নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:০২ পিএম, ০৪ অগাস্ট, ২০১৮
জাতীয় নির্বাচন সামনে অথচ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাবন্দী। এমন অবস্থায় পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে দলটির জেলা ইউনিটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের ঢাকায় ডেকেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। গতকাল শুক্রবার থেকে শুরু হয়ে এই বৈঠক চলছে আজ শনিবারও।
সারাদেশে বিএনপির ১০টি সাংগঠনিক বিভাগ রয়েছে। এর মধ্যে গতকাল ৩ আগস্ট নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর পর্যন্ত আর খুলনা ও বরিশালের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত।
আজ ৪ আগস্ট গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ঢাকা, ফরিদপুর, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা বিভাগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক চলছে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের। এখন বৈঠক চলছে চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লার নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যা সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়েছে। এরপর ৩টা থেকে ঢাকা, ময়মনসিংহ এবং ফরিদপুরের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক হবে।
এই বৈঠকে তৃণমূলের নেতারা বিভিন্ন বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। আজ সকালে চট্টগ্রামের নেতারা বক্তব্য রাখার সময় অভিযোগ করে বলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের গায়ে একটা আচড়ও পড়ছে না। বরং নেতাদের শরীর থেকে পারফিউমের সুবাস বের হয়। আন্দোলনে না গিয়ে নেতারা পোলাও-বিরিয়ানি খাচ্ছেন। তৃণমূলের এক নেতা প্রশ্ন করেন, কেন্দ্রীয় নেতারা যদি আরাম-আয়েশে থাকেন তাহলে খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব হবে কীভাবে?
গতকাল সিলেটের এক নেতা বলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ প্রায়ই অভিযোগ করেন সরকার এটা করতে দিচ্ছে না, ওটা করতে দিচ্ছে না। কিন্তু সিলেট বিএনপি তো দেখিয়ে দিয়েছে যে বিজয় সম্ভব। যদি সবাই সততার সঙ্গে আন্দোলন করে, একটি শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তুলতে তাহলে বিজয় যে কঠিন না সেটি তাঁরা সিলেটে প্রমাণ করেছেন। তিনি প্রশ্ন করেন, সিলেট বিএনপি পারলে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কেন এমন কাজ করতে পারেন না?
চট্টগ্রামের আরেক নেতা নিজের বক্তব্যে বলেন, শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে আন্দোলন করতে পারলো আর নেতারা শুধু কথা বলে যাচ্ছেন। এই নেতা বলেন, ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জেলে। কিন্তু সংবাদ সম্মেলন ছাড়া বিএনপি কিছু করতে পারছে না। কেন্দ্রীয় নেতারা আন্দোলন করতে পারছেন না, রাজপথে নামতে পারছেন না। তৃণমূলের নেতারা বলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মতলবটা কী সেটা আগে তাঁদের বোঝা দরকার।
তৃণমূলের নেতারা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার কর্মকাণ্ডেও বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলেন, তারেক জিয়া লন্ডনে আরাম-আয়েশে জীবন কাটাচ্ছেন। কিন্তু কষ্ট পাচ্ছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। জেল-জুলুম মাথায় নিয়ে তাঁদের চলতে হচ্ছে। তাহলে কীভাবে আন্দোলন হবে বলে প্রশ্ন করেন তৃণমূল নেতৃবৃন্দ।
আজ সকাল থেকে এখন পর্যন্ত সিলেটের তিন জন নেতা বক্তব্য রেখেছেন। এই নেতারা বলেছেন, বিএনপিকে জামাতের সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে। জামাতের সঙ্গে জোট করার আর কোনো দরকার নাই। জামাতকে বাদ দিয়ে বরং অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে এবার জোট করা যায় বলে মন্তব্য করেন তাঁরা।
বিএনপির তৃণমুলের নেতাদের কথা থেকে পরিস্কার হয়েছে, তাঁরা দলটির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের ওপর ভরসা রাখতে পারছেন না। সবচেয়ে বড় কথা, তাঁরা মনে করছেন এই নেতৃত্ব দিয়ে সরকার পতনের আন্দোলন কিংবা খালেদা জিয়ার মুক্তি কোনোটাই সম্ভব না। হয় নেতৃত্বকে রাজপথে নেমে কঠোর আন্দোলন করতে হবে অথবা বর্তমান নেতৃত্বকে সরিয়ে নতুন নেতৃত্ব আনতে হবে বলে মত প্রকাশ করেছেন তৃণমূলের নেতারা। অন্যথা খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনও সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন তাঁরা।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ
মন্তব্য করুন
ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি সভাপতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বেগম খালেদা জিয়া শামীম ইস্কান্দার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার জন্য নতুন করে তৎপরতা শুরু করেছে তার পরিবারের সদস্যরা। বিশেষ করে বেগম জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার ইতোমধ্যে বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার জন্য সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ শুরু করেছেন। বেগম জিয়া আর ভবিষ্যতে রাজনীতি করবেন না, রাজনীতি থেকে অবসর নেবেন এ রকম একটি বক্তব্য সামনে নিয়ে আসছেন শামীম ইস্কান্দার।
আওয়ামী লীগের তৃণমূল ক্রমশ ভেঙ্গে পড়ছে। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের তৃণমূল সংগঠিত করা এবং বিভেদ-বিভক্তির দূর করার জন্য যে ডাক দেওয়া হয়েছিল তারপর একটু পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছিল বলে বটে। কিন্তু এখন আবার উপজেলা নির্বাচনের প্রাক্কালে সারাদেশে তৃণমূল বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগের তৃণমূলকে সামাল দেওয়াই এখন কঠিন হয়ে পড়ছে। একদিকে নির্বাচন কেন্দ্রীক বিরোধ অন্যদিকে দলের চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে যাওয়া আর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তদারকির অভাবে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ এখন সবচেয়ে সঙ্কটের মুখে পড়েছেন বলেই মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারাই।