নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৫ জুলাই, ২০১৮
বাংলাদেশে যখনই জাতীয় নির্বাচনের সময় হয় তখন ছোট ছোট দলগুলোর গুরুত্ব বেড়ে যায়। দলগুলোর তেমন জনসমর্থন কিংবা ভোট নেই কিন্তু অনেক বড় বড় নেতা আছেন, নির্বাচন আসলে এমন দলগুলোর গুরুত্ব বাড়ে। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এবারও গত কয়েক মাস ধরে ছোট ছোট দলগুলোর গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে বলে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি উভয় দলই চেষ্টা করছে দলগুলোকে নিজ নিজ জোটে টানার জন্য। এই উদ্দেশ্যে গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বাম দল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দেখা করতে যান।
শুধু সিপিবিই নয়, আওয়ামী লীগের সূত্রানুযায়ী দলটি অন্যান্য বাম দলের সঙ্গেও জোট করতে আগ্রহী। নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহী, এলডিপির সঙ্গেও যোগাযোগ আছে আওয়ামী লীগের। বি. চৌধুরীর বিকল্প ধারার সঙ্গেও আওয়ামী লীগ একটি নির্বাচনী সমঝোতা করতে চায়। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, এই দলগুলোর সঙ্গে আওয়ামী লীগ প্রকাশ্য অথবা গোপনে আলোচনা করছে।
এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্য হলো, ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের মতো পরিস্থিতি যেন এবার আর তৈরি না হয়। ঐক্যবদ্ধভাবে না হলেও সবগুলো দল যাতে অন্তত আলাদা আলাদা ভাবে নির্বাচন করে সে রকম পরিবেশ সৃষ্টি করতে সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ২০১৪’র নির্বাচনে সিপিবি, বামফ্রন্টসহ সমাজতান্ত্রিক দলগুলো নির্বাচন বর্জন করেছিল। এবার আর এর পুনরাবৃত্তি চায় না আওয়ামী লীগ। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে সিপিবির সঙ্গে তাঁরা মিটিং করেছে, বামফ্রন্টের সঙ্গেও তাঁরা মিটিং করবে। আওয়ামী লীগ মূলত যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে এরকম দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করছে, এই ঘরানার দলগুলোর সঙ্গেই নির্বাচন নিয়ে তাঁরা আলাপ-আলোচনা করছে।
বিএনপিও কিন্তু হাত গুটিয়ে বসে নাই। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটিও চেষ্টা করছে ছোট দলগুলোর সঙ্গে জোট করার। তাঁদের মূল টার্গেট হলো যুক্তফ্রন্ট, আর দলটির নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ আছে। এছাড়া দেশের ইসলামী ও দক্ষিণপন্থী দলগুলোকেও নিজেদের জোটে ফেরানোর জন্য বিএনপি অনেকভাবেই চেষ্টা করে যাচ্ছে। গাজীপুরের নির্বাচনে ইসলামী রাজনৈতিক দল হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী বিএনপি প্রার্থী হাসানউদ্দিন সরকারকে সমর্থন না দিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমকে সমর্থন দেওয়ায় বিএনপির নির্বাচনী প্রচারণায় ধর্ম খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামকের ভূমিকা পালন করতে পারেনি। এছাড়া ২০ দলীয় জোটেরও এখন টালমাটাল অবস্থা। সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহীমের কল্যাণ পার্টির মতো একাধিক দল এই জোটে থাকতে চাচ্ছে না। সব মিলিয়ে বিএনপির জোট গড়ার প্রচেষ্টা খুব একটা ভালো অবস্থায় নেই।
অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ১৪ দলীয় জোটের পরিসীমাটি বৃদ্ধি করতে চেয়েছিল ঠিকই কিন্তু হাসানুল হক ইনু এবং মঈন উদ্দিন খান বাদল বা দিলীপ বড়ুয়ার মতো ১৪ দলের অনেক নেতা ১৪ দলের আয়তন বৃদ্ধি করার বিপক্ষে অবস্থান নেয়। তাই আওয়ামী জোট করার ক্ষেত্রে কিছুটা পিছু হটে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ চাচ্ছে যেসব ছোট দল মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে, বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে সেসব দল নিয়ে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ জোট সৃষ্টি করতে না পারলেও এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করা যাতে দলগুলো নির্বাচনে অংশ নেয়। কারণ আওয়ামী লীগের থিংক ট্যাংক জানে, এই দলগুলোর ভোট নেই কিন্তু সংখ্যাতত্ত্বের বিচারে এদের গুরুত্ব আছে। এই দলগুলো নির্বাচনে আসলে দেশি-বিদেশি মহলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতাও বেড়ে যাবে।
আরেকটি বিষয় হলো, এই ছোট দলগুলোর নেতাদের গলার আওয়াজ অনেক বেশি। বিভিন্ন গণমাধ্যমে তাঁদের বক্তব্যকে গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করা হয়। তাই এই নেতারা কোনো টক শো বা ফোরামে যখন কোনো দলের বিরুদ্ধে কথা বলেন তখন সেই দলটি বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যায়। তাই আওয়ামী লীগ, বিএনপি দুই দলই চাইছে এদের দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে।
নির্বাচনী বছরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি দুই দলই চেষ্টা করছে ছোট দলগুলোর মন জয় করতে কিন্তু শেষ পর্যন্ত কারা সফল হবে তা বোঝার অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছু সময়।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ
মন্তব্য করুন
আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপে নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তকে
উপেক্ষা করে প্রার্থী হওয়ায় মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে উপজেলার বিএনপিপন্থি দুই প্রার্থীকে
শোকজ করা হয়েছে।
বিএনপি থেকে শোকজ করা দুই প্রার্থী হলেন, চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী
উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর
রহমান তুষার (কাপ পিরিচ প্রতীক) ও ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসা (চশমা প্রতীক)।
গতকাল বুধবার (২৪ এপ্রিল) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র অফিসিয়াল
প্যাডে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর
নোটিশ থেকে এ তথ্য জানা যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৫ এপ্রিল বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির
সভায় আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিএনপি নেতা হিসেবে
আপনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। নির্বাচনে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার এহেন মনোবৃত্তি সম্পূর্ণরূপে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি এবং দলের
প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা।
দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে জালিয়াতির নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য
আপনার বিরুদ্ধে কেন দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা
হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্যকোনো মাধ্যমে পত্র প্রাপ্তির কিংবা ফোনে অবহিত হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার
মধ্যে যথাযথ কারণ দর্শিয়ে একটি লিখিত জবাব দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয় বরাবর
নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।
কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাচনে
চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়নের সাবেক
চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর রহমান তুষার বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য দলীয়ভাবে কারণ
দর্শানোর নোটিশ হাতে পেয়েছি। যথাযথ সময়ে আমি নোটিশের জবাবও দেব। তবে ৮ মে উপজেলা পরিষদ
নির্বাচনে আমি জনগণের চাপে পড়ে প্রার্থী হয়েছি। দলীয় সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেন, জনগণের
ভালোবাসা, দোয়া ও সমর্থন নিয়ে শেষ পর্যন্ত আমি নির্বাচনী মাঠে থাকব। আমি টানা ১৯ বছর
বয়ড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে জনগণের সেবা করেছি। যার ফলে পুরো উপজেলায় আমার
একটা অবস্থান রয়েছে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ আমাকে ভালোবাসে। তাদের ভালোবাসা ও দোয়া
নিয়েই আমি আগামীতে পথ চলতে চাই। আশা করি, এ নির্বাচনে আপামর জনগণ আমার পাশে থাকবে এবং
নির্বাচনে ভালো কিছু হবে, ইনশাআল্লাহ।
তবে বিএনপিপন্থি ভাইস চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসাকে একাধিকবার মুঠোফোনে
কল দিলেও রিসিভ হয়নি।
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।