নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৩০ এএম, ১৬ জুলাই, ২০১৯
বিশ্বজুড়ে চলছে স্মার্টফোন আর সোশ্যাল মিডিয়ার জয়জয়কার। গ্রীক ও রোমান রূপকথায় হাইড্রা (Hydra) নামক একপ্রকার পা-বিহীন জলজ অথবা উভচর প্রাণীর কথা বলা হয়েছে। এই প্রাণী গ্রীসের উপকূলীয় অঞ্চলে পানির নিচে এবং এবং উপকূলীয় ঝোপঝাড়ে বাস করতো। অক্টোপাসের মতো হাইড্রার অনেকগুলো বাহু ছিল এবং প্রত্যেক বাহুর শেষে একটি করে মাথা ছিল। তাই কেউই জানতো না হাইড্রার ঠিক কয়টি মাথা। তবে সবাই জানতো, হাইড্রার একটি মাথা কাটলে সেখান থেকে দুইটি মাথা গজাতো। সেই দুটি কাটলে আবার মাথা গজাতো চারটি। এভাবে ক্রমেই বাড়তো হাইড্রার মাথা, যা একসময় সবার মাথাব্যথার কারণে পরিণত হয়।
স্মার্টফোন আর সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার হাইড্রার মাথার মতো ক্রমেই বাড়ছে বলে সব তথ্যউপাত্তে জানা যায়। আর বাড়ন্ত শিশুদের অনুসন্ধিৎসু মনের সুযোগ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া শতবাহু বাড়িয়ে অক্টোপাসের মতো পেঁচিয়ে ধরছে তাদের। ফলে বাড়ন্ত শিশুদের হাতে স্মার্টফোন আর সোশ্যাল মিডিয়া তাদের উপকার করছে নাকি ঝুঁকিতে ফেলছে তা নিয়ে ভাবতে হবে অভিভাবকদের।
কোন বয়স থেকে শুরু
কোন বয়সে বাচ্চাদের হাতে স্মার্টফোন দিতে হবে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় যোগাযোগের সুযোগ দিতে হবে তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। আমার শিক্ষকতা জীবনে স্কুলের প্রাইমারি সেকশনের সবচেয়ে নিচের ক্লাসের বাচ্চাদের ক্লাসরুম পরিদর্শনকালে বেশ তৃপ্তি নিয়ে পরিদর্শক দলের দলনেতাকে বলেছিলাম- আমরা স্কুলে প্রথমদিন থেকে কম্পিউটার শিখাই। ভিআইপি দলনেতা হেসে বললেন ওরা তো ক্লাসে আসার আগে থেকেই কম্পিউটার চালানো শিখে যায়। হাতে বা চোখের সামনে মোবাইল না থাকলে শিশুরা আজকাল খেতেও চায় না। দাদী, নানী, বোন বা মায়ের মুখের ছড়া, কবিতা, রূপকথার গল্প, ঘুমপাড়ানি গানের বদলে স্থান নিয়েছে মোবাইল সোশ্যাল মিডিয়া। তাই ১৮ বছরের নিচে যারা সাংবিধানিক স্বীকৃতিতে শিশু- তাদের মোবাইলের অপব্যবহার নিয়ে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
সোশ্যাল মিডিয়া কি প্রয়োজনীয়?
সোশ্যাল মিডিয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা অস্বীকারের উপায় নেই। উঠতি বয়সীরা বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ ও পরিবারের সবার খোঁজ রাখতে এটা ব্যবহার করে। এখানে তারা মনের মতো কারো সন্ধান পায়, যার সঙ্গে মনের সুখ-দুঃখ, অনুভূতি, অর্জন, বিসর্জন, প্রয়োজন সবই শেয়ার করতে পারে। অনুভূতি প্রকাশের এই উপকারিতার কথা সর্বজনবিদিত। ছাত্রছাত্রী, শিক্ষকরা গ্রুপের মাধ্যমে পড়াশোনার কাজেই ব্যবহার করছে সোশ্যাল মিডিয়া। তবে এই স্মার্টফোন আর সোশ্যাল মিডিয়ার মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার হচ্ছে কিনা তা আগে যাচাই করা দরকার।
ডিলিটে ডেঞ্জার
মেইল, ফেসবুক এবং মেসেঞ্জারের মতো অ্যাপগুলো থেকে উঠতি শিশুরা কখন কোথায় যোগাযোগ করছে তা খুঁজে পাওয়া সম্ভব। আবার কিছু অ্যাপস আছে যেখান থেকে কোনো লেখা বা ছবি পাঠানোর পরপরই মুছে যায়। ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বজায় রাখার জন্য এই অ্যাপসের ব্যবহার বিপদের কারণও হতে পারে। এমন একটি অ্যাপ ব্যবহার করে অভিভাবকের সচেতনতার পরেও ১৩ বছরের মার্কিন কিশোরী নিকোলী লোভেল তার ২১ বছরের প্রতারক বন্ধু ডেভিডের দ্বারা অন্তঃসত্ত্বা ও হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে। পরে এই অ্যাপটি কিলার অ্যাপ নামে স্বীকৃত হয়। যেখানে ডিলিট, সেখানে ডেঞ্জার থাকতে পারে, অতএব সাবধান।
নিজেকে আড়াল করছে না তো
অভিভাবকদের বুঝতে হবে যে সোশ্যাল মিডিয়া নিজেকে আড়াল করার একটা অবলম্বন হতে পারে বাড়ন্ত কিশোরকিশোরীদের কাছে। যে কথা বা প্রশ্ন সামনাসামনি করা যায় না, যে ছবি দেখা বা দেখানো যায় না তা অনায়াসে সোশ্যাল মিডিয়ার আড়ালে বলা বা দেখানো যায়। এক্ষেত্রে ছদ্মনামের ব্যবহারও বিচিত্র নয়। ফ্রান্সে একজন ভুক্তভোগী পিতা যখন তার কিশোরী কন্যাকে হারিয়ে ফেলেন, তখন জানা যায় তার স্কুলের এক সিনিয়র ছাত্রী নারী পাচারচক্রের সদস্য হিসেবে গোপনে যোগাযোগ রাখতো তার সঙ্গে। এই হতভাগ্য পিতার উপদেশ তাদেরকে অহেতুক সন্দেহ বা অতিরিক্ত খেয়াল রাখার কথা বললেও অভিভাবকদের হাল ছাড়া চলবে না।
যা নয়, তাও হয়
সোশ্যাল মিডিয়া নিজেকে সুন্দর করে উপস্থাপন এবং নিজেকে অন্যের চোখে মূল্যায়নের দরজা খুলে দেয়। আর এমন বহু অ্যাপ রয়েছে, যা ব্যবহার করে ছবিতে নিজের প্রকৃত চেহারাকে বহুগুণে আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করা যায়। সেখানে অনেক লাইক, কমেন্ট পড়ে। ছবির মতো সুন্দর হতে গিয়ে খাওয়া ছেড়ে দেয় কখনো, কখনো বেশি খায়, কতো প্রসাধনীর ব্যবহার করে। বাস্তবে তেমন সুন্দর না হলে হতাশায় ভোগা, পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়া, এমনকি আত্মহত্যার পথ বেঁছে নেয়। আমার শিক্ষকতা জীবনে পৃথক দুটি ঘটনায় একজন কিশোরী আত্মহত্যার প্রচেষ্টা প্রত্যক্ষ করেছি, যার নেপথ্যে ছিল সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব। এখানের সব সত্যি নয়, তা বুঝাতে হবে।
মিথ্যা বলার প্রবণতা
বাড়ন্ত ছেলেমেয়েদের পক্ষে মিথ্যা বলাটা নতুন কিছু নয়। ওয়াশিংটন পোস্ট ২০১৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি এক ফিচারে প্রকাশ করে যে, কোনো ঝামেলা এড়াতে, নিষিদ্ধ কিছু করতে, নিজেকে বা নিজের ভাইবোন বা বন্ধুদের বাঁচাতে বা তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া কোনো সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে সন্তানেরা মিথ্যা বলে থাকে। তবে এক্ষেত্রে সাম্প্রতিক ও গুরুত্বপূর্ণ প্রবণতা হলো নিজের গোপনীয়তা বজায় রাখতে মিথ্যা বলা। অভিভাবকরা হয়ত মনে করে শাস্তির ভয়ে তার একান্ত বাধ্য সন্তান হয়ত মিথ্যা বলছে। বাস্তবে তা নাও ঘটতে পারে। যারা সন্তানের সঙ্গে একান্ত বন্ধুবৎসল, সন্তানকে শাস্তি দেওয়ার বিপক্ষে তাদের সন্তানও মিথ্যা বলতে পারে। কারণ এর পিছনে রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া ও সোশ্যাল লাইফ। এই মিডিয়া বিভিন্ন চিন্তার জন্ম দেয়, যা মিথ্যাকে উৎসাহিত করে। আমার সামাজিক জীবন একান্তই আমার, সময় কাটানো আর বিনোদনের কৌশল আমিই ঠিক করবো- এই চিন্তাগুলো কিশোরদের মিথ্যা বলতে বাধ্য করে। কারণ সচেতন বাবা-মা তাদের এই চেতনার সঙ্গে একমত হতে পারেনা।
আসক্তি বোঝার উপায়
আজকাল ১৮ বছর হওয়ার আগেই সন্তানদের হাতে স্মার্টফোন বা ট্যাব অভিভাবকরাই তুলে দেন। কিছুক্ষেত্রে টাকা জমিয়ে বা নিকটাত্মীয়দের কাছ থেকে স্মার্টফোন হাতে পায় বাড়ন্ত বাচ্চারা। যাইহোক, নিচের এক বা একাধিক লক্ষণ দেখলে অভিভাবক হিসেবে বিষয়টিকে যুগের হাওয়া বলে অবহেলা করা চলবে না-
* মাত্রাতিরিক্ত সময় ফোন, অ্যাপস, ডিভাইস নিয়ে কাটানো।
* ফোন নিয়ে মেতে থেকে সময়ের কাজ সময়মতো করতে না পারা।
* চেহারা বা আচরণে ভয়, দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা প্রকাশ করা।
* বন্ধু বা নিকটাত্মীয়দের এড়িয়ে মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকা।
* মোবাইলের চার্জ বা নেটওয়ার্ক না থাকলে উৎকণ্ঠা বা বিরক্তি প্রকাশ করা।
* নতুন মোবাইল বা ডিভাইস কিনে দেওয়ার জন্য চাপ তৈরি বা জিদ করা।
* সামাজিক ও পারিবারিক অনুষ্ঠানে যেতে না চাওয়া।
* ব্যক্তিগত পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনে অবহেলা।
* বইপড়া, টিভি দেখা, খেলাধুলা করার মতো বয়সোচিত বিনোদন কর্মকাণ্ডে অংশ না নেওয়া।
* ঘুম, নামাজ ইত্যাদির প্রতি অবহেলা।
অভিভাবক চাইলে তালিকাটা আরও বড় করতে পারবেন। কারণ পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনায় স্মার্টফোন বা সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্তরা যে ঠিক কি আচরণ করবে তা আগে থেকে ধারণা করা কঠিন। বাড়ন্ত শিশুরা খুব আবেগী, অভিমানী, জেদী, কল্পনাপ্রবণ, ভাবুক, নির্জিব, লাজুক, আত্মকেন্দ্রিক বা মিথ্যাবাদী হওয়াটা বিচিত্র কিছু না।
হতাশ হবেন না
সন্তানকে এইসব আসক্তি থেকে বাঁচানোর প্রথম শর্ত হলো হতাশ না হওয়া, যুগের হাওয়া বলে অবহেলা না করা। মনে রাখতে হবে এই সমস্যা শুধু আপনার ঘরেই নয়, মোটামুটি প্রতিটি ঘরেই। ইউরোপের তুলনায় আমরা স্মার্টফোন ব্যবহারের দিক থেকে একেবারে পিছিয়েও নেই। ইউরোপে এই সমস্যার একটা চিত্র তুলে ধরেছে শিশুদের জন্য নিরাপদ প্রযুক্তি ও নিরাপদ মিডিয়া নিয়ে কাজ করা একটি এনজিও কমনসেন্স মিডিয়া। প্রতিষ্ঠানটির ২০১৬ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়-
স্মার্টফোন ও আসক্তি বিষয়ক ভাবনা |
শিশু |
অভিভাবক |
সন্তানের আসক্তি আছে ভাবেন |
|
৫৯% |
শিশুদের হাতে বিভিন্ন কারণে স্মার্টফোন থাকা জরুরি মনে করেন |
৭২% |
৪৮% |
প্রতিঘণ্টায় স্মার্টফোন চেক করেন |
৭৯% |
৬৯% |
সন্তানের ক্ষতি করছে বলে ভাবেন |
|
৭৭% |
নিজেকে আসক্ত ভাবেন |
৫০% |
|
মোবাইলকে কেন্দ্র করে সন্তান ও অভিভাবকের মধ্যে প্রতিদিন ঝগড়া হয় বলে ভাবেন |
৩২% |
৩৬% |
গাড়ি চালানোর সময়ে স্মার্টফোন চেক করেন বলে স্বীকার করেন |
|
৫৬% |
অভিভাবককে গাড়ি চালানোর সময়ে চেক করতে দেখেন |
৫১% |
|
প্রথমেই সমঝোতা
অভিভাবকদের মনে রাখতে হবে, ‘প্রতিরোধ প্রতিষেধকের চেয়ে উত্তম’ (Prevention is better than cure)। সুতরাং শিশুর হাতে স্মার্টফোন তুলে দেওয়ার আগে তার সঙ্গে বোঝাপড়া করে নিন। কখন বা কতক্ষণ ব্যবহার করা যাবে, রাতে ও স্কুলের সময়ে ফোনটি কোথায় থাকবে, লক সিস্টেম বাবা-মা জানবে কিনা, কোন কোন অ্যাপ ব্যবহার করবে, অনিয়মের কি প্রতিফলন হবে ইত্যাদি বিষয়ে আলাপ শেষে মোবাইল দেওয়াই ভালো। আর শিশুদের বয়সবৃদ্ধি, পড়ালেখার কাজে প্রয়োজনীয়তা, বাজারে নতুন অ্যাপের আগমন- এসব বিষয় বিবেচনা করে নিয়মনীতি পরিবর্তন করতে হবে। প্রথমে শর্ত না দিলে পরবর্তীতে শর্তারোপ বেশি কঠিন।
নিজে না পারলে অন্যের সাহায্য
নজর দিন শিশুদের ফোন ব্যবহারের ওপর। কখন, কোথায়, কতক্ষণ তারা ফোনে সময় কাটাচ্ছে তা খেয়াল রাখুন। এতে গোপনীয়তা ভঙ্গের প্রসঙ্গ আনাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে সবকিছু। তারা সর্বদা বাবামায়ের কথা নাও শুনতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনাদের গোপনীয়তা বজায় রাখবে এমন কারো সাহায্য নিন। প্রয়োজনে মনোবিজ্ঞানীদের কাছে যান।
রাতে সাবধান
ব্রডব্র্যান্ড বা রাউটারের নিয়ন্ত্রণ নিজের কাছে রাখুন। নির্দিষ্ট সময় পর বিশেষত রাতে ইন্টারনেট কানেকশন বন্ধ করে ঘুমাতে যান। তারপরও খেয়াল রাখুন অন্যভাবে মোবাইলটি ব্যবহার করছে কিনা। রাতে কখন ঘুমাতে হবে, সকালে কখন উঠতে হবে, পড়া, হোমওয়ার্ক, খাওয়া, অন্যকিছু শেখা- এসবের সময় ঠিক করে নিন সমঝোতার মাধ্যমে। জোর করে চাপিয়ে দেবেন না কোনোকিছু। মনোবিজ্ঞানী লেরি রোজেন এক্ষেত্রে রাতে ঘুমানোর আগে শিশুদের কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে নেওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।
নিজেই হোন রোল মডেল
শিশুদের এই আসক্তি থেকে বাঁচাতে অভিভাবকদের সন্তানের সামনে অনুকরণীয় রোল মডেল হতে হবে। অভিভাবক নিজেই যদি সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্ত থাকেন, বাচ্চারা তো সুযোগ পাবেই। আসক্ত সন্তানদের সামনে অন্য আত্মীয়স্বজন ও পারিবারিক বন্ধুদেরও মোবাইলে বুঁদ হয়ে থাকতে নিষেধ করুন।
বিকল্প তৈরি করুন
এই আসক্তি থেকে শিশুদের দূরে রাখতে তার পছন্দের কিছু দিয়ে তাকে ব্যস্ত রাখতে হবে। এক্ষেত্রে নাচ, গান, কবিতা আবৃত্তি, সাতার, জুডো, কারাত অনুশীলন, শরীরচর্চা, বইপড়া, বাগান করা, সেলাই বা রান্না- এমন অনেককিছু নিয়ে ভাবতে হবে যা আপনার সন্তান ভালোবাসে।
আপনিও স্মার্ট হোন
প্রযুক্তির এই যুগে আপনাকেও হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। সন্তানের সোশ্যাল মিডিয়ার আইডি সম্পর্কে নিশ্চিত হোন। তার একাধিক আইডি আছে কিনা খোঁজ নিন। বন্ধুসুলভ আচরণ করে সবকিছু আপনার সঙ্গে আলোচনায় উৎসাহিত করুন। ফোনের পাসওয়ার্ড ও সেফটি লক সম্পর্কে জানুন। নিত্যনতুন উপকারী অ্যাপস সম্পর্কে জানুন যা নির্দিষ্ট সময়ের পর নেট বন্ধ করে দিতে পারে। আপত্তিকর ভিডিওক্লিপ ব্লক করে রাখার পদ্ধতিও রয়েছে। এগুলো শিখে নিন।
পুরস্কৃত করুন
আপনার উপদেশ ও রুটিন মেনে চললে এবং স্মার্টফোন, ডিভাইস ও সোশ্যাল নেটওয়ার্ক থেকে দূরে থাকলে সন্তানকে পুরস্কৃত করুন। তাকে সময় দিন, বিনোদনের সুযোগ দিন। বিকল্প ছাড়া এই আসক্তি থেকে সন্তানকে দূরে রাখা অসম্ভবই বটে। একটা কথা মনে রাখতে হবে যে আমরা যে স্মার্টফোন এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করি তা আজকের পৃথিবীতে গ্রহণযোগ্য। কিন্তু স্মার্টফোন এবং সোশ্যাল মিডিয়া যদি আমাদের ব্যবহার করে তবে তা সবার জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
লেখক: কলামিস্ট ও গবেষক। সেনাবাহিনী ও কর্পোরেট জগতে চাকরি করেছেন দীর্ঘদিন। বিদেশে স্কুল পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন এক দশক।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ
মন্তব্য করুন
বিশ্বে নারীদের সন্তান জন্মদানের ক্ষমতার হার কমতে শুরু করেছে।
সামনের দিনগুলোতে এই হার এতোটাই কমবে যে চলতি শতকের শেষ নাগাদ জনসংখ্যার র্নিধারিত
মাত্রা বজায় রাখার কঠিন হবে। অবশ্য বিশ্বের বেশিরভাগ জীবিত শিশুর জন্ম দরিদ্র দেশগুলোতে
হবে। বুধবার (২০ মার্চ) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্সের সিনিয়র গবেষক স্টেইন এমিল ভলসেট
এক বিবৃতিতে বলেন, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার জন্য বেশি সংবেদনশীল নিম্ন আয়ের
দেশগুলোতে কেন্দ্রীভূত হওয়ার সাথে এই প্রবণতাটি সারা বিশ্বে ‘শিশু বুম’ এবং ‘শিশু
হ্রাস’ বিভাজনের দিকে নিয়ে যাবে।
দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত সমীক্ষার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বিশ্বব্যাপী
২০৪টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে ১৫৫টিতে বা ৭৬ শতাংশে ২০৫০ সালের মধ্যে জনসংখ্যা প্রতিস্থাপনের
স্তরের নীচে উর্বরতার হার থাকবে। ২১০০ সালের মধ্যে এটি ১৯৮টি বা ৯৭ শতাংশে উন্নীত হবে।
চলতি শতাব্দি শেষ নাগাদ তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি শিশুর জন্ম নিম্ন
ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ঘটবে, যার অর্ধেকেরও বেশি আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চলে।
পরিসংখ্যানে বলছে, ১৯৫০ সালে যেখানে প্রতি নারীর শিশু জন্মদান ক্ষমতা
বা উর্বরতার হার ছিল ৫, সেখানে ২০২১ সালে এই সংখ্যা ২ দশমিক ২-এ নেমে এসেছে। ২০২১ সাল
নাগাদ ১১০টি দেশ ও অঞ্চলে প্রতি নারীর জন্য জনসংখ্যা প্রতিস্থাপনের হার ছিল ২ দশমিক
১টি শিশু।
গবেষণা দ্য ল্যানস গর্ভবতী শিশু জন্ম
মন্তব্য করুন
প্রাণিজগতের মধ্যে মানব মস্তিষ্কই সবচেয়ে জটিল। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের
মস্তিষ্কের আয়তন পুরুষের প্রায় ১৫০০ সিসি ও মহিলাদের প্রায় ১৩০০ সিসি এবং মানব ভ্রূণের
প্রাথমিক অবস্থায় মস্তিষ্ক প্রধান তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত থাকে। পূর্ণাঙ্গ মানুষে এটি
আরও জটিল রূপ ধারণ করে এবং বিভিন্ন অংশে বিভক্ত হয়।
কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স ২০১৯ এর তথ্য মতে, মানুষের মস্তিষ্কের ধারণ
ক্ষমতা কমপক্ষে ২.৫ পেটাবাইট অথবা ১ মিলিয়ন বা ১০ লক্ষ গিগাবাইট।
দেখা যায়, সাধারণভাবে, মানুষ কিছু মানসিক ঘটনা-যেমন বিষণ্নতা এবং
স্পর্শের মাধ্যমে তাপমাত্রা শনাক্ত করার ক্ষমতা - অন্যদের তুলনায় বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা
করার মতো আরও বেশি কার্যকর..! যেমন গর্ব অনুভব করা বা প্রথম দর্শনে প্রেমের অভিজ্ঞতা।
তবে, দ্য ডেভিলস ডিকশনারি ইন, অ্যামব্রোস বীরস মনকে "মস্তিষ্কের
গোপন বিষয়টির একটি রহস্যময় রূপ" বলে বর্ণনা করেছেন, যা নিজেকে বুঝা "ইহা
নিজেকে চেনা, অর্থাত নিজেকে বুঝা ছাড়া আর কিছু না" বা বোঝার নিরর্থক প্রচেষ্টা
নিয়ে জড়িত।
বায়ার্সের ১৯১১ সালের প্রকাশের পরে দীর্ঘসময় ধরে আত্মবিজ্ঞান
সীমা সম্পর্কে প্রশ্ন উঠেছে। কোন এক কোরা ব্যবহারকারী জিজ্ঞেস করে: "মানব মস্তিষ্ক
কি নিজেকে বুঝতে যথেষ্ট বুদ্ধিমান?"
দ্য অনিয়ানের একটি বিদ্রুপমূলক শিরোনাম রিপোর্ট করেছে যে, মনোবিজ্ঞানটি
স্থগিত হয়েছে কারণ "ক্লান্ত গবেষকরা বলেছিলেন যে মন সম্ভবত নিজেকে অধ্যয়ন করতে
পারে না।"
কিন্তু ক্রমবর্ধমান প্রমাণ দেখায় যে মস্তিষ্কে মন আপনার মস্তিষ্কের
শারীরিক কর্মকাণ্ডের বাইরে চলে গেছে। তাই সতর্ক হোন। নিজেকে বুঝার চেষ্টা করুন। নিজেকে
নিজের আয়েত্বে রাখুন। আপনার জীবনটা আপনারই।
মনোবিজ্ঞানে মস্তিস্কের শনাক্ত করার জন্য অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের
মধ্যে গবেষণা, পর্যবেক্ষণ এবং ইমেজিং স্ক্যানিং সহ কিছু পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
MRI (Magnetic Resonance Imaging), CT scan (Computed Tomography), EEG
(Electroencephalogram), PET scan (Positron Emission Tomography) ইত্যাদি পদ্ধতিগুলি
ব্যবহার করা হয় মস্তিস্কের অবস্থান ও কার্যাবলী নির্ধারণে। এই স্ক্যানিং পদ্ধতিগুলি
মস্তিস্কের আনুমানিক অবস্থান এবং কার্যাবলীর উপর আলোকপাত করে এবং মস্তিস্কের বিভিন্ন
অংশের ক্ষমতা এবং সংযোগস্থলের কার্যক্ষমতা নির্ধারণ করতে সাহায্য করে।
এছাড়াও মানুষ মস্তিস্কের কথা বা মনোবিজ্ঞানিক ধারণা শোনা বা বোঝা
সম্পর্কে সাধারণভাবে, মনোবিজ্ঞানের সম্পর্কে সাক্ষাৎকার করা, সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর
দেখা, মনোবিজ্ঞান নিয়ে পুস্তিকা পড়া, বিভিন্ন মাধ্যমে প্রশ্ন করা এবং মনোবিজ্ঞানে
সম্পর্কিত মাধ্যমের মাধ্যমে তথ্য প্রাপ্ত করা হতে পারে। আরও পেশাদার উপায়ে, যেমন মনোরোগ
বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক বা পরামর্শদাতা মানুষকে মস্তিস্কের বিষয়ে সাথে কাজ করা হতে পারে।
মস্তিস্ক মনোবিজ্ঞানে কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স প্রাণিজগত
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রেমের
নির্দিষ্ট বয়স বা আকর্ষণ কোন বাঁধ দিয়েও
রাখা যায় না। যেকোনো বয়সেই
আসতে পারে প্রেম। তবে, সাধারণত তরুণ বয়সটাতেই
প্রেমে পড়তে বেশি দেখা যায়। কারণ এই তরুণ বয়সটাতেই
ভালোলাগা থেকে ভালোবাসা, হোক সেটা ৬০ বছরের বৃদ্ধা কিংবা
৪০ এর পুরুষ। তারপর হয়
পরিণয় এবং বাকি জীবন
একইসঙ্গে কাটানো।
সম্প্রতি
রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সিনথিয়া তিশা কে বিয়ে করেছেন ওই
প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সদস্য খন্দকার
মুশতাক আহমেদ। যা নিয়ে রীতিমতো
তোলপাড় হয়েছে মিডিয়া পাড়ায়। কারণ সেই শিক্ষার্থীর
বয়স ২০ এর নিচে এবং গভর্নিং বডির
সদস্যের বয়স হচ্ছে ৬০
এর উপরে। বয়সের ফারাক উপেক্ষা করেই প্রেমে জড়িয়ে
পরিবারের অগোচরে
বিয়েও করেছেন। যা সমাজ এবং পারিবারক স্থান থেকে
প্রশ্নবিদ্ধ করে রেখেছেন দায়িত্বশীল বাবা মা।
সমাজের সচেতন
মহল মনে করছেন, মুশতাক এবং তিশা ঘটনা
সমাজের জন্য অসহনীয়। এই ধরনের বিয়েকে নাম দিয়েছেন ‘অসম’ বিয়ে।
তবে
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠরা ‘অসম’ বিয়েকে মেনে
নেয় না, তাই এটি
অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। যুগ
যুগ ধরে সমাজ যে
ভাব বহন করছে, তাই
সঠিক বলে মেনে নিচ্ছে।
বর্তমান যুগ
পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, যেসব মেয়ে ২০ বছর বয়সে ৬০ বছর এর বেশি বয়সী পুরুষকে বিয়ে
করেছে, আগামী ১০ বছর পরে কোথায় থাকবে তাদের দাম্পত্য জীবন, কতটুকুইবা নীড়াতে পারবে
জীবনের পথচলা সেটিই দেখার বিষয়।
যেখানে বাংলাদেশের গড় আয়ু ৭২.৪ বছর সেখানে এমন দম্পতী সমাজে অবস্থান করবে ১০-১৫ বছর। যা কিনা প্রজন্মকে মারাত্মক হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
এছাড়াও দাম্পত্য জীবনে পুরুষের শারীরিক বা যৌন ক্ষমতা থাকা অতিব জরুরি। যদি তা না থাকে
তাহলে ওই নারী যৌন আকাঙ্ক্ষায় অন্য পুরুষে আসক্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এতে করে বেড়ে
যায় পরকীয়া। যা সমাজকে অবনতির দিকে একধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
মায়ো
ক্লিনিক’য়ের নারী স্বাস্থ্য
কেন্দ্রের পরিচালক ডা. ফাবিয়ন সিএনএন’কে বলেন, “যৌনতাকে
ভিন্নভাবে দেখতে হচ্ছে। ২০ বছর বয়সে
যেমন চল্লিশে সেরকম না, ষাটে যেমন
চল্লিশে তেমন না, আবার
আশিতে যেরকম ষাটে তেমন না।
ন্যাপলিয়নের বলেছিলেন, আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও
আমি একটি শিক্ষিত জাতি দিবো’। তবে কি সেই শিক্ষিত মায়ের প্রভাব এই ব্যপক পার্থক্যের
বিয়ে, এতে করে এই মায়ের সন্তান যদিও পৃথিবীতে আসে তাহলে সেই সন্তানের অভিবাবক হয়ে কে
থাকবে, কেই বা সেই সন্তানের ভবিষ্যৎ দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে? তা এখন প্রশ্নমুখর পরিস্থিতি
তৈরি হয়েছে। কেননা একজন নারী মানে একটি সমাজ। নারী মানে রাস্ট্র, নারী মানে এক সচেতন
জাতী।
মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের ‘আটলান্টার এমরি ইউনিভার্সিটি’র
করা গবেষণায় বিজ্ঞানীরা গাণিতিকভাবে গণনা করে দম্পতিদের
মধ্যে একটি নিখুঁত বয়সের
পার্থক্য বের করেছেন। যাতে বলা হয়েছে, ‘বয়সের পার্থক্য যত বেশি হবে,
বিচ্ছেদের ঝুঁকি তত বেশি।’ এই
গবেষণার পরিসংখ্যান বলছে,
৫ বছরের বেশি বয়সের পার্থক্য
থাকা দম্পতিদের মধ্যে বিচ্ছেদের ঝুঁকি ১৮ শতাংশ।
যদিও প্রচলিত
ধারনা হল, বিয়ের ক্ষেত্রে
পুরুষের বয়স হবে নারীর
বয়সের তুলনায় বেশি। অনেক সময় দেখা যায়, বিস্তর ব্যবধান
থাকে নারী পুরুষ বয়সের, কিন্তু
প্রেমটা ঠিকই হয়ে যাচ্ছে।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বয়স্ক
পুরুষের প্রেমে পড়তে দেখা যায়
তরুণীদের। যারা চাইলেই একজন
সমবয়সী সঙ্গী পেতে পারেন। তবুও প্রেমের আকাঙ্ক্ষায় বয়স হয়ে উঠে তুচ্ছ।
কিন্তু এ প্রেম
ভালোবাসার দাম্পত্য জীবনের ক্ষেত্রে তুচ্ছ মনে হওয়া বয়সটাই হয়ে দাড়ায় প্রশ্নমূখি। কেননা,
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দাম্পত্য জীবনের বিষয়টি প্রচলিত রয়েছে হয়ত সমবয়সি, নয়ত নারী
প্রেমিকা থেকে পুরুষ প্রেমিকা কিছু বয়সের বড় বা পার্থক্য।
পুরুষ যদি নারী
থেকে বয়সে বড় হয় তাহলে তাদের মধ্যে ম্যাচিওরিটিটা থাকে পরিপূর্ণ থাকে। এতে করে সমাজ বা জীবন
চলার পথ সহজ হয়, যা কিনা প্রেমিক প্রেমিকার বিয়ে বা দাম্পত্য পর্যন্ত গড়ানোর সম্ভাবনা
থাকে। নারী-পুরুষের
কেবল শারীরিক গঠনই নয়, মানসিক
গঠনও আলাদা।
গবেষণা
বলছে, বেশি বয়সের পুরুষের
ভেতরে কম বয়সী নারীর
প্রেমে পড়ার প্রবণতা থাকে।
আবার অনেক কম বয়সী
নারীও বয়স্ক পুরুষকে বেশি পছন্দ করেন
প্রেমিক বা জীবনসঙ্গী হিসেবে।
কিন্তু বয়সের
এই পার্থক্যে দাম্পত্য জীবন সূচনা করলে সামাজিক এবং পারিবারিক স্থান থেকে হতে পারে
বিপুল বিতর্ক, অসান্তি কিংবা প্রজন্মের হুমকি। যা কিনা পরবর্তী প্রজন্মকে ধ্বংসের দিকে
একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
অনেকেই
মনে করেন, শারীরিকভাবে প্রাপ্ত হওয়ার ক্ষেত্রে মেয়েরা ছেলেদের থেকে একটু এগিয়ে
থাকেন। অর্থাৎ মেয়েদের শরীর ছেলেদের আগেই
প্রাপ্ত বয়স্কদের শরীরের বৈশিষ্ট্যগুলো লাভ করে। আবার অনেকেরই
মত, ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা কয়েক বছর আগে
শারীরিক পূর্ণতা পায়।
তাহলে কি ২০
বছরের এক তরুণী ৬০ বছরের
বৃদ্ধার কাছে জিম্মি। নাকি এটা প্রেম বা ভালোবাসার আকাঙ্ক্ষা? যেখানে মেয়েরা
ছেলেদের তুলনায় কম বয়সেই সিদ্ধান্ত
নেওয়া এবং পরিস্থিতি বোঝার
ক্ষেত্রে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে সক্ষমতা রাখে সেখানে ২০ বছরের একজন
তরুণী তিন চার দশক বয়সে বড় পুরুষকে ঠিক কতটুকু আপন করার সঠিক সিদ্ধান্ত রাখে। তা নিয়েই
চিন্তিত অভিবাবক মহল।
গবেষকরা বলছেন,
দম্পতিদের মধ্যে
বয়সের পার্থক্য ১০ বছর হলে,
বিচ্ছেদের ঝুঁকিও নাটকীয়ভাবে বাড়ে অর্থাৎ ৩০
শতাংশ পর্যন্ত। আর ২০ বা
তার বেশি বয়সের পার্থক্য
থাকা দম্পতিদের জন্য, ভবিষ্যদ্বাণী সত্যিই নেতিবাচক, কারণ তাদের মধ্যে
বিচ্ছেদের ঝুঁকি হতে পারে ৯৫
শতাংশ বেশি।
এছাড়াও ১০ বছরের
ব্যবধানে দাম্পত্য জীবন শুরু করলে থাকে বিচ্ছেদের ঝুঁকি, সেখানে যদি কয়েকযুগ ব্যবধানে
দাম্পত্য জীবন শুরু করে তাহলে তার দায়ভার সমাজ নিবে? তা ছাড়া বয়সের ব্যবধানে বিয়ে করলে
শারীরিক অক্ষমতায় বিচ্ছেদ হওয়ার সম্ভাবনা কয়েকগুন বেড়ে যায়।
বিজ্ঞান বলছে, পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে দ্রুত হরমোনজনিত পরিবর্তন আসে। এর জেরে
মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় আগে থেকেই শারীরিক
সম্পর্কে লিপ্ত হতে পারে।
স্ত্রীর
বয়সের চেয়ে ৪০ বছরের বড় স্বামী
সমাজে এমন গ্রহণযোগ্যতা
পাচ্ছে না। সমাজের চোখে এমন বিয়েকেও ‘অসম বিয়ে’ হিসেবে
আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। এমন ‘অসময়’ বিয়েগুলো শেষ অবধি
পরিনত হয়ে বিবাহ বিচ্চছেদ কিংবা তলাক।
বাংলাদেশ
পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে, এক বছরের ব্যবধানে
দেশে তালাকের হার বেড়ে দ্বিগুণ
হয়েছে। তার প্রধান এক কারণ ‘অসময়’ বা
বয়সের ব্যবধানের বিয়ে।
‘বাংলাদেশ
স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস’ অনুযায়ী ২০২২ সালে দেশে
তালাকের স্থুল হার বেড়ে প্রতি
হাজারে ১ দশমিক ৪টি
হয়েছে। ২০২১ সালে এই
হার ছিল প্রতি হাজারে
০ দশমিক ৭টি। এর মধ্যে
গ্রামে তালাকের প্রবণতা বেড়েছে বেশি। গ্রামাঞ্চলে প্রতি হাজারে ১ দশমিক ৫টি
আর শহরে হাজারে একটি
বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে গত
বছর।
এরুপ চলতে থাকলে সমাজে নারীদের অবস্থান যেমন ভাসমান হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তেমনি রাষ্ট্রীয় ভাবে এর প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
দাম্পত্য ঝুঁকি মুশতাক আহমেদ শিক্ষার্থী সিনথিয়া তিশা বিবাহ তালাক গড় আয়ু ন্যাপলিয়ন গবেষণা বিজ্ঞান
মন্তব্য করুন
সামাজিক
একটি বন্ধন হচ্ছে বিয়ে। বিয়ের মাধ্যমে একটি বৈধ চুক্তিতে
নারী-পুরুষ দুজন দাম্পত্য সম্পর্ক
স্থাপন করে, কখনও পারিবারিক
সম্মতিতে, আবার কখনওবা নিজেদের
পছন্দে। তবে দেশ, কাল, পাত্র,
ধর্ম ও বর্ণভেদে বিয়ের
আনুষ্ঠানিকতা অনেকটাই ভিন্ন হয়ে থাকে।
বিয়ে মানব
জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি
অংশ, যার মাধ্যমে নারী-পুরুষ একত্রে বৈধভাবে মিলিত হয়, রচনা করে
স্বপ্নের সুখী নীড় এবং
গড়ে তোলে পারিবারিক ও
সামাজিক বন্ধন। আবার এই সামাজিক
বন্ধন বিয়ে টা যেমন
সামাজিক মর্যাদায় পারিবারিক দাম্পত্য জীবন শুরু করে
তেমন করে বিয়ে বা
বিবাহ বিচ্ছেদ ও হয়ে থাকে
নিমিশেই। কেননা বিয়ে হচ্ছে একটি
শক্তিশালী ও পবিত্র বন্ধন।
একটি
বিয়ে শুরু হয় উদযাপন
ও ভালবাসায়। এই বন্ধন ছিন্ন
করার সিদ্ধান্ত অনেক কঠিন হলেও
জীবন চলার পথে বিভিন্ন
কারণে অনেককে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
যুগের
পরিবর্তন কালের বিবর্তনে পরিবার ও সমাজের নানান
অসঙ্গতির কারনে বিচ্ছেদ হতে পারে। যদি
স্বার্থপর বা অসমান যৌথ
জীবনের সমস্যা উঠে এবং এটি
সমাধান করা সম্ভব না
থাকে, তাহলে একটি দাম্পত্য জীবনের
মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যেতে পারে।
এমনকি
স্বামী স্ত্রীর মধ্যে অসম্মান আচরণ বা আধুনিক
সম্পর্কের দৃষ্টিভঙ্গি যদি অবধারিত থাকে
তাহলে সেই আচরণের বা
সম্পর্কের ভিত্তিতে আধুনিক সম্পর্ক সংরক্ষণ করা সম্ভব না
হলে বিবাহ বিচ্ছেদ হতে পারে। সবচেয়ে
বড় কারন হতে পারে
অর্থনৈতিক সমস্যা।
কেননা
সংসার জীবনে আর্থিক বিপদ হলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক দূরত্ব তৈরি করতে পারে,
এতে করে বিবাহ বিচ্ছেদটা
এক ধাপ বেড়ে যায়।
যদি একটি পরিবার সামাজিক
মূল্যবোধের স্থান থেকে চিন্তাকরা হয়
তাহলে, একটা পরিবারের পৈতৃক
সম্পত্তি নিয়ে বা কোন
মামলা বা আইনি জটিলতার
কোন বিতর্কের অবস্থা থাকে সে ক্ষেত্রেও
পারিবারিক কলরহ হতে পারে
এবংকি সেটা বিবাহ বিচ্ছেদ
পর্যন্ত ও যাওার সম্ভাবনা
থেকে যায়।
দেখা
যায়, দম্পতিদের মধ্যে মনোমালিন্য, মারামারি, তর্ক ও, বিশ্বাসঘাতকতা
করার কারণেও অনেকেরই বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক
দাম্পত্য জীবন ধ্বংস করে
দেয়। অ্যালকোহল, ড্রাগে আসক্ত ব্যক্তিরাও সম্পর্ক ও সঙ্গীকে ধরে
রাখতে পারেন না. অতিরিক্ত উচ্চাকাঙ্খা
কিংবা লোভী নারী-পুরুষ
অর্থ, ক্ষমতা, সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির লোভে তার চেয়ে
তিনগুণ বয়সী নারী-পুরুষ
বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছে। রিবারিক নির্যাতনের কারণেও একটি সংসার ভেঙে
যায়।
বিশেষ
করে অনেক নারী তার
সঙ্গীর কাছ থেকে মানসিক
ও শারীরিক নির্যাতন সহ্য করতে না
পেরে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটান। শুধু নারীরাই নন,
পুরুষদের ক্ষেত্রেও অনেক সময় এটি
দেখা যায়।
বিবাহ
বিচ্ছেদের প্রতিকার বিভিন্ন দেশে এবং ধর্মে
বিভিন্ন হতে পারে এবং
কানুনি নির্ধারণে ভিন্ন হতে পারে। তবে,
কিছু সাধারিতভাবে অনুভব হওয়া প্রতিকার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে:
আলিমোনি
(অনুগ্রহিতা): কিছু দেশে, বিচ্ছেদের
পর এক পক্ষে অপর
পক্ষকে আলিমোনি বা অনুগ্রহিতা দেওয়া
হতে পারে, যা আত্মা-নির্ভরশীলতা
এবং আর্থিক সহায়ক সরবরাহ করতে সাহায্য করে।
বাচ্চাদের
জন্য পুনর্নির্মাণ অধিকার: বিবাহ বিচ্ছেদ হলে, সাধারণভাবে বাচ্চাদের
জন্য পুনর্নির্মাণ অধিকার দেওয়া হতে পারে, এটি
তাদের দেখভাল এবং শিক্ষার জন্য
অভিভাবকের সাথে মিলে। যা বিচ্ছেদের প্রতিকার হতে পারে।
সম্পত্তির
বন্টন: বিবাহ বিচ্ছেদের পর সম্পত্তির মামলা
বন্টন করা হতে পারে,
এটি বৈধ সম্পত্তি এবং
অধিকারের ভিন্নতা নিরসন করে এর ফলে দাম্পত্য জীবনে বিচ্ছেদের
ঝুঁকি অনেকটাই কমে যেতে পারে।
আলোচনা
এবং সম্ঝোদন: কিছু ক্ষেত্রে, বিচ্ছেদের
পর আলোচনা এবং সম্ঝোদনের প্রক্রিয়া
শুরু করতে পারে, যাতে
দুই পক্ষের মধ্যে সমস্যা সমাধান হতে পারে। যা বিচ্ছেদের পরও সঠিক সমাধান করতে সহায়তা করে।
এই প্রতিকারগুলি একে অপরের মধ্যে
ভিন্নতা দেখায় এবং কানুনি নিয়মাবলীর
মধ্যে ভিন্নতা থাকতে পারে। গত কয়েক বছরে
বাংলাদেশে বিবাহবিচ্ছেদ বেড়ে পড়ছে অসংখ্য পরিবারে
এর প্রভাব। যা কিনা সমাজ ও জাতিগত দিক থেকে
সঠিক নিরসন হওয়া একান্তই জরুরি নলে মনে করেন বিশ্বের একাধিক সমাজবিজ্ঞানীরা।
বিবাহবিচ্ছেদ দাম্পত্য বিচ্ছেদ আধুনিক সম্পর্ক নির্যাতন
মন্তব্য করুন