নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ২৪ জুলাই, ২০১৮
আওয়ামী লীগের জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) সম্মেলন শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে শুরু হওয়া এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজই প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনেক দাবি-দাওয়া পেশ করেছেন ডিসিরা। আবার গতকাল মঙ্গলবার বিতরণ করা হয়েছে জনপ্রশাসন পদক-২০১৮। পুরস্কৃত করা হয়েছে ৩৯ ব্যক্তি ও তিন প্রতিষ্ঠানকে। সেখানেও ছিল অনেক দাবিদাওয়া। আর বর্তমান সরকারের প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে আমলাদের প্রতিনিধিত্ব। প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যেখানে ঐতিহ্যগতভাবে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব দেখা যেত সেখানেও সাবেক আমলাদের উপস্থিতি। এই পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে, আওয়ামী লীগ কি তাহলে রাজনৈতিক নির্ভরতা বাদ দিয়ে আমলা নির্ভর হয়ে পড়ছে?
ইতিহাস থেকে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধুর একান্ত সচিব (ইপিএস) ছিলেন মোহাম্মদ হানিফ। তিনি ছাত্রাবস্থা থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন। ১৯৬৫ সাল থেকেই বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে রাজনীতিতে সহযোগিতা করে গেছেন মোহাম্মদ হানিফ। ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান ও ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল তাঁর। ৯১’তে যখন খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসলে তাঁর একান্ত সচিব হন বিএনপির রাজনীতির পরিচিত মুখ মোসাদ্দেক হোসেন ফালু। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এলে র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীকে একান্ত সচিব-১ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এসময় আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাছিম ছিলেন একান্ত সচিব-২। এই দুই জন একান্ত সচিবই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট থেকে উঠে এসেছিলেন।
শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে আবার ক্ষমতায় আসেন। এরপর থেকেই সচিব পর্যায়ে আমলাতন্ত্রের প্রভাব চোখে পড়তে থাকে। তখন সেলিমা খাতুনকে একান্ত সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। সেলিমা খাতুন পুরোদস্তুর আমলা, আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই তাঁর। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী একান্ত সচিব-১ হিসেবে আছেন তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া এবং একান্ত সচিব-২ হলেন ওয়াহিদা আক্তার। এরা দুজনই রাজনৈতিক পরিচয়হীন পুরোদস্তুর আমলা। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদ এসডিজি বিষয়ক সমন্বয়কারী মো. আবুল কালাম আজাদ একজন আমলা। একমাত্র এপিএস সাইফুজ্জামান শেখর ব্যতীত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রাজনৈতিক ভাবে আসা ব্যক্তিদের সংখ্যা একদমই নেই বললে চলে।
বর্তমানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েই প্রধানমন্ত্রী আমলাদের ওপরে বেশি নির্ভর করছেন। বিষয়গুলো নিয়ে আমলা ও সচিবদের সঙ্গেই প্রধানমন্ত্রী বেশি আলোচনা করেন। আর আওয়ামী লীগের গত ১০ বছরে সচিব ও আমলাদের মধ্যে অনেক রাজনৈতিক প্রবণতা বেড়ে গেছে। যেসব সচিব ও আমলারা বিএনপির সময় অনেক সুবিধা ভোগ করেছে, জিয়াউর রহমানকে নিয়ে কবিতা লিখেছে, তারাই এখন আওয়ামী লীগার হিসেবে সরকারের ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
আওয়ামী লীগের আমলে সচিব-আমলাদের অনেক সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এমন অনেক আমলা রয়েছে যারা সময়ের আগেই পদোন্নতি পেয়ে সচিবদের পদমর্যাদা পেয়েছে। এসব আমলাদের বিদেশে প্রচুর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আমলাদের নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মিটিং ও কর্মসম্পাদন চুক্তি করেছেন। তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের পুরষ্কারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমলাদের জন্য এই সুযোগ-সুবিধা ব্যবস্থা করা ইতিবাচক। তবে একটা প্রশ্ন উঠছে, আওয়ামী লীগ কি তাঁর রাজনৈতিক চরিত্র হারাচ্ছে? আওয়ামী লীগে রাজনৈতিক লোকজনের জন্য যে জায়গা, সেই জায়গা কি এখন আর আছে? বর্তমান সময়ে দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন সময় যারা আমলারা ছিল, যারা একই সঙ্গে আওয়ামী লীগার হিসেবে পরিচিত ছিল, তারাও কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন।
একটা সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করা হতো। আওয়ামী লীগ-বিএনপি নির্বিশেষে এটা করে আসছে। কিন্তু বর্তমানে এই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে রাজনৈতিক ব্যক্তি আর নেই। বর্তমানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে নন বরং সাবেক আমলা হিসেবেই পরিচিত। প্রশ্নে উঠছে, বর্তমানে আওয়ামী লীগের অতিরিক্ত যে আমলা নির্ভরতা তা কি কোন বিপর্যয়ের কারণ হবে? আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
রাজনীতিতে যেমন আমলাতন্ত্রের প্রভাব বাড়ছে, তেমন অনেক আমলাও আওয়ামী লীগের টিকিট নেওয়ার জন্য উৎসাহী হয়ে উঠছেন। এর ফলে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক চেতনার জায়গা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ. টি. ইমাম, অর্থনেতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাবেক আমলা। এই ১০ বছরে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জায়গায় বর্তমান ও সাবেক আমলাদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। তাঁর ফলে তৃণমূল থেকে উঠে আসা রাজনীতিবিদরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্নে উঠেছে। এখনই ভেবে দেখার বিষয়, আওয়ামী লীগের যে মূল আদর্শিক রাজনীতি সেটা কি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে? আওয়ামী লীগ আমলাদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে?
বাংলা ইনসাইডার/বিপি/জেডএ
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া তারেক জিয়া বিএনপি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল
মন্তব্য করুন
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা জাহাঙ্গীর কবির নানক
মন্তব্য করুন
তীব্র গরম মির্জা আব্বাস বিএনপি
মন্তব্য করুন
বিএনপি উপজেলা নির্বাচন বহিষ্কার
মন্তব্য করুন
ড. আব্দুর রাজ্জাক আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন শাজাহান খান
মন্তব্য করুন
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দুজনই দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে তাদের নেতৃত্ব থেকে বাদ দেয়ার ব্যাপারে পশ্চিমা দেশের কূটনীতিকরা বিএনপি পরামর্শ দিয়ে আসছেন এমন গুঞ্জন দীর্ঘদিনের। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কখনও মুখ খুলেননি বিএনপির কেউই। তবে এবার বিষয়টি প্রকাশ্যে আনলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। তিনি জানিয়েছেন বিএনপি থেকে বেগম জিয়া এবং তারেক জিয়াকে বাদ দেয়ার বিষয়টি নিয়ে দল ভাবছে। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে দলের এমন ভাবনার কথা জানান বিএনপির এই নেতা।
উপজেলা নির্বাচন থেকে কঠোর অবস্থান থেকে ইউটার্ন নিলো বিএনপি। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, আপাতত যারা উপজেলা নির্বাচন করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। তবে সব কিছু নির্ভর করবে নির্বাচনের ফলাফলের ওপর। যারা পরাজিত হবে তাদের ওপর নেমে আসবে শাস্তির খড়গ। আর যারা বিজয়ী হবেন তাদের বিষয়টি উপেক্ষা করা হবে। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাওয়ার কারণে ফেঁসে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান। তবে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেও নীতিমালার কারণে বেঁচে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক। তবে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন এবং যারা দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।