নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ১৬ জুলাই, ২০১৮
সম্প্রতি বাংলাদেশ স্বাদু পানির মাছ উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য, বাংলাদেশের মৎস্যজীবীদের জন্য, সর্বোপরি বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণের জন্য এ এক অসাধারণ অর্জন। যেহেতু মৎস্য খাতের এই অর্জনে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ ভূমিকা রেখেছে, তাই এটি প্রত্যাশা করা অস্বাভাবিক ছিল না যে আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে জনগণকে অবহিত করে ক্যাম্পেইন করা হবে। আর ক্যাম্পেইন করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকাটি নিতে পারত বাংলাদেশ আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগ। বাংলাদেশের মৎস্যজীবী সম্প্রদায় ও মৎস্যখাতের বিপুল সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যেই আওয়ামী লীগের এই অঙ্গ সংগঠনটি গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু মৎস্যখাতে এত বড় অর্জনেও তাদের কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি।
শুধু আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগই নয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ বেশ পুরনো। আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ মিছিল, মিটিং, সভা-সেমিনার করে পত্রিকার পাতা গরম রাখে। বাংলাদেশ যুবলীগও বেশ কিছু সৃজনশীল ও মননশীল উদ্যোগের কারণে বেশ প্রশংসিত। এছাড়া স্বেচ্ছাসেবক লীগ দিবস ভিত্তিক কিছু কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এর বাইরে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর কার্যক্রমের তেমন কোনো খবর পাওয়া যায় না। স্বাভাবিকভাবেই তাই আওয়ামী লীগের ওপর মহলে প্রশ্ন উঠেছে, এই সহযোগী সংগঠনগুলোর কাজ আসলে কী? কী তাঁদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য?
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবদ্দশায় আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন ছিল মাত্র ৫টি। এগুলো হলো ছাত্রলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ, যুবলীগ ও শ্রমিক লীগ। এদের মধ্যে অবশ্য ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগকে আওয়ামী লীগের ভাতৃপ্রতিম সংগঠন হিসেবে অভিহিত করা হয়। সময়ে সময়ে বর্তমান ক্ষমতাসীন দলটির অঙ্গ সংগঠনের সংখ্যা এখন বেড়েছে। দলটিতে যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন পেশাজীবীদের সংগঠন যেমন - তাঁতি লীগ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ), আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগ প্রভৃতি।
বঙ্গবন্ধু যখন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনগুলো প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তার পেছনে বঙ্গবন্ধুর একটি সুস্পষ্ট ও অতুলনীয় চেতনা ছিল। সেই চেতনার মূল কথা ছিল, আওয়ামীপন্থী বিভিন্ন পেশাজীবীদের নিয়ে দলটির যেসব অঙ্গ সংগঠন গঠন করা হবে তাদের নেতাকর্মীরা নিজেদের পেশাজীবী মধ্যে আদর্শ ও চেতনার গ্রুমিং করবেন। এভাবেই দেশের সকল পেশাজীবীর মধ্যে দেশপ্রেমের চেতনা, রাজনৈতিক চেতনা ছড়িয়ে পড়বে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যে রাজনৈতিক চেতনা ধারণ করবে তা সকল অঙ্গ সংগঠনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে সেটাই প্রত্যাশা ছিল বঙ্গবন্ধুর। চেতনার প্রবাহমান এই পুরো প্রক্রিয়াটিকে মানবদেহের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়ার সঙ্গে তুলনা করা যায়। রক্ত হৃদপিণ্ড থেকে শিরা, ধমনীর মধ্য দিয়ে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পৌঁছে যায়। তেমনি কেন্দ্র থেকে পুরো দেশটির মধ্যে যাতে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক চেতনা পৌঁছে যায় তার জন্য দলটির অঙ্গ সংগঠনগুলো কাজ করবে সেই উদ্দেশ্যেই গঠন করা হয়েছিল অঙ্গ সংগঠনগুলো।
দেশে বিভিন্ন পেশা আছে, পেশাজীবী আছেন। এই পেশাজীবীদের মধ্যে আছেন কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবী, প্রকৌশলী ইত্যাদি। তাদের সবার মধ্যে যাতে আদর্শের চেতনাটা সঞ্চালিত হয় তা নিশ্চিত করাই ছিল আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনগুলোর দায়িত্ব। কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, ক্ষমতাসীন দলটির অঙ্গ সংগঠনগুলো হয়ে গেছে দলবাজি, টেন্ডারবাজির আখড়া। এসব অঙ্গ সংগঠনে পদ পাওয়াকে অনেকে আরও বড় পদ-পদবী পাওয়ার সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করেন, বিবেচনা করেন বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ হিসেবে। অথচ নিজেদের পেশাদারি আদর্শ বাস্তবায়নের কাজে তাঁদের অনীহা দেখার মতো।
অথচ এই সংগঠনগুলো যদি ঠিকঠাক ভাবে কাজ করতো, আদর্শিক জায়গা থেকে নিজেদের দায়িত্ব পালন করতো তবে তাঁরা সফলভাবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারতো। সরকারকে পরামর্শ দিতে পারতো সংশ্লিষ্ট খাত ও পেশার উন্নয়নে।
বর্তমানে দেশের সড়কগুলোতে দুর্ঘটনায় মৃত্যু একটি নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন হিসেবে শ্রমিক লীগ আছে, পরিবহণ লীগ আছে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায় সে বিষয়ে কিন্তু এরা সহায়তা করতে পারে, সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে বিভিন্ন পরামর্শ দিতে পারে। কিন্তু এই সংগঠনগুলোর কাছ থেকে তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) আওয়ামী লীগের অফিশিয়াল চিকিৎসা বিষয়ক অঙ্গ সংগঠন। কিন্তু বাংলাদেশের চিকিৎসা ক্ষেত্রে যে নৈরাজ্য চলছে তা নিরসনে স্বাচিপের কোনো ভূমিকাই নেই।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি ক্যাম্পেইন শুরু করেছেন। এই ক্যাম্পেইনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আয়োজিত জনসভায় তিনি বারবার বলছেন, দেশের প্রত্যেকটি গ্রামকে তিনি শহরে রূপান্তরিত করবেন। শহরের অধিবাসীরা যে নাগরিক সুযোগ-সুবিধাগুলো পায় গ্রামের অধিবাসীদের জন্যও তিনি একই রকম সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করবেন। আর আমরা সবাই জানি, একটি গ্রামকে শহরে রূপান্তরিত করতে অবকাঠামো লাগে, লাগে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং অবশ্যই উন্নত স্বাস্থ্যসেবা। এই উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে স্বাচিপের চিকিৎসকরা নিতে পারে উদ্যোগী ভূমিকা। কিন্তু সেরকম কোনো ভূমিকার চিত্র এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না।
বর্তমানে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবার পরিস্থিতি ভালো নয়। জ্বর, সর্দি-কাশি ছাড়া অন্যসব জটিল অসুখে গ্রামের মানুষকে এখনো শহরের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিতে ছুটতে হয়। আমাদের চিকিৎসকরা যদি গ্রামের হাসপাতালগুলোতে গিয়ে সেবা দিত তাহলে এ পরিস্থিতি পাল্টে যেত। আর এ বিষয়ে সবচেয়ে উদ্যোগী ভূমিকা তো বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী চিকিৎসকদেরই নেওয়া উচিত। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে স্বাচিপ করা কোনো চিকিৎসক গ্রামে থাকতে চান না।
আরেকটি বিষয় না উল্লেখ করলেই নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি কখনো নোবেল পান তবে তার পেছনে অন্যতম কারণ হবে গ্রামে গ্রামে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা। এ বিষয়টি বৈশ্বিক পর্যায়েও আলোচনায় এসেছে। অথচ বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, স্বাচিপের এ বিষয়ে কোনো ধরনের প্রচার-প্রচারণা বা উদ্যোগ নেই। নেই কোনো প্রোগ্রাম। এই গাফিলতির কারণে আওয়ামী লীগের ভালো কাজগুলোর খবর জনগণের কাছে পৌঁছাচ্ছে না।
একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে আওয়ামী পন্থী প্রকৌশলীদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদেও। সরকারকে সহযোগিতা করা কিংবা সরকারের কার্যক্রম সংক্রান্ত প্রচার-প্রচারণা তাঁদেরকেও করতে দেখা যায় না। বরং পদ-পদবীর ভাগাভাগি নিয়ে সংগঠনটিতে ব্যস্ততা বেশি দেখা যায়।
আওয়ামী লীগ সভাপতির গ্রামকে শহরে রূপান্তর করার যে স্বপ্ন, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে দলটির প্রকৌশলীদের নিয়ে গঠিত অঙ্গ সংগঠনটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার কোনো বিকল্প নেই। অবকাঠামো নির্মাণ বা উন্নত যোগাযোগ ও যাতায়াত ব্যবস্থার সূচনার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের উচিত ছিল যথাসম্ভব দ্রুততার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর হাতে একটি মডেল তুলে দেওয়া। সে মডেলে গ্রামকে শহরে রূপান্তরিত করার সমস্ত খুঁটিনাটি সংযুক্ত থাকতে পারতো। কিন্তু এমন কোনো উদ্যোগ আওয়ামীপন্থী প্রকৌশলীদের এই সংগঠনটি গ্রহণ করেনি। এমনকি বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদ করা কোনো লোক ঢাকার বাইরে পোস্টিংই নিতে চান না।
ঢাকার বাইরে মফস্বলে যেতে চান না আওয়ামীপন্থী শিক্ষক সমিতির নেতারাও । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামীপন্থী নীল দলের শিক্ষকদের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ছাত্র পড়ানোর চেয়ে তাঁদের নজর বেশি থাকে তদবির করে কীভাবে পদ-পদবি পাওয়া যায় তার দিকে।
আওয়ামীপন্থী বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনগুলোর এসব কার্যক্রম পর্যালোচনা করলে বোঝা যায়, এই অঙ্গ সংগঠনগুলো প্রতিষ্ঠার পেছনে বঙ্গবন্ধুর মূল চেতনার যে জায়গাটি ছিল, যে আকাঙ্ক্ষা থেকে অঙ্গ সংগঠনগুলো তৈরি করা হয়েছিল তা পূরণ হচ্ছে না।
একটি রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসে নির্বাচনী কর্মসূচি দিয়ে। এই কর্মসূচিগুলো দেখেই জনগণ তাঁদের ভোট দেন। তাই ক্ষমতায় আসার পর কর্মসূচিগুলোর বাস্তবায়নই হলো সরকারের প্রধান কাজ। কিন্তু সেই কর্মসূচির বাস্তবায়ন করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এর জন্য বিভিন্ন পেশার মানুষের অংশগ্রহণ দরকার। সরকারের কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনগুলো যদি দায়িত্ব পালন না করে তাহলে কোনো ভাবেই সরকার সফলতার সঙ্গে তাঁদের কার্যক্রম চালাতে পারবে না।
মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিদের সাংস্কৃতিক সংগঠন বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর এক সময় দারুণ রমরমা ছিল। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, উদ্যোগের কারণে তরুণদের মধ্যে আলাদা গ্রহণযোগ্যতা ছিল সংগঠনটির। চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব আলমগীর কুমকুম ছিলেন সংগঠনটির শেষ প্রদীপ। কিন্তু বর্তমানে এই সংগঠনের কোনো অস্তিত্বই যেন চোখে পড়ে না। অথচ আমাদের সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। আসাদুজ্জামান নূরের নেতৃত্বে সংস্কৃতি অঙ্গন আরও সমৃদ্ধ হয়ে ওঠার কথা ছিল।
বাস্তবতা হচ্ছে, সাংস্কৃতিক আন্দোলন ছাড়া কখনো চেতনার আন্দোলন সমৃদ্ধ হয় না। মুক্তিযুদ্ধ সফল হতো না যদি না সে সময় একটি সফল সাংস্কৃতিক আন্দোলন হতো। মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিজয়ে বড় একটি ভূমিকা রেখেছিল সে সময়ে গৃহীত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উদ্যোগ। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রতিষ্ঠিত অস্থায়ী রেডিও স্টেশন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র আমাদের উজ্জীবিত করেছিল, উজ্জীবিত করেছিল শোনো একটি মুজিবুরের থেকে, জয় বাংলা বাংলার জয়ের মতো দেশাত্মবোধক গানগুলো। কিন্তু এখন আমাদের সাংস্কৃতিক চেতনার মান কোথায়? আমরা যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন করার স্বপ্ন দেখছি, সেই বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক মানটিও উন্নত হতে হবে, উন্নত একটি দেশের সঙ্গে মানানসই হতে হবে। না হলে উন্নত জাতিসত্তার একটি রাষ্ট্র গঠন করা সম্ভব হবে না। এই উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের এই অঙ্গ সংগঠনগুলোকে নিষ্ক্রিয়তার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসে সংগঠনের কার্যক্রম গতিশীল করতে হবে।
একটি সময় ছিল যখন আওয়ামী লীগের বুদ্ধিজীবীরাই শিল্প-সাহিত্য, জ্ঞান-বিজ্ঞান তথা বুদ্ধিবৃত্তিক অঙ্গনের প্রতিভূ ছিলেন। শিক্ষাবিদ ও লেখক আনিসুজ্জামান, আইবিএর প্রতিষ্ঠাতা অর্থনীতিবিদ এম. শফিউল্লাহ প্রমুখের নাম এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়। সাংস্কৃতিক অঙ্গন বা ক্রীড়া অঙ্গনের প্রতিভাবান এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও প্রতিনিধিত্ব করতেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা রাখা দল আওয়ামী লীগেরই। বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ক্রীড়া সংগঠন আবাহনী লিমিটেডের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জাতির পিতার জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল। বিখ্যাত ফুটবলার শফিউল আলম টুটুল এবং কাজী সালাউদ্দিনও আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। ক্রিকেটার রকিবুল হাসান ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকায় কমনওয়েলথ একাদশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ম্যাচে পাকিস্তানের হয়ে ব্যাটিং ওপেন করেন। কিন্তু দুঃসাহসের পরিচয় দিয়ে সেদিন তিনি ব্যাটে জয় বাংলা লিখে নেমেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-সংস্কৃতি ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে আওয়ামীপন্থীদের কোনো উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না। ফলে দেশে একটি অদ্ভুত সুশীল সমাজের উদ্ভব হয়েছে যারা শিল্প-সংস্কৃতি চর্চার সঙ্গে রাষ্ট্রের বিরাজনীতিকরণকে গুলিয়ে ফেলছেন।
এসব দেখেশুনে এবং তৃণমূলে গণসংযোগ করার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি একটি উদ্যোগ নিয়েছেন। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ ও পেশাজীবী সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করবেন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
এটি প্রধানমন্ত্রীর নেওয়া অন্য অনেক দারুণ সিদ্ধান্তের মতোই একটি ভালো সিদ্ধান্ত কারণ আমরা যদি উন্নত জাতি-রাষ্ট্র হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াতে চাই তবে পেশীশক্তি, অস্ত্র-গোলাবারুদের ব্যবহার কমিয়ে এনে বাড়াতে হবে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা। দেশের উন্নয়নে সরকারকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসতে হবে বিভিন্ন পেশাজীবীদের নিয়ে গঠিত অঙ্গ সংগঠনগুলোকেই। এই সংগঠনগুলো যদি থিংক ট্যাংক হিসেবে নিজেদের ভূমিকা পালন করতে পারে, নীতি নির্ধারণী ক্ষেত্রে এবং সরকারের উন্নয়ন-উদ্যোগ প্রচারে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিতে পারে তবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তোলা সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু সংগঠনগুলো যদি নিষ্ক্রিয়ই থেকে যায় তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে অদূর ভবিষ্যতেই মূল্য দিতে হতে পারে।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক
পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের
মধ্যে যারা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেনি তাদের বিষয়ে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলীয়
নির্দেশনা অমান্য করলে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশনের ব্যাপারে চিন্তা করা হবে। সময়মতো অবশ্যই
এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আজ বুধবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে ধানমন্ডিতে
আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, পার্টির যারা মন্ত্রী-এমপি
এমন পর্যায়ে আছেন তাদের জন্য নির্দেশনা রয়েছে, তাদের সন্তান ও স্বজনরা যেন উপজেলা নির্বাচনে
না আসে। প্রথম পর্যায়ের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় চলে গেছে। কেউ কেউ বলেছেন আমরা
বিষয়টি আরও আগে অবহিত হলে সিদ্ধান্ত নিতে আমাদের সুবিধা হতো। তারপরেও কেউ কেউ প্রত্যাহার
করেছেন, কেউ কেউ করেননি। আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন কমিশনের যে সময়সীমা তারপরেও ইচ্ছা
করলে করতে পারবেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন,
‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দলীয় সিদ্ধান্ত যারা অমান্য করেছে তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা
নেওয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাচনেও কিন্তু দলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয় আছে। দল যার যার
কর্মকাণ্ড বিচার করবে। চূড়ান্ত পর্যায় পর্যন্ত যারা প্রত্যাহার করবে না সময়মতো দল ব্যবস্থা
নেবে’।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি একতরফা কোনো
সমাবেশ করতে গেলে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিষয়টি এসে যায়। আওয়ামী লীগও একই সময়ে সমাবেশের
ডাক দেয়। তবে এটা পাল্টাপাল্টি নয়।
ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক
কার্যালয়ে হওয়া উক্ত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি
এম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, সুজিত
রায় নন্দী, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক
আমিনুল ইসলাম আমিন প্রমুখ।
মন্ত্রী-এমপি প্রার্থিতা প্রত্যাহার ওবায়দুল কাদের
মন্তব্য করুন
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায়
অভিযোগ গঠন শুনানির তারিখ পিছিয়ে আগামী ২৫ জুন ধার্য করেছেন আদালত।
বুধবার (২৪ এপ্রিল) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক আলী হোসাইনের
আদালতে খালেদা জিয়ার অব্যাহতির বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য ছিল। কিন্তু খালেদা জিয়ার প্রধান
আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার দেশের বাইরে থাকায় অভিযোগ শুনানি পেছাতে সময়ের আবেদন
করা হয়। আদালত সময় আবেদন মঞ্জুর করে অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য নতুন করে এ তারিখ ধার্য
করেন। খালেদা জিয়ার আইনজীবী আব্দুল হান্নান ভূঁইয়া সাংবাদিকদের এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
জানা যায়, মামলাটিতে ১৫ জন আসামির মধ্যে ১৪ জনের অব্যাহতির বিষয়ে
শুনানি শেষ হয়েছে। গত ২৪ জানুয়ারি খালেদা জিয়ার অব্যাহতি চেয়ে শুনানি শুরু হয়।
২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর দুদকের উপপরিচালক মো. গোলাম শাহরিয়ার ১৩
জনের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে তেজগাঁও থানায় মামলাটি দায়ের করেন। ২০০৮ সালের ১৩ মে মামলাটি
তদন্ত করে জোট সরকারের প্রভাবশালী ৯ জন সাবেক মন্ত্রী ও উপমন্ত্রীসহ মোট ২৪ জনের বিরুদ্ধে
দুদকের উপপরিচালক মো. জহিরুল হুদা অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
২৪ আসামির মধ্যে সাবেক মন্ত্রী এম সাইফুর রহমান, আব্দুল মান্নান
ভুইয়া, সাবেক মন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, খালেদা
জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো, এম কে আনোয়ার, সাবেক মন্ত্রী এম শামছুল ইসলাম, বন্দরের
প্রধান অর্থ ও হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা আহমেদ আবুল কাশেমের মৃত্যুর পর মামলায় বর্তমানে
আসামির সংখ্যা ১৫ জন।
অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সাবেক
বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান
কমোডর জুলফিকার আলী, সাবেক মন্ত্রী কর্নেল আকবর হোসেনের (প্রয়াত) স্ত্রী জাহানারা আকবর,
দুই ছেলে ইসমাইল হোসেন সায়মন এবং এ কে এম মুসা কাজল, এহসান ইউসুফ, সাবেক নৌ সচিব জুলফিকার
হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক সদস্য এ কে রশিদ উদ্দিন আহমেদ এবং
গ্লোবাল এগ্রোট্রেড প্রাইভেট লিমিটেডের (গ্যাটকো) পরিচালক শাহজাহান এম হাসিব, সাবেক
মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ
হোসেন।
মন্তব্য করুন
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।
দলীয় সিদ্ধান্ত মানেননি তৃণমূল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনার পরও নির্বাচনি মাঠ থেকে সরেননি স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। সোমবার প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনেও তারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। উল্টো নানা যুক্তি দেখিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের ভিতরও এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বিশেষ করে দলের দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের ভূমিকা নিয়েও কেন্দ্রের মধ্যে অস্বস্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কঠোর নির্দেশ দেয়ার পরও কেন মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হলো না এই নিয়ে দলের মধ্যে চলছে নানা রকম আলাপ-আলোচনা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের মধ্যে যারা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেনি তাদের বিষয়ে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলীয় নির্দেশনা অমান্য করলে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশনের ব্যাপারে চিন্তা করা হবে। সময়মতো অবশ্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।