নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ১৮ জুলাই, ২০১৮
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে গতকাল মঙ্গলবার আর্ল রবার্ট মিলারের নাম ঘোষণা করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রাষ্ট্রদূত হিসেবে মিলারের যোগদানের আগে এখন শুধুই মার্কিন সিনেটের অনুমোদনের অপেক্ষা। অনুমোদনের পরপরই বর্তমানে বতসোয়ানায় রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালনরত মিলার বাংলাদেশে নিযুক্ত বর্তমান মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের স্থলাভিষিক্ত হবেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, হঠাৎ করে নতুন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত কেন নিলো যুক্তরাষ্ট্র?
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রায় দু বছর আগে, ২০১৬ সালে। রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সাধারণ রীতি হচ্ছে, ক্ষমতাসীন দল বদল হলে বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতদেরও বদল করা হয়। কিন্তু রিপাবলিক পার্টি ক্ষমতায় আসার পরও ডেমোক্রেটদের দ্বারা বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটকে পরিবর্তন করা হয়নি। নির্বাচনের আগের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রাষ্ট্রদূত পরিবর্তন থেকেই প্রমাণিত হয়, বার্নিকাটকে সরিয়ে মিলারকে আনা কোনো রুটিন পরিবর্তন নয়। এর পেছনে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অন্য কোনো পরিকল্পনার সম্ভাবনা দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
আমরা যদি ইতিহাস পাঠ করি তাহলে দেখব, বাংলাদেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সময় ও অগণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের সময় যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশে নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূতদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। গুরুত্বপূর্ণ গোপন নথি ফাঁসের জন্য বিখ্যাত জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের উইকিলিকস প্রকাশিত বিভিন্ন নথিপত্রে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের এই ভূমিকার কথা বারবার উঠে এসেছে। রাষ্ট্রদূতের হঠাৎ পরিবর্তনের পেছনে এমনই কোনো বিষয় কাজ করছে কিনা সে প্রশ্ন উঠে এসেছে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবসময়ই হস্তক্ষেপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বঙ্গবন্ধু হত্যা। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার যে বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে ষড়যন্ত্রে জড়িত, এর প্রমাণও রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধী । এই পরাশক্তির বিরোধিতা সত্ত্বেও মাত্র ৯ মাসের যুদ্ধে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যায়। কিসিঞ্জারের সাবেক স্টাফ অ্যাসিস্ট্যান্ট রজার মরিস এক সাক্ষাৎকারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি কিসিঞ্জারের ঘৃণার কথা স্বীকার করেছেন। মরিস জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভ্যুদয়কে কিসিঞ্জার তার ব্যক্তিগত পরাজয় বলে মনে করতেন। এর প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ তিনি হাতছাড়া করেননি।
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডেও মার্কিন দূতাবাসের ভূমিকা আছে বলে অভিযোগ রয়েছে। উইকিলিকসের ফাঁস করা তথ্য থেকে জানা যায়, ঢাকায় নিযুক্ত তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড টি স্নাইডার পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রাখছিলেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ঘণ্টায় ঘণ্টায় বার্তা পাঠিয়েছিলেন ওয়াশিংটনে। এই সক্রিয়তা মার্কিন দূতাবাস আগেও একবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের সময় দেখিয়েছিল।
স্বৈরশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সময়ও রাজনীতিতে মার্কিন দূতাবাস প্রভাব বিস্তার করেছিল। সে সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি. মিলারের তৎকালীন বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে তোলপাড় তোলা ওয়ান ইলেভেনের ঘটনায়ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা আছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনার সময় ঢাকায় দায়িত্ব পালন করা মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্যাট্রেসিয়া এ বিউটেনিসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নাক গলানোর অভিযোগ খুব পুরনো। তিনি ২০০৭ সালের জুন মাসে ঢাকার দায়িত্ব শেষ করে ফিরে গেলে জেমস এফ মরিয়ার্টি রাষ্ট্রদূত হিসেবে বাংলাদেশে আসেন। তিনিও নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেননি বলে অভিযোগ আছে। মরিয়ার্টি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রচুর তারবার্তা পাঠান।
এর আগে ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে ক্ষমতাসীন চারদলীয় জোট সরকারের ওপর নজর রেখেছিল যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস। এর প্রমাণ পাওয়া যায়, প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং তাঁর সরকারের প্রভাবশালী ১৭ ব্যক্তি সম্পর্কে ২০০৫ সালের ১১ মে তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত হ্যারি কে টমাসের ওয়াশিংটনে পাঠানো একটি মূল্যায়ন থেকে। সেখানে বলা হয়েছে, বেগম জিয়া সরকারের ঘনিষ্ঠ এমন প্রভাবশালী ১৭ জনের মধ্যে ১২ জনের সঙ্গেই যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এ ছাড়া জামাত নেতা নিজামী মার্কিন সরকারের প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করেন বলেও জানা গেছে তারবার্তায়। সাড়া জাগানো ওয়েবসাইট উইকিলিকসই ওই নথিটি ফাঁস করে।
বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নাম লিখিয়েছে। দিনে দিনে বিশ্ব রাজনীতিতে বাংলাদেশের গুরুত্ব বাড়ছে। এমন সময়ে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন আসন্ন। এ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র নীরব থাকবে না সেটাই স্বাভাবিক। এ বিষয়ে ভারতের সহযোগিতা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ওয়াশিংটন প্রত্যাশা করছে।
নয়াদিল্লি ও ওয়াশিংটনের সম্পর্ক এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক কারণে এই দুই দেশের নিজেদের মধ্যে সুসম্পর্ক রাখা উচিত বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কয়েক বছর আগে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে এস. জয় শংকরকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই নিয়োগের পেছনে তাঁর যে গুণটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল তা হলো, তিনি এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। বাংলাদেশেও এবার যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এমন একজন ব্যক্তিকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে যার সঙ্গে ভারতের খুব ভালো সম্পর্ক আছে।
সত্যিকার অর্থে, প্রতিবেশী ভারত বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখার ক্ষমতা রাখে, এটি স্বীকৃত। আর মিলার বতসোয়ানায় দায়িত্ব পালনের আগে নয়াদিল্লিতে আঞ্চলিক নিরাপত্তা কর্মকর্তা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। স্বাভাবিকভাবেই ভারতের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে তাঁর জানাশোনা ও প্রভাব বেশ ভালো রকমই আছে। আর নয়াদিল্লির সঙ্গে এই জানাশোনারই অভাব ছিল মার্শা বার্নিকাটের। ভারতের কূটনীতি এখন অনেক শক্তিশালী। এই কূটনীতিতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছিলেন না বার্নিকাট। আর বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র যা চায় তা ভারতের সঙ্গে মিলেমিশেই তাকে নিতে হবে এটি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিদরা ভালোই বুঝতে পারছেন। তাই হয়তো মিলারকে বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূত করে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।
ভারতের সঙ্গে একটি ভালো বোঝাপড়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার একটি উদ্দেশ্য যে যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে আগেই রাষ্ট্রদূত বদলের সিদ্ধান্তে সেটি স্পষ্ট হয়ে গেল।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপি ড. মঈন খান
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বিএনপি
মন্তব্য করুন
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে বিরত
থাকা বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন, সিপিবিসহ ১৪টি নিবন্ধিত দল উপজেলা নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে
না। দেশের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থানে তেমন কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। আর সংসদ
নির্বাচনে ভোটের মাঠে থাকা বেশিরভাগ দলই থাকছে উপজেলায়। এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে
অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকলেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ তা ব্যবহার করছে না। তাদের পথেই হাঁটছে
১৪ দলীয় জোটের শরিক গণতন্ত্রী পার্টি।
তবে দলীয় প্রতীকেই উপজেলা নির্বাচনে
প্রার্থী দিতে চায় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ ১১টি নিবন্ধিত দল। আর দলীয়ভাবে
প্রার্থী দেওয়া হবে কি না—তপশিল ঘোষণার পরও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি পাঁচটি রাজনৈতিক
দল। অবশ্য আওয়ামী লীগ প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দেওয়ায় এবারের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীর
সংখ্যা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তাদের মতে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের
মতো এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে লড়াই হবে মূলত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে।
দেশে মোট উপজেলা ৪৯৫টি। আগামী ৮ মে
প্রথম ধাপে ১৫২টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইসি ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী, প্রথম
ধাপের উপজেলা নির্বাচনের জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে
১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১৭ এপ্রিল ও প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল।
এরপর আগামী ২৩ মে দ্বিতীয়, ২৯ মে তৃতীয় ও ৫ জুন শেষ ধাপের ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
উপজেলা নির্বাচনে কার স্বাক্ষরে প্রার্থী
নির্ধারিত হবে, তা বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) মধ্যে লিখিতভাবে জানাতে ইতোমধ্যে রাজনৈতিক
দলগুলোকে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ইসি সূত্র জানায়, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন
সামনে রেখে নির্বাচন ও আচরণ বিধিমালায় ব্যাপক সংশোধন আনা হয়েছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণের
জন্য দলীয় ও স্বতন্ত্র দুই ধরনের সুযোগই রাখা হয়েছে। তবে এ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি
বাড়াতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ছাড় দিয়ে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। নির্বাচনে যাতে
অধিকসংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী অংশ নিতে পারেন, সেজন্য প্রার্থীর মনোনয়নপত্রের সঙ্গে
২৫০ ভোটারের সমর্থন সূচক স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা সংযুক্তির বিষয়টি বাতিল করা হয়েছে। এ
ছাড়া নির্বাচনী পোস্টার, নির্বাচনী প্রচারণা এবং প্রার্থীদের জামানতসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ
বিষয়ে বড় ধরনের সংশোধন আনা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণে নিবন্ধিত
৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে বিএনপিসহ ১০টি দল। দলীয় প্রতীকে
অংশ নেবে ১১টি দল। প্রতীক ছাড়া অংশ নেওয়ার পক্ষে দুটি। এখনো নির্বাচনে অংশ গ্রহণ বিষয়ে
সিদ্ধান্তহীনতায় পাঁচটি রাজনৈতিক দল। সব মিলিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পথেই নিবন্ধিত
বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল। তারা ইতোমধ্যে উপজেলাসহ স্থানীয় সরকারের সব পর্যায়ের নির্বাচনে
অংশ নিতে প্রার্থীও ঠিক করতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, বিএনপির নেতৃত্বাধীন যুগপৎ
আন্দোলনে থাকা দলগুলোর মধ্যে ছয়টি নিবন্ধিত। এসব দলের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, তারা
উপজেলা নির্বাচনও বর্জন করবেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলে আটটি নিবন্ধিত
দল। একটি ছাড়া সবগুলোই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক। এ ছাড়া সংসদের প্রধান
বিরোধী দল জাতীয় পার্টি দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়েছে।
জাপার দপ্তর সম্পাদক রাজ্জাক খান জানিয়েছেন,
দলীয় প্রতীকে তারা স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে দুই সিটিতেও
তারা প্রার্থী দিয়েছেন। রংপুর সদর উপজেলা পরিষদে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে বলেও জানান
তিনি।
জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে
অংশ নেওয়া নিবন্ধিত দলগুলোর বেশিরভাগই উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। আবার সিদ্ধান্তহীনতায়
রয়েছে কোনো কোনো দল।
এর আগে ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে
অংশ না নিলেও বিএনপি পরে উপজেলার ভোটে অংশ নিয়েছিল। যদিও তখন পর্যন্ত স্থানীয় সংসদ
নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেওয়ার বিধান চালু হয়নি। পরে ২০১৯ সালে উপজেলায় দলীয় প্রতীকে
নির্বাচন হলেও বিএনপি সেখানে প্রার্থী দেয়নি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জন করার পর এবার
স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও অংশ না নেওয়ার দলীয় সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে রেখেছেন তারা।
তবে নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক
তৃণমূল বিএনপি। দলটির চেয়ারপারসন শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, ‘দল হিসেবে উপজেলা নির্বাচনে
অংশ নেওয়ার একটা মনোভাব আছে। যারা অংশ নিতে চায় তাদের আমরা উৎসাহিত করছি। তবে দলীয়ভাবে
এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মহাসচিব দেশের বাইরে রয়েছেন। ঈদের পর দেশে ফিরলে তখন চূড়ান্ত
সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে এখনো কোনো
সিদ্ধান্ত নেয়নি আরেক নতুন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম)।
এ তথ্য জানিয়ে দলটির মহাসচিব ড. মো.
শাহজাহান বলেন, ‘আসন্ন উপজেলা নির্বাচনও বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো হলে, সেখানে
অংশ নেওয়ার কোনো অর্থ হয় না। তবে আমরা এখন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। শিগগির এ ব্যাপারে
দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে
যাওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হলে দলীয় প্রতীকে, নাকি প্রতীক ছাড়া যাব, তখন সে
সিদ্ধান্তও হবে।’
কল্যাণ পার্টিও নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে
ইতিবাচক বলে জানা গেছে। জানতে চাইলে দলটির চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম
বলেন, ‘কল্যাণ পার্টি নির্বাচনমুখী দল। শিগগির উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত
নেওয়া হবে।’
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে
গেলে দলীয় হাতঘড়ি প্রতীকে ভোট করবেন তাদের প্রার্থীরা।’
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (কাঁঠাল প্রতীক)
মহাসচিব জাফর আহমেদ জয় বলেন, ‘তারা দলীয় প্রতীকে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন।’
তবে চেয়ারম্যান পদে ১ লাখ টাকা জামানত
নির্ধারণ সঠিক হয়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনে আগে জামানত ছিল ১০ হাজার
টাকা। তাই জামানতের টাকা আগের অবস্থায় নেওয়ার জন্য শিগগির রিট করা হবে।’
ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান
শেখ ছালাউদ্দিন ছালু বলেন, তারা আনুষ্ঠানিকভাবে উপজেলা নির্বাচনে যাবেন না। তবে দলের
কোনো প্রার্থী চাইলে তিনি নির্বাচন করতে পারবেন, কোনো বাধা থাকবে না।’
দলীয় ‘একতারা’ প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ
করবে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)। অন্যদিকে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) নির্বাচনের
বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
এদিকে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণের
ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বাংলাদেশ কংগ্রেস। ডাব প্রতীকের দলটির চেয়ারম্যান কাজী
রেজাউল হোসেন কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত
জানাব।’
তবে ১৪ দলের শরিক সাম্যবাদী দলের সাধারণ
সম্পাদক দীলিপ বড়ুয়া জানিয়েছেন, তিনি এ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেননি।
দলীয় প্রতীক ছাড়া অংশ নেবে গণতন্ত্রী
পার্টি। দলটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. শহীদুল্লাহ সিকদার বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন
দলীয় প্রতীক ছাড়াই হওয়া উচিত।’
ওয়ার্কার্স পার্টি উপজেলা নির্বাচন
করবে দলীয় হাতুড়ি প্রতীক নিয়ে। একই অবস্থানে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলও (জাসদ)।
নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত
নিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবিসহ পাঁচ দলের সমন্বয়ে গঠিত বাম গণতান্ত্রিক
জোট। জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘পরিবেশ না থাকায় আমরা উপজেলা
নির্বাচনেও অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত
নিয়েছে ড. কামাল হোসেনের দল গণফোরাম। দলটির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা
নির্বাচনে যাচ্ছি না।’
দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে যেতে চায় কৃষক
শ্রমিক জনতা লীগ। একই পথে হাঁটছে তরীকত ফেডারেশন। দলটির চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর
মাইজভান্ডারী বলেন, ‘আমাদের কেউ নির্বাচনে আগ্রহী হলে সুযোগ দেওয়া হবে।’
উপজেলা নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর
এমন অবস্থানের বিষয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী নূরুল আমিন ব্যাপারী বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করছি
সংসদ নির্বাচনে যেভাবে দলগুলোর অবস্থান ছিল উপজেলা নির্বাচনেও সে রকমই আছে। অর্থাৎ
যারা সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল তারা এবারের নির্বাচনেও শরিক হচ্ছে। তবে নির্দলীয়
নির্বাচন করতে আওয়ামী লীগ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এতে হয়তো প্রার্থী কিছুটা বাড়তে পারে।
বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো থেকে অনেকেই স্বতন্ত্র হয়ে অংশ নিতে পারেন।’
নির্বাচন কমিশন ইসি বিএনপি আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
বিএনপি মেজর হাফিজ উদ্দিন কর্নেল অলি আহমেদ মাহমুদুর রহমান মান্না
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগের তৃণমূল ক্রমশ ভেঙ্গে পড়ছে। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের তৃণমূল সংগঠিত করা এবং বিভেদ-বিভক্তির দূর করার জন্য যে ডাক দেওয়া হয়েছিল তারপর একটু পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছিল বলে বটে। কিন্তু এখন আবার উপজেলা নির্বাচনের প্রাক্কালে সারাদেশে তৃণমূল বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগের তৃণমূলকে সামাল দেওয়াই এখন কঠিন হয়ে পড়ছে। একদিকে নির্বাচন কেন্দ্রীক বিরোধ অন্যদিকে দলের চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে যাওয়া আর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তদারকির অভাবে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ এখন সবচেয়ে সঙ্কটের মুখে পড়েছেন বলেই মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারাই।
অবশেষে জিয়া পরিবার মুক্ত হচ্ছে বিএনপি। বিএনপির রাজনীতিতে একটি বড় ধরনের পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে ঠিক কবে, কখন, কীভাবে এ পরিবর্তন হবে সে সম্পর্কে কেউ কোন সুনির্দিষ্ট ধারণা দিতে পারেনি। তবে বেগম খালেদা জিয়া বিএনপিতে পরিবর্তনের ব্যাপারে সবুজ সংকেত দিয়েছেন।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ নির্বাচনে বিএনপি প্যানেল থেকে নির্বাচিত হলেও দায়িত্বভার না নিতে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন সহ চার আইনজীবীকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। তবে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এমন ইঙ্গিত দেন বিএনপিপন্থি এ আইনজীবী নেতা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে বিরত থাকা বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন, সিপিবিসহ ১৪টি নিবন্ধিত দল উপজেলা নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে না। দেশের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থানে তেমন কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। আর সংসদ নির্বাচনে ভোটের মাঠে থাকা বেশিরভাগ দলই থাকছে উপজেলায়। এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকলেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ তা ব্যবহার করছে না। তাদের পথেই হাঁটছে ১৪ দলীয় জোটের শরিক গণতন্ত্রী পার্টি।
বিএনপি এখন দলে এবং তাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করছে এমন অনেক নেতাকেই বিশ্বাস করে না। বিএনপির নীতিনির্ধারকদের কাছে এ রকম তথ্য উপাত্ত আছে যে, তারা আসলে সরকারের সঙ্গে গোপনে আঁতাত করেছে এবং বিএনপির সঙ্গে থেকে আন্দোলনকে দুর্বল করেছে বা বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এই সমস্ত নেতাদের কেউ কেউ বিএনপির দলের আবার কেউ কেউ দলের বাইরে।