ইনসাইডার এক্সক্লুসিভ

ড. মুহাম্মদ ইউনূস : মুখোশের আড়ালে আসল মানুষটি!

প্রকাশ: ০৪:১৬ পিএম, ০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩


Thumbnail ড. মুহাম্মদ ইউনূস : মুখোশের আড়ালে আসল মানুষটি!

বাংলাদেশের প্রথম নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ১৯৭৬ সালে তিনি গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। যার মাধ্যমে তিনি এবং গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির পর থেকেই মুহম্মদ ইউনূস বিভিন্ন বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। ২০০৬ সালে তিনি নিজে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। ওয়ান ইলেভেন আনার পেছনেও তার একটি ভূমিকা আছে বলে অনেকে মনে করেন। কিন্তু বর্তমানে তিনি একাধিক ফৌজদারী আইনী জটিলতায় পড়েছেন। তার বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘন ও দুর্নীতির বেশ কয়েকটি মামলা চলমান রয়েছে। নিজে দুর্নীতির দায় থেকে বাঁচার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে বিবৃতি সংগ্রহ করেছেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে ইতিমধ্যে বিশ্বের নোবেল বিজয়ী বিভিন্ন ব্যক্তি এবং নেতারা তার বিচার কার্যক্রম স্থগিত করার জন্য বিবৃতি দিয়েছেন। তার বিচার স্থগিতের জন্য প্রভাবশালী অন্তর্জাতিক মহল থেকে সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। কিন্তু বিশ্বের সেই খ্যাতিমান ব্যক্তি এবং নেতারা জানেন কি মুখোশের অন্তরালের মানুষটিকে? 

অন্তরালের অন্তর্নিহিত বার্তা  

ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দেশের সমস্যা নিয়ে তিনি নীরব। দেশের কোন সংকটে, উৎসবে তিনি থাকেন না। ব্যক্তি স্বার্থে বিদেশে তিনি সরব। ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে দারিদ্রকে জাদুঘরে পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। দারিদ্র জাদুঘরে যায়নি বটে, তবে তিনি অর্থ, বিত্ত-বৈভবের জাদু দেখিয়েছেন। এখন ‘সামাজিক ব্যবসার’ আওয়াজ তুলে বিশ্বে বক্তৃতা দিচ্ছেন। সামাজিক ব্যবসা প্রবর্তন হোক না হোক তার বিত্তের প্রসার ঘটেছে। এখন শিক্ষক থেকে তিনি হয়ে উঠেছেন বিলিয়নিয়ার। কিন্তু তার এই বিত্ত বেড়ে ওঠেছে গরীবের সম্পদ লুটে; সরকারকে ঠকিয়ে; রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ করে। 

ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পেশাগত জীবনে অর্থনীতিবিদ হলেও নোবেল বানিয়ে নিয়েছেন শান্তিতে। অর্থনীতিবিদ কিভাবে শান্তিতে নোবেল পেলেন সেটাও ভাবার বিষয়। নোবেল বিজয়ী হিসেবে বিদেশে বক্তৃতা করে পান কোটি কোটি টাকা। কিন্তু প্রশ্ন ওঠেছে, দেশ এবং জাতির জন্য তিনি কি করেছেন? জোবরা গ্রামে গবেষণা শুরু করেছিলেন ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম নিয়ে। এক সময় এই দরিদ্র, হতদরিদ্র মানুষদের স্বাবলম্বী করে তোলার কথা বলে দারস্থ হয়েছিলেন বাংলাদেশ সরকারের কাছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রস্তাবেই এরশাদ সরকার গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে। ড. ইউনূস সেখানে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের চাকরি নেন। ১৯৮৩ সালে এটি একটি বৈধ এবং স্বতন্ত্র ব্যাংক হিসেবে যাত্রা শুরু করে। সরকার গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে একটি আইনের মাধ্যমে এবং সেখানে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় ড.  মুহাম্মদ ইউনূসকে। 

১৯৮৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সরকার গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ নামে একটি অধ্যাদেশ (অধ্যাদেশ নম্বর-৪৬) জারি করে। সে সময়ে গ্রামীণ ব্যাংক শুরু হয় মাত্র তিন কোটি টাকা মূলধন দিয়ে। এর মধ্যে বেশিরভাগ টাকা অর্থাৎ ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা ছিল সরকারের এবং ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ছিল ঋণ গ্রহীতাদের। অর্থাৎ গ্রামীণ ব্যাংকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যক্তিগত কোনো টাকা ছিল না। অথচ গ্রামীণ ব্যাংককে ব্যবহার করেই ড. ইউনূস পেয়েছেন সবকিছু। কাগজে কলমে গ্রামীণ ব্যাংকের মালিক সরকার এবং ঋণ গ্রহীতা জনগণ। কিন্তু ‘অসাধারণ’ মেধায় রাষ্ট্র ও জনগণের অর্থ ড. ইউনূস পুরে ফেলেন তার পকেটে। গ্রামীণ ব্যাংকের টাকায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস গড়ে তুলেছেন তার নিয়ন্ত্রণাধীন ২৮টি প্রতিষ্ঠান এবং গ্রামীণ ব্যাংক তথা সরকারের টাকা আত্মসাৎ করে তিনি এখন হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। 

গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দাতা গোষ্ঠী অনুদান এবং ঋণ দেয় গ্রামীণ ব্যাংককে। অনুদানের সব অর্থ যদি রাষ্ট্র এবং জনগণের কাছে যায় তাহলে ড. ইউনূসের লাভ কি? তাই দাতাদের অনুদানের অর্থ দিয়ে গঠন করলেন সোশাল ভেনচার ক্যাপিটাল ফান্ড (এসভিসিএফ)। ১৯৯২ সালের ৭ অক্টোরব ঐ ফান্ড দিয়ে আলাদা একটি প্রতিষ্ঠান গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯৯৪ সালে ‘গ্রামীণ ফান্ড’ নামের একটি লিমিটেড কোম্পানী গঠন করা হয়। তাতে ঐ ফান্ডের ৪৯ দশমিক ১০ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়। গ্রামীণ ব্যাংক দেখিয়ে বিদেশ থেকে টাকা এনে তা সরিয়ে ফেলার চেষ্টা ছিলো শুরু থেকেই। গ্রামীণ ব্যাংক সরকারি প্রতিষ্ঠান হলেও ড. ইউনূস- এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে সব সিদ্ধান্ত একাই নিতেন। পরিচালনা পর্ষদ এমনভাবে গঠন করা হয়েছিল, যাতে কেউ ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে কথা না বলেন। ড. ইউনূস এই সুযোগটি কাজে লাগান। ১৯৯৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর গ্রামীণ ব্যাংকের ৩৪ তম বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়। ঐ সভায় সিদ্ধান্ত হয় দাতা গোষ্ঠীর অনুদানের অর্থ এবং ঋণ দিয়ে সোশাল এডভান্সমেন্ট ফান্ড (এসএএফ) গঠন করা হয়। কিন্তু দাতারা গ্রামীণ ব্যাংক থেকে এভাবে অর্থ সরিয়ে ফেলার আপত্তি জানায়। দাতারা সাফ সাজিয়ে দেন, এভাবে অর্থ স্থানান্তর জালিয়াতি। এবার ভিন্ন কৌশল গ্রহণ করেন ড. ইউনূস। আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়ে তিনি জানান এটি একটি ভুল সিদ্ধান্ত। ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন বলে অঙ্গীকার করেন তিনি। পরে ২৫ এপ্রিল, ১৯৯৬ সালে তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের বোর্ড সভায় ‘গ্রামীণ কল্যাণ’ গঠনের প্রস্তাব আনেন। 

প্রস্তাবে বলা হয়, গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য ও কর্মীদের কল্যাণে ‘কোম্পানী আইন ১৯৯৪’ এর আওতায় ‘গ্রামীণ কল্যাণ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করা হলো। গ্রামীণ ব্যাংকের বোর্ড সভা এই প্রস্তাব অনুমোদন করে। এটি গ্রামীণ ব্যাংকেরই অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। ‘গ্রামীণ কল্যাণ’ যে গ্রামীণ ব্যাংকেরই শাখা প্রতিষ্ঠান, তা আরও স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় এর মূলধন গঠন প্রক্রিয়ায়। গ্রামীণ কল্যাণ-এ গ্রামীণ ব্যাংকের সোশাল এডভ্যান্সমেন্ট ফান্ড (এসএএফ) থেকে ৬৯ কোটি টাকা প্রদান করা হয়। গ্রামীণ কল্যাণের মেমোরেন্ডাম অব আর্টিকেলেও গ্রামীণ ব্যাংকের সাথে এর সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মেলে। মেমোরেন্ডাম আব আর্টিকেল অনুযায়ী গ্রামীণ কল্যাণের ৯ সদস্যের পরিচালনা পরিষদের ২ জন সদস্য হবেন গ্রামীণ ব্যাংকের মনোনীত প্রতিনিধি। এছাড়াও গ্রামীণ কল্যাণের চেয়ারম্যান হবেন গ্রামীণ ব্যাংকের মনোনীত প্রতিনিধি। গ্রামীণ ব্যাংকের মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে ড. ইউনূস গ্রামীণ কল্যাণের চেয়ারম্যান হন। এরপরে ‘গ্রামীণ কল্যাণ’ হয়ে ওঠে ড. ইউনূসের ‘সোনার ডিম পাঁড়া রাঁজহাস’। গ্রামীণ কল্যাণের মাধ্যমে তিনি গড়ে তোলেন একাধিক প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানগুলো হলো:-

১.গ্রামীণ টেলিকম লি: ২. গ্রামীণ ডিস্ট্রিবিউশন লি: ৩. গ্রামীণ শিক্ষা ৪. গ্রামীণ নিটওয়্যার লি: ৫. গ্রামীণ ব্যবস্থা বিকাশ ৬. গ্রামীণ আইটি পার্ক ৭. গ্রামীণ ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট ৮. গ্রামীণ সলিউশন লি: ৯. গ্রামীণ ডানোন ফুডস: লি: ১০. গ্রামীণ হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস লি: ১১. গ্রামীণ স্টার এডুকেশন লি: ১২. গ্রামীণ ফেব্রিক্স এ্যান্ড ফ্যাশন লি: ১৩. গ্রামীণ কৃষি ফাউন্ডেশন। 

অন্যদিকে, গ্রামীণ কল্যাণের আদলে প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ফান্ডের মাধ্যমে গঠন করা হয় আরো কিছু প্রতিষ্ঠন। এগুলো হল:-

১.গ্রামীণ ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লি: ২. গ্রামীণ সল্যুশন লি: ৩. গ্রামীণ উদ্যোগ ৪. গ্রামীণ আইটেক লি: ৫. গ্রামীণ সাইবারনেট লি: ৬. গ্রামীণ নিটওয়্যার লি: ৭. গ্রামীণ আইটি পার্ক ৮. টিউলিপ ডেইরী এ্যান্ড প্রোডাক্ট লি: ৯. গ্লোব কিডস ডিজিটাল লি: ১০. গ্রামীণ বাইটেক লি: ১১. গ্রামীণ সাইবার নেট লি: ১২. গ্রামীণ স্টার এডুকেশন লি: ১২. রফিক আটোভ্যান মানুফ্যাকটার লি: ১৩. গ্রামীণ ইনফরমেশন হাইওয়ে লি: ১৪. গ্রামীণ ব্যবস্থা সেবা লি: ১৫. গ্রামীণ সামগ্রী।

মজার ব্যাপার হলো গ্রামীণ ব্যাংকের অর্থে এবং বোর্ড সভার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ‘গ্রামীণ কল্যাণ’ এবং ‘গ্রামীণ ফান্ড’ গঠিত হয়। এই দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যে প্রতিষ্ঠানগুলো গঠিত হয়েছে- তা সবই আইনত গ্রামীণ ব্যাংকের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ২০২০ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ ফান্ড এবং গ্রামীণ কল্যাণের পরিচালনা পর্ষদে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিনিধি থাকলেও ২০২১ সাল থেকে এই প্রতিষ্ঠান দুটিতে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিনিধি নেই। গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ দু’টি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হবেন গ্রামীণ ব্যাংকের মনোনীত ব্যক্তি। কিন্তু ড. মুহাম্মদ ইউনূস এখনও গ্রামীণ কল্যাণ এবং গ্রামীণ ফান্ডের চেয়ারম্যান পদে বহাল আছেন। প্রশ্ন হলো; কোন কর্তৃত্ব বলে তিনি এখনও চেয়ারম্যান? এক্ষেত্রে গ্রামীণ ব্যাংকের নীরবতাও এক রহস্য। ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব থেকে অবসরে গেলেও ব্যাংকটি নিয়ন্ত্রণ করছে তার অনুগতরাই। একারণেই তাদের নীরবতা। গ্রামীণ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের রহস্যময় আচরণের কারণেই গ্রামীণ ব্যাংকের অর্থে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকানা বঞ্চিত রাষ্ট্র ও জনগণ। রাষ্ট্রের অর্থ দিয়ে ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার এ এক অদ্ভুদ জালিয়াতি। রাষ্ট্রীয় সম্পদের টাকা দিয়ে ব্যক্তিগত কোম্পানী গঠন রাষ্ট্রের সাথে ভয়ংকর প্রতারণা।

লাভে গ্রামীণ টেলিকম এবং বাকি সব লোকসানী প্রতিষ্ঠান কেন? 

‘গ্রামীণ কল্যাণ’ এবং ‘গ্রামীণ ফান্ড’র মাধ্যমে গঠিত ২৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একমাত্র গ্রামীণ টেলিকম ছাড়া আর সব প্রতিষ্ঠানই লোকসানী। গ্রামীণ টেলিকম দেশের সর্ববৃহৎ মোবাইল নেটওয়ার্ক ‘গ্রামীণ ফোন’র ৩৪ দশমিক দুই শতাংশ শেয়ারের মালিক। ২০২২ সালে গ্রামীণ ফোন ট্যাক্স, ভ্যাট দেয়ার পর নীট মুনাফা করেছে তিন হাজার নয় কোটি ষোল লাখ টাকা। অর্থাৎ গ্রামীণ ফোন থেকে গ্রামীণ টেলিকম প্রতিবছর নীট মুনাফা পায় এক হাজার কোটি টাকার বেশি। গ্রামীণ ফোনের লভ্যাংশ নয়-ছয় করা ছাড়া গ্রামীণ টেলিকমের আর কোন কাজ নেই। এই টাকা দিয়ে ড. ইউনূসের ২৮টি হায় হায় কোম্পানী প্রতিপালন করা হয়। গ্রামীণ টেলিকমের লাভের টাকার একটি অংশ যায় গ্রামীণ কল্যাণে। গ্রামীণ কল্যাণের মাধ্যমে বাকি নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা হয়। এই সব প্রতিষ্ঠানই লোকসানী প্রতিষ্ঠান। প্রশ্ন হলো; লোকসান দিয়ে বছরের পর বছর এই প্রতিষ্ঠানগুলো চলবে কেন? একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, গ্রামীণ ব্যাংক থেকে টাকা সরিয়ে গ্রামীণ কল্যাণের মাধ্যমে যে প্রতিষ্ঠানগুলো গঠন করা হয়েছে; তার সবগুলোর চেয়ারম্যান ড. ইউনূস। আর এই প্রতিষ্ঠানগুলোর এমডি পদে নিয়োগ দেয়া হয় ড. ইউনূসের একান্ত অনুগত এবং বিশ্বস্তদের। এরা গাড়ী পান, মোটা অংকের বেতন পান এবং ড. ইউনূসের কথা অনুযায়ী কাজ করেন। এটা এক ধরনের উৎকোচ। এই প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিষ্ঠার এক বড় কার্যক্রম হলো গ্রামীণ টেলিকমের লাভের টাকা আত্মসাৎ করা এবং আয়কর ফাঁকি। 

এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমেই ড. ইউনূস আসলে অর্থপাচার করেন। গ্রামীণ টেলিকমের টাকাকে হাতবদল করে করে অর্থ পাচারের পথ তৈরী করা হয়। গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানি আইন ১৯৯৪- এর ধারা ২৮ এবং ২৯ এর বিধান লঙ্ঘন করে গ্রামীণ ফোন লিমিটেড থেকে গ্রামীণ কল্যাণকে তার লভ্যাংশ আয়ের ৪২.৬% বিতরণ করে আসছে। যদিও ‘গ্রামীণ কল্যাণ’ গ্রামীণ ফোন লিমিটেডের শেয়ারহোল্ডার নয়। আইন অনুযায়ী, গ্রামীণ টেলিকমের সমগ্র লভ্যাংশ আয়কে এর আয় হিসেবে ভোগ করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট আর্থিক বছরের জন্য প্রযোজ্য করপোরেট হারে কর দিতে হবে। কিন্তু তাদের নিরীক্ষিত হিসাব পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তারা গ্রামীণ টেলিকম থেকে গ্রামীণ কল্যাণকে তাদের লভ্যাংশ আয়ের প্রায় অর্ধেক প্রদান করেছে শুধুমাত্র অগ্রিম আয়কর (এআইটি) ১০-২০% হারে। অথচ আইন অনুযায়ী তাদের জন্য প্রযোজ্য করপোরেট করের হার ছিল ৩৫% থেকে ৩৭.৫% পর্যন্ত।

এই করপোরেট রেট এবং ডিভিডেন্ট ট্যাক্সের পার্থক্য কর ফাঁকি। কারণ গ্রামীণ কল্যাণ প্রচলিত আইন অনুযায়ী কোনভাবেই গ্রামীণ টেলিকমের লভ্যাংশ আয়ের অধিকারী নয়। গ্রামীণ টেলিকম শুরু থেকে যে সকল কর ফাঁকি দিয়েছে সেগুলো যোগ করলে- এর পরিমান দাঁড়ায় প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। এই কর ফাঁকির হিসাব শুধুমাত্র গ্রামীণ টেলিকমের। ড. ইউনূসের নিয়ন্ত্রিত অন্যান্য কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠান এবং তার ব্যক্তিগত আয়করের ক্ষেত্রেও ব্যাপকভাবে কর ফাাঁকির ঘটনা অনেকটা স্বাভাবিক নিয়মের মতোই বহু বছর ধরে ঘটেছে। ড. ইউনূস নিয়ন্ত্রিত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কর ফাঁকির ঘটনাগুলো হিসাব করলে এই পরিমাণ দাঁড়াবে বিশাল অংকের।

গ্রামীণ টেলিকমের ২৬ বছরের কার্যক্রম চলাকালীন প্রায় এক হাজার কোটি টাকার কর ফাঁকি দেওয়া হয়। এই দীর্ঘ সময়ে ড. ইউনূস প্রতিবছর শতকরা ১৫ থেকে ২৫ ভাগ পর্যন্ত কর ফাঁকি দিয়ে আসছেন। ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর গ্রামীণ টেলিকমে ড. ইউনূস ২৫% কর ফাঁকি দিয়েছেন। ওই সময়ে কর ছিল ৩৫%, প্রদান করেছিলেন মাত্র ১০%। ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানে ড. ইউনূস কর ফাঁকি দিয়েছেন বছরে ২০%। ওই সময়ে কর ছিল ৩৫%, প্রদান করেছিলেন মাত্র ১৫%। ২০০৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ড. ইউনূস নিয়ন্ত্রিত গ্রামীণ টেলিকমে প্রতিবছর ১৫% কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে কর ছিল ৩৫%, আর প্রদান করেছিলেন মাত্র ২০%। 

এটি লক্ষণীয়, ড. ইউনূস তার কর ফাঁকির বিষয়গুলো ধামাচাপা দিতে দেশের আদালতে বেশ কিছু মামলা ও রিট পিটিশন দায়ের করেন। এ সকল মামলা ও রিটের উদ্দেশ্য হচ্ছে কর ফাঁকি সংক্রান্ত বিষয়ে ড. ইউনূসকে যেন আইনের মুখোমুখি হতে না হয়। ড. ইউনূসের কর সংক্রান্ত প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার কর ফাঁকির বিষয়গুলো দালিলিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। ড. ইউনূসের কর ফাঁকির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের দ্বারা পরিচালিত তদন্তে এটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, ড. ইউনূস নিজে এবং তার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলো তার নির্দেশনাতেই কর ফাঁকির অপরাধে জড়িত। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে সম্প্রতি তিনি ১২ কোটির টাকার বেশি দান কর পরিশোধ করেন। 

অস্বচ্ছ ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট, জালিয়াতি এবং অর্থপাচার

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে তিনটি। এই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তিনটি হলো যথাক্রমে:- ১. সাউথ ইস্ট ব্যাংক, (অ্যাকাউন্ট নাম্বার-০২১২১০০০২০০৬১), ২. স্ট্যান্ডার্ট চার্টড ব্যাংক, (অ্যাকাউন্ট নাম্বার- ১৮১২১২৭৪৭০১) এবং ৩. রুপালি ব্যাংক, (অ্যাকাউন্ট নাম্বার-০৪৮৯০১০০০৮০৯৬)। এই তিনটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মধ্যে ২০০০ সালে খোলা সাউথ ইস্ট ব্যাংকের অ্যাকাউন্টটি (অ্যাকাউন্ট নাম্বার-০২১২১০০০২০০৬১) তার মূল ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হিসেবেই প্রতীয়মান হয়েছে। এই অ্যাকাউন্টে ২০০০ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১শ’ ১৮ কোটি ২৭ লক্ষ ৭৬ হাজার ৩শ’ ৬৮ টাকা রেমিটেন্স এসেছে। এই রেমিটেন্সের বেশিরভাগ ৪৭ কোটি ৮৯ লাখ ৯৬ হাজার ৬শ’ ৫২ টাকা এসেছে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে। সেই সময়েই একটি রাজনৈতিক দল গঠনেরও প্রয়াস করেছিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাহলে কি রাজনৈতিক দল গঠনের জন্য বিদেশি বন্ধুরা ড. ইউনূসকে টাকা দিয়েছিল? বিদেশ থেকে টাকা এনে রাজনৈতিক দল করতে চেয়েছিলেন ইউনূস?  

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ট্যাক্স ফাইল বিশ্লেষণে ওঠে এসেছে, ২০০৩ সালের পরে নোবেল বিজয়ীর তকমাধারী ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার ট্যাক্স ফাইলে ২০০৫-০৬ কর বছরে তিনি সর্বমোট ৯৭ কোটি ৪ লাখ ৬১ হাজার ১৯১ টাকা রেমিটেন্স প্রাপ্তির কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু ওই সময়ে তার ব্যক্তিগত সাউথ ইস্ট ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে রেমিটেন্স প্রাপ্তির পরিমাণ ১১৫ কোটি ৯৮ লাখ ৯৬ হাজার ২৪ টাকা। অর্থাৎ ওই সময়ে তিনি ১৮ কোটি ৯৪ লাখ ৩৪ হাজার ৮শ’ ৩৫ টাকার রেমিটেন্স প্রাপ্তির তথ্য সরকারকে কর ফাঁকি দেওয়ার লক্ষ্যে তার ব্যক্তিগত ট্যাক্স ফাইলে গোপন করেছেন। এটি স্পষ্ট অর্থপাচারের দোষে দুষ্ট। 

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টের ডেবিট অ্যানালাইসিসে ওঠে এসেছে, অপ্রদর্শিত অর্থ সমূহের মূল অংশ তিনি সাউথ ইস্ট ব্যাংকের অন্য দু’টি অ্যাকাউন্ট, সাউথ ইস্ট ব্যাংকের ১৫ নম্বর ব্রাঞ্চের ট্র্যাভেল ইন্টারন্যাশনাল লিঃ নামের (অ্যাকাউন্ট নম্বর- ৭৩৩০০০০০৩৩৩৯) ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১১ কোটি ১৪ লাখ ৩১ হাজার ৭শ’ ৬৭ টাকা এবং ০০৩৫ নম্বর ব্রাঞ্চের (অ্যাকাউন্ট নম্বর-৯০৩০৩১৬০৯১০) ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২ কোটি ৫২ লাখ টাকা স্থানান্তর করেছেন। অর্থপাচারের জন্যই এভাবে টাকা এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকে স্থানান্তর করা হয়। 

সরকারকে কর ফাঁকি দেওয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন কর বছরে তিনি তার ব্যক্তিগত ট্যাক্স ফাইলে নিজস্ব সাউথ ইস্ট ব্যাংকে প্রাপ্ত বিপুল পরিমাণ রেমিটেন্সের তথ্য গোপন করেছেন। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে তিনি রেমিটেন্স প্রাপ্ত হয়েছেন ১৫ কেটি ১১ লাখ ৩১ হাজার ৪৭ টাকা। কিন্তু তিনি তার ট্যাক্স ফাইলে প্রদর্শন করেছেন ৯ কোটি ১৪ লাখ ৫৮ হাজার ৪শ’ ৮৯ টাকা। ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট এবং ট্যাক্স বা কর ফাইলের সাথে এখানে পার্থক্য রয়েছে ৫ কোটি ৯৬ লাখ ৭২ হাজার ৫শ’ ৫৯ টাকা। ২০০৮-০৯ কর বছরে তিনি রেমিটেন্স প্রাপ্ত হয়েছেন ১১ কোটি ৮৩ লাখ ১৪ হাজার ৪শ’ ১০ টাকা। অথচ তিনি তার ট্যাক্স ফাইলে উল্লেখ করেছেন ১০ কোটি ৪০ লাখ ২৪ হাজার ৮শ’ ৩২ টাকা। এখানে তিনি ১ কোটি ৪২ লাখ ৮৯ হাজার ৫শ’ ৭৮ টাকার তথ্য গোপন করেছেন। ২০০৯-১০ কর বছরে তিনি রেমিটেন্স প্রাপ্ত হয়েছেন ২০ কোটি ৯৫ লাখ ৫১ হাজার ১শ’ ৯৫ টাকা। তিনি তার ট্যাক্স ফাইলে উল্লেখ করেছেন ১৮ কোটি ৯৯ লাখ ২৮ হাজার ৭শ’ ৩১ টাকা। এখানে তিনি ১ কোটি ৯৬ লাখ ২২ হাজার ৪শ’ ৬৫ টাকার তথ্য গোপন করেছেন। ২০১০-১১ কর বছরে তিনি রেমিটেন্স প্রাপ্ত হয়েছেন ৮ কোটি ১৮ লাখ ৬৫ হাজার ২শ’ ৪ টাকা। অথচ তার ট্যাক্স ফাইলে উল্লেখ করেছেন ৬ কোটি ৬০ লাখ ৪৪ হাজার ৯২ টাকা। এখানে তিনি ১ কোটি ৫৮ লাখ ২১ হাজার ১শ’ ১২ টাকার তথ্য গোপন করেছেন। ২০১১-১২ কর বছরে তিনি রেমিটেন্স প্রাপ্ত হয়েছেন ৫ কোটি ৯১ লাখ ৫ হাজার ৫শ’ ৮৬ টাকা। আর ট্যাক্স ফাইলে উল্লেখ করেছেন ৪ কোটি ৬৫ লাখ ৩৬ হাজার ৫শ’ ৭২ টাকা। এখানে তিনি ১ কোটি ২৫ লাখ ৬৯ হাজার ১৪ টাকার তথ্য গোপন করেছেন। ২০১২-১৩ কর বছরে তিনি রেমিটেন্স প্রাপ্ত হয়েছেন ৮ কোটি ৩৭ লাখ ২ হাজার ৭৭ টাকা। তিনি তার ট্যাক্স ফাইলে উল্লেখ করেছেন ৬ কোটি ৫০ লাখ ৬৬ হাজার ৬শ’ ৬৫ টাকা। এখানে তিনি ১ কোটি ৮৬ লাখ ৩৫ হাজার ৪শ’ ১২ টাকার তথ্য গোপন করেছেন। ২০১৩-১৪ কর বছরে তিনি রেমিটেন্স প্রাপ্ত হয়েছেন ১০ কোটি ৫৫ লাখ ৪২ হাজার ৩শ’ ৩৬ টাকা। তিনি তার ট্যাক্স ফাইলে উল্লেখ করেছেন ৭ কোটি ৯৮ লাখ ৫৯ হাজার ৫শ’ ৪৪ টাকা। এখানে তিনি ২ কোটি ৫৬ লাখ ৮২ হাজার ৭শ’ ৯৩ টাকার তথ্য গোপন করেছেন। ২০১৪-১৫ কর বছরে তিনি রেমিটেন্স প্রাপ্ত হয়েছেন ৭ কোটি ১৪ লাখ ৫৭ হাজার ২শ’ ৭ টাকা। অথচ ট্যাক্স ফাইলে উল্লেখ করেছেন ৫ কোটি ১৬ লাখ ৬১ হাজার ৫শ’ ৯৮ টাকা। এখানেও তিনি ১ কোটি ৯৭ লাখ ৯৫ হাজার ৬শ’ ৯ টাকার তথ্য গোপন করেছেন। 

২০০০ সালের পর থেকে এমন প্রতিটি কর বছরে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিদেশ থেকে রেমিটেন্স প্রাপ্ত হয়ে কোটি কোটি টাকার তথ্য গোপন করে সরকারের কর ফাঁকি দিয়েছেন। ২০০৫-০৬ কর বছর থেকে শুরু করে ২০২২-২৩ কর বছর পর্যন্ত সরকারকে কর ফাঁকি দেওয়ার লক্ষ্যে তিনি ১৮ কোটি ৯৪ লাখ ৩৪ হাজার ৮শ’ ৩৫ টাকা রেমিটেন্সের তথ্য গোপন করেছেন। 

মজার ব্যাপার হলো ২০২০-২১ অর্থবছরে ড. ইউনূস এর ব্যক্তিগত একাউন্ট থেকে প্রায় সব টাকা তুলে ‘ইউনূস ট্রাস্ট’ গঠন করেন। ট্রাস্টের টাকা আয়কর মুক্ত। সে হিসেব থেকেই এমন কান্ড করেন তিনি। কিন্তু এরকম ফান্ডের জন্য ১৫ শতাংশ কর দিতে হয়, এটি তিনি দেননি। এই ট্যাক্স ফাঁকির কারণেই তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। এই মামলায় তিনি হেরে যান।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো বিশ্লেষণে ওঠে এসেছে, তার সব ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন সময়ে বিদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা রেমিটেন্স এসেছে। নির্বাচন মৌসুমগুলোতে তার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে এই রেমিটেন্সের টাকার প্রবাহ সবচেয়ে বেশি। কিন্তু প্রশ্ন ওঠেছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলোতে নির্বাচনী মৌসুমে বিদেশ থেকে বেশি অর্থ আসার উদ্দেশ্য কি? কোন বিশেষ রাজনৈতিক দলের জন্য কি তিনি টাকা এনেছেন?

ড. ইউনূস ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার জন্য যে ট্রাস্ট গঠন করেন- তার একটি মাত্র কার্যক্রম দেখা যায়। তা হলো ড. ইউনূস এবং তার পরিবারের সব ব্যয় বহন করা হয় এই ট্রাস্টের টাকায়। এটাও এক ধরনের জালিয়াতি। এই ট্রাস্ট যে ধরনের সমাজ সেবামূলক কার্যক্রম করবে বলে আঙ্গীকার করা হয়েছে তার কিছুই করে না। তাহলে কি কর ফাঁকি দিয়ে বিলাসী জীবন যাপনের জন্যই এই ট্রাস্ট? একজন নোবেল জয়ী ব্যক্তি, কিভাবে রাষ্ট্র এবং জনগণের সংঙ্গে এ রকম প্রতারণা করতে পারেন? রাষ্ট্রের সম্পদ দিয়ে বানাতে পারেন একের পর এক ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান। আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ব্যক্তি কিভাবে আয়কর ফাঁকি দেয়ার জন্য করতে পারেন নানা ছল-চাতুরী ও প্রতারণা? এই প্রশ্নের কি উত্তর দেবেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস?

মুখোশের আড়ালে এই মানুষটি আসলে আইনের প্রতি অশ্রদ্ধাশীল একজন দুর্নীতিবাজ। ড. ইউনূস যদি মনে করেন, তিনি নির্দোষ। তাহলে তার উচিত মামলার মুখোমুখি হয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করে নিজের বক্তব্য পেশ করা। বিতর্কের অবসান করা। কিন্তু তা না করে তিনি মামলা প্রত্যাহারের জন্য বিপুল অর্থ  খরচ করছেন। প্রশ্ন হলো- তার মত গুণী ব্যক্তির আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে বিবৃতি সংগ্রহের প্রয়োজন কি? কেন এই তদবির?


ড. মুহাম্মদ ইউনূস   মুখোশ   অন্তরাল   অন্তর্নিহিত   বার্তা  


মন্তব্য করুন


ইনসাইডার এক্সক্লুসিভ

ঢাকা বিভাগে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন: নানক-নাছিম-রহমানে বড় চমক

প্রকাশ: ০২:৩৫ পিএম, ২৫ নভেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

ঢাকার ৬৫ টি আসনের মনোনয়ন বড় চমক এনেছে আওয়ামী লীগ। হেভীওয়েট নেতাদের মনোনয়ন দিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি দলের জন্য যারা নিবেদিত প্রাণ তাদের স্বীকৃতি দিয়েছেন। গতবার মনোনয়ন বঞ্চিত আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ তিন নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান এবং বাহাউদ্দিন নাছিম এবার নৌকার টিকেট পাচ্ছেন। ঢাকার মনোনয়নে আওয়ামী লীগের প্রায় অর্ধেক বর্তমান এমপি বাদ পরেছেন। বাংলা ইনসাইডার ঢাকা বিভাগে যারা মনোনয়ন পেয়েছেন তাদের কয়েকজনের নাম বিভিন্ন সূত্র থেকে পেয়েছেন। এই তালিকায় যারা আছেন (আংশিক)-

 

সংসদীয় আসন

প্রার্থীর নাম

নির্বাচনী এলাকা

১৩০

আব্দুর রাজ্জাক ভোলা

টাঙ্গাইল-১

১৬৯

মমতাজ বেগম

মানিকগঞ্জ-২

১৭০

জাহিদ মালেক

মানিকগঞ্জ-৩

১৭৩

মৃণাল কান্তি দাস

মুন্সীগঞ্জ-৩

১৭৪

সালমান এফ রহমান

ঢাকা-১

১৭৫

কামরুল হাসান

ঢাকা-২

১৭৬

নসরুল হামিদ

ঢাকা-৩

১৭৯

সাঈদ খোকন

ঢাকা-৬

১৮০

ইরফান সেলিম

ঢাকা-৭

১৮১

বাহাউদ্দিন নাছিম

ঢাকা-৮

১৮২

সাবের হোসেন চৌধুরী

ঢাকা-৯

১৮৪

এ.কে.এম.রহমতুল্লাহ

ঢাকা-১১

১৮৫

আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল

ঢাকা-১২

১৮৬

জাহাঙ্গীর কবির নানক

ঢাকা-১৩

১৮৮

কামাল আহমেদ মজুমদার

ঢাকা-১৫

১৯০

মোহাম্মদ আলী আরাফাত

ঢাকা-১৭

১৯২

এনামুর রহমান

ঢাকা-১৯

১৯৩

বেনজীর আহমদ

ঢাকা-২০

১৯৪

আ.ক.ম মোজাম্মেল হক

গাজীপুর-১

১৯৫

জাহিদ আহসান রাসেল

গাজীপুর-২

১৯৭

সিমিন হোসেন রিমি

গাজীপুর-৪

১৯৮

মেহের আফরোজ চুমকি

গাজীপুর-৫

২০২

নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন

নরসিংদী-৪

২০৪

গোলাম দস্তগীর গাজী

নায়ায়ণগঞ্জ-১

২০৫

নজরুল ইসলাম বাবু

নারায়ণগঞ্জ-২

২০৭

শামীম ওসমান

নারায়ণগঞ্জ-৪

২০৯

কাজী কেরামত আলী

রাজবাড়ী-১

২১০

জিল্লুর হাকিম

রাজবাড়ী-২

২১১

আবদুর রহমান

ফরিদপুর-১

২১৪

মজিবুর রহমান চৌধুরী

ফরিদপুর-৪

২১৫

ফারুক খান

গোপালগঞ্জ-১

২১৬

শেখ ফজলুল করিম সেলিম

গোপালগঞ্জ-২

২১৭

শেখ হাসিনা

গোপালগঞ্জ-৩

২১৮

নূর-ই-আলম চৌধুরী

মাদারীপুর-১

২১৯

শাজাহান  খান  

মাদারীপুর-২

২২০

আবদুস সোবহান গোলাপ

মাদারীপুর-৩

২২২

এ কে এম এনামুল হক শামীম

শরীয়তপুর-২

২২৩

নাহিম রাজ্জাক

শরীয়তপুর-৩

 

 

 

 


ঢাকা   মনোনয়ন   নির্বাচন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইডার এক্সক্লুসিভ

ময়মনসিংহ বিভাগে মনোনয়ন প্রাপ্তদের তালিকা (আংশিক)

প্রকাশ: ০১:২৯ পিএম, ২৫ নভেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড ৩০০ আসনে মনোনয়ন চুড়ান্ত করার কাজ করছে। গতকাল (শুক্রবার) মনোনয়ন বোর্ড ময়মনসিংহ বিভাগের ৩০টি আসনে মনোনয়ন চুড়ান্ত করেছে। এবার এই বিভাগে যারা মনোনয়ন পাননি তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন জামালপুর-৪ আসনের এমপি, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান। এই বিভাগেও অন্তত ১০ জন এমপি বাদ পরেছেন। বাংলা ইনসাইডার বিভিন্ন সূত্র থেকে যারা নৌকার টিকেট পেয়েছে তাদের কয়েকজনের নাম নিশ্চিত করতে পেরেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেন তাদের মধ্যে রয়েছে (আংশিক)-

 

সংসদীয় আসন

প্রার্থীর নাম

নির্বাচনী এলাকা

১৩৮

আবুল কালাম আজাদ

জামালপুর-১

১৩৯

ফরিদুল হক খান

জামালপুর-২

১৪০

মির্জা আজম

জামালপুর-৩

১৪২

আবুল কালাম আজাদ (সাবেক মূখ্য সচিব)

জামালপুর-৫

১৪৪

মতিয়া চৌধুরী

শেরপুর-২

১৪৬

জুয়েল আরেং

মংমনসিংহ-১

১৪৭

শরীফ আহমেদ

ময়মনসিংহ-২

১৫৭

মানু মজুমদার

নেত্রকোণা-১

১৫৯

অসীম কুমার উকিল

নেত্রকোণা-৩

১৬০

সাজ্জাদ হোসেন

নেত্রকোণা-৪

১৬১

ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল

নেত্রকোণা-৫

১৬২

জাকিয়া নূর লিপি

কিশোরগঞ্জ-১

১৬৩

নূর মোহাম্মদ

কিশোরগঞ্জ-২

১৬৫

রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক

কিশোরগঞ্জ-৪

১৬৭

নাজমুল হাসান পাপন

কিশোরগঞ্জ-৬

 


জাতীয় সংসদ   নির্বাচন   ময়মনসিংহ   মনোনয়ন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইডার এক্সক্লুসিভ

রংপুর-রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রাপ্তদের তালিকা (আংশিক)

প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৩ নভেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। আজ সকাল থেকে দলটির মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম দিনের বৈঠকে রংপুর ও রাজশাহীর ৬৯ টি আসনের প্রার্থী চুড়ান্ত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াবদুল কাদের বলেছেন, বেশ কয়েকজন বর্তমান সংসদ সদস্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি। আগামী শনিবার (২৫ নভেম্বর) আওয়ামী লীগ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক। বিভিন্ন সূত্র থেকে বাংলা ইনসাইডার ৬৯ টি আসনে বেশ কয়েকজন মনোনয়ন প্রাপ্তের নাম নিশ্চিত করেছেন। রাজশাহী এবং রংপুরে যারা মনোনয়ন পেয়েছেন, তারা হলেন:

 

সংসদীয় আসন

প্রার্থীর নাম

নির্বাচনী এলাকা

নুরুল ইসলাম সুজন

পঞ্চগড়-২

রমেশ চন্দ্র সেন

ঠাকুরগাঁও-১

খালেদ মাহমুদ চৌধুরী

দিনাজপুর-২

ইকবালুর রহিম

দিনাজপুর-৩

আবুল হাসান মাহমুদ আলী

দিনাজপুর-৪

১৩

আসাদুজ্জামান নূর

নীলফামারী-২

২২

টিপু মুনশি

রংপুর-৪

২৪

শিরীন শারমিন চৌধুরী

রংপুর-৬

৩০

মাহাবুব আরা বেগম গিনি

গাইবান্ধা-২

৩১

উম্মে কুলসুম স্মৃতি

গাইবান্ধা-৩

৩৫

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন

জয়পুরহাট-২

৫৭

শাহরিয়ার আলম

রাজশাহী-৬

৬০

জুনাইদ আহমেদ পলক

নাটোর-৩

৬২

তানভীর শাকিল জয়

সিরাজগঞ্জ-১

৬৫

তানভীর ইমাম

সিরাজগঞ্জ-৪

৬৮

শামসুল হক টুকু

পাবনা-১

 

 

 


রাজশাহী   রংপুর   মনোনয়ন   জাতীয় সংসদ   নির্বাচন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইডার এক্সক্লুসিভ

বিএনপি কেন যুক্তরাষ্ট্রের কথা শুনল না

প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ২২ নভেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিকে পরামর্শ দিয়েছিল বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচনে জেতে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আশ্বাস দিয়েছিল যে ভিসা নীতি সহ বিভিন্ন কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারকে বাধ্য করবে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য। আর সেই নির্বাচনে যদি কোন রকম কারচুপি বা অনিয়ম হয়, তাৎক্ষণিকভাবে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেবে না, আরোপ করবে অর্থনৈতিক অবরোধসহ নানা রকম অবরোধ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে রাজি হয়নি বিএনপির। একাধিক সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে নিশ্চিত করেছে, বিএনপির শীর্ষ নেতারা এ ব্যাপারে একমত হয়েছিলেন। কিন্তু লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার অনাগ্রহ এবং অনীহার কারণেই এই এব্যাপারে কোন ঐকমত্য হয়নি। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বিএনপির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তিন দফা বৈঠক করেছিলেন এ সব নিয়ে। তাদেরকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এবং মনোভাব সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছিলেন। তারা বলছেন যে এই মুহূর্তে সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সংবিধানের বাইরে গেলে সেটি প্রশ্নবিদ্ধ হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়েও বিতর্ক উঠবে। এ কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফর্মুলা ছিল যে বিএনপি নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেবে শর্তহীন সংলাপে যোগদানের মাধ্যমে। আর এই নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার সাথে সাথে সরকারকে মার্কিন প্রশাসন থেকে চাপ দেওয়া হবে যেন নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপির সহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং নির্বাচনের আগে প্রশাসনে রদবদল, পুলিশে রদবদল সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র চাপ দিত। এ ধরনের চাপের কাছে সরকার শেষ পর্যন্ত একটি সমঝোতার পথে যেত। কিছু কিছু জায়গায় পরিবর্তন করা হতো এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে কিছু কিছু ব্যক্তি নিরপেক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করত। কিন্তু সেই সুযোগ বিএনপি গ্রহণ করেনি। আজ আবার গুলশানের সিক্স সিজন্স হোটেলে মার্কিন দূতাবাসের পলিটিক্যাল চিফ শ্রেয়ান সি ফিজারল্ড ও পলিটিক্যাল সেক্রেটারি ম্যাথিও বের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহআন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। দুপুর ১টা থেকে ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত চলে এ বৈঠক। কিন্তু সেখান থেকেও কোন ইতিবাচক ফল আসেনি।

বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে সর্বশেষ বৈঠকে ড. মঈন খান এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উভয়ই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে সম্মত হয়েছিলেন। ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের বড় বিএনপি একটি আল্টিমেটাম দিতে চেয়েছিল এবং সেই আল্টিমেটামের পরপরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক দলগুলোকে শর্তহীন সংলাপের আহ্বান জানাত এবং সরকার এই ধরনের শর্তহীন সংলাপে রাজিও ছিল। কিন্তু সেই পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে ২৭ অক্টোবর রাতে, যে দিন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বৈঠকে বসেছিলেন এবং লন্ডন থেকে যুক্ত হয়েছিলেন পলাতক দণ্ডিত ব্যক্তি তারেক জিয়া। যখন বিএনপি নেতারা এই ফর্মুলার কথা বলেন তখন তারেক জিয়া বুঝতে পারেন যে বিএনপির নেতারা সম্ভবত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফাঁদে পা দিয়েছেন। আর একারণেই তারেক জিয়া তার নিজস্ব বাহিনী দিয়ে সহিংস তৎপরতার পথ বেছে নেন। বিশেষ করে ২৮ অক্টোবর বিএনপি বিভিন্ন স্থানে যে তাণ্ডব চালিয়েছে তা ছিল সব তারেক জিয়ার বাহিনীদের পৃষ্ঠপোষকতা এবং মদদে। 

বিএনপি কেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব গ্রহণ করল না? বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে এর পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে। প্রথমত তারা মনে করেছিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব একটি ফাঁদ। যে রকম ফাঁদে তারা ড. কামাল হোসেনের মাধ্যমে পড়েছিল ২০১৮ সালে। একই ফাঁদে বিএনপি পা দিতে চায়নি। দ্বিতীয়ত বিএনপি মনে করেছিল যে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় যে কোনো নির্বাচন হলেই মানসিক ভাবে আওয়ামী লীগ শক্তিশালী থাকবে এবং সেই নির্বাচনে জেতার কোন সম্ভাবনা বিএনপির নেই। তৃতীয়ত, তারেক জিয়া মনে করছেন, যদি বিএনপি এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে দল তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। ৪০/৫০ যে আসনই বিএনপির পাক না কেন? তখন দলের ভিতর গুরুত্বহীন হয়ে পড়বেন তারেক জিয়া। ফলে এই নির্বাচনে গিয়ে তিনি বিএনপির কর্তৃত্ব হারাতে চাননি। আর এই সমস্ত বাস্তবতার কারণেই শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শ শোনেনি বিএনপি।

বিএনপি   মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র   মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর  


মন্তব্য করুন


ইনসাইডার এক্সক্লুসিভ

আওয়ামী লীগের দুই নেতা যোগাযোগ করেছিলেন তারেকের সঙ্গে

প্রকাশ: ১১:০৬ পিএম, ০৯ নভেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

বিএনপির বেশ কিছু নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। আটক নেতাকর্মীদের মধ্যে বিএনপির মিডিয়া ইউংয়ের প্রধানও রয়েছেন। জহির উদ্দিন স্বপন একদা বাম রাজনীতি করতেন। তিনি দক্ষিণাঞ্চল থেকে উঠে আসা জহির উদ্দিন স্বপন বাম রাজনীতি থেকে বিএনপিতে যোগ দেন। আবার এক-এগারোর সময় তিনি ছিলেন একজন সংস্কারপন্থী। বেগম খালেদা জিয়াকে যারা রাজনীতি থেকে মাইনাস করতে চেয়েছিল তাদের অন্যতম নেতা ছিলেন জহির উদ্দিন স্বপন। তিনি পরবর্তীতে আবার বিএনপিতে আসেন। এখন তারেক জিয়ার নির্দেশে বিএনপির মিডিয়া উইং পরিচালনা করেছেন।

সম্প্রতি তিনি গ্রেপ্তার হচ্ছেন। গ্রেপ্তারে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তারেক জিয়ার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত জহির উদ্দিন স্বপন কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। তার মধ্যে একটি হল তিনি আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের দক্ষিণাঞ্চলের দুই জন হেভিওয়েট নেতার সঙ্গে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করতেন। এই হেভিওয়েট নেতাদের সাথে যোগাযোগের সূত্র ধরে তারেকের সঙ্গেও তাদের যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিলেন। তার এই বক্তব্য নিয়ে এখন আওয়ামী লীগের মধ্যে তুলকালাম চলছে।

বিভিন্ন সূত্র থেকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা ওই দুই নেতার নাম জেনেছেন এবং জহির উদ্দিন স্বপন রিমান্ডে এই বিষয়ে যে তথ্য প্রকাশ করেছে, সেটির সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন। তবে এ ধরনের বক্তব্য কতটুকু সত্য সে সম্পর্কে নিশ্চিত কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে যারা স্বপনকে রিমান্ডে এনেছেন, তারাও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য দিতে চাননি। তবে এ ধরনের বক্তব্যের ফলে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে হঠাৎ করে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

যে দুই জন নেতার সঙ্গে তারেক জিয়ার যোগাযোগ হয়েছে বলে স্বপন দাবি করেছেন, তাদের দুইজনই সংস্কারপন্থী। জহির উদ্দিন স্বপন এক-এগারোর সময় এই দুই নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ রক্ষা করেছিলেন এমন তথ্যও পাওয়া যায়। সেই সময় আওয়ামী লীগ বিএনপি উভয় পক্ষের সংস্কারপন্থীরাই একসাথে কাজ করেছিলেন একটি রাজনৈতিক মেরুকরণের লক্ষ্যে। এখন প্রশ্ন হল যে সত্যি সত্যি কী তারেকের সঙ্গে আওয়ামী লীগের এই দুই নেতা যোগাযোগ করেছিলেন?

কোন কোন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন যে, যোগাযোগ হলেও হতে পারে। তবে এই যোগাযোগ রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যহীন। আবার কোন কোন নেতা মনে করেন যে বিএনপি এখন আওয়ামী লীগের মধ্যে নানারকম অবিশ্বাস, বিভক্তি এবং কোন্দল সৃষ্টি করার জন্য এই ধরনের গুজব ছড়াচ্ছে। এটি অসম্ভব ব্যাপার। কারণ এ রকম যোগাযোগ করলে সেটি আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড বা আওয়ামী লীগ সভাপতি জানবেন না এমনটি মনে করার কোন কারণ নেই। ওই দুই নেতা এখন এমনিতেই কোণঠাসা অবস্থায় আছেন। তারা এ রকম ঝুঁকি নেবেন না।

আবার অনেকে মনে করছেন যে বিএনপির বিরুদ্ধে যেমন আওয়ামী লীগ নানারকম অপপ্রচার করছে, বিশেষ করে বিএনপি ভাঙছে, বিএনপিতে নানারকম ভাঙন প্রক্রিয়া, সেই হিসেবে কাউন্টার প্রোপাগান্ডা হিসেবে এই ধরনের অপপ্রচার গুলো করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগকে দুর্বল করে তোলা। আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের মনোবল নষ্ট করার জন্য এটা করা হচ্ছে।

২৮ অক্টোবর বিএনপির আত্মঘাতী তৎপরতার পর এমনিতেই বিএনপির অবস্থা অনেকটা শোচনীয়। তারা খাদের কিনারে চলে যাচ্ছে। দলের মধ্যে অবিশ্বাস সন্দেহ তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল মেজর হাফিজ এর বক্তব্য বিএনপির মধ্যে এক ধরনের নতুন বিতর্ক তৈরি করেছে। এই পরিস্থিতিতে কৌশলগত কারণে যদি তারা আওয়ামী লীগকেও বিতর্কিত করতে পারে বা আওয়ামী লীগের মধ্যেও বিভক্তি দেখাতে পারে তাহলে তাদের লাভ। সেই কৌশলের অংশ হিসেবেই এটা করা হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।

তবে এটি সত্য বা মিথ্যা সেটি অন্য বিষয়। তবে যদি উদ্দেশ্যপূর্ণভাবেও এই গুজব ছড়ানো হয়, সেটি এখন আওয়ামী লীগের মধ্যে বেশ ভালো প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ফোরামে এ নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে এবং আওয়ামী লীগের অনেকেই এই বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন।


আওয়ামী লীগ   তারেক জিয়া   বৈঠক   জহির উদ্দিন স্বপন  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন