লিট ইনসাইড

স্বপ্ন ব্যবচ্ছেদ

প্রকাশ: ০৮:৪০ এএম, ০২ জুন, ২০২৩


Thumbnail

জীবনটা ছোটো হলেও কেউ ছোটো হয়ে বাঁচতে চায় না। অনেক স্বপ্ন নিয়ে পথচলা মানুষেরই ধর্ম। এই পথচলায় মানুষ অভ্যস্ত। পথ চলতে চলতে কেউ সফলতা বা ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে চিরতরে চলে যান পরকাল নামক বিস্ময়ভরা ভুবনে। সেখানে কি আছে না আছে কেবলই সৃষ্টিকর্তা জানেন। তারপরেও পরকাল নিয়ে মানুষের অযাচিত চিন্তাভাবনা। যে মানুষটি সারাদিনের ক্লান্ত শরীরের ঘাম ঝরিয়ে দিন শেষে জরাজীর্ণ ছোট্ট কুটির অথবা মধ্যবৃত্তের ঘ্রাণহীন দুর্বিসহ যন্ত্রণায় ছটফট প্রাণচঞ্চল পুরাতন কুটির অথবা বিলাসবহুল মোহময় অট্টালিকায় ফিরে আসে তখন আপনজনের মমতামাখানো মুখগুলো এনে দেয় প্রশান্তির ছোঁয়া। জীবন এরকমই যার যার স্থান থেকে উপভোগ্য। জীর্ণশীণ ছোট্ট কুটির, প্রাণচঞ্চল পুরাতন কুটির, বিলাসবহুল মোহময় অট্টালিকা যে যেখানে থাকি না কেন জীবন তো এমনই একদিন এ ভুবন থেকে চলে যেতে হয়। এ ভুবন ছেড়ে চলে যাওয়ার পরে কি হয়? কি হবে? কারো জানা নেই। তবে পরকাল বিশ্বাসী স্ব স্ব ধর্মমতে দিনযাপন করেন। এমন ধ্রুব সত্যটা কেউ অস্বীকার করতে পারে না বা পরকাল কেউই অস্বীকারও করে না।

৮২ বছর বয়সে খোকন মিয়াকে বার্ধক্য ছুঁতে পারলেও যৌবনের ভাবনা তাকে ঘিরে রাখে। খোকন তার আসল নাম নয়। খুব কাছের একজন মানুষ তাকে খোকন বলে ডাকতো। কাছের মানুষ বলতে স্ত্রীর বড়ো বোন। তার স্বামীর নামের সাথে মিল থাকায় আসল নাম ধরে কোনোদিন ডাকা হয়নি সালু বুজির। তাই ছোটো ভগ্নিপতিকে খোকন বলেই ডেকে তৃপ্তি পেতেন। স্ত্রীর বড়ো বোন মানে খোকনেরও বড়ো বোন। তার তুলনা হয় না। সালু বুজির দেওয়া নতুন একটা নাম পেয়ে খোকনও মহাখুশি। যা তিনি গর্ব করে অন্যদের বলতেন। অর্থ-বৃত্তের মধ্যে জীবন চালিকায় শক্তিমান এক অভিনেতা। তবে দুঃখ একটা, অভাবে যখন হাবুডুবু খাচ্ছিল তখনও তিনি বিচলিত হননি। টুকটুক করে ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া তাদের বিয়ে দেয়া সবই সম্পন্ন করলেন। মোটাভাত মোটা কাপড়ের সন্ধান প্রতিটি সন্তানের জন্য তিনি পরম মমতায় নিশ্চিত করেছেন। শুধু একটা কষ্ট মনের মধ্যে হোঁচট খেতে লাগল। ছয়টি সন্তানই বিয়ে দিয়ে যার যার স্থান করে দিয়েছেন। কোথাও বড়ো রকমের তিক্ত অভিজ্ঞতা ছিল না। 

প্রতিটি সন্তানকে তিনি শাসন আর ভালোবাসা দিয়ে গেছেন। স্বভাবতই সব সন্তানের মধ্যে ছোটো ছেলে একরোখা আর জেদী ছিল। একরোখা স্বভাবের কারণে তাকে প্রচণ্ড ভালোবাসতো। সে ভালোবাসার মূল্য সে রাখতে পারেনি। হয়তো তার একরোখা ভাষায় রেখেছে যা খোকন মিয়া বুঝতে পারেননি। সে রেগে গেলে তাকে কন্ট্রোল করা খুব সহজ ছিল না। মা‘র কাছে হার মানতো ছেলেটা। তার ওপর রাগও যেমন ছিল ভালোবাসাও ছিল প্রবল। বাবা সব সময় চাইতেন তার ছোট ছেলেটা ভালো থাকুক। তার ভালো থাকা নিয়ে চিন্তার শেষ ছিল না। ভালো ছাত্র, ক্লাসের ফার্স্ট বয়। খোকন মিয়া ভাবতো, হয়তো সে এ সংসারের হাল ধরবে। কিন্তু তা আর হলো কই? বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে ছেলের। আয়-বরকত নাই। কেউ মেয়েও দিতে চায় না। ছোটো ছেলেটাকে নিয়ে খোকন মিয়ার পাহাড় সমান চিন্তা। 

অনেক প্রচেষ্টার পর বিয়েতে রাজি করা গেল ছেলেকে। ছেলে রাজী তাই খুটে-খুটে মেয়ে দেখার বিষয়টি বাদ দিয়ে দিনক্ষণ দেখে বিয়ে সম্পন্ন হলো। বিয়ের পরেও শান্তি নেই ছেলের সংসারে। তাদের খরচ চালাতে হচ্ছে। তাতে দুঃখ নেই খোকন মিয়ার। ছেলে তার বউকে নিয়ে সুখে শান্তিতে খাকুক- এটাই তার একমাত্র প্রার্থনা।

২০১৬ সালের ২১ মার্চ যে অভিজ্ঞতা তিনি অর্জন করেছেন তার জীবদ্দশায় সেটা তার শ্রেষ্ঠ অভিজ্ঞতা। ছোটো ছেলেকে বিয়ে দেয়ার ছয় মাস পরের ঘটনা। হাসিখুশি অবস্থায় তার বউকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত ছিল তারা। কিন্তু বাবার বাড়ি থেকে জানিয়ে দেয়া হয়, তাদের মেয়েকে আর পাঠাবে না স্বামীর ঘরে। এদিকে ছেলে বৃদ্ধ বাবা-মাকে চাপ দিচ্ছে বউকে বাপের বাড়ি থেকে এনে দেয়ার জন্য। একপর্যায় ছেলের বউকে আনার জন্য বৃদ্ধ খোকন মিয়া স্ত্রীকে নিয়ে রওনা হলেন। 

খোকন মিয়ার বড়ো সন্তান সূচনাকে বলে গেলেন, দেড় দুই ঘণ্টার মধ্যে ছেলের বউ নিয়ে বাড়ি ফিরবেন। তিনটা... চারটা... পাঁচটাও বেজে গেল! তাদের আসার কোনো নামগন্ধ নেই! সূচনা ফোন দিচ্ছে কিন্তু ফোন ধরছে না কেউ। চিন্তায় পড়ে গেল মেয়েটি। 

সূচনার একমাত্র মেয়ের জন্মদিন আজ। মেয়েটা কাছে নেই। লেখাপড়ার জন্য ঢাকায় থাকে। সন্তান দূরে থাকলে যা হয়, মন সবসময় অস্থির হয়ে থাকে। তার ওপর বৃদ্ধ বাবা-মা ছোটো ভাই, বউকে নিয়ে বাড়ি  ফিরছে না। একসময় ফোনও বন্ধ হয়ে যায়! বাবা-মায়ের জন্য খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছে তার।

রাত দশটায় বাবা ফোন দিলেন। সূচনাকে বাবার বাসায় যেতে হবে। বাবার বাসায় হাজির হয়ে দেখলো বৃদ্ধ মা-বাবা রীতিমতো কাঁপছে থরথর করে । কিছুই বলতে পারছে না। অসহায় দুইজন মানুষ। তাদের করুণ চাহনি বলে দিচ্ছে না বলা কিছু যন্ত্রণা। বাবা-মাকে দেখে বাসায় ফিরতে রাত প্রায় এগারোটা বাজলো সূচনার। দুশ্চিন্তায় ঘুম আসছে না। 

পরদিন ভোরে অন্ধকার না কাটতেই দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শোনা যায়। দরজা খুলে দেখে মা দাঁড়িয়ে। কাক-পক্ষি জাগার আগে অন্ধকার ভোরে মা সূচনার বাসায় এসে হাজির! 

‘কি ব্যাপার মা, তুমি এত সকাল সকাল।’

মা বললেন, ‘কারো সামনে কথা বলা যাবে না।’

তিনি তখনও রীতিমতো কাঁপছেন।

‘ছোটো বউয়ের সামনে কথা বলা যাবে না, তাই তোর বাসায় এলাম।’ 

কথাগুলো বলা খুবই জরুরি। একপর্যায়ে গতকাল দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত তাদের ওপর ঘটে যাওয়া নির্মম অত্যাচারের গল্প বলে ফেললেন এক নিঃশ্বাসে। 

ছেলের শ্বশুর বাড়িতে যেতেই তাদের ফোন কেড়ে নেয়া হয়। মায়ের সামনেই বাবাকে অপমান করা হয়। বউ নিতে হলে স্ট্যাম্পের ওপর সই করে বউ নিতে হবে। বউ তারা দেবে না। সে বাড়ির পাঁচ-ছয় জন লোক মিলে বৃদ্ধ খোকন মিয়া ও তার স্ত্রীকে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করেছে। তাদের মেয়েকে নিতে হলে বাড়ি-জমি লিখে দিতে হবে, না হয় ছেলেকে দিয়ে খোরপোষসহ তালাক পাঠাতে হবে! বাবা সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করতে রাজি না হওয়ায় তার ওপর অকথ্য নির্যাতন চালানো হয়। একসময় বাধ্য হয়ে জীবনযুদ্ধে হেরে যাওয়া নাবিকের মতো ফ্যালফ্যাল চাহনিতে ঘৃণাভরে স্ট্যাম্পের ওপর স্বাক্ষর করেন এবং ছেলের বউকে বাড়িতে আনার অনুমতি পায় তারা। 

বাড়ির অবস্থা খুবই খারাপ। বউকে কোনো কথা শোনানো যাচ্ছে না। তার একটাই কথা, বাড়ি বিক্রি করে তাকে টাকা দিতে হবে, সাথে ডির্ভোস। তোর বাবা কেঁপে কেঁপে উঠছে। তাকে বাঁচানো যাবে না! রীতিমতো মরার ঘর থেকে ফিরে এসেছে।

সব শুনে মাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বাড়ির রিকশায় তুলে দিলো। বিপদে মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করতে হবে। তবে সবার আগে জীবন বাঁচানোর জন্য সুস্থ থাকাটা জরুরি। মা নিরুপায় হয়ে বাসায় ফিরে গেলেন। একমাত্র মা-ই পারে এ সংকট সামাল দিতে। মায়ের ধৈর্য অপরিসীম। 

সপ্তাহখানেক পরে ছোটো বউ ঢাকায় ছেলের কাছে গেল এবং দিনে একাধিকবার কারণে-অকারণে ফোন করে হাজারও অভিযোগ জানায়। প্রতিদিন ছেলে-বউ এর ঝগড়াঝাটি, মারামারির খবর অতিষ্ট  করে তোলে খোকন মিয়াকে। বিষয়টি নিয়ে তার নাওয়া খাওয়া বন্ধ প্রায়। 

একপর্যায়ে তার কাছে মনে হলো, ছেলেকে সে তার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করবেন। ছেলের পরামর্শে খোকন মিয়া উকিলের সাথে তার সাথে ঘটে যাওয়া সবকিছু খুলে বলেন। উকিল প্রথমে হাসেন আর বলেন, ‘ছেলে ত্যাজ্য করে কি করবেন? ত্যাজ্য করলেও সে আপনার সম্পত্তির ভাগ পাবে। ওসব করে কোনো কাজ নেই। আপনি বরং ছেলে-মেয়েদের মধ্যে সম্পত্তি বন্টননামা করে দেন।’

খোকন মিয়া এবার বেঁকে বসলেন। মনে মনে ভাবলেন, বন্টননামা করলে তো সাথে সাথে ছেলে-মেয়ে মালিক হয়ে যাবে। তারপর তারা যদি আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় তখন কি হবে? না, তা করা যাবে না। বৃদ্ধ বয়সে স্ত্রীকে নিয়ে বিপদে পড়া যাবে না। তিনি উকিল সাহেবের কাছ থেকে সময় চেয়ে ফিরে এলেন। কিন্তু  দুই চোখে ঘুম নেই তার। কি হবে শেষ পর্যন্ত!

অনেক চিন্তা-ভাবনার পর স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর আর ছোট ছেলের উৎপাত থেকে রক্ষা পেতে সব ছেলে মেয়ের ছবি এনআউডি কার্ড যোগাড় করে তার ওয়ারিশদের নামে ওছিয়তনামা রেজিস্ট্রি করান। যা তার মৃত্যুর পরে কার্যকর হবে। বিষয়টি বাড়ির সবাই কমবেশি জানতো, শুধুমাত্র ছোটো ছেলেকে বলা হয়নি।

কারণ ছোট ছেলে বিষয়টি মেনে নেবে না বলে খোকন মিয়ার মনে হয়েছিল।  ওছিয়তনামা করার পরে তার দু:চিন্তা অনেকটা লাঘব হয়েছিল এবং ওছিয়তনামা  করার মাসখানেক পরে ছেলের কাছে ঢাকায় বেড়াতে যান। সপ্তাহখানেক ঢাকায় থাকেন। তার মধ্যে দুইদিন থাকেন ছেলের কাছে। ছেলে আর বউ এখন বেশ মিলেমিশে আছে দেখে বেশ শান্তি পেলেন তারা।

এক রুমের বাসা । রাতে খোকন মিয়া বাসার পাশে মসজিদে ঘুমাতে যাবেন। ছেলের বউ মসজিদে যেতে দিলেন না শ্বশুরকে। তারা নিচে বিছানা করে খোকন মিয়াকে খাটে ঘুমাতে দিলেন। দুই দিনে ছেলের বউকে নিয়ে পুরান ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে দেখেছেন। 

এক সপ্তাহ ঢাকা থেকে বাড়িতে এসে বেশ স্বস্তিতে ছিলেন তিনি। দেখতে দেখতে ছয়মাস কেটে গেল। ছয়মাস পরে ছোটো ছেলের বউ এলো বাড়িতে। দুইদিন থাকার পরে ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করা সেই কাগজ শ্বশুরের হাতে ফেরত দিলেন। কি ভেবে স্ট্যাম্প নিয়েছিল আর কি ভেবে স্ট্যাম্প ফেরত দিলো তা নিয়ে আর কোনো কথা হলো না। খোকন মিয়া দুই চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে দুর্বিসহ দিনগুলোর কথা মনে করলো। একপ্রকার খুশি ছেলের বউয়ের ওপর, তার একরোখা জেদি ছেলের সাথে মানিয়ে থাকছে বলে। আর একটাই চিন্তা তার মনের মধ্যে তোলপাড় করে যাচ্ছে, আমি যখন থাকবো না তখন আমার ছেলে-মেয়েগুলো পারবে তো মান-সম্মানের সাথে পথ চলতে! 

খোকন মিয়া তার ও তার স্ত্রী স্বাক্ষরিত ফাঁকা স্ট্যাম্প নেড়েচেড়ে দেখছেন আর ভাবছেন কি বিচিত্র দেনা-পাওনা। অবশেষে উকিল এর সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিলেন তার এক খণ্ড স্বপ্ন ব্যবচ্ছেদ করার।  স্বপ্ন ব্যবচ্ছেদ হলো সব ওয়ারিশকে শরিক করে। মনের মধ্যে আর কোনো দ্বিধা রইলো না খোকন মিয়ার। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। তার স্বপ্ন ব্যবচ্ছেদপত্র এবং চাপের মুখে স্বাক্ষরিত ফাঁকা স্ট্যাম্প দায়িত্বশীল কারো কাছে তুলে দিয়ে তিনি নিশ্চিত হতে চান!

[তাসলিমা বেগম : কবি ও গল্পকার]



মন্তব্য করুন


লিট ইনসাইড

কবিতা

প্রকাশ: ০২:০৩ পিএম, ২৩ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail




মন্তব্য করুন


লিট ইনসাইড

বিশ্বের সেরা এবং আকর্ষণীয় পাচ মসজিদ

প্রকাশ: ১১:০২ এএম, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪


Thumbnail

বিশ্বের এমন পাঁচটি মসজিদ সম্পর্কে জেনে নিন:


১. মসজিদুল হারাম, মক্কা, সৌদি আরব:

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মানুষ দেখতে যায়, এমন মসজিদের তালিকায় সবার প্রথমে আছে পবিত্র নগরী মক্কার মসজিদুল হারাম। প্রতিবছর প্রায় ৮০ লাখ মানুষ এই মসজিদে যান। এটিই বিশ্বের সবচেয়ে বড় মসজিদ। একসঙ্গে ১৫ লাখ মানুষ এখানে প্রবেশ করে ঘুরে দেখতে পারেন। মুসলমানদের কাছে সবচেয়ে পবিত্র তিন স্থানের একটি এই মসজিদুল হারাম। মুসলমানদের কিবলা পবিত্র কাবাশরিফ এখানেই অবস্থিত।

তবে যে কেউ চাইলেই মসজিদুল হারামে প্রবেশ করতে পারেন না। অমুসলিমদের জন্য মক্কা নগরীতে প্রবেশ পুরোপুরি নিষিদ্ধ।


২. শেখ জায়েদ মসজিদ, আবুধাবি, সংযুক্ত আরব আমিরাত:

২০০৭ সালে স্থাপিত এই মসজিদ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মসজিদগুলোর একটি। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ঝাড়বাতি ও সবচেয়ে বড় গালিচাও আছে এই মসজিদে।

আরব আমিরাতে বসবাসকারীদের বেশির ভাগই প্রবাসী, যাঁরা মূলত শ্রমজীবী হিসেবে বিভিন্ন দেশ থেকে সেখানে যান। এই বৈচিত্র্যময়তাই মসজিদটির নকশার মূল ভিত্তি। ব্রিটিশ, ইতালীয় ও আমিরাতি স্থপতিরা মিসর, মরক্কো, তুরস্ক, পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশের মসজিদের নকশা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে শেখ জায়েদ মসজিদের নকশা এঁকেছেন।

প্রতিবছর মসজিদটি দেখতে প্রচুর দর্শনার্থী আসেন। শুধু ২০১৭ সালেই এসেছেন প্রায় ৫৮ লাখ দর্শনার্থী। নামাজের সময় ছাড়া অন্য সময় অমুসলিম দর্শনার্থীরাও মসজিদ ঘুরে দেখতে পারেন। তবে শুক্রবার অমুসলিম দর্শনার্থীদের এই মসজিদে প্রবেশ নিষেধ।


৩. আয়া সোফিয়া, ইস্তাম্বুল, তুরস্ক:

ইউরোপের সবচেয়ে আকর্ষণীয় শহরগুলোর একটি তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুল। আর ইস্তাম্বুল বা গোটা ইউরোপের অন্যতম সুন্দর মসজিদ আয়া সোফিয়া। ৩৬০ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দে স্থাপিত এ স্থাপনা শুরুতে মসজিদ ছিল না। ১৪৬৩ সালে সুলতান মেহমেদ এটিকে মসজিদ হিসেবে স্বীকৃতি দেন।

১৯৩৪ সালে এটিকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করে তৎকালীন তুরস্ক সরকার। কিন্তু ২০২০ সালে তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এটিকে আবার নামাজ আদায়ের জন্য মুসল্লিদের কাছে উন্মুক্ত করে দেন। ১৯৮৫ সালে আয়া সোফিয়াকে বিশ্ব ঐতিহ্যর স্বীকৃতি দেয় ইউনেসকো।


৪. আল–আকসা মসজিদ, পূর্ব জেরুজালেম, ইসরায়েল:

মুসলিম স্থাপত্যশৈলীর শুরুর দিককার অন্যতম নিদর্শন জেরুজালেমের আল–আকসা মসজিদ।

বলা হয়ে থাকে, খোলাফায়ে রাশিদিনের অন্যতম খলিফা হজরত উমর (রা.)–র শাসনামলে ৬৩৭ খ্রিষ্টাব্দে শুরু হয় মসজিদটির নির্মাণকাজ। তবে বর্তমানে আল-আকসা বলতে পুরো চত্বরটাকেই বোঝানো হয়। ‘হারাম আল শরিফ’ নামে পরিচিত এই চত্বরের চার দেয়ালের মধ্যে আছে কিবলি মসজিদ, কুব্বাতুস সাখরা (ডোম অব দ্য রক) ও বুরাক মসজিদ। মূল আল–আকসা বা কিবলি মসজিদ হলো ধূসর সীসার পাতে আচ্ছাদিত গম্বুজওয়ালা একটি স্থাপনা। তবে পর্যটকের কাছে আল–আকসা নামে বেশি প্রসিদ্ধ সোনালি গম্বুজের স্থাপনা কুব্বাতুস সাখরা।

জেরুজালেমের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদ ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় উঠে আসে ১৯৮১ সালে। এখানে প্রায় চার লাখ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন । তবে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেমে অবস্থিত আল-আকসা মসজিদ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েলি পুলিশ। কোনো মুসল্লিকে তারা মসজিদ প্রাঙ্গণে ঢুকতে দিচ্ছে না। পবিত্র স্থানটির দায়িত্বে থাকা ইসলামিক ওয়াক্‌ফ বিভাগ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।


৫. দ্বিতীয় হাসান মসজিদ, কাসাব্লাঙ্কা, মরক্কো:

আলজেরিয়ার জামা এল জাযের মসজিদের মিনার সবচেয়ে উঁচু, ৮৭০ ফুট। তারপরেই কাসাব্লাঙ্কার দ্বিতীয় হাসান মসজিদের মিনার, উচ্চতা ৬৮৯ ফুট। মরক্কোর বাদশাহ দ্বিতীয় হাসানের তত্ত্বাবধানে নির্মিত মসজিদটির নকশাকার ফরাসি স্থপতি মিশেল পিনসু।

আটলান্টিক মহাসাগরের একটি শৈলান্তরীপের মাথায় মসজিদটির অবস্থান। মেঝের একটা অংশ স্বচ্ছ কাচের বলে আটলান্টিকের নীল পানি দেখতে পান নামাজে যাওয়া মুসল্লিরা। দেয়ালে মার্বেলের চোখধাঁধানো কারুকাজ। ছাদ অপসারণযোগ্য বলে নামাজ পড়তে যাওয়া মুসল্লিরা রাতের আকাশও দেখতে পান।

দ্বিতীয় হাসান মসজিদের মিনার থেকে একটি লেজাররশ্মি মুসলমানদের কিবলা কাবাঘরের দিকে তাক করা। অনন্য স্থাপত্যশৈলীর জন্য জগৎ–খ্যাত এই মসজিদে একসঙ্গে ১ লাখ ৫ হাজার মুসল্লির নামাজ আদায় করার সুবিধা আছে।


মসজিদ   সেরা  


মন্তব্য করুন


লিট ইনসাইড

মুখের ঠিকানা

প্রকাশ: ১২:১৬ পিএম, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪


Thumbnail




মন্তব্য করুন


লিট ইনসাইড

স্পর্শে তুমি

প্রকাশ: ০৪:৪৫ পিএম, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪


Thumbnail




মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন