প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ১৮ অগাস্ট, ২০২৩
চলছে শোকাবহ আগস্ট মাস। এ মাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করেছিল ষড়যন্ত্রকারীরা। আগস্ট ষড়যন্ত্রের আদ্যোপান্ত নিয়ে অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর সারা জাগানো বই ‘পিতা, আমরা মুক্ত আকাশ দেখছি’ এর ধারাবাহিক পর্বের অষ্টদশ পর্ব পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল-
বঙ্গবন্ধু দুপুরে গণভবনে যেতে বসেছেন। এমন সময় কয়েকজন মন্ত্রী এসে পড়ায় তারাও বঙ্গবন্ধুর সাথে খাবারে অংশগ্রহণ করলেন। বঙ্গবন্ধু অবশ্য কখনোই বাড়ি থেকে গণভবনে তাকে পাঠানো খাবার একা খেতে পারতেন না। অনেকেই তাতে ভাগ বসত। অনেক সময় লোকের সংখ্যা বেশি হওয়ায় অল্প অল্প করে খেতে হয়েছে। তখনকার বাস্তব অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর পক্ষে একজন সাধারণ মানুষের মতো নিভৃত নীরবে বা পরম স্বস্তিতে তখনও খাওয়ার সুযোগ হয়ে উঠত না। খাবার টেবিলে বসে বিভিন্ন জনের সঙ্গে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথাবার্তা তাঁকে বলতে হত। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তিনি বিভিন্ন জন্যের বক্তব্য শুনতেন। এ কারণে রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে অনেক আমলা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বসে খাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। এমনকি ষড়যন্ত্রের মূল হোতা হাবিবুর রেহমান পর্যন্ত এই খাওয়ার সুযোগ থেকে বাদ পড়েননি। কথায় আছে কারো নিমক খেলে নাকি তার সঙ্গে নিমকহারামি করা যায় না—কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার মাধ্যমে একথাকে মিথ্যায় পরিণত করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু সাধারণ মাছ-ভাত খেতেই পছন্দ করতেন। তাঁর এই সাধারণ মাছ-ভাতের সঙ্গে সাধারণভাবেই মিশে গিয়েছিল অসাধারণ ষড়যন্ত্রকারীরা। ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে হাবিবুর রহমান গংরা কত আসাধারণ ছিল যে এক্ষেত্রে তাদের তুলনা একমাত্র তারাই। আসলে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তুলনা করার মতো ঘটনা অতীতে এককভাবে কখনও ঘটেনি। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে একসঙ্গে জড়ো করলে বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্র সম্পর্কে একটা ধারণা করা সম্ভব।
গ্রীক ট্র্যাজেডিতে দেখা যায় যে, সক্রেটিস সত্যের অনুসন্ধান করেছিলেন এবং তাঁর প্রচারিত সত্যই তাঁকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। সক্রেটিস নিজ হাতে হেমলক পান করে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। তিনি নিজেই নিজের হত্যার পরিবেশ সৃষ্টি করেছিলেন। এদিক থেকে বিচার করলে মনীষী সক্রেটিসের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ১৯৫২ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার প্রয়োজন পড়েনি, ১৯৬৯-এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা একান্ত জরুরি হয়ে দাঁড়ায়নি, ১৯৭১-এ কবর খোঁড়ার পরও বঙ্গবন্ধুকে তখনই হত্যা করা হয়নি। কিন্তু বাঙালি জাতিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করে বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হওয়ার পরই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা অনিবার্য হয়ে দাড়ায়। এ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে মনীষী সক্রেটিসের মতোই সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করাটাই বঙ্গবন্ধুর জীবনের জন্যে কাল হয়ে দাঁড়ায়। অন্যদিকে শেক্সপিয়রীয় ট্রাজেডিতে দেখা যায় যে, মূল নায়কের সাথে আরও কিছু চরিত্রের সমাগম ঘটে এবং যারা মূল নায়ককে শেষ করার জন্যে আলাদা আলাদাভাবে যার যার অবদান রাখে । বঙ্গবন্ধুর ক্ষেত্রে যেমন হাবিবুর রহমান গং ও খোন্দকার মোশতাক আহমেদসহ ১৫ আগস্ট ট্র্যাজেডির জন্যে যার যার অবদান রেখেছে। কাজেই দেখা যাচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড হল গ্রীক ও শেক্সপিয়রীয় ট্র্যাজেডির সমন্বয়। বঙ্গবন্ধু দেশকে স্বাধীন করে বিশ্বের বুকে বাঙালি জাতিকে মাথা উঁচু করে দাড় করাতে সক্ষম না হলে তাকে হত্যা করার পরিবেশ সৃষ্টি হত না, অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড অবশ্যম্ভাবী হয়ে দাঁড়াত না। অন্যদিকে হাবিবুর রহমান গংসহ অন্যরা নিজস্ব ভূমিকা পালন না করলে বঙ্গবন্ধুকে এভাবে হত্যা করা কঠিন হত। যদিও একথা ঠিক যে, বিশ্বের বড় বড় রাষ্ট্র ও তার শক্তিশালী কর্ণধারদের চক্ষু রাঙানিকে তোয়াক্কা না করে বঙ্গবন্ধু একটি স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হওয়ায় তাঁকে যে ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে প্রাণ হারাতেই হবে—এটাই ছিল ইতিহাসের স্বাভাবিক শিক্ষা।
গণভবনের খাবার টেবিলে বসে বঙ্গবন্ধু একদিন তাঁর সহকর্মীদের উদ্দেশে বললাম যে, একের পর এক আইন করে, স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট করে কোনোভাবেই সাধারণ লোকের জন্যে করণীয় দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হচ্ছে না—যে কারণে সাধারণ মানুষ তার সরকারকে দেশশাসনে ব্যর্থ সরকার বলেই বিবেচনা করতে শুরু করছে। এ অবস্থা চলতে দেয়া যেতে পারে না। সাধারণ মানুষের জন্যে করণীয় দায়িত্ব তাকে অবশ্যই পালন করতে হবে, যেহেতু তিনি নিজেই সাধারণ লোকের একজন এবং তাদেরই নেতা। বঙ্গবন্ধুর মুখে এ ধরনের কথা শোনার পর সেখানে উপস্থিত একজন মন্ত্রী অতিব উৎসাহের সাথে জানান, বঙ্গবন্ধুকে আরও ক্ষমতাবান হতে হবে। তাঁর কথা শুনে বঙ্গবন্ধু মুচকি হাসেন এবং বলেন যে, আল্লাহ্ তাকে যে ক্ষমতা দিয়েছেন, জনগণ যেভাবে তার কথায় ওঠেবসে, সমস্ত দেশবাসী যেভাবে তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, তাতে করে নিজের জন্যে আর কি কোনো ক্ষমতার প্রয়োজন আছে? তবু বঙ্গবন্ধু কথা প্রসঙ্গে জানান, দেশের মানুষের মঙ্গলের জন্যে যদি কোনো নতুন পদ্ধতির প্রচলন করতে গিয়ে তাঁর আরও ক্ষমতাগ্রহণের প্রয়োজন দেখা দেয়, তবে সে কথা ভিন্ন। তখন অতিউৎসাহী মন্ত্রী বিগলিত হয়ে বঙ্গবন্ধুকে বলেন যে, কোনো পদ্ধতির কথাটা বড় নয়, আসল কথা হল, বঙ্গবন্ধুর হাতে একচ্ছত্র ক্ষমতা থাকলেই দেশের সাধারণ মানুষের মঙ্গলসাধন সম্ভব হবে। মন্ত্রীর কথা শোনার পর বঙ্গবন্ধু কিছু সময়ের জন্যে ভাত খাওয়া বন্ধ করে কিছু একটা চিন্তা করলেন।
সেদিনের এই অতিউৎসাহী মন্ত্রীটি ছিলেন হাবিবুর রহমান গং-এর একজন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কথাবার্তার পর এই মন্ত্রী ধীরে ধীরে বিভিন্ন জনের কাছে প্রচার করা শুরু করেন যে, বঙ্গবন্ধু সব রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নিজের হাতে কুক্ষিগত করতে চান এবং এই ক্ষমতা কুক্ষিগত করার আসল উদ্দেশ্যে হচ্ছে দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে চিরকালের জন্যে নিজের বা পারিবারিক শাসন কায়েম করা। এমনকি একথা প্রচার করতেও দ্বিধা করলেন না যে, বঙ্গবন্ধু যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন তিনিই থাকবেন দেশের সর্বময় কর্তা এবং তিনি মারা গেলে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হবেন তাঁরই বড় ছেলে শেখ কামাল। এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে বঙ্গবন্ধু তার কাজ শুরু করে দিয়েছেন। হাবিবুর রহমান গং এ গুজবকে খুব সফলভাবেই সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হল।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মুক্ত আকাশ বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
নারীমুক্তি আন্দোলনের পুরাধা ব্যক্তিত্ব গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল আন্দোলনের অগ্রদূত ‘জননী সাহসিকা’ কবি বেগম সুফিয়া কামাল। তিনি ছিলেন, সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে এক অকুতোভয় যোদ্ধা। তিনি নারীসমাজকে অজ্ঞানতা ও কুসংস্কারের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করতে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। মহান ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার, মুক্তিযুদ্ধসহ গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, বিভিন্ন সংগঠন প্রতিষ্ঠাসহ প্রতিটি আন্দোলনে তিনি আমৃত্যু সক্রিয় ছিলেন। সমাজ সংস্কার এবং নারীমুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর লেখনী আজও পাঠককে আলোড়িত ও অনুপ্রাণিত করে।
সেই মহিয়সী নারী ‘জননী সাহসিকা’ বেগম সুফিয়া কামালের আজ ২৪তম মৃত্যু বার্ষিকী।
আমাদের এই প্রিয় কবির মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালির সমস্ত প্রগতিশীল আন্দোলনে ভূমিকা পালনকারী সুফিয়া কামাল ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর শনিবার সকালে বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেন। সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার ইচ্ছানুযায়ী তাকে আজিমপুর কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে উল্লেখ করেন, তাঁর জন্ম ১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালে। তখন বাঙালি মুসলমান নারীদের লেখাপড়ার সুযোগ একেবারে সীমিত থাকলেও তিনি নিজ চেষ্টায় লেখাপড়া শেখেন এবং ছোটবেলা থেকেই কবিতাচর্চা শুরু করেন। সুললিত ভাষায় ও ব্যঞ্জনাময় ছন্দে তাঁর কবিতায় ফুটে উঠত সাধারণ মানুষের সুখ-দু:খ ও সমাজের সার্বিক চিত্র। তিনি বলেন, কবি সুফিয়া কামাল নারী সমাজের শিক্ষা ও অধিকার আদায়ের আন্দোলন শুরু করেছিলেন এবং গড়ে তোলেন ‘বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ’।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা হোস্টেলকে ‘রোকেয়া হল’ নামকরণের দাবী জানান তিনি। ১৯৬১ সালে পাকিস্তান সরকার রবীন্দ্র সংগীত নিষিদ্ধ করলে এর প্রতিবাদে গঠিত আন্দোলনে কবি যোগ দেন। বেগম সুফিয়া কামাল শিশু সংগঠন ‘কচি-কাঁচার মেলা’ প্রতিষ্ঠা করেন। আওয়ামী লীগ সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর নামে ছাত্রী হল নির্মাণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কবি বেগম সুফিয়া কামাল যে আদর্শ ও দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন তা যুগে যুগে বাঙালি নারীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
তিনি বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পঁচাত্তরের পনেরই আগস্টে নির্মমভাবে হত্যা করে যখন এদেশের ইতিহাস বিকৃতির পালা শুরু হয়, তখনও তাঁর সোচ্চার ভূমিকা বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের গণতান্ত্রিক শক্তিকে নতুন প্রেরণা যুগিয়েছিল।
সুফিয়া কামাল ১৯১১ সালের ২০ জুন বেলা ৩টায় বরিশালের শায়েস্তাবাদস্থ রাহাত মঞ্জিলে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর সুফিয়া কামাল পরিবারসহ কলকাতা থেকে ঢাকায় চলে আসেন। ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং এই আন্দোলনে নারীদের উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি ১৯৫৬ সালে শিশু সংগঠন কচিকাঁচার মেলা প্রতিষ্ঠা করেন।
পাকিস্তান সরকার ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র সঙ্গীত নিষিদ্ধের প্রতিবাদে সংগঠিত আন্দোলনে তিনি জড়িত ছিলেন এবং তিনি ছায়ানটের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৬৯ সালে মহিলা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন এবং গণঅভ্যূত্থানে অংশ নেন।
১৯৭০ সালে তিনি মহিলা পরিষদ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭১ সালের মার্চে অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের মিছিলে নেতৃত্ব দেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা দেন। স্বাধীন বাংলাদেশে নারী জাগরণ ও নারীদের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামেও তিনি উজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণসহ কার্ফু উপেক্ষা করে নীরব শোভাযাত্রা বের করেন।
সাঁঝের মায়া, মন ও জীবন, শান্তি ও প্রার্থনা, উদাত্ত পৃথিবী ইত্যাদি তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। এ ছাড়া সোভিয়েতের দিনগুলি এবং একাত্তরের ডায়েরী তার অন্যতম ভ্রমণ ও স্মৃতিগ্রন্থ।
সুফিয়া কামাল দেশ-বিদেশের ৫০টিরও বেশী পুরস্কার লাভ করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাংলা একাডেমী পুরস্কার, সোভিয়েত লেনিন পদক, একুশে পদক, বেগম রোকেয়া পদক, জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার ও স্বাধীনতা দিবস পদক।
সুফিয়া কামালের পাঁচ সন্তান। তারা হলেন,আমেনা আক্তার, সুলতানা কামাল, সাঈদা কামাল, শাহেদ কামাল ও সাজেদ কামাল।
মন্তব্য করুন
বিশ্ববিখ্যাত চিত্রশিল্পী উইলিয়াম রোটেনস্টাইন ১৯১০ সালে কলকাতায় আসেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা ছবি দেখতে তিনি উপস্থিত হন জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে। সেখানেই তার সঙ্গে দেখা হয় কবিগুরুর। উইলিয়াম রোটেনস্টাইন কবির একটি ছবি আঁকেন। সেই সময় থেকেই এই দুই মহান ব্যক্তিত্বের মধ্যে বন্ধুত্ব তৈরি হয়।
১৯১২ সালে ‘মডার্ন রিভিউ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় স্বামী বিবেকানন্দের শিষ্যা সিস্টার নিবেদিতার ইংরেজিতে অনুবাদ করা ‘কাবুলিওয়ালা’ গল্প। উইলিয়াম রোটেনস্টাইন সেই লেখা পড়ে অবাক হয়ে যান। এর আগে পর্যন্ত তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোন সাহিত্য কর্ম সম্পর্কে পরিচিত ছিলেন না।
এরপর উইলিয়াম রোটেনস্টাইনের অনুরোধে বিখ্যাত শিক্ষক অজিত চক্রবর্তী মহাশয় কবির কিছু লেখা ইংরেজিতে অনুবাদ করে তার কাছে পাঠান। আরো অবাক হন উইলিয়াম রোটেনস্টাইন। তাকে কবিগুরু সাহিত্য চর্চা সম্পর্কে লন্ডনে বিশদে জানান প্রমথলাল সেন ও ব্রজেন্দ্রনাথ শীল।
এরপরই উইলিয়াম রোটেনস্টাইনের আমন্ত্রণে লন্ডন পাড়ি দেন কবি। জাহাজে তিনি গীতাঞ্জলি-এর কিছু কবিতা অনুবাদ করেন। সঙ্গে অনুবাদ করেন শিলাইদহে বসে তার লেখা আরও কিছু কবিতা। সেই কবিতা পড়ে অভিভূত হন উইলিয়াম রোটেনস্টাইন। তিনি কবির খাতাটি পাঠান আইরিশ কবি উইলিয়াম বাটলার ইয়েটসসহ একাধিক সাহিত্য সমালোচককে। তিনি জর্জ বার্নডশ’কে চিঠি লিখে কবিগুরুর কবিতা পড়ার অনুরোধ জানান। লন্ডনে এক সাহিত্য সভায় মিলিত হন কবি উইলিয়াম বাটলার ইয়েটসসহ বেশ কিছু কবি সাহিত্যিক ও লেখক। কবিগুরুর অনুবাদ করা কবিতাগুলি শুনে তারা একের পর এক ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাঠাতে থাকেন। এক দিনেই লন্ডনের সাহিত্য মহলে ছড়িয়ে পরে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের নাম।
নোবেল কমিটির নিয়ম অনুসারে নোবেল পুরস্কারের জন্য নাম সুপারিশ করতে পারেন বিভিন্ন দেশের স্বীকৃত সংস্থার সভ্যরা অথবা কোন নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত ব্যক্তি। কবিগুরুর কবিতা পড়ে মুগ্ধ হওয়া স্টার্জমুর মহাশয় ছিলেন রয়েল সোয়াইটি অব লিটারেচার অব ইউ কে-এর সদস্য। তিনি নোবেল পুরস্কারের জন্য কবিগুরুর নাম সুপারিশ করেন। কিন্তু এ কথা কবিগুরুও জানতেন না। সম্পূর্ণ গোপনে কবির নাম সুপারিশ করেন স্টার্জমুর।
বিভিন্ন দেশ থেকে আরও ২৮ জনের নামে সেই বছর সুপারিশ এসেছিল। সুইডিশ একাডেমির সদস্য হলেও স্টার্জমুর-এর হাতে ছিল একমাত্র গীতাঞ্জলি-এর অনুবাদ করা বইটি। তৎকালীন নোবেল কমিটির সভাপতি হোয়ানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামের বিরোধিত করে বলেন, একটি মাত্র বই দেখে বিচার করা সম্ভব নয়।
নোবেল কমিটিতে ছিলেন প্রাচ্যবিদ এসাইস টেঙ্গার। তিনি বাঙলা ভাষা জানতেন। তিনি কমিটির সদস্যদের প্রভাবিত করেন। সুইডিশ কবি হাইডেস্টাম গীতাঞ্জলি-এর সুইডিশ অনুবাদ পড়ে মুগ্ধ হন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে নোবেল কমিটিকে চিঠি লেখেন। অবশেষে ১৯১৩ সালে নোবেল কমিটির বিচারে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম ঘোষিত হয়।
নোবেল প্রাপ্তির খবর কলকাতায় প্রথম ছাপে ইংরেজি সান্ধ্য দৈনিক পত্রিকা ‘এম্পায়ার’। ১৩ তারিখ নোবেল-পুরস্কার কমিটি কবির নাম ঘোষণা করার পর, স্টকহোমের রয়টার প্রতিনিধি খবরটি প্রথম ‘ব্রেক’ করেন। নিউইর্য়ক ইভনিং পোস্টে সে খবর প্রকাশিত হয়। রয়টারের খবর আসে পরের দিন, ১৪ নভেম্বর সকাল ৯টায়। ততক্ষণে সেদিনের কাগজ ছাপা হয়ে বেশিরভাগ বিক্রিও হয়ে গিয়েছে! সে দিনের ‘এম্পায়ার’ দেখেই শোরগোল পড়ে সন্ধেরাতের শহরে।
রবীন্দ্রনাথের নোবেল প্রাপ্তির পর সমকালীন অনেক লেখক তাকে শুভেচ্ছাবার্তা জানাতে থাকেন। সেই সময় নোবেলের মত এমন সম্মানসূচক পুরস্কার প্রাপ্তির কারণে পুরো ভারতবর্ষের বাঙালি লেখকেরা আবেগের জোয়ারে ভাসতে শুরু করেন।
শোরগোলের কথা জানিয়েছেন রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ে সীতা দেবী। ‘পুণ্যস্মৃতি’-র পাতায় তিনি লিখছেন, ‘‘কলেজ হইতে ফিরিবামাত্র শুনিলাম যে রবীন্দ্রনাথ Nobel Prize পাইয়াছেন। কলিকাতা শহরে মহা হৈ চৈ বাধিয়া গেল। শুনিলাম কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত সর্বপ্রথম কবিকে এই খবর টেলিগ্রামে জানাইতে গিয়াছিলেন, কিন্তু তিনি নিজে টেলিগ্রাম লিখিতে জানিতেন না, অন্য কাহাকেও দিয়া লিখাইতে গিয়া দেরি হইয়া গেল, তাঁহার আগেই আর-একজন টেলিগ্রাম পাঠাইয়া দিলেন।’’
সে সময় প্রমথনাথ বিশী শান্তিনিকেতনের ছাত্র। ‘রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতন’-এ তিনি লিখছেন, ‘‘শীতের প্রারম্ভে নূতন-ওঠা বেগুনভাজা পরিবেশিত হইয়াছে... সহসা অজিতকুমার চক্রবর্তী রান্নাঘরে ঢুকিয়া চীৎকার করিয়া বলিলেন, ‘গুরুদেব নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন।’’
আমেরিকানদের পত্রপত্রিকায় তাকে বলা হয়েছে হিন্দু কবি, যদিও কোথাও কোথাও ছাড় দেওয়া হয়েছে এই বলে যে, যাই হোক ওই কবি একজন আর্য বটেন, সেই বিবেচনায় সাদা আমেরিকানদের সঙ্গে একেবারেই যে সম্পর্কহীন তা নয়। পরে অবশ্য তার বক্তৃতা শুনে ও রচনা পাঠ করে তাঁরা না মেনে পারেন নি যে, রবীন্দ্রনাথ মোটেই অবজ্ঞেয় নন।
নোবেল জয় ইতিহাস রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
মন্তব্য করুন
পৃথিবীতে অনেক ফুল ফোটে, কিন্তু সব ফুলের গন্ধ মানুষকে মাতোয়ারা করে না। তেমনি পৃথিবীতে অনেক মানুষ জন্মে, সব মানুষ নন্দিত হয় না। কিছু মানুষ জন্মায় যাদের কৃতকর্মে তারা হয়ে উঠেন জননন্দিত। হুমায়ুন আহমেদ তেমনি একজন। লেখার জাদুতে যেমন আলোড়ন তুলেছেন, তেমনি সৃজনশীলতার সব শাখাতেই পাঠক ও দর্শকদের নিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়েছেন। সাহিত্য, গান, নাটক, সিনেমা, প্রতিটি শাখাতেই তাঁর সৃষ্টি ছিল অপ্রতিদ্বন্দ্বি।
১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় তার জন্ম। ডাকনাম কাজল। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজ। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা, আর মা গৃহিণী। তিন ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। তার অন্য দুই ভাইও বরেণ্য ও প্রতিভাবান। কথাসাহিত্যিক জাফর ইকবাল তার ছোট ভাই। সবার ছোট ভাই আহসান হাবীব নামকরা কার্টুনিস্ট ও রম্যলেখক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগের এই অধ্যাপক নন্দিত নরকে, লীলাবতী, কবি, শঙ্খনীল কারাগার, গৌরিপুর জংশন, নৃপতি, বহুব্রীহি, এইসব দিনরাত্রি, দারুচিনি দ্বীপ, শুভ্র, নক্ষত্রের রাত, কোথাও কেউ নেই, আগুনের পরশমণি, শ্রাবণ মেঘের দিন, জোছনা ও জননীর গল্প, এমন ঝড় তোলার মতো উপন্যাস উপহার দিয়েছেন আমাদের।
প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ দিয়েই সাড়া ফেলেন বিজ্ঞানের ছাত্র হুমায়ূন আহমেদ। হুমায়ূনের উপন্যাসের নাট্যরূপ ধারাবাহিকভাবে টেলিভিশনে প্রচারিত হলে সেখানেও দর্শকদের সাড়া। তিনি যখন চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন তা দেখতেও শহর ভেঙে পড়ে। হুমায়ূন আহমেদ চলচ্চিত্র আগুনের পরশমণি, শ্যামল ছায়া, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, নয় নম্বর বিপদ সংকেত ও ঘেটুপুত্র কমলা সবগুলোই ছিল দর্শকপ্রিয় ও ব্যবসা সফল।
চলচ্চিত্র বা নাটকের জন্য হুমায়ূন আহমেদ গান লিখেছেন, আবার তাতে সুরও দিয়েছেন, তা সমাদৃত হয়েছে। ‘যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো ’, ‘চাঁদনী পসরে কে’, ‘ও আমার উড়াল পঙ্খীরে’, ’এক যে ছিল সোনার কন্যা’, ‘আমার ভাঙ্গা ঘরে ভাঙ্গা বেড়া ভাঙ্গা চালার ফাঁকে’, ‘চাঁদনী পসর রাইতে যেন আমার মরণ হয়’ হুমায়ূন আহমেদের লেখা এসব গান আজো মানুষের মুখে মুখে ফেরে।
হুমায়ূন আহমেদ বিংশ শতাব্দীর জনপ্রিয় বাঙালি কথা সাহিত্যিকদের মধ্য অন্যতম। তাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও জনপ্রিয় লেখক বলে গণ্য করা হয়। বাংলা কথা সাহিত্যে তিনি সংলাপ প্রধান নতুন শৈলীর জনক। অন্যদিকে তিনি আধুনিক বাংলা বৈজ্ঞানিক কল্প কাহিনীর প্রথিকৃত। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩ শতাধিক।
বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক `একুশে পদক` লাভ করেন। এছাড়া তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮) লাভ করেন।
তিনি আমাদের ছেড়ে যান ২০১২ সালের ১৯ জুলাই। মরণব্যাধি ক্যানসারের চিকিৎসায় যুক্তরাষ্ট্রে যাবার পর সেখানেই তিনি মারা যান। মাত্র ৬৪ বছর বয়সেই তিনি চলে যান না ফেরার দেশে। সেখান থেকে মরদেহ ঢাকায় আনার পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে লাখো মানুষের অশ্রু পুষ্পতে সিক্ত হন তিনি। ২৪ জুলাই নুহাশপল্লীর লিচুতলায় চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। সেদিন গভীর শোকে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল তার লাখো ভক্ত অনুরাগী। নিজের সৃষ্টিশীতা দিয়ে হুমায়ূন আজো বেঁচে আছেন অগনিত পাঠকের হৃদয়ে হৃদয়ে।
লেখার জাদু আলোড়ন হুমায়ুন আহমেদ
মন্তব্য করুন
কবি সুফী মোতাহার হোসেন মূলত সনেট রচয়িতা হিসাবেই খ্যাত। কাজী নজরুল ইসলাম ও মোহিতলাল মজুমদারের সাথে পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতার ফলে তিনি কাব্যচর্চায় অনুপ্রেরণা লাভ করেন। মূলত সনেটেই তার কবি প্রতিভার স্বতঃস্ফূর্ততা প্রকাশ পেয়েছে।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার সম্পাদিত ‘বাংলাকাব্য পরিচয়’ নামক গ্রন্থে সুফী মোতাহার হোসেনের দিনান্তে সনেটটি সংকলিত করেন। তার সনেটের প্রধান উপজীব্য হিসেবে তিনি বেছে নিয়েছিলেন প্রেম ও প্রকৃতি।
কবি সুফী মোতাহার হোসেন ১৯০৭ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ফরিদপুর জেলার ভবানন্দপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মোহাম্মদ হাশিম ছিলেন পুলিশ ইন্সপেক্টর। মোতাহার হোসেন ফরিদপুর জিলা স্কুল থেকে এন্ট্রান্স ও জগন্নাথ কলেজ থেকে এফএ উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ১৯৩১ সালে বিএ পাস করেন। মেধাবী মোতাহার হোসেন সব পরীক্ষায়ই প্রথম বিভাগে পাস করেন। পড়াশোনা শেষ করে ফরিদপুর জজকোর্টে চাকরি নিয়েছিলেন। বছর দু-এক পরে নিউরেস্থিনিয়া ও ডিসপেপশিয়া রোগে আক্রান্ত হলে প্রায় ১২ বছর শয্যাশায়ী থাকতে হয়। রোগমুক্তির পর তিনি শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হন এবং ফরিদপুর ঈশান ইনস্টিটিউশনে ২০ বছর শিক্ষকতা করেন।
কাজী নজরুল ইসলাম ও মোহিতলাল মজুমদারের সঙ্গে পরিচয় ও সম্পর্কের সূত্রে মোতাহার হোসেন সাহিত্যচর্চায় উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। তিনি পাশ্চাত্য আদর্শে সনেট রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পাদিত ‘বাংলা কাব্য পরিচয়’ নামক বইয়ে সুফী মোতাহার হোসেনের ‘দিগন্ত’ সনেটটি স্থান পেয়েছে। প্রকৃতি, প্রেম ও মানবতা তার সনেটে ধ্বনিত হয়। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘সনেট সংকলন’ (১৯৬৫)।
পরে সনেট সঞ্চয়ন (১৯৬৬) ও সনেটমালা (১৯৭০) নামে আরো দুটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। তিনি ১৯৬৫ সালে ‘আদমজী পুরস্কার’, ১৯৭০ সালে ‘প্রেসিডেন্ট পুরস্কার’ এবং ১৯৭৪ সালে ‘বাংলা একাডেমি পুরস্কার’ লাভ করেন। ১৯৭৫ সালের ৭ আগস্ট ঢাকায় মোতাহার হোসেন মারা যান।
সনেট কবি সুফী মোতাহার হোসেন ফরিদপুর জেলা ভবানন্দপুর গ্রাম
মন্তব্য করুন
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক সালেহ চৌধুরীর ৮৬তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯৩৬ সালের ১১ নভেম্বর সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার গচিয়া গ্রামে তার জন্ম। সাংবাদিক ছাড়াও তিনি একাধারে ছিলেন কলাম লেখক, চিত্রশিল্পী, সংগঠক, সমাজসেবক। পুরো জীবনই সাংবাদিকতা এবং শিল্প-সাহিত্যের ভুবনে ডুবে ছিলেন তিনি।
অসামান্য বুদ্ধিদীপ্ত, সৃজনশীল ও সাহসী মানুষ ছিলেন সালেহ চৌধুরী। একসময় কবিতা লিখতেন। শিশুদের জন্য ছড়া লিখেছেন। লিখেছেন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণামূলক বই। পত্রিকার জন্য কার্টুন আঁকতেন। মুক্তিযুদ্ধে সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে গেরিলা যুদ্ধের প্রধান সংগঠক ছিলেন তিনি। বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করে সুনামগঞ্জের দিরাই-তাহিরপুর-জগন্নাথপুর-নেত্রকোনার খালিয়াজুরির হাওর অঞ্চল তথা ভাটি অঞ্চলকে স্বাধীন করতে বিশেষ অবদান রেখেছিলেন। ভাটি অঞ্চল চষে বেড়ানোর জন্য তার খ্যাতি ছিল।
পশ্চিম পাকিস্তানে উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন সালেহ চৌধুরী। লাহোরের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগে পড়াশোনা করেন। বিএ পাস করার পর চিত্রকলার দিকে আকৃষ্ট হন। ১৯৬৩ সালে তিনি এমএ পাস করে ঢাকা ফিরে আসেন।
সালেহ চৌধুরী কাজ করেছেন দৈনিক বাংলা, সান্ধ্য দৈনিক আওয়াজ, দৈনিক পাকিস্তানসহ বিভিন্ন পত্রিকায়। এ ছাড়া বিভিন্ন পত্রিকায় কলাম লিখতেন। সাপ্তাহিক ‘ইশারা’ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। দায়িত্ব পালন করেছেন কমনওয়েলথ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সভাপতি ও দাবা ফেডারেশনের সাবেক কর্মকর্তা হিসেবে।
২০১৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর ৮১ বছর বয়সে মারা যান সালেহ চৌধুরী। সুনামগঞ্জের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ জেলার অনেক শহীদ মিনারের স্থপতি ছিলেন তিনি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক সালেহ চৌধুরী জন্মবার্ষিকী সুনামগঞ্জ
মন্তব্য করুন
বিশ্ববিখ্যাত চিত্রশিল্পী উইলিয়াম রোটেনস্টাইন ১৯১০ সালে কলকাতায় আসেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা ছবি দেখতে তিনি উপস্থিত হন জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে। সেখানেই তার সঙ্গে দেখা হয় কবিগুরুর। উইলিয়াম রোটেনস্টাইন কবির একটি ছবি আঁকেন। সেই সময় থেকেই এই দুই মহান ব্যক্তিত্বের মধ্যে বন্ধুত্ব তৈরি হয়।
পৃথিবীতে অনেক ফুল ফোটে, কিন্তু সব ফুলের গন্ধ মানুষকে মাতোয়ারা করে না। তেমনি পৃথিবীতে অনেক মানুষ জন্মে, সব মানুষ নন্দিত হয় না। কিছু মানুষ জন্মায় যাদের কৃতকর্মে তারা হয়ে উঠেন জননন্দিত। হুমায়ুন আহমেদ তেমনি একজন। লেখার জাদুতে যেমন আলোড়ন তুলেছেন, তেমনি সৃজনশীলতার সব শাখাতেই পাঠক ও দর্শকদের নিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়েছেন। সাহিত্য, গান, নাটক, সিনেমা, প্রতিটি শাখাতেই তাঁর সৃষ্টি ছিল অপ্রতিদ্বন্দ্বি।