লিট ইনসাইড

স্বপ্ন বিক্রি

প্রকাশ: ১২:৩১ পিএম, ০২ জুন, ২০২৩


Thumbnail

চরিত্র

মেয়েটি

মুক্তিযোদ্ধা

নাতি

যুবক

বুড়ো

কোরাস

 

মেয়েটি : জানি কি আমাদের প্রাপ্য কতটুকু?

মুক্তিযোদ্ধা : প্রাপ্য বুঝে নিতে হয়।

নাতি : আচ্ছা এই মেয়েটি কি আমার প্রাপ্য?

বুড়ো : যে জয় করে নিবে এ তারই সম্পদ।

মেয়েটি : তাহলে জয় করে নাও। পরাজিত হতে চাই। কেউ একজন পরাজিত করবে আমাকে।

বুড়ো : আমি তোমাকে স্বপ্ন দেবো, যা তোমরা পাওনি কখনও। সাদাকালো স্বপ্ন দেখে ক্লান্ত তোমরা। এবার তাতে রঙ দেবো।

নাতি : পারবে কি দিতে তুমি?

বুড়ো : জীবনে যা চেয়েছি তার একফোঁটাও পাইনি। এবার সুদসহ চাই। একটুও কম নয়।

নাতি : সে দেখা যাবে, কে জয় করতে পারে?

বুড়ো : ওহে বোকা বয়স আসেনি, মেয়েদের ছোঁয়ার। কি করে পাবে তাকে? এখনও সময় আছে, তোমাকে দেবো আমার ভাগ থেকে কিছু।

নাতি : তার আর প্রয়োজন নেই, আহা আকাশ জ্বলে-পুড়ে যায় চারদিক তার ভেতরে কেমন করে খুঁজে নিবো?

মেয়েটি : আপাতত বিদায় নিচ্ছি। আমাকে বলে দিও কি করতে হবে।

[মেয়েটি চলে যায়]

কোরাস : হুম না, আমাদের ঘরে

নাকি তোমাদের ঘরে

আলো জ্বলে না

হুম না হুম না।

বুড়ো : চলে গেলো সে, যেন আবার ফিরে আসার পোশাক গায়ে।

নাতি : ওকে যে ফিরতে হবে, আমি ওকে ফিরিয়ে আনবো।

বুড়ো : আজ থেকে আর বন্ধুত্ব নেই। সেখানে উড়বে ছাই শত্রুতার।

নাতি : সে আপনার ইচ্ছে। আমি তাহলে বিদায় নিচ্ছি।

বুড়ো : ধন্যবাদ, যাবার সময় নিয়ে যেও স্মৃতি। ওটা এখানে অপ্রয়োজনে উড়বে।

[নাতি চলে যায়]

বুড়ো : খানিকটা ঘুমানো যেতে পারে। একটু বিশ্রাম, আবার এ বাড়িতে উড়বে পাখি, ফুল আর সুবাস। মেয়েটির গায়ে গন্ধপোকারা উড়ে। আহা, আমি মাতাল হয়ে যাই। এই পোকারাই আমার পথ। বোকা ছেলেটি কি জানে এসব? এমন সময় আবার কে কড়া নাড়ে। আসুন যে দাঁড়িয়ে আছেন দরজার ওপাশে।

[একজন লোক প্রবেশ করে]

লোক : ভালো আছেন নিশ্চয়ই। আপনার চোখে-মুখে অচেনা রেখা দেখা যায়।

বুড়ো : ঠিক চেনা হলো না। আগে দেখেছি এমনও নয়। রঙ গায়ে চড়িয়েছেন যে ভুল হয় মাঝেমধ্যে। মানুষ নাকি রঙের গোলা।

লোক : বোধহয় ভুলে গেছেন। আজ এখানেই আসার কথা ছিল আপনার কাছে। সময় বোধহয় ভুলিয়ে দিয়েছে, যাক তবে সে কথা।

বুড়ো : তবে সময়ই মনে করিয়ে দেবে, মনে করানোর কাজ তারই।

লোক : সময়ের প্রতি এত বিশ্বাস?

বুড়ো : সময়কে বিশ্বাস না করলে দীর্ঘ পথ শেষ করা যেত না।

লোক : কাজের কথা শুরু হয়নি।

বুড়ো : হয়ে যাবে কোনো একসময়। আপনি নিজেও জানবেন না তা।

লোক : ফুল এসেছে, যেমন বলেছিলেন আপনি।

বুড়ো : তবে দিয়ে এসো তাকে যার জন্য এনেছি এসব। আমার বারতা তার ঘরে দিয়ে এসো। যেন বা আমার চুম্বন এই ফুলের শরীরে।

লোক : আজ কোনজনার ভাগ্য খুলবে।

বুড়ো : ওহে বোকা, যে আমার ঘরের গন্ধ বদলে দেয়। পুড়িয়ে ফেলে পুরনো বসন্ত আসে মধুর হাওয়ায়।

লোক : তাকে একবার দেখতে হয়, মৃতের শরীরে সে প্রাণ দেয়। দিকে দিকে তার জয় শুনি।

বুড়ো : তুমিও শুনতে পেয়েছ। তার পরানের ডাক। আহা কেই বা শুনতে না পায়। এমনও করে যে ডাক দিয়ে যায়। তার ডাকে...

লোক : তার ডাকে প্রাণ নাচুক। হেসে হেসে চলে যাক নদী অথবা বাড়ির সামনের পথ।

বুড়ো : তবে দিয়ে আসো তার দরজায়, তান উঠবে সেথায়। ফুল টেনে নিক তার ঘ্রাণ ফুলের বুকে জমুক ঈর্ষার পলি। পরদিন প্রভাতে মৃত্যুর আগে, জানবে পরাজিত হয়েছে।

লোক : অক্ষম আমি, আঁধার চারদিক, আড়াল ছিঁড়ে না হায়।

বুড়ো : অন্ধের হাতে বিশ্বাসের চাবি। খোলা যায় না দরজা। খুঁজে নিতে হবে পথ, জানো কি তার চলা? কেটে ফেলো চোখ কিংবা নাক তাদের, যারা তোমার সঙ্গে নেই।

লোক : কাটবার আগে শুনতে চাই সে নাম।

বুড়ো : বুকের জমিনে সে ফসল হয়, তাকে নাই বা দিলাম তোমার কানে সে থাকুক আমার বুকের জমিনে, নবান্নের গন্ধে মাতাল আমি।

লোক : তবে তার ঘরে কেমনে যাব? পথ বলে দিন চলে যাই।

বুড়ো : কাল একজনই বেগুনি ফুল পরেছিল।

লোক : তাকে চিনি আমি। তার খোঁপায় ফুটেছিল বেগুনি ফুল। নির্ঘুম রাত, নীরবতার কান্না, মেঘের আড়ালে ডুবে যায় চাঁদ। স্বামী বিছানায় একা ঘুমায়, তার শরীরে শ্বেত আলপনা আঁকে আরেকজন। উৎসবের রঙ উজ্জ্বল হয়, ভোরের আলো থমকে যায় বিছানায় অন্য পুরুষ ঘুমিয়ে।

বুড়ো : বকবক করে বলছো তুমি কার কথা, হে অবোধ, হে বোকা।

লোক : কাল যার খোপায় বেগুনি ফুল, সে বিয়ের আসরে প্রতীজ্ঞা করেছিল।

বুড়ো : প্রতিজ্ঞা ভাঙ্গে, বিশ্বাস ভাঙ্গেÑ থাকে শুধু প্রত্যাশা। তা না হলে আত্মহত্যা করতো সে। আমাদের চারপাশ মরে যেত। কোনো এক মৃত ভোরে, রাতের সঙ্গে সঙ্গে।

লোক : একবার তাকে পরিচয় করিয়ে দিন। বাকি কাজটুকু আমার হাতেই হবে।

বুড়ো : এই আগুন লাগা ভোরে কার কথা তোমাকে বলবো হে ফুল মানুষ।  তারপরও যদি শুনতে শখ হয় তোমার। তবে বলছি, যে আমার নাতির হাত ধরে ঘুরে বেড়ায়।

লোক : মাটি ফেটে চৌচির, আগুন জ্বলে ঘরের চৌকাঠে, চারদিকে ওড়ে আঁধারের দেবতা, পুড়ে যায় বসন্তের পোড়া সকাল, মৃত পাতা, খসা ভ্রুণ, ধূসর পথে সে চলতে থাকে অনেকের সাথে। নগরবেশ্যার শরীরে ফোটে শুভ্র শিউলি। আমি কি এই মৃতের কাছেই দিয়েছি সব।

বুড়ো : যাই বলো তাকে আমার চাই।

লোক : তার হাতে আমিই দেবো ফুল।

বুড়ো : চিনতে কি পেরেছো তাকে?

লোক : তাকে চিনি আমি অনেকদিন থেকেই।

বুড়ো : তবে তো আর ভয় নেই। তোমার হাতেই তুলে দেবো আমার শখের পথ।

লোক : ভয় আছে আমার একটা। এখনও জানি না তার হাতে তুলে দিবো কোনো ফুল।

বুড়ো : ওহে, শরীর মুগ্ধ পুরুষ বলছো কি? ও তোমার ঘরে একরাতও থাকবে না।

লোক : থাকেনি, একরাতও থাকেনি সে। ভেঙেছে বিশ্বাসের দরজা-জানালা ।

বুড়ো : সরল করে বলো শুনি।

লোক : শুনতেই যদি চান, সময় দিতে হবে। সময়ের পিঠে চড়ে শোনাবো সে কথা।

বুড়ো : বলো, বলো তুমি।

লোক : পিপাসায় আর্ত আমি। তারপরও আপনার জন্য বলতে হবে।

বুড়ো : তুমি না বললে আর কেউ আমাকে বলবে না সে কারণ।

লোক : তাহলে বলছি, একদিন তার সঙ্গেই ঘুমিয়েছিলাম। আমার ঘরের সকল চাবি তার আঁচলে।

বুড়ো : এও কি বিশ্বাস করতে বলো।

লোক : তবে শুনুন, আমার কথায় খুলে দিতো বুকের বসন। কিংবা শরীরের আবরণ। তার স্তন খুলে দিতো পিপাসা মেটাতে। উরুর তিলে চুমু দিতাম।

বুড়ো : বলছো কি তুমি?

লোক : ওর বুকে মাথা না রাখলে ঘুম দূরেই থাকতো।

বুড়ো : ওহো এসব আর বলো না।

লোক : জানি আপনি শুনতে চাইবেন না। কিন্তু? একটি প্রশ্ন থেকেই যায়। সে আমার চারধারে ঘুরঘুর করে। আমি কি দিতে পারিনি কিছু?

বুড়ো : বলো বলো কীসের অভাব ছিলো তোমার?

লোক : জানি না।

বুড়ো : একটা কিছু তুমি দিতে পারোনি। তাই আমি তুলে দিবো ওর কোলে।

লোক : দিন, তাই তুলে দিন। আমাকে ক্ষমা করুন এবার।

বুড়ো : আমি বটের সমান বয়সী।

লোক : সে তো দেখতেই পাচ্ছি।

বুড়ো : আমি যোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা।

লোক : এটাও বাণিজ্য আপনার। যেমন স্ত্রী বিক্রি হয় বিত্তশালীর ঘরে।

বুড়ো : ও সেটাও জানো বুঝি।

লোক : জানি আমি অনেক কিছু।

বুড়ো : শুধু জানো না স্ত্রীবশীকরণ মন্ত্র।

লোক : সকালের আলোয় দুজনার একটি ঠোঁট।

বুড়ো : ওরে বাপরে, জানতে তাহলে সবই।

লোক : কেন জানবো না, ওর চোখে ছিলো মেনকা আর রম্ভা। আর ঠোঁটে মনসা শরীর। ঊরু সে যে ঊবর্শীর সন্দেহ নেই। স্তনে ছিলো আফ্রেদিতি। এমন রূপবতীর কাছে যে সব রাখা যায়।

বুড়ো : আমিও বলছি সব রাখতে দাও। আমি সব রেখে ধন্য হতে চাই।

লোক : তাহলে রাখুন আপনার সব।

বুড়ো : তোমাকে ডেকে এনেছি, খালি হাতে ফেরাবো না। আমার কাজটি করে দাও।

লোক : ঠিক আছে বলুন কি চান আপনি?

বুড়ো : ওর হাতে তুলে দাও ফুলের গুচ্ছ।

লোক : আজই তুলে দিতে চান।

বুড়ো : হ্যাঁ অনেক ফুল মিলে একটি প্রাণ।

লোক : তবে তাই হোক।

[লোকটি চলে যায়]

বুড়ো : যে পুরুষ মেয়েদের চেনেনি সে কি করে আনবে তাকে ডেকে। ব্যাটা বোকা পুরুষ জীবনে একবার হেরেছিলাম। সে হারও আমি তুলে রেখেছি। ওরা জানে না, স্মৃতিকে খুন করতে হয়। তা না হলে ও নিজেই খুনি হয়ে যায়। যাক আজ আমার আরামের ঘুম ডাকতে হবে না আর চোখের পাতায়।

[বৃদ্ধ বেরিয়ে যায়। নাতি আর মেয়েটি প্রবেশ করে]

[কোরাস]

হুম না

আমাদের ঘরে

নাকি তোমাদের ঘরে

আলো জ্বলে না

হুম না হুম না

সে তোমার অতি আপনজন

তার ঘরেই হোক উদ্বোধন।

নাতি : এসো ঘর আলো করে এসো, চারদিকে অন্ধকারের দৌড়। একবার এসে দাঁড়াও এখানে তারপর...।

মেয়েটি : তারপর?

নাতি : তারপর হবে উৎসব, আমাদের দুজনার আনন্দের মেলা। ওই দূর আকাশের তারাদের লোভ জাগে।

মেয়েটি : তারাদের ছুঁতে চাই, মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায়। আমার ভেতরে বৃষ্টি নামে সারা আকাশ কালো করা মেঘ, বৃষ্টির জলে স্নান করি।

নাতি : তোমার কথায় ফুল ফোটে, আরও বলো আরও বলো শুনি।

মেয়েটি : কি শুনবে?

নাতি : যা বলতে চাও।

মেয়েটি : বলার নেই আমার কিছু।

নাতি : কোনো শব্দ অথবা বাক্য?

মেয়েটি : না স্যাঁতসেতে পৃথিবী, মৃত নদী আর কিই বা বলার আছে।

লোক : ভেবে দেখো আরেকবার, হয়তো ভুলে গেছে কেউ। যা বলা খুব দরকার।

মেয়েটি : লাল আকাশের বুকে ঝুলন্ত সূর্য অথবা চাঁদ স্মৃতি থেকে মুছে যায়নি।

লোক : আর কিছু?

নাতি : কে তুমি?

লোক : প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন জমে, উত্তরের ফেরা হয় না প্রশ্নের ঘরে।

নাতি : কেমন করে কখন এলে।

লোক : স্যাঁতসেতে দেয়ালে শ্যাওলা জমেÑ শ্যাওলার আড়াল থেকেই এসেছিÑ বাক্যেরা আঁধারে ঠাসঠুস ফোটে।

মেয়েটি : শান্তি নেমেছে চারদিকে, আবার ফিরেছ।

লোক : পুরোনো ভুল মুছে দেই।

মেয়েটি : সে ক্ষমতা কি তোমার আছে?

নাতি : ভুল? কোন ভুলের কথা বলো?

লোক : তার গায়ে গন্ধ পোকার বাস, দেহের ফাঁকে জমেছে রক্তপুঁজ। সুখ মেলে না।

মেয়েটি : নিলামের পাল্লায় উঠেছি, যাচাই-বাছাই করে নিন দ্রুত।

লোক : পাবো নাকি একটি সুযোগ?

মেয়েটি : বিশ্বাস খুন হলে কি আর ফেরা যায়?

লোক : ফুল হোক বিশ্বাসের প্রতিবিম্ব। ভেবে নাও, এই পাপড়ির গায়ে হৃদপিণ্ডের রক্ত। আড়ালের তিনি পাঠিয়েছেন, ভেবে দেখো কাকে নেবে তুমি?

মেয়েটি : টগবগ করে ফোটে সে, হাওয়ায় উড়িয়ে নেয় আমার চুল। ফেনাভাঙা সমুদ্র ঢেউ, জলে মাছ উৎসব, অকস্মাৎ চমকে উঠি তপ্ত নিশ্বাসে। পেশিবহুল হাত আকড়ে ধরে শরীরের সন্ধিতে সন্ধিতে খেলে আঙুল। অন্ধ হয়ে যাই উত্তাপে।

লোক : মোহর পূজা করো না বালিকা, মোহ কেটে গেলে ডুবে যাবে নিশ্চয়ই তুমি, ডুবে যাবে গভীর অন্ধকারে।

মেয়েটি : ডুবতে চাই, ডুবতে চাই অতল জলে, সেখানে হাঙর, অক্টোপাস আর আমি।

লোক : মূর্খ মেয়ে বোঝে না নির্ভরতা, চেনে না তার বিশ্বাসের বিন্দু। ঘাস জমিনে ফলায় স্বর্ণরেণু। কেমন করে নিশ্চুপ থাকবে তুমি?

নাতি : সাবধান, সাবধান মিষ্টি মেয়ে, ওরা তোমাকে হত্যা করবে।

লোক : ধোঁয়ার কুণ্ডলী উড়ে যায়। হালকা হাওয়ায় ভাসে স্বপ্ন কল্পনার জাল। সেখানে যাই করো ভুল হবে তোমার। রইলো এখানে ফুলগুচ্ছ, বিদায় নিলাম।

মেয়েটি : ফুল তো প্রতীক আড়ালে তার নৃমুখ, চামড়ার ভাঁজে কেঁপে কেঁপে ওঠে। চোখের আলোয় শ্বেত পর্দা। বৃদ্ধের শরীর নদীরেখায় ভাসে।

নাতি : কে এই লোকটি?

মেয়েটি : একঘরে থাকতাম, আমার শরীরে ছিলো তার যথেচ্ছ অধিকার। আড়াল হলেই বদলে যেত মানুষটি। অন্য ফুলের মধু শোষণ করে।

নাতি : বলছো কি তুমি?

মেয়েটি : সংশয়ের দোলাচল।

নাতি : সংশয় আমাদের খেয়ে ফেলে।

মেয়েটি : ভয় নেই খুন করো সংশয়কে।

নাতি : খুন হয় না অবয়বহীনতা।

মেয়েটি : বলো তবে কি করবে?

নাতি : শেষ করে দিবো তাই, যা আমাকে টানে তোমার দিকে।

মেয়েটি : তবে শেষবারের মতো আমাকে নাও।

নাতি : যেখানে বিশ্বাস নেই সেখানে, জমিন চাষ হয় না। ফলে না কোনো ফসল।

মেয়েটি : পাও না কি ফলনের ঘ্রাণ, এই শরীরে আউশ ফোটে না কি?

নাতি : ফিরে যাও তোমার পুরনো ঘরে।

মেয়েটি : বিশ্বাস ভাঙার নায়ে চড়তে বলো। যদি তাই চাও তবে দিয়েছিলে কেন তুমি।

নাতি : আজ ফিরিয়ে নিলাম সব।

মেয়েটি : তবে আর কি বিদায় হয়ে যাক।

[কোরাস]

হুম না

ভাঙে ঘর হুম না

এই ঘরে সে থাকে না

হুম না হুম না

ফিরে আসে সে বৃদ্ধ

হুম না হুম না।

বুড়ো : আবারও চলে গেলে যুবক, অনেক বছর আগের মতো এ বছরও একই ঘটনা।

মেয়েটি : একই ঘটনা?

বুড়ো : অনেক বছর আগে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। সে চলেও যায়। তারপর তার স্মৃতি থাকে। এবারও আরেকজন চলে গেলো।

মেয়েটি : আরেকজন?

বুড়ো : আরেকজন নয় স্মৃতি চলে যায়।

মেয়েটি : তবে?

বুড়ো : তবে আর কি? এই স্মৃতিকে বাঁচাতে হবে নিজেদের প্রয়োজনে।

মেয়েটি : কি করে?

বুড়ো : তোমাকে গ্রহণ করে ওর ভালোবাসা বিশ্বাস সবটুকুই তুমি, তোমাকেই নিতে চাই।

মেয়েটি : ও তবে কার স্মৃতি?

বুড়ো : আমার সন্তানের, যে চলে যাবার আগে মরে যায়। আমি তার শেষ চোখ দেখি সেখানে শুধু বাবার জন্য ঘৃণা। আর মুক্তিযোদ্ধার পক্ষে আর কী থাকে?

মেয়েটি : আপনি নিজেও তো একজন...

বুড়ো : ওহে মেয়ে চুপ আর নয়, শুনতে চাই না কিছুই আর শেষ করে দাও এখানেই।

মেয়েটি : আপনি চাইলে এখানেই শেষ।

বুড়ো : হ্যাঁ আমার চাওয়া শেষ করো তুমি এসব। আমি তোমাকে বলবো না কে আমি?

মেয়েটি : নিজেকে এত ভয়।

বুড়ো : না তোমাকে ভয়।

মেয়েটি : ভয়কে জয় না করলে, আমাকে পাবে না।

বুড়ো : না তোমাকে না পেলে হারবো।

মেয়েটি : তোমায় গলায় জয়ের মালা, সে তো আমিই।

বুড়ো : তবে শোনো বলি তোমাকে। আমি জয়ী হতে পারিনি। আমার ছেলে ছিলো যোদ্ধা। এক নামকরা মুক্তিযোদ্ধা। এক রাতে জেনে যায় তার বাবার পরিচয়।

মেয়েটি : রাজাকার সে।

বুড়ো : জানো তুমি।

মেয়েটি : আর সে খুন হয় বাবার হাতেই।

[কোরাস]

ধূপ দাও চারদিকে

ধোয়া উড়ুক

ধূপ দাও ধোয়া উড়ুক

আমি সুখ চাই

পাখি চাই

আর ওকে খুন করতে চাই।

এখানেই শেষ হতে চাই

ধোয়া উড়ুক

ধূপ দাও ধোয়া উড়ুক

উড়ুক ধোঁয়া।

বুড়ো : সব জানার পরও এলে তুমি।

মেয়েটি : আসিনি তুমি জয় করে নিয়েছ।

বুড়ো : কিন্তু...

মেয়েটি : আমাকে গ্রহণ করো পুরুষ।

বুড়ো : তোমার চোখে তার চোখ, ভুল হয়নি আমার একচুলও।

মেয়েটি : ভোগ করো আমাকে আর কষ্ট নেই ভোগ করো।

বুড়ো : ফিরে যাও তুমি, চাই না তোমাকে ফিরে যাও বালিকা। আমার ঘরে সর্বনাশের আগুন জ্বলে। ফিরে যাও হে বালিকা।

মেয়েটি : ফেরার জন্য নয়, তোমার জন্য এসেছি। আমি বর্তমানের পিঠেই চড়তে চাই।

বুড়ো : আমার অতীত ফিরে আসে, তাকে ফেরাতে পারি না।

মেয়েটি : তোমার জন্য ভাঙতে পারবো না, থাকবে সে আমার পাশে। আয়তন আরও বড়ো হবে।

বুড়ো : তবে তোমার বুক কেটে রক্ত পান করাও আমাকে। আমার পিপাসার্ত ঠোঁটের আশা মিটুক।

[কোরাস]

সুখ দাও

ধোঁয়া উড়ুক

ধূপ দাও ধোয়া উড়ুক

সুখ উড়ুক।

তার বুকে মাখন কাটে ধারালো অস্ত্র

চিৎকার শেষ হলে কি আর শব্দ হয়

শবদেহ জুড়ে তখন শীতল রক্ত।

রক্ত দাও

পুণ্য হোক।

লেখক, ড. তানভীর আহমেদ সিডনী : গবেষক, নাট্যকার ও কথাসাহিত্যিক



মন্তব্য করুন


লিট ইনসাইড

ত্বরিত গতির সুকন্যা

প্রকাশ: ০১:০৮ পিএম, ০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

ত্বরিত গতির সুকন্যা 

-শাহানা পরভীন 

তুমি সিঁদুর রঙে ভিজে, কলেজের সেই র‍্যাগিং ছলে,
এক পলকে দোওয়াত কালি খুঁজে ফিরে, চটাস করে হারিয়ে দিলে।
আচ্ছা করে রাঙিয়ে দিলে ওদেরই  বালতি ভরা রং ঢেলে।
ভুলে ভালে ক্লাস খুঁজে দিনটি হলো কাবার,
চায়ের কাপে ঝড় তুলে, আনন্দে মাতিয়ে সাবার।
প্রতিক্রিয়ার কী দারুণ ত্বরিত কোড তোমার !
বিধাতা দিয়েছেন বঙ্গমাতার গর্ভে, তোমার জন্মকালে।

সেই শিশুকালে মানবতার ত্বরিত গতিতে বলেছিলে-“আব্বা ,
রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই ,
রাজবন্দীদের মুক্তি চাই।”

সেই কৈশোরে সাহসিকতার বিদ্যুৎ গতির কোডে বলেছিলে-
“আমি করবো না সই ,
যদি না বাজেট বরাদ্দ পাই ।”
ইটের ‘পরে ইটে শহীদ মিনার গেঁথে,
ঘন্টার পর ঘন্টা বন্দি থেকে,
বুকের পাঁজরে অবিরত সুর তুলে বলেছিলে,
“এই কলেজে শহীদ মিনার চাই।”

তারুণ্যে মা বাবা ভাই সব প্রিয়জনকে হারিয়ে ,
বেদনার আগুনে পুড়ে-
সমস্ত শোককে শক্তি করে,
জন্ম -জন্মভূমি, বাংলা-বাঙালির উন্নয়নের তরে-নিত্য শুভার্থী তুমি।
প্রকাশ্যে সব সত্য জ্বেলে- ভয়হীন,আত্মমর্যাদার সুইফট কোডে -অতন্দ্র প্রহরী তুমি।
পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে-
স্মার্ট সোনার বাংলাদেশ বির্নিমানে-
এই প্রৌঢ়েও-
শত সাধনা- সংগ্রাম -তারুণ্যের সুইফট কোডে,
বাংলাদেশকে নিয়ে আনখমস্তক ছুটে চলো ,
তুমি  বাঙালির পরম আপনজনা, মুজিব সুকন্যা,
বিশ্ব সংসারে তুমিই একজনা, শেখ হাসিনা।

১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩


কবিতা   শাহানা পরভীন  


মন্তব্য করুন


লিট ইনসাইড

তসলিমা নাসরিনকে করা একটি কমেন্ট

প্রকাশ: ০৪:২৫ পিএম, ৩০ অগাস্ট, ২০২৩


Thumbnail

তসলিমা নাসরিন, অনেকেই আছে আপনার পাশে, অনেকেই আপনাকে ভালোও বাসে। এই যে কত ভক্ত অনুরাগী! কাঁটাতারের বেড়াকে ফাঁকি দিয়ে বিশ্বময় ছড়ানো ফেসবুকের বিনাতারের সংযোগে আপনার পাশে দাঁড়িয়েছে। আপনার লেখার প্রশংসা করছে। এই প্রাপ্যটুকুই ক'জনের ভাগ্যে জুটে? আসলে যে জন্য আপনি আফসোস করছেন, সেটা আপনার মনে পড়া অতীত, যেখানে এক সময় বসবাস করেছে আপনার দিন, রাত, সূর্য, চাঁদ আর আকাশ দেখা। যেখানে ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে বসে নির্জনে, নিভৃতে কবিতার সাথে কথপোকথন। সেটাই আফসোস, সেটাই ফিরে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা। আসলে আপনি নিজেকে যে দোষে দোষী মনে করছেন না, সে দোষটাকেই অন্য কেউ দোষ মনে করছে, গুরুতর দোষ। এখানে দুইটি মতের ভিন্নতা, স্বাতন্ত্র। 

লেখক বা কবি মাত্রই ভিন্ন, স্বাতন্ত্র চিন্তা-চেতনার অগ্রগামী পথিক। সমাজের কুসংস্কারগুলো ভেঙ্গে-চুরে বেড়িয়ে আসার স্বপ্ন কেবল লেখক বা কবিরাই দেখেন। তারা সমাজের সত্যিকারের অসঙ্গতিগুলো অক্ষর অঙ্কনে প্রস্ফুটিত করার চেষ্টা চালান। লিখতে মন চায় না, কিন্তু সমাজের অসঙ্গতিগুলো চেতনার মস্তিস্কে যন্ত্রনা শুরু করে দেয়। লিখতে হয়। 

কবি বা লেখক মাত্রই তাই। আপনিও তার ব্যতিক্রম নন। একজন লেখক যে সমাজে বড় হয় বা বসবাস করে বা কালের বিবর্তনে সংযুক্ত, তার প্রতিটি লেখায় সেই সমাজের চিত্রটিই সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। আপনার লেখাতেও তাই হয়েছে। মানুষকে, সমাজকে, জীবনকে উপলব্ধির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। এটাই লেখকের সত্তা, ভিন্নতা। কিন্ত সে সমাজের মানুষেরা এই সত্য লেখার যে দুঃসাহসিকতা, সেটা মেনে নিতে পারেনি। কিংবা সংঘবদ্ধ কিছু মানুষ, কিছু সমাজ ব্যবস্থা এই সত্য লেখার সক্ষমতাকে মুছে দিতে চেয়েছে। যে কারণে আজ আফসোস। কিন্তু আপনি আপনার লেখনিতে যা বলেছেন, সমাজকে, মানুষকে যা জানিয়েছেন- তাই বা জানাতে পারে ক'জনা!

তসলিমা নাসরিন  


মন্তব্য করুন


লিট ইনসাইড

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

প্রকাশ: ০৮:১৭ এএম, ২৭ অগাস্ট, ২০২৩


Thumbnail

আজ রোববার (২৭ আগস্ট) জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৬ সালের শোকের মাসের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (সাবেক পিজি হাসপাতাল) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। সেখানেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত।

কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে সমধিক পরিচিত হলেও তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তিনি বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিনী সৃষ্টি করে বাংলা সঙ্গীত জগতকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন।

কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন কবির সমাধিতে পুস্পস্তবক অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, দোয়া মাহফিল এবং আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বাংলাদেশ বেতার, টেলিভিশন ও বিভিন্ন বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে।

নজরুলের সৃষ্টিকর্ম প্রসঙ্গে নজরুল বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম লিখেছেন, ‘নজরুল ইতিহাস ও সময় সচেতন মানুষ ছিলেন, যার প্রভাব তাঁর লেখায় স্পষ্টভাবে পাওয়া যায়। তুরস্কে কামাল পাশার নেতৃত্বে প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা, রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব আর ভারতবর্ষে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের তরঙ্গকে নজরুল তাঁর সাহিত্যে বিপুলভাবে ধারণ করেছেন। সেই সময়ে ধর্মান্ধ মুসলমানদের তিনি পুনর্জাগরণের ডাক দিয়েছেন এবং এক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছিল একজন বলিষ্ঠ নেতার মতো।’

প্রেম, দ্রোহ, সাম্যবাদ ও জাগরণের কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ও গান শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রামে জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছে। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস। নজরুলের কবিতা, গান ও সাহিত্য কর্ম বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ লেখক। তাঁর লেখনি জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তাঁর কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলছে।

নজরুল ছিলেন চির প্রেমের কবি। তিনি যৌবনের দূত। তিনি প্রেম নিয়েছিলেন, প্রেম চেয়েছিলেন। মূলত তিনি বিদ্রোহী, কিন্তু তার প্রেমিক রূপটিও প্রবাদপ্রতিম। তাই মানুষটি অনায়াসেই বলতে পারেন, ‘আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন খুঁজি তারে আমি আপনায়।’ 

কাজী নজরুল ইসলাম ১৩০৬ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ডাক নাম ছিল ‘দুখু মিয়া’। বাবার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মা জাহেদা খাতুন। 

স্বাধীনতার পরপরই কবিকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশে তাঁর বসবাসের ব্যবস্থা করেন এবং ধানমণ্ডিতে কবির জন্য একটি বাড়ি প্রদান করেন। 

জাতীয় কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়। সেখানেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন।

 



মন্তব্য করুন


লিট ইনসাইড

পিতা, আমরা মুক্ত আকাশ দেখছি (পর্ব-২০)


Thumbnail

চলছে শোকাবহ আগস্ট মাস। এ মাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করেছিল ষড়যন্ত্রকারীরা। আগস্ট ষড়যন্ত্রের আদ্যোপান্ত নিয়ে অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর সারা জাগানো বই ‘পিতা, আমরা মুক্ত আকাশ দেখছি’ এর ধারাবাহিক পর্বের বিংশ পর্ব পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল-

ঢাকার একটি রেস্তোরাঁ। চা খেতে বসেছে দু বন্ধু। এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে বলল যে কিছুদিনের মধ্যেই বর্তমান মহকুমাগুলোকে জেলায় পরিণত করা হবে। পুনর্গঠিত নতুন জেলায় নতুন প্রশাসক হবেন জেলা গভর্নর এবং তাঁর থাকবে নিরঙ্কুশ শাসনক্ষমতা। জেলা গভর্নরকে একমাত্র বঙ্গবন্ধু ছাড়া আর কারো কাছে জবাবদিহি করতে হবে না। নতুন জেলা গভর্নররা ক্ষমতা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে অগণিত লোককে হত্যা করা হবে এবং বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতা কেউ করলে সোজা জেলে ঢুকিয়ে দেবে। সমবায়ের নামে ঘরবাড়ি আর জায়গা-সম্পত্তি কেড়ে নেয়া হবে। বন্ধুর মুখে এই ধরনের কথাবার্তা শোনার পর অপর বন্ধুটি জানায়, সেও এসব কথা আগেই শুনেছে।

আসলে এ ধরনের অপপ্রচার হাবিবুর রহমান গং তাদের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সারা দেশেই ছড়াতে থাকে। সামান্য সত্যের সঙ্গে মিথ্যাকে মিশিয়ে অপপ্রচার চালালে তা সহজেই লোকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়। কথাটা মনে রেখেই ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের কাজে নেমেছিল। তারা ভাল করেই জানত একটা সময় পর্যন্ত সাধারণ মানুষ এ ধরনের অপপ্রচারের মুখে মিথ্যাকে সত্য থেকে আলাদা করতে পারে না। আর ক্ষমতার কাছাকাছি যারা থাকে, তারা নিজেরাই যখন ষড়যন্ত্রের অংশ হয়ে তাদের জানা কিছু কিছু সত্য ঘটনার সঙ্গে মিথ্যার রং মিশিয়ে অপপ্রচারে নামে, তখন জন্গণ অনায়াসে বিভ্রান্ত হবে। জেলা গভর্নরসংক্রান্ত প্রসঙ্গের ক্ষেত্রেও তার কোনো ব্যতিক্রম দেখা গেল না।

প্রকৃতপক্ষে বঙ্গবন্ধু সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্যে ঔপনিবেশিক আমলের মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করে গভর্নর নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। তবে এসকল গর্ভনর হবেন জনগণের নির্বাচিত এবং তারা ক্ষমতাকে প্রয়োগ করবেন এমন এক কমিটির মাধ্যমে, যে কমিটিতে সমাজের বিভিন্ন স্তরের লোকজন থাকবে। কমিটির এসকল সদস্য জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা থাকবে। কমিটির এসকল সদস্য জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা থাকার কারণে স্বাভাবিকভাবেই ইচ্ছেমতো কিছু করার সুযোগ পাবেন না। অন্যদিকে সাধারণ জনগণের দোরগোড়ায় প্রশাসনকে নিয়ে যেতে পারলে দেশের সাধারণ মানুষ সহজেই তাদের বিভিন্ন অভাব-অভিযোগের সুরাহা করতে পারবে। জবাবদিহিমূলক বিকেন্দ্রীকরণ শাসনব্যবস্থা প্রবর্তক করলে জনগণ তাদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবের একটি সুযোগ পাবে। এই নতুন পদ্ধতিতে যেহেতু নিরঙ্কুশভাবে কারো হাতে ক্ষমতা থাকবে না, কাজেই ক্ষমতার অপব্যবহারের সুযোগ না কারণে ঔপনিবেশিক আমলের মতো শাসনব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তারা জনগণের শক্তি আর মালিকসুলভ ব্যবহারের সুযোগ পাবে না। কিন্তু দুভাগ্য যে এ সরল সত্য জনগণকে বোঝানোর মতো লোকের তখন অভাব ছিল। 

পরিস্থিতি এমন হয়ে উঠেছিল যে, নিত্যপ্রয়োজনীয় ধরা জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছিল। এদিকে সহায়-সম্বলহীন মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলছিল। ধনী ও গরিবের মধ্যে বিরাট দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছিল। এমন পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু খেটে খাওয়া মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যেই সমবায়ের ধারণাকে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপে পরিণত করার চেষ্টা করলেন। এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য ছিল যারা জমি থেকে শুরু করে বিভিন্ন সম্পত্তির আরও উন্নতি ও উৎকর্ষসাধন করতে পারবে তেমনি যারা শ্রমিক তারা সম্পত্তির ভাগিদার হওয়ার ফলে নিজেদের শ্রম দিয়ে দেশে উৎপাদন বাড়িয়ে তুলবে। তাদের অধিকারও নিশ্চিত হবে। এ কারণে সমবায়পদ্ধতি পরিচালনার জন্যে এ ধরনের কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, যেখানে কারো নিজের ক্ষমতা অন্য কারোর উপর চাপিয়ে দেয়ার কোনো সুযোগই ছিল না।

বঙ্গবন্ধুর নতুন জেলা প্রশাসন ও সমবায়পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরে ষড়যন্ত্রকারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা এতদিন ধরে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে এবং অপপ্রচার চালিয়ে এমন একটি অবস্থা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়, যার ফলে তাদের ধারণা বদ্ধমূল ছিল যে, বঙ্গবন্ধুকে শেষ করবার পূর্বে জনগণ থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে। কিন্তু তারা হিসেব করে দেখল যে, একবার যদি নতুন পদ্ধতি চালু হয়ে যায় এবং জনগণ যদি বঙ্গবন্ধুর মূল উদ্দেশ্য উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়, তা হলে তাঁকে শেষ করে কিছুতেই পার পাওয়া যাবে না। নতুন পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর সারা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ষড়যন্ত্রের পক্ষে কাজ করে যাওয়া এক লক্ষ লোককেও রক্ষা করা সম্ভব হবে না। কাজেই নতুন পদ্ধতির সুফল জনগণের কাছে পৌঁছানোর আগেই যা করার করতে হবে। আসলে ষড়যন্ত্রকারীরা আতঙ্কিত হলেও তা ছিল সাময়িক। তারা কুমিল্লায় বসে নতুন অবস্থার পর্যালোচনা করতে থাকে। তারা খুঁটিনাটি বিষয় পর্যালোচনা করে দেখল যে, তাদের ঘাবড়াবার কিছু নেই। শুধু জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্যে একের পর এক গুজব সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে, যাতে বঙ্গবন্ধুকে জনগণের কাছ থেকে আলাদা করে ফেলা সম্ভব হয়। যেহেতু প্রশাসনযন্ত্র থেকে শুরু করে সর্বত্রই ষড়যন্ত্রকারীদের অবাধ গতি কাজটি করা তাদের পক্ষে তাই বেশি কঠিন হওয়ার কথা নয়।

বাস্তবেও ষড়যন্ত্রকারীদের কাজটি বেশি কঠিন হল না। অপপ্রচার বিশেষ করে একের পর এক গুজব এমনভাবে ছড়ানো হতে থাকল যে, জনগণ জেলা গভর্নর ও সমবায়পদ্ধতির আসল উদ্দেশ্যই বুঝতে সক্ষম হল না। গুজবে কান দিয়ে তারা হল বিভ্রান্ত। এ সুযোগে ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুর উপর আঘাত হানার জন্যে তাদের সময় নির্দিষ্ট করল। ষড়যন্ত্রকারীরা একটি বিষয়ে নিশ্চিত হল যে, বঙ্গবন্ধুকে শেষ করতে হলে যে করেই হোক কাজটা করতে হবে নতুন পদ্ধতি চালু হওয়ার আগেই। সময়ের বিষয়টি তাদের কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল। সকল ষড়যন্ত্রকারী নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে এবং দেশের পরিস্থিতি সঠিকভাবে আঁচ করেই বঙ্গবন্ধুকে চূড়ান্তভাবে আঘাত হানার জন্যে প্রস্তুত হয়ে গেল। যাদের দায়িত্ব ছিল যড়যন্ত্র সম্পর্কে অবগত হওয়া এবং ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিহত করা, তাদের অনেকেই ষড়যন্ত্রে শরিক হওয়ার ফলে বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর বিশ্বস্ত সহযোগীরা আঘাত সম্পর্কে কিছুই আঁচ করতে পারলেন না।



মন্তব্য করুন


লিট ইনসাইড

পিতা, আমরা মুক্ত আকাশ দেখছি (পর্ব-১৯)


Thumbnail

চলছে শোকাবহ আগস্ট মাস। এ মাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করেছিল ষড়যন্ত্রকারীরা। আগস্ট ষড়যন্ত্রের আদ্যোপান্ত নিয়ে অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর সারা জাগানো বই ‘পিতা, আমরা মুক্ত আকাশ দেখছি’ এর ধারাবাহিক পর্বের ঊনবিংশ পর্ব পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল-

ঢাকার মগবাজার এলাকার একটি বাড়িতে গুরুত্বপূর্ণ মিটিং শুরু হয়েছে। এতে অংশ নিয়েছে ৭১-এর ঘাতক আল-বদর, আল-শামসের সদস্যরা। আলোচনার মূল বিষয় হল, কিভাবে বঙ্গবন্ধু এবং তার সরকারকে খতম করা যায়। কেননা, বঙ্গবন্ধু ক্ষমতায় থাকলে এদেশকে কিছুতেই পাকিস্তানের অনুগত রাখা যাবে না। তা ছাড়া ৭১-এর পরাজয়কে আল-বদর, আল-শামসরা কিছুতেই ভুলতে পারেনি।

সভায় বক্তারা যেসকল বক্তব্য প্রদান করে চলল, তাতে স্পষ্ট হল যে, ইতিমধ্যেই তাদের সঙ্গে হাবিবুর রহমান গংদের যোগাযোগ হয়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তান তাদের এই তৎপরতাকে সমর্থন করার জন্যে যা যা প্রয়োজন, তার সবকিছুই করতে প্রস্তুত। হাবিবুর রহমানদের তরফ থেকে তাদেরকে এই আশ্বাস দেয়া হয়েছে যে, তারা বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে তাদের কাজকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে গেছে। কাজেই হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে বিষয়টি জটিল হওয়াতে তাদের সকলকে বাহ্যিকভাবে আলাদা আলাদাভাবে কাজ করে যেতে হবে যাতে করে জনগণ কিছুতেই আঁচ করতে না পারে যে ষড়যন্ত্রকারীদের এক গ্রুপের সঙ্গে আরেক গ্রুপের কোনোপ্রকার যোগাযোগ আছে। কাজের সুবিধা এবং জনগণকে সহজে বিভ্রান্ত করার জন্যেই তারা গ্রুপে গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। যেমন মগবাজারের মিটিং- ৭১-এর আল-বদর, আল-শামস হিসেবে যারা উপস্থিত হয়েছে, তাদেরকে সাংকেতিক নাম দেয়া হয়েছে মগবাজার গ্রুপ। কাজেই মগবাজার গ্রুপ বললেই বুঝে নিতে হবে, তারা কারা।।

ষড়যন্ত্রকারীদের একটি অঙ্গ হিসেবে মগবাজার গ্রুপ কাজ চালিয়ে গেলেও তাদের আসল নেতা দেশের বাইরে অবস্থান করছিল। এতে তাদের অসুবিধা নয়, বরং সুবিধাই হয়। কেননা, জনগণ থেকে শুরু করে সরকারের অধিকাংশ লোকই বুঝতে পারেনি যে, মগবাজার গ্রুপ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। বরং তাদের ধারণা ছিল যে, দেশের পরিস্থিতি ৭১-এর ঘাতকদের অনকূলে নয়। কারণেই তারা নিজেদের গা বাঁচাতে ব্যস্ত। সুতরাং ওদের তরফ থেকে কোনোরকম ক্ষতির আশঙ্কা নেই। অথচ প্রকৃত অবস্থা ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত।

যা হোক, মগবাজারের সভায় উপস্থিত সদস্যদের আশ্বস্ত করা হয় যে, তাদের নেতা বিদেশে অবস্থান করলেও নিয়মিত টাকা পাঠাচ্ছেন। দেশের অভ্যন্তরে কার কার সঙ্গে যোগাযোগ করে কাজ চালিয়ে যেতে হবে, সে নির্দেশও তিনি বিদেশ থেকে দিয়ে চলেছেন। তারই নির্দেশে মগবাজার গ্রুপ কুমিল্লা গ্রুপ হিসেবে পরিচিত হাবিবুর রহমান। চলেছে এবং নিজেদের শক্তি সম্পর্কে অনেক বেশি আশাবাদী হয়েছে। তারা মনে করে, গং-এর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে একে অপরের সহযোগী হিসেবে কাজ করে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করাটা এখন আর কোনো কঠিন কাজ নয় এবং হত্যাপরবর্তী জামেলাটা সামাল দেয়াও তেমন কঠিন কাজ হবে না।

মগবাজার গ্রুপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল যে, তাদের সদস্যরা দেশের যে-কোনো স্থানেই অবস্থান করুক না কেন, তাদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখতে হবে। জনগণের সঙ্গে যোগাযোগের অংশ হিসেবে বেশি করে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে। এর ধর্মীয় অনুষ্ঠান মগবাজার গ্রুপের সদস্যরা কৌশলে নিয়ন্ত্রণ করবে। ইয়লামের পবিত্র বাণী-প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে কৌশলে বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যেতে হবে। একই লক্ষ্যে দেশের অধিকাংশ মসজিদের সঙ্গে গ্রুপ সদস্যদের সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকতে হবে। তাদের মনে রাখতে হবে, ধর্মীয় অনুষ্ঠান মসজিদের মাধ্যমে এদেশের ধর্মভীরু জনগণের যত কাছাকাছি যাওয়া যাবে, অন্য কোনো পন্থায় ততটা কাছাকাছি যাওয়া সম্ভব নয়। ধর্মীয় অনুষ্ঠান মসজিদের মাধ্যমে লোকজনকে ধীরে ধীরে বোঝাতে হবে, বঙ্গবন্ধু সরকারের এদেশকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র করার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশ থেকে ইসলামকে শেষ করে দেয়া। জনগণকে যদি কথাটা ভালভাবে বোঝানো যায়, তা হলে তাদের মধ্যে জেহাদি মনোভাব সৃষ্টি হবে। সাধারণ মানুষকে এভাবে বিভ্রান্ত করা গেলে বঙ্গবন্ধুকে সহজেই জনগণ থেক বিচ্ছিন্ন করা যাবে। জনগণকে আরো বোঝাতে হবে, ভারত থেকে অনেক হিন্দুকে আমদানি করা হয়েছে, যাদের কাজই হচ্ছে দেশ থেকে ইসলামকে উচ্ছেদ করে দেয়া। এসকল হিন্দু বিভিন্নভাবে মুসলমানদের বেশ ধারণ করে তাদের কাজ গোপনে গোপনে চালিয়ে যাচ্ছে। তারা মুসলমান পরিচয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করেছে। কাজেই সাচ্চা মুসলমান হিসেবে এদেরকে রুখতে হবে। এটা সকলের জন্যে ফরজ হয়ে গেছে।

তখন ৭১ সালে ট্রেনিংপ্রাপ্ত আল-বদর, আল-শামসের সদস্যরাই সারাদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। এমনকি বিভিন্ন উপায়ে ক্ষমতাসীন দল প্রশাসনে ঢুকতে সক্ষম হয় তাদের অনেকেই। ছাড়া নিজেদের অস্তিত্বরক্ষার স্বার্থেই নতুন রাজনৈতিক দল জাসদে ভিড়ে যাওয়া সদস্যরা তো ছিলোই। মগবাজার গ্রুপ এসকল খুনীদেরকেই আবার সংগঠিত করতে থাকে। কারণ তারা জানত, সুসংগঠিত আল-বদর, রাজকাররা আবার মনোবল ফিরে পাবে এবং ৭১-এর পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগও হাতছাড়া করবে না। কথায় আছে, যে বাঘ একবার মানুষের মাংসের স্বাদ পেয়েছে, সে সুযোগ পেলেই মানুষ হত্যা করবে। ৭১- যারা একবার নিরীহ জনগণকে হত্যা করে হত্যার স্বাদ পেয়েছে, মা-বোনদের ধর্ষণ করে ধর্ষণের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেসেইসকল সাচ্চা কর্মীদের দিয়ে দুনিয়ার এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা করানো যাবে না।

মগবাজারের সভা শেষ হল। যে যার বাড়ির দিকে বেশ সন্তুষ্ট চিত্তেই পা বাড়াল। এতদিন পর কাজের মতো কাজ পেয়ে তারা যেন নিজেদের ধন্য মনে করল। এভাবেই বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্র এগিয়ে চলল।



মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন