ইনসাইড থট

গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা এবং মানবাধিকার- এ নিয়ে কথা বলার অধিকার কার আছে?

প্রকাশ: ১০:০১ এএম, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২১


Thumbnail গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা এবং মানবাধিকার- এ নিয়ে কথা বলার অধিকার কার আছে?

(দ্বিতীয় পর্বে)
আমি দেখলাম, যখন বাইডেন সরকার তাদের তথাকথিত ভার্চুয়াল টক শো "গণতন্ত্রের জন্য শীর্ষ সম্মেলনে” বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি, তখন কিছু বাংলাদেশি আঙুল তোলা শুরু করলেন এই বলে যেহেতু তাদের বড় ভাইয়ের দেশ বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ করেনি তা প্রমাণ করে বাংলাদেশে কোন গণতন্ত্র নেই। কেউ কেউ নির্লজ্জভাবে গর্বিত বোধ করাও শুরু করেন।

গত ১০ বছরে, আরব বসন্তে (Arab spring) আমেরিকান এবং ইউরোপীয় প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে যে কেন বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রের কারণের সাথে পশ্চিমা গণতন্ত্রকে বিশ্বাস করা যায় না। ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা এবং চাকরির জন্য আরব অভ্যুত্থানের জন্য সংক্ষিপ্ত উত্তেজনার পরে, পশ্চিমা শক্তিগুলি, তাদের স্বাভাবিক তুষ্টিতে ফিরে এসে আবার আরব স্বৈরশাসকদের তাদের সমর্থন এবং নিরাপত্তা দেয়। মিশরে সেনাবাহিনীর জেনারেল বন্দুক দিয়ে দেশের নির্বাচিত প্রধানকে অপসারণ করে এবং হাজার হাজার প্রতিবাদকারী মানুষকে হত্যা করে, পশ্চিমারা এটিকে তার অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে বিবেচনা করে। সুতরাং, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের "গণতন্ত্রের জন্য শীর্ষ সম্মেলন", এই অঞ্চলে এবং এর বাইরেও সংশয়ের মুখোমুখি হয়েছে। আঘাতের সাথে অপমান যোগ করার জন্য, বাইডেন প্রশাসন আমন্ত্রণ ইস্যু করার জন্য নির্বাচনী মানদণ্ড প্রয়োগ করেছে, যা "গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চেয়ে আমেরিকান রাজনীতিকে বেশি" প্রতিফলিত করে।

মধ্যপ্রাচ্য থেকে, শুধুমাত্র ইরাক এবং ইসরায়েলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, একটি পছন্দ যা দুঃখজনক এবং নিন্দনীয়। ইরাক, যা গত ২০ বছর ধরে মার্কিন দখলদারিত্বের অধীনে ভুগছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ফ্রিডম হাউস দ্বারা "মুক্ত নয়" বলে বিবেচিত হয়েছে। ইসরায়েল তার অস্তিত্বের বেশিরভাগ সময় ফিলিস্তিনি জনগণকে তাদের স্বাধীনতা এবং মানবাধিকার অস্বীকার করেছে, নির্মমভাবে একটি বর্ণবাদ ব্যবস্থা চালাচ্ছে, আর ফিলিস্তিনদের ধ্বংস এবং দখলে ইসরায়েল তার উন্নতি বৃদ্ধি করেছে।

পাকিস্তান হল আরেকটি আমন্ত্রিত দেশ, যে দেশ স্বাধীনতার পর থেকে বেশিরভাগ সময় সেনা জেনারেলদের দ্বারা শাসিত হয়েছে, সেনা জেনারেল ক্ষমতা দখলের পর গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে ফাঁসিতে ঝুলায় এবং যে দেশে কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে পারে না বা তাদের ক্ষমতা ধরে রাখতে পারে না সেনা জেনারেলদের নির্বোধ অনুমোদন ছাড়া। যদিও পাকিস্তান আমন্ত্রণ গ্রহণ করতে অস্বীকার করে এবং যোগ দেয়নি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে, যখন জাতিসংঘ তৈরি করা হয়েছিল, তখন জাতিসংঘ সনদ প্রতিটি দেশকে (ছোট বা বড়, শক্তিশালী বা শক্তিহীন) সমান ভোট দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়ার ফলে পশ্চিমা শক্তিধর দেশগুলো অন্য দেশের ওপর তাদের কর্তৃত্ব আরোপ করার ক্ষমতা হারায় (জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ যেখানে পাঁচটি বড় শক্তি তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার একমাত্র ক্ষমতা ধরে রেখেছে)। যদি কোন দেশ শক্তিশালী পশ্চিমা দেশগুলোর ক্ষমতা অস্বীকার করার সাহস করে এবং স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহস করে তাদের শাস্তি ও পরাস্ত করতে, পশ্চিমা শক্তিধর দেশগুলো তাদের ইচ্ছামতো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা, মানবাধিকার ও বাক-স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখার তথাকথিত মাপকাঠি ব্যাবহার করে এবং সেই অনুযায়ী বিচার করে একতরফা বিভিন্ন ব্যক্তিগত, অস্ত্র এবং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। একটি লাতিন আমেরিকান দেশ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের মার্কিন স্পন্সর রেজুলেশনের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার পরে, মার্কিন প্রতিনিধি এই বলে হুমকি দেয় যে "এটি একটি খুব ব্যয়বহুল ভোট আপনার দেশ কখনও ভোট দিয়েছে"।

শক্তিশালী পশ্চিমা দেশগুলো তাদের ঔপনিবেশিক আমলের অতীত শতাব্দীর (এমনকি বর্তমানেও) মানবাধিকারের কঠোর অপব্যবহার এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন, দাস ব্যবসা, গণহত্যা বা আদিবাসী জনগণের দমন/বশীভূত করা, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের পতন, জাতীয় নেতাদের হত্যার কথা মনে হয় ভুলে গেছে! সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর (চীন তখন তাদের অর্থনীতি তৈরিতে ব্যস্ত ছিল), সমস্ত ক্ষমতা চলে যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের একমাত্র পরাশক্তিতে পরিণত হয়। একমাত্র পরাশক্তির সহায়তায় পশ্চিমা দেশগুলো নিরাপত্তা পরিষদে (রাশিয়া ও চীন তাদের ভেটো ক্ষমতা ব্যবহার করার সাহস করেনি) মিথ্যা ও প্রতারণার মাধ্যমে দেশের পর দেশ আক্রমণ করেছে, কার্পেট বোমা হামলা করে সেসব দেশকে ধ্বংস করেছে, হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। বিশ্বে ডলার এবং সুইফট (SWIFT) লেনদেন সুবিধার আধিপত্যের সুবিধায় কারণে, তারা কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে সক্ষম এবং তা বলবৎকরণ শুরু করে। আমাদের নীরব পর্যবেক্ষক হয়ে তাদের মেনে চলা ছাড়া অন্য কোন বিকল্প ছিল না। সময় বদলে যাচ্ছে। এখন রাশিয়া তার দাঁত দেখাতে শুরু করেছে এবং চীন খুব শীঘ্রই অর্থনীতিতে হয়ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাবে – তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশগুলি তাদের ইউনিপোলার শক্তি হারানোর চরম ভয়ে ভুগছেন। তাই এখন অনেকেই প্রশ্ন করছেন যে "গণতন্ত্রের জন্য শীর্ষ সম্মেলন" এর উদ্দেশ্য গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখার এবং ছড়িয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা নাকি সারা বিশ্বে আমেরিকার বিশ্বাসযোগ্যতা এবং প্রভাব বৃদ্ধি করা এবং চীন ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে তার শক্তির প্রতিযোগিতায় ওয়াশিংটনের অবস্থান উন্নত করা? অনেক দেশ, বিশেষ করে এশিয়ান টাইগাররা তাদের বিশাল জনসংখ্যা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং ক্রমবর্ধমান ক্রয় ক্ষমতার সাথে পশ্চিমা দেশগুলোর একতরফা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং ক্রমবর্ধমান সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তাদের জন্য সমস্যাজনক হয়ে উঠছে এবং তারা আমাদের বশীভূত করার জন্য নানা উপায় খুঁজছে বলে আমন্ত্রণ না পেয়ে দুঃখিত না হয়ে গর্বিত বোধ করা উচিত। আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, আমি বলবো আমি গর্বিত বোধ করি কারণ আমাদের অগ্রগতি অনেকের নজরে আসছে এবং আমাদের সম্মান প্রদর্শন করতে বীতিমত বাধ্য হচ্ছে।

এরপর খবর আসে, বাংলাদেশের কয়েকজন আইন প্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার কথা। দুঃখজনকভাবে, আমরা দেখলাম যে কিছু লোক তাদের কৃতিত্বে আমাদের সার্বভৌমত্ব, জাতি হিসাবে আমাদের গর্ব এবং আমাদের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিকে ক্ষুণ্ণ করায় এত খুশি হয়েছে। আমরা সবাই আজীবন মানবাধিকার সমুন্নত রাখার জন্য লড়াই করব কেউ আমাদের বাধ্য করছে বলে নয়, বরং একটি গর্বিত জাতি হিসাবে এবং আমাদের সংবিধানকে সমুন্নত রাখার জন্য।

সম্প্রতি বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ এবং দৃঢ় হচ্ছে। আমরা যখন মরিয়া হয়ে কোভিড ভ্যাকসিন খুঁজছিলাম, তখন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে ভ্যাকসিন পাঠায়। তাহলে হঠাৎ করে যুক্তরাষ্ট্রের এইসব পদক্ষেপের কারণ কি? কারা দরজার পিছনে বসে নোংরা খেলা খেলছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণকে প্রভাবিত করছে? যাই হোক সর্বশেষে তাদের সিদ্ধান্তের জন্য বাইডেন সরকারই এককভাবে দায়ী।

আশ্চর্যজনকভাবে, কর্নেল চৌধুরী ফজলুল বারী ২০০৫ সালে র‍্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন। উইকিলিকস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশিত গোপন নথি থেকে জানা যায় তিনি মার্কিন দূতাবাসের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক কাউন্সিলরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তারা দুজন একান্ত আলাপচারিতায় এই অভিমত প্রকাশ করেন যে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে ক্রসফায়ার বা এনকাউন্টার বৈধ। বিদ্রুপাত্বকভাবে কোন নিষেধাজ্ঞা আরোপ নয়, চৌধুরী ফজলুল বারী এখন বেশ আরামে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন।

অন্যদিকে, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে এই সরকারের প্রচেষ্টার কারণে, বাংলাদেশের একটি আদালত নারায়ণগঞ্জের কেন্দ্রীয় শহরে সাতজনকে অপহরণ ও হত্যার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৬ জন র‍্যাব কর্মকর্তাসহ ২৬ জনকে তাদের অপকর্ম আর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য মৃত্যুদণ্ড দেয়। ২০২০ সালের ৩১ জুলাই কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ নিহত হন। থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও এসআই নন্দদুলাল সহ এই মামলায় বর্তমানে ৭ জন আসামি কারাগারে রয়েছেন। এগুলি এমন কিছু উদাহরণ যা দেখায় যে বর্তমান সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সহ্য করবে না। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমরা দেখছি কিছু লোক উল্লাসিত হয়ে, সরকারকে দোষারোপ করে সরকারকে অগণতান্ত্রিকভাবে পতনের দিবাস্বপ্ন দেখছে। আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং প্রচেষ্টার এই হস্তক্ষেপে খুশি বোধ করছে। তাদের কোন লজ্জাবোধ নেই যে অন্য একটা দেশ আমাদের অসম্মান করার চেষ্টা করছে এবং আমাদের সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণ্ণ করছে দেখে।

প্রথম আলোতে মারুফ মল্লিক লিখেছেন “ যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কাছে নতি স্বীকার করে প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন জোটে যোগ দিলে যুক্তরাষ্ট্র হয়তো গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বিষয়গুলোর ব্যাপারে বাংলাদেশকে ছাড় দিতে পারে। কিন্তু নদীর জল মনে হয় অনেকটাই গড়িয়েছে”। তার মতামত থেকে এটা স্পষ্ট যে এটা রাজনীতি, তাদের বশ্যতা স্বীকার করার কৌশল, গণতন্ত্র বা মানবাধিকার সমুন্নত করার উদ্যোগ নয়। তিনি আমাদেরকে ক্রীতদাসের মতো নতজানু হয়ে আত্মসমর্পণের পরামর্শ দিচ্ছেন!

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের কড়া সমালোচনা করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, “এই সরকারের অবস্থানটা হচ্ছে, কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতির সমালোচনা করা যাবে না, সারাক্ষণ প্রশংসা ও বন্দনা করতে হবে। এখন আমরা যে শাসনের মধ্যে আছি, সেটিও জেনারেল শাসনের মতোই। সামরিক শাসন হলেও এখনকার চেয়ে আলাদা কিছু হতো না”।

রিজভী সাহেব বলেন “কেন তারা (যুক্তরাষ্ট্র) নিষিদ্ধ করেছে? তারা তো চোখ বন্ধ করে নেই। বাংলাদেশে কি হচ্ছে তারা সবাই দেখছে। ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ অনেকে গুম হয়েছেন। তারা কি জানে না, কেন গুম হয়েছে, কে গুম করেছে? আপনারা (আওয়ামী লীগ নেতারা) ম‌নে ক‌রে‌ছেন, চোখ বন্ধ করলে প্রলয় বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু চোখ বন্ধ করলে প্রলয় বন্ধ হয় না, সেটা এখন শুরু হয়েছে। এর জন্য দায়ী কে? এর জন্য দায়ী আপনি (প্রধানমন্ত্রী) শেখ হাসিনা”।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, "কী লজ্জা; আমাদের পুলিশ প্রধান, আমাদের র‍্যাব প্রধান তাঁদের যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটা দেশ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কী কারণে এই নিষেধাজ্ঞা, তাঁরা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন। বেআইনিভাবে মানুষকে হত্যা করেছেন। সুতরাং জনগণের কাছে এর জবাব তো দিতেই হবে"। তিনি আরো বলেন, "মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পুলিশ প্রধান ও র‍্যাব প্রধানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এটাকে আমি চমক মনে করি না। আমি মনে করি, এটি অবশ্যম্ভাবী পরিণতি। এটাই তাঁদের পরিণতি। এই ধরনের যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেন, যারা মানুষের অধিকার কেড়ে নেন, যারা জনগণকে হত্যা করেন, তাঁদের পরিণতি এমনই হয়।"

আমীর খসরু সাহেব বলেছেন, "যারা জোর করে ক্ষমতায় থাকতে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করেছে, এই নিষেধাজ্ঞার জন্য তারাই দায়ী।"

যারা এই নিষেধাজ্ঞার জন্য খুব গর্বিত, তারা কখনও তাদের বড় ভাইয়ের রেকর্ডের দিকে তাকায়নি এবং তাদের মানবাধিকারের অপব্যবহার বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার নৈতিক অধিকার আছে কিনা তা বিবেচনা করেনি। সম্প্রতি আফগানিস্তানে ড্রোন হামলার মাধ্যমে তারা একটি পরিবারের ১০ সদস্যকে হত্যা করেছে যাদের বেশিরভাগই (৭ জন) শিশু সন্তান কিন্তু তারা সেই হত্যাকাণ্ডকে ন্যায্যতা দিয়ে বলে যে এটি একটি ভুল ছিল এবং সেই হত্যাকাণ্ডে কেউ দায়ী নয়।

একাধিক বর্তমান এবং প্রাক্তন সামরিক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মতে, একটি একক শীর্ষ-গোপন আমেরিকান স্ট্রাইক সেল সিরিয়ায় হাজার হাজার বোমা এবং ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, কিন্তু একটি দুষ্ট শত্রুকে আঘাত করার প্রক্রিয়ায়, ছায়াময় বাহিনী সুরক্ষার পাশ কাটিয়ে বারবার বেসামরিক মানুষকে হত্যা করেছে। কাউকে বিচারিক আদালতে অনুমোদন বা বিচার করা হয়নি।

আমেরিকায় প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ পুলিশের হাতে নিহত হয় যা তারা বিচার বিভাগীয় তদন্ত ছাড়াই ন্যায্য হত্যা বলে বর্ণনা করে। কেউ প্রশ্ন করেনি বা তাদের অফিস প্রধানের বিরুদ্ধে অনুমোদনের সুপারিশ করেনি। দেশে এবং বিদেশে আমরা তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যার শত সহস্র উদাহরণ উদ্ধৃত করতে পারি। আমরা এটাও জিজ্ঞাসা করতে পারি কেন তারা আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত বা বিচার আদালতে স্বাক্ষর করেনি। প্রশ্নটি আমি জিজ্ঞাসা করতে চাই যে আমাদেরকে বিচার করার জন্য তাদের কী নৈতিক কর্তৃত্ব রয়েছে এবং কেন আমরা নির্লজ্জভাবে তার জন্য খুশি হব?

হ্যাঁ, মিঃ রিজভী, মিঃ ফকরুল, মিঃ সারওয়ার, মিঃ আমির খসরু, আপনারা আমাদের দূরদর্শী প্রধানমন্ত্রীকে দোষ দিতে পারেন। কারণ প্রধানমন্ত্রীর দোষ তিনি একজন গর্বিত বাঙালি এবং বাংলাদেশি। দোষ হল তিনি অক্ষয়, আপনি তাকে কলুষিত করতে পারবেন না; দোষ হল উনি আপামর বাংলাদেশের মানুষকে ভালবাসেন এবং তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতির জন্য নিদ্রাহীন এবং অক্লান্ত চেষ্টা করছেন; দোষ হল সর্বশক্তিমান বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করার সাহস করেন এবং দেশের নিজস্ব অর্থ ব্যবহার করে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর দোষ হল তিনি তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্র সচিবকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন এবং প্রাকৃতিক গ্যাস বাণিজ্যে একমত হননি। দোষ উনি বাংলাদেশের অবকাঠামো, সড়ক, রেল, এয়ারওয়ে, টেলিযোগাযোগ, ইন্টারনেট, ওয়েব ভিত্তিক সংযোগ, বিদ্যুৎ, জাতীয় ও অর্থনীতি বিনির্মাণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের উন্নতি করছেন; দোষ হচ্ছে নারীর ক্ষমতায়ন এবং সকল ক্ষেত্রে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করছেন; দোষ হলো তার প্রচেষ্টায় মানুষ বেশিদিন বাঁচছে, খাবার অভাবে ও ক্ষুধার কারণে একজনও মারা যাচ্ছে না; হাজারে শিশু ও মা পরিহারযোগ্য কারণে মারা যাচ্ছে না। দোষ হল আজ লাখ লাখ মেয়ে আর ছেলেরা স্কুলে যাচ্ছে, উচ্ছ শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে; তার দোষ ভারত, চীন, রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ইউরোপীয় এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলি থেকে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য একটি আইনি, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছেন। তার দোষ হল কোভিড মহামারী সত্ত্বেও, তিনি দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, জীবন ও জীবিকা বাঁচিয়েছেন, অর্থনৈতিক চাকা সচল রেখেছেন। তার দোষ হল তিনি তার নেতৃত্ব এবং বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সফল করার জন্য বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছেন। তার দোষ হল "সবার বন্ধু, কারো সাথে শত্রু নয়" এই পররাষ্ট্র নীতি গ্রহণ করেছেন। দোষ হলো একটি সার্বভৌম পররাষ্ট্র নীতি গ্রহণ করা, চীনের রাষ্ট্রদূতের চতুর্মুখী নিরাপত্তা সংলাপে (QUAD) উদ্যোগে বাংলাদেশের যোগদান করা উচিত নয় এমন মর্মান্তিক মন্তব্যকে ধমক দিতে দ্বিধা না করা। দোষ হলো সম্প্রতি আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলির বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র দপ্তরে কল করার জন্যও অপেক্ষা না করা। আপনি প্রধানমন্ত্রীকে তার উপরোক্ত সব দোষের জন্য দোষারোপ করতে পারেন, কিন্তু যারা একজন বাঙালি এবং বাংলাদেশি হিসেবে গর্বিত, আমরা তাকে স্যালুট করি, ভালোবাসি, সন্মান করি এবং দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে আগামী দশকের জন্য জাতির এখন প্রয়োজন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার, এর কোন বিকল্প নেই।

আমি উজবেকিস্তানে এইচআইভি/এইডস পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য যেয়ে একজন মার সাথে তার বাড়িতে কথা বলেছিলাম। আমি তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম তিনি সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে তাদের স্বাধীনতা সম্পর্কে কী ভাবেন (যদিও উজবেকিস্তান তখন নৃশংস স্বৈরশাসক ইসলাম করিমভ রাষ্ট্রপতি ছিলেন)। তিনি বললেন, "হ্যাঁ, আমি এখন অনেক কথা বলতে পারি, কিন্তু আমার বাচ্চাদের ভাল খাবার বা কাপড় দেওয়ার এবং তাদের স্কুলে রাখার সামর্থ্য আমার নেই। শীতে আমার ঘর গরম করতে পারি না। আজকাল, যখন আমার মেয়ে সময়মতো বাড়ি ফিরে না, আমি ভয় পাই। আগে আমাকে সেসব নিয়ে ভাবতে হয়নি, যদিও তখন আমি যা চাই তা বলতে পারতাম না।" বিশ্ববিখ্যাত অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন ডব্লিউএইচও, জেনেভাতে তাঁর বক্তৃতায় বলেছিলেন, “ভারতে খুব বেশি গণতন্ত্র রয়েছে, কেন্দ্র রাজ্যগুলির জন্য সিদ্ধান্ত নিতে না পারার কারণে মানব ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, গরিবরা আরও গরীব হচ্ছে। কিন্তু চীনের দিকে তাকান, কেন্দ্রীভূত সিদ্ধান্ত এটিকে বিশ্ব অর্থনৈতিক শক্তিশালীতে পরিণত করেছে”। আমি ভাবি যদি আমরা একজন কৃষক, একজন রিকশাচালক বা একজন চা বিক্রেতা বা ফুটপাথের বিক্রেতাদের, কারখানার শ্রমিক বা ছোট ব্যবসায়ীদের জিজ্ঞাসা করি যে তারা কী চান -.অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা যাতে তাদের পরিবার প্রতি রাতে খাবার পায়, বাচ্চাদের ভালো কাপড় এবং জুতা পায়, এবং স্কুলে যেতে পারে, তারা ভবিষ্যতে উপযুক্ত চাকরি পায়, তাদের ঘরে বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা, তাদের পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাওয়া অথবা তার পরিবর্তে শুধু বাক স্বাধীনতা, তারা কোনটি বেছে নেবে? গরীবের দরিদ্রতা, অন্নের অভাব, বাসস্থান, পানি, বিদ্যুৎ, স্কুল ও স্বাস্থ্যের সুযোগ, নিরাপত্তা না থাকা, সন্তান প্রসবের সময় নারী মারা যাওয়া কি তাদের মানবাধিকার, তাদের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন নয়? আমি ভাবছি কোনটি প্রথম অর্থনৈতিক উন্নয়ন অথবা বাক স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র? অথবা পাশাপাশি এবং ধীরে ধীরে উভয়ই পথে আমাদের চলতে হবে? ভাবছি গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং বাকস্বাধীনতার নামে বিচার ও অনুমোদন আরোপ করার ক্ষমতা কে বা কারা রাখেন? আজ বাংলাদেশের জনগণ ক্ষমতা দখলের জন্য সন্ত্রাসীদের দ্বারা হরতাল, জ্বালাও-পোড়াও, হত্যা এবং সম্পত্তি ধ্বংস হতে দিতে চায় না। এইতো সেইদিন, সিঙ্গাপুর একটি কঠোর স্বৈরশাসক দ্বারা শাসিত ছিল, আর তার নেতৃত্বে ধীরে ধীরে ধনী এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে ওঠে। আজ অর্থনীতি বৃদ্ধির সাথে সাথে, মানুষ দরিদ্র নয় এবং তাদের গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা এবং মানবাধিকার (অভিবাসী শ্রমিক বাদে) ধীরে ধীরে কিন্তু নিশ্চিতভাবে অনেকটা নিশ্চিত। বাংলাদেশেও পরিবর্তন ঘটছে এবং এই পরিবর্তন দমন করা যাবে না। কেউ এটা থামাতে পারবে না। নিষেধাজ্ঞা বা কোনো অনুমোদন, বা কোনো হুমকি তা তরান্বিত করতে পারবে না। গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতা সমুন্নত রাখতে আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে। আমরা নিজেরাই কোন বহিরাগত হুমকি বা নিষেধাজ্ঞা ছাড়া সেগুলি অর্জন করবো। নিজেকে আর নিজের শক্তির উপর বিশ্বাস করতে শুরু করুন।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে কেন এই বিতর্ক


Thumbnail

স্বাধীনতার ঘোষণা এবং ঘোষক বিষয়ে মাঝামাঝে কেউ কেউ অহেতুক বিতর্ক করেন। অথচ ইতিহাসের বাস্তবতা, সংবিধান এবং সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত, স্বীকৃত এবং মীমাংসিত সত্য হচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এবং স্বাধীনতার ঘোষক।

কয়েকদিন আগে বিএনপি নেতা মেজর অবসরপ্রাপ্ত হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম দাবি করেছেন মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা না করলে এদেশ নাকি আজও স্বাধীন হতো না। বঙ্গবন্ধুর ২৬ শে মার্চের স্বাধীনতা ঘোষণার দাবি নাকি কল্পকাহিনী! কত বড় ধৃষ্টতা! চিন্তা করা যায়? তিনি দাবি করেছেন ২৩ শে মার্চ থেকে ইপিআর পাকিস্তানি বাহিনীর দখলে। তাহলে ইপিআরের কন্ট্রোল রুম থেকে কিভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা ট্রান্সমিট করা সম্ভব? স্বাধীনতার ঘোষণা বিষয়ে মেজর হাফিজের এই মনগড়া, ভিত্তিহীন এবং অসত্য বক্তব্যের তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং ইতিহাসের সত্য পাঠ থেকে তার বক্তব্য খন্ডন করছি। 

বঙ্গবন্ধু ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে যে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং সেটি দেশ-বিদেশে প্রচারিত হয়েছিলো সেটি প্রমাণের জন্য একটি তথ্যই যথেষ্ট। পাকিস্তানের জেনারেল টিক্কা খান এবং জেনারেল নিয়াজীর জনসংযোগ কর্মকর্তা সিদ্দিক সালিক রচিত "উইটনেস টু সারেন্ডার " গ্রন্থে তিনি লিখেছেন - " ২৫ শে মার্চ রাতে যখন প্রথম গুলিটি বর্ষিত হলো ঠিক সেই মুহূর্তে পাকিস্তান রেডিওর সরকারি তরঙ্গের কাছাকাছি একটি তরঙ্গ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষীণ কণ্ঠস্বর ভেসে এলো। ঐ কণ্ঠের বাণী মনে হয় আগেই রেকর্ড করে রাখা হয়েছিল। তাতে শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তান কে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ হিসেবে ঘোষণা করলেন।" বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা বিষয়ে সিদ্দিক সালিক এর মন্তব্যের পর আর প্রমাণের কিছু বাকি থাকে? তারপরও আমরা আরো কয়েকটি ঘটনা দিয়ে প্রমাণ করবো মেজর হাফিজের বক্তব্য সর্বৈব মিথ্যা, বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন। 

আসুন দেখা যাক, ইতিহাস কি বলে? বঙ্গবন্ধু আসলেই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন কি না? ইপিআরের সিগন্যাল কোরের সেন্ট্রাল সুবেদার মেজর শওকত আলি ২৫ শে মার্চ দিবাগত রাত সাড়ে এগারোটা থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ইপিআর এর ওয়্যারলেসে তার নিজস্ব ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে ইপিআর প্রধানের মাস্ট ব্যবহার করে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ শুরু করেন। স্বাধীনতার ঘোষণা ট্রান্সমিটরত অবস্থায় তিনি নাবিস্কো বিস্কুটের একটি টিনের কৌটা সহ রাত সোয়া বারোটায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে বন্দী হন এবং নির্মমভাবে নিহত হন। মেজর শওকতের সাথে সে রাতে আটক হওয়া ইপিআরের সিগন্যালম্যান আব্দুল মোত্তালিব ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। তার সাক্ষাৎকার থেকে এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন মেজর শওকতের কন্যা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সেলিনা পারভীন। যিনি দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত তার নিবন্ধে এ বিষয়টি তুলে ধরেছেন। সুতরাং মেজর হাফিজের দাবি যে, ভিত্তিহীন, মনগড়া এবং বায়বীয় তা স্পষ্ট। 

এবার আসা যাক বেতারে প্রকাশিত বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা প্রসঙ্গে। ২৫ শে মার্চ বেতার কেন্দ্র পাকিস্তানীদের দখলে থাকলেও বঙ্গবন্ধু গোপনে তিনটি রেডিও ট্রান্সমিটার তিন জায়গায় প্রস্তুত রেখেছিলেন বলে বিভিন্ন উৎস থেকে জানা যায়। তিনটি ট্রান্সমিটারের একটি বঙ্গবন্ধুর  ধানমন্ডি-৩২ নম্বরের বাসভবনে অতি গোপনে স্থাপন করা হয়েছিলো। বুয়েটের অধ্যাপক ডক্টর নূরুল উল্লাহ্'র সাক্ষাৎকার থেকে এ বিষয়টি জানা যায়। বঙ্গবন্ধু ডক্টর নূরুল উল্লাহ্কে তার বাসভবনে ডেকে একটি ট্রান্সমিটার তৈরি করে দিতে বলেন। ঐ ট্রান্সমিটারের সাহায্যে বঙ্গবন্ধু শেষবারের মতো দেশবাসীর উদ্দেশ্যে কিছু বলে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। পরবর্তীতে ডক্টর নূরুল তড়িৎ কৌশল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের সাথে কথা বলে একটি ট্রান্সমিটার তৈরির ব্যবস্থা করেন এবং বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে স্থাপন করেন। এটির সম্প্রচার ক্ষমতা ছিল প্রায় বাংলাদেশব্যাপী। এই ট্রান্সমিটারের সাহায্যে বঙ্গবন্ধু তার স্বাধীনতার ঘোষণা রেকর্ড করান। ডক্টর মোহাম্মদ হান্নান রচিত "বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস" গ্রন্থে এ বিষয়ের উল্লেখ আছে। 

আরেকটি ট্রান্সমিটার ছিলো বেতার বিভাগের বিভাগীয় প্রকৌশলী এ কে এম নুরুল হকের কাছে। বঙ্গবন্ধু তাকে একটি ট্রান্সমিটার জোগাড় করার কথা বললে তিনি খুলনা থেকে সেটি নিয়ে আসেন। ২৫ শে মার্চ রাত বারোটার আগে আগে সেটির সাহায্যে আগেই রেকর্ড করে রাখা বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ কন্যা শারমিন আহমদ তার রচিত তাজউদ্দীন আহমদ নেতা ও পিতা" গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর পার্সোনাল এইড হাজী গোলাম মোর্শেদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে বিষয়টি উল্লেখ করেন। জনাব মোর্শেদ ২৫ শে মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে ছিলেন এবং বঙ্গবন্ধুর সাথে তাকেও সে রাতে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সময় তার উপর অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। পরবর্তীতে তিনি মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে ছাড়া পান। 

হাজী গোলাম মোর্শেদ শারমিন আহমদ কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন- "২৫ শে মার্চ রাত বারোটার দিকে বঙ্গবন্ধুর বাসায় একটা টেলিফোন আসে। আমি সেটা রিসিভ করি।" ফোনকলে অপর প্রান্ত থেকে বলা হয়, "আমি বলধা গার্ডেন থেকে বলছি, মেসেজ পাঠানো হয়ে গেছে। মেশিন নিয়ে কি করব?" পাশে থাকা বঙ্গবন্ধু কে জনাব মোর্শেদ বিষয়টি জানালে বঙ্গবন্ধু জনাব মোর্শেদের মাধ্যমে তাকে ট্রান্সমিটারটি ভেঙে ফেলে সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন। গোলাম মোর্শেদের সাক্ষাৎকার এবং ব্যারিস্টার এম আমিরুল ইসলামের লেখা থেকে ফোনকলের অপর প্রান্তের ব্যক্তিকে প্রকৌশলী এ কে এম নুরুল হক হিসেবে সনাক্ত করা হয়েছে। ২৯ মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাকে তার মহাখালীর সরকারি বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। এরপর তার আর সন্ধান পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হয়, বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ট্রান্সমিটারের সাহায্যে ছড়িয়ে দেওয়ার কারণেই তাকে গুম করা হয়। উল্লেখ্য জনাব নুরুল হক ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলামের আত্মীয় এবং তার বাড়ি ছিলো কুষ্টিয়ায়। 

তাছাড়া বিবিসি বাংলা, ভয়েস অব আমেরিকা, দি ডেইলি টেলিগ্রাফ লন্ডন পত্রিকা, দি গার্ডিয়ান, নিউইয়র্ক টাইমস সহ বিশ্বের প্রায় পঁচিশ টি গণমাধ্যম ফলাও করে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার খবর প্রকাশ করে ২৬ এবং ২৭ মার্চে। উপরের ঘটনাপ্রবাহ থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, বঙ্গবন্ধু ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। মেজর হাফিজ দাবি করেছেন জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক। অথচ ইতিহাসে এর বাস্তবতা খুঁজে পাওয়া যায় না। মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাটস্থ স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র থেকে ২৭ শে মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেছেন মাত্র। 

ঘোষণাটি ছিল এরুপ " আই মেজর জিয়া অন বিহাফ অব আওয়ার গ্রেট ন্যাশনাল লিডার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হেয়ারবাই ডিক্লেয়ার্ড দি ইন্ডিপেন্ডেন্স অব বাংলাদেশ, জয় বাংলা।"

একই বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ শে মার্চ আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান, বেতার কেন্দ্রের প্রধান সংগঠক বেলাল মোহাম্মদ, আবুল কাশেম সন্দ্বীপ, বেতার ঘোষক আব্দুল্লাহ্ আল ফারুক, মাহমুদ হোসেন, সুলতানুল আলম সহ আটজন স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র পাঠ করেন। অর্থাৎ মেজর জিয়াউর রহমানের আগে আরও ৮ জন বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। মেজর হাফিজের দাবি সঠিক হলে তারা প্রত্যেকেই হবেন স্বাধীনতার ঘোষক! সেক্ষেত্রে জিয়াউর হবেন স্বাধীনতার নবম ঘোষক!! 

জিয়াউর রহমান ২৫ শে মার্চ ষোলশহর স্টেশন হেডকোয়ার্টারে ছিলেন। ২৫ শে মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি সেনারা নতুনপাড়া সেনানিবাসের ঘুমন্ত বাঙালি সৈন্যদের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে প্রায় ২৫০ বাঙালি সৈন্যকে হত্যা করে। শতশত বাঙালি সৈন্য আহত এবং আটকে পড়েন। জিয়াউর রহমান এই খবর পেয়ে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর সদস্যদের প্রতিরোধ কিংবা আটকে পড়া আহত বাঙালি সৈন্যদের উদ্ধারে এগিয়ে না গিয়ে রাত তিনটার দিকে ষোলশহর স্টেশন হেডকোয়ার্টার থেকে তার সঙ্গে থাকা প্রায় আড়াইশো সৈন্য, গোলাবারুদ এবং যানবাহন নিয়ে বোয়ালখালী পালিয়ে যান। পরে সেখান থেকে পটিয়া চলে যান। চট্টগ্রামের বিখ্যাত গেরিলা যোদ্ধা সিরু বাঙালি'র লেখা "যুদ্ধের ময়দান থেকে মেজর জিয়ার পলায়ণ" গ্রন্থে এ ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। 

২৭ শে মার্চ বেতার কেন্দ্রের সংগঠক বেলাল মোহাম্মদ এবং আবুল কাশেম সন্দ্বীপ সহ কয়েকজন পটিয়ায় গিয়ে তাকে বেতার কেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেওয়ার অনুরোধ করলে তিনি ২৭ শে মার্চ ঠিক সন্ধ্যায় তাদের সাথে তার অধীনে থাকা ফোর্স সহ আসেন এবং বেলাল মোহাম্মদের অনুরোধে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। অবশ্য পরদিন ২৮ শে মার্চ তিনি হঠাৎ করেই বেতার ঘোষণায় নিজেকে সরকার প্রধান হিসেবে দাবি করেন। ঘোষণাটি ছিল- "আই হেয়ারবাই ডিক্লেয়ার্ড মাইসেল্ফ প্রভিশনাল হেড অব দ্যা গভর্নমেন্ট  অব বাংলাদেশ।""

এই ঘোষণা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। বেতার কেন্দ্রের সংগঠক বেলাল মোহাম্মদ, আবুল কাশেম সন্দ্বীপ সহ বেতারের সবাই অসন্তোষ প্রকাশ করেন। আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হান্নান তাকে টেলিফোন করেন। শমসের মোবিন চৌধুরী টেলিফোন কলটি রিসিভ করলে জিয়ার ঘোষণায় বঙ্গবন্ধুর নাম না থাকায় হান্নান সাহেব বিস্ময় প্রকাশ করেন। শমসের মোবিন ও তার সাথে একমত পোষণ করেন। পরে রাতে জনাব মোবিন জিয়াউর রহমান কে এই বিষয়ে জানালে তিনি বলেন অবশ্যই বঙ্গবন্ধুর নাম ঘোষণায় থাকতে হবে। পরদিন ২৯ শে মার্চ জিয়াউর রহমান তার ঘোষণাপত্র সংশোধন করে বঙ্গবন্ধুর নামে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। 

সবচেয়ে মজার ঘটনা ঘটে ৩০ শে মার্চ। এদিন দুপুর আড়াইটার দিকে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর স্যাবর জেট থেকে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্রের উপর গোলাবারুদ বর্ষণ করলে ভীতসন্ত্রস্ত মেজর জিয়া এক ঘন্টার নোটিশে ভারতে যাওয়ার কথা বলে রামগড়ে পালিয়ে যান! যার বেতার কেন্দ্রের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা তিনি তা না করে যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে গেলেন! অথচ তাকেই আজকে স্বাধীনতার মহানায়ক বানানোর কতই না অপচেষ্টা! 

বাংলাদেশের দীর্ঘ ২৩ বছরের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধ এতো ঠুনকো বিষয় নয় যে একজন সামান্য মেজর স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন আর দেশ স্বাধীন হয়ে গেল। স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের বিশালতা সমূদ্রসম এবং বঙ্গবন্ধু হলেন এককভাবে সেই সমূদ্র। জিয়াউর রহমানরা সেই সমূদ্রের কয়েকটি নুড়িপাথর মাত্র, তাকে বড় বানাতে চাইলে বড়জোর কয়েক বালতি পানি পর্যন্ত বিবেচনা করা যায়। এর বেশি নয়। 

যারা জিয়াউর রহমান কে স্বাধীনতার ঘোষক বানাতে চান কিংবা ঘোষক হিসেবে মনে করেন তাদেরকে মস্তিষ্কহীন মনে না করার কোনো কারন দেখি না। মেজর জিয়াউর রহমান  পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ এবং প্রাদেশিক পরিষদের  নির্বাচিত ৪৬৭ জনেরও একজন ছিলেন না। তাদের নেতা তো দূরের কথা। জাতীয় পরিষদের নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু এবং প্রাদেশিক পরিষদের নেতা নির্বাচিত হয়েছিলেন ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী। সুতরাং স্বাধীনতা ঘোষণার এখতিয়ার একমাত্র এই দু'জনের ছিল। এমনকি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক জনাব তাজউদ্দীন আহমদ সাহেবেরও ছিলো না, সরকারের কর্মচারী মেজর জিয়াউর রহমান তো দূরের কথা!

বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু সমার্থক শব্দ। বাংলাদেশ মানেই বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ। বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি যদি ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটারের একটি স্বাধীন, সার্বভৌম এবং স্বীকৃত ভূখন্ড, ১৭ কোটি মানুষ এবং একটি সরকারের সমষ্টি হয় তাহলে বঙ্গবন্ধু একাই হচ্ছেন সেই ভূখণ্ড, ১৭ কোটি মানুষ এবং সরকার। তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাহেবরা হচ্ছেন সেই ভূখণ্ড, জনতা এবং সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। জিয়াউর রহমান হলেন একজন ব্যক্তি যিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের কোনো অংশ নন। দৈবক্রমে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে ভাগ্যক্রমে বীরউত্তম খেতাব পেয়েছেন। এমন বীরউত্তম আছেন আরও ৬৮ জন। জিয়াউর রহমানের তুলনা হতে পারে সেই ৬৮ জনের সাথে। জিয়াউর রহমান এগারো সেক্টর কমান্ডারের একজন। সুতরাং তার তুলনা হতে পারে ঐ এগারো জনের সাথে। সেক্ষেত্রে ও অবদানের বিবেচনায় তার অবস্থান হবে নিচের দিকেই।

মোঃ নজরুল ইসলাম, কলামিস্ট এবং তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, ১৬ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, খুলনা মহানগর।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

ভারতীয় পণ্য বর্জন: রাজনীতির কানাগলিতে প্রবেশ বিএনপির


Thumbnail

যার গন্তব্য স্থান কোথায় সেটা ঠিক নাই, তিনি রাস্তায় গাড়ি বা রিক্সা যেভাবেই যান না কেন সে শুধু উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়াবেন। কারণ তার তো গন্তব্য ঠিক নাই। সে গুলশান যাবে, না নিউ মার্কেট যাবে কোথায় যাবে জানে না। বিএনপির অবস্থা এখন ঠিক তাই। তারা জানেই না তাদের আন্দোলনের গন্তব্য কোথায়। জানে না বলেই তারা একের পর এক ভুল করে রাজনীতির কানাগলিতে ঢুকে যাচ্ছে। এর একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ হলো হঠাৎ করে তারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা বুঝতে হবে যে, ভারতীয় পণ্য বর্জন সম্ভব কিনা? এখানে একটা কথা উল্লেখ্য করতে চাই যে, এদেশের জনগণ কার কথায় বিশ্বাস করেন? জনগণ বিশ্বাস করেন একমাত্র দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার কথা। কারণ তিনি যেটা বলেন সেটা করেন। তিনি যদি কোন প্রশ্নবোধক ডাকও দেন তাহলেও বহু লোক সেটাকে গ্রহণ করবে। কারণ তার প্রতি তাদের বিশ্বাস আছে। আর যে দলের নেতারা প্রায় সবাই হয় সাজাপ্রাপ্ত অথবা জামিনে আছে তাদের কথায় কোন লোক কানে দিবে না।

দ্বিতীয়ত হচ্ছে যারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের কথা বলছেন তারা তো ভোরে উঠেই আগে ভারতীয় টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করেন। দৈনন্দিন জীবনে যা ব্যবহার করি সবই তো ভারতীয় পণ্য। আমাদের বাজারে কোন জিনিস কিনতে গেলে তো ভারতীয় পণ্যটিই বেশি খুঁজি। তাহলে এখন কি আপনারা পেস্ট দিয়ে ব্রাশ না করে কয়লা ব্যবহার করতে চান? সেটা আপনারা করতে পারেন। কয়লার আজকাল দামও অনেক। আবার ঝামেলা হলো সহজে যাওয়া যায় না। সুতরাং সেটাও আপনাদের জন্য অসুবিধা।

কথায় আছে পাগলে কি না বলে ছাগলে কিনা খায়। সে ধরনের একটা রাজনৈতিক কর্মসূচি আপনারা দিয়ে দিলেন কোন কিছু না ভেবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এর মধ্য দিয়ে আপনারা আরও রাজনৈতিক গহ্বরে ঢুকে গেলেন। এখন ভাবে ঢুকছেন সেখান থেকে আর কোন দিন বের হতে পারবেন কিনা সেটা একটা প্রশ্ন।

আমরা এখন বিশ্বায়নের যুগে বাস করি। এখন বিশ্বের কোন দেশেরই নিজস্ব পণ্য বলে কিছু নেই। আমাদের সবাইকে সবার ওপর নির্ভর করতে হয়। সেখানে আপনারা ভারতকে বর্জন করবেন কি করে। ভারত তো সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশি দেশ। তার আগে আমাদের মনে রাখতে হবে ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা যুদ্ধ করেছি। সে সময় আমাদের ৩০ লাখ সহযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন। এর সাথে আরও ১০ থেকে ১৫ হাজজার ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশের জন্য বাংলাদেশের মাটিতে তাদের রক্ত ঝড়িয়েছেন। আামরা না হয় আমাদের দেশের জন্য রক্ত দিয়েছি। কিন্তু ভারতীয়রা তো জীবন দিয়েছে প্রতিবেশির জন্য। সুতরাং ভারতের সাথে আমাদের কন্ধনটা হলো রক্তের। রক্ত দিয়ে ভারতের জনগণের সাথে বাংলাদেশের জনগণের বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্ব আপনি পণ্য বর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ করবেন কি করে? বাসায় আপনার বউ থেকে শুরু করে বাসার কাজের মেয়ে সবাই ভারতের শাড়ি ব্যবহার করেন। তাহলে আগে তাকে বলবেন যে, আপনারা ভারতীয় পণ্য বর্জন করুন।

রিজভী সাহেব বঙ্গবাজার থেকে একটি চাদর কিনে এনে আগুনে পুড়িয়ে দিয়ে একটা নাটক করেছেন মাত্র। বঙ্গবাজারে আরও অনেক কিছু পাওয়া যায় যেগুলো ভারতের নামে চলে। এটা আমরা জানি। রমজান মাসে ইফতারে আপনি পিয়াজু রাখছেন। এটা বাঙালিদের ইফতারের একটা ঐতিহ্য বলতে পারেন। এটা আমরা খাবই। কিন্তু পেঁয়াজ তো আসে ভারত থেকে। তাহলে এখন তো আপনাকে ইফতারে পিয়াজুও বাদ দিতে হবে। এভাবে আপনি কত বাদ দিবেন। অনেক সময় ভারত থেকে ঝড় আসে। সে সময় তাহলে বাতাসও আপনি নিবেন না। এটা বর্জন করবেন। এটা কি সম্ভব? যদি সম্ভবই না হয় তাহলে পাগলের প্রলাপ বলে কি আর আন্দোলন হয়। পাগল তো তার নিজের ভালোটা বুঝে। আপনাদের ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান দিন শেষে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকেই লাভবান করবে। কারণ আপনাদের আন্দোলনের কোন গন্তব্যই নেই। কোন রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আন্দোলন করলে জনগণের কাছে যেতে পারবেন সেটাও আপনারা বুঝেন না। আপনারা পড়ে আছেন ভারতরে পণ্য বর্জনের ডাক নিয়ে। ফলে জনগণের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু এদিকে চাপা পড়ে যাবে। আর সরকারও মহা আরাশ আয়েশে চলবে। আমি জানি না, কোন উৎস থেকে টাকা পয়সা পেয়ে আপনারা নতুন করে এই স্লোগান শুরু করেছেন। কিন্তু আপনাদের এই ডাকে বেনিফিশিয়ারি আওয়ামী লীগই। কারণ আপনারা এবার বিএনপিকে দলগতভাবে কবরে নামানোর জন্য প্রচেষ্টায় নেমেছেন।


ভারতীয় পণ্য   রাজনীতি   বিএনপি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

২৫ মার্চের ভয়ালরাত্রির গণহত্যা

প্রকাশ: ১২:০০ পিএম, ২৫ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

একাত্তরের ২৫ মার্চের ভয়ালরাত্রি মর্মদাহিক চেতনা প্রবাহের কালখণ্ড। ২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালোরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। এর আগে ২৫ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের দাবি ওঠে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছ থেকে।

এ কথা সকলের কাছে পরিষ্কার যে, নয়মাসে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হওয়া নিয়ে কোনো বিতর্ক চলতে পারে না। কারণ রবার্ট পেইন তার Massacre, The Tragedy of Bangladesh গ্রন্থে ইয়াহিয়া খানের উদ্ধৃতি দিয়েছেন এভাবে- Kill three million of them and the rest will eat out of our hands. পাকিস্তানি শাসকদের এই সিদ্ধান্তের কারণে দৈনিক গড়ে ছয় হাজারের বেশি মানুষ খুন হয় সারা বাংলাদেশে। এজন্য ১৯৭১ সালে মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি ভারতের শরণার্থী শিবিরগুলো পরিদর্শন করে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে সরাসরি গণহত্যা চালানোর অভিযোগ আনেন। ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’-এ বাংলাদেশের হত্যাযজ্ঞকে বিশ শতকের ৫টি ভয়ঙ্কর গণহত্যার অন্যতম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০০২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নিরাপত্তা বিষয়ক আর্কাইভ’ তাদের অবমুক্তকৃত দলিল প্রকাশ করে। সেখানে বাংলাদেশের নারকীয় হত্যালীলাকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন কূটনৈতিকরা সেসময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ব্যাপক গণহত্যার বর্ণনা দিয়ে ওয়াশিংটনে বার্তা প্রেরণ করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকরা একাধিক লেখায় এবং বিশ্বখ্যাত পত্রিকা টাইম, নিউইয়র্ক টাইমস প্রভৃতির সম্পাদকীয়তে পাকিস্তানিদের গণহত্যা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়। উপরন্তু ১৯৭২ সালে পাকিস্তানে গঠিত ‘হামাদুর রহমান কমিশন’ তাদের পরাজয় অনুসন্ধান করতে গিয়ে প্রমাণ পায় বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাদের ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ ও নারী নির্যাতনে ঘটনার। আর এই ভয়ঙ্কর গণহত্যায় কেঁপে উঠেছিল বিশ্ববিবেক। জর্জ হ্যারিসন ও পণ্ডিত রবিশংকর ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ আয়োজন করেন। দার্শনিক আঁদ্রে মালরোর নেতৃত্বে গঠিত হয় ‘আন্তর্জাতিক ব্রিগেড’। প্যারিস ও লন্ডনে সরব হয়ে ওঠেন মানবতাবাদী নেতৃবৃন্দ। বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের দ্বারা সংঘটিত গণহত্যা ব্যাপক এবং নিষ্ঠুরতার দলিল হিসেবে আজও বিশ্বকে নাড়া দেয়।

আসলে বিংশ শতাব্দীতেই ঘটেছে কোটি মানুষের প্রাণসংহার। বিশ্বযুদ্ধ ও জাতিনিধনের সেই পরিকল্পিত ও ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ ‘জেনোসাইড’ অভিধা পেয়েছে। হিটলারের কনসেনট্রেশন ক্যাম্প থেকে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিদের বন্দিশিবির সেই জেনোসাইডের নির্মম ইতিহাসের কথা বলে। অ্যান্থনী মাসকারেনহাস তাঁর ‘দ্যা রেপ অব বাংলাদেশ’ গ্রন্থের ‘গণহত্যা’ অধ্যায়ে লিখেছেন ‘সারা প্রদেশ জুড়ে হত্যাকাণ্ডের সুব্যবস্থার নমুনার সঙ্গে জেনোসাইড বা গণহত্যা শব্দটির আভিধানিক সংজ্ঞার হুবহু মিল রয়েছে।’ তিনি প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা এবং পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তার মুখ থেকে জেনেছিলেন গণহত্যার লক্ষবস্তু ছিল- ক) বাঙালি সৈনিক, পুলিশ, আনসার প্রভৃতি খ) হিন্দু সম্প্রদায় গ) আওয়ামী লীগের লোক ঘ) কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ঙ) অধ্যাপক ও শিক্ষক যাঁরা বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। তবে তিনি এটাও লক্ষ করেছিলেন যে সেনাবাহিনীর নৃশংসতা ছিল নির্বিচার। নিরপরাধ, সাধারণ মানুষকেও শত্রু হিসেবে গণ্য করেছিল তারা। তাছাড়া তাদের গণহত্যা ছিল ‘শোধন প্রক্রিয়া’ যাকে শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান বলে মনে করত। সেই সঙ্গে এই বর্বরোচিত উপায়ে প্রদেশটিকে উপনিবেশে পরিণত করাও ছিল এর অন্যতম উদ্দেশ্য। পাকিস্তানিদের ভাষ্য ছিল- ‘বিচ্ছিন্নতার হুমকি থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে পূর্ব পাকিস্তানকে চিরদিনের জন্য পবিত্র করতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সেজন্য যদি বিশ লাখ লোককে হত্যা করতে হয় এবং প্রদেশটিকে তিরিশ বছরের জন্য উপনিবেশ হিসেবে শাসন করতে হয়, তবুও।’ শাসকদের এ ধরনের মানসিকতার সঙ্গে পশ্চিমাংশের মানুষের ঐক্য ছিল। আর এজন্যই ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ বলেছিলেন, ‘পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণ হলেন গণহত্যার নীরব দর্শক।’

বাংলাদেশে ১৯৭১-এ পাকিস্তানি শাসক ও তাদের দোসর আলবদর, আলশামস ও রাজাকার বাহিনী পরিকল্পিতভাবে হত্যাযজ্ঞ, ব্যাপক ধ্বংসলীলা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, হিন্দু জনগোষ্ঠী নিধন ও বিতাড়ন, রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের নির্যাতন, মুক্তিযোদ্ধাদের নির্বিচারে হত্যা করেছিল। বাঙালি জাতির প্রতি বিদ্বেষ ও ঘৃণা থেকে তাদের ২৫ মার্চের ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু হয়েছিল। সুপরিকল্পিত গণহত্যা ও জাতিগত নিধনযজ্ঞ জেনোসাইড হিসেবে গণ্য হয়েছে। হিটলারের নাজি বাহিনী ইহুদি ও রাশিয়ার যুদ্ধবন্দিদের সঙ্গে যে বর্বরতা দেখিয়েছিল ঠিক একইরকম আচরণ ছিল পাকিস্তানিদের। নিষ্ঠুরতা, পাশবিকতা এবং সাম্প্রদায়িক দৃষ্টি ছিল ঠিক ইহুদিদের প্রতি নাজিদের মতো। নাজিরা ইহুদিদের নিচুজাতের মানুষ হিসেবে বিবেচনা করত এবং তাদের নিধনযজ্ঞের মধ্য দিয়ে ইউরোপের সমস্যা সমাধান করতে চেয়েছিল। অনুরূপভাবে পাকিস্তানি সেনা অফিসারদের মনোভাব ছিল Bengalees have been cleansed and selected properly for at least one generation. নাজিরা প্রথমে তরুণ, যুবক এবং সমর্থ পুরুষদের হত্যা দিয়ে নিধনযজ্ঞ শুরু করলেও শিশু, বৃদ্ধ, নারীদের নির্বিচারে নিধন করতে থাকে ১৯৪১ সালে বলকান অঞ্চল থেকে। যুদ্ধবন্দি হত্যাসহ অন্যান্য নিষ্ঠুরতায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছায় তারা। তাদের অত্যাচারের সঙ্গে পাকিস্তানের সেনাদের আরো মিল রয়েছে হিন্দু নিধনের ঘটনায়। একাত্তরে হিন্দুদের প্রতি শাসকদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সুচিন্তিত ও নির্মম।

কারণ তারা ধর্মভিত্তিক হত্যাকাণ্ডকে বৈধ করে তুলেছিল। তারা মনে করত পাকিস্তানের জন্ম হয়েছে এই উপমহাদেশের হিন্দু আধিপত্যের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র আবাসভূমির জন্য মুসলমানদের বিদ্রোহের কারণে। এই হিন্দু বিদ্বেষ মনোভাব বছরের পর বছর লালিত হয়ে এসেছে। এজন্য জেনোসাইডে হিন্দু নিশ্চিহ্ন অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। জনৈক গবেষকের ভাষায়- ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমণের পর গোটা দেশে কেবল একটি উদীয়মান ও অস্তগামী রাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধ হয়নি একাধিক জাতিগত দ্বন্দ্বও শুরু হয়ে যায়। এতে উভয়পক্ষের নির্যাতন শুরু হয় তবে এর সূত্রপাত ঘটে ২৫শে মার্চের আক্রমণের পর।  পাকিস্তানি সরকারের পরিকল্পনার শিকার হয় দুই জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি। এর প্রথম শিকার হয় হিন্দু সম্প্রদায়, যাদের কেবল নির্যাতন করা হয়নি বরং তাকে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও পারিবারিক ভিত্তি ক্ষতিগ্রস্ত এমনকি ধ্বংসও করা হয়।  হিন্দুরা তাদের হৃত অবস্থান কোনদিন উদ্ধার করতে পারেনি বাংলাদেশেও। সম্প্রদায়গতভাবে তারাই ১৯৭১ সালের  সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী।’ এমনকি ধর্ষণকেও তারা বৈধ বলে মনে করত। চীনের নানকিং-এ জাপানি সেনা কর্তৃক ধর্ষণ, রাশিয়াতে নাৎসিদের বলাৎকার এবং আর্মেনিয়া ও বসনিয়ার নারী নির্যাতনের সাযুজ্য রয়েছে বাঙালি নারী ধর্ষণের ঘটনায়। পাকিস্তানিদের বাঙালি নারী ধর্ষণের লক্ষ ছিল পরিবার, সম্প্রদায় ও জাতিকে মানসিকভাবে আহত ও পঙ্গু করা। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে গেরিলা যুদ্ধে পরাজিত ও বাঙালি জাতিকে বশীভূত করতে না পারার যাতনা তারা মিটাত নারী ধর্ষণ করে। এটা ছিল ভয়ঙ্কর মনোবিকারজাত। সার্বরা মুসলিম নারীদের ধর্ষণ করেছিল ইথনিক ক্লিনজিং-এর উপায় হিসেবে। দেশ-বিদেশী গবেষক ও সাংবাদিকদের রচনায় যুদ্ধকালীন এসব নির্মম বাস্তবতাই উন্মোচিত হয়েছে।     

বিশ শতকের জেনোসাইডের তালিকায় পাকিস্তান একটি অপরাধী রাষ্ট্রের নাম। কারণ লাখো বাঙালির প্রাণের বিনিময়ে তারা সেদিন তাদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে চেয়েছিল। অথচ বাঙালি জাতিগোষ্ঠী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগে পশ্চিম পাকিস্তানের ওপর কোনোরূপ অন্যায় পীড়ন করেনি। তবু বাঙালির প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের বর্বর ও নৃশংস আচরণ বিশ্বের কাছে তাদের ঘৃণ্য মানসিকতাকে প্রকাশ করে দিয়েছিল। পাকিস্তানিদের আক্রমণ ও হত্যাকাণ্ড ছিল ফ্যাসিস্টদের মতো। তাই তারা পোষণ করেছিল জাতি বা ধর্ম সম্প্রদায় বিদ্বেষ; হত্যা করেছিল নিরীহ নিরপরাধ জনসাধারণকে। সেই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড আমাদের ২৫ মার্চের দাবিকে আরো বেশি তাৎপর্যবহ করে তুলেছে। ২৫ মার্চ ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হবে পৃথিবীর মানব জনগোষ্ঠীকে নির্মম নিধনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য উচ্চকণ্ঠ এবং হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের একমাত্র ভরসার দিন। আশা করা যায় এই দিবসের চেতনা গণহত্যার বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করবে।


২৫ মার্চ   গণহত্যা দিবস  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনার নির্দেশনায় বিএমআরসি আজ গবেষণায় পথিকৃৎ


Thumbnail

সাম্প্রতি ‘স্বাধীনতা সুফল পেতে চাই চিকিৎসা বিজ্ঞান গবেষণা জাতির পিতার হাতে সূচনা, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা দিলেন দিক নির্দেশনা’ শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিপ্রেক্ষিতের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ বোরহান কবীর। বৈঠকে আলোচক হিসেবে অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ যে আলোচনা করেছেন তার চুম্বক অংশ প্রকাশ করা হলো।

বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করেছিলেন যে, দেশের উন্নয়নের জন্য চিকিৎসা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি সবচেয়ে জরুরি। চিকিৎসার যদি উন্নতি না হয়, চিকিৎসা ব্যবস্থার যদি উন্নতি না হয়, মানুষ যদি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী না হন তাহলে দেশ গড়া সম্ভব নয়। সেজন্য বঙ্গবন্ধু একটা সুন্দর নীতিমালা পরিকল্পনা গড়ে তোলেন। ওই সময়ই সেটা ছিল আধুনিক যুগোপযোগী এবং বিজ্ঞানসম্মত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল বঙ্গবন্ধু যে নীতিমালা তখন চালু করে গিয়েছেন সেই পদ্ধতিতে আজকের দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা একে এক করে বাস্তবায়ন করে চলেছেন। যার মূল ভিত্তি বঙ্গবন্ধু স্থাপন করেছেন।

বঙ্গবন্ধুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যে শুধুমাত্র রাজধানী কেন্দ্রিক ছিল এমনটা না, এটা ছিল জেলা বা ওই সময় মহকুমা, থানা, ইউনিয়ন, এমনকি গ্রাম পর্যায়ে। যেটা আজকের কমিউনিটি ক্লিনিক এবং এটিই ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন। ওই সময় বঙ্গবন্ধু কমিউনিটি ক্লিনিক বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি। কিন্তু আজ তারই উত্তরসূরি তারই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরেই এই কমিউনিটি ক্লিনিক পূর্ণতা পেয়েছে। যা সারা পৃথিবীর জন্য একটা রোল মডেল। জাতিসংঘ এটাকে ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ স্বীকৃতি দিয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে জাতিসংঘে কোন ব্যক্তির নামে এরকম রেজ্যুলেশন নাই। 

স্বাধীনতার পর যে স্বাস্থ্য তা সম্পূর্ণ একটা নড়বড়ে ও ভঙ্গুর ছিল। বঙ্গবন্ধুই স্বাধীনতার পরপর ডাক্তারদের প্রথম শ্রেণির মযার্দা দেন। এমবিবিএস করার পর উচ্চশিক্ষা ছিলো না, গবেষণারও কোন সুযোগ ছিলো না। বঙ্গবন্ধু তখনই আইপিজিএমআর প্রতিষ্ঠা করেন। শেখ হাসিনার হাত ধরে আজ তা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। অন্যতম বিদ্যাপীঠ হিসেবে সুপরিচিত। বিশ্বেও এর সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে। 

পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বিএমআসি ছিল নখহীন, দন্তহীন ঘুমন্ত একটি প্রতিষ্ঠান। শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিলে অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর হাতে তিনি দায়িত্ব দেন। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনায় বিএমআরসি আজ গবেষণায় পথিকৃৎ। তবে আমাদের আত্মতৃপ্তির সুযোগ নাই। কিছুদিন আগেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডাক্তারদের গবেষণার কাজের মনোনিবেশ করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি নিজেই খবু আগ্রহী। সবক্ষেত্রে গবেষণা হচ্ছে শুধু ডাক্তাররাই মনে হয় এক্ষেত্রে একটু দুর্বল। গবেষণা আমরা এখনও পিছিয়ে। এটা আমাদের আরও এগিয়ে নিতে হবে। এর জন্য যা যা দরকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তা করতে প্রস্তুত আছেন। এখন আমাদের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। 


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

এভিডেন্স বেসড ইনফরমেশন ছাড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন করা কঠিন


Thumbnail

সাম্প্রতি ‘স্বাধীনতা সুফল পেতে চাই চিকিৎসা বিজ্ঞান গবেষণা জাতির পিতার হাতে সূচনা, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা দিলেন দিক নির্দেশনা’ শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিপ্রেক্ষিতের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ বোরহান কবীর। বৈঠকে আলোচক হিসেবে অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন যে আলোচনা করেছেন তার চুম্বক অংশ প্রকাশ করা হলো।

স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের এই নির্দেশনা দিয়ে বলেছিলেন যে, একটি রাষ্ট্রকে যদি অর্থনৈতিক ভাবে উন্নত করতে হয়, একটি রাষ্ট্রকে যদি সঠিকভাবে মেরুদণ্ডে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় তাহলে ওই রাষ্ট্রের জনগণের স্বাস্থ্যকে সুস্থ রাখতে হবে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে উনি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার একটি সূচনা করেছিলেন। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যাতে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যায় তার একটি পরিকল্পনা করেছিলেন। তারই বহিপ্রকাশ বাংলাদেশের সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, জনগণের যে মূল কয়েকটি বিষয় তার ভিতরে স্বাস্থ্য একটি মূল বিষয়। বঙ্গবন্ধুর এই দর্শনকে সামনে রেখে আমাদের দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা তার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরও উন্নতির দিয়ে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সার্বক্ষণিক আমাদেরকে দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য আমাদের গবেষণালদ্ধ এভিডেন্স বেসড ইনফরমেশন ছাড়া স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়ন করা কঠিন। আমি যদি না জানি আমাদের চ্যালেঞ্জ কোথায়, অপরচুনিটি কোথায় তাহলে আমরা কোনোভাবেই স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে পারব না। এই উন্নয়নের জন্য দরকার গবেষণা। এই গবেষণা আমরা তিনটি ভাগে ভাগ করি। একটি মৌলিক গবেষণা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য এভিডেন্স বেসড ইনফরমেশন কালেকশন এর জন্য গবেষণা, আরেকটি পাবলিক হেলথ গবেষণা। এই তিনটি গবেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

স্বাস্থ্য ব্যবস্থা একটি দেশের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য যে কতটুকু প্রয়োজন সেই প্রয়োজনটুকু বিএনপি সরকার কখনও উপলব্ধি করেনি, উপলব্ধি করেনি বলেই কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো হয়েছিল একটি জুয়া খেলার আড্ডার জায়গা। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে, আজকে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা আমাদের এই দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়া মাত্র কমিউনিটি ক্লিনিককে উজ্জীবিত করেছে, কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমকে উজ্জীবিত করেছে। আমাদের এখন দরকার গবেষণা। তাহলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মেরুদণ্ড হবে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এক্ষেত্রে বিএমআরসির শক্ত ভূমিকা থাকা উচিত। আমরা যদি গবেষণালব্ধ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতে না পারি তাহলে উন্নয়ন করতে পারব না। আমাদের বর্তমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পরিবর্তন দরকার কিন্তু পরিবর্তনটা কোথায় দরকার, কেন দরকার, কীভাবে দরকার এই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের একান্ত গবেষণা করা দরকার। আমি বিশ্বাস করি বর্তমান সরকার দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সেরকম গবেষণার কাজ বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের কার্যক্রমও আর বৃদ্ধি পাবে, আরও সুদৃঢ় হবে।
 


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন