ইনসাইড পলিটিক্স

আহারে জনগণ!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯:০০ এএম, ০৫ অগাস্ট, ২০১৮


Thumbnail

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা রাজপথে। এই শিক্ষার্থীরা স্কুলের, কলেজের। উত্তরায় বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যুর পর কোমলমতি শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষ থেকে বেরিয়ে রাজপথে অবস্থান নিয়েছে। ঢাকায় শুরু আন্দোলনের। তারপর তা ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি খুবই সহজ-সরল এবং ন্যায়সংগত। তারা নিরাপদ সড়ক চায়। নির্বিঘ্নে বাড়ি থেকে বেরিয়ে স্কুলে যেতে চায়, আবার স্কুল থেকে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে চায়। এই দাবিতে বৃষ্টিতে ভিজে তারা রাজপথে অবস্থান নিয়েছে। আমার মনে হয় না, শিক্ষার্থীদের এই দাবির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করার মতো কেউ আছেন। আমার মতো সবাই বলবেন, শিক্ষার্থীরা সঠিক দাবি নিয়েই রাজপথে এসেছে। কিন্তু সময় যতই গড়াচ্ছে ততই দেখা যাচ্ছে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উৎসাহীর অভাব নেই। তাদের উৎসাহের কারণ শুধু শিক্ষার্থীদের প্রতি সহানুভূতি নয়, এই অতি উৎসাহী মহল এই স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের ওপর ভর করে অন্য কিছু হাসিল করতে চায়। সোজা কথায়, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে সরকার পতনের আন্দোলনের দিকে নিয়ে যাওয়ার এক প্রাণান্ত চেষ্টা অনেকের। প্রশ্ন হলো, নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে কি সরকার পতন করা যাবে?

আওয়ামী লীগ সরকার প্রায় ১০ বছর টানা ক্ষমতায়। টানা ক্ষমতায় থাকার যেমন স্বস্তি আছে, তেমন অস্বস্তিও আছে। স্বস্তির দিক হলো সময় নিয়ে, দীর্ঘ পরিকল্পনা করে কাজ করা যায়। যেমনটা আওয়ামী লীগ করেছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন তার বড় উদাহরণ। বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। অর্থনীতিতে নানা ত্রুটি-বিচ্যুতির পরও একটা ছন্দ এসেছে। আর অস্বস্তি হলো, টানা ক্ষমতায় থাকলে একটা অতিআত্মবিশ্বাস পেয়ে বসে। নিজেদের বড় ভাবার অহমিকা গ্রাস করে। চারপাশের সবাইকে ক্ষুদ্র ও তুচ্ছ ভাবার রোগ হয়। কোনো কিছুকে গুরুত্ব না দিয়ে, নিজেদের ভাবনাই একমাত্র সঠিক ভাবনা এমন এক প্রবল জেদ জ্বরে আক্রান্ত হন ক্ষমতাসীনরা। আওয়ামী লীগের একজন ছাড়া সবার দীর্ঘ ক্ষমতায় থাকাজনিত উপসর্গ দৃশ্যমান। যিনি এই রোগে আক্রান্ত নন, তার নাম শেখ হাসিনা। আমরা গণমাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর আক্রমণাত্মক বক্তব্যগুলো লুফে নিই, হেডলাইন করি। কিন্তু তার অনেক সতর্কতামূলক বক্তব্য আমরা উপেক্ষা করি। কদিন আগে প্রধানমন্ত্রী তৃণমূলের আওয়ামী লীগ নেতাদের ঢাকায় গণভবনে নিমন্ত্রণ করেছিলেন। যেখানে তিনি বলেছিলেন এক অভূতপূর্ব গুরুত্বপূর্ণ কথা। তার বক্তব্য ছিল এরকম ‘জনগণের কাছে যেতে হবে। জনগণের মন জয় করেই ভোটে জিততে হবে। জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে।’ কিন্তু মনোনয়নযুদ্ধ, নগদ প্রাপ্তি, নানামুখী বাণিজ্যের দুষ্টচক্রে এই মূল্যবান বক্তব্যটা আওয়ামী লীগের কজন হৃদয়ে ধারণ করেছেন তা নিয়ে আমার গভীর সংশয় রয়েছে। আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা-কর্মী ক্ষমতাব্যাধিতে আক্রান্ত। এই ব্যাধিতে তারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। জনগণ তাদের কাছে হয় উপেক্ষিত। তাই হঠাৎ এমন আন্দোলন দেখে এদের কেউ কেউ আতঙ্কিত, কেউ উদ্বিগ্ন, কেউ শঙ্কিত। জনবিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে এদের করণীয় অজানা। অথচ তারা যদি তাদের দলের সভাপতির কথা শুনে জনগণের সঙ্গে মিশে থাকত, তাহলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে আওয়ামী লীগের নেতা, এমপি, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগকে দেখা যেত। আওয়ামী লীগ জনগণের দল। নিরাপদ সড়ক এখন জনগণের প্রাণের দাবি। কে চায় রাস্তায় দুর্ঘটনার নামে এমন হত্যাকাণ্ড দেখতে, কে চায় এমন মৃত্যুর মিছিল দেখতে? তাই জনগণের হৃদয় থেকে উৎসারিত সংগঠন আওয়ামী লীগেরই তো প্রথম উচিত ছিল শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো। আওয়ামী লীগের এমপিরা তার এলাকায় ছাত্র অবস্থানে নেতৃত্ব দিতে পারতেন। ছাত্রলীগ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পানি দিতে পারত। যুবলীগ কর্মসূচি শেষে বড় ভাই হিসেবে তাদের ঘরে ফেরার দায়িত্ব নিতে পারত। স্বেচ্ছাসেবক লীগ আন্দোলনে যেন জনমানুষের কষ্ট ও দুর্ভোগ না হয় সেজন্য সড়ক ব্যবস্থাপনা তদারকি করতে পারত। কিন্তু কেউ কিছু করেনি। কোনো এমপি ছাত্রছাত্রীর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলতে পারেননি আমি তোমাদের অভিভাবক। দু-একজন অবশ্য ব্যতিক্রম। যেমন নারায়ণগঞ্জের এমপি শামীম ওসমান। তিনি দেখালেন শেখ হাসিনার আদর্শ আসলে কী? আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে তাদের বুঝিয়ে ঘরে ফেরালেন। শামীম ওসমান যে কাজটি করেছেন, তা সব এমপির অবশ্যপালনীয় ছিল। কিন্তু এমপি সাহেবরা অত্যন্ত ব্যস্ত। সরকারের মেয়াদের শেষ প্রান্তে তাদের নিজের পুত্র-কন্যাকে দেখারই সময় নেই, তারা কি দেখবেন এলাকার স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের? জলাতঙ্ক রোগে যেমন মানুষ পানির ভয় পায়, তেমন ক্ষমতারোগে জনগণকে এড়িয়ে যান রাজনীতিবিদরা।

দীর্ঘ ক্ষমতা থাকাজনিত রোগের একটি বড় লক্ষণ হলো— কাণ্ডজ্ঞানহীন বিনোদন, দায়িত্বহীন উচ্চারণ। নিরাপদ সড়কের এই যৌক্তিক আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা রাজপথে এভাবে হয়তো অবস্থান নিত না, যদি না ওই অবান্তর হাসির উদ্ভব না হতো। অন্য অর্থে বলা যায়, এক হাসিই শিক্ষার্থীদের উত্তেজিত করেছে। যিনি ওই ক্লোজআপ হাসি হেসেছিলেন, এরপর তিনি ক্ষমা চেয়েছেন, নিহত দুই শিক্ষার্থীর বাড়িতেও গেছেন, কিন্তু ততক্ষণে জল বহুদূর গড়িয়েছে। গুলি একবার ছুড়লে তা কি আর ফেরত নেওয়া যায়? সর্বনাশা হাসির ছোবলে আজ জনজীবন বিপর্যস্ত। আহা জনগণ! মন্ত্রী হাসেন জনগণের কপাল পোড়ে। হাসির কারণে সৃষ্ট যৌক্তিক আন্দোলন রাজপথে প্রথম দুই দিন ছিল নেতৃত্বহীন স্বতঃস্ফূর্ত। এ দুই দিনে শিক্ষার্থীরা পাশে পায়নি জনপ্রতিনিধিদের, স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটিকে। ফলে এমন একটা আন্দোলনের ঢাউস ফল খেতে কার না লোভ হয়? বিরোধী পক্ষ এবং সুশীলদের দীর্ঘদিনের খায়েশ সরকারকে একটা ল্যাং মেরে কাদায় ফেলা। তাই এতিম আন্দোলনে জনসহানুভূতি দেখে বিএনপি-জামায়াত ও সুশীলদের চোখ-মুখ চিকচিক করে উঠল। তারা তো আর নৌপরিবহনমন্ত্রীর মতো বোকা নন। খুশির উল্লাসে বাঁধভাঙা হাসি চেপে সরকার পতনের খোয়াবে বিভোর হলেন। শুরু হলো বোকা বাক্সে বকবকানির উৎসব। জনগণের নামে শুরু হলো জনঅত্যাচার।

সুশীলসমাজের দুই মুখপত্র দৈনিক (একটি বাংলা, একটি ইংরেজি) যেন পেয়ে গেল মোক্ষম অস্ত্র। আন্দোলনে উসকানি দিতে যা তথ্য-উপাত্ত লাগে তা বড় হরফে মুদ্রিত হতে লাগল। তিন দিন পর বিএনপি মহাসচিব জানালেন ‘আমরাও আছি’। বিএনপির অনেক নেতা তো গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাও দিয়ে দিলেন। জনগণকে থোড়াই কেয়ার। কিন্তু সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বিচক্ষণ, দূরদর্শী এবং একজন মানবিক রাষ্ট্রনায়ক। তিনি দ্রুত একের পর এক পদক্ষেপ গ্রহণ করলেন। নিহত দুই শিক্ষার্থী পরিবারের জন্য দিলেন আর্থিক অনুদান। এ প্রসঙ্গে একটি কথা বলে রাখা দরকার। মৃত্যুশোক যে কী করুণ, বীভৎস ও বেদনাদায়ক তা শেখ হাসিনার চেয়ে কজনই বা বেশি বোঝেন। এই আগস্ট মাসেই এক মহাপ্রলয়ে তিনি একজন ছাড়া সব প্রিয়জনকে হারিয়েছিলেন। শেখ হাসিনার ব্যাপারে জনমনে আরেকটি বিষয় স্পষ্ট। তিনি যা বলেন তা করেন। কথা দিলে তিনি কথা রাখেন। এজন্য তার প্রতি জনগণের আস্থা প্রবল। এমনকি তার প্রবল প্রতিপক্ষও তার নিষ্ঠা, কর্মতৎপরতা এবং দায়িত্বশীলতা নিয়ে আড়ালে-আবডালে বিস্ময় প্রকাশ করেন। কাজেই তিনি দ্রুত একের পর এক পদক্ষেপ গ্রহণের পর আমাদের মতো সাধারণ মানুষের মনে এক ধরনের স্বস্তি এলো। শিক্ষার্থীরা এবার ঘরে ফিরবে। জনজীবন স্বাভাবিক চলবে। আবার কর্মচাঞ্চল্যে ভাসবে দেশ। আওয়ামী লীগ সরকার গত ১০ বছরে আন্দোলন, ভাঙচুর, হরতাল, অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের সংস্কৃতি থেকে দেশকে মুক্তি দিয়েছে। বিশেষ করে ২০১৪-এর পর সহিংসতার রাজনীতি বনবাসে গেছে। হরতাল-অবরোধ মানুষ ভুলে গেছে। মানুষ এখন কাজ করতে চায়। তাই শিক্ষার্থীদের ঘরে ফেরার জন্য উন্মুক্ত কর্মমুখর মানুষ। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছে। কে বা কারা নয় দফা অথবা সাত দফা দাবিও তৈরি করে ফেলেছে। ফেসবুকসহ নানা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে কোমলমতি শিশুদের আবেগকে উসকে দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা অতঃপর ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব তুলে নিল। রাজপথে দাঁড়িয়ে তারা গাড়ির লাইসেন্স চেক করা শুরু করল। আমি অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে বলছি, এই পথ ভুল পথ। এটা যৌক্তিক নয়। এই আন্দোলনে নাম ফলাতে অনেক সেলিব্রেটি বুঝে না বুঝে ‘অভিভূত’ হচ্ছেন, কেউ বা স্যালুট জানাচ্ছেন। কেউ বলছেন তারা আমাদের শিক্ষা দিল। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আবেগকে শ্রদ্ধা জানিয়ে, একজন অভিভাবক হিসেবে আমি বলতে চাই, রাস্তায় ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন কিংবা গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের কাজ নয়। কাল যদি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলেন, আমরা এখন শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার খাতা দেখব— তখন কী ফল দাঁড়াবে? কিংবা তথ্য মন্ত্রণালয় যদি বলে, গণমাধ্যমে কী রিপোর্ট হয়, তার সোর্স কী এসব আমরা পরীক্ষা করব, তাহলে সেটি যে রকম ভয়াবহ ঘটনা হবে, এটিও তেমন এক ভয়াবহ তৎপরতা। আমি অবাক হয়ে যাই, যারা সুশাসনের কথা বলেন, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কথা বলে মুখে ফেনা ছড়ান, তারাই কোমলমতি শিশুদের এই পাকামিতে আশকারা দিচ্ছেন। ‘পুলিশবাহিনী’ একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। এ ধরনের লাইসেন্স তল্লাশির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় এই বাহিনীকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা হচ্ছে। আমি খুশি হতাম যদি শিক্ষার্থীরা পুলিশবাহিনীকে দিয়ে কাজটা করাত। নিজে সরেজমিন ঘুরে দেখলাম, শিক্ষার্থীদের এসব পরীক্ষার জন্য তালিম দিচ্ছেন কিছু অজ্ঞাত পরিচয়ের ব্যক্তি। এরা শিক্ষার্থী নন, এরা অভিভাবকও নন— এরা কারা? এরা হলো তারা, যারা সরকারকে ফেলে দিতে চায়। সবচেয়ে বড় কথা, এর ফলে পরিবহন সংকটে জনগণের অবস্থা যে বেহাল তার খবর কে নেবে?

আমরা আজকাল প্রায়ই দেখি জঙ্গিরা শিশুদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। শিশুদের সামনে রেখে, তাদের গায়ে বোমা লাগিয়ে জঙ্গিরা কুিসত, হিংস্র অপকর্ম করে। বাংলাদেশে নিরাপদ সড়কের আন্দোলনের নামে এমনকি শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করার নোংরা খেলায় মেতে উঠেছে একটি মহল। এই প্রশ্ন আমার মতো অনেকের। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে স্বতঃস্ফূর্ত গণরায়ের মাধ্যমে এই সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছিল। ২০১৪-এর ৫ জানুয়ারি ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম দল হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছে। একটি নির্বাচিত সরকারকে হটানোর মাত্র দুটি স্বীকৃত গণতান্ত্রিক রীতি রয়েছে। একটি হলো নির্বাচন, অন্যটি হলো জাতীয় সংসদে অনাস্থা প্রস্তাব পাস। কিন্তু এ দুই পদ্ধতির বাইরে অন্য কোনো পদ্ধতিতে সরকারের পতন ঘটানোর চেষ্টা এক ঘৃণ্য রাষ্ট্রদ্রোহ। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি, গত ১০ বছরে এই সরকারকে হটাতে তৃতীয় পক্ষের ওপর সওয়ার হওয়ার চেষ্টা হয়েছে। প্রথম আমরা এটা দেখলাম, হেফাজতের ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচির মাধ্যমে। তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল বিএনপি তো মিষ্টি বিতরণ করল এই আনন্দে যে সরকারের পতন ঘটছে। বেগম খালেদা জিয়া মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থানকারীদের ‘মেহমান’ হিসেবে সম্বোধন করে তাদের জন্য খাবার-দাবার নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। সরকার বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়চিত্তের পদক্ষেপ বিএনপির স্বপ্নভঙ্গ ঘটায়। এরপর আসে হলি আর্টিজানের ঘটনা। অনেকে আশায় বুক বেঁধেছিল এবার হয়তো সরকারের পতন হবে। কিন্তু তাদের আশার গুড়ে বালি। সরকার টিকে গেল। বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে দিয়ে একটি সিভিল সোসাইটি ক্যু এর চেষ্টাও ভেস্তে গেছে। কিছু সুশীলের হৃদয় ভেঙে বিচারপতি সিনহা এখন দূরদেশে। আওয়ামী লীগেকে হটানোর আরেক চেষ্টার নাম ছিল কোটা আন্দোলন। এই আন্দোলনের প্রতিও আছে বিএনপি, জামায়াত ও সুশীলদের ত্রিমাত্রিক প্রেম। এই আন্দোলন যখন পথহারা হলো তখন এলো শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন। একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এই আন্দোলন নিয়ে বিএনপি, জামায়াত ও সুশীলসমাজের বক্তব্যগুলো অভিন্ন, একই সূত্রে গাঁথা। তারা এই আন্দোলনকে সরকার পতনের আন্দোলনের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়ার মরিয়া চেষ্টা করছে। এই চেষ্টায় তারা নিজেরাই বোধশূন্যহীন দানবে পরিণত হয়েছেন। এ ক্ষেত্রে অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়। পাঠকের বিবেচনার জন্য মাত্র একটি উদাহরণ বিনীতভাবে উপস্থাপন করছি। কদিন আগে দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এই সর্বাত্মক অভিযানে বন্দুকযুদ্ধে প্রচুর মাদক ব্যবসায়ী মারা গেছে। এ সময় আমাদের সুশীলসমাজ রীতিমতো হুঙ্কার দিয়ে উঠেছিল। তারা বলেছিল, ‘এভাবে বিনা বিচারে কাউকে হত্যার অধিকার রাষ্ট্র কাউকে দেয়নি। একজন খুনিরও আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার আছে।’ বাংলাদেশে সর্ববিষয়ে পণ্ডিত কিছু ব্যক্তির ‘মানবাধিকার গেল’ চিৎকারে কাকের তারস্বরও ম্লান হয়ে গিয়েছিল। এখন পাঠক লক্ষ্য করুন, কোমলমতি শিশুদের হাতে যে নয় দফা দাবিনামা ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে, (যেগুলো অধিকাংশ শিক্ষার্থী বলতে পারবে না) তার প্রথম দাবিই হলো বাসের চালকের অবিলম্বে মৃত্যুদণ্ড। অর্থাৎ কোনো বিচার-আচার দরকার নেই। এক্ষুনি ওই চালককে ফাঁসি দিতে হবে। এটা কি তাহলে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হবে না? তাহলে যারা এতদিন বলল, খুনিরও আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার আছে, তারা নয় দফাকে অবিলম্বে বাস্তবায়নের দাবি করে কোন নৈতিক ও আদর্শিক অবস্থান থেকে? এই প্রশ্নটি বিবেকবান প্রতিটি মানুষের কাছে।

অর্থাৎ আসল উদ্দেশ্য নিরাপদ সড়ক নয়, আসল উদ্দেশ্য দেশে একটি অস্থির অবস্থা তৈরি করা। যে অস্থির অবস্থা সরকারের পতনকে ত্বরান্বিত করবে। এজন্য যখন যেখানে সুবিধা সেদিকেই ঝুঁকছে একশ্রেণির মানুষ। তারা মাদকবিরোধী অভিযানে সরকারকে পর্যুদস্ত করার চেষ্টা করছে। আবার ড্রাইভারকে বিচার ছাড়াই মৃত্যুদণ্ড দিতে বলছে।

আওয়ামী লীগ সরকারকে হটাতে অস্থির এসব কিছু মানুষ। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি বিভিন্ন ইস্যুতে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে একটি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করতে পারত। শিক্ষার্থীরা দেখিয়েছে চাইলেই নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করা যায়। কিন্তু নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে না গিয়ে বিএনপি-জামায়াত অন্যের ঘাড়ে চড়ে ফায়দা হাসিলের যে চেষ্টা করছে, তাতে তাদের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব প্রকটভাবে উন্মোচিত হচ্ছে, প্রকাশ হচ্ছে তাদের জনবিচ্ছিন্নতা। তবে বিএনপি-জামায়াতের জন্য আমার কোনো দুঃখবোধ নেই। কারণ, বিএনপির রাজনীতির মূলকথাই হলো যে কোনো প্রকারে ক্ষমতায় যাওয়া। তাই তারা অন্যের আন্দোলনের ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করতেই পারে। কিন্তু আমার দুঃখ এবং করুণা হয় দেশের শিক্ষিত কয়েকজন মতলববাজ সুশীল বুদ্ধিজীবীর জন্য। যারা সমাজের বিবেক হিসেবে পরিচিত। তারা যখন শিশুদের জিম্মি করে তাদের মনোবাসনা পূরণ করতে চান, তখন লজ্জায় আমি সংকুচিত হয়ে যাই। যে জঙ্গিরা শিশুদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে, তাদের সঙ্গে আজ যারা এই আন্দোলনকে উসকে দেওয়ার জন্য নানা উত্তেজক বক্তব্য দিচ্ছেন নানা টকশোয়, কাগজে লিখছেন জ্বালাময়ী ভাষায়— পার্থক্য কী? দুই পক্ষই কি মানবতার, শান্তির শত্রু নয়? অনেকেই যে কথাটা প্রায়ই ভুলে যান, যে কথাটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার বার বলেন তা হলো, ‘জনগণের ক্ষমতায়ন’। জনগণই সব ক্ষমতার উৎস। জনগণ ছাড়া শুধু ষড়যন্ত্র করে সরকার পতন ঘটানো যাবে না, যায় না। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য আমাদের রাজনৈতিক দল ও সমাজের জ্ঞানপাপীদের জনগণের ওপর আস্থাটাই নেই। জনগণের নামে যারা আমরা কথা বলছি, তারা সবাই জনগণকে জিম্মি করছি, জনগণকে দুর্ভোগে ফেলছি। নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, কিংবা সরকার পতনের ষড়যন্ত্র যা কিছুর ভোগান্তির একমাত্র শিকার আমরা জনগণ। সব দেখে-শুনে তাই বলতে ইচ্ছা করে— ‘আহারে জনগণ!’


বাংলা ইনসাইডার/ডিকে

(লেখাটি আজকের বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে)



মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

এবার কি ব্যারিস্টার খোকনও বিদায় নেবেন বিএনপি থেকে?

প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ২৮ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

বিএনপির জনপ্রিয় নেতা ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সভাপতি পদে জয়ী হয়েছেন। শুধু তিনি নন, তার সঙ্গে আরও কয়েকজন এবারের নির্বাচনে চমক দেখিয়ে আওয়ামীপন্থী প্যানেলকে ধরাশায়ী করে সুপ্রিম কোর্টে জায়গা করে নিয়েছেন।

এ ধরনের পেশাজীবীদের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলকে হারিয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করা একটা বিরাট অর্জন এবং ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন সেই অর্জনটি করেছেন। কিন্তু তার এই অর্জনের পরপরই বিএনপির মধ্যে তাকে নিয়ে নানারকম প্রশ্ন উঠেছে। মাহবুব উদ্দিন খোকন কেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেন তা নিয়েও বিএনপির কোনো কোনো উগ্রবাদী নেতা প্রশ্ন তুলেছেন। যেখানে বিএনপি সব ধরনের পেশাজীবীদের নির্বাচন বর্জন করছে সেখানে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে কেন খোকন অংশগ্রহণ করল—এটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিএনপির কেউ কেউ। 

অবশ্য ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সাথে কথা বলেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট কৌশলগত কারণে বিএনপির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর এই কারণেই তিনি এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। মাহবুব উদ্দিন খোকন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে একজন জনপ্রিয় মুখ। তিনি একাধিকবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক পদে জয়ী হয়েছিলেন। বিএনপির বাইরেও তার একটা প্রভাব বলয় রয়েছে এবং জনপ্রিয়তা রয়েছে। এরকম পরিস্থিতিতে তিনি স্রোতের বিপরীতে থেকে নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। কিন্তু তার জনপ্রিয়তা বিএনপির নেতারাই মেনে নিতে পারছেন না। খোকন যদি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সভাপতি হন, তাহলে অনেক বিএনপি নেতাই তার পিছনে চলে যাবে—এ রকম চিন্তা থেকেই সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির এই নির্বাচনকে বয়কট করার ডাক দিয়েছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। 

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম এক চিঠির মাধ্যমে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তাদেরকে পদ গ্রহণ না করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু মাহবুব উদ্দিন খোকন যেহেতু সুপ্রিম কোর্টে বেড়ে ওঠা একজন আইনজীবী এবং আইনজীবীদের সঙ্গে তার এক ধরনের আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে, তাই তিনি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি। কারণ সুপ্রিম কোর্ট কোন জাতীয় নির্বাচন নয়। এখানে যে সমস্ত আইনজীবীরা তাকে ভোট দিয়েছেন, তারা সকলেই বিএনপির কর্মীও নন, বরং এখানে বেশ কিছু সাধারণ ভোটার রয়েছেন যারা আওয়ামী লীগ, বিএনপি কোন দলই সমর্থন করেন না। তারা মাহবুব উদ্দিন খোকনকে ভোট দিয়েছেন। এখন যদি মাহবুব উদ্দিন খোকন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির দায়িত্ব গ্রহণ না করেন সেটা হবে তাদের সঙ্গে প্রতারণা। আর এটি মাহবুব উদ্দিন খোকন করতে চাননি। আর এটি করতে না চাওয়ার কারণে তিনি আইনজীবী ফোরামের সিদ্ধান্তকে অমান্য করে সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করবেন বলে আনুষ্ঠানিক ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। এর ফলে বিএনপির মধ্যে কী প্রতিক্রিয়া হয় সেটাই দেখার বিষয়। 

বিএনপি যেমন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি, একটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। অনেকেই মনে করেন যে, বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং মির্জা ফখরুল বা অন্য নেতারা যদি সংসদে যান তাহলে তারেক জিয়ার কর্তৃত্ব খর্ব হয়ে যাবে। সে কারণেই তারেক জিয়া নির্বাচন থেকে তাদেরকে দূরে রাখছেন। একইভাবে যদি মাহবুব উদ্দিন খোকনও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি হন সেক্ষেত্রে বিএনপির অনেক অপাঙ্ক্তেয় গুরুত্বহীন অজনপ্রিয় নেতাদের অবস্থা নড়বড়ে হয়ে যাবে এবং তারা খোকনের কাছে ম্লান হয়ে যাবেন—এরকম বিবেচনা থেকে তাকে নির্বাচন দায়িত্ব গ্রহণ থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মাহবুব উদ্দিন খোকন এটি মানছেন না। এরকম পরিস্থিতিতে সামনের দিনগুলোতে মাহবুব উদ্দিন খোকন বিএনপির টার্গেট হন কিনা সেটা দেখার বিষয়। অতীতে দেখা গেছে যে, বিএনপিতে যারাই জনপ্রিয় হয়েছেন তাদেরকেই দল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে বা দলে কোণঠাসা করা হয়েছে। এবার কি মাহবুব উদ্দিন খোকনের পালা?

ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন   সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি   সভাপতি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

ফ্যাসিবাদী শক্তি পুরো জাতির ওপর চেপে বসে আছে: মির্জা ফখরুল

প্রকাশ: ০৯:২৩ পিএম, ২৮ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা একটা কঠিন সময়, একটা দুঃসময় অতিক্রম করছি। ফ্যাসিবাদী শক্তি সমস্ত জাতির ওপর চেপে বসে আছে। আমাদের সকল আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলো ব্যর্থ করে দিয়ে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে আমরা আন্দোলন-সংগ্রাম শুরু করেছি।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর ইস্কাটনের লেডিস ক্লাবে এক ইফতার মাহফিলে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সম্মানে বিএনপির উদ্যোগে ওই ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এক দফার আন্দোলনে সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে সম্মিলিত করে। আমরা চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য কাজ করছি। সে আন্দোলনে বিজয় আমাদের হবেই, ইনশাআল্লাহ্।

অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেন, ১৮ কোটি মানুষের দেশে মানুষ আজ মজলুম। পুরো দেশের মানুষ আজ জুলুমের শিকার।

তিনি বলেন, লড়াই আমাদের চালিয়ে যেতে হবে। বিজয় আমাদের হবেই, ইনশাআল্লাহ্।

ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এতে আরও বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, সেলিমা রহমান, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের সমন্বয়ক হারুনুর রশিদ, জাগপার একাংশের সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান, বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম প্রমুখ।

অন্যদের মধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন্দ, বিকল্পধারা বাংলাদেশের একাংশের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারী, এবি পার্টির আহ্বায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরী, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, গণফোরামের একাংশের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, বিএনপির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম প্রমুখ এতে বক্তব্য রাখেন।

রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সম্মানে আয়োজিত ওই ইফতার মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আযম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, আব্দুল হাই শিকদার, সাহেদা রফিক, বিজন কান্তি সরকার, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সালাম আজাদ, অধ্যক্ষ সেলিম ভুইয়া, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, জহির উদ্দিন স্বপন, ডা. রফিকুল ইসলাম, রিয়াজ উদ্দিন নসু, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল, মুনির হোসেন, চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার, তাঁতি দলের আবুল কালাম আজাদ, যুবদলের আব্দুল মোনায়েম মুন্না, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, ওলামা দলের মাওলানা শাহ নেছারুল হক, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান, চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার প্রমুখ। 

এছাড়াও অন্যদের মধ্যে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মিয়া গোলাম পরোয়ার, মাওলানা আব্দুল হালিম, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, ১২ দলীয় জোটের জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) আহসান হাবিব লিংকন, নওয়াব আলী আব্বাস খান, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাগপার (একাংশ) রাশেদ প্রধান, অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, বাংলাদেশ লেবার পার্টির লায়ন ফারুক রহমান, জমিয়তের মহিউদ্দিন ইকরাম, কল্যাণ পার্টির শামসুদ্দিন পারভেজ, বাংলাদেশ এলডিপির মো. ফরিদ উদ্দিন, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের গণদলের এটিএম গোলাম মওলা চৌধুরী, এনডিপির কারী আবু তাহের, এনপিপির মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, জাগপার (একাংশ) এস এম শাহাদাত, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের আবুল কালাম আজাদ, ডা. শামসুল আলম, এনডিএমের ববি হাজ্জাজ, এবি পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণঅধিকার পরিষদের একাংশের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব ফারুক হাসান, অপরাংশের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, ফাতিমা তাসনিম, হাসান আল মামুন, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান প্রমুখ।

এছাড়াও ইফতার মাহফিলে পেশাজীবী নেতাদের মধ্যে অধ্যাপক ডা. আব্দুল কুদ্দুস, অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, সাংবাদিক কামাল উদ্দিন সবুজ, কাদের গনি চৌধুরী, শহিদুল ইসলাম, খুরশিদ আলম, ড্যাবের ডা. আব্দুস সালাম, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের মো. জাকির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ইফতার পার্টি   বিএনপি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

বেগম জিয়াকে বিদেশ নিতে নতুন তৎপরতা

প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ২৮ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার জন্য নতুন করে তৎপরতা শুরু করেছে তার পরিবারের সদস্যরা। বিশেষ করে বেগম জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার ইতোমধ্যে বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার জন্য সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ শুরু করেছেন। বেগম জিয়া আর ভবিষ্যতে রাজনীতি করবেন না, রাজনীতি থেকে অবসর নেবেন এ রকম একটি বক্তব্য সামনে নিয়ে আসছেন শামীম ইস্কান্দার।

সরকারের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র বলছে, শামীম ইস্কান্দার সম্প্রতি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং এই সাক্ষাতে তিনি তার বোন বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়েছেন। সরকার যে সব শর্ত দেবে, যে কোন শর্তে বেগম জিয়া বিদেশ দিতে রাজি এমন বক্তব্য দেওয়া হয়েছে শামীম ইস্কান্দারের পক্ষ থেকে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, শামীম ইস্কান্দার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তির কাছে বলেছেন যে, বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির সব পদ থেকে ইস্তফা দিবেন। তিনি আর কখনও রাজনীতি করবেন না এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেবেন এবং চিকিৎসা শেষ করে দেশে চলে আসবেন। এই তিনটি বিষয়ে বেগম জিয়ার সম্মতি রয়েছে। এর বাইরেও যদি সরকার কোন শর্ত দেয় সেই শর্তটি পূরণ করতেও রাজি আছেন বেগম জিয়া- এমন বক্তব্য দিয়েছেন তার ছোট ভাই। 

উল্লেখ্য যে, এভারকেয়ার হাসপাতালে বেগম খালেদা জিয়া যখন মুমূর্ষু অবস্থায় পড়েছিল, সেই সময় যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস ইউনিভার্সিটি থেকে চিকিৎসক দল এসেছিল এবং সেই চিকিৎসক দল তার একটা ছোট অপারেশন করে তাকে কিছুটা সুস্থ করেছিল। সেই কারণেই বেগম খালেদা জিয়া সে সময় শঙ্কামুক্ত হয়েছিল। শামীম ইস্কান্দার এবং তার পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, সেটি ছিল একটি সাময়িক ব্যবস্থা এবং সেই সময় তারা বলেছিল যে, তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে আবার তাকে এই ধরনের চিকিৎসা দিতে হবে এবং এজন্য তাকে বিদেশ নেওয়ার প্রয়োজন। আর এ কারণেই শামীম ইস্কান্দার এখন বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার ব্যাপারে নতুন করে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। 

তবে বিভিন্ন সূত্র বলছে, শামীম ইস্কান্দার এখনকার উদ্যোগ নেওয়ার কারণ ভিন্ন। যেহেতু দেশে নির্বাচন হয়ে গেছে, নির্বাচনের আগে সরকারের একটি পৃথক অবস্থান ছিল। সরকার মনে করত যে, নির্বাচনের আগে বেগম খালেদা জিয়া বিদেশে গিয়ে একটি পরিস্থিতি তৈরি করবেন এবং বিদেশে গিয়ে প্রবাসী সরকার গঠন বা সরকারের বিরোধিতা করা বা আন্তর্জাতিক মহলে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এক ধরনের জনমত তৈরি করার ক্ষেত্রে কাজ করবেন। এজন্য সরকার বেগম জিয়াকে সে সময় বিদেশ যেতে দেয়নি। এখন যেহেতু নির্বাচন হয়ে গেছে এবং স্বস্তিদায়ক অবস্থায় রয়েছে সেজন্য এখন বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক তেমন কোন ঝুঁকি নেই। আর এ কারণেই শামীম ইস্কান্দার এখন নতুন করে তৎপরতা শুরু করেছেন। তবে বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন, শামীম ইস্কান্দারের এই তৎপরতা সম্পর্কে তাদের কোন ধারণা নেই। তারা এ ব্যাপারে কোন কিছু জানেনও না। তবে বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা আবার খারাপ হতে শুরু করেছে বিএনপির নেতারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

বেগম খালেদা জিয়া   শামীম ইস্কান্দার  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপির নেতাদের স্ত্রীরা ভারতীয় শাড়ি কেনেন না: রিজভী

প্রকাশ: ০৬:৩৫ পিএম, ২৮ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

বিএনপি নেতাদের স্ত্রীরা ভারতীয় শাড়ি কেনেন না বলে দাবি করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। আজ বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি এই দাবি করেন।

নিজের পুরনো স্মৃতি তুলে রিজভী বলেন, “আমার নানার বাড়ি হচ্ছে ইন্ডিয়া। বিয়ের পরে একবার গিয়েছিলাম। আমার ছোট মামা একটা শাড়ি দিয়েছিলেন। আমার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলাম যে ওই শাড়িটা কই? আমার মিসেস বললো, ‘কাঁথা সেলাই করতে কবে দিয়েছি সেটাও ছিঁড়ে গেছে।’ আমাদের দেশের মেয়েরা শাড়ি পুরনো হলে সেটা দিয়ে কাঁথা সেলাই করতে দেয়।

রিজভী বলেন, ‘এ দেশকে স্বনির্ভর হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। আমরা সেই প্রত্যয় সেই আদর্শ নিয়ে কাজ করছি। আমাদের নিজের বুনন করা যে ফসল সেটা আরো বেশি করে উৎপাদন করবো, আমাদের মিল-কারখানায় যে শাড়ি তৈরি হয় সেই শাড়ি আমাদের মেয়েরা পড়বে, আমাদের কল-কারখানায় যে লুঙ্গি তৈরি হয় সেই লুঙ্গি আমাদের দেশের ছেলেরা পরবে। কিন্তু আমরা অন্যের কাছে নতজানু হবো না, অন্যের কাছে দ্বারস্থ হব না। এই জাতীয়তাবাদী চিন্তা থেকে আমাদের কাজ করতে হবে।’

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ‘আমরা বিএনপি পরিবার সেল’-এর উদ্যোগে বিরোধী আন্দোলনে গুম-খুন-পঙ্গুত্বের শিকার পরিবারের সদস্যদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ঈদ উপহার প্রদান উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়। সেলের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমনের সভাপতিত্বে ও সদস্য নাজমুল হাসানের সঞ্চালনায় এই আলোচনাসভায় দলের কেন্দ্রীয় নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, রশিদুজ্জামান মিল্লাত, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, মীর হেলাল, যুবদলের আবদুল মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের ইয়াসিন আলী, ছাত্রদলের রাকিবুল ইসলাম রাকিব, নাছির উদ্দীন নাছির, গুম-খুন হওয়া পরিবারের মধ্যে চৌধুরী আলমের ভাই খুরশীদ আলম মিন্টু, সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন সানজীদা ইসলাম তুলি, নুরে আলমের স্ত্রী রিনা আলম, মাহবুবুর রহমান বাপ্পীর বোন ঝুমুর আক্তার, পারভেজ রেজার ছোট মেয়ে হৃদি প্রমুখ বক্তব্য দেন।

পরে গুম হওয়া পরিবারের সদস্যদের হাতে তারেক রহমানের ঈদ উপহার তুলে দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রুহুল কবির রিজভী   বিএনপি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

তৃণমূলে তছনছ আওয়ামী লীগ

প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৮ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

আওয়ামী লীগের তৃণমূল ক্রমশ ভেঙ্গে পড়ছে। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের তৃণমূল সংগঠিত করা এবং বিভেদ-বিভক্তির দূর করার জন্য যে ডাক দেওয়া হয়েছিল তারপর একটু পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছিল বলে বটে। কিন্তু এখন আবার উপজেলা নির্বাচনের প্রাক্কালে সারাদেশে তৃণমূল বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগের তৃণমূলকে সামাল দেওয়াই এখন কঠিন হয়ে পড়ছে। একদিকে নির্বাচন কেন্দ্রীক বিরোধ অন্যদিকে দলের চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে যাওয়া আর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তদারকির অভাবে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ এখন সবচেয়ে সঙ্কটের মুখে পড়েছেন বলেই মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারাই। 

আওয়ামী লীগের তৃণমূলের সঙ্কট শুরু হয়েছিল বহু আগে থেকেই। বিশেষ করে যখন আওয়ামী লীগের ভিতর হাইব্রিড এবং অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকে পড়ছিল এবং দলের তৃণমূল এবং পরীক্ষিত নেতাদেরকে বাদ দিয়ে তারা নিজেরাই বিভিন্ন পদ পদবী দখল করছিল, সেসময় আওয়ামী লীগে তৃণমূলে বিভক্তি শুরু হয়। এরপর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলে অনুপ্রবেশকারীদেরকে চিহ্নিত করা এবং বিএনপি-জামায়াত থেকে যারা এসেছেন তাদের বাদ দেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। এভাবে আওয়ামী লীগ একসময় দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। একটি হলো পুরনো আওয়ামী লীগ, যারা ত্যাগী, পরীক্ষিত এবং দুঃসময়ের সাথী। অন্যটি হলো সুবিধাবাদী, চাটুকার আওয়ামী লীগ, যারা ২০০৯ এর পরে বিভিন্ন দল থেকে নানা রকম সুযোগ সুবিধা পাওয়ার আশায় আওয়ামী লীগে যোগদান করেছিলেন। 

গত নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের এই বিভক্তি চূড়ান্ত রূপ লাভ করে। নির্বাচনের আগে আগে কৌশলগত কারণে আওয়ামী লীগ নির্বাচনকে উন্মুক্ত করে দেয়। নির্বাচনে যারা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি তাদেরকে স্বতন্ত্রভাবে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়। আর এটি আওয়ামী লীগের ভিতর একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতারাই তাদের পরিচয় ব্যবহার করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে যান। এবং ৫৮ টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ধরাশায়ী করেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এর ফলে সারা দেশে আওয়ামী লীগের ভিতর বিভেদ এবং অনৈক্য ছড়িয়ে পড়ে। 

আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচনের পরপরই এই বিভক্তি দূর করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি একাধিক বক্তৃতায় দলের নেতাকর্মীদেরকে নির্বাচনের বিভক্তি পাশ কাটিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকেও এ ব্যাপারে আহ্বান জানানো হয়। এর পর ডাকা হয় বর্ধিত সভা। বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করেন। কিন্তু তারপরও বিভক্তি কমে না। 

আওয়ামী লীগের বিভক্তি যেন আর ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করেছিল। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে তারা দলীয় প্রতীক ব্যবহার করবে না। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের ধারণা ছিল, এর ফলে উন্মুক্ত নির্বাচনে বিভক্তি কমবে। কিন্তু উন্মুক্ত নির্বাচনে বিভক্তি কমেনি, বিভক্তি আরও প্রবল আকার ধারণ করেছে। এখন আওয়ামী লীগের মধ্যে প্রতিটি উপজেলায় বিভক্তি শুধু প্রকাশ্য রূপই ধারণ করেনি, একটি সহিংস উত্তপ্ত অবস্থা সৃষ্টি করেছে। যেকোন সময় যেকোন উপজেলায় যদি আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের সহিংসতা ঘটে তাহলে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। 

আওয়ামী লীগের এই বিভক্তি মেটানোর জন্য, তৃণমূূলকে সংগঠিত করার জন্য সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারাও এখন দায়িত্ব গুটিয়ে নিয়েছেন। 

আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেছেন, এখন রোজার সময় এজন্য তারা সাংগঠনিক বিষয়ে মনোযোগ দিতে পারছেন না। কিন্তু ১৫২ টি উপজেলায় ইতোমধ্যে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। আর এই উপজেলাগুলোতে সঙ্কট-সহিংসতা ব্যাপক আকার ধারণ করছে। সামনের দিনগুলোতে এই সহিংসতা কাটাতে না পারলে তৃণমূল আওয়ামী লীগের জন্য সবচেয়ে বড় সর্বনাশের কারণ হতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।   


তৃণমূল আওয়ামী লীগ  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন