ইনসাইড থট

করোনা টেস্টে অমানবিক মুনাফা এবং সময় ও ব্যয় সাশ্রয়ী বিকল্প টেস্ট পদ্ধতি

প্রকাশ: ০৫:২০ পিএম, ২৫ জানুয়ারী, ২০২২


Thumbnail করোনা টেস্টে অমানবিক মুনাফা এবং সময় ও ব্যয় সাশ্রয়ী বিকল্প টেস্ট পদ্ধতি

চলমান বৈশ্বিক মহামারীতে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা যখন বেহাল, জনজীবন ও জীবিকা যখন প্রায় পর্যুদস্ত, তখন রোগ নির্ণয়, উপশম ও নিরাময়ের জন্য নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান করছে উচ্চ মাত্রার মুনাফা। উন্নত দেশের উদ্ভাবনী প্রতিষ্ঠান যেমন দু’হাতে মুনাফা লুটেছে, তেমনি মাঠ পর্যায়ের প্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠানও ছাড় দেয়নি। সবার উদ্দেশ্য অভিন্ন এবং তা হচ্ছে অমানবিক অতিমাত্রার মুনাফা। প্রযুক্তি কোম্পানি, ওষুধ কোম্পানি, হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরি- কেউ ভাবেনি মানবিকতার কথা। কোভিড টেস্টের কথাই ধরি। সারা বিশ্বে কোভিড পরীক্ষার জন্য আরটি-পিসিআর (Reverse Transcription Polymerase Chain Reaction) পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে। এ পদ্ধতি আবিষ্কার হয়েছে ১৯৮৩ সালে। শরীরে কোন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা অন্য কোন সংক্রামক এজেন্ট বা ক্যান্সারে আক্রান্ত কোষের উপস্থিতি থাকলে পিসিআর তা নির্ভুলভাবে সনাক্ত করে।

সে প্রেক্ষিতে এ দেশের অনেক সরকারি-বেসরকারি ল্যাবরেটরিতে পিসিআর ব্যবহার করা হচ্ছে আগেই থেকেই। এটি ব্যবহার করে শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করার জন্য রি-এজেন্ট/এনজাইম ব্যবহার করা হয়। এগুলোর উৎপাদক প্রতিষ্ঠান শুরুর দিকে এক একটি পরীক্ষার জন্য উক্ত রি-এজেন্ট যে মূল্যে বিক্রয় করেছে, বর্তমানে তারাই কম-বেশি ৮০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের Roche, Thermo Fisher Scientific এবং Qiagen সহ হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এগুলোর উৎপাদক। তারা যে পিসিআর রি-এজেন্ট কিট ২০২০ সালে ২,০০০/- থেকে ২,৫০০/- টাকায় বিক্রয় করেছে, তারাই এখন ১ লক্ষ বা তার বেশী কিট আনলে ৬০০/- টাকায় সরবরাহ করছে। কারণ অনেক কোম্পানী উৎপাদন শুরু করেছে এবং প্রতিযোগী বেড়ে গেছে। রি-এজেন্ট কিটের মূল্য এতো কমলেও এদেশে বেসরকারি পর্যায়ে কোভিড টেস্টে এর কোনই প্রভাব পড়েনি।

সরকারি হাসপাতালে কোভিড টেস্টের ফি মাত্র ১০০ টাকা, কিন্তু রি-এজেন্ট কিটের মূল্য বেশি থাকায় এপ্রিল ২৯, ২০২০ তারিখে বেসরকারি পর্যায়ে টেস্টের জন্য ফি নির্ধারণ করা হয় ৩,৫০০/- টাকা এবং একই বছর ডিসেম্বর ২৭, তারিখে পুনর্নির্ধারণ করা হয় ৩,০০০/- টাকা। বিদেশি কর্মীর জন্য ২,৫০০/- টাকা এবং বাড়ি থেকে স্যাম্পল বা নমুনা সংগ্রহ করলে ৩,৭০০/- টাকা। ইতোমধ্যে এক বছরের বেশি সময় পার হয়েছে। কোভিড টেস্টের সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটেছে আশঙ্কাজনকভাবে এবং সংশ্লিষ্ট রি-এজেন্ট কিটের সংগ্রহ মূল্য কমেছেও একই গতিতে। লক্ষ লক্ষ কিট আমদানি করলে দামে যেমন ছাড় আছে অনেক, তেমনি কোল্ড চেইনে আনতে হয় বিধায় বেশী রি-এজেন্ট আমদানী করলে বিমান ভাড়াও কম লাগে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে মাত্র ৯৫০ রুপিতে বেসরকারি ল্যাবে এখন কোভিড টেস্ট করা যায়। এসব বিবেচনায় এ দেশে বিশেষজ্ঞগণ এ টেস্টের ফি অনেক কমিয়ে আনার প্রস্তাব করেছেন। যা খুবই যৌক্তিক এবং বাস্তবায়ন হওয়া খুবই জরুরি।

যে কোন জীবের প্রতি কোষে থাকে ডিএনএ ও আরএনএ। ডিএনএ ওই জীবের বৈশিষ্ট্য বহন করে এবং আরএনএ বৈশিষ্ট্য বহনের পাশাপাশি প্রোটিন তৈরি করে। ভাইরাস আধা-প্রাণ বলে এর কোনটিতে ডিএনএ (ডিএনএ ভাইরাস) থাকে এবং কোনটিতে আরএনএ (আরএনএ ভাইরাস) থাকে। বর্তমান মহামারীর ভাইরাস সার্স-কভ-২ একটি আরএনএ ভাইরাস। তাই এ রোগ সনাক্তের জন্য আরটি-পিসিআর (Reverse Transcription Polymerase Chain Reaction) পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। পিসিআর-এর কাজ হচ্ছে দেহের বাইরে টিউবের মধ্যে সংশ্লিষ্ট নমুনার ডিএনএর লক্ষ লক্ষ প্রতিলিপি তৈরি করা। প্রথমে ডিএনএ বা আরএনএ আলাদা করা হয় ফিল্টার করে। এরপর এই ডিএনএ’র প্রাইমারের (Primer) সাথে পলিমারেজ এনজাইম মিশিয়ে লক্ষ লক্ষ ডিএনএ প্রতিলিপি তৈরি করা হয়।

প্রাইমার (Primer) হচ্ছে ডিএনএ’র অতি ক্ষুদ্র অংশ যা সংশ্লিষ্ট প্রাণ/আধা-প্রাণের সম্পূর্ণ বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ন রাখে। আমরা কোন লেখার ফটোকপি করলে সম্পূর্ণ লেখা যেভাবে অক্ষুণ্ন থাকে, পিসিআর হচ্ছে সেরূপ মলিকুলার ফটোকপি তৈরির পদ্ধতি। টিউবের মধ্যে সংশ্লিষ্ট নমুনার লক্ষ লক্ষ ডিএনএ তৈরি হওয়ায় ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি থাকলে রং পরিবর্তিত হয় ও রোগ সনাক্ত করা যায়। সার্স-কভ-২ আরএনএ ভাইরাস বিধায় আরএনএ আলাদা করার পরে একে রিভার্স ট্রান্সক্রিপটেজ (reverse transcriptase) নামক এনজাইমের মাধ্যমে ডিএনএ (cDNA) তে রূপান্তর করে পিসিআর পদ্ধতিতে লক্ষ লক্ষ প্রতিলিপি তৈরি করা হয়। এজন্য এ পদ্ধতিকে আরটি-পিসিআর (Reverse Transcription PCR) বলে। বিভিন্ন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, জীব ও উদ্ভিদের দেহে এ রিভার্স ট্রান্সক্রিপটেজ এনজাইম পাওয়া যায়।

পিসিআর পদ্ধতি ছাড়াও অ্যান্টিজেন নির্ণয় করে কোভিড রোগ পরীক্ষা করা হয়। তবে শরীর থেকে সংগৃহীত নমুনায় ভাইরাস বেশি না থাকলে (২৫০ বা তার বেশি) অ্যান্টিজেন টেস্টে রোগ ধরা যায় না। রোগের প্রাথমিক অবস্থায় ভাইরাস কম থাকায় অ্যান্টিজেন টেস্ট খুব কার্যকরী হয়না। অপরদিকে, দক্ষ অনুজীব বিজ্ঞানীর তত্ত্বাবধানে পিসিআর মাধ্যমে ডিএনএ’র লক্ষ লক্ষ প্রতিলিপি তৈরিতে ভিন্ন ভিন্ন্ন তাপমাত্রা রাখার পাশাপাশি অনেক মানমাত্রা বজায় রাখতে হয়। পদ্ধতিটি সময় সাপেক্ষ, তবে সম্পূর্ণ নির্ভুল। পিসিআর যন্ত্র বেশ দামি এবং এটি স্থাপন করার জন্য সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অবলম্বনের প্রয়োজনে সময় বেশী লাগে এবং ব্যয়বহুল। নির্দিষ্ট ল্যাবরেটরির বাইরে এটি ব্যবহার করা যায় না। সে কারণে বর্তমান মহামারীর শুরু থেকেই পৃথিবীর সব নামকরা প্রতিষ্ঠান পিসিআর টেস্টর ন্যয় নির্ভুল সহজ পদ্ধতির টেস্ট উদ্ভাবনের প্রচেষ্টা চালায়।

২০২০ সালেই যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ এ খাতে বরাদ্দ করে ১.৫ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু স্বল্প খরচে সহজ পদ্ধতি দ্রুত ব্যবহারে প্রথম সফলতা পায় আমাদের কাছের দেশ থাইল্যান্ড। ব্যাংককের চুলালংকর্ন বিশ^বিদ্যালয় করোনা সংক্রমণ সনাক্তের জন্য আরটি-ল্যাম্প (RT-LAMP- Reverse Transcription Loop-mediated Isothermal Amplification) পদ্ধতি ব্যবহারের তথ্য উপস্থাপন করে। বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান চলমান মহামারিতে ভাইরাস সনাক্তে আরটি ল্যাম্প পদ্ধতির ব্যবহারের উপর অনেক গবেষণাপত্র প্রকাশ করে। সে প্রেক্ষিতে এ পদ্ধতির রি-এজেন্ট তৈরীতে বিনিয়োগ শুরু হয় এবং প্রাইম তৈরি, ভেলিডেশন এবং অন্যান্য অনুমোদন প্রক্রিয়া সম্পন্নে কয়েক মাস বিলম্ব হয়।

ভাইরাস/ব্যাকটেরিয়া বা অনুরূপ সংক্রমণ সনাক্তের জন্য ল্যাম্প (LAMP) পদ্ধতি আবিষ্কার হয় ২০০০ সালে। করোনার অন্য প্রজাতির ভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসসহ অনেক সংক্রমক ভাইরাস সনাক্তে এ পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে। এটিও পিসিআর-এর ন্যায় ডিএনএ’র লক্ষ লক্ষ প্রতিলিপি তৈরি করে, তবে ভিন্ন পদ্ধতিতে। একটি সুনির্দিষ্ট তাপমাত্রা বজায় রাখলেই হয়, ঘন ঘন তাপমাত্রা পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয় না । তাপমাত্রা ওঠানো-নামানোর জন্য দক্ষ জনবল এবং সংশ্লিষ্ট যন্ত্রের প্রয়োজন হয় না। অধিকন্তু একই সাথে বহু নমুনা প্রক্রিয়াকরণের পাশাপাশি মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে রোগ নির্ণয় করা যায়। যন্ত্রের দাম এবং সম্পূর্ণ ল্যাব স্থাপনা ব্যয় কম বেশী ৩ লক্ষ টাকা এবং কম সময়ে যে কোন স্থানে বসানো যায়। এমনকি গাড়ীতে/পিকআপে বসিয়ে ভ্রাম্যমাণ ল্যাব পরিচালনা করা যায় ও সেখানেই ৩০ মিনিটে রিপোর্ট দেওয়া যায়। লক্ষ লক্ষ প্রতিলিপি তৈরির পূর্বে ডিএনএ’র অংশ তথা ‘প্রাইম’-এর সাথে বেগুনি রং মিশানো হয়। নমুনায় ভাইরাসের উপস্থিতি থাকলে তা নীল রং ধারণ করে, আর উপস্থিতি না থাকলে রংয়ের পরিবর্তন হয় না। রংয়ের পরিবর্তন খালি চোখে দেখা যায়। এ পরীক্ষার জন্য দক্ষ অনুজীব বিজ্ঞানীর প্রয়োজন হয় না। রোগ নির্ণয়ের সঠিকতা পিসিআর-এর মতো হওয়ায় ব্যয় সাশ্রয়ী, অত্যন্ত সময় সাশ্রয়ী ও সহজ এ পদ্ধতি খুব দ্রুতই বিভিন্ন দেশে ব্যবহার শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ সকল দেশে পিসিআর টেস্ট রিপোর্টের ন্যয় আরটি-ল্যাম্প টেস্ট রিপোর্ট থাকলে ঐ দেশে প্রবেশে কোন বাধা থাকেনা। সে কারণে এবং বিশেষ করে বিমানবন্দরে বসেই রিপোর্ট নিয়ে বিমানে চড়া বা বিমানবন্দর থেকে বের হওয়া যায় বিধায় আরটি-ল্যাম্প পদ্ধতি প্রতিবেশী ভারতসহ অনেক দেশের বিমানবন্দরে ব্যবহার শুরু হয়েছে বেশ জোরেসোরেই।

দেশে ওমিক্রনের সংক্রমণ বাড়ছে লাগামহীন গতিতে। আরটি-পিসিআর পদ্ধতিতে সাথে সাথে রিপোর্ট না পাওয়ায় সংক্রমিত ব্যক্তি একদিনের মধ্যে অপর শত শত ব্যক্তিকে সংক্রমিত করতে পারে। অপরদিকে, যথাসময়ে করোনা টেস্ট রিপোর্ট না পাওয়ায় অনেক বিদেশগামী যাত্রীর ভোগান্তির সীমা থাকেনা। সে প্রেক্ষিতে দ্রুত সময়ে অনেক বেশি নমুনা পরীক্ষার জন্য সহজ ও ব্যয় সাশ্রয়ী আরটি-ল্যাম্প টেস্ট পদ্ধতি আমাদের দেশে এখনই ব্যবহারের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যৌক্তিক। একইসঙ্গে আরটি-পিসিআর টেস্টের খরচ ১,০০০ টাকার মধ্যে আনয়নের জন্য এক বা একাধিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে লক্ষ লক্ষ রি-এজেন্ট/কিট আমদানি করে তা সরকারি/বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহ করার বিষয়টিও বিবেচনা করা যায়। এসব বিবেচনায় জরুরী ভিত্তিতে বিমান বন্দরসহ অন্যান্য স্থানে আরটি-ল্যাম্প পদ্ধতির ব্যবহার এবং পিসিআর টেস্টের খরচ অনেক নিচে নামিয়ে আনা প্রয়োজন। এতে ওমিক্রনের লাগামহীন সংক্রমণের গতি রোধ করার পাশাপাশি অমানবিক মুনাফার গতিতেও যেমন লাগাম টানা যাবে, তেমনি বিদেশগামী যাত্রীসহ দেশের মানুষের আর্থিক ভোগান্তিও কিছুটা লাঘব করা সম্ভব হবে।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকেই প্রস্তুতি প্রয়োজন


Thumbnail

১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার।  জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?

১৯৯৫ সালে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেই, ১৭তম বিসিএস। জীবনে একবারই এই পরীক্ষা দেই। উত্তীর্ণ হই। সাড়ে আট বছর চাকুরী করেছি, ছেড়েও দিয়েছি । সে অন্য প্রসঙ্গ। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় একটি প্রশ্ন ছিল, ল্যাপটপ কি ? অপশন ছিল- ছোট কুকুর, পর্বতারোহন সামগ্রী, বাদ্যযন্ত্র ও ছোট কম্পিউটার। উত্তর কি দিয়েছিলাম তা মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে যে, আমি উত্তরের জায়গায় ছোট কম্পিউটারে টিক দেইনি। জীবনে যে জিনিসের নামই শুনিনি তাতে টিক দেই কেমনে ? সেকালের কোন গাইড বইতে এ ধরণের কোন প্রশ্ন বা তার উত্তর নেই বলে শুনেছি। পরীক্ষার্থীদের প্রায় ৯৯ ভাগ সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। গাইড পড়ে এ ধরণের প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। তবে যারা আধুনিক প্রযুক্তি বা অনাগত প্রযুক্তি সম্পর্কে ধ্যান ধারণা রাখে তারা সঠিক উত্তর দিয়েছিল।

ঘটনাটি মাথায় এলো সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও দেখে। সেখানে দেখলাম হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী হুড়োহুড়ি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ঢুকছে। শুনলাম তারা আসন্ন বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিবে। ভিডিওটি আবার দেখার জন্য গুগলে অনুসন্ধান করলাম- 'ঢাবি লাইব্রেরিতে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের ভিড়'। সেখানে দেখি শত শত খবর। প্রতি বছর নাকি এমনটি হয়। লাইব্রেরিতে ঢুকতে হুড়োহুড়ি। পরীক্ষার আগে নাকি সেখানে এমন যুদ্ধ চলে। বিসিএস কি দু এক মাস বা দু এক বছরের প্রস্তুতির ব্যাপার ? একবার পরীক্ষা দিয়ে আমার কাছে তা মনে হয়নি। আমার মতে, এর জন্য সমগ্র শিক্ষা জীবন ধরে প্রস্তুতি প্রয়োজন। এটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত। আমার সাথে অনেকেই একমত নাও হতে পারেন।

ছোট কাল থেকে নিয়মিত অধ্যাবসায়ের পাশাপাশি নিয়মিত সংবাদপত্র পড়া প্রয়োজন। জগৎ সংসার, দেশ বিদেশ, বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস, ভূগোল, খেলাধুলা বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা দরকার। কোন একটি দেশি বা বিশ্ব ইভেন্ট চলছে। সেটি চলাকালে দৈনন্দিন খোঁজ খবর রাখার পাশাপাশি ওই ইভেন্টের অতীত জেনে নিলেন। কবে থেকে ইভেন্টটি চলছে, কোথায় সেটি শুরু হয়েছিল, সেটি জেনে নিলেন। নিয়মিত সংবাদপত্র পড়লে বা টিভি সংবাদ দেখলে সেগুলি আপনা আপনি জেনে যাবেন।

তবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য একটু প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। আমি নিয়েছি এক সপ্তাহের। তাও ইন্টার্নি চলাকালে ডিউটির ফাঁকে ফাঁকে। আপনি এর জন্য সর্বোচ্চ এক মাস বরাদ্ধ রাখতে পারেন। বাংলা সাহিত্য ও ইতিহাস অংশে কিছু সাল মনের মধ্যে গেঁথে নেয়ার জন্য গাইড বইটি একটু চোখ বুলাতে পারেন। যে সব বিষয়ে দুর্বলতা রয়েছে সেগুলো একটু দেখতে পারেন। অংকের ফর্মুলা গুলো একটু ঝালাই করে নিতে পারেন। সমসাময়িক বিশ্ব বিষয়ে অনেকের দুর্বলতা থাকে। সংবাদপত্রের এ অংশটুকু প্রায়ই এড়িয়ে যাওয়া হয়। এ অধ্যায়টিও দেখে নিতে পারেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে যদি এর চেয়েও বেশি সময় প্রয়োজন হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার দুর্বলতা অনেক। বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকে আপনার প্রস্তুতি নেই। সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা আপনার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মতিউর রহমানই প্রথম আলো বিক্রির প্রধান বাঁধা?


Thumbnail

দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

শুধু কর্ণফুলী গ্রুপই নয়, প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করতে স্কয়ার গ্রুপের সাথেও বেশ অগ্রসর হয়েছিলেন মতিউর রহমান। এর মধ্যে বসুন্ধারাসহ আরও কয়েকটি গ্রুপ এতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু আমার জানা মতে সর্বশেষ এস আলম গ্রুপ এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য বেশ অগ্রসর হয়েছে এবং তারাই এখন সবচেয়ে অগ্রগামী। কিন্তু এস আলম গ্রুপ কেনার জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। কারণ উনি দেখছেন যে, একমাত্র কর্ণফুলী ছাড়া অন্য যে কোন গ্রুপে গেলে তার সম্পাদক পদের নিশ্চয়তা নেই।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, যারাই ‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি ক্রয় করুক না কেন, তারা মতিউর রহমানকে প্রথম দিকে রাখলেও পরবর্তীতে তারা পরিবর্তন করবে। যদি প্রথম আলোতে কেউ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন, আমার ধারণা আনিসুল হক আসতে পারেন। কারণ আনিসুল হক সবার কাছে যেমন সম্মানিত তেমনি জ্ঞানী ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি যদি এস আলম গ্রুপ কিনে নেয় তাহলে প্রধান বাঁধা হবে মতিউর রহমান। কিন্তু তার বাঁধা টিকবে না। কারণ কোন প্রতিষ্ঠানের যদি ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানটি কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ‘প্রথম আলো’ নিজেদের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের ফলে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে চরম দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। সাধারণত যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে তারা দেখবে। সরাসরি না হলেও প্রথম আলোর মতিউর রহমান এই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গেছেন। যদিও মতিউর রহমান বিভিন্নিভাবে বিষয়টি প্রকাশ করে বুঝাতে চেষ্টা করছেন যে, এতে উনার কোন আগ্রহ নেই। 

তবে এর আগে থেকেই কিছু গণমাধ্যমে এসেছিল যে, মতিউর রহমন ও ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনাম এই দ্বন্দ্বে জড়িত রয়েছেন। যদিও বিষয়টি তাদের মধ্যকার বিষয়। কিন্তু এখন প্রথম আলো বিক্রিতে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন মতিউর রহমান। অচিরেই এই বাঁধা অতিক্রম করে ‘প্রথম আলো’ বিক্রি হবে এবং প্রতিষ্ঠানটি কিনবে এস আলম। কারণ এস আলম একজন বিচক্ষণ ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসাতেই যুক্ত হচ্ছেন ব্যর্থ হচ্ছেন না। বরং সফল হচ্ছেন।

‘প্রথম আলোর’ কেনার জন্য দেশে যেসব কর্পোরেট হাউজগুলো আছে তাদের অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে। তবে এক একজনের আগ্রহ একেক কারণে। কেউ চান প্রথম আলোর জনপ্রিয়তা ও অভিজ্ঞ জনবলের কারণে, আবার কিছু কর্পোরেট হাউজের ইচ্ছে হলো ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্ব একেবারে কমিয়ে আনা। এসব বিভিন্ন কারণে আগ্রহ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

তবে আমার বিশ্বাস প্রথম আলো বিক্রিতে যে প্রধান বাঁধা মতিউর রহমান। তার বাঁধা টিকবে না। অবশেষে প্রতিষ্ঠানটি একটা কর্পোরেট হাউজের হাতেই যাবে। আমার ধারণা মতে, এস আলম গ্রুপই প্রথম আলোকে কিনতে সক্ষম হবে। আমরা হয়ত কয়েক মাসের মধ্যেই দেখব যে, প্রথম আলোর নতুন মালিক হিসেবে আরেকটি কর্পোরেট হাউজ এসে দাঁড়িয়েছে। প্রথম আলোতে বর্তমানে যারা অভিজ্ঞ সাংবাদিক আছেন যারা শিক্ষিত তাদেরকে ইতোমধ্যে অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞ লোকদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। 

আমার ধারণা, এ পর্যায়ে প্রথম আলো বিক্রি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। এমনকি মতিউর রহমানের চেষ্টাও সফল হবে না। তবে আমার সবসময়ের আকাঙ্খা, সংবাদপত্রের সাথে যারা জড়িত তাদের চাকরি যেন অবশ্যই নিশ্চয়তা থাকে। কারণ এরা দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, নিজেদেরকে একটা পর্যায়ে এনেছেন আর এদের চাকরি অবশ্যই থাকতে হবে এবং তাদের যে মেধা, সেই মেধা থেকে জাতি যেন বঞ্চিত না হয়।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

এক বছরের রাষ্ট্রপতির যত অর্জন


Thumbnail

আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।

দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।

আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।

গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে, তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও একই ভাবে থেকেছেন।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।


রাষ্ট্রপতি   মো. সাহাবুদ্দিন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নয়


Thumbnail

প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।

আওয়ামী লীগ যদি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি টিকে থাকতে চায় তাহলে দলকে এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এটা এখন সময়ের দাবি। যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তারা ইনিয়ে বিনিয়ে এখন নানান অজুহাত তৈরি করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের উচিত হবে এ সমস্ত অজুহাত না শোনা। কারণ যিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত পরিপন্থি কাজ করেছেন এটা সুস্পষ্ট। সুতরাং এখানে দল উচিত তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দল করলে তাকে দলীয় শৃঙ্খলা মানতেই হবে। অনথায় দল থেকে বাদ দিতে হবে। যারা দলীয় সিদ্ধান্তের পরিপন্থী কাজ করেন তারা কখনই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এদের মত আট-দশ দলে না থাকলে আওয়ামী লীগের কিছু যায়-আসে না। একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক ছাড়া আর কেউই আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। শেখ হাসিনাই কেবল মাত্র আওয়ামী লীগ এবং দেশের স্বার্থে অপরিহার্য। সুতরাং, এখন আমরা দেখতে চাই শৃঙ্খলা পরিপন্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা অমান্য করেছেন তিনি দলের যত বড় নেতাই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। দরকার হলে দল থেকে তাদেরকে বাদ দিতে হবে কিংবা বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। শুধু বহিষ্কারই নয়, তাদের প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল করতে হবে। এতে করে কারও যদি এমপিত্ব চলে যায় তো যাবে। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে দলের স্বার্থে। তাদের আসনে যে কাউকে নির্বাচন করে জিতে আসতে পারবেন। কোন মন্ত্রী এমপি আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন উপজেলা গুলো প্রার্থী দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দল কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখার জন্য গোটা দেশের মানুষ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে আছে।

অতীতে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কঠোর পদক্ষেপ নেবেন এমনটি আশা আওয়ামী লীগের প্রতিটি তৃণমূল নেতাকর্মীর। এখন আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় আমরা সেটার অপেক্ষা আছি।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনার সমালোচনা করলেও কেউই তার বিকল্প খুঁজে পান না


Thumbnail

দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। 

দার্শনিক শেখ হাসিনা এখন আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। এতদিন তিনি ছিলেন আগে রাষ্ট্রনায়ক পরে এবং দার্শনিক। এখন তিনি আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। কারণ তিনি একের পর এক দর্শনকে যেভাবে স্থায়ী রূপ দিয়ে যাচ্ছেন তাতে এদেশের সকলের মনোবলও বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন মন্ত্রিসভাতেও তিনি দর্শনের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। তিনি পুরনোদের সাথে নতুনদের যুক্ত করে নেতৃত্বের একটি চমৎকার ভারসাম্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। যা আমরা এই ১০০ দিনে বুঝতে পেরেছি এই নতুন মন্ত্রিসভার কাজকর্মে। সেদিক থেকে আমি অনুধাবন করতে পারি যে, এই ১০০ দিনে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এখন পর্যন্ত শতভাগ সফল।

গোটা বিশ্ব এখন যুদ্ধের মধ্যে পড়েছে। করোনার পর থেকে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ গোটা বিশ্ব অর্থনীতিতে টলটলয়মান করে দিয়েছে। এখন আবার নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে। বলা যায় বিশ্বে একটা মিনি বিশ্ব যুদ্ধ চলছে। গাজায় হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এরকম পরিস্থিতিতে দার্শনিক শেখ হাসিনার সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ। তবে আশার কথা যে, এখন পর্যন্ত তিনি সঠিক পথে আছেন এবং সফল ভাবে পুরো পরিস্থিতি মোকাবিলা করে যাচ্ছেন। বিশ্বের অস্থির পরিস্থির কথা অনুধাবন করে তিনি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকম নির্দেশনা দিচ্ছেন। যেমন-বিশ্ব বাজারে নতুন নতুন বাজারের সন্ধান। আমাদের যেন খাদ্য ঘাটতি পড়তে না হয় সেজন্য তিনি আগাম আমাদের সতর্ক করে দিচ্ছেন। পাশাপাশি আমাদের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতেও তিনি জোরালো ভাবে আহ্বান করেছেন। 

একজন জেনারেলকে কীভাবে বিচার করা হয়? তিনি কয়টি ব্যাটল জয় করলেন সেটা দিয়ে কিন্তু নয়। তাকে বিচার করা হয় যখন তিনি একটা ব্যাটলে হেরে যান এবং তার সৈন্যরা যখন পুরো ভেঙে পড়েন ঠিক সে সময় তিনি কীভাবে তার সৈন্যদের উজ্জীবিত করতে পারলেন সেটা বিবেচনায় নেওয়া হয়। দার্শনিক শেখ হাসিনাও সে রকম একজন জেনারেল, যে জেনারেল কঠিন সময়ে সাধারণ জনগণকে সবচেয়ে কম কষ্টে রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও যেন তিনি সফল ভাবে নিয়ে যাবেন সেটা বলাই বাহুল্য। অনেকে তার সমালোচনা করছেন ঠিক কিন্তু কেউ তার বিকল্পের কথা বলতে পারছেন না। তিনি দলকে যেমন ধরে রেখেছেন বা নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঠিক তেমনিভাবে সরকারকেও সঠিক পথে পরিচালনা করছেন। সুতরাং শেখ হাসিনার বিকল্প যে শেখ হাসিনাই এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। নতুন সরকারের প্রথম ১০০ দিনের মত সামনের দিনগুলোতে সাফল্য ধরে রাখবে এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।



মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন