নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ১৫ মে, ২০১৮
‘টাকা পেলে তারেক সাহেব সবই করেন। হয়তো এভাবেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাঁর সমঝোতা হয়েছে। সমঝোতার শর্ত হিসেবে সরকার নির্বাচনের আগে তারেক জিয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য কূটনৈতিক চাপ দেবে না, আর তারেক জিয়াও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে এমনভাবে নামাবে যেন আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত হয়।’ কথাগুলো বলছিলেন বিএনপির একজন শীর্ষ নেতা। অসুস্থতার কারণে তিনি এখন দলীয় সব কর্মকাণ্ড থেকে দূরে। ঐ নেতা বলছিলেন, ‘টাকা খেয়ে তারেক জিয়া ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করেছিল। না হলে ৬ সিটি নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর কোনো দল নির্বাচন বর্জন করে?’ কিডনি রোগে মৃত্যুশয্যায় থেকেই তিনি বলেছিলেন, ঐ নির্বাচন বর্জন করা ছিল আত্মহত্যা করা। বিএনপি যদি সেবার নির্বাচনে অংশ নিতো তাহলে জয়ী হতো।’ তাঁর মতে, ‘এবার হয়তো বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। তবে সেই অংশগ্রহণ হবে সমঝোতার ভিত্তিতে। এবার বিএনপি নির্বাচন করবে ক্ষমতায় যাবার জন্য নয়, আওয়ামী লীগকে বৈধতা দেওয়ার জন্য।’
বিএনপির এই বর্ষীয়ান নেতার বক্তব্য নিয়ে এখন বিএনপিতে তোলপাড় চলছে। বিএনপির নেতারা বিভিন্ন সম্পর্কিত ঘটনা মেলানোর চেষ্টা করছে। বিএনপির নেতাদের অনেকেই বলেছেন, তারেক জিয়া দলে তাঁর বিশ্বস্ত নেতাদের বাদ দিয়ে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদকে কেন লন্ডনে নিয়ে গেলেন। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বরাবরই ‘আপোষকামী’ এবং ‘বিশ্বাসভঙ্গকারী’ রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত। দলবদলের রাজনীতিতে তিনি নাম্বার ওয়ান। বিএনপির নেতারা বলছেন, রাজনৈতিক পরামর্শের জন্য তিনি দলের মহাসচিবকে ডাকবেন অথবা তাঁর বিশ্বস্ত আবদুল আউয়াল মিন্টুকে ডাকবেন। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদের সঙ্গে তারেকের দূরত্বের কথা সবাই জানে। সেই মওদুদের সঙ্গে যখন তারেক জিয়া গোপনে বৈঠক করেন তখনই আমরা বুঝতে পেরেছি পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নিয়েছে।
বিএনপির একজন নেতা বলছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর লন্ডন সফরের পরপরই সরকারের তারেক জিয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনার তোড়জোড় শুরু হলো। এখন দেখুন সবকিছু ঠিকঠাক। তারেককে নিয়ে সরকার কোনো কথা বলছে না। কেন?’ বিএনপির এই নেতার বক্তব্যের সূত্র ধরে যুক্তরাজ্যে যোগাযোগ করা হলে জানা যায় যে, তারেক জিয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে ব্রিটিশ সরকারকে তিনটি চিঠি দেওয়া হয়। যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ দূতাবাস ওই চিঠির ব্যাপারে কোনো তাগাদা দিচ্ছে না। ফলে যুক্তরাজ্য সরকারও এ নিয়ে আর কোনো তৎপরতা দেখাচ্ছে না। শুধু তাই নয়, লন্ডনে বাংলাদেশ দূতাবাসে হামলায় মামলার বিষয়টিও বাংলাদেশ দূতাবাস ব্রিটিশ সরকারের কাছে নতুন করে উত্থাপন করছে না। প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাজ্য সফরের সময়ে বাংলাদেশ সরকার এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তিনটি মামলা করা হয়েছিল। সেই মামলারও কোনো অগ্রগতি নেই।
বিএনপির মধ্যেই এখন কানাঘুষা চলছে যে তারেক ম্যানেজ হয়ে গেছে। আইনি লড়াইয়ে শেষপর্যন্ত বেগম জিয়া হয়তো আগামী নির্বাচন করতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে তারেক জিয়া বিএনপিকে নির্বাচনে যাওয়ার নির্দেশ দেবেন। মনোনয়ন বাণিজ্য করবেন। এমন প্রার্থী বাছাই করবেন যেন বিএনপি নির্বাচনে হারে। বিএনপির নেতাদেরই প্রশ্ন, কই ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার যুক্তিতর্ক ছয়মাসেও শেষ হয়না। ‘তারেক জিয়া ম্যানেজ হয়ে গেছেন’ এমন কথা বিএনপির অনেকেই বলছে। আর সে কারণেই বিএনপিও আন্দোলনে নেই, সরকারও দুশ্চিন্তায় নেই।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।
দলীয় সিদ্ধান্ত মানেননি তৃণমূল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনার পরও নির্বাচনি মাঠ থেকে সরেননি স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। সোমবার প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনেও তারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। উল্টো নানা যুক্তি দেখিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের ভিতরও এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বিশেষ করে দলের দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের ভূমিকা নিয়েও কেন্দ্রের মধ্যে অস্বস্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কঠোর নির্দেশ দেয়ার পরও কেন মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হলো না এই নিয়ে দলের মধ্যে চলছে নানা রকম আলাপ-আলোচনা।