নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ২৩ জুলাই, ২০১৮
বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবসময়ই বিএনপিকে মনে করা হয় পাকিস্তানপন্থী। আর পাকিস্তানপন্থী বিএনপিকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠায় দেশটির চেষ্টার অন্ত নেই। ২০০১ সালের বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের জন্য বিএনপিকে অর্থ সহায়তা দিয়েছিল পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই, যা দেশটির আদালতেই প্রমাণিত হয়। গোয়েন্দা সংস্থাটির সাবেক প্রধান বিএনপিকে অর্থ দেওয়ার বিষয়টি আদালতে স্বীকার করেন। আর বিএনপি যখনই ক্ষমতায় আসে পাকিস্তানের সঙ্গে সরকারের মধুর সম্পর্ক থাকে। বাংলাদেশ আঞ্চলিক ইস্যুগুলোতে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছে। অপরদিকে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় থাকে তখন পাকিস্তানের সঙ্গে একটি দূরত্ব ও বৈরিতা তৈরি হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফের সঙ্গে সাক্ষাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুতে পাকিস্তানের প্রকাশ্য ও পরোক্ষ হস্তক্ষেপের কথা আমরা প্রায়ই জানতে পারি। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সময় পাকিস্তানের আইএসআইয়ের ভূমিকার কথা সর্বজন বিদিত। এখন আদালতে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার যে মামলা চলছে সেখানেও আইএসআইয়ের সংশ্লিষ্টতার কথা এসেছে। বাংলাদেশে বিএনপি সরকারের সময়ে উলফাসহ ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার যে অভিযোগ উঠেছে সেখানেও পাকিস্তান সরকারের মদদ ছিল বলে জানা গেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অবৈধ অস্ত্রের চালান ধরা পড়ে ২০০৪ সালে। ১০ ট্রাক অস্ত্র ধরা পড়ার ওই ঘটনায় তৎকালীন বিএনপি সরকারের সঙ্গে পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়।
বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপি যখনই কোনো গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয় সেগুলো সবই পাকিস্তানের পক্ষে যায়। কারণ এসব সিদ্ধান্ত আসলে পাকিস্তানের পক্ষ থেকেই দেওয়া হয়। বিএনপির পক্ষ থেকে শুধু ঘোষণাটি আসে।
গত রোজার সময় থেকেই বিএনপি নেতারা সবসময়ই বলে আসছিলেন তারা ঈদের পরই আন্দোলনে যাবেন। অনেক কর্মসূচিরই গল্প শোনান বিএনপি নেতারা। কিন্তু তারা বড় কোনো কিছুরই ঘোষণা দিতে ও বাস্তবায়ন করতে পারছেন না পাকিস্তানের কারণেই। কারণ পাকিস্তানের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশ আপাতত পাচ্ছে না বিএনপি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তানের নির্দেশ নিয়েই মূলত রাজনীতি করে বিএনপি। আরও সুনির্দিষ্ট করে বলা হলে, আইএসআইয়ের নির্দেশেই বিএনপি চলে।
গত কয়েক বছর ধরে নিজেদের রাজনীতি নিয়েই মহাব্যস্ত পাকিস্তান। সম্প্রতি কারাবন্দী হওয়া পাকিস্তান মুসলিম লিগ নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কও ঘনিষ্ঠ। খালেদা জিয়ার সঙ্গে নওয়াজ শরিফের একটি ব্যক্তিগত সম্পর্কও ছিল বলে জানা গেছে। বিএনপিকে কোনো সহায়তা করবেন কি নওয়াজ শরিফ নিজেই আছেন এখন বিপদে। মেয়ে মরিয়ম নেওয়াজ সহ পাকিস্তানে বন্দী আছেন নওয়াজ শরিফ। এছাড়া পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর সঙ্গেও বিএনপির ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে কথা জানা গেছে। পাকিস্তানে আগামী ২৫ জুলাই অনুষ্ঠিত হচ্ছে জাতীয় নির্বাচন। আইএসআইয়ের সম্পূর্ণ ব্যস্ততা সেই নির্বাচন ঘিরে। আর এ কারণেই বাংলাদেশে বিএনপির রাজনীতিসহ বিশ্বের অনেক বিষয়েই সময় করতে পারছে না। পাকিস্তানের কোনো সিদ্ধান্ত এসে না পৌঁছানোয় বিএনপিও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।
জানা গেছে, চারটি বিষয়েই মূলত সিদ্ধান্তহীনতায় আছেন বিএনপি নেতারা। প্রথমত, বিএনপি ঠিক করতে পারছে না তারা আন্দোলন করবে নাকি নির্বাচন করবে। দ্বিতীয়ত, বিএনপি সিদ্ধান্ত নিতে পারছে খালেদা জিয়ার মুক্তি না হলে তারা নির্বাচনে যাবে কিনা। তৃতীয়ত, বর্তমানে আন্দোলনের ধরন কি হবে তা ঠিক করতে পারছেন না বিএনপির নেতারা। শেষোক্ত, জামাতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের ভিত্তিমূলই হলো পাকিস্তান। এখন পাকিস্তান যে অভিভাবক হিসেবে সম্পর্কটা ঠিক ঠাক করে দিবে তা হচ্ছে না। নির্বাচনের কারণে ব্যস্ত পাকিস্তানের আইএসআই এবং বিএনপির অপর বন্ধুরা। কোনো মিটমাট না হওয়ার কারণেই সিলেটে নির্বাচন করছে জামাত। জামাত নেতারাই বলছেন জোট ভাঙ্গা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
বিএনপির অভিভাবকত্বে পাকিস্তানের সাম্প্রতিক অনুপস্থিতির মূল কারণ হিসেবে দেশটির অভ্যন্তরীণ টলায়মান রাজনৈতিক অবস্থার কথাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া এই কারণে গত কয়েক বছরে আঞ্চলিক বিষয়গুলোতেও পাকিস্তানের প্রভাব ক্ষুণ্ণ হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তানের নির্বাচন হওয়া এবং সেখানে একটি সরকার না বসা পর্যন্ত অভিভাবক হিসেবে বিএনপিকে দেশটির পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত দেওয়া কঠিন। আশা করা হচ্ছে, পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন শেষে নতুন সরকার বসার পরই নানা বিষয়ে সিদ্ধান্ত ও দিকনির্দেশনা পাবে বিএনপি। তাই বিএনপির দৃষ্টি এখন পাকিস্তানের নির্বাচনেই নিবদ্ধ।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
জামায়াত বিএনপি উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
বিএনপি তারেক জিয়া উপজেলা নির্বাচন রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন বিএনপি তারেক জিয়া বহিষ্কার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
জামায়াতে ইসলামও কী বিএনপিকে ধোঁকা দিল? বিএনপির সঙ্গে সুর মিলিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী ফ্যাসিস্ট এই রাজনৈতিক দলটি ঘোষণা করেছে যে, তারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। নিবন্ধনহীন রাজনৈতিক দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা না দিলেও প্রথম পর্বে যে সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র দাখিল শেষ হয়েছে সেখানে জামায়াতের ২৩ জন সদস্যের নামের তালিকা পাওয়া যাচ্ছে।
বিএনপিতে তোলপাড় চলছে। বাইরে থেকে কেউ বুঝতে পারছেন না বিএনপিতে কী ঘটছে। কিন্তু দলের ভিতর যারা রয়েছেন তারা বলছেন, দলের ভিতরে এক প্রকার দম বন্ধ এবং শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা বিরাজ করছে। একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে প্রশ্ন উঠেছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ হচ্ছে। দলের ভিতর বিভক্তি, অনৈক্য হতাশা এখন প্রকাশ্য।
আওয়ামী লীগে উত্তরাধিকারের রাজনীতি নতুন নয়। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা এবং মন্ত্রীরা উত্তরাধিকার সূত্রেই রাজনীতিতে এসেছেন। বর্তমান মন্ত্রিসভায় একাধিক সদস্য রয়েছেন যারা রাজনীতিতে এসেছেন পারিবারিক ঐতিহ্য থেকে, পিতার হাত ধরে, অথবা তাদের নিকট আত্মীয়দের উৎসাহ উদ্দীপনায়। বর্তমান মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য আছেন, যাদের বাবারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন সেই সূত্রে তারা রাজনীতিবিদ।
আওয়ামী লীগ দলগতভাবে উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট এবং কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন উপজেলায় মন্ত্রী, এমপি বা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ভাই ব্রাদার বা স্বজনদেরকে প্রার্থী করা যাবে না। যারা ইতিমধ্যে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।