ইনসাইড টক

`সংকটকালে আমরা উঠে দাঁড়াতে পারি এই মেসেজটা আরও জোরে শোরে দিতে হবে`

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪:০০ পিএম, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০


Thumbnail

সংকটকালেও যে আমরা উঠে দাঁড়াতে পারি এই মেসেজটা আরও জোরে শোরে সমাজকে দিতে হবে। আসলেই দুর্যোগে-দু:সময়ে জেগে ওঠে বাংলাদেশের সাহসী মানুষ। জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার বাংলাদেশের মানুষ ঝড়-ঝাপটা,একাধিক বন্যা এবং করোনা সংকট একযোগে মোকাবেলা করেই সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাঙালির এই লড়াকু মন-মানসিকতাই অভাবনীয় এই করোনাকালে বাংলাদেশের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। এই পরিস্হিতিতেও আমাদের উন্নয়ন অভিযাত্রাকে কি করে টেকসই করা যায় সে বিষয়ে বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডারের নিজম্ব প্রতিবেদক মির্জা মাহমুদ আহমেদ।

বাংলা ইনসাইডার: করোনাকালে অর্থনীতির ধাক্কা কেমন সামাল দেয়া গেল…….


ড. আতিউর রহমান: করোনাকালের অর্থনীতি সারা বিশ্বেই এক অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেন্জ মোকাবেলার লড়াই চলা কালেই হঠাৎ আসে এই করোনার আঘাত। আর এই আঘাতে সারা বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যখাতের অব্যবস্থাপনা উম্মোচিত হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাস্হ্যখাত করোনা মোকাবেলায় প্রথমদিকে অতটা প্রস্তুত না থাকলেও ধীরে ধীরে এই সংকট সামলে উঠছে। যতই দিন যাচ্ছে ততই প্রাইভেট এবং পাবলিক হাসপাতালগুলোতে কোভিড রোগির ব্যবস্হাপনা অনেকটাই সামলে নেয়া সম্ভব হচ্ছে। সরকার, চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট সকল অংশিজন করে করেই শিখছেন। ঠেকে ঠেকে বুঝে উঠছেন। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বজুড়েই করোনা সংক্রমণের তীব্রতা কমে গেছে একথা বলার সময় এখনও আসেনি। তবে এখনও আমার মনে হয়, নির্ভরযোগ্য টিকা না আসা পর্যন্ত সর্বত্রই এক ধরনের অনিশ্চয়তা থেকেই যাবে। আর অনিশ্চয়তাই ব্যবসা-বানিজ্যের বড় শত্রু। সেদিক থেকে বিচার করলে আমাদের অর্থনীতি অন্য অনেক দেশের চেয়ে ভালো করছে। তার কারণ আমাদের বিচক্ষণ নেতৃত্বের গুণে আমরা আগে ভাগে কিছু উদ্যোগ নিয়েছিলাম। সেজন্যে অর্থনীতিতে আমরা একটা আস্থার পরিবেশ তৈরি করতে পেরেছি। এই আস্থার পরিবেশ কোন অবস্থাতেই যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য সবাইকে সাবধান থাকতে হবে। এই আস্থার পরিবেশ রক্ষা করা যায় তখনই যখন সাধারণ মানুষ মনে করবেন আমাদের কষ্টটা সরকার বুঝছে। জনগণ সর্বদাই ভাবেন-‘আমরা যে কস্টে আছি’ এটা যেন সরকার বোঝে। এরমধ্যে আমরা দেখতে পেয়েছি সরকারের সর্ব্বোচ পর্যায় থেকে সাধারণ মানুষের দুঃখ কষ্ট বুঝবার একটা চেষ্টা  আছে। দু:খী মানুষের দু:খ দূর করার আন্তরিক প্রচেষ্টা সর্বোচ্চ নেতৃত্বের মাঝে লক্ষ করেছি। এই শক্তিটাই আমাদের কাজে লাগাতে হবে। সরকার যে বুঝতে চাইছে সমস্যাগুলো এবং সীমিত সম্পদ সত্ত্বেও সাধ্যমতো সেসবের সমাধানের পথ খুঁজছেন সে বিষয়টি আরও সহজ করে জনগণকে বলতে হবে। স্বাস্হ্যখাতসহ অনেক খাতেই বড় ধরণের অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনা নিশ্চয়ই ঘটেছে। তবে একদিনে তা ঘটেনি। পুরো সিস্টেমেই এই গলদ। তা সত্ত্বেও খানিকটা ঝুঁকি নিয়ে হলেও এসবের মোকাবেলা করবার যে সাহস বর্তমান সরকার দেখাচ্ছে,সেগুলো ধরবার যে মানসিকতার প্রকাশ ঘটাচ্ছে তাকেও কিন্তু আমাদের প্রসংশা করতে হবে। আমাদের গণমাধ্যমের এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। নেতিবাচক বিষয়গুলো তুলে আনার পাশাপাশি ইতিবাচক কাজগুলোর কথাও বলা উচিত। অনেক সাহসী কাজ হচ্ছে যেগুলো আমরা আগে তেমনটি দেখিনি। নিজের দলের হলেও রেহাই দেয়া হচ্ছে না। নি:সন্দেহে এত বড় বড় দুনীর্তির খবরে সমাজ বিক্ষুব্দ হবারই কথা। আবার এসব দুনীর্তিকে মোকাবেলা কররার যে চেষ্টাও করা হচ্ছে সেই ইতিবাচক দিকটিও সামনে আনা দরকার। আর তা করা হলেই ‘বিজনেস কনফিডেন্স’ বাড়তে পারে। এভাবেই মানুষের কনফিডেন্স  ও তার পাশাপাশি বিজনেস কনফিডেন্সও বাড়ানো সম্ভব। সেই সঙ্গে অর্থনীতির জন্য অপরিহার্য সমাজে আস্থার পরিবেশও বাড়ে। করোনাকালে জীবন ও জীবিকা সংরক্ষণের জন্য কেউ কল্পনাও করতে পারেননি যে এপ্রিল মাসেই আমরা একলক্ষ কোটি টাকার বেশি একাধিক প্রণোদনা প্যাকেজ দিতে পারবো। রাজস্ব আদায় থমকে গেছে। ব্যবসা-বানিজ্য বন্ধ। তবু বাজেট ঘটতি বাড়িয়ে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যালেন্সশীট সম্প্রসারণ করে, নানামুখী পুন: অর্থায়ন কর্মসূচি চালু করে, নানাবিধ রিলিফ ও সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার যে দু:সাহস মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এতো দ্রুত দেখিয়েছন তা সত্যি বিরল। এই প্রণোদনা প্যাকেজগুলো দেয়ার কারণে বড় বড় শিল্পপতিরা তাদের ফ্যাক্টরীগুলোকে খোলা রেখেছেন। গামেন্টর্স ফ্যাক্টরীর শ্রমিকদের বেতন দেবার জন্য তাদের মালিকদের মাত্র দুই শতাংশ হারে ঋণের ব্যবস্হা করেছে সরকার। মোবাইল আর্থিক সেবার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সমন্বয়ে ব্যাংকগুলো সরাসরি শ্রমিকদের মোবাইলে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। তাই গার্মেন্টসগুলো চালু রাখা গেছে। এর সুফল এখন আমরা পাচ্ছি। আমাদের রপ্তানির হার ইতিবাচক ধারায় ফিরে এসেছে। এছাড়াও অনান্য ফ্যাক্টরীও খুলে গেছে কৃষির পুনরুদ্ধারের জন্য আলাদা একটা প্যাকেজ দেয়া হয়েছে। তবে এ কথা সত্যি যে বড়রা যেমন তাড়াতাড়ি ব্যাংকের কাছ থেকে প্রণোদনার টাকাটা নিতে পেরেছে,ছোট এবং মাঝারিরা কিন্তু ততটা দ্রুত তা নিতে পারেনি। যাতে ছোট এবং মাঝারি শিল্পকেও প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ দ্রুত ছাড় করা হয় সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও প্রশাসন চাপ দিয়ে যাচ্ছে। তাদের এ উদ্যোগ নেওয়ার ফলে কৃষিঋণ পরিস্থিতির দিন দিন উন্নতি হচ্ছে। আজকেই (২২ সেপ্টেম্বর) খবর বের হয়েছে যে জুলাই-আগষ্ট মাসে কৃষিতে ঋণের হার গত বছরের ওই সময়ের চেয়ে ৭৪ শতাংশ বেড়েছে। তারমানে চাপ দেয়াতে কাজ হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে একটা মনিটরিং সিস্টেম দাঁড় করিয়েছে। এই সিস্টেমটাকে আরও আধুনিক, আরও প্রযুক্তি নির্ভর, আরও আর্টিফেসিয়াল ইন্টিলিজেন্স ভিত্তিক করে আমাদের এই পুরো প্রণোদনা প্যাকেজটাকে একটা আলাদা মনিটরিং সিস্টেমের মধ্যে সর্বক্ষণ রাখতে হবে। শুধুমাত্র টাকাটা বিতরণই যথেষ্ট না। এই টাকাটা যে উদ্দেশ্যে বিতরণ করা করা হয়েছে সেখানে যাচ্ছে কি না সেটাও মনিটর করতে হবে। এই মনিটরিংটা সর্বক্ষন চালিয়ে যেতে হবে। আজকাল প্রযুক্তির এই যুগে মনিটরিং খুবই সহজ। মনিটরিং করার এই সুযোগটা নিতে হবে এবং ব্যবহার করতে হবে।
এটা যদি আমরা বজায় রাখতে পারি তাহলে কিন্তু আমাদের অর্থনীতির চাকা যেভাবে ঘুরতে শুরু করেছে তা কিন্তু আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।
টিকা পেতে খানিকটা দেরি হলেও আমরা যেভাবে নির্বাচিতভাবে অর্থনীতি খুলে যেভাবে দিয়েছি সেই প্রক্রিয়াটা বজায় রাখতে হবে।পাশাপাশি স্বাস্হ্যবিধি মানার ওপর প্রবল চাপ অব্যাহত রাখতে হবে। মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং বারে বারে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার বিষয়গুলো অবশ্যই মানতে বাধ্য করতে হবে।
এশিয়ায় অর্থনৈতিক উন্নয়নে কোভিডের মধ্যেও যারা ভালো করছে সেখানে এক নাম্বারে আছে বাংলাদেশ। তারপরে ভিয়েতনাম এবং চীন। সুতরাং আমাদের এ সাফল্য ধরে রাখতে হবে। সাফল্য ধরে রাখার পূর্বশর্ত হলো সকল অংশিজনের মধ্যে সমন্বয় ধরে রাখা।
নিরাশা, হতাশা বেশি ছড়িয়ে লাভ নেই। সমাজকে আশাবাদী রাখতে সকলকেই উদ্যোগী হতে হবে। হতাশা বেশি ছড়ালে উদ্যোক্তারা ভয় পেয়ে যান। এত সংকট সত্ত্বেও যে আমরা উঠে দাঁড়াতে পারি সেই মেসেজটা আরও জোরে শোরে আমাদের সমাজকে দিতে হবে। একথা সত্যি যে আমাদের বিভিন্ন সেক্টরে গর্ভনেন্স সমস্যা  আছে। প্রায় সব ক্ষেত্রেই যে আমাদের সমন্বয়ের অভাব আছে-সে কথাও ঠিক। । কিন্তু এও সত্যি যে আমরা এসব সমস্যা থেকে উত্তরণের চেস্টাও করছি। এ কথাগুলোও আমাদের বলতে হবে।
একলক্ষ কোটি টাকা বিতরণে ব্যাংক এগিয়ে এসেছে। নানা দুর্বলতা সত্ত্বেও ব্যাংকাররা কাজ করছে বলেই অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। তাদের সমালোচনা আমরা নিশ্চয়ই করবো। সেই সাথে তাদের সাফল্যের কথাও বলবো। গ্রামে গ্রামে মোবাইল ব্যাংকিং এবং এজেন্ট ব্যাংকিং টাকা পৌছে দিচ্ছে। মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে দিনে দুহাজার কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের এ গল্পটাও তো বলতে হবে। শুধু সমালোচনা না করে সাফল্যের কথাও তুলে ধরতে হবে।
ভারতে এবং বাংলাদেশে ব্যাংকগুলো ব্যবসায়ীদের অনেক ছাড় দিয়েছে। এই ছাড় দেয়ার ফলে সত্যি যদি উৎপাদন বাড়ে এবং ব্যবসা বানিজ্য বাড়ে তাহলে আমাদের ওতটা হতাশ হবার কারণ নেই। সময়মতো এ টাকাটা আমরা যেন তুলে আনতে পারি তার জন্য যা যা করা দরকার সেই পরিকল্পনা এখনই করতে হবে। দুর্যোগের এই বছর খানিকটা উদার দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে আমাদের সবকিছু দেখতে হবে। আমার মনে হয় এ বছর বাংলাদেশের অর্থনীতি একটা ভি-শেপ পুনরুদ্ধারের দিকেই এগুবে। যদি আমরা টিকা পেয়ে যাই তাহলে কিন্তু আমাদের অর্থনীতির আসলেই একেবারে খাড়াখাড়ি ভাবে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে।


বাংলা ইনসাইডারঃ আসন্ন শীতে করোনার সেকেন্ড ওয়েভ আসার আশস্কা করা হচ্ছে। করোনার সেকেন্ড ওয়েভ থেকে অর্থনীতিকে বাঁচাতে কি ধরনের পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে বলে মনে করেন।


ড. আতিউর রহমান: শীতকালে করোনার প্রকোপ বাড়তে পারে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যথার্থই সময় মতো দেশবাসীকে এবং প্রশাসনকে এ বিষয়ে আগাম সর্তকর্তা দিয়েছেন। এখন উচিত হবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে যে ধরনের সমন্বয়  দরকার বলে বলেছেন সে সম্বনয়গুলো যেন একেবারে ‘রেজাল্ট-বেইজড’ করা যায় তার একটা রুপরেখা তৈরি করার প্রয়োজন রয়েছে। প্রত্যোক বিভাগকে যুক্তকরে  এ কাজটি দ্রুত করে ফেলা দরকার। যেকোন সংকটে আমরা যেন আরেকজনের পাশে দাড়িঁয়ে এটাকে মোকাবেলা করতে পারি সেরকম প্রস্তুতি আমাদের থাকতে হবে। বিপর্যয় মোকাবেলায়,বিশেষ করে,প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবেলায় বাংলাদেশের সাফল্য অনেক। এটা সম্ভব হয়েছে মানুষের লড়াই করবার মানসিকতা এবং সরকারের যে স্ট্যান্ডিং অর্ডার আছে অর্থাৎ দুর্যোগ মোকাবেলা করার যেসব স্হায়ী নির্দেশনা আছে সেগুলোকে কাজে লাগানোর ফলে। আর আছে নেতৃত্বের বলিষ্ঠতা । এসব প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি দিয়েই আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে থাকি। তাই দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের সুনাম আছে বিশ্ব জুড়ে।


প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করবার যে অভিজ্ঞতা,যে সাফল্য আমাদের রয়েছে সেসব যেন আমরা করোনা সংকট মোকাবেলায় কাজে লাগাই। সেই কথাটিই আকারে ইঙ্গিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নানা সময় বলেছেন। আমরা কিন্তু ওই অভিজ্ঞতার শিক্ষা করোনা মোকাবেলায় কাজে লাগাতে পারি। এবং এটা যদি কাজে লাগাতে পারি তাহলে নিশ্চয় সমাজে এক ধরনের কনফিডেন্স তৈরি হবে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে. উদ্যোক্তাদের মধ্যে, কৃষকদের মধ্যে— বস্তুত সবার মধ্যে এক ধরনের আস্থার পরিবেশ তৈরি হবে।
ম্বাস্থ্য বিভাগের ওপর নজর রাখতে হবে ডাক্তারদের পেশাদারিত্ব নিয়ে যাতে কোন বিভ্রান্তি তৈরি না হয়। তারা যেন সঠিকভাবে চিকিৎসা করতে পারেন তার পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। শীতকালে হয়তো রোগি সংখ্যা বাড়তে পারে। সেজন্য আমাদের হাসপাতালগুলোকে নতুন করে এখনই সজ্জিত করা দরকার। আইসিইউ বাড়ানো দরকার। অক্সিজেন ফ্যাসিলিটি বাড়ানো দরকার। আরও যা যা দরকার সেগুলো বাড়িয়ে সংকট মোকাবেলার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত থাকতে হবে। যেকোনো সমস্যা মোকাবেলার জন্য আমাদের তৈরি থাকতে হবে। এই কাজগুলো যদি করা হয় তাহলে অর্থনীতিতেও এসবের একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। ব্যবসা-বানিজ্যের  উন্নতর পরিবেশ বিরাজ করবে।


বাংলা ইনসাইডারঃ করোনায় প্রান্তিক মানুষেরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। প্রান্তিক মানুষদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে সরকারের কোনদিকটাতে মনোযোগ দেয়া উচিত বলে মনে করেন।


ড. আতিউর রহমান: আমাদের কৃষি কিন্তু আমাদের দারুণভাবে সহায়তা করেছে। প্রান্তিক মানুষদের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে কৃষি বেশ বড় ভূমিকা পালন করেছে।  কৃষিতে যদি আমরা এত ভালো না করতাম তাহলে আমাদের চাল,ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহে সমস্যা দেখা দিতো। আমরা আশা করছি খাদ্য ঘাটতির সমস্যাটা এবার আমাদের হবে না। আবার যে বন্যা আসছে এটা আমাদের জন্য একটু চিন্তার বিষয়। বন্যা আসার কারণে যে আমনটা আবার লাগিয়েছে কৃষক তার খানিকটা ক্ষতি হতে পারে। তাছাড়া বেশিদিন যদি বন্যা থাকে তাহলে কিন্তু রবিশস্যেরও ক্ষতি হবে। সুতরাং এখন থেকেই কৃষি বিভাগের উচিত বন্যার রকমফেরটা কেমন হবে,কতোদিন থাকবে এগুলো হিসেব করে তারপর কি করতে হবে তার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাহলে বন্যা চলে যাওয়ার সাথে সাথে কোন ধরনের ফসল আমাদের লাগাতে হবে সেটা ঠিক করে রাখা যাবে। তারজন্য বীজ প্রস্তুত,সম্প্রসারণসহ যা যা দরকার তা কৃষি বিভাগ আগেভাগেই করে রাখতে পারে। এই কাজগুলো এখনই শুরু করে দেয়া উচিত। আমার ধারণা কৃষি বিভাগ ইতিমধ্যে প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছে। বোরো ফসলের জন্যও প্রস্তুতি নিতে হবে। বোরো ফসলের জন্য বীজ, সার, ঋণ যাতে ঠিক মতো কৃষকের কাছে পৌছায় এবং উৎপাদনের সাথে সাথে প্রকিউরমেন্ট, প্রসেসিং,এক্সপোর্ট, মার্কেটিংসহ ভ্যালু চেইনের যে সমস্ত সহায়তা দরকার সেগুলো যেন সরকার এবং অন্যান্য অংশিজন দিতে পারে তার প্রস্তুতি এখনি নিতে হবে। ভালো খবর হচ্ছে শাক সবজির এক্সপোর্ট বাড়তে শুরু করেছে। সুতরাং আমার মনে হয় এতে করে বাজারে দামটা বজায় থাকবে। কৃষি পণ্যের দাম স্থিতিশীল না থাকলে জনজীবনে সমস্যা হয়।
সা্প্লাই এবং ডিমান্ড ঠিক আছে একথা আমরা স্পষ্ট করে সময়মতো বলতে পারি নি বলে সম্ভবত পেঁয়াজ নিয়ে খানিকটা সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে। এখন দাম খানিকটা কমেছে। এই মেসেজটা এখন দেয়া হয়েছে যে আমরা সাপ্লাইটা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। কোন জায়গায় সাপ্লাই এর কোন ঘাটতি আছে কি না সেটা যেন আমরা আগেভাগে আন্দাজ করতে পারি। সেটার জন্য আগে ভাগে কর্ম পরিকল্পনা করে সাপ্লাই লাইনটাকে আমাদের সঠিক রাখতে হবে। আজকের দিনের অর্থনীতির বড় অংশই সাপ্লাই চেইনের ওপর নির্ভরশীল। আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে সাপ্লাই চেইনটাকে আরও মজবুত করবো,আরও আধুনিক করবো, আরও ডিজিটাল করবো। লজিস্টিক সেইভাবে তৈরি করবো। তাহলে আমাদের অর্থনীতি এখন যেভাবে এগুচ্ছে তা আরও জোরে এগোবে।
আমাদের ছোট উদোক্তা, মাঝারি উদ্যোক্তা, কৃষকদের দিকে আরও বেশি করে নজর দিতে হবে। প্রশাসন, ব্যাংক, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, এনজিও সবাই মিলে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। একসঙ্গে থাকতে হবে সর্বত্র,সবসময়।
তাহলেই আমাদের অর্থনীতি এগিয়ে যাবে জোর কদমে। এর পাশাপাশি যারা কাজ হারিয়েছে, যারা নতুন করে গরিব হয়েছে তাদের সুরক্ষা দিতে হবে। নগর দারিদ্র নিরসনে আলাদা নজর দিতে হবে। বায়ু দূষণ রোধে বিশেষ মনোযোগী হতে হবে।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড টক

‘কেউ হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে দ্রুত ছায়াযুক্ত স্থানে নিতে হবে’

প্রকাশ: ০৪:০০ পিএম, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেছেন, কেউ যদি হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয় তাহলে তাকে যত দ্রুত সম্ভব ছায়াযুক্ত স্থানে নিতে হবে। ঘরে থাকলে ফ্যান ও এসি চালু করে তাকে ঠান্ডা স্থানে রাখতে হবে। ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছে দিতে হবে। বেশি বেশি পানি, ফলের জুস পান করাতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তির প্রেশার কমে যাওয়া, প্রস্রাব বন্ধ, পালস কমে যাওয়া বা অজ্ঞান হয়ে গেলে দ্রুত আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

গত কয়েক দিন ধরে সারা দেশের ওপর বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপদাহ। আবহাওয়া নিয়ে সহসাই কোনো সুসংবাদ নেই। এরকম তাপদাহ আগামীতে আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ রকম এক অস্বস্তির মধ্যে কীভাবে নারী পুরুষ, বৃদ্ধ, শিশু কিশোর সুস্থ্ থাকতে পারে সে ব্যাপারে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ এসব কথা বলেছেন। পাঠকদের জন্য অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক শান্ত সিংহ।

অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, রোদে যারা কাজ করেন, তাদের একটানা দীর্ঘক্ষণ রোদে কাজ করা যাবে না। এতে মাথাব্যথা ও অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে, যা থেকে হিটস্ট্রোক হয়। হিটস্ট্রোক হলে যে কেউ মারাও যেতে পারেন। হিট স্ট্রোকের মূল ঝুঁকি মূলত যারা অনেকক্ষণ রোদে কাজ করে তাদের। মানব দেহে স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট। প্রচণ্ড গরমে মানুষের শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে প্রবল। এ অবস্থায় শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে গেলে হিট স্ট্রোক হয়। শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে ১০৫-এর উপর উঠলে ঘাম হয় না, মাথা ব্যথা, অস্থিরতা, বুক ধড়ফড়, ক্লান্তি, অবসাদ হয়। এক সময় অজ্ঞান হওয়ার মতো অবস্থা হয়, অজ্ঞানও হয়ে যায় অনেকে। এটি বিপজ্জনক। এটি খুবই সিরিয়াস, সাথে সাথে চিকিৎসা না দিলে রোগী মারাও যেতে পারে। 

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এই অধ্যাপক বলেন, দেশে বর্তমানে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। এ তাপমাত্রা শিশু থেকে বয়স্ক সবার জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। এখন সুস্থ থাকতে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। অপ্রোয়জনে একদম বাইরে ঘোরাঘুরি করা যাবে না। যারা কাজের জন্য বাইরে থাকেন, তাদের ছাতা ব্যবহার বা মাথায় কাপড় দিতে হবে। কাজের ফাঁকে এক-দুই ঘণ্টা পর পর ১০-১৫ মিনিটের জন্য ছায়াযুক্ত স্থানে বসবেন। একটানা রোদের মধ্যে থাকা যাবে না। লবণ মিশ্রিত পানি খেলে ভালো হয়, স্যালাইন খেতে পারেন। ডিহাইড্রেশন যাতে না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। 

আরেকটা জরুরী বিষয় হলো, ঢিলেঢালা কাপড় পরতে হবে। জিন্স না পরাই ভালো। 

বয়স্ক এবং যারা ডায়বেটিস, কিডনিসহ বিভিন্ন ক্রনিক রোগে ভোগেন, তাদের জন্য ঝুঁকিটা বেশি। তারা অপ্রয়োজনে বাইরে যাবেন না। 

শিশুদের বিষয়ে ডা. আবদুল্লাহ বলেন, গরমে বাচ্চাদের জন্যও ঝুঁকি বেশি। এখন স্কুল বন্ধ তাই বাচ্চাদের বাইরে বের না করাই ভালো। বাচ্চাদের বেশি বেশি পানি খাওয়াতে হবে। তারা যেন রোদের মধ্যে অনেক বেশি দৌড়ঝাঁপ না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, হিট স্ট্রোকের পাশাপাশি গরমে ডায়রিয়া, টাইফয়েড, জন্ডিস বাড়ছে। অ্যাজমা, হাঁপানি যাদের আছে, গরমের কারণে তাদের শ্বাসকষ্ট ওঠানামা করছে। তাদেরও সতর্ক থাকতে হবে।

পানিশূন্যতা গরমে সবচেয়ে বড় সমস্যা উল্লেখ্য করে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এই অধ্যাপক বলেন, এই গরমে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। ওরাল স্যালাইন খাওয়া ভালো। এছাড়া পানিতে লবন মিশিয়েও খাওয়া যাবে। তবে রাস্তায় বিক্রি হওয়া লেবু পানি, আখের জুস খাওয়া যাবে না। অস্বাস্থ্যকর, বাসি কোনো খাবারও পরিহার করতে হবে। শিশু ও বয়স্কদের যতটা সম্ভব ঘরে রাখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, শিশু, নারী ও বয়স্কদের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস রোগীদের সতর্ক থাকতে হবে। কারণ এসব রোগীর হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড টক

‘বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা প্রশাসনের এখতিয়ারে নেই’

প্রকাশ: ০৪:১১ পিএম, ০১ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না বলেছেন, বুয়েটে শুধু ছাত্রলীগ ছাত্ররাজনীতি চায় না। অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলোও তো ছাত্ররাজনীতি চায়। তাহলে কেন শুধু এখন সামনে ছাত্রলীগের নাম সামনে আসছে। বুয়েটে যারা ছাত্ররাজনীতি চাচ্ছে তাদের প্রথম পরিচয় তারা বুয়েটের ছাত্র। আর বুয়েট কর্তৃপক্ষ যেটা করেছে যে, ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করেছে, এটা বুয়েট প্রশাসন করতে পারে না। তাদের এখতিয়ার নেই। দেশের প্রচলিত মৌলিক আইন যেখানে আমাকে অধিকার দিয়েছে বুয়েট সেটা নিষিদ্ধ করতে পারে না। আইনে বলা হয়েছে, দেশের প্রচলিত আইন এবং নিয়মের মধ্যেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত হবে। সেখানে বুয়েট তো বাংলাদেশের বাইরের কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়। দেশের নিয়মেই তো বুয়েট চলার কথা। কিন্তু সেখানে বুয়েট প্রশাসন কীভাবে আমার মৌলিক অধিকার রহিত করে? আমার ক্যাম্পাসে আমি মুক্ত চিন্তায় ঘুরবো, আমি কথা বলবো, আমি স্লোগান দিবো, আমি বক্তৃতা দিবো, আমি পড়াশুনা করবো। এটা থেকে বুয়েট কর্তৃপক্ষ কীভাবে আমাকে বঞ্চিত করতে পারে।

বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ এবং ছাত্ররাজনীতি আবার ফিরিয়ে আনার প্রসঙ্গে নিয়ে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় ইসহাক আলী খান পান্না এসব কথা বলেছেন। পাঠকদের জন্য ইসহাক আলী খান পান্না এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক শান্ত সিংহ।

ইসহাক আলী খান পান্না বলেন, যারা প্রগতির কথা বলেন না, মৌলবাদ বা জঙ্গিবাদের কথা চিন্তা করে তারাই তো আজ ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করতে চায়। আপনি দেখেন, একটি জলালয়ে যদি পানির কোন ঢেউ না হয়, সেটা যদি কোন কারণে ব্যবহার না হয় তাহলে সেখানে মশা মাছি আর্বজনা জন্মায়। সেখানে থেকে এক সময় দুর্গন্ধ ছাড়ায়। ঠিক তেমনি ভাবে বুয়েটে যদি আপনি মুক্ত চিন্তার চর্চা না করতে দেন তাহলে এর অন্তরালে মৌলবাদী শক্তির উত্থান ঘটবে, ধর্মান্ধের উত্থান ঘটবে। যারা স্বাধীনতাকে এখনও মেনে নেননি আপনি তাদেরকে শক্তিশালী করবেন। অথচ প্রগতির কথা যারা বলে সেটা  ছাত্রলীগ হোক কিংবা ছাত্র ইউনিয়ন হোক এমনকি ছাত্রদলও যদি হয় তাহলে তারা সেখানে কথা বলতে পারবে না কেন।

তিনি বলেন, আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা পড়াশুনা করেছি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা ছাত্ররাজনীতি করেছি, এই ক্যাম্পাসে আমরা আমাদের অধিকারের কথা বলেছি, স্বাধীনতার কথা বলেছি, গণতন্ত্রের কথা বলেছি, স্বৈর শাসকের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করেছি। সেখানে শিবির কোন দিন স্লোগান মিছিল কিছু পরিচালনা করতে পারেনি, করেনি। তারা বুয়েট এবং ঢাকা মেডিকেলে তাদের কার্যক্রম করেছে। একই ভাবে সেই বুয়েটে এখনও তাদের কর্মকাণ্ড চলে। আর ছাত্রলীগ সহ অন্যান্য সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ড চলবে না সেটা তো হতে পারে না। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো আপনার শুধু ছাত্রলীগ টার্গেট কেন? ছাত্রলীগের ব্যানারে যারা ছাত্ররাজনীতি করে তারাও তো বুয়েটের ছাত্রছাত্রী। তাহলে বুয়েটের শিক্ষার্থীদেরও তো কথা বলার অধিকার রয়েছে, তারও হলে থাকার অধিকার রয়েছে। তাহলে কেন আপনি তাকে এসব থেকে বঞ্চিত করছেন। বাংলাদেশের সকল অনৈতিক, অগণতান্ত্রিক, স্বৈরচারী মনোভাবের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ সব সময় কথা বলেছে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ছাত্রলীগ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। এখন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এবং তার নির্দেশে বাংলাদেশে স্বৈর শাসনের পতন, মৌলবাদের পতন এবং সকল আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্রলীগ। সেই ছাত্রলীগ বুয়েটে মৌলবাদের যে চর্চা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে কথা বলেছে। সুতরাং এবং অবশ্যই সেটা সঠিক করেছে। অনতিবিলম্বে বুয়েটের সকল ছাত্রছাত্রীদের সবার মুক্ত বিচরণের সুযোগ করে দেয়া দরকার। তারা যেন প্রগতির কথা বলতে পারে, মুক্তিযুদ্ধের কথা বলতে পারে, গণতন্ত্রের কথা বলতে পারে সেই পরিবেশ তাদের দিতে হবে। এখন বুয়েটকে নিয়ে যে খেলা চলছে প্রকারন্তে বাংলাদেশে এরা স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির পালন করছে। এটা হতে পারে না। আপনি বুয়েট কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসা করেন আমাদের স্বাধীনতা দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি, পহেলা বৈশাখ, বুদ্ধিজীবী দিবস তারা এগুলো পালন করে কিনা। এগুলো অবশ্যই তাদের করতে হবে। বুয়েট স্বাধীনতা বাংলা ভূখন্ডে বাইরে কোন প্রতিষ্ঠান না। অতএব ছাত্রলীগ যে দাবি তুলেছে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি ফিরিয়ে আনতে হবে এটা যুক্তি যুক্ত।

সাবেক ছাত্রলীগ এই নেতা বলেন, বুয়েটে যে অনাকাঙ্খিত ঘটনাগুলো ঘটেছে সেগুলোর আমরা অবশ্যই নিন্দা জানাই। এর সঙ্গে যারা জড়িত আইনের মাধ্যমে তাদের বিচার হবে, একাডেমিক কাউন্সিলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করে বুয়েটকে অন্ধকারে রেখে মৌলবাদী শক্তিকে পৃষ্টপোষকতা করার কোন সুযোগ নাই বুয়েট কর্তৃপক্ষের। অনতিবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে বুয়েটকে সকলের জন্য উন্মূক্ত এবং সুন্দর একটি পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের ব্যানারে যারা অপকর্ম করেছে তাদের দায় সংগঠন নিবে না উল্লেখ্য করে ইসহাক আলী খান পান্না বলেন, কোন ব্যক্তি, কোন ছাত্র যদি কোন ধরনের অপকর্মের সাথে জড়িত হয়ে থাকে এটা তার ব্যক্তিগত অপরাধ। কারণ ছাত্রলীগ কোন ধরনের অপরাধকেই সমর্থন করে না। যারা ইতোমধ্যে কোন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়েয়ে সংগঠন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। সুতরাং এগুলোকে অজুহাত দেখিয়ে রাজনীতি বন্ধ করা যাবে না। 



মন্তব্য করুন


ইনসাইড টক

‘বঙ্গবন্ধু যেখানে বলেছেন ৪ শতাংশ দিতে, আমরা তার অর্ধেকও পারিনি’

প্রকাশ: ০৪:১৬ পিএম, ২৭ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেছেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে বিআইডিএস যে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সেটাই হচ্ছে প্রকৃত চিত্র। বিআইডিএসের গবেষণার প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা আছে। কারণ তারা কতগুলো গবেষণা পদ্ধতি নিয়ে কাজ করে যেগুলোর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে। সুতরাং বিআইডিএস যেটা বলছে সেটার সঙ্গে আমি দ্বিমত পোষণ করছি না।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলো থেকে পাস করার তিন বছর পরও ২৮ দশমিক ২৪ শতাংশ শিক্ষার্থী বেকার থাকছেন। গত রোববার বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএসের) এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। এ নিয়ে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতা করেন অধ্যাপক আবদুল মান্নান। পাঠকদের জন্য অধ্যাপক আবদুল মান্নান এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক শান্ত সিংহ।

অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, ভালো শিক্ষার জন্য সব কলেজগুলোতে ভালো এবং দক্ষ শিক্ষক দরকার। পাশাপাশি ভালো পরিবেশ সহ সুযোগ সুবিধা দরকার। কিন্তু আমাদের মেট্রোপলিটন শহরের বাইরে বেশির ভাগ কলেজগুলোর অবস্থা ভালো নয়। ভালো শিক্ষক পাওয়া যায় না। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো শিক্ষকতায় কেউ আসতে চায় না। এ সমস্ত কলেজগুলোর লাইব্রেরির অবস্থা করুণ। অনেক কলেজে লাইব্রেরিই হয়তো নেই।

তিনি আরও বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন যে সমস্ত কলেজগুলোতে বিজ্ঞান আছে সেগুলোর সব কলেজগুলো ল্যাবরেটরি সুবিধা নেই। একটা ভালো ল্যাবরেটরি জন্য প্রচুর বিনিয়োগ দরকার। সেটা আমাদের যথেষ্ট নাই। শিক্ষার উন্নয়ন মানে শুধু অবকাঠোমাগত উন্নয়ন নয়। শিক্ষা মান মানে অনেক কিছু। বিশেষ করে লাইব্রেরি, ল্যাবরেটরি এবং সবচেয়ে বড় কথা হলো ভালো শিক্ষক দরকার। কিন্তু বাংলাদেশের যে হারে স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে সে হারে আমাদের শিক্ষকের সংখ্যা বাড়েনি। পাহাড়ি দুর্গম এলাকা থেকে শুরু করে চরাঞ্চল সব এলাকাতে এখন কলেজ হয়েছে কিন্তু প্রতিটি কলেজে আমরা দক্ষ শিক্ষক নিশ্চিত করতে পারিনি। প্রয়োজনীয় ল্যাব, লাইব্রেরি নেই। অনেক কলেজ আছে যেগুলো আগপাছ কোন কিছু বিবেচনা না করেই মাস্টার্স চালু করেছে। কিন্তু এগুলো করতে হলে একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার ব্যাপার। আমরা শুধু সংখ্যার দিকে নজর দিয়েছি। গুণগত মানকে উপেক্ষা করেছি। যার ফলে আজকে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

শিক্ষার গুণগত মান বাড়াতে আমাদের অগ্রাধিকারগুলো কি কি জানতে চাইলে প্রখ্যাত এই শিক্ষাবিদ বলেন, গুণগত মান বাড়ানোর জন্য কোন শর্টকাট পদ্ধতি অনুসরণ করলে হবে না। গুণগত মান বাড়াবে হলে শিক্ষকদের গুণগত মান বাড়াতে হবে আগে। শিক্ষকদের সুযোগ সুবিধা বাড়তে হবে, পেশা হিসেবে শিক্ষকতাকে আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে। আমাদের দেশের মেধাবীরা সবাই সরকারি চাকরি দিকে ঝুঁকছে। সবাই আমলা হতে চায়। কিন্তু আমাদের আমলারও দরকার আছে শিক্ষকও দরকার আছে। আবার ভালো সাংবাদিক বা ভালো গবেষকও দরকার আছে। এজন্য শিক্ষা খাতে আমাদের বরাদ্দ বাড়াতে হবে। বঙ্গবন্ধু সত্তরের নির্বাচনের বক্তৃতায় বলেছিলেন শিক্ষা খাতে জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দ দিতে হবে। আমরা সেখানে এখনও ২ শতাংশ দিতে পারিনি।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড টক

‘প্রতিটি মৃত্যু–ইচ্ছা আত্মহত্যার ইঙ্গিত’

প্রকাশ: ০৪:০০ পিএম, ২৪ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ঘরের দরজা ভেঙে বরেণ্য রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে কুমিল্লা শহরে নিজেদের বাড়িতে আত্মহত্যা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা। এ ধরনের আত্মহত্যার ঘটনা চলছে। আত্মহত্যা প্রতিরোধের উপায় কী অথবা আত্মহত্যা করতে চাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ মানুষটির প্রতি পরিবার, সমাজ, গণমাধ্যমের ভূমিকা কতটুকু—এসব নিয়ে বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে কথা বলেছেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দীন আহমেদ। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডারের প্রতিবেদক খাদিজা ভৌমী।

বাংলা ইনসাইডার: মানুষ কেন আত্মহত্যা করে?

অধ্যাপক হেলাল উদ্দীন: মানসিক বিপর্যয়ের কারণেই বেশির ভাগ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। বিষণ্নতা, ব্যক্তিত্বের সমস্যা, সিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার ডিজঅর্ডার, মাদকাসক্তি ইত্যাদি মানসিক রোগের যথাযথ চিকিৎসা না করলে এবং সম্পর্কজনিত জটিলতা, ব্যর্থতা ইত্যাদি মেনে নিতে না পেরে কেউ কেউ আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। রেগে গিয়ে বা হঠাৎ আবেগপ্রবণ হয়ে কেউ আত্মহত্যা করলে তাকে আবেগতাড়িত আত্মহত্যা (ইমপালসিভ) বলা হয়। এ ছাড়া সংকল্পিত ও পরিকল্পিত (ডিসাইসিভ অ্যান্ড প্ল্যানড) আত্মহত্যার ক্ষেত্রে যিনি আত্মহত্যা করতে চান, দীর্ঘ সময় ধরে তিনি আত্মহত্যার পরিকল্পনা করেন। ২০১৮-১৯ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের করা মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে একটি জাতীয় জরিপের তথ্য বলছে, দেশের প্রাপ্তবয়স্কদের গড়ে ১০০ জনের মধ্যে ৭ জনই বিষণ্নতায় ভুগছেন। করোনার পর মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে বলে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে।

বাংলা ইনসাইডার: কেউ আত্মহত্যা করতে পারেন এটা বোঝার পর পাশে থাকা মানুষের করণীয় কি?

অধ্যাপক হেলাল উদ্দীন: এমন কোনো টিকা নেই যা দিয়ে বলা যাবে যে কেউ আত্মহত্যা করবে না। সফল মানুষও আত্মহত্যা করতে পারেন। কেউ আত্মহত্যা করার কথা চিন্তা করছেন এটা বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গে ওই ব্যক্তির জন্য উপযুক্ত ও বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসার উদ্যোগ নিতে হবে। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিই ঠিক করবেন কাউন্সেলিং, ওষুধ কোনটা লাগবে। দৈনন্দিন জীবনের আটপৌরে কথা বললে হবে না। এমন পরিস্থিতিতে ওই মানুষটির আশপাশে যারা থাকবেন, তারা কোনোভাবেই নিজেরা এ সমস্যার সমাধান বা পরামর্শ দেবেন না। সমবেদনা, করুণা দেখাতে গেলে হিতে বিপরীত হবে। ওই ব্যক্তির প্রতি সমানুভূতি প্রকাশ করতে হবে। তাকে বলতে হবে, যে কারও এমন সমস্যা হতে পারে, এর পেছনে তোমার কোনো দুর্বলতা বা দোষ নেই, এই সমস্যা থেকে উত্তরণে যথাযথ চিকিৎসা আছে। প্রথমেই মনে রাখতে হবে, বিষণ্নতা একটি রোগ। ক্যানসার, করোনাসহ অন্য রোগে আমরা যেমন নিজেরা চিকিৎসা না করে যথাযথ চিকিৎসকের কাছে রোগীকে নিয়ে যাই, এ ক্ষেত্রেও তাই করতে হবে। সাদি মহম্মদের মৃত্যুর পর তার ভাই নৃত্যশিল্পী শিবলী মহম্মদসহ অনেকেই বলেছেন, মা ও বোনের মৃত্যুর পর থেকে সাদি মহম্মদ ভেঙে পড়েছিলেন। কর্মময় জীবনে স্বীকৃতি না পাওয়াসহ অন্যান্য আক্ষেপও ছিল। সাদি মহম্মদ বিষণ্নতায় ডুবে গিয়েছিলেন। এ ক্ষেত্রে তার স্বজনেরা তাকে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তির কাছে নিয়েছিলেন কি না, সে ব্যাপারে কিছু জানা যায়নি। 

বাংলা ইনসাইডার: কেউ আত্মহত্যা করতে চাই, তা অন্যরা বুঝবেন কীভাবে?

অধ্যাপক হেলাল উদ্দীন: কেউ আত্মহত্যার কথা চিন্তা করলে তার আচরণে সেটা প্রকাশ পায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মৃত্যু আর আত্মহত্যা নিয়ে নিজের ইচ্ছার কথা প্রকাশ করতে পারে কেউ। নিজের ক্ষতি করা, সব কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা, নিজেকে গুটিয়ে রাখা, নিজেকে দোষী ভাবা, নিজেকে অপাঙ্ক্তেয় ভাবা, সারা রাত জেগে থাকা আর সারা দিন ঘুমানো, সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ না নেওয়া, শখের বিষয় থেকে দূরে থাকা, কোনো কাজে মনোযোগ দিতে না পারাসহ বিভিন্ন লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে। কোনো ব্যক্তির মধ্যে কমপক্ষে দুই সপ্তাহ ধরে এসব লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকলে সবাইকে সচেতন হতে হবে।

বাংলা ইনসাইডার: বলা হচ্ছে আত্মহত্যা একটি প্রতিরোধযোগ্য বিষয়। সঠিক সময়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারলে অনেকাংশেই আত্মহত্যা ঠেকানো যায়। এ বিষয়ে কিছু বলেন। 

অধ্যাপক হেলাল উদ্দীন: আত্মহত্যা প্রতিরোধে যার যার ক্ষেত্র থেকে একযোগে কাজ করে যেতে হবে। শিশুদের এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে তারা ব্যর্থতাকে মেনে নিতে পারে। শিক্ষার্থীদের সামাজিক দক্ষতা বাড়াতে তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। সংস্কৃতিচর্চায় উৎসাহিত করতে হবে। সব ধরনের মানসিক রোগ দ্রুত শনাক্ত করে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। পারিবারিক বন্ধনগুলো দৃঢ় করতে হবে। আত্মহত্যার উপকরণ, যেমন ঘুমের ওষুধ, কীটনাশকের সহজপ্রাপ্যতা কমানোর পাশাপাশি প্রেসক্রিপশন (ব্যবস্থাপত্র) ছাড়া ঘুমের ওষুধ বিক্রি বন্ধ করতে হবে। সঠিক সময়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারলে আত্মহত্যার ঘটনা আর ঘটবেই না, তা বলা না গেলেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আত্মহত্যার ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। মূল কথা, এসব লক্ষণ দেখা দিলে ওই ব্যক্তির প্রতি সবাইকে মনোযোগী হতে হবে। মনে রাখতে হবে, পরিবারে যদি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে থাকে, তবে পরিবারের অন্য সদস্যদেরও আত্মহত্যার ঝুঁকি থেকে যায়, তাই সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী অবন্তিকার আত্মহত্যার পর প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা নড়েচড়ে বসেছেন। আত্মহত্যা কোনো সমস্যার সমাধান নয়। অবন্তিকার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে কোনোভাবেই বিচার কাম্য নয়। ভুক্তভোগীকে বেঁচে থেকেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে। কোনো জায়গায় প্রতিকার চেয়ে ব্যর্থ হলে অন্য জায়গায় যেতে হবে। একইভাবে সমাজে অন্যায়ের প্রতিকার ও বিচার পাওয়ার সুব্যবস্থাও থাকতে হবে।

বাংলা ইনসাইডার: আত্মহত্যার সংবাদ পরিবেশনে গণমাধ্যমের ভূমিকা কেমন হবে?

অধ্যাপক হেলাল উদ্দীন: গণমাধ্যমে আত্মহত্যার সংবাদের অতি প্রচার, অপপ্রচার বা অদায়িত্বশীল সংবাদ পরিবেশনে কখনো কখনো আত্মহত্যার ঘটনা বাড়তে পারে। দেশে পরপর দুটো আত্মহত্যার ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, সাদি মহম্মদের ঘটনায় গণমাধ্যমগুলো সংবাদ পরিবেশনে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে। তবে অবন্তিকার ক্ষেত্রে তা সেভাবে হয়নি। অবন্তিকার ব্যক্তিগত জীবন বা তাকে গ্লোরিফাই (মহিমান্বিত) করে এমন অনেক কিছু প্রকাশ বা প্রচার করা হচ্ছে। এতে করে এমন বার্তা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে যে অবন্তিকা আত্মহত্যা করেছিলেন বলেই অভিযুক্তদের শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে। অবন্তিকার মতো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আরও অনেকে থাকতে পারেন, তারা এতে করে আত্মহত্যা করতে উৎসাহিত হতে পারেন। তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আত্মহত্যার খবর পরিবেশনে গাইডলাইন দিয়েছে। তা মেনে চলতে হবে। আত্মহত্যার খবর নির্মোহভাবে পরিবেশন করতে হবে। তবে গত ১০ বছরে বলা যায়, দেশের প্রথম সারির গণমাধ্যমগুলো এ বিষয়ে অনেক সংবেদনশীল আচরণ করছে।

বাংলা ইনসাইডার: আত্মহত্যা প্রতিরোধে আপনার পরামর্শগুলো জানতে চাই?

অধ্যাপক হেলাল উদ্দীন: কারও মধ্যে মৃত্যু–ইচ্ছা দেখা দিলে বিদ্রূপ হাসাহাসি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রল করা যাবে না। প্রতিটি মৃত্যু–ইচ্ছাকে আত্মহত্যার ইঙ্গিত হিসেবে ধরে নিতে হবে। এ সময় বন্ধু হয়ে তাদের পাশে থাকতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলতে হবে। মনের যত্ন নেওয়াটা যে গুরুত্বপূর্ণ, পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সেটা বোঝাতে হবে। আত্মহত্যার প্রসঙ্গ উঠলে তা এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। আত্মহত্যা যে কোনো সমাধান নয়, সেটাও বোঝাতে হবে। সব থেকে বড় কথা, মানসিক সমস্যাকে লোকলজ্জার ভয়ে লুকিয়ে রাখা যাবে না। মনোচিকিৎসকের সাহায্য নিয়ে প্রয়োজন হলে ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড টক

‘বিশ্বায়নের যুগে কোন দেশের পণ্য বর্জনের ডাক ভেলকিবাজি’

প্রকাশ: ০৪:০০ পিএম, ২৩ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন, ভারতের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ও মদদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে বা আছে—বিএনপির এধরনের কথাবার্তা স্রেফ তাদের হঠকারিতা। ভারত আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র। মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা যেভাবে আমাদের সহযোগিতা করেছে আপনি কি সেটা অস্বীকার করতে পারবেন কিংবা তাদের অবদানকে কোন ভাবে অবমূল্যায়ন করতে পারবেন? এটা কোন ভাবেই সম্ভব না। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ভারতের অবদানের জন্যই তারা আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু রাষ্ট্র।

বিএনপির ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান এবং আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলের আশঙ্কা নিয়ে বাংলা ইনসাইডারের সাথে একান্ত কথা বলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়িাম সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। পাঠকদের জন্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক শান্ত সিংহ।

অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ কখনও কোন বিশেষ শক্তি বা গোষ্ঠীর সমর্থনে বা সহযোগিতায় ক্ষমতায় আসেনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে এদেশের জনগণের ভোটের মাধ্যমে। জনগণের মন জয় করে। সুতরাং বিএনপির যেভাবে কথা বলছে এসমস্ত কথাবার্তা অবান্তর। তারা আন্দোলন করতে যেয়ে খেই হারিয়ে ফেলে এখন আবোল তাবোল কথাবার্তা বলছে। আওয়ামী লীগ এগুলোকে আমলে নিচ্ছে না।

তিনি বলেন, বিএনপির পণ্য বর্জনের আহ্বান ভেলকিবাজি ছাড়া আর কিছু নয়। এখন এই বিশ্বায়নের যুগে কোন দেশের পণ্য বর্জনের ডাক বিএনপির ভেলকিবাজি। প্রতিটি দেশের সাথে প্রতিটি দেশের বাণিজ্য থাকে। আমরা আমদানি করি আবার রপ্তানিও করি। পুরো বিশ্বই এভাবে চলছে পরস্পর পরস্পরের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করে দেশের স্বার্থেই। সেখানে যদি বিএনপি এধরনের কথাবার্তা বলে তাহলে তাদের চিন্তা ভাবনা কতটা সংকীর্ণ, দেশ নিয়ে তাদের ভাবনা কি, তারা আসলে দেশের উন্নয়ন চায় কিনা ইত্যাদি বিষয়গুলো চলে আসে। বিশ্বায়নের এই যুগে যেখানে সব দেশই সব দেশের সাথে কানেক্টিভিটি বাড়াচ্ছে সেখানে আপনি একটি দেশের পণ্য বর্জনের আহ্বান করছেন! আপনি কতটা আহমক আপনি বুঝতে পারছেন? এখন মহাত্মা গান্ধীর যুগ নয়। এই সময়ে এসে যদি আপনি মহাত্মা গান্ধীর স্লোগান দেন সেটা সম্ভব নয়। এখন এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের সম্পর্কের মূল বিষয়ই হলো বাণিজ্য। আপনি গায়ের চাদর খুলে আগুনে পুড়িয়ে দিলেন আর পণ্য বর্জনের ডাক দিলেই কি লোকে আপনার কথা শুনবে নাকি।

উপজেলা নির্বাচনে সংসদ নির্বাচনের মতো দলীয় কোন সহিংস ঘটনা আশঙ্কা রয়েছে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের এই প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, আমরা আশঙ্কা করছি আবার করছি না উভয়ই। আমরা চেষ্টা করব আমাদের নেতাকর্মীদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ রাখার। তবে যেহেতু নির্বাচন উন্মুক্ত  থাকছে সেজন্য কিছুটা সহিংসতা হয়তো হতে পারে। তবে এটা কোন বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে না।



মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন