লিট ইনসাইড

হাজেরার শেষ অনুরোধ

প্রকাশ: ০৯:১০ এএম, ০২ জুন, ২০২৩


Thumbnail

হাজেরার শ্বাস উঠেছে।

শ্রাবণের ঘুঁটঘুঁটে অন্ধকার রাত। সারা দিনের একটানা টিপটিপ বৃষ্টি শেষ বিকেলে দমকা হাওয়ার উসকানিতে দ্বিগুণ তীব্রতা পেয়েছে। ছলিম শেখ সেই সকাল থেকেই হাজেরার পাশে বসে আছে। কামারের হাপরের মতো হাজেরার পাঁজরসর্বস্ব বুক এক-একবার সশব্দে উঠছে আর নামছে। হাজেরার মাথার কাছে ম্লান কেরোসিন বাতিটি দমকা বাতাসে নিভে যাওয়ার উপক্রম। রাতের গভীরতার সাথে পাল্লা দিয়ে বৃষ্টি আর বাতাসের তোড় যেন বেড়েই চলেছে। ছলিম শেখের গায়ে তেল চিটচিটে কাঁথা দ্বিগুণ ওজনে যেন আধভেজা হয়ে লেপ্টে আছে। হাজেরার নিমিলিত চোখের পাতায় তার ভ্রুক্ষেপহীন দৃষ্টি।

এই চেয়ে থাকা ছাড়া ছলিম শেখের আর কী-ই বা করার আছে! নাছিরপুরের গৌর কবিরাজের হলুদ বাটা হাজেরার বুকে মালিশ করে দিয়েছে, উজলপুরের মুন্সী পীরের মাদুলি বাহুতে বেঁধে দিয়েছে, খান জাহান আলীর মাজারে শিরনি মানত করেছে, গত দুই দিন যাবত হাজেরার পাশে বসে তার শুশ্রুষা করেছে। এর বাইরে কিছু করার আর কী-ই বা থাকতে পারে ছলিম শেখের?

সুদীর্ঘ চল্লিশ বছরের দাম্পত্য; সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, মান-অভিমান, আগ্রহ-অবহেলা, জীবিকা-জৈবিকতার সাথি হাজেরা। চেখের সামনে মৃত্যুর হীমশীতল অজানা রাজ্যের পথে এক-পা দু-পা করে এগিয়ে যেতে দেখেও ছলিম শেখের কিছুই করার নেই। কিছুতেই সে ফেরাতে পারবে না হজেরাকে।

ছলিম শেখের বিস্ফারিত চোখের কোণে সহসাই ঝিলিক দিয়ে যায় একটা দৃশ্য। তাদের যৌথজীবনের শুরুর দিককার ঘটনা। ক্ষেতে মই দেওয়া শেষে গাই দুটোকে রাস্তার পাশে বেঁধে দিয়ে এসে হাজেরার কাছে ভাত চেয়েছে। আজ একটু আগেই এসেছে বৈকি, কিন্তু খিদেটাও যেন পেটের মধ্যে হাঙরের মতো কামড়াতে শুরু করেছে। হাজেরা গোবরের ঘুঁটে বানাচ্ছিল। ‘আসতিছি’ বলে আর আসার নাম নেই। এরইমধ্যে আরও দুবার ভাত চাওয়া হয়ে গেছে ছলিম শেখের। হাজেরার কোনো সাড়া নেই। ছলিম ঘরের পেছনের যে দিকটায় হাজেরা কাজ করছিল, সেখানে গিয়ে চিৎকার করে উঠল।

‘ভাত চালাম না?’  

‘শুনিছি তো। দুডে-তিনডে ঘুঁটে আছে, শেষ করে আসতিছি।’

হাজেরার নির্বিকার ভঙ্গি দেখে ছলিমের মাথায় খুন চড়ে গেল- সোওয়ামির কথায় সে গুরুত্বই দিলো না! মহিলারা এভাবেই আস্তে আস্তে সোয়ামির অবাধ্য হতে শেখে। ছলিম শেখ হুংকার দিয়ে ওঠে-

‘তোর ঘুঁটে বানানি শেষ কত্তি অবে না। আমিই তোরে শেষ কত্তিছি।’

সেদিন দুপুরের আগক্ষণে ঘটনার আকস্মিকতা আর অনিবার্য উত্তেজনায় ছলিম প্রলয়পর্বের যেখানে এসে ইস্তফা দিলো, হাজেরার শুরু হলো ঠিক সেখান থেকেই।

ফাঁকা মাঠের মধ্যে লম্বালম্বি আল। সেই আলের ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে হাজেরা। অনেক পেছনে ছলিম। হাজেরা যে সত্যি সত্যি বাপের বাড়ি রওনা দেবে এ কথা সে ভাবতেই পারেনি। ছলিম ডাকছে, ‘বউ..., বউ...’।

বাতাসের উজানে তার ডাক হজেরার কানে পৌঁছানোর কথা না, তা ছলিমের জন্য সহজেই অনুমেয়। তবুও ছলিম ডেকে যাচ্ছে, ‘বউ..., বউ...’। বারবার ‘বউ’ শব্দটির পুনরাবৃত্তি শেষ পর্যন্ত ছলিমের লজ্জার উদ্রেক করে। ছলিম এবার ডাকতে শুরু করে ‘হাজেরা’। ততক্ষণে হাজেরাকে প্রায় ধরে ফেলেছে ছলিম।

সন্ধ্যায় অনেক স্নেহে ছলিমের পাতে কলমি শাকের ঝোল তুলে দেয় হাজেরা। অনুতাপের সুরে হাজেরাকে উদ্দেশ্য করে ছলিম বলে ওঠে, ‘খিদে নাগলি আমার মাতা ঠিক থায়ে না, বউ’। হাজেরা আঁচলের নীচে লজ্জাবনত মুখে হেসে ওঠে। বড় প্রাঞ্জল, ক্ষমাশীল সে হাসি।

সেদিন যেভাবেই হোক ছলিম অনেক অনুনয় করে হাজেরার মান ভাঙিয়ে ফিরিয়ে আনতে সমর্থ হয়েছিল। কিন্তু আজ মৃত্যুপথযাত্রী, চেতনাহীনা, হাজেরার পাশে বসে এই একটি কথাই শুধু ছলিম শেখ ভাবছে, কোনো অনুনয়েই হয়তো আজ হাজেরাকে ফেরানো যাবে না। সবকিছু ছাপিয়ে আরও একটা অনিশ্চয়তা তাকে ব্যগ্র করে তুলছে। হাজেরার শেষ অনুরোধটা সে রাখতে পারবে তো? তার মৃত্যুর সময় মেয়ে দুটি যেন পাশে থাকে, এই অনুরোধ ছিল তার।

গ্রামের একপ্রান্তে রাশিকৃত বাঁশ আর ঘন সন্নিবেশিত গাছগাছালির মধ্যে ছলিমের দোচালা ঘর। গ্রামের কেউ এ পথে হাঁটে না। তার ওপর একটানা বৃষ্টিতে এ দুদিনে এদিকে এমন কেউ আসেনি যাকে দিয়ে সে তার মেয়ে দুটির বাড়িতে খবর পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারে। ভোর পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই তার। ছদর মাঝি সামনের শীর্ণকায় খাল পথে প্রতিদিন খেপ নিয়ে যাত্রাপুর হাঁটে যায়। তাকে বলে দিলে আটটার মধ্যেই দুই মেয়ের বাড়িতে খবর পৌঁছে যাবে। কিন্তু ততখানি সময় ছলিম পাবে তো?

একটা ঝটকা বাতাসে হাজেরার সিথানের বাতিটি নিভে গেল। চারদিকে অথৈ অন্ধকার। ছলিমের মনের মধ্যে একটা অজানা আশঙ্কা দোল দিয়ে গেল। কাঁপাকাঁপা হাতে কিছুক্ষণ ম্যাচটি খুঁজল। বাতাসের শোঁ শোঁ আওয়াজটা আরও বেড়েছে। তবে বৃষ্টির ফোঁটা আগের মতো বড়ো নেই বলেই মনে হচ্ছে। হাজেরা অদ্ভুত ভয়ানক একটা শব্দ করছে- গর্র... গর্র...। প্রথম ঘষায় আলো জ্বলল না। ভিজে আবহাওয়ায় ম্যাচকাঠির বারুদ ‘মজে’ গেছে। কয়েকবার চেষ্টার পর বাতি ধরালো ছলিম। বাতির আলোয় হাজেরার রোগজীর্ণ মুখখানি স্পষ্ট হয়ে উঠল। আহা, সেই মুখ! প্রথম যেদিন ছলিম হাজেরার মুখ দেখেছিল সে খুব আনন্দের মুহূর্ত। কিছুটা লজ্জা, কিছুটা প্রেম আর কিছুটা কৌতূহলের দৃষ্টিতে ছলিমের চোখে হাজেরার সুবিন্যস্ত চুলের প্রচ্ছদপটে চন্দন, কুঙ্কুম, সুরমা চর্চিত মুখখানা এক কথায় ‘হুর’ বলে মনে হচ্ছিল। সে দৃশ্য এখনও ভোলেনি ছলিম। খুব বেশি ধুমধাম করে যে সে হাজেরাকে বিয়ে করেছিল, তা-ও না। অবশ্য এসব ক্ষেত্রে বাইরে ধুমধাম না থাকলেও অন্তরে সে ধুম মুখর হয়ে ওঠে। কিছুতেই তা চাপা থাকে না। হজেরা তার জীবনের প্রথম ও একমাত্র নারী যাকে সে ছুঁয়ে দেখেছিল। সম্পূর্ণ অধিকার নিয়ে চুমু খেয়েছিল। সেদিন লজ্জার রক্তিম হাসিটা পৃথিবীর সবচেয়ে দামী প্রসাধন হয়ে লেপ্টে ছিল হাজেরার মুখে। হাজেরার বয়স তখন সতেরো।

সবকিছু অক্ষরে অক্ষরে মনে পড়ে যায় ছলিমের। প্রথমে সে ঘরে ঢুকল। হাজেরা জরির ঘোমটা পরে মাথা নিচু করে বসে আছে। ছলিম হাজেরার পাশে গিয়ে বসলো। তার মধ্যে শুধু সংকোচ আর অস্বস্তি। স্ত্রী হলেও অপরিচিত, অজানা একটা মেয়ে হাজেরা। তার সাথে কথা শুরু করতে অনেক সময় লেগেছিল। বেশ রাতে তারা পাশাপাশি শুয়ে পড়েছিল। সাহস করে ছলিম তাকে পরিপূর্ণভাবে বেষ্টন করে ধরে কয়েক দিনের বিয়ে সংক্রান্ত কাজে মন ও শ্রম দেয়ার ক্লান্তিতে খুব দ্রুত ঘুমিয়ে পড়েছিল।

যখন ঘুম ভাঙল, তখন শেষরাত। ঘন বাঁশের জটলা এড়িয়ে পশ্চিম দিকের বেড়ার ফাঁক হতে ভাঙা চাঁদের আলো ঘরে ঢুকে আবছা আলোকিত করেছে। ছলিমের খেয়াল হলো এতক্ষণ সে হাজেরাকে জড়িয়ে ধরে শুয়েছিল। হাজেরা তখনও ঘুমায়নি। ছলিমের বেষ্টিত বাহুর মধ্যে ঘুমের ভান করেছিল। হাজেরার শরীর থেকে বিয়ের শাড়ি আলাদা করে ফেলল ছলিম। হাজেরা বাঁধা দিলো না। ক্ষয়িষ্ণু চাঁদের ম্লান আলোয় হাজেরার উন্মোচিত শরীরের ফর্সা ত্বক দেখে ছলিমের গা দিয়ে ঘাম ছুটে এলো। সে তখন থরথর করে কাঁপছে। মনিহারি দোকানের সস্তায় কেনা কুঙ্কুমের তীব্র ঘ্রাণ সত্ত্বেও ছলিমের নাকে হাজেরার শরীর থেকে নাম না জানা ফুলের বিস্মৃত অথচ ঘোরলাগা ঘ্রাণ আসছিল। ছলিমের লোলদৃষ্টি হাজেরার পা হতে লেহন করে করে মুখের কাছে এসে থেমে গেল। চোখ বুঁজে সারা দেহ কাঁপিয়ে ঘন আর তপ্ত নিঃশ্বাস ছড়াচ্ছিল হাজেরা আর স্পর্শ বিহ্বল ছলিমের হাত হাজেরার সারা শরীর মথিত করছিল। এক অভূতপূর্ব উত্তেজনায় ছলিম শিহরিত হয়ে উঠল।


যে অঙ্গসৌষ্ঠব, যে লাবণ্য আর যৌবনের লালিত্য জীবনের প্রথম রাতে হাজেরা তাকে উপহার দিয়েছিল, তা আজ অতীত। তার সর্বস্ব শুধু এক হাড় জিরজিরে শরীর। অতীতের সুখস্মৃতিমন্থন শেষে বর্তমানের কিনারে এসে দাঁড়াতেই ছলিমের চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। কুঞ্চিত কপোল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে একফোঁটা গরম অশ্রু।

ছলিম হাজেরার আর্তির কাছে নিজের অসহায়ত্ব নিয়ে আজ দুপুরেও একবার কেঁদেছিল। হাঁপাতে হাঁপাতে হাজেরা একটি কথাই শুধু বলছিল তখন, ‘কিছু ভালো ঠ্যায়ে না। ভালো ঠেয়ার কোনো ওষোধ আছে?’

নদীর ধারে বেশিক্ষণ দাঁড়াতে হলো না ছলিমকে। ছলাৎ ছলাৎ শব্দে কিছুটা কৌতূহলী হয়ে দেখল একটা ছিপছিপে নৌকা ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। এখন বৃষ্টি নেই, কিন্তু কালো মেঘে আকাশ গম্ভীর হয়ে আছে। ছলিম হাঁক দিলো- ‘ছদর, ও ছদর..’।

বৈঠা সঞ্চালনে বিরতি হলে প্রতু্যুত্তর এলো, ‘হ, কেডা’?

‘আমি ছলিম।’

‘ব্যান রাত্তিরি  (ভোরে) নদীর ঘাটে ক্যান, খবর কী?’

‘হাজেরার অবস্থা খারাপ! উঠে যাবে মনে অয়। মাইয়ে দুইডেরে খবরডা দিয়ো। হাজেরার ইচ্চে, শেষ দেহা দ্যাকপে।’

‘শুনে মনডা খারাপ অয়ে গেল। তুমি বাড়ি যাও। খবর পৌঁছোয়ে দেবানি।’

ছলিম ফিরে আসছে। মনে এক ধরনের দ্বিধাময় আনন্দ। মেয়ে দুটোকে সে হাজেরার মৃত্যুর আগেই খবর দিতে পেরেছে। বিকেল নাগাদ মেয়েরা বাড়িতে পৌঁছে যাবে। মায়ের রোগশয্যার পাশে তারা দু-দণ্ড অশ্রু বিসর্জন করবে, মায়ের বিশীর্ণ খসখসে শরীরে শীতল পরশ বোলাবে। হাজেরার কথা রাখতে এতটুকু ছাড়া তার আর কিছুই করার ছিল না তার।

বাড়ির কাছে আসতেই আর এক পশলা বৃষ্টি নামলো। একটু দৌড় দিয়েই তাকে ঘরে উঠতে হলো। চারদিকে ততক্ষণে আবার অন্ধকার ঘিরে আসছে। ভোরের দিকে হাজেরা গৌর কবিরাজের মালিশটা আরেকবার মেখে দিতে বলেছিল। কৌটা নিয়ে হাজেরার পাশে গিয়ে বসলো ছলিম, হাত রাখলো শরীরে। একি! হাজেরার সারা শরীর বরফের মতো শীতল!

ছলিম মন্ত্রচালিতের মতো মালিশের কৌটাটা একপাশে সরিয়ে রাখলো।

[চাণক্য বাড়ৈ : কবি, কথাসাহিত্যিক]



মন্তব্য করুন


লিট ইনসাইড

কবিতা

প্রকাশ: ০২:০৩ পিএম, ২৩ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail




মন্তব্য করুন


লিট ইনসাইড

বিশ্বের সেরা এবং আকর্ষণীয় পাচ মসজিদ

প্রকাশ: ১১:০২ এএম, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪


Thumbnail

বিশ্বের এমন পাঁচটি মসজিদ সম্পর্কে জেনে নিন:


১. মসজিদুল হারাম, মক্কা, সৌদি আরব:

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মানুষ দেখতে যায়, এমন মসজিদের তালিকায় সবার প্রথমে আছে পবিত্র নগরী মক্কার মসজিদুল হারাম। প্রতিবছর প্রায় ৮০ লাখ মানুষ এই মসজিদে যান। এটিই বিশ্বের সবচেয়ে বড় মসজিদ। একসঙ্গে ১৫ লাখ মানুষ এখানে প্রবেশ করে ঘুরে দেখতে পারেন। মুসলমানদের কাছে সবচেয়ে পবিত্র তিন স্থানের একটি এই মসজিদুল হারাম। মুসলমানদের কিবলা পবিত্র কাবাশরিফ এখানেই অবস্থিত।

তবে যে কেউ চাইলেই মসজিদুল হারামে প্রবেশ করতে পারেন না। অমুসলিমদের জন্য মক্কা নগরীতে প্রবেশ পুরোপুরি নিষিদ্ধ।


২. শেখ জায়েদ মসজিদ, আবুধাবি, সংযুক্ত আরব আমিরাত:

২০০৭ সালে স্থাপিত এই মসজিদ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মসজিদগুলোর একটি। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ঝাড়বাতি ও সবচেয়ে বড় গালিচাও আছে এই মসজিদে।

আরব আমিরাতে বসবাসকারীদের বেশির ভাগই প্রবাসী, যাঁরা মূলত শ্রমজীবী হিসেবে বিভিন্ন দেশ থেকে সেখানে যান। এই বৈচিত্র্যময়তাই মসজিদটির নকশার মূল ভিত্তি। ব্রিটিশ, ইতালীয় ও আমিরাতি স্থপতিরা মিসর, মরক্কো, তুরস্ক, পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশের মসজিদের নকশা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে শেখ জায়েদ মসজিদের নকশা এঁকেছেন।

প্রতিবছর মসজিদটি দেখতে প্রচুর দর্শনার্থী আসেন। শুধু ২০১৭ সালেই এসেছেন প্রায় ৫৮ লাখ দর্শনার্থী। নামাজের সময় ছাড়া অন্য সময় অমুসলিম দর্শনার্থীরাও মসজিদ ঘুরে দেখতে পারেন। তবে শুক্রবার অমুসলিম দর্শনার্থীদের এই মসজিদে প্রবেশ নিষেধ।


৩. আয়া সোফিয়া, ইস্তাম্বুল, তুরস্ক:

ইউরোপের সবচেয়ে আকর্ষণীয় শহরগুলোর একটি তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুল। আর ইস্তাম্বুল বা গোটা ইউরোপের অন্যতম সুন্দর মসজিদ আয়া সোফিয়া। ৩৬০ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দে স্থাপিত এ স্থাপনা শুরুতে মসজিদ ছিল না। ১৪৬৩ সালে সুলতান মেহমেদ এটিকে মসজিদ হিসেবে স্বীকৃতি দেন।

১৯৩৪ সালে এটিকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করে তৎকালীন তুরস্ক সরকার। কিন্তু ২০২০ সালে তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এটিকে আবার নামাজ আদায়ের জন্য মুসল্লিদের কাছে উন্মুক্ত করে দেন। ১৯৮৫ সালে আয়া সোফিয়াকে বিশ্ব ঐতিহ্যর স্বীকৃতি দেয় ইউনেসকো।


৪. আল–আকসা মসজিদ, পূর্ব জেরুজালেম, ইসরায়েল:

মুসলিম স্থাপত্যশৈলীর শুরুর দিককার অন্যতম নিদর্শন জেরুজালেমের আল–আকসা মসজিদ।

বলা হয়ে থাকে, খোলাফায়ে রাশিদিনের অন্যতম খলিফা হজরত উমর (রা.)–র শাসনামলে ৬৩৭ খ্রিষ্টাব্দে শুরু হয় মসজিদটির নির্মাণকাজ। তবে বর্তমানে আল-আকসা বলতে পুরো চত্বরটাকেই বোঝানো হয়। ‘হারাম আল শরিফ’ নামে পরিচিত এই চত্বরের চার দেয়ালের মধ্যে আছে কিবলি মসজিদ, কুব্বাতুস সাখরা (ডোম অব দ্য রক) ও বুরাক মসজিদ। মূল আল–আকসা বা কিবলি মসজিদ হলো ধূসর সীসার পাতে আচ্ছাদিত গম্বুজওয়ালা একটি স্থাপনা। তবে পর্যটকের কাছে আল–আকসা নামে বেশি প্রসিদ্ধ সোনালি গম্বুজের স্থাপনা কুব্বাতুস সাখরা।

জেরুজালেমের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদ ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় উঠে আসে ১৯৮১ সালে। এখানে প্রায় চার লাখ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন । তবে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেমে অবস্থিত আল-আকসা মসজিদ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েলি পুলিশ। কোনো মুসল্লিকে তারা মসজিদ প্রাঙ্গণে ঢুকতে দিচ্ছে না। পবিত্র স্থানটির দায়িত্বে থাকা ইসলামিক ওয়াক্‌ফ বিভাগ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।


৫. দ্বিতীয় হাসান মসজিদ, কাসাব্লাঙ্কা, মরক্কো:

আলজেরিয়ার জামা এল জাযের মসজিদের মিনার সবচেয়ে উঁচু, ৮৭০ ফুট। তারপরেই কাসাব্লাঙ্কার দ্বিতীয় হাসান মসজিদের মিনার, উচ্চতা ৬৮৯ ফুট। মরক্কোর বাদশাহ দ্বিতীয় হাসানের তত্ত্বাবধানে নির্মিত মসজিদটির নকশাকার ফরাসি স্থপতি মিশেল পিনসু।

আটলান্টিক মহাসাগরের একটি শৈলান্তরীপের মাথায় মসজিদটির অবস্থান। মেঝের একটা অংশ স্বচ্ছ কাচের বলে আটলান্টিকের নীল পানি দেখতে পান নামাজে যাওয়া মুসল্লিরা। দেয়ালে মার্বেলের চোখধাঁধানো কারুকাজ। ছাদ অপসারণযোগ্য বলে নামাজ পড়তে যাওয়া মুসল্লিরা রাতের আকাশও দেখতে পান।

দ্বিতীয় হাসান মসজিদের মিনার থেকে একটি লেজাররশ্মি মুসলমানদের কিবলা কাবাঘরের দিকে তাক করা। অনন্য স্থাপত্যশৈলীর জন্য জগৎ–খ্যাত এই মসজিদে একসঙ্গে ১ লাখ ৫ হাজার মুসল্লির নামাজ আদায় করার সুবিধা আছে।


মসজিদ   সেরা  


মন্তব্য করুন


লিট ইনসাইড

মুখের ঠিকানা

প্রকাশ: ১২:১৬ পিএম, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪


Thumbnail




মন্তব্য করুন


লিট ইনসাইড

স্পর্শে তুমি

প্রকাশ: ০৪:৪৫ পিএম, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪


Thumbnail




মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন