নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০২ পিএম, ১৫ অগাস্ট, ২০১৮
বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট নিয়ে গত কয়েকমাস ধরেই মার্কিন দূতাবাসের তৎপরতা লক্ষণীয়। সুশীল সমাজের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট। বৈঠক করেছে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের সুশীল সমাজের সঙ্গেও। মার্কিন দূতাবাসের বৈঠক হয়েছে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে। ওয়ান ইলেভেনের কুশীলবদের সঙ্গেও মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বৈঠক হয়েছে। আর গত কয়েক মাসের মধ্যে অনুষ্ঠিত পাঁচটি সিটি করপোরেশন নিয়েই বিরূপ মন্তব্য করেছে মার্কিন দূতাবাস। বিশেষ করে গাজিপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পরে এর নিরপেক্ষতা এবং সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। এমন তৎপরতার পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে মার্কিন দূতাবাসের টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছে। আর মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের কর্মকাণ্ডকে সমর্থন দিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের যে অবস্থান তা মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরেরই অবস্থান।
এই অবস্থায় আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে, সব দল বিশেষ করে বিএনপির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে উদ্যোগী হয়েছে মার্কিন দূতাবাস। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে একটি তৃতীয় শক্তির উত্থান নিয়েও উদ্যোগী যুক্তরাষ্ট্র। আর এই তৃতীয় শক্তির মধ্যে বিএনপির একটি অংশকে আনার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে বলে কূটনৈতিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগের সঙ্গে আছে যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ প্রায় সব পশ্চিমা দেশ। মার্কিন উদ্যোগকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে সমর্থন করছে তারা। কিন্তু গত এক দশক ধরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এখন বাংলাদেশের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে অনেক বেশি প্রভাব রাখে ভারত। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের ভূমিকা ছিল প্রকাশ্য ও স্পষ্ট। এবারের নির্বাচন নিয়েও পশ্চিমা বলয়ের বাইরে ভারত আলাদাভাবে ভূমিকা নিচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একাধিক বৈঠক হয়েছে। চলতি মাসের শেষ দিকে ৩১ আগস্ট নেপালে বিমসটেক সম্মেলনে দুই নেতার মধ্যে আরেকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে দলটির উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল ভারত সফর করেছে। বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দলও সম্প্রতি ভারত সফর করেছে। আর এরপরই ভারত নিয়ে বিএনপির নীতি ও অবস্থান পাল্টে যায়।
এই পটভূমিতে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে ভারতের উদ্যোগ এবং পশ্চিমাদের উদ্যোগের মধ্যে একটি সমন্বয়ের প্রচেষ্টা ছিল মার্কিন দূতাবাসের। মার্কিন দূতাবাস চেয়েছিল বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে ভারত ও পশ্চিমাদের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি। মার্কিন দূতাবাসের চাওয়া ছিল তিনটি। প্রথমত, নির্বাচন হবে অংশগ্রহণমূলক, সকল দল যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। দ্বিতীয়ত, নির্বাচন যেন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়। তৃতীয়ত, ক্ষমতাসীন দল যেন নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করতে না পারে। এসব বিষয়েই ভারতের সঙ্গে অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে যেতে চেয়েছিল মার্কিন দূতাবাস।
এ লক্ষ্যে আজ ভারতের ৭১তম স্বাধীনতা দিবসে সকালেই ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট ফোন করেন ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলাকে। বার্নিকাট ভারতীয় হাইকমিশনারকে মার্কিন দূতাবাসের তিনটি চাওয়া এবং ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেন অভিন্নভাবে কাজ করে সেই কথা বলেন। কিন্তু আশাহত হতে হয়েছে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে। ভারতীয় দূতাবাস থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, বাংলাদেশের নির্বাচন দেশটির অভ্যন্তরীণ একটি বিষয়। এই নির্বাচন বাংলাদেশের সংবিধান ও নির্বাচনের আইন-কানুন, বিধি-বিধান অনুযায়ী হওয়া উচিত। এই নির্বাচনে কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ গণতন্ত্রের জন্যে শোভন বা গৌরবময় কোনোটিই নয়।
ভারত মনে করে, বাংলাদেশ কীভাবে নির্বাচন করবে তা ঠিক করবে এদেশের জনগণ ও নির্বাচন কমিশন। ভারত এই ব্যাপারে শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের মনোভাব যাচাই-বাছাই করতে পারে। কিন্তু কাউকে চাপ দেওয়া বা নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করতে শর্ত জারির পক্ষে নয় ভারত। কারণ তা হবে কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের রাষ্ট্র হিসেবে ভারত কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার নীতি গ্রহণ করে আসছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভারতের এই অবস্থান আগামী নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে কিছুটা হলেও স্বাচ্ছন্দ্য দেবে। নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বার বার বলা হয়েছে, সংলাপের কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী। কোনো রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করানোর জন্য আলাদাভাবে বিশেষ কোনো সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবে না এবং এমন কোনো শর্তও মানা হবে না। আওয়ামী লীগের এই অবস্থানের সঙ্গে ভারতেরও অবস্থানের সামঞ্জস্য পাওয়া গেল ভারতের সাম্প্রতিক পদক্ষেপে।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক বর্তমান সরকারের আমলেই একটি নতুন মাত্রা পেয়েছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, ভারত সংলগ্ন সীমান্তে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তৎপরতা বন্ধে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আর এর ফলেই ভারতের অর্থনীতিতে নতুন করে গতির সঞ্চার হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এসব কারণেই বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের ওপর ভারতের আলাদা একটি সহানুভূতি আছে বলে মনে করা হয়। আর এই নির্বাচনে ভারত যদি মার্কিন নীতি ও শর্তগুলো মেনে না নেয় তাহলে নির্বাচনের ব্যাপারে সরকার একটি সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন বিএনপি তারেক জিয়া বহিষ্কার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
তারেক জিয়া বিএনপি ব্রিটিশ দূতাবাস সারা কুক
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগের তরফ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া
হয়েছে, মন্ত্রী ও দলীয় এমপির কোনো স্বজন উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দায়িত্বপ্রাপ্ত
নেতারা জরুরি ভিত্তিতে দলের সভাপতিমণ্ডলীর দুই প্রভাবশালী সদস্যের সঙ্গে কথা বলে স্বজনদের
নির্বাচন থেকে সরিয়ে নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন।
এদিকে, উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান
প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে দলের নির্দেশ কার্যকরে কয়েকজন মন্ত্রী, এমপি ও নেতার অনীহার কারণে
আওয়ামী লীগের ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের তৃণমূল নেতাদের পূর্বনির্ধারিত বৈঠক
স্থগিত হয়ে গেছে।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন,
‘স্বজন’ প্রশ্নে দলের সিদ্ধান্ত না মানলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও দলীয় এমপির বিরুদ্ধে
সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে কেড়ে নেওয়া হতে পারে তাদের দলীয় পদ-পদবি।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের মনোনয়নও অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে। সব মিলিয়ে
এ ইস্যুতে দলীয়ভাবে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। উপজেলা নির্বাচনে স্বজনকে
প্রার্থী করা নিয়ে দলের মন্ত্রী ও এমপিদের এরই মধ্যে কড়া ভাষায় সতর্ক করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) আওয়ামী
লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক
অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে জানিয়েছেন, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী ও দলীয় এমপির কোনো নিকটাত্মীয়
অংশ নিতে পারবেন না। এ বিষয়ে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয়
নির্দেশনা দিয়েছেন। ওবায়দুল কাদের মন্ত্রী ও দলীয় এমপির স্বজনকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে
আনার জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিতে দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদেরও তাগিদ দেন।
এরপর সংশ্লিষ্ট নেতারা বৈঠক থেকেই নিকটাত্মীয়দের
নির্বাচন থেকে সরিয়ে নিতে দলের সভাপতিমণ্ডলীর দুই সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক ও শাজাহান
খানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপির খালাতো ভাই হারুনার রশীদ টাঙ্গাইলের
ধনবাড়ীতে এবং শাজাহান খান এমপির ছেলে আসিবুর রহমান খান মাদারীপুর সদর উপজেলায় প্রার্থী
হয়েছেন।
এ ছাড়া নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল
করিম চৌধুরীর সঙ্গেও কথা বলেন কেন্দ্রীয় নেতারা। একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে আতাহার
ইশরাক সাবাব চৌধুরী সুবর্ণচরে প্রার্থী হয়েছেন।
এ ব্যাপারে নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল
করিম চৌধুরী বলেন, উপজেলা নির্বাচন থেকে তার ছেলেকে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে দলের সাধারণ
সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কথা বলেছেন। তিনি তাকে ঢাকায় ডেকেছেন।
তবে তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে
নৌকা প্রতীক পাওয়ার পরও প্রকাশ্যে তার বিরোধিতা করেছিলেন নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের
সভাপতি অধ্যক্ষ খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম। এ বিষয়টি কেন্দ্রে জানানো হলেও তিনি সুবিচার
পাননি। এ জন্যই তার ছেলে প্রার্থী হয়েছেন।
গতকাল দলের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে চার
বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, এস এম কামাল হোসেন এমপি,
মির্জা আজম এমপি, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন এবং দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া
উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বিভিন্ন উপজেলায় কয়েকজন মন্ত্রী ও দলীয় এমপির স্বজনকে প্রার্থী
করানোর বিষয় নিয়ে অল্পবিস্তর আলোচনা হয়। সেই সঙ্গে দলের নির্দেশ উপেক্ষা করে নিকটাত্মীয়দের
প্রার্থী করানোর বিষয় নিয়ে নেতারা বিস্ময় প্রকাশ করেন। বিভিন্ন উপজেলায় সাংগঠনিকভাবে
অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি নিয়েও বিরক্তি প্রকাশ করেন নেতারা।
বৈঠকে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে রংপুর,
চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগের তৃণমূল নেতাদের বৈঠকে সাংগঠনিক বিরোধ নিষ্পত্তির তাগিদ দেওয়া
হলেও কার্যত তা হয়নি। উল্টো উপজেলা নির্বাচন নিয়ে গৃহদাহ পরিস্থিতি আরও প্রকট হয়েছে।
তৃণমূল নেতাকর্মী দ্বন্দ্ব-বিবাদে জড়িয়ে পড়ছেন। এ জন্য কিছুটা হতাশা ব্যক্ত করেন কেন্দ্রীয়
নেতারা। ওই সময়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের
পূর্বনির্ধারিত সাংগঠনিক বৈঠক স্থগিত করার তথ্য জানান। সিলেট ও বরিশাল বিভাগের বৈঠকের
দিনক্ষণ এখনও নির্ধারণ হয়নি।
দলের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব
বড়ুয়া জানিয়েছেন, ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে কেন্দ্রীয়
কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক হওয়ার কথা। এ জন্য ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের বৈঠক
স্থগিত করা হয়েছে। আগামীকাল শনিবার রাজশাহী এবং ২২ এপ্রিল ময়মনসিংহ বিভাগের বৈঠক হওয়ার
কথা ছিল। ঢাকা বিভাগের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল দুই দিনে। প্রথম দিন ২৭ এপ্রিল এবং শেষ দিন
৪ মে।
এদিকে গতকালের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে অংশ
নেওয়া তিন সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপজেলা নির্বাচন থেকে
আত্মীয়স্বজনকে সরিয়ে নিতে মন্ত্রী ও দলের এমপিদের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর
নির্দেশের কথা তাদের জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক। এর পর থেকে তারা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী
ও এমপির সঙ্গে কথা বলছেন। যেসব উপজেলায় মন্ত্রী ও দলীয় এমপির স্বজন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
করছেন, কয়েক দিনের মধ্যেই তাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করে দলের সাধারণ সম্পাদকের কাছে
দেওয়া হবে।
আগামী ৮ মে অনুষ্ঠেয় প্রথম পর্বের ১৫০
উপজেলা নির্বাচনে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মন্ত্রী ও দলীয় এমপির আত্মীয়স্বজন চেয়ারম্যান পদে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ নিয়ে দলের ভেতরে নতুন করে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দানা বেঁধেছে।
নাটোরের সিংড়ায় চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে
প্রথমে মারধর ও পরে অপহরণের মতো ঘটনাও ঘটেছে। এ ঘটনায় সন্দেহ করা হচ্ছে ডাক, টেলিযোগাযোগ
ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক চেয়ারম্যান প্রার্থী লুৎফুল
হাবীব রুবেলকে।
এদিকে আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতা
জানিয়েছেন, এসব অপ্রত্যাশিত ঘটনায় খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের
নির্দেশ দিয়েছেন।
উল্লেখ্য যে, আগামী ২ মে সংসদের অধিবেশন
শুরু হবে। ওই অধিবেশন চলাকালে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠক থেকে উপজেলা নির্বাচন
নিয়ে এমপিদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে নেতারা জানিয়েছেন।
তারা বলেছেন, নির্বাচনী এলাকায় প্রভাব
বাড়াতে কয়েকজন মন্ত্রী ও দলের এমপি নিকটাত্মীয় ছাড়াও নিজস্ব লোক তৈরির জন্য পছন্দের
প্রার্থী নিয়ে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। তাই শুধু সন্তান, পরিবার কিংবা আত্মীয়স্বজন
নয়; মন্ত্রী এবং দলের এমপিদের প্রকাশ্যে বা গোপনে উপজেলা নির্বাচনে সম্পৃক্ত না হওয়ার
কড়া নির্দেশনা দেওয়া হবে।
তবে দলীয়ভাবে কঠোর নির্দেশনা থাকলেও
মন্ত্রী ও দলীয় এমপির অনেকে তা মানবেন না বলে আভাস মিলেছে। এরই মধ্যে অনেক উপজেলায়
মন্ত্রী ও দলের এমপির নিকটাত্মীয়রা প্রার্থী হয়েছেন।
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে লড়ছেন
মাজহারুল ইসলাম সুজন এমপির দুই চাচা মোহাম্মদ আলী ও সফিকুল ইসলাম
বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
করছেন সাহাদারা মান্নান এমপির ছেলে শাখাওয়াত হোসেন সজল। একই জেলায় সোনাতলায় এমপির ভাই
মিনহাদুজ্জামান লিটন
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় নির্বাচন করছেন
আলী আজগার টগর এমপির ভাই আলী মুনসুর
নরসিংদীর পলাশে লড়ছেন ডা. আনোয়ারুল
আশরাফ খান দিলীপ এমপির শ্যালক শরীফুল হক
মৌলভীবাজারের বড়লেখায় প্রার্থী হয়েছেন
শাহাব উদ্দিন এমপির ভাগনে সোয়েব আহমদ
নোয়াখালীর হাতিয়ায় লড়ছেন মোহাম্মদ আলী
এমপির স্ত্রী ও দুইবারের সাবেক এমপি আয়েশা ফেরদাউস ও ছেলে আশিক আলী।
টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে ড. আব্দুর রাজ্জাক
এমপির খালাতো ভাই হারুনার রশীদ
মাদারীপুর সদর উপজেলায় শাজাহান খান
এমপির ছেলে আসিবুর রহমান খান প্রার্থী হয়েছেন
এ ছাড়া ধাপে ধাপে অনুষ্ঠেয় উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে অনেক মন্ত্রী-এমপির নিকটাত্মীয় প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগে উত্তরাধিকারের রাজনীতি নতুন নয়। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা এবং মন্ত্রীরা উত্তরাধিকার সূত্রেই রাজনীতিতে এসেছেন। বর্তমান মন্ত্রিসভায় একাধিক সদস্য রয়েছেন যারা রাজনীতিতে এসেছেন পারিবারিক ঐতিহ্য থেকে, পিতার হাত ধরে, অথবা তাদের নিকট আত্মীয়দের উৎসাহ উদ্দীপনায়। বর্তমান মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য আছেন, যাদের বাবারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন সেই সূত্রে তারা রাজনীতিবিদ।
আওয়ামী লীগ দলগতভাবে উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট এবং কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন উপজেলায় মন্ত্রী, এমপি বা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ভাই ব্রাদার বা স্বজনদেরকে প্রার্থী করা যাবে না। যারা ইতিমধ্যে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল ঢাকাস্থ ব্রিটিশ দূতাবাসে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন বিএনপির শীর্ষস্থানীয় তিন নেতা। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদকে দাওয়াত দেয়া হয়েছিল ব্রিটিশ দূতাবাসে। সেখানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারা কুক এক ঘণ্টার বেশি সময় তাদের সাথে বৈঠক করেন। এসময় ব্রিটিশ দূতাবাসে অন্যান্য রাজনৈতিক কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগের তরফ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, মন্ত্রী ও দলীয় এমপির কোনো স্বজন উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জরুরি ভিত্তিতে দলের সভাপতিমণ্ডলীর দুই প্রভাবশালী সদস্যের সঙ্গে কথা বলে স্বজনদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। এদিকে, উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে দলের নির্দেশ কার্যকরে কয়েকজন মন্ত্রী, এমপি ও নেতার অনীহার কারণে আওয়ামী লীগের ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের তৃণমূল নেতাদের পূর্বনির্ধারিত বৈঠক স্থগিত হয়ে গেছে।