ইনসাইড টক

‘৭৫ এর পরে ভীরুতা, কাপুরুষতা, দোদুল্যমানতায় প্রতিবাদ করতে পারেনি আ. লীগ’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪:৫৮ পিএম, ১১ অগাস্ট, ২০২০


Thumbnail

১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট বাঙালী জাতির ইতিহাসে কলঙ্কময় একদিন। জাতির পিতাকে স্বপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি। কিন্তু এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারেনি আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যার পর কার্যকর প্রতিবাদ করতে পারেনি, প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। কেন? এই প্রশ্নের উত্তর সন্ধানে বাংলা ইনসাইডার মুখোমুখি হয়েছিল সে সময়ের ছাত্রনেতা, এখন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানকের। অকপটে তিনি বলেছেন আওয়ামী লীগ নেতাদের ব্যর্থতা, বিশ্বাসঘাতকতা এবং বিভ্রান্তির গল্প।

জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘৭৫ এর পরে ভীরুতা, কাপুরুষতা, দোদুল্যমানতায় প্রতিবাদ করতে পারেনি আ. লীগ’

ইতিহাসের পাতা খুলে বাংলা ইনসাইডারকে নানক বলেন, ৭৫ এর ১৫ আগস্ট দিনটি ছিল আমাদের ছাত্র সমাজের কাছে একটি ঐতিহাসিক দিন। কারণ এই দিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম পদার্পণ করার কথা ছিল। ছাত্র সমাজের উদ্দেশ্যে প্রথম ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল। সুন্দর একটি অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় ছিলো আনন্দে আত্মহারা। আমরা অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আমি তখন বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। সেই হিসেবে আমাকে তখন আগের দিন ঢাকা ডাকা হয়েছিল। কামাল ভাই ডেকেছিলেন। আপনারা জানেন, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠিত হওয়ার সাথে সাথে ছাত্র সমাজেরও একটি ইউনাইটেড ছাত্র ফ্রন্ট গঠিত হয়েছিল। সেটি হলো জাতীয় ছাত্রলীগ। সেই জাতীয় ছাত্রলীগের জেলা সম্পাদক হিসেবে আমাকে ডেকেছিলেন কামাল ভাই। আমি ঢাকা এসেছিলাম। ঐদিন রাতে আমি এবং আমার বন্ধু ছাত্রনেতা কাশেম, আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাসায় উঠেছিলাম। হোস্টেল থেকে এসে সবসময় তার বাসায়ই আমরা উঠতাম। আমরা ঐদিন রাতে ১১ টার দিকে তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার পরেই সর্বপ্রথম দেখা হয় কামাল ভাইয়ের সঙ্গে। কামাল ভাই তখন বাসায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। আমাকে দেখেই তিনি জিজ্ঞেস করলেন কি খবর? তিনি আদর করে আমায় ‘নানকা’ বলে ডাকতেন। বললেন, ‘কিরে নানকা কি অবস্থা?’

সেদিন সমস্ত ডিপার্টমেন্টগুলো সাজানো হয়েছিল ভিন্ন ভিন্নভাবে। কামাল ভাই বললেন, ‘আমার সোশিওলজি ডিপার্টমেন্টটা দেখিস কেমন হইসে’। তো আমরা দেখব, এ রকম সময়ে তিনি বললেন, ‘আমি যাই’। তখন রাত সাড়ে ১২ টা থেকে ১ টা হবে। কামাল ভাই বললেন, ‘আমি গিয়ে তৈরি হয়ে চলে আসছি’। আমাকে বললেন, ‘নানক তুই চলে যা। জহুরুল হক হলে চলে যা, খুব সকালে তৈরি হয়ে চলে আসিস’। এই ছিল শেষ কথা, শেষ দেখা শ্রদ্ধেয় কামাল ভাইয়ের সঙ্গে। রাতে আর ঘুমালাম না। আমরা যখন উঠে তৈরি হচ্ছিলাম, তখন কামানের শব্দ শুরু হয়ে গেল। আমরা আতংকিত হয়ে গেলাম। খবর নেওয়ার চেষ্টা করলাম কোথায় কি হচ্ছে? আর কয়েক ঘণ্টা পরেই বঙ্গবন্ধু আসবেন।

আমরা খবর নিতে নিতেই খবর প্রচার হয়ে গেলো। কেউ কেউ রেডিওতে শুনল। আমরা যখন খবরটি শুনলাম। আমরা তখন রওনা করে চলে গেলাম আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাসায়। আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাসায় আমি এবং আমার বন্ধু কাশেম গিয়েই দেখি সব শেষ হয়ে গেছে। হাসান ভাইয়ের একজন বডিগার্ড ছিলেন হাবিলদার শামসুর। তিনি আমাদের দেখেই বললেন, ‘ভাই তাড়াতাড়ি চলে যান এখান থেকে। সব শেষ হয়ে গেছে। সবাইকে মেরে ফেলেছে’। আমরা তখন ওখান থেকে বেরিয়ে গেলাম। আলু বাজারে খালার বাসায় তখন আমু ভাই থাকে। আমু ভাই তখন ঝালকাঠির গভর্নর হিসেবে ট্রেনিং নিতে এসেছিলেন। আমরা আমু ভাইয়ের বাসায় গেলাম।

আমু ভাই বাইরে এসে দোতলা থেকে বললেন, কি ব্যাপার? আমরা দোতলায় উঠলাম। নিচে পুলিশ গার্ড। উঠেই আমু ভাইকে আমরা বললাম ঘটনা। বলার পর উনি বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেন। একপর্যায়ে আমরা আমু ভাইকে নিয়ে বেরিয়ে গেলাম। আমরা পলাশীর মোড়ে যখন এসেছি হাঁটতে হাঁটতে পথে দেখলাম বিভিন্ন জায়গায় মিছিল হচ্ছে। একপর্যায়ে পলাশী মোড়েই আমু ভাই আমাকে বললেন, ‘নানক ইউনিভার্সিটিতে গেলে কি ছাত্রদের পাওয়া যাবে প্রতিবাদ করার জন্য?’ আমরা বললাম যে, ‘লিডার, আসলে সবাই হল ছেড়ে চলে গিয়েছে’। আমরা পরে আত্মগোপনে থাকলাম। এক পর্যায়ে আমু ভাই গ্রেফতার হয়ে গেলেন।

আমু ভাই গ্রেফতার হওয়ার পর আমি ঢাকায়ই ছিলাম। তখন আমরা বিভিন্ন গোপন সভা করি। জগন্নাথ হলে যে পুরাতন এসেম্বলি, সেখানকার ছাদে আমাদের গোপন মিটিং হতো। আমরা লিফলেট ছাপিয়ে আগের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ফ্লোরে ফ্লোরে দিয়ে আসতাম। এগুলো হলো বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরের ঘটনা। একটি পর্যায়ে আমার মনে আছে ২১ আগস্ট মধুর ক্যান্টিন থেকে আমরা একটি মিছিল বের করি। আমরা ২০ থেকে ২৫ জন ছাত্র মিলে একটা ঝটিকা মিছিল করলাম। মিছিল শেষে আমরা যখন মধুর ক্যান্টিনে ফিরলাম, তখন হকিস্টিক ও চাপাতি নিয়ে ডালি গ্রুপ আমাদের আক্রমণ করল। তারা কাঁঠালবাগান ছাত্রলীগের লুকু নামের একটা ছেলেকে বেধড়ক পিটিয়েছিল। তার রক্তে জায়গাটা সয়লাব হয়ে গেলো। আমরা যে যেদিকে পারি পালিয়ে গেলাম।

এরপরে অনেক ঘটনা আছে। সভা সমাবেশ করা, গোপন মিটিং করা, গোপনে গোপনে সংগঠিত করা ছিল আমাদের দৈনিন্দন কাজ। একটি পর্যায়ে খন্দকার মোশতাক যখন সমস্ত এমপিদেরকে ডাকলেন, তখন আমরা চিঠি দিয়ে সমস্ত এমপিদের সঙ্গে দেখা করলাম। আমাদের একেকজনের উপর কয়েকজন করে এমপির দায়িত্ব পড়ল। আমরা তাদের বারণ করলাম খুনি মোশতাকের মিটিং এ যোগ না করার জন্য। বলতে কোন দ্বিধা নেই কাউকে কাউকে আমরা মৃত্যুর হুমকিও দিয়েছি। বলেছিলাম যে, ‘যদি যান খুনির আমন্ত্রণে তাইলে কিন্তু বাঁচতে পারবেন না’। এছাড়াও অনেক ঘটনা প্রবাহ আছে। এইভাবেই আমরা সংগঠিত করতে থাকি। ৩ নভেম্বর আমরা একটি পূর্ব নির্ধারিত মিছিল বের করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি পর্যন্ত যাওয়ার মিছিল আমরা অর্গানাইজ করি।

এই মিছিল নিয়ে আমরা যাত্রা শুরু করার পরেই নীলক্ষেতে আমাদেরকে বাধা দেওয়া হয়। পুলিশ আমাদের বাধা দেয়। পুলিশের বাধাকে উপেক্ষা করে এই মিছিল নিয়ে আমরা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর পর্যন্ত যাই। এই সর্বপ্রথম রাজপথে একটি মিছিল হয় বঙ্গবন্ধুর পক্ষে। সেদিনকার ইত্তেফাক বা দৈনিক সংবাদ যদি দেখেন, সেখানে কভার পেইজে সেই মৌন মিছিলের একটি ছবি ছাপা হয়েছিলো। সেখানে বঙ্গবন্ধুর ছবি হাতে আমি ছিলাম। আমার বিষয়গুলো আমি ফোকাস করার জন্য না। আমরা বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে গেলাম বঙ্গবন্ধুর ভবন পর্যন্ত গিয়ে মাঝখানে কলাবাগান থেকে রাশেদ মোশারফের মা যোগদান করলেন। এই ছিল ঘটনা প্রবাহ।

প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী হতে হতে পুরান ঢাকা থেকে গোপনে আমরা পোস্টার বের করলাম। গোপনে মিটিং করলাম। তখন মানিকগঞ্জের মহিউদ্দিন ছিল, এখন তিনি মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট। ওই সময় তার একটি প্রেস ছিল। সেই প্রেসে আমরা পোস্টার ছাপিয়েছি। পুরান ঢাকার আরও বিভিন্ন প্রেসে পোস্টার ছাপিয়ে সেই পোস্টারগুলো আমরা লাগানোর চেষ্টা করেছি।

প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী যখন আসল তখন আমি বরিশালে চলে যাই। প্রথম মৃত্যু বার্ষিকীতে আমি বরিশালে হরতাল আহ্বান করি। হরতাল আহ্বানের প্রস্তুতি সভা যখন বরিশাল বিএম কলেজের খেলার মাঠে গোপনে করছিলাম, তখন সমস্ত কলেজ ঘেরাও করে আমাদের গ্রেফতার করার চেষ্টা করে পুলিশ। আমি দৌড়ে পালিয়ে যাই। কিন্তু পুলিশ আমাকে অনুসরণ করে একটি বাড়ির ভেতর থেকে আমাকে ধরে নিয়ে আসে। সেদিন ছিল শবে বরাতের রাত, ৮ আগস্ট। সেই শবে বরাতের রাতে সারারাত আমাকে থানায় ফ্যানের রিঙের সঙ্গে উল্টো করে ঝুলিয়ে আমাকে নির্যাতন করে। আমার কাছে আমির হোসেন আমুর অস্ত্র চায়, আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহর অস্ত্র চায়, ক্যাপ্টেন রবের অস্ত্রের খোঁজ চায়।

তাদের সর্বপ্রথম কথা ছিল যে হরতাল ডেকেছিস, সেই হরতাল বন্ধ করতে হবে। হরতাল হতে পারবে না। আমি কোন কথার উত্তর দেই না। সারারাত নির্যাতন করার পরের দিন আমাকে কারাগারে পাঠানো হয়। কারাগারে পাঠানোর পর আমাকে আমার আপন লোকরাও দেখে চিনতে পারে নাই। এমনভাবে আমার চেহারা পাল্টে দিয়েছিল। তবে যাই হোক, আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি, ১৫ আগস্ট বরিশালে আংশিক হরতাল পালিত হয়েছিলো। আমি গ্রেফতার হওয়ার পরে এলাকার প্রথম কাতারের নেতারা, দ্বিতীয় কাতারের নেতারা, তৃতীয় কাতারের নেতারা সবাই এলাকা ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে পুলিশের দাপটে। একটি পর্যায়ে একদম নিচের লেভেলের কর্মীরা হরতাল পালন করে।

সে সময় আওয়ামী লীগের বিভ্রান্তির কিছু উদাহরণ দিয়ে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘আমু ভাইকে নিয়ে আমি যখন আত্মগোপনে ছিলাম। তখন আমু ভাই আমাকে সংসদ হোস্টেলে পাঠিয়েছিলেন। সেই হোস্টেলে পাঠিয়েছিলেন কয়েকজন এমপির সঙ্গে দেখা করার জন্য। তাদের নাম বললাম না। এক নেতার রুমে গিয়ে দেখলাম হাঁসের মাংস আর ভুনা খিচুরি খাচ্ছে। তিনি মঞ্জু গ্রুপ করতেন। বরিশালের নুরুল ইসলাম মঞ্জু। আমাকে দেখেই তারা হৈচৈ করে অট্টহাসি দিয়ে উঠলেন। হাসি দেওয়ার পর আমি একটু হতভম্ব হয়ে গেলাম। তখন শাজাহান ওমর আমাকে ইশারা দিয়ে বাইরে নিয়ে গেলেন। নিয়ে বললেন, ‘এখানে মরতে আসছ। দেখ না হাঁসের মাংস আর খিচুড়ি খাচ্ছে। হাসাহাসি করছে। আনন্দ করছে। তাড়াতাড়ি এখান থেকে চলে যা’। আমি সেখান থেকে চলে গেলাম। সেদিন আমার বুক ফেটে গিয়েছে যে, বরিশালে আনন্দ মিছিল বের করেছিলো। আনন্দ মিছিল যারা বের করেছিলো, বঙ্গবন্ধুর ছবি ভেঙ্গেছে যারা তারাও কিন্তু এখন বর্ণচোরা আওয়ামী লীগ হয়ে গিয়েছে।

আ স ম ফিরোজের মতো মানুষ সেদিন বরিশালে আনন্দ মিছিল বের করেছিলো বঙ্গবন্ধুর ছবিতে জুতার মালা লাগিয়ে। আমু ভাইয়ের সঙ্গে আমি যখন আত্মগোপনে ছিলাম, তিনি প্রাণান্তভাবে চেষ্টা করেছিলেন বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করে একটা প্রতিবাদ দাঁড় করানোর জন্য। কিন্তু প্রতিদিন প্রতিক্ষণে আমরা বিধ্বস্ত হয়ে যাচ্ছিলাম। তার কারণ আমরা খবর পাচ্ছিলাম ক্যাপ্টেন মনসুর আলী সাহেব গ্রেফতার হয়ে গিয়েছেন টিএন্ডটি কলোনি থেকে। বিভিন্ন জায়গা থেকে নেতাকর্মীরা গ্রেফতার হয়ে যাচ্ছিলেন। বিশ্বাসঘাতকতার এক লম্বা সারি দেখলাম। আওয়ামী লীগের মন্ত্রীসভার অধিকাংশই দেখলাম সেদিন মোশতাকের ক্যাবিনেটে। এরই মধ্যে আমরা কতিপয় লোক চেষ্টা করেছি সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য। এরা ধারণা করেছিলো আর কোনদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জায়গা ইতিহাসে হবে না। আর ফিরে আসবে না। এই যে দোদুল্যমানতা, এই যে ভীরুতা!

সেদিন জহুরুল হক হল থেকে আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাসায় যেতে আমি দেখেছি মানুষের যে কি অবস্থা। আবার ট্যাংকের উপর আনন্দও দেখেছি। কিন্তু সেদিন শুধু একটি ডাকের দরকার ছিল। একটি ডাকের প্রয়োজন ছিল। তৎকালীন যারা ছিলেন, তারা সেই ডাকটা দিতে পারেন নাই। তখন আমি এবং আমু ভাই দুজনেই রক্ষীবাহিনীর যশোরের লিডার ইসমাইলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু আমরা শুনতে পাই রক্ষীবাহিনীও আত্ম-সমর্পণ করেছে। কেউ তখন এগিয়ে আসে নাই। হয় ভীরুতা, নয় কাপুরুষতা, আর না হয় দোদুল্যমানতা, আর না হলে গোপনে তাদের সঙ্গে কোনো সংযোগ ছিল। এ কথা বলতে আমার কোনো দ্বিধা নাই।       



মন্তব্য করুন


ইনসাইড টক

‘কেউ হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে দ্রুত ছায়াযুক্ত স্থানে নিতে হবে’

প্রকাশ: ০৪:০০ পিএম, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেছেন, কেউ যদি হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয় তাহলে তাকে যত দ্রুত সম্ভব ছায়াযুক্ত স্থানে নিতে হবে। ঘরে থাকলে ফ্যান ও এসি চালু করে তাকে ঠান্ডা স্থানে রাখতে হবে। ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছে দিতে হবে। বেশি বেশি পানি, ফলের জুস পান করাতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তির প্রেশার কমে যাওয়া, প্রস্রাব বন্ধ, পালস কমে যাওয়া বা অজ্ঞান হয়ে গেলে দ্রুত আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

গত কয়েক দিন ধরে সারা দেশের ওপর বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপদাহ। আবহাওয়া নিয়ে সহসাই কোনো সুসংবাদ নেই। এরকম তাপদাহ আগামীতে আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ রকম এক অস্বস্তির মধ্যে কীভাবে নারী পুরুষ, বৃদ্ধ, শিশু কিশোর সুস্থ্ থাকতে পারে সে ব্যাপারে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ এসব কথা বলেছেন। পাঠকদের জন্য অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক শান্ত সিংহ।

অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, রোদে যারা কাজ করেন, তাদের একটানা দীর্ঘক্ষণ রোদে কাজ করা যাবে না। এতে মাথাব্যথা ও অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে, যা থেকে হিটস্ট্রোক হয়। হিটস্ট্রোক হলে যে কেউ মারাও যেতে পারেন। হিট স্ট্রোকের মূল ঝুঁকি মূলত যারা অনেকক্ষণ রোদে কাজ করে তাদের। মানব দেহে স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট। প্রচণ্ড গরমে মানুষের শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে প্রবল। এ অবস্থায় শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে গেলে হিট স্ট্রোক হয়। শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে ১০৫-এর উপর উঠলে ঘাম হয় না, মাথা ব্যথা, অস্থিরতা, বুক ধড়ফড়, ক্লান্তি, অবসাদ হয়। এক সময় অজ্ঞান হওয়ার মতো অবস্থা হয়, অজ্ঞানও হয়ে যায় অনেকে। এটি বিপজ্জনক। এটি খুবই সিরিয়াস, সাথে সাথে চিকিৎসা না দিলে রোগী মারাও যেতে পারে। 

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এই অধ্যাপক বলেন, দেশে বর্তমানে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। এ তাপমাত্রা শিশু থেকে বয়স্ক সবার জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। এখন সুস্থ থাকতে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। অপ্রোয়জনে একদম বাইরে ঘোরাঘুরি করা যাবে না। যারা কাজের জন্য বাইরে থাকেন, তাদের ছাতা ব্যবহার বা মাথায় কাপড় দিতে হবে। কাজের ফাঁকে এক-দুই ঘণ্টা পর পর ১০-১৫ মিনিটের জন্য ছায়াযুক্ত স্থানে বসবেন। একটানা রোদের মধ্যে থাকা যাবে না। লবণ মিশ্রিত পানি খেলে ভালো হয়, স্যালাইন খেতে পারেন। ডিহাইড্রেশন যাতে না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। 

আরেকটা জরুরী বিষয় হলো, ঢিলেঢালা কাপড় পরতে হবে। জিন্স না পরাই ভালো। 

বয়স্ক এবং যারা ডায়বেটিস, কিডনিসহ বিভিন্ন ক্রনিক রোগে ভোগেন, তাদের জন্য ঝুঁকিটা বেশি। তারা অপ্রয়োজনে বাইরে যাবেন না। 

শিশুদের বিষয়ে ডা. আবদুল্লাহ বলেন, গরমে বাচ্চাদের জন্যও ঝুঁকি বেশি। এখন স্কুল বন্ধ তাই বাচ্চাদের বাইরে বের না করাই ভালো। বাচ্চাদের বেশি বেশি পানি খাওয়াতে হবে। তারা যেন রোদের মধ্যে অনেক বেশি দৌড়ঝাঁপ না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, হিট স্ট্রোকের পাশাপাশি গরমে ডায়রিয়া, টাইফয়েড, জন্ডিস বাড়ছে। অ্যাজমা, হাঁপানি যাদের আছে, গরমের কারণে তাদের শ্বাসকষ্ট ওঠানামা করছে। তাদেরও সতর্ক থাকতে হবে।

পানিশূন্যতা গরমে সবচেয়ে বড় সমস্যা উল্লেখ্য করে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এই অধ্যাপক বলেন, এই গরমে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। ওরাল স্যালাইন খাওয়া ভালো। এছাড়া পানিতে লবন মিশিয়েও খাওয়া যাবে। তবে রাস্তায় বিক্রি হওয়া লেবু পানি, আখের জুস খাওয়া যাবে না। অস্বাস্থ্যকর, বাসি কোনো খাবারও পরিহার করতে হবে। শিশু ও বয়স্কদের যতটা সম্ভব ঘরে রাখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, শিশু, নারী ও বয়স্কদের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস রোগীদের সতর্ক থাকতে হবে। কারণ এসব রোগীর হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড টক

‘বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা প্রশাসনের এখতিয়ারে নেই’

প্রকাশ: ০৪:১১ পিএম, ০১ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না বলেছেন, বুয়েটে শুধু ছাত্রলীগ ছাত্ররাজনীতি চায় না। অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলোও তো ছাত্ররাজনীতি চায়। তাহলে কেন শুধু এখন সামনে ছাত্রলীগের নাম সামনে আসছে। বুয়েটে যারা ছাত্ররাজনীতি চাচ্ছে তাদের প্রথম পরিচয় তারা বুয়েটের ছাত্র। আর বুয়েট কর্তৃপক্ষ যেটা করেছে যে, ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করেছে, এটা বুয়েট প্রশাসন করতে পারে না। তাদের এখতিয়ার নেই। দেশের প্রচলিত মৌলিক আইন যেখানে আমাকে অধিকার দিয়েছে বুয়েট সেটা নিষিদ্ধ করতে পারে না। আইনে বলা হয়েছে, দেশের প্রচলিত আইন এবং নিয়মের মধ্যেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত হবে। সেখানে বুয়েট তো বাংলাদেশের বাইরের কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়। দেশের নিয়মেই তো বুয়েট চলার কথা। কিন্তু সেখানে বুয়েট প্রশাসন কীভাবে আমার মৌলিক অধিকার রহিত করে? আমার ক্যাম্পাসে আমি মুক্ত চিন্তায় ঘুরবো, আমি কথা বলবো, আমি স্লোগান দিবো, আমি বক্তৃতা দিবো, আমি পড়াশুনা করবো। এটা থেকে বুয়েট কর্তৃপক্ষ কীভাবে আমাকে বঞ্চিত করতে পারে।

বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ এবং ছাত্ররাজনীতি আবার ফিরিয়ে আনার প্রসঙ্গে নিয়ে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় ইসহাক আলী খান পান্না এসব কথা বলেছেন। পাঠকদের জন্য ইসহাক আলী খান পান্না এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক শান্ত সিংহ।

ইসহাক আলী খান পান্না বলেন, যারা প্রগতির কথা বলেন না, মৌলবাদ বা জঙ্গিবাদের কথা চিন্তা করে তারাই তো আজ ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করতে চায়। আপনি দেখেন, একটি জলালয়ে যদি পানির কোন ঢেউ না হয়, সেটা যদি কোন কারণে ব্যবহার না হয় তাহলে সেখানে মশা মাছি আর্বজনা জন্মায়। সেখানে থেকে এক সময় দুর্গন্ধ ছাড়ায়। ঠিক তেমনি ভাবে বুয়েটে যদি আপনি মুক্ত চিন্তার চর্চা না করতে দেন তাহলে এর অন্তরালে মৌলবাদী শক্তির উত্থান ঘটবে, ধর্মান্ধের উত্থান ঘটবে। যারা স্বাধীনতাকে এখনও মেনে নেননি আপনি তাদেরকে শক্তিশালী করবেন। অথচ প্রগতির কথা যারা বলে সেটা  ছাত্রলীগ হোক কিংবা ছাত্র ইউনিয়ন হোক এমনকি ছাত্রদলও যদি হয় তাহলে তারা সেখানে কথা বলতে পারবে না কেন।

তিনি বলেন, আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা পড়াশুনা করেছি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা ছাত্ররাজনীতি করেছি, এই ক্যাম্পাসে আমরা আমাদের অধিকারের কথা বলেছি, স্বাধীনতার কথা বলেছি, গণতন্ত্রের কথা বলেছি, স্বৈর শাসকের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করেছি। সেখানে শিবির কোন দিন স্লোগান মিছিল কিছু পরিচালনা করতে পারেনি, করেনি। তারা বুয়েট এবং ঢাকা মেডিকেলে তাদের কার্যক্রম করেছে। একই ভাবে সেই বুয়েটে এখনও তাদের কর্মকাণ্ড চলে। আর ছাত্রলীগ সহ অন্যান্য সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ড চলবে না সেটা তো হতে পারে না। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো আপনার শুধু ছাত্রলীগ টার্গেট কেন? ছাত্রলীগের ব্যানারে যারা ছাত্ররাজনীতি করে তারাও তো বুয়েটের ছাত্রছাত্রী। তাহলে বুয়েটের শিক্ষার্থীদেরও তো কথা বলার অধিকার রয়েছে, তারও হলে থাকার অধিকার রয়েছে। তাহলে কেন আপনি তাকে এসব থেকে বঞ্চিত করছেন। বাংলাদেশের সকল অনৈতিক, অগণতান্ত্রিক, স্বৈরচারী মনোভাবের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ সব সময় কথা বলেছে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ছাত্রলীগ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। এখন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এবং তার নির্দেশে বাংলাদেশে স্বৈর শাসনের পতন, মৌলবাদের পতন এবং সকল আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্রলীগ। সেই ছাত্রলীগ বুয়েটে মৌলবাদের যে চর্চা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে কথা বলেছে। সুতরাং এবং অবশ্যই সেটা সঠিক করেছে। অনতিবিলম্বে বুয়েটের সকল ছাত্রছাত্রীদের সবার মুক্ত বিচরণের সুযোগ করে দেয়া দরকার। তারা যেন প্রগতির কথা বলতে পারে, মুক্তিযুদ্ধের কথা বলতে পারে, গণতন্ত্রের কথা বলতে পারে সেই পরিবেশ তাদের দিতে হবে। এখন বুয়েটকে নিয়ে যে খেলা চলছে প্রকারন্তে বাংলাদেশে এরা স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির পালন করছে। এটা হতে পারে না। আপনি বুয়েট কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসা করেন আমাদের স্বাধীনতা দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি, পহেলা বৈশাখ, বুদ্ধিজীবী দিবস তারা এগুলো পালন করে কিনা। এগুলো অবশ্যই তাদের করতে হবে। বুয়েট স্বাধীনতা বাংলা ভূখন্ডে বাইরে কোন প্রতিষ্ঠান না। অতএব ছাত্রলীগ যে দাবি তুলেছে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি ফিরিয়ে আনতে হবে এটা যুক্তি যুক্ত।

সাবেক ছাত্রলীগ এই নেতা বলেন, বুয়েটে যে অনাকাঙ্খিত ঘটনাগুলো ঘটেছে সেগুলোর আমরা অবশ্যই নিন্দা জানাই। এর সঙ্গে যারা জড়িত আইনের মাধ্যমে তাদের বিচার হবে, একাডেমিক কাউন্সিলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করে বুয়েটকে অন্ধকারে রেখে মৌলবাদী শক্তিকে পৃষ্টপোষকতা করার কোন সুযোগ নাই বুয়েট কর্তৃপক্ষের। অনতিবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে বুয়েটকে সকলের জন্য উন্মূক্ত এবং সুন্দর একটি পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের ব্যানারে যারা অপকর্ম করেছে তাদের দায় সংগঠন নিবে না উল্লেখ্য করে ইসহাক আলী খান পান্না বলেন, কোন ব্যক্তি, কোন ছাত্র যদি কোন ধরনের অপকর্মের সাথে জড়িত হয়ে থাকে এটা তার ব্যক্তিগত অপরাধ। কারণ ছাত্রলীগ কোন ধরনের অপরাধকেই সমর্থন করে না। যারা ইতোমধ্যে কোন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়েয়ে সংগঠন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। সুতরাং এগুলোকে অজুহাত দেখিয়ে রাজনীতি বন্ধ করা যাবে না। 



মন্তব্য করুন


ইনসাইড টক

‘বঙ্গবন্ধু যেখানে বলেছেন ৪ শতাংশ দিতে, আমরা তার অর্ধেকও পারিনি’

প্রকাশ: ০৪:১৬ পিএম, ২৭ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেছেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে বিআইডিএস যে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সেটাই হচ্ছে প্রকৃত চিত্র। বিআইডিএসের গবেষণার প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা আছে। কারণ তারা কতগুলো গবেষণা পদ্ধতি নিয়ে কাজ করে যেগুলোর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে। সুতরাং বিআইডিএস যেটা বলছে সেটার সঙ্গে আমি দ্বিমত পোষণ করছি না।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলো থেকে পাস করার তিন বছর পরও ২৮ দশমিক ২৪ শতাংশ শিক্ষার্থী বেকার থাকছেন। গত রোববার বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএসের) এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। এ নিয়ে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতা করেন অধ্যাপক আবদুল মান্নান। পাঠকদের জন্য অধ্যাপক আবদুল মান্নান এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক শান্ত সিংহ।

অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, ভালো শিক্ষার জন্য সব কলেজগুলোতে ভালো এবং দক্ষ শিক্ষক দরকার। পাশাপাশি ভালো পরিবেশ সহ সুযোগ সুবিধা দরকার। কিন্তু আমাদের মেট্রোপলিটন শহরের বাইরে বেশির ভাগ কলেজগুলোর অবস্থা ভালো নয়। ভালো শিক্ষক পাওয়া যায় না। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো শিক্ষকতায় কেউ আসতে চায় না। এ সমস্ত কলেজগুলোর লাইব্রেরির অবস্থা করুণ। অনেক কলেজে লাইব্রেরিই হয়তো নেই।

তিনি আরও বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন যে সমস্ত কলেজগুলোতে বিজ্ঞান আছে সেগুলোর সব কলেজগুলো ল্যাবরেটরি সুবিধা নেই। একটা ভালো ল্যাবরেটরি জন্য প্রচুর বিনিয়োগ দরকার। সেটা আমাদের যথেষ্ট নাই। শিক্ষার উন্নয়ন মানে শুধু অবকাঠোমাগত উন্নয়ন নয়। শিক্ষা মান মানে অনেক কিছু। বিশেষ করে লাইব্রেরি, ল্যাবরেটরি এবং সবচেয়ে বড় কথা হলো ভালো শিক্ষক দরকার। কিন্তু বাংলাদেশের যে হারে স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে সে হারে আমাদের শিক্ষকের সংখ্যা বাড়েনি। পাহাড়ি দুর্গম এলাকা থেকে শুরু করে চরাঞ্চল সব এলাকাতে এখন কলেজ হয়েছে কিন্তু প্রতিটি কলেজে আমরা দক্ষ শিক্ষক নিশ্চিত করতে পারিনি। প্রয়োজনীয় ল্যাব, লাইব্রেরি নেই। অনেক কলেজ আছে যেগুলো আগপাছ কোন কিছু বিবেচনা না করেই মাস্টার্স চালু করেছে। কিন্তু এগুলো করতে হলে একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার ব্যাপার। আমরা শুধু সংখ্যার দিকে নজর দিয়েছি। গুণগত মানকে উপেক্ষা করেছি। যার ফলে আজকে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

শিক্ষার গুণগত মান বাড়াতে আমাদের অগ্রাধিকারগুলো কি কি জানতে চাইলে প্রখ্যাত এই শিক্ষাবিদ বলেন, গুণগত মান বাড়ানোর জন্য কোন শর্টকাট পদ্ধতি অনুসরণ করলে হবে না। গুণগত মান বাড়াবে হলে শিক্ষকদের গুণগত মান বাড়াতে হবে আগে। শিক্ষকদের সুযোগ সুবিধা বাড়তে হবে, পেশা হিসেবে শিক্ষকতাকে আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে। আমাদের দেশের মেধাবীরা সবাই সরকারি চাকরি দিকে ঝুঁকছে। সবাই আমলা হতে চায়। কিন্তু আমাদের আমলারও দরকার আছে শিক্ষকও দরকার আছে। আবার ভালো সাংবাদিক বা ভালো গবেষকও দরকার আছে। এজন্য শিক্ষা খাতে আমাদের বরাদ্দ বাড়াতে হবে। বঙ্গবন্ধু সত্তরের নির্বাচনের বক্তৃতায় বলেছিলেন শিক্ষা খাতে জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দ দিতে হবে। আমরা সেখানে এখনও ২ শতাংশ দিতে পারিনি।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড টক

‘প্রতিটি মৃত্যু–ইচ্ছা আত্মহত্যার ইঙ্গিত’

প্রকাশ: ০৪:০০ পিএম, ২৪ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ঘরের দরজা ভেঙে বরেণ্য রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে কুমিল্লা শহরে নিজেদের বাড়িতে আত্মহত্যা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা। এ ধরনের আত্মহত্যার ঘটনা চলছে। আত্মহত্যা প্রতিরোধের উপায় কী অথবা আত্মহত্যা করতে চাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ মানুষটির প্রতি পরিবার, সমাজ, গণমাধ্যমের ভূমিকা কতটুকু—এসব নিয়ে বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে কথা বলেছেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দীন আহমেদ। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডারের প্রতিবেদক খাদিজা ভৌমী।

বাংলা ইনসাইডার: মানুষ কেন আত্মহত্যা করে?

অধ্যাপক হেলাল উদ্দীন: মানসিক বিপর্যয়ের কারণেই বেশির ভাগ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। বিষণ্নতা, ব্যক্তিত্বের সমস্যা, সিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার ডিজঅর্ডার, মাদকাসক্তি ইত্যাদি মানসিক রোগের যথাযথ চিকিৎসা না করলে এবং সম্পর্কজনিত জটিলতা, ব্যর্থতা ইত্যাদি মেনে নিতে না পেরে কেউ কেউ আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। রেগে গিয়ে বা হঠাৎ আবেগপ্রবণ হয়ে কেউ আত্মহত্যা করলে তাকে আবেগতাড়িত আত্মহত্যা (ইমপালসিভ) বলা হয়। এ ছাড়া সংকল্পিত ও পরিকল্পিত (ডিসাইসিভ অ্যান্ড প্ল্যানড) আত্মহত্যার ক্ষেত্রে যিনি আত্মহত্যা করতে চান, দীর্ঘ সময় ধরে তিনি আত্মহত্যার পরিকল্পনা করেন। ২০১৮-১৯ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের করা মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে একটি জাতীয় জরিপের তথ্য বলছে, দেশের প্রাপ্তবয়স্কদের গড়ে ১০০ জনের মধ্যে ৭ জনই বিষণ্নতায় ভুগছেন। করোনার পর মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে বলে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে।

বাংলা ইনসাইডার: কেউ আত্মহত্যা করতে পারেন এটা বোঝার পর পাশে থাকা মানুষের করণীয় কি?

অধ্যাপক হেলাল উদ্দীন: এমন কোনো টিকা নেই যা দিয়ে বলা যাবে যে কেউ আত্মহত্যা করবে না। সফল মানুষও আত্মহত্যা করতে পারেন। কেউ আত্মহত্যা করার কথা চিন্তা করছেন এটা বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গে ওই ব্যক্তির জন্য উপযুক্ত ও বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসার উদ্যোগ নিতে হবে। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিই ঠিক করবেন কাউন্সেলিং, ওষুধ কোনটা লাগবে। দৈনন্দিন জীবনের আটপৌরে কথা বললে হবে না। এমন পরিস্থিতিতে ওই মানুষটির আশপাশে যারা থাকবেন, তারা কোনোভাবেই নিজেরা এ সমস্যার সমাধান বা পরামর্শ দেবেন না। সমবেদনা, করুণা দেখাতে গেলে হিতে বিপরীত হবে। ওই ব্যক্তির প্রতি সমানুভূতি প্রকাশ করতে হবে। তাকে বলতে হবে, যে কারও এমন সমস্যা হতে পারে, এর পেছনে তোমার কোনো দুর্বলতা বা দোষ নেই, এই সমস্যা থেকে উত্তরণে যথাযথ চিকিৎসা আছে। প্রথমেই মনে রাখতে হবে, বিষণ্নতা একটি রোগ। ক্যানসার, করোনাসহ অন্য রোগে আমরা যেমন নিজেরা চিকিৎসা না করে যথাযথ চিকিৎসকের কাছে রোগীকে নিয়ে যাই, এ ক্ষেত্রেও তাই করতে হবে। সাদি মহম্মদের মৃত্যুর পর তার ভাই নৃত্যশিল্পী শিবলী মহম্মদসহ অনেকেই বলেছেন, মা ও বোনের মৃত্যুর পর থেকে সাদি মহম্মদ ভেঙে পড়েছিলেন। কর্মময় জীবনে স্বীকৃতি না পাওয়াসহ অন্যান্য আক্ষেপও ছিল। সাদি মহম্মদ বিষণ্নতায় ডুবে গিয়েছিলেন। এ ক্ষেত্রে তার স্বজনেরা তাকে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তির কাছে নিয়েছিলেন কি না, সে ব্যাপারে কিছু জানা যায়নি। 

বাংলা ইনসাইডার: কেউ আত্মহত্যা করতে চাই, তা অন্যরা বুঝবেন কীভাবে?

অধ্যাপক হেলাল উদ্দীন: কেউ আত্মহত্যার কথা চিন্তা করলে তার আচরণে সেটা প্রকাশ পায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মৃত্যু আর আত্মহত্যা নিয়ে নিজের ইচ্ছার কথা প্রকাশ করতে পারে কেউ। নিজের ক্ষতি করা, সব কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা, নিজেকে গুটিয়ে রাখা, নিজেকে দোষী ভাবা, নিজেকে অপাঙ্ক্তেয় ভাবা, সারা রাত জেগে থাকা আর সারা দিন ঘুমানো, সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ না নেওয়া, শখের বিষয় থেকে দূরে থাকা, কোনো কাজে মনোযোগ দিতে না পারাসহ বিভিন্ন লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে। কোনো ব্যক্তির মধ্যে কমপক্ষে দুই সপ্তাহ ধরে এসব লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকলে সবাইকে সচেতন হতে হবে।

বাংলা ইনসাইডার: বলা হচ্ছে আত্মহত্যা একটি প্রতিরোধযোগ্য বিষয়। সঠিক সময়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারলে অনেকাংশেই আত্মহত্যা ঠেকানো যায়। এ বিষয়ে কিছু বলেন। 

অধ্যাপক হেলাল উদ্দীন: আত্মহত্যা প্রতিরোধে যার যার ক্ষেত্র থেকে একযোগে কাজ করে যেতে হবে। শিশুদের এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে তারা ব্যর্থতাকে মেনে নিতে পারে। শিক্ষার্থীদের সামাজিক দক্ষতা বাড়াতে তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। সংস্কৃতিচর্চায় উৎসাহিত করতে হবে। সব ধরনের মানসিক রোগ দ্রুত শনাক্ত করে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। পারিবারিক বন্ধনগুলো দৃঢ় করতে হবে। আত্মহত্যার উপকরণ, যেমন ঘুমের ওষুধ, কীটনাশকের সহজপ্রাপ্যতা কমানোর পাশাপাশি প্রেসক্রিপশন (ব্যবস্থাপত্র) ছাড়া ঘুমের ওষুধ বিক্রি বন্ধ করতে হবে। সঠিক সময়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারলে আত্মহত্যার ঘটনা আর ঘটবেই না, তা বলা না গেলেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আত্মহত্যার ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। মূল কথা, এসব লক্ষণ দেখা দিলে ওই ব্যক্তির প্রতি সবাইকে মনোযোগী হতে হবে। মনে রাখতে হবে, পরিবারে যদি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে থাকে, তবে পরিবারের অন্য সদস্যদেরও আত্মহত্যার ঝুঁকি থেকে যায়, তাই সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী অবন্তিকার আত্মহত্যার পর প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা নড়েচড়ে বসেছেন। আত্মহত্যা কোনো সমস্যার সমাধান নয়। অবন্তিকার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে কোনোভাবেই বিচার কাম্য নয়। ভুক্তভোগীকে বেঁচে থেকেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে। কোনো জায়গায় প্রতিকার চেয়ে ব্যর্থ হলে অন্য জায়গায় যেতে হবে। একইভাবে সমাজে অন্যায়ের প্রতিকার ও বিচার পাওয়ার সুব্যবস্থাও থাকতে হবে।

বাংলা ইনসাইডার: আত্মহত্যার সংবাদ পরিবেশনে গণমাধ্যমের ভূমিকা কেমন হবে?

অধ্যাপক হেলাল উদ্দীন: গণমাধ্যমে আত্মহত্যার সংবাদের অতি প্রচার, অপপ্রচার বা অদায়িত্বশীল সংবাদ পরিবেশনে কখনো কখনো আত্মহত্যার ঘটনা বাড়তে পারে। দেশে পরপর দুটো আত্মহত্যার ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, সাদি মহম্মদের ঘটনায় গণমাধ্যমগুলো সংবাদ পরিবেশনে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে। তবে অবন্তিকার ক্ষেত্রে তা সেভাবে হয়নি। অবন্তিকার ব্যক্তিগত জীবন বা তাকে গ্লোরিফাই (মহিমান্বিত) করে এমন অনেক কিছু প্রকাশ বা প্রচার করা হচ্ছে। এতে করে এমন বার্তা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে যে অবন্তিকা আত্মহত্যা করেছিলেন বলেই অভিযুক্তদের শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে। অবন্তিকার মতো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আরও অনেকে থাকতে পারেন, তারা এতে করে আত্মহত্যা করতে উৎসাহিত হতে পারেন। তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আত্মহত্যার খবর পরিবেশনে গাইডলাইন দিয়েছে। তা মেনে চলতে হবে। আত্মহত্যার খবর নির্মোহভাবে পরিবেশন করতে হবে। তবে গত ১০ বছরে বলা যায়, দেশের প্রথম সারির গণমাধ্যমগুলো এ বিষয়ে অনেক সংবেদনশীল আচরণ করছে।

বাংলা ইনসাইডার: আত্মহত্যা প্রতিরোধে আপনার পরামর্শগুলো জানতে চাই?

অধ্যাপক হেলাল উদ্দীন: কারও মধ্যে মৃত্যু–ইচ্ছা দেখা দিলে বিদ্রূপ হাসাহাসি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রল করা যাবে না। প্রতিটি মৃত্যু–ইচ্ছাকে আত্মহত্যার ইঙ্গিত হিসেবে ধরে নিতে হবে। এ সময় বন্ধু হয়ে তাদের পাশে থাকতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলতে হবে। মনের যত্ন নেওয়াটা যে গুরুত্বপূর্ণ, পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সেটা বোঝাতে হবে। আত্মহত্যার প্রসঙ্গ উঠলে তা এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। আত্মহত্যা যে কোনো সমাধান নয়, সেটাও বোঝাতে হবে। সব থেকে বড় কথা, মানসিক সমস্যাকে লোকলজ্জার ভয়ে লুকিয়ে রাখা যাবে না। মনোচিকিৎসকের সাহায্য নিয়ে প্রয়োজন হলে ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড টক

‘বিশ্বায়নের যুগে কোন দেশের পণ্য বর্জনের ডাক ভেলকিবাজি’

প্রকাশ: ০৪:০০ পিএম, ২৩ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন, ভারতের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ও মদদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে বা আছে—বিএনপির এধরনের কথাবার্তা স্রেফ তাদের হঠকারিতা। ভারত আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র। মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা যেভাবে আমাদের সহযোগিতা করেছে আপনি কি সেটা অস্বীকার করতে পারবেন কিংবা তাদের অবদানকে কোন ভাবে অবমূল্যায়ন করতে পারবেন? এটা কোন ভাবেই সম্ভব না। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ভারতের অবদানের জন্যই তারা আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু রাষ্ট্র।

বিএনপির ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান এবং আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলের আশঙ্কা নিয়ে বাংলা ইনসাইডারের সাথে একান্ত কথা বলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়িাম সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। পাঠকদের জন্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক শান্ত সিংহ।

অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ কখনও কোন বিশেষ শক্তি বা গোষ্ঠীর সমর্থনে বা সহযোগিতায় ক্ষমতায় আসেনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে এদেশের জনগণের ভোটের মাধ্যমে। জনগণের মন জয় করে। সুতরাং বিএনপির যেভাবে কথা বলছে এসমস্ত কথাবার্তা অবান্তর। তারা আন্দোলন করতে যেয়ে খেই হারিয়ে ফেলে এখন আবোল তাবোল কথাবার্তা বলছে। আওয়ামী লীগ এগুলোকে আমলে নিচ্ছে না।

তিনি বলেন, বিএনপির পণ্য বর্জনের আহ্বান ভেলকিবাজি ছাড়া আর কিছু নয়। এখন এই বিশ্বায়নের যুগে কোন দেশের পণ্য বর্জনের ডাক বিএনপির ভেলকিবাজি। প্রতিটি দেশের সাথে প্রতিটি দেশের বাণিজ্য থাকে। আমরা আমদানি করি আবার রপ্তানিও করি। পুরো বিশ্বই এভাবে চলছে পরস্পর পরস্পরের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করে দেশের স্বার্থেই। সেখানে যদি বিএনপি এধরনের কথাবার্তা বলে তাহলে তাদের চিন্তা ভাবনা কতটা সংকীর্ণ, দেশ নিয়ে তাদের ভাবনা কি, তারা আসলে দেশের উন্নয়ন চায় কিনা ইত্যাদি বিষয়গুলো চলে আসে। বিশ্বায়নের এই যুগে যেখানে সব দেশই সব দেশের সাথে কানেক্টিভিটি বাড়াচ্ছে সেখানে আপনি একটি দেশের পণ্য বর্জনের আহ্বান করছেন! আপনি কতটা আহমক আপনি বুঝতে পারছেন? এখন মহাত্মা গান্ধীর যুগ নয়। এই সময়ে এসে যদি আপনি মহাত্মা গান্ধীর স্লোগান দেন সেটা সম্ভব নয়। এখন এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের সম্পর্কের মূল বিষয়ই হলো বাণিজ্য। আপনি গায়ের চাদর খুলে আগুনে পুড়িয়ে দিলেন আর পণ্য বর্জনের ডাক দিলেই কি লোকে আপনার কথা শুনবে নাকি।

উপজেলা নির্বাচনে সংসদ নির্বাচনের মতো দলীয় কোন সহিংস ঘটনা আশঙ্কা রয়েছে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের এই প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, আমরা আশঙ্কা করছি আবার করছি না উভয়ই। আমরা চেষ্টা করব আমাদের নেতাকর্মীদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ রাখার। তবে যেহেতু নির্বাচন উন্মুক্ত  থাকছে সেজন্য কিছুটা সহিংসতা হয়তো হতে পারে। তবে এটা কোন বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে না।



মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন