নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ১৫ অগাস্ট, ২০১৮
বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিবর্তনের ইতিহাস খুব আগ্রহ জাগানিয়া। এই ইতিহাসে হতাশার অন্ধকার আছে, আবার আছে আশার আলো। এই বিবর্তনের অন্ধকার অধ্যায়টির সূচনা হয় যখন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের স্বাধীনতার অবিসংবাদিত নায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়। ওই হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুর নাম নিষিদ্ধ হয়ে যায়। একমাত্র আওয়ামী লীগ ছাড়া শেখ মুজিবকে কেউ বঙ্গবন্ধু বলতো না, জাতির পিতা তো দূরের কথা। সামরিক সরকারের শাসনামলে জয় বাংলা উচ্চারণ করা পর্যন্ত নিষিদ্ধ ছিল। আওয়ামী লীগের বাইরে একমাত্র বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিডি) ছাড়া কেউই বঙ্গবন্ধুর অবদান স্বীকার করতো না। এমনকি আজকের অনেক মন্ত্রী-এমপি, আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরাও সে সময় বঙ্গবন্ধুর কঠোর সমালোচনা করতো। এক অদ্ভুত দমবন্ধ করা পরিবেশ ছিল তখন জনপদে। বাংলাদেশ থেকে বঙ্গবন্ধুর নামটি মুছে দেওয়ার চেষ্টা চলছিল সর্বাত্মক ভাবে।
সেই অদ্ভুত সময়ে ১৫ আগস্ট স্মরণ করা হতো গোপনে। ১৫ আগস্ট উপলক্ষে আলোচনা সভা হতো এমন কোনো জায়গায় যা দেখলে মনে হবে যেন খুব সচেতনভাবে সবার চোখ এড়িয়ে তা করা হচ্ছে।
এরপর নানা পটপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মাটিতে ’৯০ এর দশকে গণতন্ত্রের চর্চা শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ দুই দশক পর ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসলো স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। ধীরে ধীরে বাঙালির মন থেকে, বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুকে ভুলিয়ে দেওয়ার সকল চেষ্টার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামে আওয়ামী লীগ। ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করতে শুরু করে দলটি। বঙ্গবন্ধু, জাতির পিতা শব্দগুলো আবার সসম্মানের উচ্চারিত হতে শুরু করে।
এই সময়টাতে দেখা গেল ’৭৫ এর পর যারা বঙ্গবন্ধুকে স্বীকার করতো না তাঁরাও ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশে ১৫ আগস্টের জাতীয় শোক দিবস পালন করা শুরু করল। এই চর্চা এখনো চলমান আছে। এমনকি জাপা সভাপতি ও সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের মতো লোকেরা, যারা ১৫ আগস্টের ঘটনার মূল সুবিধাভোগীদের মধ্যে অন্যতম, তাঁরাও এখন যথাযথ মর্যাদায় শোক দিবস পালন করে। এই এরশাদকে সেনাপ্রধান বানিয়েছিলেন মেজর জিয়া, এরশাদ নিজেও রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিভিন্ন চাকরিতে বহাল রেখেছিলেন। কিন্তু কালের পরিক্রমায় দেখা যাচ্ছে, এরশাদই এখন জাতীয় শোক দিবস পালন করেন।
’৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর বঙ্গবন্ধুকে বলা হতো দেশদ্রোহী, বিশ্বাসঘাতক, গাদ্দার। অর্থ্যাৎ যত রকম আপত্তিকর কথা একজন মানুষ সম্পর্কে বলা যায় তাঁর সবই বলা হতো বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর অতীতে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ, পরে মোশতাক সরকারের মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানরা যখন সংসদে যান তখন হৈচৈ করে শোক প্রস্তাব বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ মিত্র জাসদ সে সময় এসব ঘটনায় কোনো প্রতিবাদই করেনি। অথচ এখন সারাদেশে শোক দিবস পালন করা হয়। মোটামুটি সব রাজনৈতিক দলই তা পালন করে। আর এর সম্পূর্ণ কৃতিত্ব শেখ হাসিনারই।
বর্তমান বাংলাদেশে শোক দিবস পালন করে না শুধু বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। অথচ একটা সময় ছিল যখন আওয়ামী লীগ ও কমিউনিস্ট পার্টি ছাড়া কেউই শোক দিবস পালন করতো না। অর্থ্যাৎ বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে আমূল পরিবর্তন এসেছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের ব্যাটন স্বাধীনতা বিরোধীদের হাত থেকে চলে এসেছে স্বাধীনতা স্বপক্ষের শক্তির হাতে। আর বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির এই পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে শেখ হাসিনার হাত ধরেই। রাজনৈতিক এই উত্তরণের নায়ক শেখ হাসিনাই।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে সত্যি কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে অবক্ষয় শুরু হয়। শুধু রাজনীতিই নয়, রাষ্ট্রের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই অবক্ষয়ের সূচনা হয় জাতির পিতার মৃত্যুর পর থেকে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাই এই অবক্ষয় থেকে বাংলাদেশকে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। প্রতিহিংসার রাজনীতি দূরে সরিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতির চর্চা শুরু করেন শেখ হাসিনাই।
রাষ্ট্র নায়ক শেখ হাসিনার হাত ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে যে ইতিবাচক পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে, শোক দিবস পালনের পরিবর্তিত সংস্কৃতির দিকে তাকালেই সেটি উপলব্ধি করা যায়। জাতির পিতার মৃত্যুতে শোক জানানোর যে সভ্যতা, তা পালনের মধ্য দিয়েই একটি সভ্য, উন্নত জাতিরাষ্ট্র হওয়ার পথে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার বিষয়টি আমাদের সামনে প্রতীয়মান হয়।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি
মন্তব্য করুন
জামায়াত বিএনপি উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
বিএনপি তারেক জিয়া উপজেলা নির্বাচন রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন বিএনপি তারেক জিয়া বহিষ্কার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
জামায়াতে ইসলামও কী বিএনপিকে ধোঁকা দিল? বিএনপির সঙ্গে সুর মিলিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী ফ্যাসিস্ট এই রাজনৈতিক দলটি ঘোষণা করেছে যে, তারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। নিবন্ধনহীন রাজনৈতিক দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা না দিলেও প্রথম পর্বে যে সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র দাখিল শেষ হয়েছে সেখানে জামায়াতের ২৩ জন সদস্যের নামের তালিকা পাওয়া যাচ্ছে।
বিএনপিতে তোলপাড় চলছে। বাইরে থেকে কেউ বুঝতে পারছেন না বিএনপিতে কী ঘটছে। কিন্তু দলের ভিতর যারা রয়েছেন তারা বলছেন, দলের ভিতরে এক প্রকার দম বন্ধ এবং শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা বিরাজ করছে। একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে প্রশ্ন উঠেছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ হচ্ছে। দলের ভিতর বিভক্তি, অনৈক্য হতাশা এখন প্রকাশ্য।
আওয়ামী লীগে উত্তরাধিকারের রাজনীতি নতুন নয়। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা এবং মন্ত্রীরা উত্তরাধিকার সূত্রেই রাজনীতিতে এসেছেন। বর্তমান মন্ত্রিসভায় একাধিক সদস্য রয়েছেন যারা রাজনীতিতে এসেছেন পারিবারিক ঐতিহ্য থেকে, পিতার হাত ধরে, অথবা তাদের নিকট আত্মীয়দের উৎসাহ উদ্দীপনায়। বর্তমান মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য আছেন, যাদের বাবারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন সেই সূত্রে তারা রাজনীতিবিদ।
আওয়ামী লীগ দলগতভাবে উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট এবং কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন উপজেলায় মন্ত্রী, এমপি বা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ভাই ব্রাদার বা স্বজনদেরকে প্রার্থী করা যাবে না। যারা ইতিমধ্যে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।