ইনসাইড থট

বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের আশ্রয়দাতা দেশগুলোর উচিত দুঃখ প্রকাশ করা


Thumbnail

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে যেসব বিপথে যাওয়া সেনা কর্মকর্তা নৃশংসভাবে সপরিবারে হত্যা করেছিল তারা সে বছরের নভেম্বর পর্যন্ত দেশেই ছিল। তাদের ধারণা ছিল যা ঘটেছে ও তারা যা ঘটিয়েছে এর বিরুদ্ধে যেহেতু কোন সংগঠিত প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে উঠেনি ফলে তারা হয়তো নিরাপদ। বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানা যায়, এদের অনেকেই চিন্তিত ছিল কোন অঘটন ঘটার আশঙ্কায় ও সে কারণে পরিবার পরিজন নিয়ে বিদেশে পাড়ি দিতে ব্যস্ত ছিল ও চেষ্টা করছিল যাতে মোশতাক সরকার সেরকম একটি ব্যবস্থা নেয়। এসবের ফলেই খোন্দকার মোশতাক তাদের, নিজের ও ষড়যন্ত্রকারীদের রক্ষায় সুদুরপ্রসারী চিন্তা থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারবর্গ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনি ব্যবস্থার মাধ্যমেই শাস্তি এড়াবার নিশ্চয়তা প্রদানের জন্য “ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ” আইন প্রণয়ন করেছিল। ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তারিখে তখনকার রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ এ ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) অধ্যাদেশ জারি করে। এসবের জন্যে তখনকার সরকারের উপর হত্যাকারী দল ও পরিকল্পনাকারীদের নিশ্চয়ই চাপ ছিল যদিও এ অধ্যাদেশ জারী করে তাদের উদ্বেগ নিরসনে ৪০দিনের মতো সময়ও লেগেছিল। কী সেই চাপ ও সরকারী নথিপত্রে নেপথ্য পরিকল্পনার ও সেই মতে এগিয়ে যাবার যা যা প্রমাণ বা দলিলাদি আছে এই নিয়ে প্রাইমারী গবেষণা হওয়া দরকার। আমাদের কাছে যেসব তথ্য আছে সেগুলোর অধিকাংশই সেকেন্ডারী বা নানাজনের সাক্ষাৎকার ও লেখালেখি সূত্রে পাওয়া। এভিডেন্সগুলো এখন প্রকাশ্য হওয়া দরকার।

‘৭৫ সালের নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের পট পরিবর্তনের শেষের পর্যায়ে সকল নেপথ্য ঘটনার অনুঘটক সুযোগসন্ধানী জেনারেল জিয়াউর রহমান সাজানো নাটকীয় পরিস্থিতির মাধ্যমে সামরিক ক্ষমতার সামনে বা দৃশ্যপটে চলে আসেন। এতোদিন তিনি নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছিলেন তা নানা সূত্রে প্রমাণিত। রাষ্ট্রপতি খোন্দকার মোশতাক এই সময়ে অপসারিত হন ও তখনকার প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম মোশতাকের স্থলাভিষিক্ত হন। বঙ্গবন্ধুর চেয়ে বছর চারেকের বড়ো, প্রেসিডেন্সী কলেজের ছাত্র ও ত্রিশের দশকে কোলকাতা বারে নবীন আইনজীবী হিসেবে সুপরিচিত, পরবর্তিকালে ঢাকা হাইকোর্টে শেরে বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হকের সহায়ক আইনজীবী, পূর্ব পাকিস্তান আইনজীবী পরিষদের নেতা হিসেবে বিশেষ পরিচিত এই সায়েমকে ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু হাইকোর্টে দেশের প্রথম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। ‘৭২ সালের ১৭ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু দেশে সুপ্রীম কোর্ট গঠন করেন ও সেদিন থেকে বিচারপতি সায়েম দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব নেন। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ও ৬ নভেম্বর এর সামরিক অভ্যুত্থান ও পাল্টা অভ্যুত্থানের পর মূলতঃ ৬ নভেম্বরই বিচারপতি সায়েমকে দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণের পরই তিনি সংসদ ও মন্ত্রী পরিষদ ভেঙে দিয়ে সারা দেশে সামরিক আইন জারী করেন এবং নিজেকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ঘোষণা করেন। ১৯৭৬ সালের ২৯ নভেম্বর তিনি প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেন এবং সেনা প্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমানের কাছে সামরিক শাসনের ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল পর্যন্ত বিচারপতি সায়েম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন ফলে সঙ্গত কারণেই ‘৭৫ সালের নভেম্বর থেকে ‘৭৭ সাল পর্যন্ত সংঘটিত সকল ঘটনাবলীর দায় তাকে নিতে হবে। এই পুরো সময়ে জেনারেল জিয়াউর রহমান বিচারপতি সায়েমকে সামনে রেখেই তার সকল পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন এ নিয়েও কোন সংশয় নেই। তখনকার অস্থির পরিস্থিতিতে হত্যাকারী দলের সদস্যগণ ব্যাতিব্যস্ত হয়ে বিদেশে চলে যেতে চাইছিলেন বা কেউ কেউ লিখেছেন তাদের সাথে সেরকম প্রতিশ্রুতি দেয়া ছিল। কে সেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কখন বা বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রের কোন পর্যায়ে এসে তা দেয়া হয়েছিল তার আনুপুঙ্খ আমাদের জানা দরকার। ফলে তথ্য অনুসন্ধানের কাজ ও তা উন্মোচনের-প্রকাশের কাজ এখানেও চালাতে হবে। এসব সত্য আড়ালে থেকে যাবার কোনই কারণ নেই।

’৭৫ সালের নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে আত্মস্বীকৃত ও চিহ্নিত হত্যাকারীদের একটি দলের বিদেশ যাবার সব বন্দোবস্ত করা হয়। বিশেষ বিমানে তারা প্রথমে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড হয়ে লিবিয়ায় যায় ও ’৭৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত লিবিয়ায় অবস্থান করে। বিভিন্ন সূত্রে এখন জানা যাচ্ছে, ’৭৬ সালের ৮ জুন তারিখে জিয়াউর রহমানের অন্যতম বিশ্বস্ত সঙ্গী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নুরুল ইসলাম শিশুর মধ্যস্ততায় এদের ১২জনকে বাংলাদেশের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকুরীর বন্দোবস্ত করা হয় ও সে অনুযায়ী নিয়োগপত্র পেয়ে এদের সকলেই কাজে যোগ দেয়। হত্যাকারীদের মধ্যে দুইজন শীর্ষস্থানীয় সদস্য কর্ণেল ফারুক ও কর্ণেল রশীদ চাকুরী না নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানারকম ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল। সে সময়ে যে ১২জন হত্যাকারীদের চাকুরী বন্দোবস্ত করা হয় এরা হলো- লে. কর্নেল আজিজ পাশা আর্জেন্টিনায় প্রথম সচিব হিসেবে, লে. কর্নেল শরিফুল হক (ডালিম) চীনে প্রথম সচিব, মেজর এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ আলজেরিয়ায় প্রথম সচিব, মেজর শাহরিয়ার রশিদ ইন্দোনেশিয়ায় দ্বিতীয় সচিব, মেজর বজলুল হুদা পাকিস্তানে দ্বিতীয় সচিব, মেজর নূর চৌধুরী ইরানে দ্বিতীয় সচিব, মেজর রাশেদ চৌধুরী সৌদি আরবে দ্বিতীয় সচিব, মেজর শরিফুল হোসেন কুয়েতে দ্বিতীয় সচিব, ক্যাপ্টেন কিসমত হাশেম আবুধাবিতে তৃতীয় সচিব, লে. নাজমুল হোসেন কানাডায় তৃতীয় সচিব, লে. খায়রুজ্জামান মিসরে তৃতীয় সচিব ও লে. আবদুল মাজেদ সেনেগালে তৃতীয় সচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিল।

প্রশ্ন হলো ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শিশুর এই মধ্যস্থ তৎপরতার নেপথ্য ঘটনাগুলো কি? আমরা জনি বিদেশের দূতাবাসে কোন কর্মকর্তাকে পদায়ন করা হলে সে দেশের অগ্রিম অনুমতি বা সম্মতি নিতে হয়। কূটনীতির এই শিষ্ঠাচার এই ক্ষেত্রে কেমন করে অনুসরণ করা হয়েছিল? কে করেছিলেন, কীভাবে করেছিলেন? বঙ্গবন্ধু তখন পৃথিবীর অন্যতম শীর্ষ স্থানীয় ও অবিসংবাদিত জনপ্রিয় নেতা। যেসব দেশে হত্যাকারীদের চাকুরী দেয়া হলো সেসব দেশ কেনই বা তাদের গ্রহণ করতে সম্মতি দিল? যুক্তি বা তর্কের খাতিরে আমরা মধ্যপ্রাচ্য বা পাকিস্তানের প্রতি সহানুভূতিশীল দেশগুলোর এই সম্মতি দেয়া যদি মেনেও নেই তাহলেও অন্তত কয়েকটি দেশের ভূমিকা আজও রহস্যজনক বা আমাদের অজানা, যেমন আলজেরিয়া, আর্জেন্টিনা, কানাডা ও সেনেগাল। বিশেষ করে আলজেরিয়ায় তখন জোট নিরেপক্ষ দেশগুলোর আন্দোলনের অন্যতম নেতা হুয়েরই বুমেদিন বঙ্গবন্ধুর বিশেষ অনুরক্ত ছিলেন ও ৭৩ সালের সেপ্টেম্বরের ৩-৯ তারিখে আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত ন্যামের চতুর্থ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু বুমেদিনের বিশেষ আমন্ত্রণে অংশ নেন। এই সময়ে তিনি বিশ্বের নামিদামি নেতাদের সাথে মত বিনিময় করেন ও জোট নিরেপক্ষ আন্দোলনে বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থান তুলে ধরেন। এই সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর সাথে ফিডেল ক্যাস্ট্রো, মার্শাল টিটো, আনোয়ার সাদাত, গাদ্দাফী-সহ অনেকের সাথে সাক্ষাৎ হয় ও বাংলাদেশের এই নেতার অবস্থান বিশ্বব্যাপী আলোচিত হয়।

প্রশ্ন হলো আলজেরিয়া কেমন করে সে অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর একজন প্রত্যক্ষ হত্যাকারীকে তার দেশের দূতাবাসে চাকুরী করতে সম্মতি দিল? পশ্চিমের ধনী দেশ ও কমনওয়েলথ সদস্য কানাডাই বা কী করে অপর একজন হত্যাকারীকে চাকুরী করতে সম্মতি দেয় বা সেনেগালের মতো স্বল্পোন্নত দেশ যার সাথে বাংলাদেশের উন্নয়ন দর্শনের তেমন কোন অমিল ছিল না। তাহলে আরও প্রশ্ন হয়, এইসব সম্মতিদানের নেপথ্য ঘটনা কি? আমাদের জানা দরকার আমরা সেসব দেশের সাথে কোন কূটনৈতিক আলোচনা করেছিলাম কিনা যাতে সেসব দেশের পরিচয় হত্যাকারীদের আশ্রয়দাতা হিসেবে না হয়? যদি এসব সিদ্ধান্ত বঙ্গবন্ধুর মতো উচ্চমানের সম্মানিত ব্যাক্তিত্বের নির্মম হত্যাকান্ডের তাৎপর্য বা গুরুত্ব বিবেচনা না করেই ওই দেশগুলো নিয়ে থাকে আমরা নিশ্চয়ই সেসব দেশগুলোকে এখন দুঃখ প্রকাশ করতে আহ্বান জানাতে পারি। কোন কোন দেশের এখন বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাইবারও যথেষ্ট কারণ আছে কারণ তারা ইতিহাসের এক কলঙ্কিত সন্ত্রাস সংঘটনকারীদের প্রশ্রয়দাতা হিসেবে ও একটি দেশের জাতির পিতা হত্যাকারীদের আশ্রয় দিয়েছে বলে এ দেশের জনগণের কাছে ধিক্কৃত হয়ে আছে।

শুধু তা-ই নয়, আমাদের জানা দরকার জিয়া ও এরশাদের আমলে এইসব ঘৃণ্য অপরাধীরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে কেমন করে বছরের পর বছর চাকুরী অব্যাহত রেখেছে, এমনকি পদোন্নতিও পেয়েছে? শুধু তা-ই নয় প্রথমে এদের চাকুরী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডেপুটেশনে দেয়া হলেও ১৯৮০ সালে জিয়াউর রহমানের আমলে এদের সবাইকে ফরেন সার্ভিসের ক্যাডারভুক্ত করা হয় যা আমাদের বৈদেশিক দপ্তরের জন্যে অত্যন্ত বিব্রতকর ও লজ্জার বিষয়!

প্রশ্ন হলো- আমাদের বন্ধুপ্রতীম অনেক দেশ তাদের গ্রহণ করেছে? কেন করেছে? আলজেরিয়া কীভাবে করে? পদোন্নতি পেয়ে রাশেদ চৌধুরী একসময় জাপানে বদলী হয়, বন্ধু ও শান্তিপ্রিয় দেশ জাপান কেন তাকে গ্রহণ করলো? ডালিম-কে বেইজিং থেকে পোল্যান্ড বদলী করা হলে একমাত্র প্যোলান্ড-ই তাকে গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়, পরে তাকে কেনিয়ায় হাইকমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এ কাজ কেমন করে সম্ভব হয়েছিল? মেজর নূর ব্রাজিলে চার্জ-দ্য-অ্যাফেয়ার্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে। আর বিভিন্ন সময়ে পদোন্নতি পেয়ে বদলী হলে দু-একটি ব্যাতিক্রম ছাড়া অন্যান্য সব দেশই এদের মেনে নিয়েছিল। তাহলে এসবের পেছনে কি কোন বড় শক্তির সমর্থন ও ইঙ্গিত ছিল? বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনার রহস্য উন্মোচনে ওইসব দেশের কাছে আমাদের জিজ্ঞাসা থাকতে হবে ও উত্তর পেতে হবে। এমনকি আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো একটি প্রফেশনাল বিভাগেরও নৈতিক মান অক্ষুন্ন রাখতে ও দায়মুক্ত রাখতে এসবের উত্তর জানা আমাদের দরকার।

আর ওইসব দেশগুলো সব জেনেশুনে, এমনকি অপরাধের বিচার করা যাবে না এমন আইনের অধীনে থাকা হত্যাকারী অপরাধীদের কেমন করে কূটনৈতিক মর্যাদা দিয়ে তাদের দেশে কাজ করতে দিয়েছে? যদি আইন করেই অপরাধের বিচার করা যাবে না তাহলে তো তারা সেই অপরাধ করেছিল প্রমাণিতই হয়, যা বিশ্ব ইতিহাসের জন্যে এক বিশাল কলঙ্কের বোঝা হয়েছিল, সেসব দেশ কেন এই অপরাধীদের অপরাধ আমলে নেয়নি, আজকের বিশ্বে এর ঐতিহাসিক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষণ বের করে আনা জরুরী।

রেজা সেলিম
পরিচালক, আমাদের গ্রাম গবেষণা প্রকল্প 
e-mail: rezasalimag@gmail.com



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

এক বছরের রাষ্ট্রপতির যত অর্জন


Thumbnail

আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।

দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।

আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।

গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে, তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও একই ভাবে থেকেছেন।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।


রাষ্ট্রপতি   মো. সাহাবুদ্দিন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নয়


Thumbnail

প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।

আওয়ামী লীগ যদি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি টিকে থাকতে চায় তাহলে দলকে এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এটা এখন সময়ের দাবি। যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তারা ইনিয়ে বিনিয়ে এখন নানান অজুহাত তৈরি করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের উচিত হবে এ সমস্ত অজুহাত না শোনা। কারণ যিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত পরিপন্থি কাজ করেছেন এটা সুস্পষ্ট। সুতরাং এখানে দল উচিত তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দল করলে তাকে দলীয় শৃঙ্খলা মানতেই হবে। অনথায় দল থেকে বাদ দিতে হবে। যারা দলীয় সিদ্ধান্তের পরিপন্থী কাজ করেন তারা কখনই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এদের মত আট-দশ দলে না থাকলে আওয়ামী লীগের কিছু যায়-আসে না। একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক ছাড়া আর কেউই আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। শেখ হাসিনাই কেবল মাত্র আওয়ামী লীগ এবং দেশের স্বার্থে অপরিহার্য। সুতরাং, এখন আমরা দেখতে চাই শৃঙ্খলা পরিপন্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা অমান্য করেছেন তিনি দলের যত বড় নেতাই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। দরকার হলে দল থেকে তাদেরকে বাদ দিতে হবে কিংবা বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। শুধু বহিষ্কারই নয়, তাদের প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল করতে হবে। এতে করে কারও যদি এমপিত্ব চলে যায় তো যাবে। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে দলের স্বার্থে। তাদের আসনে যে কাউকে নির্বাচন করে জিতে আসতে পারবেন। কোন মন্ত্রী এমপি আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন উপজেলা গুলো প্রার্থী দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দল কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখার জন্য গোটা দেশের মানুষ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে আছে।

অতীতে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কঠোর পদক্ষেপ নেবেন এমনটি আশা আওয়ামী লীগের প্রতিটি তৃণমূল নেতাকর্মীর। এখন আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় আমরা সেটার অপেক্ষা আছি।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনার সমালোচনা করলেও কেউই তার বিকল্প খুঁজে পান না


Thumbnail

দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। 

দার্শনিক শেখ হাসিনা এখন আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। এতদিন তিনি ছিলেন আগে রাষ্ট্রনায়ক পরে এবং দার্শনিক। এখন তিনি আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। কারণ তিনি একের পর এক দর্শনকে যেভাবে স্থায়ী রূপ দিয়ে যাচ্ছেন তাতে এদেশের সকলের মনোবলও বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন মন্ত্রিসভাতেও তিনি দর্শনের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। তিনি পুরনোদের সাথে নতুনদের যুক্ত করে নেতৃত্বের একটি চমৎকার ভারসাম্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। যা আমরা এই ১০০ দিনে বুঝতে পেরেছি এই নতুন মন্ত্রিসভার কাজকর্মে। সেদিক থেকে আমি অনুধাবন করতে পারি যে, এই ১০০ দিনে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এখন পর্যন্ত শতভাগ সফল।

গোটা বিশ্ব এখন যুদ্ধের মধ্যে পড়েছে। করোনার পর থেকে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ গোটা বিশ্ব অর্থনীতিতে টলটলয়মান করে দিয়েছে। এখন আবার নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে। বলা যায় বিশ্বে একটা মিনি বিশ্ব যুদ্ধ চলছে। গাজায় হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এরকম পরিস্থিতিতে দার্শনিক শেখ হাসিনার সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ। তবে আশার কথা যে, এখন পর্যন্ত তিনি সঠিক পথে আছেন এবং সফল ভাবে পুরো পরিস্থিতি মোকাবিলা করে যাচ্ছেন। বিশ্বের অস্থির পরিস্থির কথা অনুধাবন করে তিনি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকম নির্দেশনা দিচ্ছেন। যেমন-বিশ্ব বাজারে নতুন নতুন বাজারের সন্ধান। আমাদের যেন খাদ্য ঘাটতি পড়তে না হয় সেজন্য তিনি আগাম আমাদের সতর্ক করে দিচ্ছেন। পাশাপাশি আমাদের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতেও তিনি জোরালো ভাবে আহ্বান করেছেন। 

একজন জেনারেলকে কীভাবে বিচার করা হয়? তিনি কয়টি ব্যাটল জয় করলেন সেটা দিয়ে কিন্তু নয়। তাকে বিচার করা হয় যখন তিনি একটা ব্যাটলে হেরে যান এবং তার সৈন্যরা যখন পুরো ভেঙে পড়েন ঠিক সে সময় তিনি কীভাবে তার সৈন্যদের উজ্জীবিত করতে পারলেন সেটা বিবেচনায় নেওয়া হয়। দার্শনিক শেখ হাসিনাও সে রকম একজন জেনারেল, যে জেনারেল কঠিন সময়ে সাধারণ জনগণকে সবচেয়ে কম কষ্টে রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও যেন তিনি সফল ভাবে নিয়ে যাবেন সেটা বলাই বাহুল্য। অনেকে তার সমালোচনা করছেন ঠিক কিন্তু কেউ তার বিকল্পের কথা বলতে পারছেন না। তিনি দলকে যেমন ধরে রেখেছেন বা নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঠিক তেমনিভাবে সরকারকেও সঠিক পথে পরিচালনা করছেন। সুতরাং শেখ হাসিনার বিকল্প যে শেখ হাসিনাই এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। নতুন সরকারের প্রথম ১০০ দিনের মত সামনের দিনগুলোতে সাফল্য ধরে রাখবে এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

কতিপয় সাংবাদিক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাধর


Thumbnail

বারো বছর আগের কথা। ডেভিড ক্যামেরুন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদিন তিনি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লেন। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর সাথে ছবি তুলতে গেলেন। বাঁধ সাধলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক। জীবাণু প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি ওই কাজটি করছিলেন। ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন সাথে সাথে। ক্ষমা চাইলেন এবং ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন।

ভিন্ন চিত্র দেখলাম শনিবার সকালে বরিশাল সদর হাসপাতালে। দায়িত্বরত চিকিৎসক ওয়ার্ডে রাউন্ড দিতে যেয়ে দেখেন দুজন টিভি সাংবাদিক ওয়ার্ডে ভিডিও করছেন। ভিডিও শেষ হবার পর চিকিৎসক তাঁর রাউন্ড শুরু করলেন। রাউন্ড শুরু করতেই দুজন সাংবাদিক আবার ক্যামেরা ধরে চিকিৎসকের সাথে কথা বলা শুরু করলেন। চিকিৎসক তাদের পরিচয় জানতে চাইলেন। বিনয়ের সাথে নিচু স্বরে একে একে ২০ বার (গুনে নিশ্চিত হয়েই বলছি) সাংবাদিকের নাম জিজ্ঞেস করলেন, পরিচয় জানতে চাইলেন। উক্ত সাংবাদিক নাম বলেননি, পরিচয় দেননি। বরং উচ্চস্বরে উল্টা পাল্টা কথা বলেছেন, পাল্টা প্রশ্ন করেছেন। অবশেষে কর্তব্যরত চিকিৎসক উর্ধতন কাউকে ফোন দেয়ার পর সাংবাদিক সাহেব তার নাম বলেছেন। এখানে দুটি প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।  প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, সাংবাদিক দুজন কি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাধর হয়ে গেছেন ? দ্বিতীয় প্রশ্ন, সাংবাদিক দুজনকে কেন নাম বলতে হবে ? নাম, পদবি, পরিচয় থাকবে তাদের বুকে বা কোমরে প্রদর্শিত আই ডি কার্ডে। এখন দেখার বিষয়,  প্রদর্শিত স্থানে আই ডি ছিল কিনা ? না থাকলে থাকবে না কেন?

সাংবাদিক ও চিকিৎসকবৃন্দ ঘটনার ভিডিও চিত্র সমূহ পৃথকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিয়েছেন। সব গুলো ভিডিও কয়েকবার দেখেছি, পর্যালোচনা করেছি। দায়িত্বরত চিকিৎসক কখনোই উচ্চস্বরে কথা বলেননি। তিনি যথেষ্ট ধৈর্য্য, বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। পক্ষান্তরে সাংবাদিক দুজন বারবার উচ্চস্বরে কথা বলেছেন। তাদের কথা বলার ধরণ দেখে মনে হয়েছে, এটি একটি মগের মুল্লুক। কর্তব্যরত চিকিৎসক ওয়ার্ড রাউন্ড শুরু করার আগে প্রতি রোগীর সাথে একজন এটেন্ডেন্ট ব্যাতিরেকে সবাইকে বের হবার কথা বলেছেন। সবাই বেরিয়ে না গেলে তিনি চিকিৎসা শুরু করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। সেটাই নিয়ম।  সারা দুনিয়ায় সেটাই হয়ে থাকে। সাংবাদিকদ্বয় সেটি শুনতে নারাজ। এখানে তারা স্পষ্টতই সরকারি কাজে বাধা সৃষ্টি করেছেন, যা আইনত দণ্ডনীয়।  

দিন শেষে বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দেখলাম সাংবাদিকদের হেনস্থা করেছে ডাক্তার। অথচ ভিডিও গুলি পর্যালোচনা করলে যে কেউ বলবেন, ডাক্তারকে হেনস্থা করেছে সাংবাদিকরা। আসলেই মগের মুল্লুক। ঘটনা কি ? আর সংবাদ শিরোনাম কি? এসব মগের মুল্লুকের রাজত্ব  থেকে জাতিকে পরিত্রান দেয়া প্রয়োজন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিএমএ, এফডিএসএর, বিডিএফ ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ সমন্বয়ে একটি কমিটি করে দেয়া দরকার। কমিটি হাসপাতালে সাংবাদিক প্রবেশে ও তাদের দায়িত্ব নির্ধারণে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করবে। সে নীতিমালায় যাতে স্বাস্থ্য কর্মীদের কাজে বাধা প্রদান না করা হয়, রোগীর অনুমতি ব্যাতিরেকে তাদের ছবি, ভিডিও বা রোগ সংক্রান্ত কোন তথ্য প্রকাশ বা প্রচার না করা হয়, সেসব বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা প্রয়োজন। তা না হলে হাসপাতাল সমূহে এ ধরণের অরাজকতা হতেই থাকবে, বাড়তেই থাকবে।  

লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

প্রথম আলোর পর কী ডেইলি স্টারও বিক্রি হবে?


Thumbnail

এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন।

প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে অনেকেরই  ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী লোক।

এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।

তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।

এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।

আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম। সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায় যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।

ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।

তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।

তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।


প্রথম আলো   ডেইলি স্টার  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন