ইনসাইডার এক্সক্লুসিভ

প্রচারণার অভাব ও প্রতারণা, মুখ থুবড়ে পড়েছে প্রাণী বীমা

প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ৩০ অক্টোবর, ২০২২


Thumbnail

জ্যোতিষ চন্দ্র দাস। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর থানার ফান্দাউক গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় একজন মাছ বিক্রেতা। মাছ বিক্রির পাশাপাশি গরুর প্রতি ভালোবাসা থেকেই নিজের বাড়িতে গাভী পালন করতেন তিনি। দুধ বিক্রি করে ভালো আয়ও আসত তার। হঠাৎ একদিন অসুস্থ হয়ে পড়ে তার গাভী। পশু ডাক্তার আসতে আসতে নিস্তেজ হয়ে পড়ে গরুর শরীর। কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যায় তার গরুটি। ঘটনার বর্ণনা দিতে দিতে কণ্ঠ ভারী হয়ে আসে জ্যোতিষ চন্দ্র দাসের। এমন ঘটনার শিকার তিনি একা নন। সাপের কামড়ে ২০২০ সালে একই গ্রামের খামারি শিবা (২৫) এর গরু মারা যায়। প্রসব করতে গিয়ে মারা যায় আমেনা বেগমের ২টি গরু। অসুস্থ হয়ে, আঘাত পেয়ে, চুরি হয়ে, প্রসবকালীন কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগে গবাদিপশু মারা গিয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এমন হাজারো খামারি ছড়িয়ে আছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

একটা গরু মারা গেছে বিশ-ত্রিশ হাজার টাকা যায়। আমাদের জন্য বিশ-ত্রিশ হাজার টাকা অনেককিছু।

— শিবা,
ক্ষুদ্র খামারি



দেশের প্রান্তিক এলাকা গুলো ঘুরে দেখলে, প্রায় প্রত্যেক বাড়িতেই গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, হাঁস-মুরগি এই গবাদিপশু গুলো দেখতে পাওয়া যায়। দেশের কৃষকদের একটি বৃহৎগোষ্ঠী গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি গবাদি পশু ব্যক্তিপর্যায়ে ও বাণিজ্যিকভাবে লালন-পালনের মাধ্যমে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। দেশের প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষের প্রত্যক্ষ এবং প্রায় ২০ শতাংশ মানুষের পরোক্ষ কর্মসংস্থানের উৎস এই প্রাণিসম্পদ খাত। গবাদি পশু লালন-পালন করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন অনেকেই। তবে প্রায়শই দেখা যায়, বিভিন্ন রোগ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে পশুমৃত্যু ঘটে, যার ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন খামারিরা। অনেকের পক্ষেই এই ক্ষতির ভার কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়ে ওঠে না। নিঃস্ব সর্বস্বান্ত হয়ে যান অনেকে। দেশের খামারিদের আর্থিক সুরক্ষা বা নিরাপত্তার জন্য প্রাণিসম্পদ খাতে প্রাণী বীমার বিশেষ কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় পিছিয়ে পড়ছেন অনেক খামারিরা। প্রাণী বীমা কি? কিভাবে এই বীমা করার মাধ্যমে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে ইত্যাদি বিষয়ে ধারণা নেই দেশের বেশিরভাগ খামারির। আর যারা এ বিষয়ে জানেন বীমা করার ক্ষেত্রে তাদের ভীষণ অনীহা এবং অনাস্থা। কিন্তু কেন? এই প্রশ্ন জাগাটা খুবই স্বাভাবিক।

প্রথমেই জেনে নেই প্রাণী বীমা কি? প্রাণী বীমা হচ্ছে এমন একটি বীমাপত্র যার মাধ্যমে বীমার মেয়াদকালীন সময়ে বীমাকৃত প্রাণী চুরি হলে, হারিয়ে গেলে, দুর্ঘটনা বা অসুস্থতায় মারা গেলে তার সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ দেবে বীমা প্রতিষ্ঠান। বীমা করা থাকলে দুর্ঘটনায় কোনো পশু মারা গেলেও খামারি বড় আর্থিক লোকসান থেকে রেহাই পাবে এবং সেক্ষেত্রে ঘুরে দাঁড়ানো তার জন্য অনেক সহজ হবে।

১৯৮১ সালে দেশে প্রথম প্রাণী বীমা চালু হয়। তবে বেশকিছু প্রতিবন্ধকতার কারণে সেটি সফলতার মুখ দেখেনি। এর মধ্যে অন্যতম ছিল পশু শনাক্তকরণে প্রযুক্তির অভাব। যার ফলে প্রায়ই বীমা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক খামারিরা আবার কখনো অসাধু খামারিকর্তৃক বীমা প্রতিষ্ঠান প্রতারণার শিকার হতো। বীমার আওতার বাইরে থাকা পশু মারা গেলেও সেটিকে বীমার পশু বলে আবার পশু বাজারে বিক্রি করে সেই পশুকে হারিয়ে যাওয়া বা চুরি হয়ে যাওয়া পশু বলেও বীমা প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ আদায় করত একদল অসাধু ব্যবসায়ী। আবার অনেক সময় বীমা করা পশু মারা গেলেও সঠিকভাবে শনাক্ত করতে না পারায় বীমার টাকা থেকে বঞ্চিত হতেন খামারিরা। ফলে বীমা নিয়ে মানুষের মনে একটি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়েছে। এছাড়াও ডিজিস ম্যাপ না থাকা, পশুর জীন সনাক্ত করে ডাটাবেজ তৈরি করতে না পারা ইত্যাদি কারণে উদ্যোগ নেয়া হলেও ওই সময় প্রাণী বীমা সফলতার মুখ দেখেনি।

কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রযুক্তিগত দিক থেকে বাংলাদেশ এখন অনেক এগিয়েছে। পশু শনাক্তের বিভিন্ন পদ্ধতি উদ্ভাবিত হয়েছে যার মাধ্যমে এখন নির্ভুল ভাবে পশু শনাক্ত সম্ভব। এর মধ্যে রয়েছে ফেস ডিটেকশন, ইয়ার ট্যাগিং, ট্যাটুয়িং, ইয়ার নচিং, মাজেল প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক চিপ এবং রেডিও কলার ইত্যাদি। ইতোমধ্যে ফিনিক্স ইনস্যুরেন্স কোম্পানি রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি শনাক্তকরণের মাধ্যমে এবং গ্রিন ডেল্টা ইনস্যুরেন্স কোম্পানি এনএফসি যুক্ত কলার ট্যাগের মাধ্যমে গবাদি পশু চিহ্নিত, গবাদি প্রাণীর সঠিক স্বাস্থ্য ও অবস্থান রক্ষণাবেক্ষণসহ প্রাণিসম্পদের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রাণী বীমা প্রকল্প চালু করে। কিন্তু তারপরও নানা কারণে পুরোপুরি সফল হয়নি প্রাণী বীমার খাতটি।

বীমা করে কি হবে? বীমা করা মানেই লস, শুধু শুধু টাকা দেয়া।

— আওলাদ মিয়া,
ক্ষুদ্র খামারি



এর মধ্যে অন্যতম হলো সঠিক বীমা এজেন্ট তৈরি করতে না পারা এবং বীমা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রতারণা কিংবা হয়রানির শিকার হওয়া। বীমা প্রতিষ্ঠান এবং বীমা গ্রহণকারীর মাঝে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে বীমা এজেন্ট। বীমা প্রতিষ্ঠান এবং বীমা গ্রহণকারীর স্বার্থ রক্ষা করা এবং তাদের জবাবদিহিতার জায়গায় আনার ক্ষেত্রেও বীমা এজেন্টের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বীমা কোম্পানিগুলো মূলত গ্রাহক সংগ্রহ ও তাদের কাছ থেকে প্রিমিয়াম আদায়ের কাজটিও এজেন্টদের মাধ্যমেই করে থাকে। এর বিনিময় এজেন্ট কমিশন পেয়ে থাকে যা ২০১৯ সালে সরকার ১৫% নির্ধারিত করে দেয়। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই নিয়ম মানা হয় না। বীমার সমস্ত পলিসি এবং শর্তসমুহ গ্রাহককে সঠিকভাবে বুঝিয়ে না বলা, নিয়মিত প্রিমিয়াম না দিলে যে ক্ষতি হতে পারে ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে গ্রাহকে পুরোপুরি অবগত না করেই কমিশনের লোভে বীমা করিয়ে ফেলেন যার ফলে পরবর্তীতে ভোগান্তিতে পরতে হয় গ্রাহকদের। অনেক সময় এজেন্ট গ্রাহকের প্রথম কিস্তি থেকেই তার কমিশনের পুরো টাকা নিয়ে ফেলেন যার ফলে পরবর্তী কিস্তিগুলো গ্রাহক ঠিক মতো দিচ্ছে কি-না সে ব্যাপারে তার আগ্রহ থাকে না। আবার যেহেতু প্রিমিয়ামের টাকা চলমান না রাখলে পলিসি বাতিল হয়ে যায় তাই কোন কোন কোম্পানিও সে সুযোগ নিয়ে যারা দ্বিতীয় বা পরবর্তীতে প্রিমিয়াম ঠিক মতো না দেয় তাদের পলিসি বাতিল করে অর্থ হাতিয়ে নিতো। এ ধরনের অস্বচ্ছতা এবং অনিয়মের কারণে পুরো বীমা ব্যবস্থার প্রতি মানুষের অনীহা এবং অনাস্থা চলে এসেছে। 

প্রাণী বীমা সফল না হবার পেছনে আরেকটি অন্যতম কারণ হলো খামারিদের বীমা না করার মানসিকতা। মানিকগঞ্জের ক্ষুদ্র খামারি আওলাদ মিয়া বলেন, ‘বীমা করে কি হবে? বীমা করা মানেই লস, শুধু শুধু টাকা দেয়া।‘ তার মত অনেকেই মনে করেন, বীমা করা মানে শুধু টাকাই দিয়ে যাওয়া। খামারিদের এমন ভুল ধারণার পেছনে মূল কারণ প্রান্তিক পর্যায়ে খামারিদের কাছে পৌঁছতে না পারা এবং প্রচারণার অভাব। বেশিরভাগ খামারি জানেনই না প্রাণী বীমা কি, কিভাবে বীমা করতে হয় এবং বীমা করার সুযোগ সুবিধাগুলো কি কি। 

প্রাণিসম্পদ খাতকে আরও এগিয়ে নিতে, খামারিদের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বীমার কোনো বিকল্প নেই। তবে এই খাতকে এগিয়ে নিতে হলে বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন। সরকার, প্রানিসম্পদ অধিদপ্তরসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের সরাসরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। বীমা নিয়ে কোনো খামারি যেন প্রতারণার শিকার না হয় তা যেমন নিশ্চিত করতে হবে, পাশাপাশি বীমা নিয়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে যেন প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিরাও প্রাণী বীমা সম্পর্কে সঠিক তথ্য এবং এর সুফল সম্পর্কে জানতে পারে। প্রশিক্ষণ দেয়ার মাধ্যমে বীমার এজেন্টদের আরও দক্ষ করে তুলতে হবে। এজেন্টরা যেন গ্রাহকদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন এবং তাদের সঠিক ও নির্ভুল তথ্য প্রদান করেন সে ব্যাপারে নজরদারিতা বাড়াতে হবে এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।



বাংলাদেশে যে সকল বীমা কোম্পানি আছে তারা সহজে লাভ এবং মানুষের ঝুঁকি যেখানে কম সেই জাতীয় বীমা করতে বেশি আগ্রহী।

— শ ম রেজাউল করিম,
মন্ত্রী, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়






একজন খামারি যেন খামার করার জন্য সহজে ঋণ পায়, সেজন্য ব্যাংকগুলোকে বিশেষ ফান্ড গঠন করতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন। দেশের বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে হাজার কোটি টাকা ঋণ নিতে দেখা যায়। এসব প্রতিষ্ঠানের ঋণ পরিশোধ করতে না পারার খবরও প্রায় সময় পাওয়া যায়। ফলে তারা ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়। যার ফলে দেশের ব্যাংকিং খাত এবং অর্থনীতি দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অথচ একজন কৃষক কিংবা খামারিকে ঋণ পেতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। ঋণ পেতে তাদের জামানতের প্রয়োজন হয়। এই খামারিরা যেন সহজ শর্তে ঋণ পান এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি একজন খামারি যেন বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিভিন্ন কারণে তার পশু মারা গেলে সেই ক্ষতি কাঠিয়ে ওঠতে পারে, সেজন্য প্রাণী বীমা নিশ্চিত করতে হবে। এতে করে খামারিদের জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ সহজ হয়ে উঠবে এবং ব্যাংক গুলোর দেয়া ঋণেরও নিশ্চয়তা থাকবে।

আমাদের দেশে এক লক্ষ টাকার একটি মোটরসাইকেল কিনলে সেটির জন্য বীমা বাধ্যতামূলক। বীমা করা না থাকলে ট্রাফিক পুলিশ মামলা করেন। একটি মোটরসাইকেল এক্সিডেন্ট করলে সেই মোটরসাইকেল পুরোপুরি ধ্বংস হয় না, তার একটি মূল্য থাকে এবং ক্ষয়ক্ষতির জন্য তিনি বীমা কোম্পানি থেকে ক্ষতিপূরণ পান। অথচ এক লক্ষ টাকা দামের গরুটি যখন মারা গেলে, তার কোনো মূল্য থাকে না। রোগ-বালাই, চুরি, বন্যা কিংবা অন্য কোনো দুর্যোগে যখন গরু মারা যায় তখন একজন খামারি সর্বস্বান্ত হয়ে যান। আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং আর ঘুরে দাড়াতে পারে না। কিন্তু তিনি যদি সরকার বা কোনো বীমা কোম্পানির পক্ষ থেকে মৃত গরুটির জন্য ক্ষতিপূরণ পায়, তাহলে তিনি আবার ঘুরে দাড়াতে পারবেন। ফলে প্রাণিসম্পদ খাত আরও এগিয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য যে নির্বাচনী ইশতেহার সেটি বাস্তবায়ন করা অনেক সহজ হবে।

প্রানিসম্পদ খাতে বীমার সম্ভাবনা সম্পর্কে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, আমাদের দেশে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া এ জাতীয় প্রাণী উৎপাদনে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু এ পরিবর্তনকে ধরে রাখতে হলে খামারিরা যা উৎপাদন করে তদের কিছু কিছু বিষয়ে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার। সে ক্ষেত্রে বীমার ব্যবস্থা করা এখন সময় উপযোগী।

তিনি আরও বলেন, বীমার ব্যবস্থা না থাকলে একটি প্রাণী খামারে বেসরকারি ব্যাংক ঋণ দেয়ার সময় হিসেব করেন যে, এটা কোথায় দিচ্ছি। আবার একজন খামারি একটা বড় খামারে বিভিন্ন ভাবে ঋণ এনে খামার তৈরি করেন। তার এই প্রাণীগুলো যদি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে মারা যায় কিংবা অন্য কোনো কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে তার বিকল্প কোনো ব্যবস্থা থাকে না। বাংলাদেশে যে সকল বীমা কোম্পানি আছে তারা সহজে লাভ এবং মানুষের ঝুঁকি যেখানে কম সেই জাতীয় বীমা করতে বেশি আগ্রহী। ঝুঁকি যেখানে আছে সেখানে বীমা করতে খুব বেশি তারা আগ্রহী না।

আমরা ইতোমধ্যে কিছু বিষয় চিন্তা ভাবনা করেছি। এ ব্যাপারে হয়তো রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হবে। কিন্তু আমার জায়গা থেকে আমি বলবো, এটা কোনো জটিল বিষয় না। প্রাণীর জন্য বীমা নিশ্চিত করা এটা আমাদের সকলের দায়িত্ব। এ প্রক্রিয়াটিকে খুব শীঘ্রই একটি পদ্ধতির মধ্যে নিয়ে আসতে পারবো বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

শুধু প্রানিসম্পদের উৎপাদন বৃদ্ধি না, এর গুণগত মান নিশ্চিত করা এবং দীর্ঘস্থায়ী ভাবে যাতে এটি চলমান থাকতে পারে, সেটা করতে গেলে প্রানিসম্পদের সঙ্গে জড়িত সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থে প্রাণীদের বীমার আওতায় আনার কোনো বিকল্প নেই।


মন্তব্য করুন


ইনসাইডার এক্সক্লুসিভ

ফখরুলের রাজনীতি ছাড়ার বার্তা

প্রকাশ: ০২:০০ পিএম, ০৮ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রাজনীতি ছেড়ে দিচ্ছেন—এমন বার্তা তিনি দিয়েছেন দলের একাধিক শীর্ষ নেতাকে। লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়াকেও তার অভিপ্রায়ের কথা জানিয়েছেন বলে একটি সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে নিশ্চিত করেছে। তবে তারেক জিয়া তাকে এখনই রাজনীতি না ছাড়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন বলেও সেই সূত্রটি বাংলা ইনসাইডারকে জানিয়েছে। 

উল্লেখ্য যে, এখন সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বিএনপির মহাসচিব। তার শারীরিক অবস্থা খুব একটা ভালো না। ২৮ অক্টোবরের বিএনপির তাণ্ডবের পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই সময়ে তিনি সাড়ে তিন মাসেরও বেশি জেলে ছিলেন। জেলে থাকাকালীন সময় তার বিভিন্ন বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা আরও জটিল আকার ধারণ করেছে বলে তার পারিবারিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। বিশেষ করে তার হার্টের যে পুরনো সমস্যা তা আগের চেয়ে আরও বেড়েছে। সিঙ্গাপুরে যে চিকিৎসককে মির্জা ফখরুল দেখিয়েছেন বা যাকে তিনি নিয়মিত দেখান, তিনি তাকে এখন বেশি করে বিশ্রাম নেওয়া, চিন্তামুক্ত জীবন যাপন করা এবং কোন রকম স্ট্রেস না নেওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। এই প্রেক্ষিতে পারিবারিকভাবে তার ওপর চাপ এসেছে যে রাজনীতির চাপ কমিয়ে ফেলার জন্য।

বিএনপির মহাসচিব হিসেবে শুধু নয়, বিএনপির এখন তিনিই প্রধান সার্বক্ষণিক নেতা। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া জামিনে মুক্তি পেয়ে ফিরোজা অবস্থান করছেন। তিনি কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে না। অন্যদিকে তারেক জিয়া লন্ডনে পলাতক। তিনিও একুশে অগাস্টের গ্রেনেড হামলা সহ একাধিক মামলায় দণ্ডিত। এরকম বাস্তবতায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ওপর দল পরিচালনার দায়িত্ব এসেছে এবং তিনি সার্বক্ষণিকভাবে দলের জন্য কাজ করছেন। তাই তার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে বলে তার বিভিন্ন ঘনিষ্ঠ মহল জানিয়েছে। বিশেষ করে সাড়ে তিন মাস কারা জীবনের সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের শরীরে নতুন নতুন সমস্যা দেখা দিয়েছে বলেও তার পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে। এই সমস্ত শারীরিক সমস্যাগুলো ক্রমশ জটিল আকার ধারণ করেছে। আর এ কারণে তার দীর্ঘমেয়াদি বিশ্রাম প্রয়োজন বলেও চিকিৎসকরা তাকে পরামর্শ দিচ্ছেন। সবকিছু মিলিয়ে রাজনীতির মাঠে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যে ভাবে সক্রিয় ছিল, তেমনটি তার পক্ষে সক্রিয় থাকা আর সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। 

চিকিৎসকের সাথে পরামর্শের পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকায় বিএনপির অন্তত দু জন নেতাকে জানিয়েছেন যে তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। ডাক্তার তাকে দীর্ঘ বিশ্রামের কথা বলেছেন। এই অবস্থায় মহাসচিবের দায়িত্ব তার পক্ষে পালন করা কতটুকু সম্ভব, সেই নিয়ে তিনি নিজেই সন্দিহান। তবে বিএনপি রাজনীতি থেকে তিনি দূরে যাবেন না। বিএনপির সঙ্গেই তার রাজনৈতিক সম্পর্ক থাকবে। 

একজন স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে টেলি আলাপকালে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন। এই দলের জন্য তিনি জীবন উত্সর্গ করতে প্রস্তুত এমন বার্তা দিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবতা হল যে তিনি দলের পূর্ণকালীন দায়িত্ব পালনের মতো শারীরিক অবস্থায় নেই। 

উল্লেখ্য যে, বিএনপির একাধিক নেতা এখন শারীরিক ভাবে অসুস্থ এবং দায়িত্ব পালনে অক্ষম। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন দীর্ঘদিন ধরে রোগ শোকের সঙ্গে লড়াই করছেন। তার অবস্থা এখন স্থিতিশীল হলেও তিনি কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করছেন না। বিএনপির আরেক নেতা জমির উদ্দিন সরকার বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছেন। তাকেও দলের কর্মকাণ্ডে খুব একটা দেখা যায় না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াও দীর্ঘদিন ধরে শয্যাশায়ী। এই অবস্থায় ফখরুলও যদি অসুস্থ হয়ে রাজনীতির থেকে দূরে যান তাহলে কিএনপির হাল ধরবে কে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর   বিএনপি   তারেক জিয়া  


মন্তব্য করুন


ইনসাইডার এক্সক্লুসিভ

গ্রামীণ কল্যাণ নিয়ে ইউনূসের ভয়ঙ্কর জালিয়াতি

প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪


Thumbnail

জালিয়াতি করে অবশেষে গ্রামীণ কল্যাণেও ফেঁসে যাচ্ছেন ড. ইউনূস। রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ করার ক্ষেত্রে ড. ইউনূস প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন, আইন লঙ্ঘন করেছেন এবং জাল জালিয়াতির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্পদ নিজের কুক্ষিগত করেছেন। বাংলা ইনসাইডার এর অনুসন্ধানে এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে। 

সম্প্রতি গ্রামীণ ব্যাংক তার নিজস্ব সম্পত্তি হিসেবে গ্রামীণ কল্যাণ দখলে নিয়েছে। আর এটিকে জবরদখল হিসেবে অভিহিত করেছেন ড. ইউনূস। ১২ ফেব্রুয়ারি গ্রামীণ ব্যাংক তাদের বোর্ড সভার সিদ্ধান্তের আলোকে গ্রামীণ কল্যাণ এবং তার প্রতিষ্ঠানগুলোতে তাদের নিজস্ব চেয়ারম্যান পদে নিয়োগদান করেন। আর ড. ইউনূস দাবি করেছেন যে গ্রামীণ কল্যাণের সঙ্গে গ্রামীণ ব্যাংকের কোন সম্পর্ক নেই। 

আসলে কে সত্য? 

বাংলা ইনসাইডার এ বিষয়ে অনুসন্ধান করছে। বিশেষত গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ড. ইউনূস ডয়েচ ভেলে-তে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন যে, এখন গ্রামীণ কল্যাণের সঙ্গে গ্রামীণ ব্যাংকের কোন সম্পর্ক নেই। একই ভাবে ড. ইউনূসের পক্ষে ৩৪ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি গত রোববার এক বিবৃতি পাঠিয়েছেন। তাতে তারা অভিযোগ করেছেন যে ড. ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি প্রতিষ্ঠান জবরদখল করার প্রচেষ্টা সংক্রান্ত বিভিন্ন সংবাদ এর প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। গ্রামীণ টেলিকম ভবনে অবস্থিত গ্রামীণ কল্যাণ এবং গ্রামীণ টেলিকম সহ এ সব প্রতিষ্ঠান জবর দখলের প্রচেষ্টা হিসাবে এতে অনধিকার এবং জোরপূর্বক প্রবেশ, ভবনটির সামনে রাজনৈতিক সমাবেশ করা হচ্ছে বলেও তারা অভিযোগ করছেন। 

এই ৩৪ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ড. ইউনূসের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে বলেছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এসব অলাভজনক প্রতিষ্ঠান প্রান্তিক পর্যায়ে মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের সংশোধিত আর্টিকেল অফ অ্যাসোসিয়েশন অনুসারে প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ারম্যান পদে পরিবর্তন আনার এখতিয়ার গ্রামীণ ব্যাংকের নেই বলে ড. ইউনূসের পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কোন আইনগত দাবি থাকলে তা আদালতের কাছে উপস্থাপন করার উদ্যোগ গ্রামীণ ব্যাংক গ্রহণ করতে পারত বলে তারা উল্লেখ করেছেন। একই বক্তব্য ড. ইউনূস দিয়েছেন। অর্থাৎ ড. ইউনূস গ্রামীণ কল্যাণের আর্টিকেল অফ অ্যাসোসিয়েশন পরিবর্তন করেছেন। 

আমরা অনুসন্ধান করার চেষ্টা করি গ্রামীণ কল্যাণ কীভাবে গঠিত হয়েছিল

১৯.১২.১৯৯৩ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের ৩৪ তম বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দাতাগোষ্ঠীর প্রাপ্ত অনুদান ও ঋণের অর্থ দিয়ে সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাডভান্সমেন্ট ফান্ড এর অর্থ দিয়ে ২৫.০৪.১৯৯৬ তারিখে গ্রামীণ ব্যাংকের ৪২ তম বোর্ড সভায় গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য ও কর্মীদের কল্যাণের কোম্পানি আইন ১৯৯৪ এর আওতায় গ্রামীণ কল্যাণ নামক একটি প্রতিষ্ঠান তৈরির অনুমোদন দেওয়া হয়। অনুমোদনটি দেয় গ্রামীণ ব্যাংক। তাহলে ওই গ্রামীণ কল্যাণ কার প্রতিষ্ঠান? উত্তর, আইনগত দিক থেকে যদি উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়, খুব সহজ সোজা সাপ্টা উত্তর গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠান। 

গ্রামীণ ব্যাংকের বোর্ড সভায় গ্রামীণ কল্যাণ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং গ্রামীণ কল্যাণে গ্রামীণ ব্যাংকের সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাডভান্সমেন্ট ফান্ড হতে মোট ৬৯ কোটি টাকা প্রদান করা হয়। অর্থাৎ যে প্রতিষ্ঠানটিকে টাকা দিয়ে তৈরি করা হল সেই গ্রামীণ কল্যাণ আসলে গ্রামীণ ব্যাংকের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ছাড়া আর কিছু নয়। 

শুধু তাই নয়, পাঠক লক্ষ করুন, মেমোরেন্ডাম এবং আর্টিকেল অনুযায়ী গ্রামীণ কল্যাণের নয় সদস্যের পরিচালনা পরিষদের দুইজন সদস্য গ্রামীণ ব্যাংক হতে মনোনয়ন দেওয়ার বিধান ছিল। এছাড়াও উল্লেখ ছিল যে, গ্রামীণ কল্যাণের চেয়ারম্যান হবেন গ্রামীণ ব্যাংক থেকে মনোনীত প্রতিনিধি। 

এখন প্রশ্ন হল যে, এটি গ্রামীণ কল্যাণের আর্টিকল অফ অ্যাসোসিয়েশন। ড. ইউনূস দাবি করেছেন যে, এই আর্টিকল অফ অ্যাসোসিয়েশন তিনি পরিবর্তন করেছেন। গ্রামীণ ব্যাংকের বোর্ড সভায় যে আর্টিকল অফ অ্যাসোসিয়েশন তৈরি করা হচ্ছে সেই আর্টিকেল অফ অ্যাসোসিয়েশন গ্রামীণ ব্যাংকের অগোচরে রাতের অন্ধকারে ড. ইউনূস পরিবর্তন করেছেন কীভাবে? 

এবার আসুন আসল তথ্য অনুসন্ধান করে দেখি। যখন ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি থেকে বয়সজনিত কারণে অপসারিত হন, তখনই তিনি জানতেন যে, গ্রামীণ কল্যাণ এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন গ্রামীণ টেলিকম, গ্রামীণ ডিস্ট্রিবিউশন লি:, গ্রামীণ শিক্ষা ইত্যাদি তার কর্তৃত্বে আর থাকবে না এই সময় তিনি প্রতারণামূলকভাবে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ভুল প্রলোভন দেখিয়ে এই কোম্পানির সদস্যদের দিয়ে একটি বোর্ড সভা করেন। এই বোর্ড সভা করে আর্টিকল অফ অ্যাসোসিয়েশন পরিবর্তন করেন। অথচ এই আর্টিকল অফ অ্যাসোসিয়েশন পরিবর্তন করতে গেছে গ্রামীণ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে। কারণ গ্রামীণ ব্যাংকের ৪২ তম বোর্ড সভায় এই আর্টিকল অফ অ্যাসোসিয়েশন অনুমোদিত হয়েছিল। গ্রামীণ ব্যাংক একমাত্র সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা রাখে আইন অনুযায়ী যে গ্রামীণ ব্যাংক তার প্রতিনিধি গ্রামীণ কল্যাণে থাকবে কিনা। গ্রামীণ কল্যাণকে যদি ছেড়ে দিতে হয় তাহলে গ্রামীণ ব্যাংকের বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ড. ইউনূস এই সিদ্ধান্ত নেয়ার কোন এখতিয়ার রাখে না। এটি হল এক অদ্ভুত জালিয়াতি এবং প্রতারণা। এটি রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাতের এক ভয়ঙ্কর ঘটনা। ড. ইউনূসের নিয়ন্ত্রণে থাকা গ্রামীণ কল্যাণ কেবল অবৈধ ভাবেই ছিল না বরং ড. ইউনূস রাষ্ট্রীয় সম্পদ কুক্ষিগত করেছিলেন, প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং এজন্য তার বিরুদ্ধে অনতিবিলম্বে প্রতারণার মামলা হওয়া উচিত বলে মনে করেন আইনজ্ঞ বিশেষজ্ঞ।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস  


মন্তব্য করুন


ইনসাইডার এক্সক্লুসিভ

কোকোর সম্পত্তি তারেকের কুক্ষিগত: মামলা করবেন সিঁথি

প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ২৮ জানুয়ারী, ২০২৪


Thumbnail

আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুবার্ষিকী যখন পালিত হচ্ছে, ঠিক সেই সময় জিয়া পরিবারের সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিয়ে চলছে তুমুল গণ্ডগোল। বিশেষ করে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর সব সম্পত্তি আত্মসাৎ করেছেন লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া। এই অভিযোগে সিঁথি তার আইনজীবীর মাধ্যমে একটি আইনগত নোটিশ পাঠিয়েছেন তারেক জিয়ার কাছে। 

এর আগে সিঁথি ঢাকায় এসেছিলেন। বেগম খালেদা জিয়ার কাছে এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু খালেদা জিয়া সেই সময় ছিলেন অসুস্থ। সে কারণে তিনি এ ব্যাপারে কোন সুরাহা দিতে পারেননি। তাছাড়া এই সম্পত্তির বিষয় সম্পর্কে বেগম খালেদা জিয়াও ততটা অবহিত নন।

একাধিক সূত্র বলছে, বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় যান আরাফাত রহমান কোকো এবং মালয়েশিয়া তার বিপুল পরিমাণ অর্থ সম্পদ ছিল। দেশে বিভিন্ন দুর্নীতি এবং অনিয়মের মাধ্যমে যে সম্পদ করেছিলেন তার একটি বড় অংশই প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকো পাঠিয়েছিলেন মালয়েশিয়ায়। সেখানে মালয়েশিয়া বিএনপির সভাপতির মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন ব্যবসায় সেই টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। মালয়েশিয়া ছাড়াও সিঙ্গাপুরে আরাফাত রহমান কোকোর বেশ কিছু বিনিয়োগ ছিল। এই বিনিয়োগের পরিমাণ বাংলাদেশি টাকায় এক হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি বলে জানা গেছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মালয়েশিয়ায় আরাফাতের একটি ট্র্যাভেল এজেন্সি, দুটি অ্যাপার্টমেন্ট, পাঁচটি দোকান এবং আরও কিছু সম্পদ রয়েছে। এই সম্পদগুলো কোকো মারা যাওয়ার পর কিছুদিন বিএনপির মালয়েশিয়ায় থাকা ওই নেতার হেফাজতে ছিল। এই সময় কোকোর স্ত্রী শর্মিলা সিঁথি সম্পত্তিগুলো নিজের নামে নেওয়ার জন্য চেষ্টা তদবির করেন। কিন্তু এসময় তারেক জিয়া কোকোর সন্তানদের উচ্চশিক্ষার কথা বলে তাকে লন্ডনে নিয়ে আসেন এবং সিঁথি লন্ডনে আসার পর তারেক মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত বিএনপি নেতাদের মাধ্যমে ঐ সম্পদগুলো গ্রহণ করেন। এর বিনিময়ে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বিএনপির ওই নেতাকে ২০১৮ নির্বাচনে মনোনয়নও দিয়েছিলেন তারেক। এরপর সিঁথি যখন সম্পত্তিগুলোর অধিকার চান এবং সম্পত্তিগুলোর হালহকিকত জানতে চান তখন তারেক জিয়া বলেন, এগুলো সব বিক্রি করার প্রক্রিয়া চলছে। বিক্রি হলে সম্পত্তি বিক্রির টাকা সিঁথিকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে এবং সিঁথি যেন বাকি জীবন সন্তানদের ভরণপোষণ এই টাকা দিয়ে করতে পারেন সেজন্য এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। সিঁথি প্রথম এই বিষয়টি মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু বছরের পর বছর চলে গেলেও সিঁথিকে কোন টাকা দেওয়া হয়নি। বরং একটা পর্যায়ে তারেক সিঁথির জন্য যে ভরণপোষণের খরচ দিতেন সেই খরচও বন্ধ করে দেন।

লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়ার এই সিদ্ধান্তের পর বেগম খালেদা জিয়ার অনুরোধে ২০১৬ সাল থেকে সিঁথির যাবতীয় ভরণপোষণের ব্যবস্থা করছেন সৌদি আরবে পলাতক মোসাদ্দেক আলী ফালু। ফালু কোকোর ব্যবসায়িক পার্টনার ছিলেন। সেই সূত্রে বিভিন্ন ব্যবসা থেকে যে লভ্যাংশের টাকা সিঁথিকে পাঠানো হয় এবং সেটি দিয়ে সিঁথি চলেন।

সাম্প্রতিক সময়ে গত সিঁথি তার প্রয়াত স্বামীর সম্পত্তি পাওয়ার জন্য দেন দরবার করেন। এরপর তিনি লন্ডনে অবস্থানরত একজন আইনজীবীর মাধ্যমে তারেক জিয়াকে একটি উকিল নোটিশ পাঠান। কিন্তু তারেক জিয়া এই উকিল নোটিশের কোন জবাব দেননি। এরপর সিঁথি ঢাকায় আসেন, বিষয়টি বেগম খালেদা জিয়াকে জানানোর। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়াও বিষয়টির কোন সুরাহা করতে পারেনি।

জানা গেছে, সিঁথি এই বিষয়টি নিয়ে খুব শিগিগির আইনের আশ্রয় নিবেন এবং এই মালয়েশিয়া আদালতে তিনি আইনী লড়াইয়ে অবতীর্ণ হবেন। এজন্য একজন আইনজীবীরও শরণাপন্ন হয়েছে সিঁথি এমন তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

শর্মিলা রহমান সিঁথি   বিএনপি   খালেদা জিয়া   তারেক জিয়া  


মন্তব্য করুন


ইনসাইডার এক্সক্লুসিভ

দলের নেতৃত্ব ছেড়ে উপদেষ্টা পদ নিতে পারেন তারেক

প্রকাশ: ১১:০০ পিএম, ২৫ জানুয়ারী, ২০২৪


Thumbnail

৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর তারেক জিয়ার কর্তৃত্ব এখন চ্যালেঞ্জের মুখে। দেশে বিদেশে তারেক জিয়ার নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একই ভাবে প্রশ্ন উঠেছে কিভাবে বিএনপিকে পুনর্গঠন করা যায়? বিশেষ করে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের জন্য বিএনপির খোলনলচে পাল্টে ফেলার দাবি উঠেছে দলের ভিতর থেকেই। 

নির্বাচনের আগ পর্যন্ত তারেক জিয়ার প্রশংসায় যারা পঞ্চমুখ ছিলেন তারাই এখন তারেক জিয়ার নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। বিশেষ করে বিদেশে থেকে দল পরিচালনা করা যায় কিনা এই প্রসঙ্গটি উঠেছে। একই ভাবে বিদেশি কূটনীতিকরা বলছেন, একজন দণ্ডিত ব্যক্তি এবং যিনি দেশে অবস্থান করছেন না, তিনি যদি দলের নির্বাহী প্রধান হন তাহলে সেই দল পরিচালনা করা কতটুকু গণতান্ত্রিক এবং কতটুকু শোভন। আর এই সমস্ত প্রেক্ষাপটে তারেক জিয়ার বিএনপিতে অবস্থান নড়বড়ে হয়ে গেছে। তিনি এখন বিএনপির জন্য একটি দায়ে পরিণত হয়েছে। এ নিয়ে বিএনপির নীতি নির্ধারক মহলে কথাবার্তা হচ্ছে এবং আলাপ আলোচনা হচ্ছে। তারেক জিয়া নিজেও গতকাল বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে দলের স্বার্থে প্রয়োজনে সরে যাওয়ার কথা বলেছেন। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

গতকাল রাতে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মিলিত হয়েছিলেন লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া। তিনি সেখানে তার নিজের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেছেন। বিদেশ থেকে তিনি বাংলাদেশের অনেক বাস্তবতা বোঝেননি। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের পরে যে আচরণ করছেন তাতেও তারেক জিয়া হতাশা প্রকাশ করেছেন বলে একাধিক বিএনপি নেতা জানিয়েছেন। আর এরকম বাস্তবতার সাময়িক সময়ের জন্য হলেও বা দেশে না ফেরা পর্যন্ত সময়ে তিনি নেতৃত্ব যিনি বাংলাদেশে আছেন এ রকম কারও হাতে তুলে দিতে চান।

উল্লেখ্য, এই বৈঠকে বিএনপি নেতারা বলেছেন, যেহেতু এখনও দলের শীর্ষ তিনজন নেতা কারা অন্তরীণ আছেন, কাজেই এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তাদের মুক্তি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস এবং আমীর খসরু মাহমুদের জামিনের আবেদন গুলো এখন প্রক্রিয়াধীন আছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং আমীর খসরু মাহমুদের একটি মামলায় জামিন শুনানি বাকি আছে। সেখানেও তারা জামিন পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। আর এই জামিন পেলে স্থায়ী কমিটির সকল সদস্যকে নিয়ে তারেক জিয়া এ ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত নেবেন। 

তারেক জিয়ার ঘনিষ্ঠ একজন তরুণ নেতা বলেছেন, তিনি আপাতত দায়িত্ব ছাড়তে চাচ্ছেন। বিএনপির তিনি কোন আলঙ্কারিক পদ উপদেষ্টা বা প্রধান উপদেষ্টা এ রকম কোন দায়িত্ব গ্রহণ করতে চাইছেন। 

মূল বিষয়টা হচ্ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার গ্রহণযোগ্যতা সংকট রয়েছে। বিশেষ করে বিদেশি কূটনীতিকরা তার সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন। নির্বাচনের পর তারেক জিয়া একাধিক কূটনীতিকের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ নিয়ে আলাপ করতে চাইলেও তারা এড়িয়ে গেছেন। তাছাড়া লন্ডনে অবস্থানরত এই দণ্ডিত নেতা এখন বুঝতে পেরেছেন তিনি যে কৌশলগুলো প্রয়োগ করছেন সেই কৌশলগুলো কার্যত ব্যথ। এই সমস্ত কৌশল দিয়ে আন্দোলন করা যাবে না। আর বাস্তবতা হলো ভারত সহ প্রভাবশালী দেশগুলো বিএনপিকে গণতান্ত্রিক ধারায় সম্পৃক্ত হতে তারেক জিয়ার নেতৃত্বকে বাদ দেওয়া পরামর্শ দিচ্ছেন। এই প্রেক্ষিতে বিএনপিতে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে নাটকীয় ঘটনা ঘটেতে পারে। বিএনপির নেতৃত্বে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে এবং সেক্ষেত্রে তারেক জিয়া হয়তো ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পদ থেকে বিএনপির উপদেষ্টা হবেন। আর আনুষ্ঠানিক ভাবে দলের জন্য একজন কার্যকর নেতা নির্বাচন করা হবে। আর এটি যদি করা হয় তাহলে হবে বিএনপির জন্য একটি বড় চমক।

বিএনপি   তারেক জিয়া   রাজনীতির খবর  


মন্তব্য করুন


ইনসাইডার এক্সক্লুসিভ

পদত্যাগ করলেন কায়কাউস: মন্ত্রী হওয়ার গুঞ্জন

প্রকাশ: ০৫:৫১ পিএম, ১৫ জানুয়ারী, ২০২৪


Thumbnail

বিশ্বব্যাংকের ওয়াশিংটনের প্রধান কার্যালয়ে বিকল্প নির্বাহী পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন ড. আহমদ কায়কাউস। গত ৮ জানুয়ারি তিনি এই পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন বলে সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর তাকে তিন বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হলেও এক বছর পর তিনি পদত্যাগ করলেন।

সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, আজ তার পদত্যাগ পত্রের সার সংক্ষেপ অনুমোদিত হয়েছে। এখন এটি প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের অপেক্ষায়। প্রধানমন্ত্রী অনুমতি দিলে বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক পদ থেকে তার এই পদত্যাগ পত্র গৃহীত হবে বলে জানা গেছে।

ড. আহমদ কায়কাউস টেকনোক্রেট কোটায় মন্ত্রী হতে পারেন এমন গুঞ্জন রয়েছে। 

বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচনের আগে ড. আহমদ কায়কাউস ঢাকায় এসেছিলেন এবং সে সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। এরপরই তিনি বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করলেন।

বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, ড. আহমদ কায়কাউস টেকনোক্রেট কোটায় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হতে পারেন।

উল্লেখ্য যে, বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক হিসেবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম অথবা বর্তমান  মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেনকে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে বলে বিভিন্ন মহলে আলোচনা রয়েছে।


ড. আহমদ কায়কাউস  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন