নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:০০ পিএম, ২৩ জুন, ২০১৮
নির্বাচনের আগে দলের বর্ধিত সভায় তৃণমূলের পক্ষেই অবস্থান নিলেন শেখ হাসিনা। দলের দুর্নীতিবাজ এমপিদের জন্য দিলেন কঠোর বার্তা। একই সঙ্গে নব্য আওয়ামী লীগারদের জন্য হুশিয়ারি উচ্চারণ করলেন।
আজ সকালে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে দলের এই বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। গণভবনে অনুষ্ঠিত এই বর্ধিত সভায় প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যের শেষ প্রান্তে তিনি যেন তৃণমূলের বঞ্চিতদের কণ্ঠস্বরে পরিণত হন। ত্যাগী নির্যাতিত, দু:সময়ে আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত নেতা-কর্মীদের ক্ষোভ, অনুভূতিগুলোই যেন প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। এতদিন ধরে যে কথাগুলো মাঠে, হাটে আওয়ামী লীগের কর্মীরা অনুযোগ হিসেবে বলছিল। আজ শেখ হাসিনা সেগুলোকে কবুল করে নিলেন। বর্ধিত সভা শেষে, তৃণমূল নেতাদের মনের ক্ষুধা আর পেটের ক্ষুধা দুটোই মিটল।
শেখ হাসিনা তাঁর বক্তৃতার শেষ ২০ মিনিট দলের আত্ম সমালোচনায় মুখর হন। তিনি বলেন, ‘অনেকে গ্রুপিং এ নিজের শক্তি বাড়াতে জামাত-বিএনপি থেকে লোক ভেড়াচ্ছেন ।’ আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এরা মধু খেতে আসে। এরা এসে দলের বদনাম করছে।’ তিনি তাঁর উদ্যোগে করা তালিকার উল্লেখ করে বলেন, ‘অগ্নি-সংযোগ, সন্ত্রাসের হামলা হয়েছে, মামলা থেকে বাঁচার জন্য এরা আওয়ামী লীগে এসেছে।’ এদের অবিলম্বে দল থেকে বাদ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি। শেখ হাসিনার এই বক্তব্যে দারুণ উল্লসিত রাজশাহী অঞ্চলের তৃণমূলের নেতা কর্মীরা। এদের একজন বলছিলেন, ‘রাজশাহীতে জামাত-বিএনপি থেকে আসা লোকজনই আওয়ামী লীগ দখল করে ফেলেছে। এ নিয়ে আমরা রীতিমতো আন্দোলন করছি।’ তিনি বলেন, ‘আজ নেত্রী আমাদের অভিযোগের স্বীকৃতি দিলেন। এটাই আমাদের বড় পাওয়া।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি তাঁর বক্তৃতায় ‘দুর্নীতিবাজ’ এমপিদেরও হাড়ির খবর ফাঁস করে দিলেন। শেখ হাসিনা বললেন, ‘এলাকায় জনগণের জন্য কাজ করে টাকা নিলে জনগণ তো ভোট দেবে না।’ অনেক এমপির ক্ষেত্রেই এই অভিযোগ শতসিদ্ধ। এমপিদের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ বেশ জোরেশোরেই উঠেছে। শুধু নিয়োগ বাণিজ্য নয়, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতাতেও অনেক এমপি জড়িয়ে পরেছেন। এ নিয়ে তৃণমূলে আওয়ামী লীগই বেশ বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে। অনেক এমপি টাকা নিয়ে এলাকায় যান না। এসব খবর যে শেখ হাসিনার অজানা নয়, তা তিনি বুঝিয়ে দিলেন। তাঁর বক্তৃতায় একটা বিষয় স্পষ্ট হলো, অনেক এমপিই আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাচ্ছেন না। তবে, প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায় একটা নতুন বিষয় পাওয়া গেল। গতকাল শুক্রবার দলের মনোনয়ন বোর্ডের সভাতেও শেখ হাসিনা এই কথাটি বলেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচনে কারচুপির বিরুদ্ধে তাঁর অনাস্থা এই দুটি বক্তৃতায় বেশ স্পষ্ট করেই দিলেন। শেখ হাসিনা বললেন, ‘ভোটের অধিকার আমরাই এনেছি। কাজেই জনগণ যাকে খুশি ভোট দেবে। জেতার জন্য কারচুপি করা যাবে না।’ এই বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে দল ছাড়িয়ে তিনি গণ-মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিচ্ছবি হয়ে গেলেন। জনগণ তো এটাই চায়। এমন আওয়ামী লীগকেই দেখতে চায় দেশের মানুষ। শেখ হাসিনা যেন মানুষের মনের কথাটাই বললেন। কিন্তু সারাদেশে আওয়ামী লীগ কি পারবে তেমনটা করতে?
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপে নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তকে
উপেক্ষা করে প্রার্থী হওয়ায় মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে উপজেলার বিএনপিপন্থি দুই প্রার্থীকে
শোকজ করা হয়েছে।
বিএনপি থেকে শোকজ করা দুই প্রার্থী হলেন, চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী
উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর
রহমান তুষার (কাপ পিরিচ প্রতীক) ও ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসা (চশমা প্রতীক)।
গতকাল বুধবার (২৪ এপ্রিল) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র অফিসিয়াল
প্যাডে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর
নোটিশ থেকে এ তথ্য জানা যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৫ এপ্রিল বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির
সভায় আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিএনপি নেতা হিসেবে
আপনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। নির্বাচনে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার এহেন মনোবৃত্তি সম্পূর্ণরূপে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি এবং দলের
প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা।
দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে জালিয়াতির নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য
আপনার বিরুদ্ধে কেন দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা
হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্যকোনো মাধ্যমে পত্র প্রাপ্তির কিংবা ফোনে অবহিত হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার
মধ্যে যথাযথ কারণ দর্শিয়ে একটি লিখিত জবাব দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয় বরাবর
নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।
কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাচনে
চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়নের সাবেক
চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর রহমান তুষার বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য দলীয়ভাবে কারণ
দর্শানোর নোটিশ হাতে পেয়েছি। যথাযথ সময়ে আমি নোটিশের জবাবও দেব। তবে ৮ মে উপজেলা পরিষদ
নির্বাচনে আমি জনগণের চাপে পড়ে প্রার্থী হয়েছি। দলীয় সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেন, জনগণের
ভালোবাসা, দোয়া ও সমর্থন নিয়ে শেষ পর্যন্ত আমি নির্বাচনী মাঠে থাকব। আমি টানা ১৯ বছর
বয়ড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে জনগণের সেবা করেছি। যার ফলে পুরো উপজেলায় আমার
একটা অবস্থান রয়েছে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ আমাকে ভালোবাসে। তাদের ভালোবাসা ও দোয়া
নিয়েই আমি আগামীতে পথ চলতে চাই। আশা করি, এ নির্বাচনে আপামর জনগণ আমার পাশে থাকবে এবং
নির্বাচনে ভালো কিছু হবে, ইনশাআল্লাহ।
তবে বিএনপিপন্থি ভাইস চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসাকে একাধিকবার মুঠোফোনে
কল দিলেও রিসিভ হয়নি।
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।