে তুলনামূলক ভাবে গুছিয়ে আন্দোলন শুরু করবে। আর এই কারণে তারা এখন ভারত বিরোধী স্লোগান তুলেছে। এই ভারত বিরোধী স্লোগান তোলার পিছনে শুধু বিএনপি-জামায়াত বা চরমপন্থী বাম কিংবা ডানরাই আছে এমন না, এর সাথে বাইরের শক্তিও জড়িত।
যার গন্তব্য স্থান কোথায় সেটা ঠিক নাই, তিনি রাস্তায় গাড়ি বা রিক্সা যেভাবেই যান না কেন সে শুধু উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়াবেন। কারণ তার তো গন্তব্য ঠিক নাই। সে গুলশান যাবে, না নিউ মার্কেট যাবে কোথায় যাবে জানে না। বিএনপির অবস্থা এখন ঠিক তাই। তারা জানেই না তাদের আন্দোলনের গন্তব্য কোথায়। জানে না বলেই তারা একের পর এক ভুল করে রাজনীতির কানাগলিতে ঢুকে যাচ্ছে। এর একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ হলো হঠাৎ করে তারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা বুঝতে হবে যে, ভারতীয় পণ্য বর্জন সম্ভব কিনা? এখানে একটা কথা উল্লেখ্য করতে চাই যে, এদেশের জনগণ কার কথায় বিশ্বাস করেন? জনগণ বিশ্বাস করেন একমাত্র দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার কথা। কারণ তিনি যেটা বলেন সেটা করেন। তিনি যদি কোন প্রশ্নবোধক ডাকও দেন তাহলেও বহু লোক সেটাকে গ্রহণ করবে। কারণ তার প্রতি তাদের বিশ্বাস আছে। আর যে দলের নেতারা প্রায় সবাই হয় সাজাপ্রাপ্ত অথবা জামিনে আছে তাদের কথায় কোন লোক কানে দিবে না।
একাত্তরের ২৫ মার্চের ভয়ালরাত্রি মর্মদাহিক চেতনা প্রবাহের কালখণ্ড। ২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালোরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। এর আগে ২৫ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের দাবি ওঠে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছ থেকে।
বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করেছিলেন যে, দেশের উন্নয়নের জন্য চিকিৎসা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি সবচেয়ে জরুরি। চিকিৎসার যদি উন্নতি না হয়, চিকিৎসা ব্যবস্থার যদি উন্নতি না হয়, মানুষ যদি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী না হন তাহলে দেশ গড়া সম্ভব নয়। সেজন্য বঙ্গবন্ধু একটা সুন্দর নীতিমালা পরিকল্পনা গড়ে তোলেন। ওই সময়ই সেটা ছিল আধুনিক যুগোপযোগী এবং বিজ্ঞানসম্মত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল বঙ্গবন্ধু যে নীতিমালা তখন চালু করে গিয়েছেন সেই পদ্ধতিতে আজকের দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা একে এক করে বাস্তবায়ন করে চলেছেন। যার মূল ভিত্তি বঙ্গবন্ধু স্থাপন করেছেন।