নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০১ পিএম, ২৯ জুলাই, ২০১৮
বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধানী আছেন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সভাপতি ও উপমহাদেশে বাম রাজনীতির অন্যতম পুরোধা অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ। খবরটি জানার সঙ্গে সঙ্গেই মোজাফফর আহমদের চিকিৎসার সমস্ত দায়িত্ব নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত শুক্রবার রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে অধ্যাপক মোজাফফরকে দেখতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সবাইকে একথা জানান। সেদিন ওবায়দুল কাদের মোজাফফর আহমদের চিকিৎসার বিলও পরিশোধ করেন।
এই ঘটনায় অনেক দিনের পুরনো একটি আলোচনা আবারও সামনে চলে এসেছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই বাম ঘরানার রাজনীতিবিদদের প্রতি সহানুভূতিশীল। অন্য ভাষায় শেখ হাসিনা ‘বামঘেঁষা’। ঘটনা কি আসলেই সত্যি?
বাম রাজনীতিবিদরা বিভিন্ন ইস্যুতে শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের কট্টর সমালোচক। সম্প্রতি কোটা আন্দোলন ইস্যুতে বা রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো ইস্যুগুলোতে শেখ হাসিনার কঠোর সমালোচনা করেছেন তাঁরা। কিন্তু এত কিছুর পরও শেখ হাসিনা সবসময়ই সকল বিপদে-আপদে সিপিবি, বাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টির মতো বাম দলগুলোর নেতাকর্মীদের সহযোগিতা করেছেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে বরাবরই বাম রাজনীতি করে আসা রাজনীতিবিদরা আলাদা গুরুত্ব পায়। বর্তমানে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন সমাজকল্যাণমন্ত্রীর পদে আছেন। শেখ হাসিনার অন্যতম রাজনৈতিক ভরসা ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) এর সাবেক রাজনীতিবিদ ছাত্র ইউনিয়ন নেত্রী মতিয়া চৌধুরী আছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদও কমিউনিস্ট পার্টি করতেন। বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের এ প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তিনি, দীর্ঘদিন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। এছাড়া শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ বন্ধু প্রয়াত বেবী মওদুদও বাম রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এছাড়াও ৯০ এর এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় গঠিত হয়েছিল ১৫ দলীয় জোট। এই ১৫ দলীয় জোটে শেখ হাসিনার অন্যতম পরামর্শক ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফরহাদ।
রাজনীতি অঙ্গনে এমন কথাও প্রচলিত আছে, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের চেয়ে ছাত্র ইউনিয়ন বা ছাত্রফ্রন্ট করে আসা ছেলেমেয়েরাই আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছে বেশি গুরুত্ব পান। এর কারণ হচ্ছে, শেখ হাসিনা মনে করেন বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের চেয়ে তুলনামূলক বেশি পড়াশোনা করেন। এই কারণেই যখন প্রধানমন্ত্রী জানতে পেরেছিলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে বাম সংগঠনগুলো জড়িত, তখন তাঁদের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন।
বাম রাজনীতিবিদদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর এই ভরসা ও বিশ্বাসের পেছনে ঐতিহাসিক একটি পটভূমি আছে। পাকিস্তান সৃষ্টির কিছুকাল পর থেকেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীকার আন্দোলন শুরু করেন। সেই আন্দোলনে বাম নেতাকর্মীরা সবসময় বঙ্গবন্ধুকে সহযোগিতা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত মুজিব নগর সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা কমরেড মনি সিংহ ও ন্যাপের নেতা কমরেড মোজাফফর আহমেদ। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজনৈতিক সমর্থন আদায়ে মণি সিংহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। এছাড়া যুদ্ধের সময় ন্যাপ, সিপিবি, ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনী মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখ সমরে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করে। শহীদ হন কুমিল্লার বেতিয়ারায় কমরেড নিজামুদ্দিন আজাদ, কমরেড সিরাজুম মুনির প্রমুখ।
এমনকি বঙ্গবন্ধু হত্যার পর প্রথম প্রতিবাদও গড়ে তুলেছিলেন ছাত্র ইউনিয়ন, ন্যাপ ও কমিউনিস্ট পার্টির নেতাকর্মীরা। গোপনে ও প্রকাশ্যে তাঁরা এই হত্যার বিরুদ্ধে মানুষকে সংগঠিত করার চেষ্টা করেছিলেন। লিফলেট ছেপে, কেউ কেউ টাকায় লিখেও বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। এসব কারণেই বঙ্গবন্ধু কন্যার কাছে বাম দলগুলো নেতাকর্মীদের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে।
শেখ হাসিনা ‘বামঘেঁষা’ এটি হয়তো একটু বাড়িয়েই বলা হয়। তবে বামদের প্রতি শেখ হাসিনা সহানুভূতিশীল এটি বিভিন্নভাবে প্রমাণিত। বাম দলগুলোও যদি শেখ হাসিনার প্রতি একই মনোভাব পোষণ করে এবং প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শেখ হাসিনার পাশে থাকে তাহলেই দেশের প্রগতিশীল রাজনীতি অগ্রগতি সুনিশ্চিত হবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।
দলীয় সিদ্ধান্ত মানেননি তৃণমূল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনার পরও নির্বাচনি মাঠ থেকে সরেননি স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। সোমবার প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনেও তারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। উল্টো নানা যুক্তি দেখিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের ভিতরও এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বিশেষ করে দলের দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের ভূমিকা নিয়েও কেন্দ্রের মধ্যে অস্বস্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কঠোর নির্দেশ দেয়ার পরও কেন মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হলো না এই নিয়ে দলের মধ্যে চলছে নানা রকম আলাপ-আলোচনা।