কোরবানির ঈদ এলেই ঘরে ঘরে শুরু হয়ে যায় মাংস রান্নার আয়োজন। সব বয়সী মানুষের খাদ্য তালিকায় নিয়মিত রেসিপি হিসেবে থাকে মাংস দিয়ে তৈরি নানা রকম আইটেম। কিন্তু চিরাচরিত রান্না খেতে খেতে একঘেয়ে লেগে যায় অনেকের। অনেকে আবার চান খাবারের তালিকায় ভিন্ন কিছু যোগ করতে।
আসুন জেনে নেয়া যাক মাংস দিয়ে সহজে তৈরি করা যায় এমন পাঁচটি খাবারের রেসিপি।
১। গার্লিক বিফ :
যারা তাদের গরুর মাংস মসৃণ উপায়ে খেতে পছন্দ করেন তাদের জন্য গার্লিক বিফ তুলনা হয় না। তাই ঘরে বসেই তৈরি করতে পারেন রেস্তোরাঁর রসুন বিফের সুস্বাদু স্বাদ।
প্রয়োজনীয় উপকরণ:
গরুর মাংস ১ কেজি, পেঁয়াজ কাটা ১ কাপ, হলুদ এবং মরিচের গুঁড়া ১ কাপ, আধা চা চামচ আদা ও রসুনের পেস্ট, ৪/৫ লবঙ্গ রসুন, 1 চা চামচ ধনে ও জিরা গুঁড়া, সামান্য স্বাদযুক্ত লবণ তেল আধা কাপ, মাংস মসলা আধা চা চামচ, টমেটো সস আধা কাপ, টক দই ১ কাপ, গরম মসলা গুঁড়া আধা চা চামচ, লবণ স্বাদমতো।
প্রস্তুতির পদ্ধতি:
মাংস ভালকরে ধুয়ে পরিস্কার পত্রে কেটে নিন। একটি পাত্রে মাংস, হলুদ, গোলমরিচ, টক দই, আদা, রসুন, লবণ, ধনে, জিরা গুঁড়া, টেস্টিং সল্ট ভালো করে মিশিয়ে ২০ মিনিট ম্যারিনেট করে রাখুন। কড়াইতে তেল গরম করে পেঁয়াজ বাদামি করে ভেজে মাংস দিয়ে নাড়ুন। মাংস কষানো হলে সামান্য পানি দিয়ে ঢেকে দিন। এরপর মাংস সেদ্ধ হয়ে গেলে টমেটো সস, কাঁচা মরিচের টুকরো এবং রসুনের লবঙ্গ দিয়ে ১০ মিনিট আঁচে গরম গরম পরিবেশন করুন।
২। কড়াই গোস্তু :
কাশ্মীরি পোলাওর সাথে সবচেয়ে ভালো আইটেম হল গরুর কড়াই গোস্তু তরকারি। খেতে সুস্বাদু। তাই খেতে চাইলে গরুর মাংসের কড়াই নিজেই বানিয়ে নিন।
প্রয়োজনীয় উপকরণ:
গরুর মাংস ১ কেজি, কাটা পেঁয়াজ আধা কাপ, হলুদ ও মরিচের গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, রসুন কুচি ২/৩টি, মাংস মসলা ১ চা চামচ, দারুচিনি ও এলাচ ৩/৪ টুকরা, জয়ফল ও জয়ত্রি বাটা ১ চা চামচ, টক দই ১ কাপ, টমাট ১ কাপ। কাপ, তেজপাতা ২টি, তেল ১ কাপ, লবণ প্রয়োজন মতো।
প্রস্তুতির পদ্ধতি:
প্রথমে মাংস ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। তারপর একটি পাত্রে মাংস, টক দই, লবণ এবং সব মশলা একসঙ্গে মিশিয়ে ২০ মিনিট ম্যারিনেট করে রাখুন। একটি প্যানে তেল গরম করুন এবং অর্ধেক পেঁয়াজ, দারুচিনি, এলাচ, তেজপাতা হালকা বাদামী হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। এরপর এতে মেরিনেট করা মাংস মেশান। ৪ কাপ পানি যোগ করুন এবং কম আঁচে রান্না করতে থাকুন। মাংস সেদ্ধ হয়ে মাংসের ওপর তেল ভেসে উঠলে নামিয়ে রাখুন। তেল গরম করে কাটা পেঁয়াজ, রসুন কুঁচি, টমেটো কিউব হালকা বাদামি না হওয়া পর্যন্ত ভাজুন এরপর একটি প্যানে মাংস ২/৩ মিনিট দম দিয়ে নামিয়ে ফেলুন। এখন আপনার প্রিয় গরুর কড়াই গোস্ত তরকারি তৈরি হয়ে যাবে।
৩। গরুর মাথার মাংসের ভূনা:
অনেকেই গরুর মাংসের চেয়ে গরুর মাথার মাংস পছন্দ করেন। কিন্তু যেনতেনভাবে রান্না করলে কারো ভালো লাগবে না। তাই এই নতুন রেসিপি দিয়ে গরুর মাথার মাংস রান্না করে দেখুন।
প্রয়োজনীয় উপকরণ:
গরুর মাংসের মাথা ১ কেজি, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, টমেটো আধা কাপ, হলুদ গুঁড়া আধা চা চামচ, আদা বাটা ১ চা চামচ, ধনে গুঁড়া আধা চা চামচ, সরিষার তেল আধা কাপ, গোলমরিচ গুঁড়া আধা চা চামচ, তেজপাতা ২টি, গরম মসলা গুঁড়া ১ চা চামচ।
প্রস্তুতির পদ্ধতি:
তেলে পেঁয়াজ বাদামি করে ভেজে হলুদের গুঁড়া, তেজপাতা, মরিচের গুঁড়া, আদা বাটা, রসুন বাটা, পেঁয়াজ বাটা, টমেটো দিয়ে ভেজে নিন। তারপর যতটা সম্ভব গরম পানি দিয়ে ঢেকে দিন। গরম মসলা গুঁড়া, জিরা গুঁড়া, ধনে গুঁড়া, জয়ফল এবং জৈত্রি গুঁড়া দিয়ে ঢেকে দিন। মাংস সেদ্ধ হয়ে এলে নামিয়ে ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।
৪। গরুর মেজবানি মাংস:
বিয়ের অনুষ্ঠানে বা রেস্টুরেন্টে গেলে গরুর মেজবানি মাংস খেতে পারেন। তবে আপনি চাইলে ঘরে বসেও তৈরি করতে পারেন সুস্বাদু ও ঐতিহাসিক গরুর মেজবানি মাংস।
প্রয়োজনীয় উপকরণ:
গরুর মাংস ২ কেজি, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ, হলুদ ও মরিচ গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, ধনে ও জিরা গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, সরিষার তেল ১ কাপ, মাংস মসলা ১ চা চামচ, টক দই ১ কাপ, কাঁচামরিচ ১০/১২, ১ চা চামচ, দারুচিনি ও এলাচ ৫/৬টি, জয়ফল ও জয়ত্রী আধা চা চামচ, মেথি গুঁড়া ১ চা চামচ, লবণ স্বাদমতো।
প্রস্তুত প্রণালী:
প্রথমে মাংস ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। একটি পাত্রে মাংস, তেল, টক দই, হলুদ, গোলমরিচ, আদা, রসুন, পেঁয়াজ, লবণ এবং সব মশলা দিয়ে ম্যারিনেট করুন। এরপর তেলে অর্ধেক পেঁয়াজ ভেজে নিন। প্যানটি ওভেনে রাখুন এবং ম্যারিনেট করা মাংস রান্না করতে থাকুন। এবার প্যানে ২ কাপ পানি যোগ করুন এবং কিছুক্ষণ সিদ্ধ করুন। মাংস থেকে পানি সরে গেলে, মাংস সেদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত কম আঁচে রান্না করতে থাকুন। মাংসের পানি শুকিয়ে এলে কাঁচা মরিচ, ধনে, জিরা গুঁড়া দিয়ে অল্প আঁচে ১০ মিনিট রেখে পেঁয়াজ দিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন, সুস্বাদু গরুর মেজবানি মাংস।
৫। গরুর মাংস কালা ভূনা:
গরুর মাংসের এই মজার আইটেমটির কথা অনেকেই জানেন। তবে অনেকেই এর আসল রেসিপি জানেন না। এই ঈদে অনেকের মেন্যুতে জায়গা করে নিয়েছে ঐতিহাসিক এই খাবারটি।
প্রয়োজনীয় উপকরণ:
গরুর মাংস ১.৫ কেজি, আদা বাটা ১ টেবিল চামচ, রসুন বাটা আধা চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া আধা চা-চামচ, মরিচ গুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনে গুঁড়া ১ টেবিল-চামচ, গোলমরিচ গুঁড়া আধা টেবিল-চামচ, এলাচ, দারুচিনি, কয়েকটি তেজপাতা, গরম মসলা, লবণ আধা চা-চামচ। যতটা, সরিষার তেল ততটা, পেঁয়াজ কাটা ১ কাপ।
প্রস্তুতির পদ্ধতি:
গরুর মাংসের সাথে সব উপকরণ একসাথে মিশিয়ে রান্না করুন। মাংস সেদ্ধ হয়ে পানি শুকিয়ে গেলে একটি লোহার প্যানে অল্প আঁচে সরিষার তেলে মাংস ভেজে নিন। যতক্ষণ মাংস কালচে না হয় ততক্ষণ ভাজুন। এই রেসিপিতে গরুর মাংস কালো করে ভাজা হয় বলে একে গরুর মাংস কালা ভূনা বলা হয়।
এছাড়াও আরও কিছু সুস্বাদু রেসিপির মধ্যে আছে; কাটা মসলা গরুর মাংসের রোস্ট বা বিফ ভূনা, টক ঝাল গরুর মাংস, আলু বোখারা গরুর মাংস ইত্যাদি যেগুলো অনেক জনপ্রিয় এবং সহজে প্রস্তুতযোগ্য।
মন্তব্য করুন
কথায় আছে, ‘স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল।’ যে একবার অসুখে ভোগে, সে বোঝে ‘কত ধানে কত চাল’। মূলত, কেউ কখনো অসুস্থ হতে চান না, অদৃষ্টই সবাইকে টেনে নেয়। তবে, যদি স্বাস্থ্য ভালো রাখতে চান, সুস্থ দেহে চলাফেরা করতে চান, তাহলে সকাল সকাল পানি পানের অভ্যাস করুন। কারণ, তা মহৌষধ। তবে, আপনি চাইলে আজ থেকে তা করতে পারবেন না। কারণ, এর জন্য প্রয়োজন নিয়মিত চর্চা।
যাদের অভ্যাস নেই, তাদের কাছে বিষের চাইতেও বিষ সকালের পানি। কারণ, মুখগহ্বর তা নিতে চাইবে না, বমি বমি ভাবও কাজ করবে, পেটেও কামড় দেবে। প্রথম দিন একটু চেষ্টা করতে পারেন, এরপর ধাপে ধাপে পরিমান বাড়াবেন। মনে রাখতে হবে, ‘পানির অপর নাম জীবন’, আপনার জীবনবিধানও আপনার নিজের হাতে। এই প্রবাদ এমনিতেই আসেনি। পানিই জীবন, জীবনই পানি।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন নিয়মিত পানি পান করেন তাদের পরিপাকতন্ত্রের জটিলতা অনেক কম। তাছাড়াও এর গুণের অভাব নেই। ত্বকের সজীবতা ধরে রাখা, খাবার যথাযথভাবে হজম, শরীরের ভেতরে থাকা বর্জ্য দূরীকরণে সহায়তা করা, কোষ্ঠকাঠিণ্যসহ আরও জটিল রোগ-অসুখ নিরাময়ের সহজ উপায় সকালে পানি পান করা।
যারা নিয়মিত পান করেন তারা শতভাগ এর উপকার পান, আর যারা করেন না তারা কখনো এর সুফল ভোগ করতে পারেন না। সারা দিনের প্রশান্তি নিশ্চিত করতে তাই এখন থেকে সকাল সকাল পানি পানের অভ্যাস গড়ে তুলুন। সুস্থ দেহ নিয়ে সুন্দরভাবে বাঁচতে এখন থেকে চেষ্টা চালান। কারণ, সকালে পানি পানের অভাবে যে অসুখে পড়বেন, এরপরে গিয়ে পানি পান করলে তা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন হবে।
মন্তব্য করুন
আমাদের দিনের কাজের প্রচুর ব্যস্ততার মাঝে যদি ছোট একটি সবুজ গাছের দিকে তাকাই আমাদের খিটখিটে মেজাজ ভালো হয়ে যেতে পারে। সবুজ গাছের দিকে তাকালে যেকোন মানুষের মন ভালো হয়ে যেতে পারে। বর্তমান সময়ে উন্নত দেশের মত বাংলাদেশও জনপ্রিয় হচ্ছে ইন্ডোর প্ল্যান্ট। চার দেয়ালের আবদ্ধ ঘরে অন্য কোন উদ্ভিদ বাঁচতে না পারলেও ইন্ডোর প্ল্যান্ট ঠিকই বাঁচে। সূর্যের আলো ছাড়া ঘরের বিতর বাঁচতে পারে বলেই এর নাম ইন্ডোর প্ল্যান্ট। বাংলাদেশে বিভিন্ন রকম ইন্ডোর প্ল্যান্ট রয়েছে যেমন : অ্যালোভেরা, ক্যাকটাস,মানি প্ল্যান্ট, পিস লিলি, স্নেক প্ল্যান্ট,লাকিবেম্বু, গোল্ডেন পথোস স্পাইডার প্ল্যান্ট ইত্যাদি।
নাসার গবেষণায় দেখা গেছে যে ইনডোর
প্লান্ট ক্ষতিকারক পদার্থ যেমন কার্বন মনোক্সাইড, ফর্মালডিহাইড, অ্যামোনিয়া,
কার্বন ডাই অক্সাইডসহ আরও অনেক কিছু দূর করে। এগুলো মূলত মাথাব্যথা, ক্লান্তি,
অসুস্থতা ও অ্যালার্জির কারণ হিসেবে পরিচিত। ঘরে কিছু ইনডোর প্ল্যান্ট যুক্ত করা
হলে বাতাসের গুণমান বাড়ে এবং বাতাস আরও পরিষ্কার হয়।
প্রচুর কাজ আমাদের সবাইকে মানসিক ভবে
বিপর্যস্ত করে তুলে ইন্ডোর প্ল্যান্টের সবুজ রঙ আমাদের দেহ ও মনে প্রশান্তি
আনে। চারপাশে গাছপালা এক ধরণের মানসিক শান্তি আনে। তাছাড়া মনের চাপ কমাতে,
রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে ইনডোর প্লান্ট।
ইন্ডোর প্ল্যান্ট আমাদের অফিস, বাসা,
রেস্টুরেন্টকে আরো মানুষের কাছে আকর্ষনীয় করে তুলে। কেউ যদি গৃহের একঘেয়েমি
সাজসজ্জা দূর করতে চায়, সেক্ষেত্রে ইনডোর প্ল্যান্টের জুড়ি মেলা ভার। কারণ ইনডোর
প্ল্যান্টের রঙ আর আকারে রয়েছে বৈচিত্র্য। বইয়ের শেলফের এক কোণায় ছোট ক্যাকটাস,
কিংবা ঘরের কোনো ছোট অংশ ফাঁকা লাগলে বড় সাইজের একটা পাম গাছ ঘরের সৌন্দর্যই বদলে
দেবে।
এত সব গুনের কারণে ইন্ডোর প্ল্যান্ট জায়গা করে নিয়েছে কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের টেবিলে। আশাকরা যায় ভবিষ্যতে ইন্ডোর প্ল্যান্টের ব্যবহার খুব দ্রুতই আরো বৃদ্ধি পাবে।
মন্তব্য করুন
আপনি ফুরফুরে একটা মেজাজ নিয়ে সকালটা যদি শুরু করতে পারেন, তবে সারাটাদিন আপনি আত্মবিশ্বাস নিয়ে স্বাছন্দে কঠিন পরিশ্রম করতে পারবেন। আর এই কঠিন পরিশ্রমই হচ্ছে সফলতার মূলমন্ত্র যার পেছনে আছে অনুপ্রেরণা, উচ্চাশা এবং তীব্র ইচ্ছা। আর এগুলো আপনার মাঝে তৈরি হবে, যদি আপনি প্রতিদিন সকালে কিছু কাজ অভ্যাসে পরিনত করতে পারেন।
সকালের ৬টি কাজ নিয়ে হ্যাল ইলরোড তাঁর দ্যা মিরাকেল মর্নিং বইয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। চলুন সংক্ষেপে জেনে নেয়া যাক সকালের সেই সেই কাজগুলো।
এক, নামাজ বা প্রার্থণা বা ধ্যান ।
বর্তমানে আমাদের প্রায় সবারই সকাল শুরু হয় মোবাইল ফোনের স্কিনে চোখ রেখে, ফেসবুক, মেসেঞ্জার চেক করে বা পেপার পড়ে মন খারাপ করা সব তথ্য বা সংবাদ নিয়ে। ফলে মনের অজান্তেই দিনের শুরুটাই হয় নেগেটিভ চিন্তা দিয়ে যা সারাদিন এসব মনে না পড়লেও সেই নেগেটিভ অনুভূতিটা আমাদের মাঝে থেকে যায়।
তাই স্টিভ জবস মতো সফল মানুষরা সকালে উঠেই সাইলেন্ট মুডে চলে যান। সাইলেন্ট মুডে যাওয়া মানে নামাজ বা প্রার্থনা, যোগা, মেডিটেশন ইত্যাদি করা। সাইলেন্ট মুডের মাধ্যমে একটি পজিটিভ মনোভাব নিয়ে ঠান্ডা মাথায় দিনের শুরুটা হয় । আবার এতে আমাদের মস্তিষ্কে এমন একটি সুস্থির অবস্থার সৃষ্টি হয়, যাতে দিনের অন্যান্য কাজগুলি সঠিকভাবে করার একাগ্রতা অর্জিত হয় যার ফলাফল পাওয়া যায় পজিটিভ ।
খুব সকালে উঠে ফজরের নামাজ বা প্রার্থনা বা মেডিটেশনের সময় চোখ বন্ধ করে নিজের জীবন, শরীর, আজকের দিনে সকাল দেখতে পারা– ইত্যাদির জন্য সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালে, মনের ভেতর দারুন একটা পজিটিভ অনুভূতি সৃষ্টি হয়, যা সারাদিন আপনাকে পজিটিভ ও আত্মবিশ্বাসী থাকতে সাহায্য করবে।
দুই, পজিটিভ বিষয়ে নিজের সাথেই একান্তে কথা বলা।
সফল মানুষরা নিয়মিত সকালবেলায় অবচেতন মনে পজিটিভ বিষয়টি স্থায়ী করার জন্য নিজের সাথেই নিজে একান্তে কথা বলেন। আপনিও এই কাজটি করতে পারেন এবং নিজেকে জিজ্ঞেস করুন যে আপনি কেমন স্থানে নিজেকে দেখতে চান এবং সেটা কেন চান? আর সেইসঙ্গে নিজেকে প্রশ্ন করুন যে, ওই স্থানে পৌঁছাতে আপনি কি কি পদক্ষেপ নিতে পারবেন? বা তার জন্য আপনি কতটাই ত্যাগ স্বীকার করতে পারবেন । নিজের সাথে কথা বলার এই অভ্যাসটিই বদলে দেবে আপনার সমস্ত ধারণা,কর্মক্ষমতা ও সিদ্ধান্ত নেবার পদ্ধতি ।
ধরুন আপনি ঠিক করেছেন আগামী ১ বছরের মধ্যে আপনি ১০ লক্ষ টাকা আয় করবেন। এখন যদি প্রতিদিন সকালে উঠে মেডিটেশন বা প্রার্থনা করার পর কয়েক মিনিটের জন্য বার বার বলতে থাকেন,“আমি আগামী এক বছরের মধ্যে মাসে ১০ লক্ষ টাকা আয় করবো”– তাহলে এটা আপনার অবচেতন মনে স্থায়ী হয়ে যাবে। এবং আপনি নিজে থেকেই এই লক্ষ্য পূরণে যা করা দরকার তাই করতে শুরু করবেন। সেইসাথে লক্ষ্য যত বড়ই হোক, বার বার নিজেকে এই কথা শোনাতে শোনাতে সেটা সহজ মনে হওয়া শুরু হবে।
তিন, মনছবি বা কল্পনা
আপনি যে লক্ষ্য পূরণ করতে চাইছেন সেটা প্রতিদিন কল্পনায় দেখতে থাকলে– তবে কিছুদিনের মধ্যে সেটা নিজেই অবচেতন মনে তা আপনি বাস্তব ভাবা শুরু করবেন এবং নিজের মাঝে বিশ্বাস তৈরি হবে। তখন আপনি নিজে থেকেই সেই লক্ষ্য পূরণে যা করা প্রয়োজন – তার সবই আত্মবিশ্বাস ধরে রেখে পরিশ্রম করা শুরু করবেন।
এ কথাটিই লেখক ‘হ্যাল ইলরোড’ তাঁর Miracle Morning বইয়ে তুলে ধরেন যে, লক্ষ্য যত কঠিনই হোক, যদি বার বার একজন মানুষ সেই লক্ষ্য সফল হওয়ার কথা নিজেকে বলে, আর কল্পনা করে যে সেই লক্ষ্য পূরণ হয়েছে– তবে খুব তাড়াতাড়িই সেই লক্ষ্য পূরণ করা সহজ মনে হওয়া শুরু হবে, এবং সে সেই লক্ষ্য পূরণের জন্যকাজ করা শুরু করবে।
৪.ব্যায়াম
আপনি সকালে এক্সারসাইজ করলে আপনার হার্ট শরীর ও মস্তিষ্কে বেশি পরিমানে রক্তের যোগান দেবে। শরীরের প্রতিটি অঙ্গের সক্ষমতা যেমন বাড়ে তেমনি মস্তিষ্কে বেশি পরিমাণে অক্সিজেন সরবরাহের ফলে ক্লান্তিহীন ও সুন্দরভাবে কাজ করার জন্য মস্তিষ্ককে তৈরি করে দেয় যা আপনাকে একটি সুন্দর দিন শুরু করতে সাহায্য করবে। এখানে লেখক ‘হ্যাল ইলরোড” লিখেছেন যে, প্রতি সকালে মাত্র ১ মিনিট টানা লাফালে আপনার মস্তিষ্ক ও শরীর সাধারণের চেয়ে ১০ গুণ পারফেকশনের সাথে কাজ করবে। এজন্য আপনাকে শরীরচর্চার জন্য কোন জিমে যেতে হবে না । খালি হাতেই সেসব ব্যায়াম করা যায় , সেগুলি করার জন্য লেখক বলেছেন ।
৫. বই পড়া
বিল গেটস কিংবা Warren Buffett এর মতো বিশ্বসেরা ধনী এবং সফল মানুষেরা বই পড়ার মধ্য দিয়ে তাঁদের সকাল বেলাটা শুরু করেন।Joseph Addison বলেন “Reading is to the mind what exercise is to the body ” জী হ্যাঁ ,ব্যায়াম যেমন আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে তেমনি বই পড়ার মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের মনকে সুস্থ ও আনন্দিত রাখতে পারি ।
বই পড়ার অভ্যাস মানসিক চাপ কমায়, মনোযোগ বৃদ্ধি করে এবং দীর্ঘ ও স্বল্প মেয়াদী স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটায়। যুক্তরাজ্যের Sussex বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের মতে, ‘মাত্র ছয় মিনিটের জন্য বই পড়লে স্ট্রেস লেভেল ৬৮% পর্যন্ত কমে যায়, যেখানে হাঁটায় ৪২%, কফি পান করলে ৫৪% গান শুনলে ৬১% স্ট্রেস লেভেল কমে যায়।
মিরাকেল মর্নিং বইয়ে লেখকহ্যাল বলেন,
‘দিনের শুরুতে ভালো একটি বই বিশেষ করে সেলফ ডেভেলপমেন্ট টাইপের বই পড়লে মানুষের মস্তিষ্কে যে উদ্দীপনা ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয় তা মানুষের মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।“
এছাড়াও ধর্মগ্রন্থ বা মোটিভেশনাল উক্তি পড়া, কিংবা মোটিভেশনাল অডিও শুনতে পারেন।
৬. লেখা
দিনের শুরুতে কাগজ কলম নিয়ে আপনার নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বপ্নের কথা, বা আজকের দিনে কি করবেন সেই পরিকল্পনা অথবা মেডিটেশন বা বই থেকে আজকের উপলব্ধির কথাও লিখে রাখতে পারেন। যদি নিজের প্রতিটি সিদ্ধান্ত, পদক্ষেপ এবং তার ফলাফল ডায়েরিতে লেখা থাকে, তাহলে পরবর্তী কাজগুলোতে ভুলত্রুটি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায়।
লেখক বলেন, সকালের এই লেখাটি কম্পিউটার বা ফোনে লেখার চেয়ে কাগজ-কলমে লেখার চেষ্টা করবেন। কাগজ-কলমের লেখায় অনেক বেশি যত্ন থাকে, আর চিন্তা ভাবনাও অনেক ক্লিয়ার হয়। গবেষনায় দেখা গেছে, হাতে লেখা আইডিয়া জ্ঞানগর্ভ অনুশীলনের সমান।
পরিশেষে বলবো যে, সকাল আটটার মধ্যেই এই কাজগুলো করার অভ্যাস করতে পারলে আপনি আপনার লক্ষ্য পূরণ করে সাফল্যের মুখ দেখবেন- এটাই বিশ্বাস করা যায়।
মন্তব্য করুন
দিন দিন মানুষ স্বাস্থ্যের বিষয়ে যত সচেতন হচ্ছেন, চিনি ছাড়ার প্রবণতা ততই বাড়ছে। কিন্তু তাই বলে মিষ্টিকে খাদ্যতালিকা থেকে পুরোপুরি বাদও দেয়া যায় না। তাই আজকাল অনেকেই চিনির পরিবর্তে গুড়ের দিকে ঝুঁকছেন। নিরামিষ, আমিষ সমস্ত রান্নায় চিনির পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে গুড়।
কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় চায়ের ক্ষেত্রে। দিনে বার কয়েক চা খাওয়ার অভ্যাস অনেকেরই রয়েছে। কেউ কেউ মিষ্টি ছাড়া চা খেতেই পছন্দ করেন। আবার অনেকে চায়ে মিষ্টি না হলে খেতেই পারেন না। সেক্ষেত্রে চায়েও কিন্তু গুড় মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে!
লাইফস্টাইল বিষয়ক এক ওয়েবসাইট জানিয়েছে, গবেষণা বলছে, গুড় অসংখ্য পুষ্টিগুণে ভরপুর। স্বাস্থ্যের নানা উপকার তো করেই, পাশাপাশি গুড়ের চা শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরাতেও খুব কার্যকর। তাই স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তিরা প্রতিদিনের ডায়েটে রাখতেই পারেন এই চা।
গুড়ের চা কী ভাবে ওজন কমাতে সাহায্য করে —
হজমে সাহায্য করে : গুড় খুব দ্রুত খাবার হজমে সাহায্য করে। অনেকেই মনে করেন যে, গুড়ে থাকা চিনি শরীরে চর্বি জমায়। কিন্তু এই ধারণা সঠিক নয়। বরং গুড় ভাল হজমে সাহায্য করে, মেটাবলিজম বাড়ায় এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে।
মেটাবলিজম বাড়ায় : মেটাবলিজম বা বিপাক এক ধরনের প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে শরীর খাবার থেকে প্রয়োজনীয় শক্তি সঞ্চয় করে। তাই খাওয়া-দাওয়ার অভ্যাসের উপরই নির্ভর করে দেহের বিপাক প্রক্রিয়া কী রকম হবে। মেটাবলিজম ঠিক থাকলে ওজনও নিয়ন্ত্রণেই থাকবে। গবেষণায় দেখা গেছে, গুড় পটাশিয়াম সমৃদ্ধ, যা শরীরে ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখে, পেশী তৈরি এবং মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে। আর বিপাক ঠিক থাকলে শরীরের অতিরিক্ত ক্যালোরি বার্ন হয়, যার ফলে ওজন কমে।
অ্যানিমিয়ার জন্য উপকারী : শরীরে আয়রনের মাত্রা কম হলেই অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা দেখা দেয়। অ্যানিমিয়ার কারণে অনেকের ওজন বাড়তেও দেখা যায়। গবেষণা বলছে, গুড়ের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন। রোজ গুড় খেলে বা খাবারে গুড় মেশালে শরীরের আয়রনের ঘাটতি মেটে। তাই রক্তাল্পতা থেকে মুক্তি পেতে গুড় খেতেই পারেন। তবে গুড় কেবল ওজন কমাতেই সাহায্য করে না। পাশাপাশি গুড়ের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম এবং আরও অনেক ধরণের মাইক্রো-নিউট্রিয়েন্ট। যে কারণে গুড় আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
হজমে সাহায্য মেটাবলিজম অ্যানিমিয়া
মন্তব্য করুন
ঘুমের সময়ের কিছু অভ্যাস আমাদের জন্য উপকারী হতে পারে, কিছু হতে পারে ক্ষতিকর। যেমন ধরুন আপনার শোয়ার ভঙ্গীর ওপর নির্ভর করে অনেককিছু। আবার ঘুমের আগে খাবার খেলে হতে পারে হজমে সমস্যা। এমনকী আপনার চুল বেঁধে ঘুমাচ্ছেন নাকি খোলা রাখছেন তাও প্রভাব ফেলতে পারে শরীরে। চুল বেঁধে ঘুমানোর অভ্যাস থাকে অনেকেরই।
তবে এই অভ্যাস কি আপনার জন্য উপকারী নাকি ক্ষতিকর? চলুন জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত:
অনেকে মনে করেন চুল টেনে বাঁধলে চুল দ্রুত লম্বা হয়। এটি আসলে ঠিক নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, টাইট করে চুল বাঁধলে চুলের গোড়ায় টান পড়ে। তখন চুলের গোছা গোড়া থেকে আলগা হতে শুরু করে। তখন সামান্য টান পড়লেই উঠে আসে চুল, এমনকী চুল মাঝখান থেকেও ভেঙে যেতে পারে।
আপনি যদি চুল বেঁধে ঘুমাতে যান তাহলে ঘুমানোর সময়ে অজান্তেই চুলে টান পড়ে। তাই টাইট করে চুল বেঁধে ঘুমাতে নিষেধ করেন বিশেষজ্ঞরা। তবুও আপনি যদি আঁটসাঁট করে চুল বেঁধে ঘুমাতে যান তাহলে সকালে ঘুম থেকে উঠে চুল পড়তে দেখতে হতে পারে।
চুল ভালো রাখতে হলে টেনে চুল বাঁধবেন না। কারণ এভাবে বাঁধলে চুলের গোড়ায় টান পড়ে। এতে চুল ছিঁড়ে যাওয়ার ভয় থাকে। দুর্বল হয়ে যেতে পারে চুলের গোঁড়াও। চুল ছোট হলে খোলা রাখতে পারেন। বড় চুলে হালকা বেণী করতে পারেন। চুল পরিষ্কার কাপড়ে বেঁধে শোয়া অভ্যাস করুন। এতে গোড়ায় টান পড়ে না। ফলে চুল পড়ার ভয়ও থাকে না।
চুল বাঁধার ক্ষেত্রে কাপড়ের হেয়ার ব্যান্ড ব্যবহার করুন। সিল্ক বা সুতির কাপড়ে চুল জড়িয়ে ঘুমানোর অভ্যাসই ভালো বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ এতে চুলে ঘষা লাগে না। চুল সুরক্ষিত থাকে। ফলে চুল পড়ে না। চুল আঁচড়ানোর সময় মোটা দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করবেন। কাঠের চিরুনি ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো।
মন্তব্য করুন
কথায় আছে, ‘স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল।’ যে একবার অসুখে ভোগে, সে বোঝে ‘কত ধানে কত চাল’। মূলত, কেউ কখনো অসুস্থ হতে চান না, অদৃষ্টই সবাইকে টেনে নেয়। তবে, যদি স্বাস্থ্য ভালো রাখতে চান, সুস্থ দেহে চলাফেরা করতে চান, তাহলে সকাল সকাল পানি পানের অভ্যাস করুন। কারণ, তা মহৌষধ। তবে, আপনি চাইলে আজ থেকে তা করতে পারবেন না। কারণ, এর জন্য প্রয়োজন নিয়মিত চর্চা। যাদের অভ্যাস নেই, তাদের কাছে বিষের চাইতেও বিষ সকালের পানি। কারণ, মুখগহ্বর তা নিতে চাইবে না, বমি বমি ভাবও কাজ করবে, পেটেও কামড় দেবে। প্রথম দিন একটু চেষ্টা করতে পারেন, এরপর ধাপে ধাপে পরিমান বাড়াবেন। মনে রাখতে হবে, ‘পানির অপর নাম জীবন’, আপনার জীবনবিধানও আপনার নিজের হাতে। এই প্রবাদ এমনিতেই আসেনি। পানিই জীবন, জীবনই পানি।
আপনি ফুরফুরে একটা মেজাজ নিয়ে সকালটা যদি শুরু করতে পারেন, তবে সারাটাদিন আপনি আত্মবিশ্বাস নিয়ে স্বাছন্দে কঠিন পরিশ্রম করতে পারবেন। আর এই কঠিন পরিশ্রমই হচ্ছে সফলতার মূলমন্ত্র যার পেছনে আছে অনুপ্রেরণা, উচ্চাশা এবং তীব্র ইচ্ছা। আর এগুলো আপনার মাঝে তৈরি হবে, যদি আপনি প্রতিদিন সকালে কিছু কাজ অভ্যাসে পরিনত করতে পারেন।