নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:০০ পিএম, ১২ জুলাই, ২০১৮
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত শনিবার আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অসাধারণ আত্মত্যাগের ইতিহাস থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ত্যাগের কথা দলের নেতাকর্মী ও দেশবাসীর সামনে তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ দল ছাড়ে মন্ত্রিত্বের লোভে। আর জাতির পিতা মন্ত্রিত্ব ছেড়েছিলেন দলকে সংগঠিত করার জন্য।
বাংলাদেশের পদ লোভী রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রেক্ষাপটে বিরল এই কাজটি বাস্তবিকই করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। আজ থেকে প্রায় ছয় দশক আগে ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে যুক্তফ্রন্ট সরকারের কৃষি ও বন মন্ত্রী হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর ১৯৫৬ সালে কোয়ালিশন সরকারের মন্ত্রিসভায় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান তিনি। কিন্তু সংগঠনকে সুসংগঠিত করার উদ্দেশ্যে ১৯৫৭ সালের ৩০ মে বঙ্গবন্ধু মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদটিকে ধরে রেখে মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন বঙ্গবন্ধু।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এটা চেতনার জায়গা ছিল যে, দল এবং সরকার আলাদা হবে। দল ও সরকার আলাদা হলে বেশ কয়েকটি লাভ হয়। এতে দল সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, সরকারের ভুলত্রুটিগুলো ধরতে পারে। সরকার যদি কোনো অনিয়ম বা অন্যায় করে সেটাও চিহ্নিত করতে পারে দল। আর সবচেয়ে বড় লাভ যেটি হয় সেটি হলো, সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক সংগঠনটিও শক্তিশালী হয়। আর সংগঠন না থাকলে আপনি যত বড় মন্ত্রী বা রাজনীতিবিদই হন না কেন, আপনার কোনো ক্ষমতা থাকে না। শুধু ক্ষমতাই নয়, রাজনীতিতে আপনার কোনো অস্তিত্বই থাকে না। এ কারণেই সংগঠনের স্বার্থে বঙ্গবন্ধু মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করেছিলেন। দলের প্রতি তীব্র ভালোবাসা, দলের মঙ্গল কামনাই ছিল বঙ্গবন্ধুর এই সিদ্ধান্তের কারণ।
দূর্ভাগ্যজনক ভাবে বিভিন্ন টানাপড়েনের জন্য পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ এই ঐতিহ্য বজায় রাখতে পারেননি। কিন্তু ২০১৪ সালে টানা দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করার পর, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের পর থেকেই আওয়ামী লীগ কিছুটা হলেও দল ও সরকারকে আলাদা রাখার এই প্রক্রিয়াটি আবার বাস্তবায়ন করা শুরু করেছে। বর্তমান মন্ত্রিসভার দিকে লক্ষ্য করলে বোঝা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাদের মন্ত্রিত্ব দিয়েছেন, দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের মতো হাতে গোণা কয়েকজন বাদে তাঁদের কাউকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাখা হয়নি।
এই উদ্দেশ্যে শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে বাদ দেওয়া হয়েছে, আর বর্ষীয়ান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কমিটিতে। সংগঠনটি শক্তিশালী হবে এমন প্রত্যাশা থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের ৪ জন যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমানকে মন্ত্রিত্ব দেননি। এছাড়া দলটির কোনো সাংগঠনিক সম্পাদকও মন্ত্রী পদে নেই। এর পেছনে কারণ হিসেবে কাজ করেছে একটি আকাঙ্ক্ষা - তাঁরা সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হবে, সংগঠনের জন্য সময় দেবে ও কাজ করবে। এই যেমন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আবার সেতুমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। দল ও মন্ত্রণালয়ের দ্বৈত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাঁর কাজে যদি বিঘ্ন ঘটে তাতে কিন্তু সেতুমন্ত্রীকে দোষ দেওয়া যাবে না। তাই সংগঠন ও মন্ত্রণালয় উভয়ের স্বার্থেই দল ও সরকারকে আলাদা করার প্রয়োজন বোধ করছেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আবার যদি ক্ষমতায় আসে তবে দল ও সরকারকে পুরোপুরি আলাদা করার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর চেতনার এই জায়গাটাকে বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সম্প্রতি। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উদ্যোগ গ্রহণের কথা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার কমিটির সভায়ও আলোচনা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ বিষয়ে স্পষ্ট গাইডলাইন দিয়েছেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি বৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠন। সংগঠনটি দিনে দিনে আরও বড় হয়ে এখন আরও শক্তিশালী অবস্থায় পৌঁছেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে এখন রয়েছেন অসংখ্য যোগ্য নেতাকর্মী । যদি তাঁদেরকে কেবল মন্ত্রিত্ব প্রদানের মাধ্যমে মূল্যায়ন করতে হয় তাহলে আওয়ামী লীগকে দুটি মন্ত্রিসভা গঠন করতে হবে। তাই সিদ্ধান্ত হয়েছে, পরবর্তীতে ক্ষমতায় আসলে একমাত্র দলের সভাপতি ছাড়া যারা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকবেন, তাঁরা মন্ত্রিসভায় থাকবেন না। আর এ নিয়মটি দলের সাধারণ সম্পাদক পদের জন্যও প্রযোজ্য হবে। তবে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ আলাদা মর্যাদা ও গুরুত্ব পাবেন। অন্যদিকে কোনো মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রিত্ব তাঁদের হাতেই দেওয়া হবে যারা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দক্ষ ও অভিজ্ঞ।
আমরা যদি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের দিকে তাকাই তাহলে দেখবো, পশ্চিম বাংলায় দীর্ঘদিন বামফ্রন্ট ক্ষমতায় ছিল এবং দল ও সরকারকে আলাদা রাখার কৌশলটা তাঁরা সফলতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করেছিল। যারা মন্ত্রিত্বে থাকতেন তাঁরা দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে, বিশেষ করে কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে থাকতে পারতেন না। এছাড়া ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির দিকে তাকালেও আমরা দেখি, বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ কোনো ধরনের মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নেই। অন্যদিকে বিজেপির কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে নেই ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার প্রধান দায়িত্ব ক্ষমতাসীন দলেরই। এরপর আসে জনগণ বা বিরোধী দলের প্রশ্ন। সরকারকে দায়িত্বশীল করা, সরকারকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার জন্য দল এবং সরকারকে আলাদা করার পদ্ধতি অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের ২০তম কাউন্সিল অধিবেশন থেকেই আসলে এ পদ্ধতি অনুসরণ করার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন ধরে বারবার বঙ্গবন্ধুর চেতনার এই জায়গাটা বাস্তবায়ন করার কথা বলে আসছেন। এই সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আরও শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, উপজেলা নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের সব রকম কমিটি গঠন ও সম্মেলন বন্ধ থাকবে।
শনিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক বিফ্রিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের উপজেলা পর্যায়ে নির্বাচন হচ্ছে। সামনে প্রথম পর্যায়ের নির্বাচন হবে। এই নির্বাচন চলাকালে উপজেলা বা জেলা পর্যায়ে কোনো সম্মেলন, মেয়াদোত্তীর্ণ সম্মেলন, কমিটি গঠন এই প্রক্রিয়া বন্ধ থাকবে’।
মন্ত্রী-এমপির নিকটাত্মীয়দের উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, নিকটজনদেরকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। যারা ভবিষ্যতে করতে চায় তাদেরও নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে। যারা আছে তাদের তালিকা তৈরি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
নির্দেশনা দেওয়া হলেও অনেকেই এখনো নির্বাচনে আছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রত্যাহারের তারিখ শেষ হোক, তার আগে এ বিষয়ে কীভাবে বলা যাবে।
ওবায়দুল কাদের উপজেলা নির্বাচন সেতুমন্ত্রী
মন্তব্য করুন
জামায়াত বিএনপি উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
বিএনপি তারেক জিয়া উপজেলা নির্বাচন রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন বিএনপি তারেক জিয়া বহিষ্কার
মন্তব্য করুন
জামায়াতে ইসলামও কী বিএনপিকে ধোঁকা দিল? বিএনপির সঙ্গে সুর মিলিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী ফ্যাসিস্ট এই রাজনৈতিক দলটি ঘোষণা করেছে যে, তারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। নিবন্ধনহীন রাজনৈতিক দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা না দিলেও প্রথম পর্বে যে সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র দাখিল শেষ হয়েছে সেখানে জামায়াতের ২৩ জন সদস্যের নামের তালিকা পাওয়া যাচ্ছে।
বিএনপিতে তোলপাড় চলছে। বাইরে থেকে কেউ বুঝতে পারছেন না বিএনপিতে কী ঘটছে। কিন্তু দলের ভিতর যারা রয়েছেন তারা বলছেন, দলের ভিতরে এক প্রকার দম বন্ধ এবং শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা বিরাজ করছে। একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে প্রশ্ন উঠেছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ হচ্ছে। দলের ভিতর বিভক্তি, অনৈক্য হতাশা এখন প্রকাশ্য।
আওয়ামী লীগে উত্তরাধিকারের রাজনীতি নতুন নয়। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা এবং মন্ত্রীরা উত্তরাধিকার সূত্রেই রাজনীতিতে এসেছেন। বর্তমান মন্ত্রিসভায় একাধিক সদস্য রয়েছেন যারা রাজনীতিতে এসেছেন পারিবারিক ঐতিহ্য থেকে, পিতার হাত ধরে, অথবা তাদের নিকট আত্মীয়দের উৎসাহ উদ্দীপনায়। বর্তমান মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য আছেন, যাদের বাবারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন সেই সূত্রে তারা রাজনীতিবিদ।