নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ২৭ এপ্রিল, ২০১৮
বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক জিয়ার নেতৃত্ব এবং নির্বাচন- এই তিন ইস্যুতে বিএনপির মতবিরোধ এখন প্রকাশ্য। কিন্তু এই বিরোধিতার কারণে দল থেকে বেরিয়ে, আলাদা অবস্থান নেওয়ার ঝুঁকি নিচ্ছে না কেউই। দল ভাঙার নেতৃত্ব দিতে ভয় পাচ্ছেন সব নেতাই। প্রশ্ন উঠেছে, বিড়ালের গলায় ঘণ্টা পরাবে কে?
বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রশ্নে বিএনপিতে মতবিরোধ তুঙ্গে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের চেয়ারপারসনের মুক্তির জন্য এখনই বড় আন্দোলনের ঝুঁকি নিতে চান না। মূলত: তাঁর কারণেই বিএনপি বেগম জিয়ার মুক্তির দাবিতে কোনো বড় কর্মসূচি নিচ্ছে না। লোক দেখানো এবং গা বাঁচানো কর্মসূচি নিচ্ছে। কিন্তু বিএনপিতে মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খানের মতো নেতারা বড় আন্দোলনে যেতে চান। তাঁরা মনে করেন, বেগম জিয়াকে গ্রেপ্তার করার পরও যদি বিএনপি চুপচাপ বসে থাকে, তাহলে দলের অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। সরকার যা খুশি করবে। কিন্তু, এই ভিন্নমতের কারণে যে, তারা মির্জা ফখরুলকে দল থেকে বের করে দেবেন, তেমন অবস্থা তাঁদের দলে নেই। ফলে তাঁদের মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বই এখন পর্যন্ত মেনে নিতে হচ্ছে। মির্জা আব্বাসরাও দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে আলাদা অবস্থান নিতে পারছে না।
তারেক জিয়ার নেতৃত্বে প্রশ্নেও বিএনপির বিভক্তি গোপন বিষয় নয়। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ দলীয় ফোরামে বেশ জোরেশোরেই এই মুহূর্তে দলীয় পদ থেকে তারেক জিয়ার সরে যাওয়ার দাবি করেছেন। কিন্তু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, রুহুল কবির রিজভীদের প্রবল আপত্তিতে মওদুদ আহমেদের দাবি প্রতিষ্ঠা পায়নি। তারেক প্রশ্নে যে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ দল ছাড়বেন, সেই পরিস্থিতি নেই। এমনিতেই দলে তাঁকে কেই বিশ্বাস করে না, তাঁর উপর এই মুহূর্তে পৃথক অবস্থান নিলে, মওদুদের পক্ষে লোক পাওয়া যাবে খুবই কম।
নির্বাচন নিয়ে বিএনপিতে চলছে আসল বিরোধ। প্রকাশ্যে যদিও প্রকাশ্যে যদিও দলের নেতারা বলছেন, বেগম জিয়াকে ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবে না। কিন্তু গোপনে প্রায় সব নেতাই ‘যেকোনো মূল্যে’ আগামী নির্বাচনে যাবার পক্ষে। দলের সিনিয়র নেতারা নির্বাচনের পক্ষে থাকলেও তরুণরা নির্বাচন প্রশ্নে কঠোর অবস্থানে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন, নির্বাচনে সময় যত এগিয়ে আসবে ততই বিএনপির ভাঙন ত্বরান্বিত হবে। কারণ, তখন একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের বাস্তবতা সামনে চলে আসবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপির বড় একটি অংশ বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে এবং পরামর্শকে উপেক্ষা করবেন। আর এই অংশে নেতৃত্ব দেবেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তবে, এ ব্যাপারে ভিন্নমতও আছে। অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মনে করেন, অতীতে যারা দল ভেঙ্গে পৃথক অবস্থান নিয়েছে, তাঁদের পরিণতি ভালো হয়নি। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি দুই দলের মূলধারা হলো শেখ হাসিনা এবং বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব। অতীত আওয়ামী লীগ থেকে আবদুর রাজ্জাক বেরিয়ে বাকশাল করেন, ড. কামাল করেন গণফোরাম। কিন্তু এরা সবাই ব্যর্থ হয়েছেন। বিএনপি থেকেও কে এম ওবায়দুর রহমান বেরিয়ে হারিয়ে যান। অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারা রাজনীতিতে কোনো বিকল্প পথ দেখতে পারেনি। তাই দল ভাঙার ঝুঁকি নিতে কেউই সাহস পায় না। তাছাড়া দলত্যাগীদের সামাজিক ভাবেও পছন্দ করা হয় না। সেজন্যই মত বিরোধের পরও দল ভাঙ্গার অনিশ্চয়তা রয়েই যায়। বিএনপিও তাই শেষ পর্যন্ত ভাঙ্গবে কিনা সে ব্যাপারে রয়েছে অনেক ‘যদি’ এবং কিন্তু।
Read in English- https://bit.ly/2HApONO
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।
দলীয় সিদ্ধান্ত মানেননি তৃণমূল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনার পরও নির্বাচনি মাঠ থেকে সরেননি স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। সোমবার প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনেও তারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। উল্টো নানা যুক্তি দেখিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের ভিতরও এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বিশেষ করে দলের দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের ভূমিকা নিয়েও কেন্দ্রের মধ্যে অস্বস্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কঠোর নির্দেশ দেয়ার পরও কেন মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হলো না এই নিয়ে দলের মধ্যে চলছে নানা রকম আলাপ-আলোচনা।