নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:০৩ পিএম, ০২ জুলাই, ২০১৮
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হলো গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। ওই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারকে হারিয়ে নিরঙ্কুশ বিজয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। তবে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেতে তাঁকে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়েছে নিজ দলের আজমত উল্লাহর সঙ্গেই। গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ২০১৪ তে প্রার্থী ছিলেন অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান। ওই নির্বাচনে আবার আজমত উল্লাহর পরাজয়ের অন্যতম প্রধান কারণ ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। এলাকায় জনপ্রিয় জাহাঙ্গীর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন সেবার। দলের মধ্যে এই কোন্দলকে তখন গাজীপুরে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পরাজয়ের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
আর এবার মনোনয়ন পেয়েছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। আশঙ্কা করা হচ্ছিল নির্বাচনী প্রচারণায় গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করবেন। দলের প্রভাবশালী এই নেতার অসহযোগিতা গাজীপুরে আবার আওয়ামী লীগের পরাজয়ের কারণ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের হাই কমান্ড দলের স্বার্থে চমৎকার একটি সিদ্ধান্ত নিলেন। আজমত উল্লাহকে নির্দেশ দেওয়া হলো, জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে কাজ করার জন্য; তাঁর যোগ্যতা ও আত্মত্যাগের অবশ্যই মূল্যায়ন হবে। ফলে আজমত উল্লাহ্ জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করেন আর বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন জাহাঙ্গীর।
দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা ও আনুগত্যের পুরস্কার সঙ্গে সঙ্গেই পেয়েছেন আজমত উল্লাহ। গতকাল রোববার রাতে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আজমত উল্লাহ খানকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য মনোনীত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর পদাধিকার বলে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
অন্তর্কোন্দলের সমস্যা আওয়ামী লীগে দিনকে দিন প্রকট আকার ধারণ করছে। ২০১৩ সালের খুলনা সিটি নির্বাচনে ৬০ হাজারেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে বিএনপি সমর্থিত পার্থীর কাছে পরাজিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক। সে পরাজয়ের কারণ হিসেবেও অন্তর্কোন্দলকেই দায়ী করা হয়েছিল।
দলীয় কোন্দলের এই তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে এ বছরের ১৫ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মনোনয়ন ফরমই কিনতে চাননি খালেক। এদিকে খালেক নির্বাচনে অংশ নেবেন না শুনে মনোনয়ন প্রার্থীতার আগ্রহ প্রকাশ করেন আরও পাঁচজন। ফলে আবারও অন্তর্কোন্দলের আশঙ্কা দেখা দেয়। কিন্তু এবার খালেকের পক্ষে একাট্টা হয়ে অবস্থান নেয় খুলনা আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তাঁকেই মনোনয়ন দেন। এরপর বাগেরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্যপদ ছেড়ে খুলনায় ভোটে দাঁড়িয়ে মেয়র নির্বাচিত হন তালুকদার আবদুল খালেক।
একতাই আওয়ামী লীগের জয়ের মূলমন্ত্র সেটা এখন প্রমাণিত। যখনই দলের মধ্যে কোনো ধরনের কোন্দলের আশঙ্কা দেখা দেবে, একই এলাকায় দুই নেতা পরষ্পরের মুখোমুখি দাঁড়াবেন তখন অন্তর্দ্বন্দ্ব নিরসনে এই গাজীপুর মডেল অনুসরণ করা যেতে পারে। কোনো কারণে দুই যোগ্য ব্যক্তির মধ্যে একজনকে বঞ্চিত করতে হলে তাঁর আত্মত্যাগ ও কাজের মূল্যায়ন করতে হবে ভিন্নভাবে তাকে পুরস্কৃত করে, যা গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিত আজমত উল্লাহর ক্ষেত্রে করা হয়েছে। এমনটা হলে দল ঐক্যবদ্ধ থাকবে এবং ভোট ভাগ হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটবে না। ধারণা করা যায় যে, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও দলের হাই কমান্ড ভবিষ্যতেও দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটাতে গাজীপুর মডেলের ব্যবহার করবেন।
সামনে তিনটি সিটি নির্বাচন এবং জাতীয় নির্বাচন রয়েছে। গাজীপুর মডেলের ব্যবহার এই নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগের জয়কে আরও সহজ করবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।
দলীয় সিদ্ধান্ত মানেননি তৃণমূল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনার পরও নির্বাচনি মাঠ থেকে সরেননি স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। সোমবার প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনেও তারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। উল্টো নানা যুক্তি দেখিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের ভিতরও এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বিশেষ করে দলের দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের ভূমিকা নিয়েও কেন্দ্রের মধ্যে অস্বস্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কঠোর নির্দেশ দেয়ার পরও কেন মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হলো না এই নিয়ে দলের মধ্যে চলছে নানা রকম আলাপ-আলোচনা।