ইনসাইড থট

নদী, নৌকা, নারী ও বঙ্গবন্ধু


Thumbnail নদী, নৌকা, নারী ও বঙ্গবন্ধু

‘ও নদীরে একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে

বলো কোথায় তোমার দেশ, তোমার নেই কি চলার শেষ...’

হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের এই গানটি বাংলা সঙ্গীতের এক ধ্রুপদী সৃষ্টি। নদীর সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক অতি নিবিড়। এদেশের মানুষের জীবন-যাপন প্রণালী, অর্থনীতি-সংস্কৃতির উন্নয়ন আবার ক্ষেত্র বিশেষে ধ্বংস, সবকিছুর সাথে রয়েছে নদী। আলোচ্য প্রবন্ধে শিরোনাম দেখে অনেকে চমকিত হতে পারেন যে, নদী, নৌকা, নারীর সাথে বঙ্গবন্ধুর সম্পর্ক কোথায় বা এদের মধ্যে অ্যালাইনমেন্ট হলো কী করে?

নদী, নৌকা ও বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের একটি সিম্বল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ মানেই হলো নদীর দেশ, যাকে এক কথায় বলা হয় নদীমাতৃক দেশ (riverine country) । সমাস বিশ্লেষণে বলা হয় ‘নদী মাতা যাহার’ অর্থাৎ বাংলাদেশে নদীকে মায়ের মত দেখা হয়, মান্য করা হয়, শ্রদ্ধা পোষণ করা হয়। একটা সময়ে বাংলাদেশে বার’শ-র অধিক নদী ছিল, কমে কমে এখন তা ২০০ এর অধিক দাঁড়িয়েছে যার মধ্যে ৫৪টি আন্তর্জাতিক নদী, যার ৫২টির উপর ভারত বাধ নির্মাণ করেছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বাইগর নদীর তীরবর্তী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পড়াশোনা ও রাজনীতি উপলক্ষে গোপালগঞ্জ থেকে মাদারীপুর, ফরিদপুর, খুলনা-বরিশাল-নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-চাঁদপুর রাজশাহী-সিরাজগঞ্জ-টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ গিয়েছেন। রাজনীতির প্রচারে ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত সারা পূর্ব বাংলা চষে বেরিয়েছেন। তাঁর ওই ভ্রমণ পথের বড় অংশ ছিল নদী পথ। মধুমতি, আড়িয়াল খাঁ, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা-কীর্তণখোলা-তেঁতুলিয়া, আগুনমুখা, শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরী, বুড়িগঙ্গা, ইছামতি, কালি গঙ্গা, তিস্তা, ছোট যমুনা, বড়াল, পুরাতন ব্রহ্মপুত্রসহ অসংখ্য নদী পথে তিনি দিনের পর দিন লঞ্চ, স্টিমার, নৌকা, মহাজনী নৌকা, এক মালাইয়া নৌকা, ছোট কোষায় দিনের পর দিন পার করেছেন। ছোট ডিঙিতে সাদা চাদর বিছিয়ে রাজনৈতিক গুরু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে পরিকল্পনা করেছেন। কখনো একা একা একমালাইয়া নৌকার সামনের দিকে বসে মুখে এডিনমোরের তামাক দিয়ে বানানো সিগারেটে টান দিয়ে নদীর দিকে তাকিয়ে তাঁর জীবন কথা ভেবেছেন, আবার কখনো নৌকায় বসে আব্বাস উদ্দিনের গান শুনে মুগ্ধ হয়েছেন, আব্বাস উদ্দিনের সংগীত মূল্যায়ন করেছেন নিম্নরুপে-‘নদীতে বসে আব্বাস উদ্দিন সাহেবের ভাটিয়ালি গান তার নিজের গলায় না শুনলে জীবনের একটা দিক অপূর্ণ থেকে যেত। তিনি যখন আস্তে আস্তে গান গাইতেছিলেন তখন মনে হচ্ছিল, নদীর ঢেউগুলিও যেন তার গান শুনছে।’

নদীবক্ষে ডাকাতের কবলে পড়লে ডাকাতরা তাঁর নাম শুনে সালাম দিয়ে চলে গেছে। আবার এমন হয়েছে তিনি গোপালগঞ্জ থেকে স্টিমার ঢাকা আসছেন পরিবারের সাথে দেখা করতে, চাঁদপুরে পাশ দিয়ে অন্য স্টিমারে করে বেগম মুজিব গোপালগঞ্জ ছুটে গেছেন, দুটি স্টিমার ক্রস করেছেন কিন্তু নিজেরা তা জানেননি। তাই বাংলাদেশের নদী সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু ভালো করে চেনেন ও জানেন। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হবার পর তিনি দেখলেন পঞ্চাশ ও ষাট দশকের নদী আর নেই, গত ২০/২৫ বছরে নদীগুলো যেন শীর্ষ হয়ে যাচ্ছে। ১৯৭২ সালে দেশের দায়িত্ব নিয়ে সাতটি ড্রেজার সংগ্রহ করে শুরু করেন নদীর সক্ষমতা বৃদ্ধির কাজ যা আজও বহাল রয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর সাথে নদীর নিবিড় সর্ম্পক নির্ণয় করে কবি ও লেখক অন্নদাশংকর রায় (১৯০৪-২০০২) যে কবিতা লিখেছেন তা আাজও অমর হয়ে আছে-

‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা

গৌরী মেঘনা বহমান

ততকাল রবে কীর্তি তোমার

শেখ মুজিবুর রহমান।...’

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় যে শ্লোগানটি এ দেশের সকল স্তরের মানুষকে এক করে দিয়েছিল তাও নদীকেন্দ্রিক। সে সময় সকল মানুষের মুখে ছিল একই কথা-‘ তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা’। অর্থাৎ যেভাবেই বলি না কেন, নদীর সাথে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে।

আমেরিকা প্রবাসী লেখক আদনান জিল্লুর মোর্শেদ তার  Bangabandhu and the Bengal Delta প্রবন্ধে নদীর সাথে বঙ্গবন্ধুর সম্পর্ক বিশেলষণ করে লিখেছেন-, ‘ Once Bangabandhu recalled his experience of a boat odyssey on the Madhumati river: "the people of this riverine country would never find it difficult to fall asleep on a boat." This simple but profound statement encapsulates his perception of an organic, harmonious bonding of Bengal's people with its riverine character, an existential philosophy that would slowly but steadily lay the foundation of his political philosophy of justice, coexistence, and sacrifice’s (Bangabandhu and the Bengal Delta, Adnan Zillur Morshed, The Daily Star, Mar 20, 2020) 

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর নদী প্রীতি নিয়ে ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন দারুন এক ছড়া লিখেছেন। ছড়াটি নিম্নরুপ-

‘ কান পেতে শোনো এই বাংলার মাটি বায়ু নদী সরোবর

জপিতেছে নাম করিয়া প্রণাম মুজিবর আহা মুজিবর।’

নৌকা, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একই সূত্রে গাঁথা। নদীমাতৃক বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বাহন নৌকাকে তিনি নির্বাচনী প্রতীকরূপে গ্রহণ করেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন থেকে এর ব্যবহার শুরু হয়। নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে নৌকাকে বেছে নেয়ার কারণ হলো জনমানুষের পালস্ তিনি বুঝতেন। সে সময় বাংলার সাধারণ মানুষের জীবনযাপন ছিল খুব সাদাসিধে এবং অনাড়ম্বর। অর্থনীতি ও যাতায়াতের প্রধান মাধ্য- বাহক ছিল নৌকা। পেশাজীবীরা নৌকাকে তাই ভক্তি শ্রদ্ধা করে; এসব দিক বিবেচনায় নিয়েই তিনি নৌকাকে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক করেন। এর ফল পাওয়া যায় ১৯৫৪ এবং ১৯৭০ এর সাধারণ নির্বাচনে। বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ ১৯৭০ এর নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট প্রদান করে। তারা প্রার্থীকে চিনেন নি, অনেকে তাদের নামও জানতেন না। তারা ভোট দিয়েছেন ‘শেখের বেটা’কে কেউ ‘বঙ্গবন্ধুকে’, আর সকলের প্রতীক হল নৌকা। এসময় প্রার্থীর চেয়ে প্রতীক বড় হয়ে যায়। নৌকার কাণ্ডারী বঙ্গবন্ধু ১৯৬৯ সালে উত্তাল আন্দোলন সৃষ্টি করে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানকে পদত্যাগ হতে বাধ্য করেন, যার মাল্লা ছিল এদেশের আপামর জনগণ। তাই নৌকা থেকে বঙ্গবন্ধুকে বিচ্ছিন্ন করার কোন সুযোগ নেই। একবিংশ শতাব্দীর শেষে এসেও এ স্রোতধারা বহমান।

প্রবন্ধের তৃতীয় প্রত্যয় নারী অংশটি চট করে দৃষ্টিকটু বা অন্যরকম মনে হতে পারে; কিন্তু আলোচনার গভীরে প্রবেশ করলে শিরোনামের মর্মার্থ বোঝা যাবে আশা করি। প্রতিজন মানুষ গঠনের পেছনে কারো না কারো অবদান থাকে। কোন মহাপুরুষের জীবনী কাউকে উদ্বুদ্ধ করে, তেমনি আছেন কোন মানুষ যেমন পিতা-মাতা, শিক্ষা বা ধর্ম গুরু বা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যারা জীবন গড়ে দেয়। বঙ্গবন্ধুর জীবন গড়ায়, জীবনে চলায় এবং দেশ-বিদেশে প্রতিষ্ঠিত হতে তিনজন নারীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এরা হলেন তাঁর মা মোসাম্মৎ সাহেরা খাতুন, স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছা রেনু এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী।

বঙ্গবন্ধুর জীবনের প্রাথমিক ভিত গড়ে দিয়েছেন তাঁর উদারনৈতিক পিতা শেখ লুৎফর রহমান ও মাতা মোসাম্মৎ সায়েরা খাতুন। মোছাম্মৎ সাহেরা খাতুন ছিলেন সন্তান অন্তঃপ্রাণ একজন মহীয়সী নারী। তিনি স্বামী-সন্তান, আত্মীয়-স্বজনকে আগলে রেখেছেন। আমৃত্যু তাঁর নয়নের মনি খোকাকে তিনি প্রাণাধিক ভালোবাসতেন, স্নেহ করতেন। তিনি খোকার বৈশিষ্ট্য ও মনের কথা জানতেন, তাই স্কুল থেকে ফেরার পথে কাউকে গায়ের চাদর কিংবা ছাতা দান করলেও তিনি এজন্য খোকাকে বকা দেন নি, পরোক্ষভাবে উৎসাহিত করেছেন। খোকা তার বন্ধুদের বাসায় নিয়ে আসতে পারে ভেবে তিনি বাড়তি ভাত-তরকারি রান্না করে রাখতেন, গরুর দুধ জাল দিয়ে রাখতেন, আত্মীয়-স্বজনকে বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছেন, অকাতরে দান করতেন গরিব-দুঃখীদের। বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছার পিতা-মাতা শিশুকালে মারা গেলে তিনি তাকে মাতৃস্নেহে পরম মমতায় বড় করেছেন, বঙ্গবন্ধুর যোগ্য সাথীরূপে তৈরি করেছিলেন। মায়ের কাছ থেকে পাওয়া এ সকল মানবিক গুণাবলি বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনে প্রয়োগ করেছেন। আলোচিত নারী বেগম ফজিলাতুন্নেছার সাথে ১৯৩৮ সালে মুজিবের যখন বিয়ে হয় বঙ্গবন্ধুর বয়স তখন ১৮ আর রেনুর বয়স মাত্র ০৮ বছর। আরো পরে তারা সংসার শুরু করেন এবং ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট একত্রে শাহাদাত বরণ করেন।

বেগম মুজিব ছিলেন মায়াবী ধরনের একজন মহীয়সী নারী। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনে তিনি কখনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি বরং উৎসাহ দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু যখন কলকাতায় পড়াশোনা ও রাজনীতি করতেন তার জমানো টাকা তুলে দিয়েছেন নির্দ্বিধায়। তিনি গোপালগঞ্জে থাকা অবস্থায় তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সেবা করতেন। ভারত-পাকিস্তান ভাগের পর ঢাকায় তারা সংসার শুরু করলেও তা রাজনৈতিক কারণে নিরবিচ্ছিন্ন হয়নি। স্বল্প দাম্পত্য জীবনের প্রায় ১১ বছর বঙ্গবন্ধু কারাগারে কাটিয়েছেন। এ সময় পাকিস্তানী শাসকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে পাঁচটি সন্তান নিয়ে সংসার চালানো, তাদের লেখাপড়া করানো, বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা করা, কারাগারে খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ করেছেন। এ সময় তিনি পার্টি ও বঙ্গবন্ধুর মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করেছেন।


বঙ্গবন্ধুর প্রতি বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের অবদান সংখ্যা দিয়ে চিহ্নিত করা দুরূহ। তবুও প্রধান অবদানসমূহ হল-

১. বঙ্গবন্ধুকে নিঃশর্তভাবে রাজনীতি করতে দেয়া ও অনুপ্রাণিত করা;

২. সব সময় নিজ তহবিলের জমানো অর্থ বঙ্গবন্ধুকে প্রদান করা;

৩. বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে সংসারের হাল ধরা, সন্তানদের পড়ালেখা করিয়ে মানুষ করা;

৪. বঙ্গবন্ধুকে কারাগারে খাদ্য, ঔষধ ও নানা প্রকার বই সরবরাহ করা; 

৫. পার্টির গোপন খবর বঙ্গবন্ধুকে পৌঁছে দেয়া ও বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ পার্টিকে হস্তান্তর করা;

৬. কারাগারের অলস সময় কাজে লাগিয়ে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ লিখতে বঙ্গবন্ধুকে উৎসাহিত করা। ‘বসেই তো আছো, লেখ তোমার জীবনের কাহিনী’ বলে বঙ্গবন্ধুকে এ কাজে খাতা কলম সরবরাহ করা;

৭. ১৯৬৮ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা চলার সময় প্যারোলে মুক্তি নিয়ে পাকিস্তানের গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেয়ার ব্যাপারে চিরকুট পাঠিয়ে নিষেধ করা। ফলে বঙ্গবন্ধুর নিঃশর্ত মুক্তি পেয়ে ওই বৈঠকে যোগদান করেন।

৮. ১৯৭১ সালে ৭ মার্চের ভাষণের পূর্বে বঙ্গবন্ধুকে সঠিক নির্দেশনা দেয়া- ‘কারো কথা শুনবা না, দেশের বিরুদ্ধে কিছু বলবা না, তোমার মনে যা আসে তাই বলবা।’ বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ এ অলিখিত যে কাব্যিক ভাষণ দেন তা আজ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ভাষণগুলোর মধ্যে অন্যতম ইউনেস্কো যাকে the Memory of the World International Register, a list of world's important documentary heritage ঘোষণা করেছে। 

৯. নয় মাস মুক্তিযুদ্ধের সময় অসহনীয় মানসিক যাতনা সহ্য করে সন্তানদের নিয়ে পালিয়ে বেঁচে থাকা, বঙ্গবন্ধুর রক্ত ধারাকে রক্ষা করা;

১০. স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশ একজন সাধারণ ও চিরন্তন বাঙালি নারী, স্ত্রী, মা হয়ে সংসার সামলে স্বামীকে সুখী করার চিরন্তন প্রচেষ্টা গ্রহণ করা এবং ‘জীবনে মরণে দোঁহে’ মন্ত্র নিয়ে তাঁর সাথে পরপারে গমন করা ইত্যাদি।

বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনঘনিষ্ঠ তৃতীয় নারী ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় দুজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে ভারত দ্রুত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করে। প্রায় এক কোটি শরণার্থীকে ভারতে আশ্রয় দেওয়া, বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের পক্ষে কূটনীতিক সমর্থন আদায়- সব কিছুতেই ছিল ইন্দিরা গান্ধীর অসামান্য অবদান। বহির্বিশ্বে মুজিব-ইন্দিরা ভাই-বোন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁরা দুটি স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হলেও তাদের সম্পর্ক‚কূটনৈতিক সীমারেখা ছাড়িয়ে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক পর্যায়ে পৌঁছে ছিল। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিয়েছেন বলেই বাংলাদেশ মাত্র নয় মাসে স্বাধীন হয়েছে এবং স্বাধীনতা লাভের এক মাসের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে স্বাধীন বাংলায় পা রেখেছেন। 

বঙ্গবন্ধু একজন ক্ষণজন্মা পুরুষ। তিনি ভালোবাসতেন প্রকৃতি-নদী-বাংলার শস্য শ্যামলরূপ আর সরল জনগণকে। তার বিয়োগান্তক মৃত্যু হলেও তিনি ভাগ্যবান এই অর্থে যে, তিনি অনেক মহান ব্যক্তির স্নেহ-সান্নিধ্য ভালোবাসা পেয়েছেন, তাদের কাছ থেকে অর্জিত মানবিক গুণাবলি তাঁকে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বানিয়েছে। কাজেই আবহ বাংলার অবিচ্ছেদ্য অংশ নদী ও নৌকার সাথে বঙ্গবন্ধুর সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। আর পুরুষের জীবনে নারীর অবদান নিয়ে শ্রেষ্ঠ মন্তব্য করেছেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম যা দিয়ে এ লেখা শেষ করবো। তিনি লিখেছেন-

‘ বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি, চির কল্যাণকর

অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’

কাজেই নদী, নৌকা, নারী ও বঙ্গবন্ধু চারটি প্রত্যয়ের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক আমাদের সর্বদা অনুপ্রাণিত করে, যা করবে অনন্তকাল। গাজী আজিজুর রহমান তাঁর ‘ বঙ্গবন্ধু’র ভ্রমণ পদচিহ্ন’ প্রবন্ধে বঙ্গবন্ধুকে মূল্যায়ন করে লিখেছেন-, ‘তিনি ছিলেন বাঙালির চলার নদী, নৌকা, ওড়ার আকাশ, ধাবমান মেঘ, বলাকা বসিধ। বাঙালির চলা, চঞ্চলতা, গতিশীলতা, গতিশক্তি ও গতায়তির নাম শেখ মুজিবর রহমান।’


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

এক বছরের রাষ্ট্রপতির যত অর্জন


Thumbnail

আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।

দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।

আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।

গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে, তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও একই ভাবে থেকেছেন।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।


রাষ্ট্রপতি   মো. সাহাবুদ্দিন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নয়


Thumbnail

প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।

আওয়ামী লীগ যদি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি টিকে থাকতে চায় তাহলে দলকে এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এটা এখন সময়ের দাবি। যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তারা ইনিয়ে বিনিয়ে এখন নানান অজুহাত তৈরি করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের উচিত হবে এ সমস্ত অজুহাত না শোনা। কারণ যিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত পরিপন্থি কাজ করেছেন এটা সুস্পষ্ট। সুতরাং এখানে দল উচিত তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দল করলে তাকে দলীয় শৃঙ্খলা মানতেই হবে। অনথায় দল থেকে বাদ দিতে হবে। যারা দলীয় সিদ্ধান্তের পরিপন্থী কাজ করেন তারা কখনই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এদের মত আট-দশ দলে না থাকলে আওয়ামী লীগের কিছু যায়-আসে না। একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক ছাড়া আর কেউই আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। শেখ হাসিনাই কেবল মাত্র আওয়ামী লীগ এবং দেশের স্বার্থে অপরিহার্য। সুতরাং, এখন আমরা দেখতে চাই শৃঙ্খলা পরিপন্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা অমান্য করেছেন তিনি দলের যত বড় নেতাই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। দরকার হলে দল থেকে তাদেরকে বাদ দিতে হবে কিংবা বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। শুধু বহিষ্কারই নয়, তাদের প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল করতে হবে। এতে করে কারও যদি এমপিত্ব চলে যায় তো যাবে। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে দলের স্বার্থে। তাদের আসনে যে কাউকে নির্বাচন করে জিতে আসতে পারবেন। কোন মন্ত্রী এমপি আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন উপজেলা গুলো প্রার্থী দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দল কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখার জন্য গোটা দেশের মানুষ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে আছে।

অতীতে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কঠোর পদক্ষেপ নেবেন এমনটি আশা আওয়ামী লীগের প্রতিটি তৃণমূল নেতাকর্মীর। এখন আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় আমরা সেটার অপেক্ষা আছি।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনার সমালোচনা করলেও কেউই তার বিকল্প খুঁজে পান না


Thumbnail

দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। 

দার্শনিক শেখ হাসিনা এখন আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। এতদিন তিনি ছিলেন আগে রাষ্ট্রনায়ক পরে এবং দার্শনিক। এখন তিনি আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। কারণ তিনি একের পর এক দর্শনকে যেভাবে স্থায়ী রূপ দিয়ে যাচ্ছেন তাতে এদেশের সকলের মনোবলও বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন মন্ত্রিসভাতেও তিনি দর্শনের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। তিনি পুরনোদের সাথে নতুনদের যুক্ত করে নেতৃত্বের একটি চমৎকার ভারসাম্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। যা আমরা এই ১০০ দিনে বুঝতে পেরেছি এই নতুন মন্ত্রিসভার কাজকর্মে। সেদিক থেকে আমি অনুধাবন করতে পারি যে, এই ১০০ দিনে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এখন পর্যন্ত শতভাগ সফল।

গোটা বিশ্ব এখন যুদ্ধের মধ্যে পড়েছে। করোনার পর থেকে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ গোটা বিশ্ব অর্থনীতিতে টলটলয়মান করে দিয়েছে। এখন আবার নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে। বলা যায় বিশ্বে একটা মিনি বিশ্ব যুদ্ধ চলছে। গাজায় হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এরকম পরিস্থিতিতে দার্শনিক শেখ হাসিনার সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ। তবে আশার কথা যে, এখন পর্যন্ত তিনি সঠিক পথে আছেন এবং সফল ভাবে পুরো পরিস্থিতি মোকাবিলা করে যাচ্ছেন। বিশ্বের অস্থির পরিস্থির কথা অনুধাবন করে তিনি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকম নির্দেশনা দিচ্ছেন। যেমন-বিশ্ব বাজারে নতুন নতুন বাজারের সন্ধান। আমাদের যেন খাদ্য ঘাটতি পড়তে না হয় সেজন্য তিনি আগাম আমাদের সতর্ক করে দিচ্ছেন। পাশাপাশি আমাদের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতেও তিনি জোরালো ভাবে আহ্বান করেছেন। 

একজন জেনারেলকে কীভাবে বিচার করা হয়? তিনি কয়টি ব্যাটল জয় করলেন সেটা দিয়ে কিন্তু নয়। তাকে বিচার করা হয় যখন তিনি একটা ব্যাটলে হেরে যান এবং তার সৈন্যরা যখন পুরো ভেঙে পড়েন ঠিক সে সময় তিনি কীভাবে তার সৈন্যদের উজ্জীবিত করতে পারলেন সেটা বিবেচনায় নেওয়া হয়। দার্শনিক শেখ হাসিনাও সে রকম একজন জেনারেল, যে জেনারেল কঠিন সময়ে সাধারণ জনগণকে সবচেয়ে কম কষ্টে রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও যেন তিনি সফল ভাবে নিয়ে যাবেন সেটা বলাই বাহুল্য। অনেকে তার সমালোচনা করছেন ঠিক কিন্তু কেউ তার বিকল্পের কথা বলতে পারছেন না। তিনি দলকে যেমন ধরে রেখেছেন বা নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঠিক তেমনিভাবে সরকারকেও সঠিক পথে পরিচালনা করছেন। সুতরাং শেখ হাসিনার বিকল্প যে শেখ হাসিনাই এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। নতুন সরকারের প্রথম ১০০ দিনের মত সামনের দিনগুলোতে সাফল্য ধরে রাখবে এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

কতিপয় সাংবাদিক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাধর


Thumbnail

বারো বছর আগের কথা। ডেভিড ক্যামেরুন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদিন তিনি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লেন। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর সাথে ছবি তুলতে গেলেন। বাঁধ সাধলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক। জীবাণু প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি ওই কাজটি করছিলেন। ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন সাথে সাথে। ক্ষমা চাইলেন এবং ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন।

ভিন্ন চিত্র দেখলাম শনিবার সকালে বরিশাল সদর হাসপাতালে। দায়িত্বরত চিকিৎসক ওয়ার্ডে রাউন্ড দিতে যেয়ে দেখেন দুজন টিভি সাংবাদিক ওয়ার্ডে ভিডিও করছেন। ভিডিও শেষ হবার পর চিকিৎসক তাঁর রাউন্ড শুরু করলেন। রাউন্ড শুরু করতেই দুজন সাংবাদিক আবার ক্যামেরা ধরে চিকিৎসকের সাথে কথা বলা শুরু করলেন। চিকিৎসক তাদের পরিচয় জানতে চাইলেন। বিনয়ের সাথে নিচু স্বরে একে একে ২০ বার (গুনে নিশ্চিত হয়েই বলছি) সাংবাদিকের নাম জিজ্ঞেস করলেন, পরিচয় জানতে চাইলেন। উক্ত সাংবাদিক নাম বলেননি, পরিচয় দেননি। বরং উচ্চস্বরে উল্টা পাল্টা কথা বলেছেন, পাল্টা প্রশ্ন করেছেন। অবশেষে কর্তব্যরত চিকিৎসক উর্ধতন কাউকে ফোন দেয়ার পর সাংবাদিক সাহেব তার নাম বলেছেন। এখানে দুটি প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।  প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, সাংবাদিক দুজন কি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাধর হয়ে গেছেন ? দ্বিতীয় প্রশ্ন, সাংবাদিক দুজনকে কেন নাম বলতে হবে ? নাম, পদবি, পরিচয় থাকবে তাদের বুকে বা কোমরে প্রদর্শিত আই ডি কার্ডে। এখন দেখার বিষয়,  প্রদর্শিত স্থানে আই ডি ছিল কিনা ? না থাকলে থাকবে না কেন?

সাংবাদিক ও চিকিৎসকবৃন্দ ঘটনার ভিডিও চিত্র সমূহ পৃথকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিয়েছেন। সব গুলো ভিডিও কয়েকবার দেখেছি, পর্যালোচনা করেছি। দায়িত্বরত চিকিৎসক কখনোই উচ্চস্বরে কথা বলেননি। তিনি যথেষ্ট ধৈর্য্য, বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। পক্ষান্তরে সাংবাদিক দুজন বারবার উচ্চস্বরে কথা বলেছেন। তাদের কথা বলার ধরণ দেখে মনে হয়েছে, এটি একটি মগের মুল্লুক। কর্তব্যরত চিকিৎসক ওয়ার্ড রাউন্ড শুরু করার আগে প্রতি রোগীর সাথে একজন এটেন্ডেন্ট ব্যাতিরেকে সবাইকে বের হবার কথা বলেছেন। সবাই বেরিয়ে না গেলে তিনি চিকিৎসা শুরু করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। সেটাই নিয়ম।  সারা দুনিয়ায় সেটাই হয়ে থাকে। সাংবাদিকদ্বয় সেটি শুনতে নারাজ। এখানে তারা স্পষ্টতই সরকারি কাজে বাধা সৃষ্টি করেছেন, যা আইনত দণ্ডনীয়।  

দিন শেষে বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দেখলাম সাংবাদিকদের হেনস্থা করেছে ডাক্তার। অথচ ভিডিও গুলি পর্যালোচনা করলে যে কেউ বলবেন, ডাক্তারকে হেনস্থা করেছে সাংবাদিকরা। আসলেই মগের মুল্লুক। ঘটনা কি ? আর সংবাদ শিরোনাম কি? এসব মগের মুল্লুকের রাজত্ব  থেকে জাতিকে পরিত্রান দেয়া প্রয়োজন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিএমএ, এফডিএসএর, বিডিএফ ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ সমন্বয়ে একটি কমিটি করে দেয়া দরকার। কমিটি হাসপাতালে সাংবাদিক প্রবেশে ও তাদের দায়িত্ব নির্ধারণে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করবে। সে নীতিমালায় যাতে স্বাস্থ্য কর্মীদের কাজে বাধা প্রদান না করা হয়, রোগীর অনুমতি ব্যাতিরেকে তাদের ছবি, ভিডিও বা রোগ সংক্রান্ত কোন তথ্য প্রকাশ বা প্রচার না করা হয়, সেসব বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা প্রয়োজন। তা না হলে হাসপাতাল সমূহে এ ধরণের অরাজকতা হতেই থাকবে, বাড়তেই থাকবে।  

লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

প্রথম আলোর পর কী ডেইলি স্টারও বিক্রি হবে?


Thumbnail

এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন।

প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে অনেকেরই  ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী লোক।

এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।

তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।

এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।

আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম। সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায় যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।

ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।

তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।

তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।


প্রথম আলো   ডেইলি স্টার  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন