প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০২ অগাস্ট, ২০২৩
শুরু হলো শোকাবহ
আগস্ট মাস। এ মাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করেছিল
ষড়যন্ত্রকারীরা। আগস্ট ষড়যন্ত্রের আদ্যোপান্ত নিয়ে অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর
সারা জাগানো বই ‘পিতা, আমরা মুক্ত আকাশ দেখছি’ এর ধারাবাহিক পর্বের দ্বিতীয় পর্ব পাঠকদের
জন্য তুলে ধরা হল।
ঢাকা
থেকে কুমিল্লা শহর খুব বেশি
দূরে নয়। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের
কারণে ১৯৭২ সালে রাস্তাঘাটের
অবস্থা তো এখনকার মতো
এমন সুবিধাজনক ছিল না। পরাজয়
এই করতে পেরে পাকিস্তানি
হানাদার বাহিনী রাস্তার অনেক ব্রিজ-কালভার্ট
উি দিয়েছিল। কাজেই তখন ঢাকা থেকে
কুমিল্লার দূরত্ব অনেক মনে হত।
কুমিল্লা
শহরকে তখন মনে হত
যেন একটি বড় আকারের
গ্রাম। সূর্য ডোবার সাথে সাথেই ঝিমিয়ে
পড়ত। কিন্তু শহরের প্রায় কেন্দ্রস্থলে রহিম সাহেবের বাড়িটি
বেশ বার খ পর্যন্ত
সজীব থাকত। বাড়িটি বিরাট—আগেকার হিন্দু জমিদারদের বাড়ি। সাতচল্লিশের দেশবিভাগের পর রহিম সাহেবের
বাবা কলকাতায় তার বাড়িটির সাথে
এই বাড়িটি বদ অ করে
নেন। বাড়ির কামরাগুলো বেশ বড় বড়।
আসবাবপত্রও বড় সাইেজের। এই
বালি একটি কামরায় রোজ
রাত ১টা-১০টার দিকে
তাস বা ব্রিজের আসর
বসে। এই আসরে খেলতে
আসেন নিয়মিত ছয়-সাতজন। কিছু
সময় পরপর পার্টনার বদল
করে বিছ খেলা চলে।
পয়েন্ট হিসেব করে যে যার
টাকাপয়সা বুঝে নেন। তবে
এটি সচরাচর জুয়ার আসর বলতে যা
বোঝায়, তা নয়। যারা
এখানে তাস খেলতে আসেন
কে তাদের আসল উদ্দেশ্য এই
তাস খেলায় মাধ্যমে অর্থ উপার্জন নয়,
বরং একত্রে বা শলা-পরামর্শ
করার জন্যে তাদের এই ব্রিজ খেলা
একটি বাহানামাত্র।
পাকিস্তানের
শাসকবর্গ তাদের রাজধানী ইসলামাবাদে ৭১ সালের মার্চ
মাসে তাদের রা এক গুরুত্বপূর্ণ
বৈঠকে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ
করে। এই সিদ্ধান্তটি ছিল,
যেভাবেই হোক স বাঙালিদের
স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে চিরকালের জন্যে খতম করে দিতে
হবে। কিন্তু বি ৭১-এর
১৬ ডিসেম্বরে বাঙালিদের বিজয় ইসলামাবাদের শাসকচক্রের ঐ সিদ্ধান্ত হে
ব্যর্থ করে দেয়। কিন্তু
তাদের ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। কেননা,
ষড়যন্ত্রকারীরা মনে করে পা
তাদের এই ব্যর্থতা সাময়িক।
এটা অনুধাবন করেই তারা ডিসেম্বরের
চূড়ান্ত পরাজয়ে এ আগেই তাদের
এজেন্টদের মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে ভিড়িয়ে দিতে
সক্ষম হয়। এই সকল
শা এজেন্টের কয়েকজনই রহিম সাহেবের বাড়িতে
নিয়মিত আসে। তাস খেলার
অছিলায় স্বা তারা তাদের
পরবর্তী কর্মপন্থা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে।
মাঝেমধ্যে ঢাকাসহ এ বাংলাদেশের বিভিন্ন
স্থান থেকে কিছু এজেনট
এসে এই তাসের আসরে
যোগ দেয়। প্রাণপতে প্রত্যেক দিনই ব্রিজ খেলা
শেষ হতে রাত একটা-দেড়টা বেজে যায়। ঢাকা
থেকে আসতে হাবিবুর রহমান
হলেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তিনি তাদের কাজের
অগ্রগতি দেখেন। যথেষ্ট সন্তুষ্ট হন। যুদ্ধ বিধ্বস্ত
দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি
যতটা খারাপ করার চাি করা
চালিয়ে যাচ্ছে, ততটা সফল না
হলেও পরিস্থিতি তাদের জন্যে হতাশাব্যাঞ্জক না তাদের সফলতার
উল্লেখযোগ্য দিক হল – অনেক
মুক্তিযোদ্ধাই এখন হতাশাগ্রস্ত পড়ছে।
সাধারণ লোকজনও স্বাধীনতালাভের পরপরই তাদের দৈনন্দিন জীবনের নান কষ্টের কারণে
ভারতে শুরু করেছে যে,
যারা দেশ চালাচ্ছে, তারা
যোগ্য নয়। বিশেষ করে
কতিপয় লোক ভাবছে বঙ্গবন্ধু
একজন সুদক্ষ শাসকের পরিচয় দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন।
তবে হাবিবুর রহমান জানেন, বঙ্গবন্ধু যে দেশশাসনে ব্যর্থ—এটা খুব সূক্ষ্মভাবে
সমগ্র দেশবাসীকে বোঝানোর জন্যে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।
তাদের উদ্দেশ্য জনগণের মধ্যে এই ধারণা তৈরি
করা যে, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের
সব অসুবিধার জন্য ৭১-এর
এত বড় যুদ্ধ দায়ী
নয়, দায়ী হল বঙ্গবন্ধুর দুর্বল
সরকার।
শুধু
বঙ্গবন্ধু সরকার সম্পর্কে জনগণের মাঝে বিরূপ ধারণা
সৃষ্টি করাই নয়, সাথে
সাথে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ
সবচেয়ে নিকটতম বন্ধু ভারত সরকার থেকে
শুরু করে সেখানকার জনগণের
বিরুদ্ধেও বিদ্বেষমূলক মনোভাব গড়ে তোলার কাজ
প্ল্যানমাফিকই চলতে থাকে। এই
ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই ভারত
থেকে কাপড় লুঙ্গির মতো সাধারণ বস্তু
সবচো নিম্নমানের আনা হল। ষড়যন্ত্রকারীরা
খুবই সুসংগঠিত ও শক্তিশালী। তাদের
সামনে বঙ্গবন্ধু সরকারের অনেক দেশপ্রেমিক কর্মকর্তাও
অসহায় বোধ করতে থাকেন।
প্রশাসন থেকে শুরু করে
সামাজিক সংগঠন পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রেই কোনো-না-কোনোভাবে
ষড়যন্ত্রকারীদের নিজস্ব লোক থাকল। এমন
কোনো প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়, যেখানে ষড়যন্ত্রকারীদের
অবাধ গতি নেই, অথবা
খবরাখবর পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এদিকে
স্বাধীনতালাভের পর নতুন একটি
রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করল।
তারা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের কথা বলে, মুক্তিযোদ্ধাদের
সঠিক মূল্যায়নের কথা বলে, সাধারণ
মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার
কথা বলে, তরুণ থেকে
শুরু করে অনেক বুদ্ধিজীবীকেও
বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরুদ্ধে সংগঠিত করতে সমর্থ হল।
এই নতুন দলে সংশ্লিষ্ট
রাজনীতিবিদদের অনেকেই বঙ্গবন্ধুর বহুদিনের পরীক্ষিত সহকর্মী। কাজেই জনগণ এর সহজেই
বিভ্রান্ত হতে থাকল। আসল
ষড়যন্ত্রকারীরা এই ধরনের রাজনীতিবিদদের
মধ্যে এর কিছু কিছু
লোকের সাথে 'শত্রুর শত্রু-মিত্র' এই তত্ত্ব অনুযায়ী
একে অপরের সম্পূরক কে হয়ে দাঁড়াল।
তাদের কাজ হল বঙ্গবন্ধু
সরকারকে নাজেহাল করা। দেশের সমগ্র
পরিস্থিতি যখনই কিছুটা স্থিতিশীল
হতে শুরু করে, তখনই
দেখা যায় যে ষড়যন্ত্রকারীরা
যে এমন কোনো নতুন
কাজ করতে সক্ষম হয়েছে,
যার ফলে সরকারের ভাবমূর্তি
জনগণের এর সামনে আবার
ম্লান হয়ে পড়ে। বাস্তব
অবস্থা নতুন দেশের সরকার
কখনও ২৪ ঘণ্টা লন
স্বস্তিতে কাটাতে সক্ষম হল না। একের
পর এক ষড়যন্ত্রকে তার
মোকাবেলা করতে হল। এর
ফলে সরকারের পক্ষে সঠিকভাবে অনুধাবন করা পর্যন্ত কঠিন
হয়ে দাঁড়াল যে, ষড়যন্ত্রকারীরা বিভিন্ন
ধ্বংসাত্মক কাজ তাদের পরিকল্পনা
মাফিক করে চলেছে এবং
এই ষড়যন্ত্রকারীদের লক্ষ্য হল দেশের স্বাধীনতাকে
খতম করে দেয়া। এমনকি
যে-সকল পরে মাধ্যমে
সরকারের পক্ষে ষড়যন্ত্রের আলামতকে শনাক্ত করা সম্ভব, সেসব
মাধ্যমেও দেশের শত্রুরা তাদের এজেন্ট বসিয়ে কাজের পরিধি বিস্তৃত করতে সক্ষম হয়।
রহিম সাহেবের বাড়িতে ভাসের আসরে যারা জমিয়ে রিলাক্স করত, তারাই আবার রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানেও হাজির হয়ে নিজেদের কাজের অগ্রগতি মান মূল্যায়ন করার সুযোগ পেত। সেইসাথে সুযোগ হত ষড়যন্ত্রের স্বার্থে নতুন নতুন যোগাযোগ স্থাপন করার। বাস্তবে বলা চলে ৭২ সাল থেকে বাংলাদেশে দুটি সরকার সমান্তরালভাবে কাজ করে চলল। অর্থাৎ আরেকটি হচ্ছে ষড়যন্ত্রকারীদের সুসংগঠিত সরকার। বিভিন্ন ক্ষমতার বিচারে ষড়যন্ত্রকারীরা বেশি সুসংগঠিত এবং শক্তিশালী ছিল। তাদের পেছনে সমর্থন ছিল আন্তর্জাতিক পর্যায়ের শক্তির। এ কারণেই দেখা গেল যে সাধারণ জনগণ ও সরকারকে বিভ্রান্ত করার জন্যে যড়যন্ত্রকারীদের সুযোগের কোনে অভাব হল না। সমগ্র পরিস্থিতি সঠিকভাবে মূল্যায়ন করে তারা বুঝতে সক্ষম হল যে, তাদের কাজ সঠিক পথেই অগ্রসর হচ্ছে। যতই দিন যেতে লাগল, ষড়যন্ত্রকারীদের সামনে ততই পরিষ্কার হতে থাকল যে বিজয় তাদের অবশ্যাস্তাবী। বিজয় কখন আসবে, সেটি শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার।
মন্তব্য করুন
বেহুলাপালা, কুমুর, পালাটিয়া ও থিয়েটার ওপেন টু বায়োস্কপের মঞ্চ মাতানো অভিনেতা নটবর পরেশচন্দ্র রায়ের স্মরণে ২০০২ সাল থেকে দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার গোলাপগঞ্জ-কৈকুড়ি শিবমন্দির ও প্রাইমারি স্কুল প্রাঙ্গণে 'পরেশ-ময়েন মেলার' আয়োজন করা হয়ে আসছে। এরই অংশ হিসেবে প্রতিবছর 'পরেশ-ময়েন স্মৃতি সম্মাননা' প্রদান করা হয়।
সেই ধারাবাহিকতায় এবছর বাংলা কবিতায় বিশেষ অবদানের জন্য 'পরেশ-ময়েন স্মৃতি সম্মাননা–২০২৩' পেয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও কবি তারেক রেজা। গত ২৯ নভেম্বর তাকে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়।
আয়োজক সূত্রে জানায়, 'বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য প্রতিবছর দুই জন কীর্তিমানকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। বাংলা কাব্যযাত্রায় উত্তরাধুনিক চিন্তার সনেটের ফর্মের ভেতর চলমান জীবন ও সংস্কৃতির মনস্তাত্ত্বিক প্রেষণা প্রণয়নের মাধ্যমে বিশেষ অবদান রাখায় এবার অধ্যাপক তারেক রেজাকে এই সম্মানমা প্রদান করা হয়।'
এছাড়া একই দিন কথাসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য দিনাজপুরের ঔপন্যাসিক লায়লা চৌধুরীকেও সম্মাননা প্রদান করা হয়।
পুরস্কার পাওয়ার অনুভূতি জানতে চাইলে তারেক রেজা বলেন, "যে কোনো পুরস্কার বা সম্মাননা একজন সৃজনশীল মানুষকে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে অনেক বেশি সজাগ ও সতর্ক করে তোলে। মানুষকে ভালোবাসার যে মন্ত্র আমাকে কবিতা লিখতে অনুপ্রাণিত করে, এই পুরস্কার ও সম্মান তাতে নতুন মাত্রা দেবে। কবিতার মাধ্যমে আমি মূলত আমার ভালোবাসার কথা বলতে চাই। এই সম্মাননার মাধ্যমে আসলে আমার ভালোবাসার স্বীকৃতি দেয়া হলো।"
অধ্যাপক তারেক রেজা ১৯৭৮ সালে মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের গঙ্গারাম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইব্রাহিমপুর ঈশ্বরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, নটরডেম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। কর্মজীবনে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে শিক্ষকতা করছেন।
তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ 'পিপাসার অপর চোখ', 'পুথির একাল', 'জল-অন্তঃপ্রাণ', 'চতুর্দোলা', 'ছিন্নপদ্য', 'দেয়াল ভেঙে দেখি', 'এগান যেখানে সত্য', 'প্রবচন নির্বাসনে'।
তার উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধের মধ্যে আরো রয়েছে কবিতা : কালের কণ্ঠস্বর, সুভাষ মুখোপাধ্যায় : কবিমানস ও শিল্পরীতি, রবীন্দ্রনাথ ও কজন আধুনিক কবি, রবীন্দ্রনাথ বুদ্ধদেব এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ কবিতার মন-মর্জি, আবুল হোসেন : কবি ও কবিতা। এছাড়া সম্পাদনা করেছেন শ্রেষ্ঠ কবিতা : সমর সেন, সুকান্তসমগ্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্রেষ্ঠ গল্প।
বাংলা কবিতা তারেক রেজা পরেশ-ময়েন সম্মাননা
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৮:৩৬ এএম, ০১ ডিসেম্বর, ২০২৩
জীবন
সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
গতকাল অনেক সুন্দরী তাদের চুল ডান দিকে সামনে দিয়ে,
কপালে লাল নীল টিপ দিয়ে রসের অনেক কথা বলেছিলো আমাকে।
আমার হৃদয় হয়েছিল উৎফুল্ল,
কেউবা আমাকে নিয়ে বিদেশে যেতে চাইলো, কেউ চাইলো সময় কাটাতে।
আমি সব কিছুতেই রাজী
আনন্দেই কাটল, দিনটি,
রূপসীদের সান্নিধ্যে।
৮১ বছর বয়সেও দেখি আমি নারীদের হৃদয় ছুঁয়ে যেতে পারি।
রাতে ঘুমাতে গেলাম সুন্দর স্বপ্নের খোঁজে
সকাল বেলায় দেখি আমাকে সাদা কাপড় পড়িয়ে রাখা হয়েছে,
একটি খাটের উপরে।
আমার সহধর্মিনী মাথায় কাপড় দিয়ে নিস্তর পাথর হয়ে আছে।
ছেলে মেয়ে নাতিরা কাঁদছে জোরে জোরে।
কই, গতকালের রূপসীরা তো কোথাও নাই।
তাহলে আমার নতুন জগতে যাত্রায় কাউকেই প্রয়োজন নেই আমার কাছে?
এভাবেই কি পার্থিব জীবন শেষ হয়?
একাকীত্বের ঘোর অন্ধকারে।
মন্তব্য করুন
নারীমুক্তি আন্দোলনের পুরাধা ব্যক্তিত্ব গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল আন্দোলনের অগ্রদূত ‘জননী সাহসিকা’ কবি বেগম সুফিয়া কামাল। তিনি ছিলেন, সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে এক অকুতোভয় যোদ্ধা। তিনি নারীসমাজকে অজ্ঞানতা ও কুসংস্কারের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করতে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। মহান ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার, মুক্তিযুদ্ধসহ গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, বিভিন্ন সংগঠন প্রতিষ্ঠাসহ প্রতিটি আন্দোলনে তিনি আমৃত্যু সক্রিয় ছিলেন। সমাজ সংস্কার এবং নারীমুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর লেখনী আজও পাঠককে আলোড়িত ও অনুপ্রাণিত করে।
সেই মহিয়সী নারী ‘জননী সাহসিকা’ বেগম সুফিয়া কামালের আজ ২৪তম মৃত্যু বার্ষিকী।
আমাদের এই প্রিয় কবির মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালির সমস্ত প্রগতিশীল আন্দোলনে ভূমিকা পালনকারী সুফিয়া কামাল ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর শনিবার সকালে বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেন। সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার ইচ্ছানুযায়ী তাকে আজিমপুর কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে উল্লেখ করেন, তাঁর জন্ম ১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালে। তখন বাঙালি মুসলমান নারীদের লেখাপড়ার সুযোগ একেবারে সীমিত থাকলেও তিনি নিজ চেষ্টায় লেখাপড়া শেখেন এবং ছোটবেলা থেকেই কবিতাচর্চা শুরু করেন। সুললিত ভাষায় ও ব্যঞ্জনাময় ছন্দে তাঁর কবিতায় ফুটে উঠত সাধারণ মানুষের সুখ-দু:খ ও সমাজের সার্বিক চিত্র। তিনি বলেন, কবি সুফিয়া কামাল নারী সমাজের শিক্ষা ও অধিকার আদায়ের আন্দোলন শুরু করেছিলেন এবং গড়ে তোলেন ‘বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ’।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা হোস্টেলকে ‘রোকেয়া হল’ নামকরণের দাবী জানান তিনি। ১৯৬১ সালে পাকিস্তান সরকার রবীন্দ্র সংগীত নিষিদ্ধ করলে এর প্রতিবাদে গঠিত আন্দোলনে কবি যোগ দেন। বেগম সুফিয়া কামাল শিশু সংগঠন ‘কচি-কাঁচার মেলা’ প্রতিষ্ঠা করেন। আওয়ামী লীগ সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর নামে ছাত্রী হল নির্মাণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কবি বেগম সুফিয়া কামাল যে আদর্শ ও দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন তা যুগে যুগে বাঙালি নারীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
তিনি বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পঁচাত্তরের পনেরই আগস্টে নির্মমভাবে হত্যা করে যখন এদেশের ইতিহাস বিকৃতির পালা শুরু হয়, তখনও তাঁর সোচ্চার ভূমিকা বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের গণতান্ত্রিক শক্তিকে নতুন প্রেরণা যুগিয়েছিল।
সুফিয়া কামাল ১৯১১ সালের ২০ জুন বেলা ৩টায় বরিশালের শায়েস্তাবাদস্থ রাহাত মঞ্জিলে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর সুফিয়া কামাল পরিবারসহ কলকাতা থেকে ঢাকায় চলে আসেন। ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং এই আন্দোলনে নারীদের উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি ১৯৫৬ সালে শিশু সংগঠন কচিকাঁচার মেলা প্রতিষ্ঠা করেন।
পাকিস্তান সরকার ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র সঙ্গীত নিষিদ্ধের প্রতিবাদে সংগঠিত আন্দোলনে তিনি জড়িত ছিলেন এবং তিনি ছায়ানটের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৬৯ সালে মহিলা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন এবং গণঅভ্যূত্থানে অংশ নেন।
১৯৭০ সালে তিনি মহিলা পরিষদ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭১ সালের মার্চে অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের মিছিলে নেতৃত্ব দেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা দেন। স্বাধীন বাংলাদেশে নারী জাগরণ ও নারীদের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামেও তিনি উজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণসহ কার্ফু উপেক্ষা করে নীরব শোভাযাত্রা বের করেন।
সাঁঝের মায়া, মন ও জীবন, শান্তি ও প্রার্থনা, উদাত্ত পৃথিবী ইত্যাদি তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। এ ছাড়া সোভিয়েতের দিনগুলি এবং একাত্তরের ডায়েরী তার অন্যতম ভ্রমণ ও স্মৃতিগ্রন্থ।
সুফিয়া কামাল দেশ-বিদেশের ৫০টিরও বেশী পুরস্কার লাভ করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাংলা একাডেমী পুরস্কার, সোভিয়েত লেনিন পদক, একুশে পদক, বেগম রোকেয়া পদক, জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার ও স্বাধীনতা দিবস পদক।
সুফিয়া কামালের পাঁচ সন্তান। তারা হলেন,আমেনা আক্তার, সুলতানা কামাল, সাঈদা কামাল, শাহেদ কামাল ও সাজেদ কামাল।
মন্তব্য করুন
বিশ্ববিখ্যাত চিত্রশিল্পী উইলিয়াম রোটেনস্টাইন ১৯১০ সালে কলকাতায় আসেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা ছবি দেখতে তিনি উপস্থিত হন জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে। সেখানেই তার সঙ্গে দেখা হয় কবিগুরুর। উইলিয়াম রোটেনস্টাইন কবির একটি ছবি আঁকেন। সেই সময় থেকেই এই দুই মহান ব্যক্তিত্বের মধ্যে বন্ধুত্ব তৈরি হয়।
১৯১২ সালে ‘মডার্ন রিভিউ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় স্বামী বিবেকানন্দের শিষ্যা সিস্টার নিবেদিতার ইংরেজিতে অনুবাদ করা ‘কাবুলিওয়ালা’ গল্প। উইলিয়াম রোটেনস্টাইন সেই লেখা পড়ে অবাক হয়ে যান। এর আগে পর্যন্ত তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোন সাহিত্য কর্ম সম্পর্কে পরিচিত ছিলেন না।
এরপর উইলিয়াম রোটেনস্টাইনের অনুরোধে বিখ্যাত শিক্ষক অজিত চক্রবর্তী মহাশয় কবির কিছু লেখা ইংরেজিতে অনুবাদ করে তার কাছে পাঠান। আরো অবাক হন উইলিয়াম রোটেনস্টাইন। তাকে কবিগুরু সাহিত্য চর্চা সম্পর্কে লন্ডনে বিশদে জানান প্রমথলাল সেন ও ব্রজেন্দ্রনাথ শীল।
এরপরই উইলিয়াম রোটেনস্টাইনের আমন্ত্রণে লন্ডন পাড়ি দেন কবি। জাহাজে তিনি গীতাঞ্জলি-এর কিছু কবিতা অনুবাদ করেন। সঙ্গে অনুবাদ করেন শিলাইদহে বসে তার লেখা আরও কিছু কবিতা। সেই কবিতা পড়ে অভিভূত হন উইলিয়াম রোটেনস্টাইন। তিনি কবির খাতাটি পাঠান আইরিশ কবি উইলিয়াম বাটলার ইয়েটসসহ একাধিক সাহিত্য সমালোচককে। তিনি জর্জ বার্নডশ’কে চিঠি লিখে কবিগুরুর কবিতা পড়ার অনুরোধ জানান। লন্ডনে এক সাহিত্য সভায় মিলিত হন কবি উইলিয়াম বাটলার ইয়েটসসহ বেশ কিছু কবি সাহিত্যিক ও লেখক। কবিগুরুর অনুবাদ করা কবিতাগুলি শুনে তারা একের পর এক ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাঠাতে থাকেন। এক দিনেই লন্ডনের সাহিত্য মহলে ছড়িয়ে পরে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের নাম।
নোবেল কমিটির নিয়ম অনুসারে নোবেল পুরস্কারের জন্য নাম সুপারিশ করতে পারেন বিভিন্ন দেশের স্বীকৃত সংস্থার সভ্যরা অথবা কোন নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত ব্যক্তি। কবিগুরুর কবিতা পড়ে মুগ্ধ হওয়া স্টার্জমুর মহাশয় ছিলেন রয়েল সোয়াইটি অব লিটারেচার অব ইউ কে-এর সদস্য। তিনি নোবেল পুরস্কারের জন্য কবিগুরুর নাম সুপারিশ করেন। কিন্তু এ কথা কবিগুরুও জানতেন না। সম্পূর্ণ গোপনে কবির নাম সুপারিশ করেন স্টার্জমুর।
বিভিন্ন দেশ থেকে আরও ২৮ জনের নামে সেই বছর সুপারিশ এসেছিল। সুইডিশ একাডেমির সদস্য হলেও স্টার্জমুর-এর হাতে ছিল একমাত্র গীতাঞ্জলি-এর অনুবাদ করা বইটি। তৎকালীন নোবেল কমিটির সভাপতি হোয়ানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামের বিরোধিত করে বলেন, একটি মাত্র বই দেখে বিচার করা সম্ভব নয়।
নোবেল কমিটিতে ছিলেন প্রাচ্যবিদ এসাইস টেঙ্গার। তিনি বাঙলা ভাষা জানতেন। তিনি কমিটির সদস্যদের প্রভাবিত করেন। সুইডিশ কবি হাইডেস্টাম গীতাঞ্জলি-এর সুইডিশ অনুবাদ পড়ে মুগ্ধ হন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে নোবেল কমিটিকে চিঠি লেখেন। অবশেষে ১৯১৩ সালে নোবেল কমিটির বিচারে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম ঘোষিত হয়।
নোবেল প্রাপ্তির খবর কলকাতায় প্রথম ছাপে ইংরেজি সান্ধ্য দৈনিক পত্রিকা ‘এম্পায়ার’। ১৩ তারিখ নোবেল-পুরস্কার কমিটি কবির নাম ঘোষণা করার পর, স্টকহোমের রয়টার প্রতিনিধি খবরটি প্রথম ‘ব্রেক’ করেন। নিউইর্য়ক ইভনিং পোস্টে সে খবর প্রকাশিত হয়। রয়টারের খবর আসে পরের দিন, ১৪ নভেম্বর সকাল ৯টায়। ততক্ষণে সেদিনের কাগজ ছাপা হয়ে বেশিরভাগ বিক্রিও হয়ে গিয়েছে! সে দিনের ‘এম্পায়ার’ দেখেই শোরগোল পড়ে সন্ধেরাতের শহরে।
রবীন্দ্রনাথের নোবেল প্রাপ্তির পর সমকালীন অনেক লেখক তাকে শুভেচ্ছাবার্তা জানাতে থাকেন। সেই সময় নোবেলের মত এমন সম্মানসূচক পুরস্কার প্রাপ্তির কারণে পুরো ভারতবর্ষের বাঙালি লেখকেরা আবেগের জোয়ারে ভাসতে শুরু করেন।
শোরগোলের কথা জানিয়েছেন রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ে সীতা দেবী। ‘পুণ্যস্মৃতি’-র পাতায় তিনি লিখছেন, ‘‘কলেজ হইতে ফিরিবামাত্র শুনিলাম যে রবীন্দ্রনাথ Nobel Prize পাইয়াছেন। কলিকাতা শহরে মহা হৈ চৈ বাধিয়া গেল। শুনিলাম কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত সর্বপ্রথম কবিকে এই খবর টেলিগ্রামে জানাইতে গিয়াছিলেন, কিন্তু তিনি নিজে টেলিগ্রাম লিখিতে জানিতেন না, অন্য কাহাকেও দিয়া লিখাইতে গিয়া দেরি হইয়া গেল, তাঁহার আগেই আর-একজন টেলিগ্রাম পাঠাইয়া দিলেন।’’
সে সময় প্রমথনাথ বিশী শান্তিনিকেতনের ছাত্র। ‘রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতন’-এ তিনি লিখছেন, ‘‘শীতের প্রারম্ভে নূতন-ওঠা বেগুনভাজা পরিবেশিত হইয়াছে... সহসা অজিতকুমার চক্রবর্তী রান্নাঘরে ঢুকিয়া চীৎকার করিয়া বলিলেন, ‘গুরুদেব নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন।’’
আমেরিকানদের পত্রপত্রিকায় তাকে বলা হয়েছে হিন্দু কবি, যদিও কোথাও কোথাও ছাড় দেওয়া হয়েছে এই বলে যে, যাই হোক ওই কবি একজন আর্য বটেন, সেই বিবেচনায় সাদা আমেরিকানদের সঙ্গে একেবারেই যে সম্পর্কহীন তা নয়। পরে অবশ্য তার বক্তৃতা শুনে ও রচনা পাঠ করে তাঁরা না মেনে পারেন নি যে, রবীন্দ্রনাথ মোটেই অবজ্ঞেয় নন।
নোবেল জয় ইতিহাস রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
মন্তব্য করুন
পৃথিবীতে অনেক ফুল ফোটে, কিন্তু সব ফুলের গন্ধ মানুষকে মাতোয়ারা করে না। তেমনি পৃথিবীতে অনেক মানুষ জন্মে, সব মানুষ নন্দিত হয় না। কিছু মানুষ জন্মায় যাদের কৃতকর্মে তারা হয়ে উঠেন জননন্দিত। হুমায়ুন আহমেদ তেমনি একজন। লেখার জাদুতে যেমন আলোড়ন তুলেছেন, তেমনি সৃজনশীলতার সব শাখাতেই পাঠক ও দর্শকদের নিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়েছেন। সাহিত্য, গান, নাটক, সিনেমা, প্রতিটি শাখাতেই তাঁর সৃষ্টি ছিল অপ্রতিদ্বন্দ্বি।
১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় তার জন্ম। ডাকনাম কাজল। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজ। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা, আর মা গৃহিণী। তিন ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। তার অন্য দুই ভাইও বরেণ্য ও প্রতিভাবান। কথাসাহিত্যিক জাফর ইকবাল তার ছোট ভাই। সবার ছোট ভাই আহসান হাবীব নামকরা কার্টুনিস্ট ও রম্যলেখক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগের এই অধ্যাপক নন্দিত নরকে, লীলাবতী, কবি, শঙ্খনীল কারাগার, গৌরিপুর জংশন, নৃপতি, বহুব্রীহি, এইসব দিনরাত্রি, দারুচিনি দ্বীপ, শুভ্র, নক্ষত্রের রাত, কোথাও কেউ নেই, আগুনের পরশমণি, শ্রাবণ মেঘের দিন, জোছনা ও জননীর গল্প, এমন ঝড় তোলার মতো উপন্যাস উপহার দিয়েছেন আমাদের।
প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ দিয়েই সাড়া ফেলেন বিজ্ঞানের ছাত্র হুমায়ূন আহমেদ। হুমায়ূনের উপন্যাসের নাট্যরূপ ধারাবাহিকভাবে টেলিভিশনে প্রচারিত হলে সেখানেও দর্শকদের সাড়া। তিনি যখন চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন তা দেখতেও শহর ভেঙে পড়ে। হুমায়ূন আহমেদ চলচ্চিত্র আগুনের পরশমণি, শ্যামল ছায়া, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, নয় নম্বর বিপদ সংকেত ও ঘেটুপুত্র কমলা সবগুলোই ছিল দর্শকপ্রিয় ও ব্যবসা সফল।
চলচ্চিত্র বা নাটকের জন্য হুমায়ূন আহমেদ গান লিখেছেন, আবার তাতে সুরও দিয়েছেন, তা সমাদৃত হয়েছে। ‘যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো ’, ‘চাঁদনী পসরে কে’, ‘ও আমার উড়াল পঙ্খীরে’, ’এক যে ছিল সোনার কন্যা’, ‘আমার ভাঙ্গা ঘরে ভাঙ্গা বেড়া ভাঙ্গা চালার ফাঁকে’, ‘চাঁদনী পসর রাইতে যেন আমার মরণ হয়’ হুমায়ূন আহমেদের লেখা এসব গান আজো মানুষের মুখে মুখে ফেরে।
হুমায়ূন আহমেদ বিংশ শতাব্দীর জনপ্রিয় বাঙালি কথা সাহিত্যিকদের মধ্য অন্যতম। তাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও জনপ্রিয় লেখক বলে গণ্য করা হয়। বাংলা কথা সাহিত্যে তিনি সংলাপ প্রধান নতুন শৈলীর জনক। অন্যদিকে তিনি আধুনিক বাংলা বৈজ্ঞানিক কল্প কাহিনীর প্রথিকৃত। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩ শতাধিক।
বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক `একুশে পদক` লাভ করেন। এছাড়া তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮) লাভ করেন।
তিনি আমাদের ছেড়ে যান ২০১২ সালের ১৯ জুলাই। মরণব্যাধি ক্যানসারের চিকিৎসায় যুক্তরাষ্ট্রে যাবার পর সেখানেই তিনি মারা যান। মাত্র ৬৪ বছর বয়সেই তিনি চলে যান না ফেরার দেশে। সেখান থেকে মরদেহ ঢাকায় আনার পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে লাখো মানুষের অশ্রু পুষ্পতে সিক্ত হন তিনি। ২৪ জুলাই নুহাশপল্লীর লিচুতলায় চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। সেদিন গভীর শোকে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল তার লাখো ভক্ত অনুরাগী। নিজের সৃষ্টিশীতা দিয়ে হুমায়ূন আজো বেঁচে আছেন অগনিত পাঠকের হৃদয়ে হৃদয়ে।
লেখার জাদু আলোড়ন হুমায়ুন আহমেদ
মন্তব্য করুন
বেহুলাপালা, কুমুর, পালাটিয়া ও থিয়েটার ওপেন টু বায়োস্কপের মঞ্চ মাতানো অভিনেতা নটবর পরেশচন্দ্র রায়ের স্মরণে ২০০২ সাল থেকে দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার গোলাপগঞ্জ-কৈকুড়ি শিবমন্দির ও প্রাইমারি স্কুল প্রাঙ্গণে 'পরেশ-ময়েন মেলার' আয়োজন করা হয়ে আসছে। এরই অংশ হিসেবে প্রতিবছর 'পরেশ-ময়েন স্মৃতি সম্মাননা' প্রদান করা হয়।
বিশ্ববিখ্যাত চিত্রশিল্পী উইলিয়াম রোটেনস্টাইন ১৯১০ সালে কলকাতায় আসেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা ছবি দেখতে তিনি উপস্থিত হন জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে। সেখানেই তার সঙ্গে দেখা হয় কবিগুরুর। উইলিয়াম রোটেনস্টাইন কবির একটি ছবি আঁকেন। সেই সময় থেকেই এই দুই মহান ব্যক্তিত্বের মধ্যে বন্ধুত্ব তৈরি হয়।
পৃথিবীতে অনেক ফুল ফোটে, কিন্তু সব ফুলের গন্ধ মানুষকে মাতোয়ারা করে না। তেমনি পৃথিবীতে অনেক মানুষ জন্মে, সব মানুষ নন্দিত হয় না। কিছু মানুষ জন্মায় যাদের কৃতকর্মে তারা হয়ে উঠেন জননন্দিত। হুমায়ুন আহমেদ তেমনি একজন। লেখার জাদুতে যেমন আলোড়ন তুলেছেন, তেমনি সৃজনশীলতার সব শাখাতেই পাঠক ও দর্শকদের নিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়েছেন। সাহিত্য, গান, নাটক, সিনেমা, প্রতিটি শাখাতেই তাঁর সৃষ্টি ছিল অপ্রতিদ্বন্দ্বি।