ইনসাইডার এক্সক্লুসিভ

‘আমূলের’ মত দুগ্ধশিল্পে বিপ্লব ঘটাবে বাংলাদেশ

প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ৩০ নভেম্বর, ২০২২


Thumbnail

কলকাতায় আমার প্রথম সকাল। একটি বাংলা হোটেল থেকে নাস্তা সেড়ে চা খেতে বসলাম পাশের দোকানে। চায়ের পাশাপাশি ছোট ছোট গ্লাসে বিক্রি হচ্ছে দুধ। দাম বাংলাদেশি মুদ্রায় ১২.৫ টাকা। কৌতুহল বসত আমিও এক গ্লাস নিলাম। হালকা চিনি দিয়ে জাল দেয়ায় মিষ্টি স্বাদ। কেউ কেউ দুধের সাথে রুটি খেয়ে নাস্তাও সেরে নিচ্ছেন। সময় বাড়ার সাথে সাথে দোকানের ভীড়ও বাড়তে শুরু করল। কলকাতার রাস্তা ধরে হাটলে প্রায়ই দেখা মিলবে এমন সারি সারি দুধ ও মিষ্টান্নের দোকান। মিষ্টিজাত পণ্যের দাম এতো কম কিভাবে জানতে চাইলে এক দোকানদার জানান খামারি থেকে সরাসরি তার কাছে দুধ আসে তাই দুধ কম দামে পাওয়া যায়।

কিছু বিষয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমি সরেজমিনে চলে যাই হুগলি জেলার তারকেশ্বর গ্রামে। সেখানে আমূলসহ আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের ভিলেজ মিল্ক কালেকশন পয়েন্ট পরিদর্শন করি। সেখানের এক কর্মকর্তা বাংলা ইনসাইডারকে বলেন, “আমূলসহ কিছু বেসরকারি ভেন্ডর যেভাবে কাজ করছে তার জন্যই মূলত পুরো ভারতে দুধের এই বিপ্লব। আমরা গ্রামের প্রত্যন্ত পর্যন্ত গিয়ে খামারিদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করি। আমাদের নিজেদের কালেকশন বুথ আছে। কালেকশন ম্যান আছে। খামারিদের কষ্ট করতে হয় না। তারা শুধু তাদের দুধ নিয়ে আসে এবং দুধের মান অনুযায়ী ন্যায্য মুল্য নিয়ে যায়।

ঐ গ্রামে আমূল ছাড়াও ছোট বড় আরো অনেক ডেইরি দেখা যায়। কপিলা ডেয়ারি প্রতিষ্ঠাতার সাথে কথা বলে জানা যায়, সরকার থেকে তাদের জন্য বিভিন্ন রকমের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারা এইসব প্রশিক্ষণ কাছে লাগিয়ে বিভিন্ন রকম কাজে নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করছে। এছাড়াও তিনি নিজে দেখিয়েছেন কিভাবে তিনি খামারিদের দুধগুলো ফ্যাট মেপে তার দাম নির্ধারণ করেছেন।

বর্তমানে দুধ উৎপাদনে বিশ্বের এক নম্বর দেশ ভারত। খাদ্য ও কৃষি সংস্থা কর্পোরেট পরিসংখ্যান ডাটাবেস (এফএওএসটিএটি) এর তথ্য অনুযায়ী ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ভারত রেকর্ড পরিমাণ ২০৯৯.৬ লক্ষ টন দুধ উৎপাদন করে যা ২০১৪-২০১৫ সাল থেকে ৬০০ লক্ষ টন বেশি। বিশ্বের মোট দুধ উৎপাদনের ২৩ শতাংশ শুধু ভারত থেকেই উৎপন্ন হয়। ভারতের ডেইরিই হলো একক বৃহত্তম কৃষিপণ্য যার অবদান জাতীয় অর্থনীতিতে ৫ শতাংশ এবং গত ৫ বছরে যার চক্রবৃদ্ধি বার্ষিক বৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৪ শতাংশ, যার আকার প্রায় ১৫৯.১৮ বিলিয়ন ডলার। ভারতের বর্তমান এই সমৃদ্ধ দুগ্ধ শিল্পের পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান যে ব্যাক্তির তিনি হলেন ড. ভার্গিস কুরিয়েন। আজ থেকে প্রায় ৭০ বছর আগে দুধের গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা, উপকারিতা ও সহজলভ্যতার বিষয়টি তিনি দৃঢ়ভাবে উপলব্ধি করেছিলেন। তাঁর নিষ্ঠা, গবেষণা আর অক্লান্তিক প্রচেষ্টায় ভারত আজ পৃথিবীর মধ্যে এক নম্বর দুধ উৎপাদনকারী দেশ। প্রচুর পরিমাণ দুধ উৎপাদন হওয়ায় দুধের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকার দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনেও ভারত অন্যতম।

প্রানিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে বর্তমানে দুধের চাহিদা ১ কোটি ৫৬ লাখ ৬৮ হাজার টন। কিন্তু ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে দুধ উৎপাদন হয় প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ ৭৪ হাজার টন। যা চাহিদার তুলনায় প্রায় ২৫ লক্ষ টন কম। দুধে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে না পারার পেছনে খারামিদের দুধের ন্যায্য মুল্য না পাওয়া এবং মধ্যস্থতাকারী দ্বারা শোষিত হওয়াকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাজারে যেদিন বেশি দুধ ওঠে ওইদিন দামই পাওয়া যায় না। যে দাম পাই সেই বিক্রি করি।

— বাতেন মিয়া,
ক্ষুদ্র খামারি


১৯৪৫ সালে ভারতের গুজরাটের দুগ্ধ খামারিরাও একই শোষণের শিকার হয়ে আসছিল। দুধ বাজার ব্যবস্থা পুরোপুরি ঠিকাদার এবং মধ্যস্থতাকারী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল। ‘পেস্টনজি এডুলজি’ নামক প্রতিষ্ঠানের চতুর ব্যাবসায়ীরা খামারিদের ওপর একচেটিয়া রাজত্ব কায়েম করেছিল, যেখানে তাদের নির্ধারিত দামেই খামারিদের দুধ বিক্রি করতে হতো। কিন্তু দির্ঘদিন চলতে থাকা এই শোষণের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেয় খামারিরা। তাদের এই আন্দোলনের নায়ক ছিলেন ত্রিভুবন দাস প্যাটেল। খামারিদের বেঁচে থাকার লড়াইয়ে তাদের নেতা ত্রিভুবন দাস প্যাটেল তখন কৃষককে ঐক্যবদ্ধ করে পেস্টনজির শোষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়েছিলেন। তারা সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি সমবায় তৈরি করেন। ডেইরি খামারিদের ভাগ্যোন্নয়নে তারা যৌথভাবে কায়রা জেলা সমবায় দুধ উৎপাদনকারী ইউনিয়ন লিমিটেড (কেডিসিএমপিইউএল) নামে সমবায় তৈরি করে আন্দোলন শুরু করেন, যেটিকে পরবর্তীকালে ড. ভার্গিস কুরিয়েন ‘আমূল’ নামে নামকরন করেন।

ড. কুরিয়েন ত্রিভুবন দাস প্যাটেলকে নিয়ে যে সমবায় আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন সেখানে সমবায়ীদের ভূমিকা ছিল খামারীদের কাছে থেকে দুধ সংগ্রহ করা এবং দুধের গুণমান অনুযায়ী তাদের যথাযথ মূল্য প্রদান করা। দ্বিতীয় ধাপে সেই দুধ চলে যায় জেলা পর্যায়ের সমবায়ে যেখানে দুধ এনে প্রক্রিয়াজাত করা হয় এবং বাজারের জন্য প্রস্তুত করা হয়। তৃতীয় পর্যায়ে রয়েছে স্টেট লেভেল মিল্ক ফেডারেশন, যেখানে দুধ এবং বিভিন্ন দুগ্ধজাত পণ্যের যেমন: পনির, মাখন, ঘি ইত্যাদির মার্কেটিং করা এবং এদের গুণগত মান নিশ্চিত করা হয়। এই ৩ ধাপের প্রক্রিয়াটি আমূল প্যাটার্ন নামেও পরিচিত। এর ফলে মধ্যস্থতাকারীকে পুরো ব্যাবস্থা থেকে নির্মুল করা সম্ভব হয় এবং খামারিরা দুধের ন্যায্য মুল্য পেতে শুরু করে। এতে করে আরো খামারিরা উৎসাহিত হয় এবং দুধ উৎপাদন বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।

এই আমূল প্যাটার্ন খামারি এবং গ্রাহক উভয়ের জন্যই লাভজনক হওয়ায় এটি দ্রুত ছড়িয়ে পরে পুরো ভারতজুড়ে। পশ্চিম বঙ্গের বিভিন্ন শহর এবং গ্রাম ঘুরে দেখলে এই দুগ্ধ সমবায়গুলো দেখতে পাওয়া যায়। দুধ উৎপাদনকারী খামারিরা কোন ঠিকাদার কিংবা মধ্যস্থতাকারী ছাড়া সরাসরি তাদের দুধ এই সমবায়ে বিক্রি করেন। মেশিনের মাধ্যমে তৎক্ষণাৎ দুধের মান এবং ফ্যাটের পরিমাণ নির্নয় করা হয় এবং সেই অনুযায়ী দুধের যে দাম আসে সেই দামে তারা তাদের দুধ বিক্রি করতে পারছে। এর ফলে তারা শোষণের শিকার হয় না এবং আর্থিকভাবেও স্বচ্ছল থাকেন।

কলকাতার ডেইরী প্রতিষ্ঠান এক্সপ্রেস ডেইরীর সিইও এস.কে সিং বলেন, ডেইরি খাতের উন্নয়নে প্রাইভেট ভেন্ডর এবং গ্রামীণ খামারিরা নিজেরাতো অবদান রাখছেনই, পাশাপাশি সরকারও তাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে আসছে। খামারিদের বীমার ব্যাবস্থা করে দিয়েছে যাতে গরু মারা গেলেও তারা ক্ষতির শিকার না হয়।

এস.কে সিং বলেন, প্রাইভেট কিংবা সরকারি ভেন্ডর গ্রামে গ্রামে থেকে দুধ সংগ্রহ করে করে দুধ চিলিং রুমে সংরক্ষণ করে রাখেন এবং খামারির টাকা সাথে সাথে তাকে পরিশোধ করে দেন। এতে করে খামারিরা উৎসাহিত হয় এবং আরও বেশি দুধ উৎপাদনে আগ্রহি হয়। ৩০ দিন খামারির কাছ থেকে আমি দুধ নিলাম টাকা দিলাম না, তাহলে ওই গরিব খামারি গরুকে খাওয়াবে কি? অসুখ হলে চিকিৎসা কিভাবে করাবে?

তিনি জানান তাদের এক্সপ্রেস ডেইরী গ্রামীণ খামারিদের থেকে সরাসরি দুধ সংগ্রহ করেন। সেই দুধ তারা পাস্তুরিত করে রাখেন। মহিষের দুধ থেকে তারা ক্রিম আলাদা করে ঘি, মাখন ইত্যাদি পন্য তৈরি করছেন। যা তারা ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করেন। এর ফলে লাভবান হচ্ছেন সবাই।

বাংলাদেশে বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখলে দেখা যায়, দুধ উৎপাদনকারী খামারিদের দুর্দশা এবং হতাশা। কেউ কেউ সরাসরি ক্রেতার কাছে দুধ বিক্রি করতে পারলেও, বেশিরভাগই ঠিকাদার কিংবা মধ্যস্থতাকারীর ওপর নির্ভরশীল। সকালে গোয়ালা এসে দুধ নিয়ে যায় এবং তাদের নির্ধারিত দামেই খমারিদের দুধ বিক্রি করতে হয় যা বাজারমূল্য থেকে অনেক কম। সেই দুধের টাকাও খামারিরা পায় মাস শেষে। অনেকের পক্ষেই কোনো টাকা ছাড়া সারা মাস গরুর খরচ চালানো কষ্টকর হয়ে যায়। নারায়ণগঞ্জের খামারি মাহফুজা বেগম জানান গ্রামে দুধ বিক্রির গ্রাহক না থাকায় বাধ্য হয়ে তিনি গোয়ালার কাছে দুধ বিক্রি করেন। তিনি বলেন, গ্রামের মানুষের টাকা আছে দুধ কিন্না খাওয়ার? আমাগো থাইকা দুধ নিয়া যাইয়া শহরে অনেক টাকায় বিক্রি করে। আমাগোরে টাকাও দেয় মাস শেষে। গরুর খরচ চালাইতেই অবস্থা খারাপ।

বেশিরভাগ খামারিদের কাছে দুধ সংরক্ষণের ব্যাবস্থা না থাকায় তারা কম টাকায় হলেও দিনের দুধ দিনেই বিক্রি করে দিচ্ছেন। গাজীপুরের খামারি বাতেন মিয়া বলেন, বাজারে যেদিন বেশি দুধ ওঠে ওইদিন দামই পাওয়া যায় না। আর দুধ বাড়ি ফেরত আইনাতো কোনো লাভ নাই, নষ্ট হইয়া যায়। তাই যা পাই তাতেই বিক্রি করি।

তবে দেশে খামারিদের এই চিত্র পরিবর্তনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ অর্থায়নে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রাণিসম্পদ অধিদফতর ‘প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প’ বাস্তবায়নে কাজ করছে। খামারিদের একত্রিত করার জন্য তারা দেশব্যাপী প্রান্তিক খামারিদের নিয়ে বিভিন্ন ভ্যালুচেইন ভিত্তিক ৫ হাজার ৫০০টি প্রোডিউসার গ্রুপ (পিজি) গঠন করেছে। যার সাথে সংযুক্ত রয়েছেন প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজারেরও বেশি খামারি।  তালিকাভুক্তদের জন্য থাকবে ফিল্ড স্কুল। যেখানে খামারিদের খামার আধুনিকায়ন, দক্ষতা উন্নয়ন, নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচয় করানো, উৎপাদিত দুধ, মাংস ও ডিমের হাইজিন নিশ্চিত করা, দুধ ও মাংসের উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং খামারে উৎপাদিত পণ্যের বিপণন ব্যবস্থাপনার উপরেও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দেয়া হবে। এই প্রকল্পের আওতায় ৪০০টি ভিলেজ মিল্ক কালেকশন সেন্টার ও ২০টি মিল্ক হাব স্থাপন করা হবে। যেখানে খামারিরা ন্যায্য মুল্যে তাদের উৎপাদিত দুধ বিক্রি করতে পারবে।

দেশে দুধ উৎপাদনের পরিমাণ আস্তে আস্তে বাড়ছে এবং বাংলাদেশ দুধ উৎপাদনে যে অবস্থানে আছে তাতে সামনের দিনগুলোতে উৎপাদনের পরিমাণ আরও বাড়বে।

— ড. মো. গোলাম রাব্বানী
চিফ টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর, প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প


কোনো খামারির গরু অসুস্থ হলে যেনো সহজেই চিকিৎসা পায় তার জন্য চালু করা হয়েছে মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক। দেশের ৬১ জেলার ৩৬০টি উপজেলায় চালু হয়েছে এই ভ্রাম্যমাণ প্রাণিচিকিৎসা ক্লিনিক। খামারির দোরগোড়ায় চিকিৎসকসহ পৌঁছে যাবে এই ভ্রাম্যমাণ ক্লিনিক। কোনো প্রকার অর্থ ছাড়া বিনা মুল্যে এই সেবা গ্রহণ করতে পারবে যেকোনো খামারি। ফলে পশু মৃত্যুর হার কমবে এবং খামারিরাও বড় ক্ষতির থেকে রেহাই পাবে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, শুধুমাত্র গত দশ বছরে দেশে খামার বেড়েছে ১০ লাখ ২ হাজার, যেখানে ২০১০-১১ অর্থবছরে ছিল ৩ লাখ ৪৭ হাজার। এ সময়ে গরুর খামার বেড়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার ৪৪০, আগে ছিল ৭৯ হাজার ৮৫০। দেশে এখনও দুধের ঘাটতি থাকলেও গত ১০ বছরে দুধের উৎপাদন বেড়েছে ৮০ লাখ টনেরও বেশি। খুব শীঘ্রই এ ঘাটতি পুরন করে দুধ রপ্তানি করারও আশাবাদ ব্যাক্ত করেন বিশেষজ্ঞরা।

সম্প্রতি নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং খামার ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে ‘বাংলাদেশ ডেইরি উন্নয়ন বোর্ড আইন, ২০২২’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের (এলডিডিপি) চীফ টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর ড. মো. গোলাম রব্বানী বাংলা ইনসাইডারকে বলেন, এই বোর্ড মূলত দুধ উৎপাদন থেকে শুরু করে উৎপাদন পরবর্তী ভোক্তা পর্যন্ত যাওয়া সব ধরনের কাজ করবে। যেমন- দুধ উৎপাদন করা, সংগ্রহ করা, দুধ প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে বহমুখীভাবে বাজারজাতকরণসহ ভোক্তার স্বার্থ সংরক্ষণ ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করবে। এছাড়া বোর্ডের আওতায় খামারিরা সংযুক্ত থাকবে। তবে যারা আগ্রহী নন তারা তাদের মতো করে উৎপাদন করবে।

তিনি বলেন, দেশে দুধ উৎপাদনের পরিমাণ আস্তে আস্তে বাড়ছে এবং বাংলাদেশ দুধ উৎপাদনে যে অবস্থানে আছে তাতে সামনের দিনগুলোতে উৎপাদনের পরিমাণ আরও বাড়বে। উৎপাদন বাড়লে উৎপাদিত বাড়তি দুধ যেন নষ্ট না হয়, উৎপাদনকারী খামারিরা যাতে কোনোভাবে ক্ষতির শিকার না হন এবং বাজার ব্যবস্থা নিয়ে ভবিষ্যতে যাতে কোনো সংকট তৈরি না হয় ইত্যাদি বিষয়াবলি গুলোকে সুষ্ঠুভাবে দেখভাল করার জন্য সরকার বাংলাদেশ ডেইরি উন্নয়ন বোর্ড আইন পাশ করছে। আর এই আইনের বাস্তবায়ন হলে খামারিরা সরাসরি লাভবান হবে।

‘প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প’ এর সুফল ইতোমধ্যে পেতে শুরু করেছে দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের খামারিরা। ‘বাংলাদেশ ডেইরি উন্নয়ন বোর্ড আইন, ২০২২’ এবং ‘প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প’ বাস্তবায়িত হলে আমূলের মত বাংলাদেশও দুগ্ধ শিল্পে একটি বিপ্লব ঘটাবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।



মন্তব্য করুন


ইনসাইডার এক্সক্লুসিভ

তৃতীয় লিঙ্গের ক্ষমতায়ন: এলডিডিপি প্রকল্পের নীরব বিপ্লব (ভিডিও)

প্রকাশ: ০৪:০০ পিএম, ০৫ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

খায়রুন তৃতীয় লিঙ্গ জনগোষ্ঠীর একজন। তবে সে আর দশজনের মতো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে না, মানুষের কাছে চাঁদা চায় না কিংবা কারো কারো মতো অশ্লীল আচরণ করে মানুষকে বিব্রতও করে না। সময় করে একটু ঘাস কাটে, বাচ্চাকে সময় দেয়। তার পরিবারের সদস্যের যত্ন করতেই তার বেশির ভাগ সময় যায়। এভাবেই ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত হয় তার। যত স্বপ্ন পুরো পরিবার নিয়েই। সেই স্বপ্ন পূরণে সে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ধাপে ধাপে। আর স্বপ্ন পূরণে সহযাত্রী হয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি)।

বলছি, সিরাজগঞ্জ সদরের কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের কান্দাপাড়া গ্রামের খায়রুন হিজড়ার কথা। যিনি একজন তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর মানুষ। তবে এখন তার বড় পরিচয় হলো তিনি একজন পুরোদমে খামারি এবং প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের পিজি গ্রুপের একজন সক্রিয় সদস্য। তার আইডি নম্বর ৬৮৮৭৮-এসসি-০৩-১১। শুরুতে ২০টি উন্নত জাতের মুরগি দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে তার খামারে গরুর সংখ্যা ৫টি, ছাগল রয়েছে ৮টি। এছাড়া বেশ কিছু মুরগিও রয়েছে তার খামারে। দু মাস আগে একটি ছাগল বাচ্চাও দিয়েছে।

শুরুটা ২০টি মুরগি দিয়ে শুরু করলেও তেমন সুবিধা করতে পারেননি খায়রুন হিজড়া। কোন অজ্ঞাত রোগে দু-একটি মুরগি মারা গেলে যোগাযোগ করেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় তাকে পরামর্শ দেন সেগুলো বিক্রি করে যেন তিনি ছাগল বা অন্য কিছু কেনেন এবং সেগুলো দিয়ে খামার করেন। এরপর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের পরামর্শে তিনি মুরগিগুলো প্রায় ১০ হাজার টাকা দিয়ে বিক্রি করে পাঁচ হাজার টাকা দরে দুটি ছাগল কেনেন। এরপরই যেন ঘুরে যায় খায়রুন হিজড়ার ভাগ্যের চাকা। এখন তার খামারে ছাগলের সংখ্যা ৮টি। একইভাবে ছাগলের পাশাপাশি একটি গরু দিয়ে শুরু করলেও এখন তার গরুর সংখ্যাও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫টি। এতে করে দৈনিক তিনি ৭ থেকে ৯ লিটার গরুর দুধ বিক্রি করতে পারেন তিনি।

খায়রুন হিজড়া বাংলা ইনসাইডারকে বলেন, আমি উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে ট্রেনিং করেছি। এরপর তারা আমাকে ২০টি মুরগি দেয়। কিন্তু সেগুলো দিয়ে বেশি সুবিধা করতে পারিনি। সেজন্য ‍মুরগি গুলো বিক্রি করে আমি ছাগল কিনেছি। পরে একটা সময় আমি একটি গরু কিনি। এখন আমার খামারের ৫টি গরু এবং ৮টি ছাগল এবং বেশ কিছু মুরগি রয়েছে।

এই খামার নিয়ে তার পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রত্যেক মানুষের স্বপ্ন থাকে একদিন সে ছোট থেকে বড় হবে। আমারও স্বপ্ন আছে একদিন আমি বড় খামারি হব। সেজন্য এখানে আমার বিনিয়োগ দরকার। যেটা আমার জন্য কঠিন বা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের। কারণ আমরা হিজড়া (তৃতীয় লিঙ্গ) হওয়ার কারণে কেউ আমাদের ঋণ দেয় না, দিতেও চায় না। বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ পাওয়ার আমাদের জন্য দুষ্কর। সেজন্য সরকার থেকে যদি আমাদের বিনা সুদে ঋণের ব্যবস্থা করে তাহলে আমি যেমন আরও এগিয়ে যেতে পারব তেমনি আমার মতো হাজারো হিজড়া স্বাবলম্বী হবে। তাদেরকে কারও কাছে আর হাত পাততে হবে না। এছাড়া সরকারের প্রতি আমার অনুরোধ মুরগির পরিবর্তে যদি ছাগল বা গরু দেয়া হয় তাহলে বেশ ভালো হবে। 

জানা যায়, দেশব্যাপী প্রান্তিক খামারিদের নিয়ে প্রোডিউসার গ্রুপ (পিজি) গঠন করেছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। উদ্দেশ্য এসব পিজিগুলোর মাধ্যমে প্রান্তিক খামারিদেরকে সংগঠিত করে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা। বিশেষ করে প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ইত্যাদি পৌঁছে দেওয়া এবং তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রাণিসম্পদ খাতের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সাধনে কাজ করা। 

সারাদেশে মোট ৬৫০০টি পিজি গ্রুপ রয়েছে। প্রতিটি গ্রুপে সদস্যের সংখ্যা প্রায় ২০ থেকে ৪০ জন। মোট ৬৫০০ পিজি গ্রুপের মধ্যে সিরাজগঞ্জের এটি একটি এবং একমাত্র তৃতীয় লিঙ্গের পিজি গ্রুপ।

পিজি গ্রুপে শুধু খায়রুন হিজড়া একা নয়, তার সাথে আছে আরও ১৪ জন অর্থাৎ মোট ১৫ জন পিজি গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত। এদের মধ্যে অন্যতম হলেন সোহাগী হিজড়া (৬৮৮৭৮-এসসি-০৩-১২), মো: সবুজ ওরফে সংখিনী (৬৮৮৭৮-এসসি-০৩-১৩), সেতু হিজড়া (৬৮৮৭৮-এসসি-০৩-১৫) সহ আরও কয়েকজন। যারা প্রত্যেকে পিজি গ্রুপের সক্রিয় সদস্য।

সিরাজগঞ্জ জেলার হিজড়া (তৃতীয় লিঙ্গ) সমিতির সভাপতি মো: ওমর ফারুক রাব্বি বাংলা ইনসাইডারকে বলেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্তৃক গঠিত ট্রান্সজেন্ডার ও হিজড়াদের নিয়ে গঠিত ১৫ সদস্যের পিজি দল নিয়ে আমরা কাজ করছি। উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর আমাদের সার্বক্ষণিক সহযোগিতা দিয়ে আসছে। আমরা বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ পেয়ে থাকি। গবাদি পশু থেকে শুরু করে লৈঙ্গিক বৈচিত্র্যের জনগোষ্ঠীর সাথে সম্পর্কে, পিজি দলের দায়িত্ব-কর্তব্য কি, দলের সভাপতি, ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব কর্তব্য সর্ম্পকে এবং পিজি দলের নীতিমালা সম্পর্কে জেনেছি। 

তিনি আরও বলেন, আমরা প্রত্যেক সদস্য প্রতি মাসে ১০০ টাকা করে সঞ্চয় রাখি। রাজশাহী ‍কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে আমাদের পিজি দলের একটা একাউন্ট আছে। শুরুতে উপজেলা থেকে আমাদের ২০টি করে মুরগি দেয়া হয়। আমরা সেগুলো লালন পালন করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। পিজি দলের পক্ষ থেকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কাছে আমাদের অনুরোধ আমাদের যেন গরু এবং ছাগল দেয়া হয় তাহলে আমরা আরও ভালো ভাবে স্বাবলম্বী হতে পারব। ফলে মানুষের কাছেও আমাদের আর হাত পাততে হবে না। আমরাও কর্ম করেই খেতে চাই। কারও মুখাপেক্ষী হতে চাই না। আমরা একটা দল গঠন করে দেখিয়েছি যে, হিজড়ারা সমাজের মূল স্রোতে এসে কাজ করে খেতে চায়। সমাজের সহযোগিতা পেলে আমরাও স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবো।

সিরাজগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মোঃ আলমগীর হোসেন জানান, আমরা যখন রাস্তা ঘাটে বের হয় তখন দেখা যায় যে, রেল স্টেশন বা বাজারগুলোতে তারা (হিজড়া) অন্যের কাছে হাত পাতে। যেহেতু এলডিডিপি প্রকল্প থেকে সুযোগ ছিলো পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে মূল স্রোতে নিয়ে আসা। এরই অংশ হিসেবে তৎকালীন রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক ডা. নজরুল ইসলাম ঝন্টু স্যারের মাথায় প্রথম এই ধারণা আসে। এদেরকে নিয়ে যদি একটা দল গঠন করা যায় তাহলে এরা মানুষের দ্বারে দ্বারে যে হাত পাতে এটা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে এবং আমাদের সমাজের মূল স্রোতে তারা চলতে পারবে। তারাও আমাদের সমাজে কন্ট্রিবিউট করতে পারবে। এই চিন্তা থেকেই আমরা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে সেটা প্রস্তাব করি। কর্তৃপক্ষ সেটা গ্রহণ করে। এরপর আমরা তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে শুরুতে ২০টি করে মুরগি দিয়েছি। পাশাপাশি মুরগির খাদ্য এবং পাত্র দিয়েছি। সেখানে থেকে তারা এখন একটা ভালো অবস্থানে আছে। 

সিরাজগঞ্জের এই হিজড়া পিজি গ্রুপ একটা দৃষ্টান্ত উল্লেখ্য করে উপজেলা এই প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বলেন, হিজড়া নিয়ে আরও বৃহৎ পরিসরে কিভাবে কাজ করা যায় আমরা সেটা নিয়ে এগোচ্ছি। সিরাজগঞ্জ জেলায় ২০০৫ জন হিজড়া রয়েছে। আমাদের পরিকল্পনা আছে এই রকম দল আরও বাড়ানো যায় কিনা। এখন আমরা শুরুতে তাদের শুধুমাত্র মুরগি দিয়ে থাকি। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে তাদেরকে যেন আমরা গরু বা ছাগলও দিয়ে পারি সেটা নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। তাদের নিয়ে যদি আমরা আরও বড় পরিসরে কাজ করতে পারি তাহলে সমাজে একটা বিপ্লব ঘটবে।


তৃতীয় লিঙ্গ   এলডিডিপি প্রকল্প   সিরাজগঞ্জ   প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর  


মন্তব্য করুন


ইনসাইডার এক্সক্লুসিভ

ফখরুলের রাজনীতি ছাড়ার বার্তা

প্রকাশ: ০২:০০ পিএম, ০৮ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রাজনীতি ছেড়ে দিচ্ছেন—এমন বার্তা তিনি দিয়েছেন দলের একাধিক শীর্ষ নেতাকে। লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়াকেও তার অভিপ্রায়ের কথা জানিয়েছেন বলে একটি সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে নিশ্চিত করেছে। তবে তারেক জিয়া তাকে এখনই রাজনীতি না ছাড়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন বলেও সেই সূত্রটি বাংলা ইনসাইডারকে জানিয়েছে। 

উল্লেখ্য যে, এখন সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বিএনপির মহাসচিব। তার শারীরিক অবস্থা খুব একটা ভালো না। ২৮ অক্টোবরের বিএনপির তাণ্ডবের পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই সময়ে তিনি সাড়ে তিন মাসেরও বেশি জেলে ছিলেন। জেলে থাকাকালীন সময় তার বিভিন্ন বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা আরও জটিল আকার ধারণ করেছে বলে তার পারিবারিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। বিশেষ করে তার হার্টের যে পুরনো সমস্যা তা আগের চেয়ে আরও বেড়েছে। সিঙ্গাপুরে যে চিকিৎসককে মির্জা ফখরুল দেখিয়েছেন বা যাকে তিনি নিয়মিত দেখান, তিনি তাকে এখন বেশি করে বিশ্রাম নেওয়া, চিন্তামুক্ত জীবন যাপন করা এবং কোন রকম স্ট্রেস না নেওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। এই প্রেক্ষিতে পারিবারিকভাবে তার ওপর চাপ এসেছে যে রাজনীতির চাপ কমিয়ে ফেলার জন্য।

বিএনপির মহাসচিব হিসেবে শুধু নয়, বিএনপির এখন তিনিই প্রধান সার্বক্ষণিক নেতা। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া জামিনে মুক্তি পেয়ে ফিরোজা অবস্থান করছেন। তিনি কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে না। অন্যদিকে তারেক জিয়া লন্ডনে পলাতক। তিনিও একুশে অগাস্টের গ্রেনেড হামলা সহ একাধিক মামলায় দণ্ডিত। এরকম বাস্তবতায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ওপর দল পরিচালনার দায়িত্ব এসেছে এবং তিনি সার্বক্ষণিকভাবে দলের জন্য কাজ করছেন। তাই তার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে বলে তার বিভিন্ন ঘনিষ্ঠ মহল জানিয়েছে। বিশেষ করে সাড়ে তিন মাস কারা জীবনের সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের শরীরে নতুন নতুন সমস্যা দেখা দিয়েছে বলেও তার পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে। এই সমস্ত শারীরিক সমস্যাগুলো ক্রমশ জটিল আকার ধারণ করেছে। আর এ কারণে তার দীর্ঘমেয়াদি বিশ্রাম প্রয়োজন বলেও চিকিৎসকরা তাকে পরামর্শ দিচ্ছেন। সবকিছু মিলিয়ে রাজনীতির মাঠে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যে ভাবে সক্রিয় ছিল, তেমনটি তার পক্ষে সক্রিয় থাকা আর সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। 

চিকিৎসকের সাথে পরামর্শের পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকায় বিএনপির অন্তত দু জন নেতাকে জানিয়েছেন যে তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। ডাক্তার তাকে দীর্ঘ বিশ্রামের কথা বলেছেন। এই অবস্থায় মহাসচিবের দায়িত্ব তার পক্ষে পালন করা কতটুকু সম্ভব, সেই নিয়ে তিনি নিজেই সন্দিহান। তবে বিএনপি রাজনীতি থেকে তিনি দূরে যাবেন না। বিএনপির সঙ্গেই তার রাজনৈতিক সম্পর্ক থাকবে। 

একজন স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে টেলি আলাপকালে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন। এই দলের জন্য তিনি জীবন উত্সর্গ করতে প্রস্তুত এমন বার্তা দিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবতা হল যে তিনি দলের পূর্ণকালীন দায়িত্ব পালনের মতো শারীরিক অবস্থায় নেই। 

উল্লেখ্য যে, বিএনপির একাধিক নেতা এখন শারীরিক ভাবে অসুস্থ এবং দায়িত্ব পালনে অক্ষম। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন দীর্ঘদিন ধরে রোগ শোকের সঙ্গে লড়াই করছেন। তার অবস্থা এখন স্থিতিশীল হলেও তিনি কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করছেন না। বিএনপির আরেক নেতা জমির উদ্দিন সরকার বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছেন। তাকেও দলের কর্মকাণ্ডে খুব একটা দেখা যায় না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াও দীর্ঘদিন ধরে শয্যাশায়ী। এই অবস্থায় ফখরুলও যদি অসুস্থ হয়ে রাজনীতির থেকে দূরে যান তাহলে কিএনপির হাল ধরবে কে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর   বিএনপি   তারেক জিয়া  


মন্তব্য করুন


ইনসাইডার এক্সক্লুসিভ

গ্রামীণ কল্যাণ নিয়ে ইউনূসের ভয়ঙ্কর জালিয়াতি

প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪


Thumbnail

জালিয়াতি করে অবশেষে গ্রামীণ কল্যাণেও ফেঁসে যাচ্ছেন ড. ইউনূস। রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ করার ক্ষেত্রে ড. ইউনূস প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন, আইন লঙ্ঘন করেছেন এবং জাল জালিয়াতির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্পদ নিজের কুক্ষিগত করেছেন। বাংলা ইনসাইডার এর অনুসন্ধানে এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে। 

সম্প্রতি গ্রামীণ ব্যাংক তার নিজস্ব সম্পত্তি হিসেবে গ্রামীণ কল্যাণ দখলে নিয়েছে। আর এটিকে জবরদখল হিসেবে অভিহিত করেছেন ড. ইউনূস। ১২ ফেব্রুয়ারি গ্রামীণ ব্যাংক তাদের বোর্ড সভার সিদ্ধান্তের আলোকে গ্রামীণ কল্যাণ এবং তার প্রতিষ্ঠানগুলোতে তাদের নিজস্ব চেয়ারম্যান পদে নিয়োগদান করেন। আর ড. ইউনূস দাবি করেছেন যে গ্রামীণ কল্যাণের সঙ্গে গ্রামীণ ব্যাংকের কোন সম্পর্ক নেই। 

আসলে কে সত্য? 

বাংলা ইনসাইডার এ বিষয়ে অনুসন্ধান করছে। বিশেষত গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ড. ইউনূস ডয়েচ ভেলে-তে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন যে, এখন গ্রামীণ কল্যাণের সঙ্গে গ্রামীণ ব্যাংকের কোন সম্পর্ক নেই। একই ভাবে ড. ইউনূসের পক্ষে ৩৪ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি গত রোববার এক বিবৃতি পাঠিয়েছেন। তাতে তারা অভিযোগ করেছেন যে ড. ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি প্রতিষ্ঠান জবরদখল করার প্রচেষ্টা সংক্রান্ত বিভিন্ন সংবাদ এর প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। গ্রামীণ টেলিকম ভবনে অবস্থিত গ্রামীণ কল্যাণ এবং গ্রামীণ টেলিকম সহ এ সব প্রতিষ্ঠান জবর দখলের প্রচেষ্টা হিসাবে এতে অনধিকার এবং জোরপূর্বক প্রবেশ, ভবনটির সামনে রাজনৈতিক সমাবেশ করা হচ্ছে বলেও তারা অভিযোগ করছেন। 

এই ৩৪ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ড. ইউনূসের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে বলেছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এসব অলাভজনক প্রতিষ্ঠান প্রান্তিক পর্যায়ে মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের সংশোধিত আর্টিকেল অফ অ্যাসোসিয়েশন অনুসারে প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ারম্যান পদে পরিবর্তন আনার এখতিয়ার গ্রামীণ ব্যাংকের নেই বলে ড. ইউনূসের পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কোন আইনগত দাবি থাকলে তা আদালতের কাছে উপস্থাপন করার উদ্যোগ গ্রামীণ ব্যাংক গ্রহণ করতে পারত বলে তারা উল্লেখ করেছেন। একই বক্তব্য ড. ইউনূস দিয়েছেন। অর্থাৎ ড. ইউনূস গ্রামীণ কল্যাণের আর্টিকেল অফ অ্যাসোসিয়েশন পরিবর্তন করেছেন। 

আমরা অনুসন্ধান করার চেষ্টা করি গ্রামীণ কল্যাণ কীভাবে গঠিত হয়েছিল

১৯.১২.১৯৯৩ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের ৩৪ তম বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দাতাগোষ্ঠীর প্রাপ্ত অনুদান ও ঋণের অর্থ দিয়ে সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাডভান্সমেন্ট ফান্ড এর অর্থ দিয়ে ২৫.০৪.১৯৯৬ তারিখে গ্রামীণ ব্যাংকের ৪২ তম বোর্ড সভায় গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য ও কর্মীদের কল্যাণের কোম্পানি আইন ১৯৯৪ এর আওতায় গ্রামীণ কল্যাণ নামক একটি প্রতিষ্ঠান তৈরির অনুমোদন দেওয়া হয়। অনুমোদনটি দেয় গ্রামীণ ব্যাংক। তাহলে ওই গ্রামীণ কল্যাণ কার প্রতিষ্ঠান? উত্তর, আইনগত দিক থেকে যদি উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়, খুব সহজ সোজা সাপ্টা উত্তর গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠান। 

গ্রামীণ ব্যাংকের বোর্ড সভায় গ্রামীণ কল্যাণ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং গ্রামীণ কল্যাণে গ্রামীণ ব্যাংকের সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাডভান্সমেন্ট ফান্ড হতে মোট ৬৯ কোটি টাকা প্রদান করা হয়। অর্থাৎ যে প্রতিষ্ঠানটিকে টাকা দিয়ে তৈরি করা হল সেই গ্রামীণ কল্যাণ আসলে গ্রামীণ ব্যাংকের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ছাড়া আর কিছু নয়। 

শুধু তাই নয়, পাঠক লক্ষ করুন, মেমোরেন্ডাম এবং আর্টিকেল অনুযায়ী গ্রামীণ কল্যাণের নয় সদস্যের পরিচালনা পরিষদের দুইজন সদস্য গ্রামীণ ব্যাংক হতে মনোনয়ন দেওয়ার বিধান ছিল। এছাড়াও উল্লেখ ছিল যে, গ্রামীণ কল্যাণের চেয়ারম্যান হবেন গ্রামীণ ব্যাংক থেকে মনোনীত প্রতিনিধি। 

এখন প্রশ্ন হল যে, এটি গ্রামীণ কল্যাণের আর্টিকল অফ অ্যাসোসিয়েশন। ড. ইউনূস দাবি করেছেন যে, এই আর্টিকল অফ অ্যাসোসিয়েশন তিনি পরিবর্তন করেছেন। গ্রামীণ ব্যাংকের বোর্ড সভায় যে আর্টিকল অফ অ্যাসোসিয়েশন তৈরি করা হচ্ছে সেই আর্টিকেল অফ অ্যাসোসিয়েশন গ্রামীণ ব্যাংকের অগোচরে রাতের অন্ধকারে ড. ইউনূস পরিবর্তন করেছেন কীভাবে? 

এবার আসুন আসল তথ্য অনুসন্ধান করে দেখি। যখন ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি থেকে বয়সজনিত কারণে অপসারিত হন, তখনই তিনি জানতেন যে, গ্রামীণ কল্যাণ এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন গ্রামীণ টেলিকম, গ্রামীণ ডিস্ট্রিবিউশন লি:, গ্রামীণ শিক্ষা ইত্যাদি তার কর্তৃত্বে আর থাকবে না এই সময় তিনি প্রতারণামূলকভাবে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ভুল প্রলোভন দেখিয়ে এই কোম্পানির সদস্যদের দিয়ে একটি বোর্ড সভা করেন। এই বোর্ড সভা করে আর্টিকল অফ অ্যাসোসিয়েশন পরিবর্তন করেন। অথচ এই আর্টিকল অফ অ্যাসোসিয়েশন পরিবর্তন করতে গেছে গ্রামীণ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে। কারণ গ্রামীণ ব্যাংকের ৪২ তম বোর্ড সভায় এই আর্টিকল অফ অ্যাসোসিয়েশন অনুমোদিত হয়েছিল। গ্রামীণ ব্যাংক একমাত্র সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা রাখে আইন অনুযায়ী যে গ্রামীণ ব্যাংক তার প্রতিনিধি গ্রামীণ কল্যাণে থাকবে কিনা। গ্রামীণ কল্যাণকে যদি ছেড়ে দিতে হয় তাহলে গ্রামীণ ব্যাংকের বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ড. ইউনূস এই সিদ্ধান্ত নেয়ার কোন এখতিয়ার রাখে না। এটি হল এক অদ্ভুত জালিয়াতি এবং প্রতারণা। এটি রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাতের এক ভয়ঙ্কর ঘটনা। ড. ইউনূসের নিয়ন্ত্রণে থাকা গ্রামীণ কল্যাণ কেবল অবৈধ ভাবেই ছিল না বরং ড. ইউনূস রাষ্ট্রীয় সম্পদ কুক্ষিগত করেছিলেন, প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং এজন্য তার বিরুদ্ধে অনতিবিলম্বে প্রতারণার মামলা হওয়া উচিত বলে মনে করেন আইনজ্ঞ বিশেষজ্ঞ।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস  


মন্তব্য করুন


ইনসাইডার এক্সক্লুসিভ

কোকোর সম্পত্তি তারেকের কুক্ষিগত: মামলা করবেন সিঁথি

প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ২৮ জানুয়ারী, ২০২৪


Thumbnail

আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুবার্ষিকী যখন পালিত হচ্ছে, ঠিক সেই সময় জিয়া পরিবারের সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিয়ে চলছে তুমুল গণ্ডগোল। বিশেষ করে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর সব সম্পত্তি আত্মসাৎ করেছেন লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া। এই অভিযোগে সিঁথি তার আইনজীবীর মাধ্যমে একটি আইনগত নোটিশ পাঠিয়েছেন তারেক জিয়ার কাছে। 

এর আগে সিঁথি ঢাকায় এসেছিলেন। বেগম খালেদা জিয়ার কাছে এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু খালেদা জিয়া সেই সময় ছিলেন অসুস্থ। সে কারণে তিনি এ ব্যাপারে কোন সুরাহা দিতে পারেননি। তাছাড়া এই সম্পত্তির বিষয় সম্পর্কে বেগম খালেদা জিয়াও ততটা অবহিত নন।

একাধিক সূত্র বলছে, বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় যান আরাফাত রহমান কোকো এবং মালয়েশিয়া তার বিপুল পরিমাণ অর্থ সম্পদ ছিল। দেশে বিভিন্ন দুর্নীতি এবং অনিয়মের মাধ্যমে যে সম্পদ করেছিলেন তার একটি বড় অংশই প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকো পাঠিয়েছিলেন মালয়েশিয়ায়। সেখানে মালয়েশিয়া বিএনপির সভাপতির মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন ব্যবসায় সেই টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। মালয়েশিয়া ছাড়াও সিঙ্গাপুরে আরাফাত রহমান কোকোর বেশ কিছু বিনিয়োগ ছিল। এই বিনিয়োগের পরিমাণ বাংলাদেশি টাকায় এক হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি বলে জানা গেছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মালয়েশিয়ায় আরাফাতের একটি ট্র্যাভেল এজেন্সি, দুটি অ্যাপার্টমেন্ট, পাঁচটি দোকান এবং আরও কিছু সম্পদ রয়েছে। এই সম্পদগুলো কোকো মারা যাওয়ার পর কিছুদিন বিএনপির মালয়েশিয়ায় থাকা ওই নেতার হেফাজতে ছিল। এই সময় কোকোর স্ত্রী শর্মিলা সিঁথি সম্পত্তিগুলো নিজের নামে নেওয়ার জন্য চেষ্টা তদবির করেন। কিন্তু এসময় তারেক জিয়া কোকোর সন্তানদের উচ্চশিক্ষার কথা বলে তাকে লন্ডনে নিয়ে আসেন এবং সিঁথি লন্ডনে আসার পর তারেক মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত বিএনপি নেতাদের মাধ্যমে ঐ সম্পদগুলো গ্রহণ করেন। এর বিনিময়ে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বিএনপির ওই নেতাকে ২০১৮ নির্বাচনে মনোনয়নও দিয়েছিলেন তারেক। এরপর সিঁথি যখন সম্পত্তিগুলোর অধিকার চান এবং সম্পত্তিগুলোর হালহকিকত জানতে চান তখন তারেক জিয়া বলেন, এগুলো সব বিক্রি করার প্রক্রিয়া চলছে। বিক্রি হলে সম্পত্তি বিক্রির টাকা সিঁথিকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে এবং সিঁথি যেন বাকি জীবন সন্তানদের ভরণপোষণ এই টাকা দিয়ে করতে পারেন সেজন্য এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। সিঁথি প্রথম এই বিষয়টি মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু বছরের পর বছর চলে গেলেও সিঁথিকে কোন টাকা দেওয়া হয়নি। বরং একটা পর্যায়ে তারেক সিঁথির জন্য যে ভরণপোষণের খরচ দিতেন সেই খরচও বন্ধ করে দেন।

লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়ার এই সিদ্ধান্তের পর বেগম খালেদা জিয়ার অনুরোধে ২০১৬ সাল থেকে সিঁথির যাবতীয় ভরণপোষণের ব্যবস্থা করছেন সৌদি আরবে পলাতক মোসাদ্দেক আলী ফালু। ফালু কোকোর ব্যবসায়িক পার্টনার ছিলেন। সেই সূত্রে বিভিন্ন ব্যবসা থেকে যে লভ্যাংশের টাকা সিঁথিকে পাঠানো হয় এবং সেটি দিয়ে সিঁথি চলেন।

সাম্প্রতিক সময়ে গত সিঁথি তার প্রয়াত স্বামীর সম্পত্তি পাওয়ার জন্য দেন দরবার করেন। এরপর তিনি লন্ডনে অবস্থানরত একজন আইনজীবীর মাধ্যমে তারেক জিয়াকে একটি উকিল নোটিশ পাঠান। কিন্তু তারেক জিয়া এই উকিল নোটিশের কোন জবাব দেননি। এরপর সিঁথি ঢাকায় আসেন, বিষয়টি বেগম খালেদা জিয়াকে জানানোর। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়াও বিষয়টির কোন সুরাহা করতে পারেনি।

জানা গেছে, সিঁথি এই বিষয়টি নিয়ে খুব শিগিগির আইনের আশ্রয় নিবেন এবং এই মালয়েশিয়া আদালতে তিনি আইনী লড়াইয়ে অবতীর্ণ হবেন। এজন্য একজন আইনজীবীরও শরণাপন্ন হয়েছে সিঁথি এমন তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

শর্মিলা রহমান সিঁথি   বিএনপি   খালেদা জিয়া   তারেক জিয়া  


মন্তব্য করুন


ইনসাইডার এক্সক্লুসিভ

দলের নেতৃত্ব ছেড়ে উপদেষ্টা পদ নিতে পারেন তারেক

প্রকাশ: ১১:০০ পিএম, ২৫ জানুয়ারী, ২০২৪


Thumbnail

৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর তারেক জিয়ার কর্তৃত্ব এখন চ্যালেঞ্জের মুখে। দেশে বিদেশে তারেক জিয়ার নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একই ভাবে প্রশ্ন উঠেছে কিভাবে বিএনপিকে পুনর্গঠন করা যায়? বিশেষ করে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের জন্য বিএনপির খোলনলচে পাল্টে ফেলার দাবি উঠেছে দলের ভিতর থেকেই। 

নির্বাচনের আগ পর্যন্ত তারেক জিয়ার প্রশংসায় যারা পঞ্চমুখ ছিলেন তারাই এখন তারেক জিয়ার নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। বিশেষ করে বিদেশে থেকে দল পরিচালনা করা যায় কিনা এই প্রসঙ্গটি উঠেছে। একই ভাবে বিদেশি কূটনীতিকরা বলছেন, একজন দণ্ডিত ব্যক্তি এবং যিনি দেশে অবস্থান করছেন না, তিনি যদি দলের নির্বাহী প্রধান হন তাহলে সেই দল পরিচালনা করা কতটুকু গণতান্ত্রিক এবং কতটুকু শোভন। আর এই সমস্ত প্রেক্ষাপটে তারেক জিয়ার বিএনপিতে অবস্থান নড়বড়ে হয়ে গেছে। তিনি এখন বিএনপির জন্য একটি দায়ে পরিণত হয়েছে। এ নিয়ে বিএনপির নীতি নির্ধারক মহলে কথাবার্তা হচ্ছে এবং আলাপ আলোচনা হচ্ছে। তারেক জিয়া নিজেও গতকাল বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে দলের স্বার্থে প্রয়োজনে সরে যাওয়ার কথা বলেছেন। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

গতকাল রাতে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মিলিত হয়েছিলেন লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া। তিনি সেখানে তার নিজের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেছেন। বিদেশ থেকে তিনি বাংলাদেশের অনেক বাস্তবতা বোঝেননি। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের পরে যে আচরণ করছেন তাতেও তারেক জিয়া হতাশা প্রকাশ করেছেন বলে একাধিক বিএনপি নেতা জানিয়েছেন। আর এরকম বাস্তবতার সাময়িক সময়ের জন্য হলেও বা দেশে না ফেরা পর্যন্ত সময়ে তিনি নেতৃত্ব যিনি বাংলাদেশে আছেন এ রকম কারও হাতে তুলে দিতে চান।

উল্লেখ্য, এই বৈঠকে বিএনপি নেতারা বলেছেন, যেহেতু এখনও দলের শীর্ষ তিনজন নেতা কারা অন্তরীণ আছেন, কাজেই এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তাদের মুক্তি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস এবং আমীর খসরু মাহমুদের জামিনের আবেদন গুলো এখন প্রক্রিয়াধীন আছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং আমীর খসরু মাহমুদের একটি মামলায় জামিন শুনানি বাকি আছে। সেখানেও তারা জামিন পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। আর এই জামিন পেলে স্থায়ী কমিটির সকল সদস্যকে নিয়ে তারেক জিয়া এ ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত নেবেন। 

তারেক জিয়ার ঘনিষ্ঠ একজন তরুণ নেতা বলেছেন, তিনি আপাতত দায়িত্ব ছাড়তে চাচ্ছেন। বিএনপির তিনি কোন আলঙ্কারিক পদ উপদেষ্টা বা প্রধান উপদেষ্টা এ রকম কোন দায়িত্ব গ্রহণ করতে চাইছেন। 

মূল বিষয়টা হচ্ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার গ্রহণযোগ্যতা সংকট রয়েছে। বিশেষ করে বিদেশি কূটনীতিকরা তার সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন। নির্বাচনের পর তারেক জিয়া একাধিক কূটনীতিকের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ নিয়ে আলাপ করতে চাইলেও তারা এড়িয়ে গেছেন। তাছাড়া লন্ডনে অবস্থানরত এই দণ্ডিত নেতা এখন বুঝতে পেরেছেন তিনি যে কৌশলগুলো প্রয়োগ করছেন সেই কৌশলগুলো কার্যত ব্যথ। এই সমস্ত কৌশল দিয়ে আন্দোলন করা যাবে না। আর বাস্তবতা হলো ভারত সহ প্রভাবশালী দেশগুলো বিএনপিকে গণতান্ত্রিক ধারায় সম্পৃক্ত হতে তারেক জিয়ার নেতৃত্বকে বাদ দেওয়া পরামর্শ দিচ্ছেন। এই প্রেক্ষিতে বিএনপিতে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে নাটকীয় ঘটনা ঘটেতে পারে। বিএনপির নেতৃত্বে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে এবং সেক্ষেত্রে তারেক জিয়া হয়তো ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পদ থেকে বিএনপির উপদেষ্টা হবেন। আর আনুষ্ঠানিক ভাবে দলের জন্য একজন কার্যকর নেতা নির্বাচন করা হবে। আর এটি যদি করা হয় তাহলে হবে বিএনপির জন্য একটি বড় চমক।

বিএনপি   তারেক জিয়া   রাজনীতির খবর  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন