নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ০৪ জুন, ২০১৮
মাদক বিরোধী চলমান অভিযান নিয়ে সরকারের ভেতর অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। টেকনাফের কমিশনার একরামের নিহত হবার ঘটনা, সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির সৌদি আরব ওমরাহ করতে যাওয়া এবং চলমান মাদক বিরোধী অভিযানে বন্দুকযুদ্ধের ব্যাপারে আওয়ামী সমর্থক হিসেবে পরিচিত বুদ্ধিজীবীদের বিবৃতি- সব মিলিয়ে সরকারের জন্য ইস্যুটি ক্রমশ: নাজুক হয়ে উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে সরকারের কয়েকজন প্রভাবশালী মন্ত্রী আজ মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁরা বলেছেন, ‘মাদক বিরোধী অভিযান অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং জরুরি একটি কাজ। কিন্তু এটা সতর্কতার সঙ্গে মোকাবেলা করা প্রয়োজন। না হলে পুরো অভিযানের উদ্দেশ্য বিফলে যাবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নিজেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এই অভিযানে বাড়াবাড়ি না করার জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘কেউ বাড়াবাড়ি করলে তা বরদাস্ত করা হবে না।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানাচ্ছে, ২০ দিন ধরে চলমান মাদক বিরোধী অভিযানে এ পর্যন্ত ১৩১ জন মারা গেছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এগুলো সবই ‘বন্দুকযুদ্ধ’। একজন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তারের পর তাঁকে যখন আস্তানায় বা অন্য সঙ্গীদের ধরার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তখন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনের উপর আক্রমণ করা হচ্ছে। বন্দুকযুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বন্দুকযুদ্ধে শুধু মাদক ব্যবসায়ী নিহত হচ্ছেন। কোনো আইন প্রয়োগকারী সংস্কার কোনো সদস্য গুরুতর আহত হয়নি। এ কেমন বন্দুকযুদ্ধ? এ প্রশ্ন উঠেছে খোদ সরকারি দলের মধ্যেই। মাদক বিরোধী অভিযানে নিহতদের অনেকেই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নন এমন খবরও আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন। অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জর্জরিত আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী পক্ষরা অন্যপক্ষের নাম মাদক ব্যবসায়ীর তালিকায় দিচ্ছে বলেও তৃণমূল থেকে খবর এসেছে। এই তালিকা রাজনৈতিক ভাবে যাচাই বাছাই করার দাবি তুলেছে মাঠ পর্যায়ের আওয়ামী লীগ।
দেশের সুশীল সমাজ এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে এটাকে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বলছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া বার্নিকাট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে এসেছেন। তিনি বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সমর্থন করে না। অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের নেতৃত্বে আওয়ামী ঘরানার বুদ্ধিজীবীদের কয়েকজন এক বিবৃতিতে, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সমর্থনযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কয়েকজন মন্ত্রী বলেছেন এই অভিযান সতর্কতার সঙ্গে পরিচালনা না করলে এর ফল হিতে বিপরীত হতে পারে। নির্বাচনের আগে দেশে বিদেশে এটা আওয়ামী লীগের জন্য নতুন মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। এর ফলে অনেক কর্মীও বিপদে পড়েছেন বলে একাধিক নেতা অভিযোগ করেছেন। সূত্র মতে, অভিযানের শুরুর দিকে অভিযানের ব্যাপারে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন ছিল। কিন্তু ক্রমশ এই সমর্থন কমে আসছে। বিশেষ করে একরাম হত্যাকাণ্ডের পর এই অভিযানের স্বচ্ছতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। পুরো বিষয়টি যেন শেষ পর্যন্ত সরকারের বিরুদ্ধে চলে না যায় সে ব্যাপারে নজর রাখার তাগিদ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতৃবৃন্দ।
প্রধানমন্ত্রী প্রায়ই এই অভিযান কঠোরভাবে মনিটরিং করার নির্দেশ দিয়েছেন। বিনা অপরাধে কেউ যেন সাজা না পায় সেটাও লক্ষ্য রাখতে বলেছেন। সবচেয়ে বড় কথা যে তালিকা নিয়ে অভিযান চলছে, সেটা আরও যাচাই বাছাই করার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘অভিযানের ভুল ত্রুটি শুধরানো হবে। তবে অভিযান চলবে। অভিযান সফল হলে এর সুফল পাবে দেশের জনগণ।’
Read in english- https://bit.ly/2xDnEN2
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।
দলীয় সিদ্ধান্ত মানেননি তৃণমূল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনার পরও নির্বাচনি মাঠ থেকে সরেননি স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। সোমবার প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনেও তারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। উল্টো নানা যুক্তি দেখিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের ভিতরও এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বিশেষ করে দলের দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের ভূমিকা নিয়েও কেন্দ্রের মধ্যে অস্বস্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কঠোর নির্দেশ দেয়ার পরও কেন মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হলো না এই নিয়ে দলের মধ্যে চলছে নানা রকম আলাপ-আলোচনা।