ইনসাইড থট

গণতন্ত্রের রক্ষাকবজ হিসাবে গণমাধ্যম ধারালো হাতিয়ার

প্রকাশ: ০১:০০ পিএম, ২৪ জানুয়ারী, ২০২৩


Thumbnail

"সংবাদপত্র শিল্প আর দশটা সাধারণ শিল্পের মতো নয়, পণ্য তৈরি করিলেই বাজারে বিক্রয় হইয়া যায়; কিন্তু সংবাদপত্রকে জনমতের বাহন হইয়া বাঁচিয়া থাকিতে হয়।"

উক্তিটি সাংবাদিকতার পথিকৃৎ তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার।তিনি লিখেছেন, "দেশে দেশে যুগে যুগে সংবাদপত্রের উপর অসহিষ্ণু শাসকবর্গ হামলা করিয়াছেন এবং শেষ পর্যন্ত সংবাদপত্রই জয়যুক্ত হয়েছে।.. যাঁরা ইতিহাসের অমোঘ শিক্ষা উপেক্ষা করিয়া সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে মধ্যযুগীয় আচরণে লিপ্ত হইয়াছেন, তাহাদের প্রতি আমার অনুকম্পা প্রকাশ করিতে হয়।"

সত্যিই এই পুরুষসিংহ শাসকদের অনুকম্পাই প্রদর্শন করতেন। তা নাহলে যে অর্ডিনান্সের খবরও সংবাদপত্রে ছাপানো নিষিদ্ধ ছিল, সেই তার বিরুদ্ধেই ওই ভাষায় "রাজনৈতিক মঞ্চ" -এর কলাম কি করে লিখতেন?

ফরাসি বিপ্লবোত্তর অরাজকতা লক্ষ্য করে এক মনীষী আক্ষেপ করে লিখেছিলেন, "Liberty, what crimes are being committed in thy name!"- স্বাধীনতা, তোমার নামে কত অপরাধই না অনুষ্ঠিত হচ্ছে! আমাদের বাংলাদেশের স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী পার করেছে।

তবুও চারদিকে অবক্ষয়, সমাজজীবনের এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে অবক্ষয় ভয়াবহ রূপে নেই। পুরানো সব মূল্যবোধ এখন নিশ্চিহ্ন, নতুন কোন মূল্যবোধও দুর্নিরীক্ষ্য- যে মূল্যবোধে স্বাস্থ্য আর শালীনতার লক্ষণ রয়েছে। একধরনের সরকারি উন্নয়নের চাঞ্চল্য সর্বত্র দেখা যায় সত্য কিন্তু তাকে প্রাণচাঞ্চল্য নামে অভিহিত করা যায় না। যেন মরণের আগে হাত-পা ছোঁড়া। কেননা উন্নয়ন হয়নি রাজনীতির, ভবিষ্যত নেতৃত্বের। এই সময়ে বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে মানিক মিয়া থাকলে তিনি যুক্তির খড়াগাঘাতে ছিন্ন ভিন্ন করে দিতে পারতেন মিথ্যাকে।

আবুল মনসুর আহমদের ভাষায়,"আমরা একবার সকলে মিলে জোর করে মানিক মিয়াকে আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটির মেম্বর করেছিলাম। বছর না ঘুরতেই তিনি বললেন, ভেতরের চেয়ে বাইরে থেকেই আওয়ামী লীগের বেশী খেদমত করতে পারবেন। করেছেনও তিনি। আমরণ আওয়ামী লীগের এমন খেদমত যার তুলনা হয় না। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, গোটা জাতি, সারাদেশ, শুধু পূর্ব পাকিস্তান নয়, গোটা পাকিস্তান তাঁর কাছে ঋণী। তাঁর অবদান এতো মূল্যবান ছিল যে, ইচ্ছা করলেই মন্ত্রী বা আওয়ামী লীগের পদাধিকারী হতে পারতেন। কিন্তু সেদিকে তাঁর নজর ছিল না"

তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার মতো আবুল মনসুর আহমদও বেঁচে নেই। বেঁচে আছে তাঁদের কথা। যেখানেই সাংবাদিকতার নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা ক্ষুন্ন, সেখানেই তাঁরা আরও বেশী স্মরণীয়। ঠিক সেরূপ, যেখানে গণতন্ত্রের স্বার্থ বিপন্ন, জনগণের স্বার্থ বিপর্যস্ত, সে বিপদ বিপর্যয় শাসকদের ইচ্ছাতেই হোক আর অনিচ্ছাতেই হোক, তাঁদের অভাব সেখানেই তীব্রভাবে অনুভূত। গণতন্ত্রের রক্ষাকবজ ধারালো হাতিয়ার যে সংবাদপত্র বা গণমাধ্যম, সেই সত্যকে আপাততঃ স্বীকার করে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে সরকার মুক্তি দিয়েছে- এটা আমরা অন্ততঃ ধরে নিতে পারি। গণতন্ত্রই যাঁদের শক্তি-উৎস, তাঁদের হাতে গণতন্ত্র বিপন্ন হবেই বা কেন?

গণতন্ত্রের রক্ষাকবজ ধারালো হাতিয়ার যে সংবাদপত্র, সেই সংবাদপত্রও অতীতে রেজিমেন্টড হয়েছে। বাক-স্বাধীনতা চাটুকারিতায় নিয়োজিত হয়েছে। আমাদের দেশের সমস্যার জনগণের দুর্দশার অন্ত নেই। কিন্তু বেশীরভাগই কৃত্রিম আমাদের নিজ হাতে তৈরী। শাসক-পরিচালকদের ভুল-ভ্রান্তির জন্য এসব ঘটে। আমাদের জাতীয় জীবনের দুটা প্রধান দিক রাজনীতি   সাংবাদিকতা। আজ দেশে-সমাজে, রাজনীতিতে-অর্থনীতিতে, সাহিত্যে- সাংবাদিকতায়, বিদ্যালয়ে-মন্ত্রণালয়ে যা যা ঘটছে, মনে হয় মানিক মিয়ারা বেঁচে থাকলে এসব ঘটতে পারতো না। এই দুটা দিকেই মানিক মিয়া জীবদ্দশায় ছিলেন অনন্য অতুলনীয়। মৃত্যুর পরেও তাঁর স্থলবর্তী জন্মেনি। সাংবাদিকতায় ছিলেন মিশনারি আর রাজনীতিতে স্টেটসম্যান। এটাই ছিল তাঁর প্রভাবের গূঢ়তত্ত্ব।

শহীদ সোহরাওয়ার্দীর কাছ থেকেই বঙ্গবন্ধু আর মানিক মিয়ারা আত্মস্থ করেছিলেন দেশপ্রেম, রাজনৈতিক আদর্শবাদ, দুর্জয় সাহস, অমিত তেজ, বেপরোয়া ত্যাগ, স্বচ্ছ চিন্তা, সবল যুক্তি, কুশল-প্রকাশভঙ্গী এবং গণতান্ত্রিক সহিষ্ণুতা -সবই। তাঁদের মতো সামরিক স্বৈরাচারের সামনে উন্নত মস্তকে দাঁড়িয়ে জনগণের অধিকারের কথা বলতে বুকের পাটা খুব কম লোকই দেখিয়েছেন।

"আমাদের বাঁচার দাবি" ছয়-দফার সমর্থনে ১৯৬৬ সালের জুনের বিপ্লবে মানিক মিয়া তাঁর ইত্তেফাকের মতো সার্বিক ত্যাগ স্বীকার খুব কম নেতা সংবাদপত্রকেই করতে হয়েছে। মানিক মিয়া ইত্তেফাকের ওপর আইয়ুব খানের জুলুমের নজির দুনিয়ার দ্বিতীয়টি নেই। আবুল মনসুর আহমদের ভাষায় "বস্তুত জনগণের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সাংবাদিকদের ত্যাগ ব্যাপকতায়, সামগ্রিকতায় মহিমা-মর্যাদা অপরিসীম। আমরা যাঁরা সমানে জেল-জুলুম সয়েছি, তাঁরা শুধু শারীরিক মানসিক নির্যাতনে ভুগেছি। মানিক মিয়ার মতো সম্পত্তি ধ্বংস -বাজেয়াপ্ত হয়নি আমাদের আর কারো। এতসব করেও ডিক্টেটররা মানিক মিয়াকে আদর্শচ্যুত করতে পারেনি।

যে গণ-দাবির সমর্থন করার অপরাধে ইত্তেফাক শাসকদের শ্যেনদৃষ্টির শিকার হয়েছিল, মাত্র তিন বছরেরই ছাত্রজনতার সংগ্রামের সামনে আইয়ুব শাহীর পরাজয় ঘটে। ষড়যন্ত্রমূলক কুখ্যাত আগরতলা মামলারও অবসান ঘটে। যা ছিল জঙ্গি ডিক্টেটর আইয়ুবের কুখ্যাত "সিভিল ওয়ার" আর্গুমেন্ট অব ওয়েপনের" দর্প দম্ভের প্রথম নমুনা। রাজনীতিবিদ আবুল মনসুর আহমেদ তাই লিখেছেন, "জালিমশাহীর নমরুদী আক্রোশে যে বঙ্গবন্ধুকে পুড়িয়ে মারার উদ্দেশ্যে নির্যাতনের অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করেছিল সে আগুনের লক্-লকা জিভ উৎকীর্ণ স্ফুলিঙ্গ ইব্রাহিম নবীর কুসুমস্তবকের সুষমা সৌরভ নিয়ে 'ইত্তেফাকের' ফুলাসন পুষ্পমাল্যে রূপান্তরিত হয়েছিল। বাংলাদেশে সাংবাদিকদের গণমাধ্যমের স্বাধীনতার শক্তিধর ডিফেন্ডার হতে হলে পূর্বসূরি মানিক মিয়াদের জীবনাদর্শ থেকে শিক্ষা গ্রহণের বিকল্প নেই। গণতন্ত্রই মানবাধিকারের সর্বশ্রেষ্ঠ রক্ষাকবজ। সীমাহীন শক্তির অধিকার মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সেদেশের সংবাদপত্রগুলো কিভাবে লড়াই করে গণতন্ত্রের মর্যাদা রক্ষা করছেন, এটা দেখে আমাদের সাংবাদিকদের সঙ্কল্পবদ্ধ হতে হবে।

রাষ্ট্র সংবাদমাধ্যম উভয়ের সমন্বয়ের প্রয়োজন, উভয়কে হাত ধরাধরি করে চলতে হয়। যদি না চলে, অথবা উভয়ের গতি হয় অবক্ষয়ের দিকে, তা হলে তা রোধ করার পথ নির্দেশের দায়িত্ব কার? নিঃসন্দেহে সাহিত্য আর  শিল্পের ভুমিকা দীর্ঘমেয়াদি, তার আবেদন ধীরসঞ্চারী, তার ফল দেখা দেয় দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর। তাৎক্ষণিকের প্রয়োজন মিটাতে সংবাদমাধ্যম অদ্বিতীয়। সমাজের প্রতিদিনের চেহারাটা সংবাদপত্রেই প্রতিফলিত হয়। প্রায় দর্পণের কাজ করে - চেহারার কালো দাগটা সহজেই নজর কাড়ে, তখন তা মুছে ফেলার জন্য হাতটা ঊর্ধ্বাভিসারী না হয়ে পারে না। প্রায় জৈব তাড়নার মতো কাজ করে। জাতীয় জীবনে গণমাধ্যমের ভুমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্রতিভাবান, সুযোগ্য, দক্ষ কুশলী সাংবাদিকের অভাব নেই। অভাব সাহসী নির্ভীক সাংবাদিকের। যারা সমাজ রাষ্ট্র উভয়কে বিচার করতে আর পথ দেখাতে সক্ষম। সমাজ, রাষ্ট্র আর বৃহত্তর জনগণের স্বার্থ যেখানে জড়িত- তা এমন বৃহৎ মহৎ বস্তু যে, তার জন্য নিবেদিত সাংবাদিকরা যে কোন নির্যাতনের মোকাবিলা করতে ভীত হতে পারেন না। স্বাধীনতার আগে যে ধরণের নির্যাতনের সম্মুখীন সাংবাদিকরা হতেন, সেরকম পরিস্থিতি অবসান ঘটেছে। তবে ধরন-ধারণ পরিবর্তন ঘটলেও অন্যরূপ, অন্য আকার নির্যাতন যে চলবে না বা এখনো চলছে না সে কথা বলা যায় না। সরকার যারা চালান তারাও দোষে-গুণে মানুষ, তাঁরাও যে মাঝেমধ্যে অসহিষ্ণু হয়ে পড়ছেন না বা ভ্রান্ত নীতির অনুসরণ করেন না তা নয়। সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে ফাঁসাতে সরকারকে কিভাবে আমলাতন্ত্র অসহিষ্ণু পথ বাতলে দিচ্ছিল, তা আমরা প্রত্যক্ষ করলাম। দেশপ্রেমিক সাংবাদিকদের বিপদের ঝুঁকি নিয়ে হলেও সে সবের প্রতিবাদ জানাতে হবে, সরকারের ভুল-ভ্রান্তিকেও দেখিয়ে দিতে হবে আঙ্গুল দিয়ে। এবং রোজিনা ইসলাম ইস্যুতে সাংবাদিকরা তাই করেছে। আশার কথা হচ্ছে, আমরা সাংবাদিকরা রাজনৈতিকায়ণের আওতাধীন আদর্শগত বৈপরীত্যের বেড়াজালে বিভক্ত হলেও সাম্প্রতিক সাংবাদিকদের ঐকমত্যে একটা আশার রেখাপাত দেখতে পাচ্ছি। জাতীয় প্রেসক্লাব, বিএফইউজে, ডিইউজে এবং ডিআরইউ নেতৃত্বের ফলশ্রুতিতে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মুক্তিকে যে তরান্বিত করেছে - তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বিপদের ঝুঁকি নিয়েই এসবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হয়েছে।  না করা হলে শুধু যে সাংবাদিক হিসাবে কর্তব্যচ্যুতি ঘটে তা নয়, পেশার প্রতিও করা হয় বিশ্বাসঘাতকতা। দেশের মানুষকে সর্বপ্রকারে সচেতন রাখা আর সচেতন করে তোলাই সংবাদমাধ্যমের এক বড় দায়িত্ব। দায়িত্বপালন রাজনীতিবিদদের দ্বারা হওয়ার নয়। কারণ তাঁরা সবসময় সবকিছুই দলীয় চশমা দিয়ে দেখেন। তাই তাঁদের পক্ষে পুরোপুরি নিরপেক্ষ হওয়া বা যথাযথভাবে সবকিছু দেখা এবং তার মূল্যায়ন করা সম্ভব হয় না। পঞ্চাশ ষাটের দশকের ঘটনাবলী সাধারণভাবে একটি প্রগতিপ্রবণ নির্দিষ্ট দিগন্তমুখী থাকার কারণে এবং মুক্তিসংগ্রামের ভাবাদর্শগত বস্তুগত উপাদানগুলো অনিবার্যভাবে স্বাধীন সত্তার দিকে বিন্যস্ত হওয়ার ফলেই বাংলাদেশের সৃষ্টি হয়েছে। দ্বন্দ্বাত্মক বস্তু গতিধারার মাঝে মাঝে বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে বিপ্লবাত্মক উপাদানের মধ্যেই। জট পাকিয়ে দিয়েছে সংগ্রামী ব্যুহ রচনার ক্ষেত্রে। সাময়িক প্রেক্ষিত নিয়েই এসেছে অভিঘাতের তাগিদ। পাকিস্তানি সামরিক শাসকচক্র ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে জুজু তৈরি করে তা সংক্রমিত হয়েছিল দেশের মানুষের মনেও। নিষেধের বেড়াজাল ছিল চারদিকে। মাঝে মাঝে এই ভয় আর বেড়াজাল ভাঙার জন্য দরকার পড়তো নির্ভীক মানুষের। একজন সাংবাদিকের অবদান তুচ্ছ নয়। তিনি দার্শনিক নন, সমাজকে নতুন দর্শন দান করেন না বটে, কিন্তু চলতি সামাজিক রাজনৈতিক জীবনের যা কিছু ক্লেদ, যা কিছু অনভিপ্রেত আবর্জনা, সেগুলো রাত্রির আঁধার হতে দিবালোকে তুলে ধরেন। চলতি সমাজকে তিনি আঁধার ছেড়ে আলোর দিকে যেতে অনুপ্রাণিত করেন। আঁধারের দিকটা দেখিয়ে দেয়া মানে আলোর প্রতি আকৃষ্ট করা। এটাকেই বলে সমাজ চেতনা।

বাংলাদেশের পরিস্থিতি লক্ষ্য করে সেই মনীষীর উক্তির সঙ্গে সঙ্গে আমার মানসপটে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার প্রতিচ্ছবি ভেসে ওঠে। দুঃসাহসিক সত্য ভাষণে তাঁর অবদান আজও অনতিক্রম্য রয়ে গেছে। তাঁর সাংবাদিকতা অপক্ষপাত ছিল তা বলবো না, তবে নিজের আদর্শ আর বিশ্বাসে তিনি ছিলেন অনঢ়। বিপদের বহু ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও দোর্দণ্ডপ্রতাপ সরকারের কাছেও কোনদিন নত করেননি মাথা। বিপদের মুখে তাঁর কলম যেন আরও ক্ষুরধার হয়ে উঠতো। হয়ে উঠতেন অধিকতর দুঃসাহসী। আমাদের সাংবাদিকতার বর্তমান চেহারা দেখলে প্রশ্নে জাগে আমরা সাংবাদিকরা সাংবাদিকতার অতীত ঐতিহ্য অনুসরণ করছি কিনা? আমাদের গণমাধ্যমগুলো 'জলো' হয়ে যাচ্ছে। আমাদের সমাজ রাষ্ট্র কি এখন সব সমালোচনার উর্ধ্বে পৌঁছে গেছে? নিশ্চয়ই না। আমরা সমালোচনা করবো গঠণমূলক সমালোচনা। করবো নিজেদেরও আত্মসমালোচনা।

লেখকঃ সিনিয়র সাংবাদিক কলামিস্ট।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

এক বছরের রাষ্ট্রপতির যত অর্জন


Thumbnail

আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।

দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।

আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।

গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে, তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও একই ভাবে থেকেছেন।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।


রাষ্ট্রপতি   মো. সাহাবুদ্দিন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নয়


Thumbnail

প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।

আওয়ামী লীগ যদি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি টিকে থাকতে চায় তাহলে দলকে এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এটা এখন সময়ের দাবি। যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তারা ইনিয়ে বিনিয়ে এখন নানান অজুহাত তৈরি করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের উচিত হবে এ সমস্ত অজুহাত না শোনা। কারণ যিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত পরিপন্থি কাজ করেছেন এটা সুস্পষ্ট। সুতরাং এখানে দল উচিত তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দল করলে তাকে দলীয় শৃঙ্খলা মানতেই হবে। অনথায় দল থেকে বাদ দিতে হবে। যারা দলীয় সিদ্ধান্তের পরিপন্থী কাজ করেন তারা কখনই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এদের মত আট-দশ দলে না থাকলে আওয়ামী লীগের কিছু যায়-আসে না। একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক ছাড়া আর কেউই আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। শেখ হাসিনাই কেবল মাত্র আওয়ামী লীগ এবং দেশের স্বার্থে অপরিহার্য। সুতরাং, এখন আমরা দেখতে চাই শৃঙ্খলা পরিপন্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা অমান্য করেছেন তিনি দলের যত বড় নেতাই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। দরকার হলে দল থেকে তাদেরকে বাদ দিতে হবে কিংবা বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। শুধু বহিষ্কারই নয়, তাদের প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল করতে হবে। এতে করে কারও যদি এমপিত্ব চলে যায় তো যাবে। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে দলের স্বার্থে। তাদের আসনে যে কাউকে নির্বাচন করে জিতে আসতে পারবেন। কোন মন্ত্রী এমপি আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন উপজেলা গুলো প্রার্থী দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দল কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখার জন্য গোটা দেশের মানুষ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে আছে।

অতীতে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কঠোর পদক্ষেপ নেবেন এমনটি আশা আওয়ামী লীগের প্রতিটি তৃণমূল নেতাকর্মীর। এখন আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় আমরা সেটার অপেক্ষা আছি।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনার সমালোচনা করলেও কেউই তার বিকল্প খুঁজে পান না


Thumbnail

দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। 

দার্শনিক শেখ হাসিনা এখন আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। এতদিন তিনি ছিলেন আগে রাষ্ট্রনায়ক পরে এবং দার্শনিক। এখন তিনি আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। কারণ তিনি একের পর এক দর্শনকে যেভাবে স্থায়ী রূপ দিয়ে যাচ্ছেন তাতে এদেশের সকলের মনোবলও বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন মন্ত্রিসভাতেও তিনি দর্শনের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। তিনি পুরনোদের সাথে নতুনদের যুক্ত করে নেতৃত্বের একটি চমৎকার ভারসাম্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। যা আমরা এই ১০০ দিনে বুঝতে পেরেছি এই নতুন মন্ত্রিসভার কাজকর্মে। সেদিক থেকে আমি অনুধাবন করতে পারি যে, এই ১০০ দিনে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এখন পর্যন্ত শতভাগ সফল।

গোটা বিশ্ব এখন যুদ্ধের মধ্যে পড়েছে। করোনার পর থেকে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ গোটা বিশ্ব অর্থনীতিতে টলটলয়মান করে দিয়েছে। এখন আবার নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে। বলা যায় বিশ্বে একটা মিনি বিশ্ব যুদ্ধ চলছে। গাজায় হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এরকম পরিস্থিতিতে দার্শনিক শেখ হাসিনার সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ। তবে আশার কথা যে, এখন পর্যন্ত তিনি সঠিক পথে আছেন এবং সফল ভাবে পুরো পরিস্থিতি মোকাবিলা করে যাচ্ছেন। বিশ্বের অস্থির পরিস্থির কথা অনুধাবন করে তিনি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকম নির্দেশনা দিচ্ছেন। যেমন-বিশ্ব বাজারে নতুন নতুন বাজারের সন্ধান। আমাদের যেন খাদ্য ঘাটতি পড়তে না হয় সেজন্য তিনি আগাম আমাদের সতর্ক করে দিচ্ছেন। পাশাপাশি আমাদের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতেও তিনি জোরালো ভাবে আহ্বান করেছেন। 

একজন জেনারেলকে কীভাবে বিচার করা হয়? তিনি কয়টি ব্যাটল জয় করলেন সেটা দিয়ে কিন্তু নয়। তাকে বিচার করা হয় যখন তিনি একটা ব্যাটলে হেরে যান এবং তার সৈন্যরা যখন পুরো ভেঙে পড়েন ঠিক সে সময় তিনি কীভাবে তার সৈন্যদের উজ্জীবিত করতে পারলেন সেটা বিবেচনায় নেওয়া হয়। দার্শনিক শেখ হাসিনাও সে রকম একজন জেনারেল, যে জেনারেল কঠিন সময়ে সাধারণ জনগণকে সবচেয়ে কম কষ্টে রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও যেন তিনি সফল ভাবে নিয়ে যাবেন সেটা বলাই বাহুল্য। অনেকে তার সমালোচনা করছেন ঠিক কিন্তু কেউ তার বিকল্পের কথা বলতে পারছেন না। তিনি দলকে যেমন ধরে রেখেছেন বা নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঠিক তেমনিভাবে সরকারকেও সঠিক পথে পরিচালনা করছেন। সুতরাং শেখ হাসিনার বিকল্প যে শেখ হাসিনাই এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। নতুন সরকারের প্রথম ১০০ দিনের মত সামনের দিনগুলোতে সাফল্য ধরে রাখবে এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

কতিপয় সাংবাদিক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাধর


Thumbnail

বারো বছর আগের কথা। ডেভিড ক্যামেরুন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদিন তিনি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লেন। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর সাথে ছবি তুলতে গেলেন। বাঁধ সাধলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক। জীবাণু প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি ওই কাজটি করছিলেন। ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন সাথে সাথে। ক্ষমা চাইলেন এবং ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন।

ভিন্ন চিত্র দেখলাম শনিবার সকালে বরিশাল সদর হাসপাতালে। দায়িত্বরত চিকিৎসক ওয়ার্ডে রাউন্ড দিতে যেয়ে দেখেন দুজন টিভি সাংবাদিক ওয়ার্ডে ভিডিও করছেন। ভিডিও শেষ হবার পর চিকিৎসক তাঁর রাউন্ড শুরু করলেন। রাউন্ড শুরু করতেই দুজন সাংবাদিক আবার ক্যামেরা ধরে চিকিৎসকের সাথে কথা বলা শুরু করলেন। চিকিৎসক তাদের পরিচয় জানতে চাইলেন। বিনয়ের সাথে নিচু স্বরে একে একে ২০ বার (গুনে নিশ্চিত হয়েই বলছি) সাংবাদিকের নাম জিজ্ঞেস করলেন, পরিচয় জানতে চাইলেন। উক্ত সাংবাদিক নাম বলেননি, পরিচয় দেননি। বরং উচ্চস্বরে উল্টা পাল্টা কথা বলেছেন, পাল্টা প্রশ্ন করেছেন। অবশেষে কর্তব্যরত চিকিৎসক উর্ধতন কাউকে ফোন দেয়ার পর সাংবাদিক সাহেব তার নাম বলেছেন। এখানে দুটি প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।  প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, সাংবাদিক দুজন কি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাধর হয়ে গেছেন ? দ্বিতীয় প্রশ্ন, সাংবাদিক দুজনকে কেন নাম বলতে হবে ? নাম, পদবি, পরিচয় থাকবে তাদের বুকে বা কোমরে প্রদর্শিত আই ডি কার্ডে। এখন দেখার বিষয়,  প্রদর্শিত স্থানে আই ডি ছিল কিনা ? না থাকলে থাকবে না কেন?

সাংবাদিক ও চিকিৎসকবৃন্দ ঘটনার ভিডিও চিত্র সমূহ পৃথকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিয়েছেন। সব গুলো ভিডিও কয়েকবার দেখেছি, পর্যালোচনা করেছি। দায়িত্বরত চিকিৎসক কখনোই উচ্চস্বরে কথা বলেননি। তিনি যথেষ্ট ধৈর্য্য, বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। পক্ষান্তরে সাংবাদিক দুজন বারবার উচ্চস্বরে কথা বলেছেন। তাদের কথা বলার ধরণ দেখে মনে হয়েছে, এটি একটি মগের মুল্লুক। কর্তব্যরত চিকিৎসক ওয়ার্ড রাউন্ড শুরু করার আগে প্রতি রোগীর সাথে একজন এটেন্ডেন্ট ব্যাতিরেকে সবাইকে বের হবার কথা বলেছেন। সবাই বেরিয়ে না গেলে তিনি চিকিৎসা শুরু করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। সেটাই নিয়ম।  সারা দুনিয়ায় সেটাই হয়ে থাকে। সাংবাদিকদ্বয় সেটি শুনতে নারাজ। এখানে তারা স্পষ্টতই সরকারি কাজে বাধা সৃষ্টি করেছেন, যা আইনত দণ্ডনীয়।  

দিন শেষে বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দেখলাম সাংবাদিকদের হেনস্থা করেছে ডাক্তার। অথচ ভিডিও গুলি পর্যালোচনা করলে যে কেউ বলবেন, ডাক্তারকে হেনস্থা করেছে সাংবাদিকরা। আসলেই মগের মুল্লুক। ঘটনা কি ? আর সংবাদ শিরোনাম কি? এসব মগের মুল্লুকের রাজত্ব  থেকে জাতিকে পরিত্রান দেয়া প্রয়োজন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিএমএ, এফডিএসএর, বিডিএফ ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ সমন্বয়ে একটি কমিটি করে দেয়া দরকার। কমিটি হাসপাতালে সাংবাদিক প্রবেশে ও তাদের দায়িত্ব নির্ধারণে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করবে। সে নীতিমালায় যাতে স্বাস্থ্য কর্মীদের কাজে বাধা প্রদান না করা হয়, রোগীর অনুমতি ব্যাতিরেকে তাদের ছবি, ভিডিও বা রোগ সংক্রান্ত কোন তথ্য প্রকাশ বা প্রচার না করা হয়, সেসব বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা প্রয়োজন। তা না হলে হাসপাতাল সমূহে এ ধরণের অরাজকতা হতেই থাকবে, বাড়তেই থাকবে।  

লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

প্রথম আলোর পর কী ডেইলি স্টারও বিক্রি হবে?


Thumbnail

এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন।

প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে অনেকেরই  ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী লোক।

এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।

তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।

এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।

আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম। সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায় যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।

ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।

তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।

তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।


প্রথম আলো   ডেইলি স্টার  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন