গতমাসেই ১৭ বছরে পা দিলো মুরাদ। পড়াশুনা, কোচিং, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সুসম্পর্ক- ভালোই চলছে সবকিছু। তবে একটা সমস্যা আজকাল হচ্ছে। তার সবকিছু মা-বাবার কাছ থেকে আড়াল করতে হচ্ছে। বন্ধুদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলছে, অমনি ঘরে ঢুকে পড়ছে মা বা বাবা। পারিবারিক কোনো অনুষ্ঠানে যেতে ইচ্ছে করে না বাবা-মায়ের সঙ্গে। বন্ধুদেরই যেন পরম আপন বলে মনে হচ্ছে। বুঝতে পারছে বাবা-মায়ের সঙ্গে কেমন যেন মিলছে না। অসম্মান না করলেও দূরত্ব তৈরি হচ্ছে অনেকটাই, মাঝেমাঝে বিরক্তিও লাগছে খুব। মনের কোনো কথাই তাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে ইচ্ছে হচ্ছে না।
এই সমস্যা শুধু মুরাদেরই নয়। মা-বাবার অতিরিক্ত নজরদারির কারণে অনেক ছেলেমেয়েরাই বিরক্ত। মা স্কুলের গেটে বসে থাকা, সব কোচিংয়ে সঙ্গে করে যাওয়া, বন্ধুদের বিষয়ে চোখে চোখে রাখা, বাইরে বেরোতে না দেওয়ার কারণে সন্তানরা বয়ঃসন্ধিকালে বিশেষ করে বাবা-মা থেকে দূরে থাকতে চায়। তারা স্বাধীনতা চায়, বাবা-মা সেটা দিতে ইচ্ছুক না। আর তাতেই বাধে বিপত্তি। এভাবে একটা সময় পর ছেলেমেয়েরা মা-বাবার কাছ থেকে দূরে সরে যায়। অনেক সময় সন্তান ও মা-বাবা কেউই বুঝতে পারেন না, কখন তাঁরা পরস্পরের থেকে দূরে সরে গেছেন।
কেন এমন হয়?
১. অতিরিক্ত শাসন ও নজরদারি একটা বড় সমস্যা। সন্তানকে অতিরিক্ত শাসন করলে, কথায় কথায় বকলে, প্রতিনিয়ত গোপনভাবে নজরদারি চালালে সন্তান একসময় দূরে সরে যায়। কারণ এগুলো সে কোনোভাবেই পছন্দ করেনা।
২. অনেক বাবা-মায়েরই অভ্যাস আশেপাশের শিশুকিশোরদের সঙ্গে নিজের সন্তানকে তুলনা করা। সে লেখাপড়ায় খারাপ করলে, কোনো বিষয়ে দক্ষতা কম থাকলে, কথা না শুনলে, অন্যের সন্তানের সঙ্গে তুলনা করে সন্তানকে বিদ্রূপ করলে সে হতাশ হয়ে পড়ে ও নিজেকে আড়াল করে নেয়।
৩. বয়স বাড়ার সঙ্গে নিজের মধ্যে স্বাধীনচেতা ভাব আসে, অন্যের শাসন-বারণ শুনতে ভালো লাগে না। এসময় সন্তানের ভালোমন্দ নিয়ে বাবা-মায়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়, সন্তান নিজেকে গুটিয়ে রাখে।
৪. বন্ধুদের চাপ একটি বড় কারণ। এসময়ে সমবয়সী বন্ধুদের অনুকরণে নিজেকে ‘স্মার্ট’ প্রমাণ করতে মন চায়। আর তাই বাবা-মায়ের বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে হয়, ফলে তৈরি হয় দূরত্ব।
৫. এই বয়সে গোপনীয় অনেককিছুই থাকে। বাবা-মায়েরা সেটা পছন্দ করতে চান না। তখন সেই অপছন্দনীয় বিষয়গুলোতে বাবা-মা রাগ করবে- এই ধারণা থেকে বাঁচতে সন্তান সব লুকিয়ে রাখতে চায়। এতে করে তৈরি হয় দুরত্ব।
৬. এই সময়ে সন্তানদের মধ্যে নিজের জগত তৈরি হয়। সেখানে বন্ধুবান্ধব, সমবয়সীদেরই আপন মনে হয়। বাবা-মাকে তুচ্ছ মনে হয়। এই তাচ্ছিল্য থেকে দূরত্ব তৈরি হয়।
৭. এই বয়স কিছুটা ভয়ের। এই সময়ে আসে মাদকের খারাপ থাবা। সন্তান মাদকাসক্ত হয়ে পড়লে বা কোনো মানসিক সমস্যায় পড়লে তার আচরণে পরিবর্তন আসে। তখন সে দূরে সরে যায়।
৮. এদিকে মা-বাবার মধ্যে কেউ মাদকাসক্ত হলে, মানসিক রোগে পড়লে, আইনগত বড় জটিলতায় পড়লে বা বিবাহবহির্ভূত কোনো সম্পর্কে জড়ালে সন্তানের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হতে পারে।
৯. সন্তানকে পর্যাপ্ত সময় না দিলে সন্তান গুটিয়ে যেতে থাকে। বাবা-মা অতিরিক্ত বিত্তবৈভব বা পেশাজীবনের পেছনে ছুটলে, সামাজিক কর্মকাণ্ডে বেশি জড়িয়ে পরিবারকে সময় না দিলে সন্তানের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে পারে।
কী করণীয় এই অবস্থায়
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ