নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০৭ পিএম, ২৮ জুলাই, ২০১৮
তিন সিটি নির্বাচনে প্রচারণার সমাপ্তি ঘটছে আজ শনিবার (২৮ জুলাই) মধ্যরাতে। প্রচারণায় শুরু থেকেই তিন সিটিতেই আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীরা ভোট যুদ্ধের প্রচারণায় এগিয়ে। বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা ভোটের প্রচারণা থেকে অভিযোগের দিকে বেশি মনযোগী থাকতে দেখা যায়। তবে বিএনপির অভিযোগগুলো তেমন গুরুত্বপূর্ণ বা বড় কোনো ধরনের অভিযোগ না। আমাদের দেশে এবং এই উপমহাদেশে নির্বাচনে এমন অভিযোগ হরহামেশাই দেখা যায়। তবে ৩০ জুলাই তিন সিটি নির্বাচনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, জাতীয় নির্বাচনের আগে শেষ বড় ধরনের একটি নির্বাচন। একারণে এই নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের উৎসাহের কোনো কমতি নাই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্যবেক্ষকদের নজর থাকবে তিন সিটি নির্বাচনে। চলুন দেখে নিই কোন সিটিতে কার কি অবস্থান।
সিলেট
সিলেটে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী প্রথম থেকেই এগিয়ে রয়েছে। বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিলেও, ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াত এখন পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে আছে। জামায়াত শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকাটা বিএনপির জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন।
প্রচারণার শেষ দিনে এসে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছে জাতীয় পার্টি। এছাড়াও সিলেটে ইসলামি দলগুলোর বড় একটি ভোট ব্যাংক আছে, যা জয় পরাজয়ে অনেক বড় ফ্যাক্টর। গত সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পরাজয়ের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল এই ইসলামী দলগুলোর ভোট। এবার অবশ্য গত বৃহস্পতিবার থেকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নেমেছে ইসলামী দলগুলোর নেতা-কর্মীরা।
গত মঙ্গলবার থেকে সিলেট সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে প্রবাসীরা গণসংযোগ ও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও অন্যান্য সহযোগী সংঘটনের নেতা-কর্মীরা একযোগে প্রথম দিন থেকেই নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমেদে কামরান তাঁর নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণাকালে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেছেন এই নির্বাচনই আমার জীবনের শেষ নির্বাচন। আমাদের দেশের মানুষ বরাবরই অনেক বেশি ইমোশনাল। তাই সার্বিক বিষয় বিবেচনায় সিটি নির্বাচনে জয়ের পাল্লা কামরানের পক্ষেই বেশি ভারী দেখা যাচ্ছে।
রাজশাহী
রাজশাহী সিটি নির্বাচনের প্রায় একই চিত্র দেখা যায়। মনোনয়ন পাওয়া থেকে শুরু করে নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকেই বিএনপির মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব, কলহ-বিভেদ ও জোটের শরিকদের অসহযোগিতার কারণে একলা চল নীতিতে প্রচারণা চালাতে দেখা যায়। রাজশাহীতে জামায়াতের নেতাকর্মীদের বিএনপির মেয়র প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় খুঁজে পাওয়া যায় নাই। এছাড়া রাজশাহীতে ২০ দলীয় জোটের অন্য দলগুলোর অবস্থা প্রায় অস্তিত্বহীন।
গত কয়েকদিন আগে বিএনপির নির্বাচনী প্রচারণায় ককটেল বিস্ফোরণের অডিও ফাঁসের ঘটনায় আরও বেশি কোণঠাসা হয়ে পড়েছে বিএনপি। বিএনপির দুই নেতার ককটেল বিস্ফোরণের কথোপকথন প্রকাশ হওয়ার পর, একটা বিষয় স্পষ্ট যে, বিএনপি রাজশাহী সিটি নির্বাচনে জয়ের লক্ষে নয়, অন্যকোনো উদ্দেশ্য অংশগ্রহণ করেছে। অবশ্য বিএনপির পক্ষ থেকে প্রথম থেকেই বলা হচ্ছে যে, এই নির্বাচনে তাঁরা অংশগ্রহণ করেছে, সরকারের মুখোশ উম্মোচনের জন্য।
এছাড়াও বিএনপি প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল মেয়র থাকাবস্থায় রাজশাহীতে তেমন উল্লেখযোগ্য কোন উন্নয়ন হয় নাই। অপরদিকে খায়রুজ্জামান লিটন মেয়র থাকা অবস্থায় যে উন্নয়ন হয়েছে তা এখনো নগরবাসীর কাছে দৃষ্টান্ত স্বরূপ।
রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণার শুরু থেকেই ১৪ দলের নেতা-কর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী ওয়াসিউর রহমান দোলন গত ৭ জুলাই লিটনকে সমর্থন দিয়ে মেয়র পদের প্রার্থী থেকে সরে দাঁড়ান।
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটনের প্রচারণায় নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, চিকিৎসক, আইনজীবী, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ অন্যান্য বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন। রাজশাহী শহরে বসবাসরত ৯ উপজেলা ও আট জেলার মানুষ নিজেরাই আলাদা আলাদাভাবে লিটনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগের স্থানীয় সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীতো সার্বক্ষণিক কামরানের হয়ে নির্বাচনের যাবতীয় কাজ করছেন।
জোট-মহাজোট, স্থানীয় নানা সামাজিক সংঘটন ও আওয়ামী লীগের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নির্বাচনী প্রচারণায় থাকার কারণে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের জয়ের পথ অনেকটা সুগম হয়ে আছে।
বরিশাল
সিলেট ও রাজশাহী সিটি নির্বাচনে থেকে বরিশালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কিছুটা পিছিয়ে আছেন। বরিশালে সিটি নির্বাচনে জামায়াত বিএনপি প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার পক্ষে কাজ করছে। বরিশাল সিটিতে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনও মেয়র প্রার্থী দিয়েছে। এখন পর্যন্ত তাঁদের আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
বরিশালের রাজনীতিতে হাসনাত পরিবার ও হিরণের দ্বন্দ্ব অনেক দিনের পুরনো। বরিশালে হাসনাত পরিবারকে হারানোর জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু পক্ষকে সবসময় সক্রিয় থাকতে দেখা যায়। হিরণ যখন মেয়র ছিল তখন আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ সিলেটে শহরে ঢুকতে পারত না বলেও জনশ্রুতি আছে। হিরণ মারা গেলেও বরিশালের রাজনীতিতে তাঁর অনেক কর্মী-সমর্থক ও ভোট ব্যাংক আছে। স্থানীয় কোন্দলের কারণে হিরণের সমর্থকদের ভোট শেষ পর্যন্ত কোনদিকে পড়বে তা বলা মুশকিল। এক্ষেত্রে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের কথা উল্লেখ করা যায়। ৩০ মার্চ ২০১৭ সালের কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রচার-প্রচারণায় অনেক এগিয়ে থাকলেও জয়ী হয় বিএনপির প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু। কুমিল্লার সিটি নির্বাচনে অনেককেই নৌকার ব্যাজ পরে ধানের শীষে ভোট দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। সুতরাং বরিশাল সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয় অপর দুই সিটির মতো সুনিশ্চিত নয়।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বরিশালে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে সমর্থন দিলেও এখনো জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায় নাই। অবশ্য জাতীয় পার্টির বিদ্রোহী প্রার্থী ঘোষণার দিন রাতেই সংবাদ সম্মেলন করে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে সমর্থন জানিয়েছেন।
জাতীয় নির্বাচনের আগে এই তিন সিটি নির্বাচনকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলেই ভাবছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তিন সিটি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ এখন সময়ের ব্যাপারে মাত্র। জয়-পরাজয়ের চূড়ান্ত ফলাফল জানতে তাই এখন অপেক্ষা করতেই হবে মাত্র কয়েকটি দিন।
বাংলাইনসাইডার/আরকে
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া তারেক জিয়া বিএনপি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল
মন্তব্য করুন
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা জাহাঙ্গীর কবির নানক
মন্তব্য করুন
তীব্র গরম মির্জা আব্বাস বিএনপি
মন্তব্য করুন
বিএনপি উপজেলা নির্বাচন বহিষ্কার
মন্তব্য করুন
ড. আব্দুর রাজ্জাক আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন শাজাহান খান
মন্তব্য করুন
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দুজনই দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে তাদের নেতৃত্ব থেকে বাদ দেয়ার ব্যাপারে পশ্চিমা দেশের কূটনীতিকরা বিএনপি পরামর্শ দিয়ে আসছেন এমন গুঞ্জন দীর্ঘদিনের। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কখনও মুখ খুলেননি বিএনপির কেউই। তবে এবার বিষয়টি প্রকাশ্যে আনলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। তিনি জানিয়েছেন বিএনপি থেকে বেগম জিয়া এবং তারেক জিয়াকে বাদ দেয়ার বিষয়টি নিয়ে দল ভাবছে। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে দলের এমন ভাবনার কথা জানান বিএনপির এই নেতা।
উপজেলা নির্বাচন থেকে কঠোর অবস্থান থেকে ইউটার্ন নিলো বিএনপি। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, আপাতত যারা উপজেলা নির্বাচন করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। তবে সব কিছু নির্ভর করবে নির্বাচনের ফলাফলের ওপর। যারা পরাজিত হবে তাদের ওপর নেমে আসবে শাস্তির খড়গ। আর যারা বিজয়ী হবেন তাদের বিষয়টি উপেক্ষা করা হবে। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাওয়ার কারণে ফেঁসে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান। তবে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেও নীতিমালার কারণে বেঁচে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক। তবে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন এবং যারা দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।