নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:৫৯ পিএম, ১৬ অগাস্ট, ২০১৮
স্বাধীনতার মাত্র চার বছর পরই বাংলাদেশের স্বাধীনতার অবিসংবাদিত নায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একদল সেনাসদস্যের হাতে নিহত হন। এই হত্যাকাণ্ডের জন্য কর্নেল ফারুক, কর্নেল রশিদ, মেজর জিয়া, মোশতাকসহ কয়েকজনকে দায়ী করা হয় এবং বাংলাদেশের মাটিতে তাঁদের নাম উচ্চারণ করা হয় ঘৃণা সহকারে। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু হত্যার দায়ে ১২ জনকে মৃত্যুদণ্ডও দিয়েছে আদালত। কিন্তু জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের আগে-পরে অনেক লোকের ভূমিকা ছিল রহস্যময়, যা এখন পর্যন্ত উন্মোচিত হয়নি। এমনকি বঙ্গবন্ধু হত্যায় এদের সংশ্লিষ্টতা বা হত্যাকাণ্ডের পর এদের ভূমিকা নিয়ে সাধারণত কথাও বলা হয় না। কিন্তু পরবর্তীতে এই ব্যক্তিদের কার্যক্রমে বোঝা গেছে ’৭৫ এ তাঁদের ভূমিকা ছিল বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পক্ষে।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে যারা রহস্যময় ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ড. কামাল হোসেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সময় ড. কামাল হোসেন লণ্ডনে ছিলেন। বঙ্গবন্ধু পরিবারের জীবিত দুই সদস্য বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা তখন বেলজিয়াম থেকে জার্মানি গেছেন। এক পর্যায়ে ড. কামাল হোসেন জার্মানিতে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন। সে সময় শেখ রেহানা ড. কামালকে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে ক্যাম্পেইন করার অনুরোধ করেন, অনুরোধ করেন বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য। কিন্তু বঙ্গবন্ধু পরিবারের সেই দুঃসময়ে কামাল হোসেন কোনো কিছু করেননি। সাহায্য করেননি সদ্য পরিবার হারিয়ে শোকে দিশেহারা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ত্বরান্বিত করতে কোনো ভূমিকাই রাখেননি তিনি।
মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক ছিলেন জেনারেল এম. এ. জি. ওসমানী। এক সময়কার মুক্তিযোদ্ধা ওসমানী বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পরে খুনিদেরকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর মেজর ডালিম যখন ভোরে রেডিও স্টেশন থেকে বঙ্গবন্ধুর হত্যা সংবাদ প্রচার করছিলেন সে সময় সেখানে জেনারেল জিয়া ও কর্নেল (অব.) তাহের ছাড়াও জেনারেল (অব.) আতাউল গণি ওসমানী উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে মোশতাকের সঙ্গেও তাঁর সম্পর্কের কথা জানা যায় যায়। মোশতাকের ডিফেন্স অ্যাডভাইজার হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। এরপর ওসমানীর তত্ত্বাবধানেই পাকিস্তান প্রত্যাগত সেনা কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে বসানো শুরু হয়।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সময় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ। ইত্তেফাকের বিখ্যাত সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার পুত্র তিনি। সংবিধান সংস্কার করে যখন বাকশাল প্রতিষ্ঠা হয় তখন মইনুল হোসেন আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর ইত্তেফাক পত্রিকায় লেখা হয়েছিল – ‘প্রত্যুষে বেতারে এই ঘোষণা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জনগণ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলিয়া একটি আকাঙ্ক্ষিত সূর্যরাঙ্গা প্রভাত দেখিতে পায়।‘ সে সময় ইত্তেফাকের কর্ণধার ছিলেন এই মইনুল হোসেন।
অথচ ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুই মইনুল হাসানকে আওয়ামী লীগের টিকেটে নির্বাচিত করেছিলেন। তাঁর পিতা মানিক মিয়াও ছিলেন বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর এসব উপকারের কথা মনে রাখেননি মইনুল। ‘৭৫ এর ১৫ আগস্টের পরে খন্দকার মোশতাকের দলে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।
এই কয়েকজন ছাড়াও বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ণ্ড প্রশ্নে আরও অনেকের ভূমিকা রহস্যজনক। একসময় যারা বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন, ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর, তাঁরা অনেকেই বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ঘোরতর বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ বিরোধী হয়ে যান। আর এদের মধ্যে যারা জীবিত আছেন তাঁরাই এখন আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছেন। যেমন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের কথাই ধরা যাক। ২০০৭ সালে ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিনের অগণতান্ত্রিক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। সে সময় বঙ্গবন্ধু কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এছাড়া বলা যায় ড. কামাল হোসেনের কথা। বর্তমানে রাজনৈতিক দল গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন আওয়ামী লীগ বিরোধী বক্তব্যের জন্য খ্যাত। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ড. কামাল হোসেন বাংলাদেশের অন্যতম সমালোচক।
এই মুহূর্তে বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিরা বিভিন্ন দেশে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন বলে গোয়েন্দা সংস্থা কাছে তথ্য আছে। কিন্তু শুধু প্রত্যক্ষ খুনিরাই যে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়েছেন তা নয়, ’৭৫কে ঘিরে যাদের ভুমিকা রহস্যময় ছিল তাঁদের কর্মকাণ্ডেও দেশবিরোধী সুর পরিলক্ষিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে এই রহস্য মানবদের ভূমিকা কী ছিল তা এখনো উন্মোচিত হয়নি। এই কারণে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মহল থেকে বিভিন্ন সময়ে একটি নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করার মাধ্যমে ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের পূর্বাপর কার কী ভূমিকা ছিল তা খুঁজে বের করার দাবি উঠেছে।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গতকাল বুধবার টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানাও বলেছেন এই বিষয়ে একটি পুর্ণাঙ্গ কমিশন হওয়া উচিত। এতে করে ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের পরে কার কী ভুমিকা ছিল তা পরিস্কার হয়ে যাবে।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি
মন্তব্য করুন
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে বিরত
থাকা বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন, সিপিবিসহ ১৪টি নিবন্ধিত দল উপজেলা নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে
না। দেশের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থানে তেমন কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। আর সংসদ
নির্বাচনে ভোটের মাঠে থাকা বেশিরভাগ দলই থাকছে উপজেলায়। এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে
অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকলেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ তা ব্যবহার করছে না। তাদের পথেই হাঁটছে
১৪ দলীয় জোটের শরিক গণতন্ত্রী পার্টি।
তবে দলীয় প্রতীকেই উপজেলা নির্বাচনে
প্রার্থী দিতে চায় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ ১১টি নিবন্ধিত দল। আর দলীয়ভাবে
প্রার্থী দেওয়া হবে কি না—তপশিল ঘোষণার পরও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি পাঁচটি রাজনৈতিক
দল। অবশ্য আওয়ামী লীগ প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দেওয়ায় এবারের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীর
সংখ্যা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তাদের মতে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের
মতো এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে লড়াই হবে মূলত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে।
দেশে মোট উপজেলা ৪৯৫টি। আগামী ৮ মে
প্রথম ধাপে ১৫২টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইসি ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী, প্রথম
ধাপের উপজেলা নির্বাচনের জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে
১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১৭ এপ্রিল ও প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল।
এরপর আগামী ২৩ মে দ্বিতীয়, ২৯ মে তৃতীয় ও ৫ জুন শেষ ধাপের ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
উপজেলা নির্বাচনে কার স্বাক্ষরে প্রার্থী
নির্ধারিত হবে, তা বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) মধ্যে লিখিতভাবে জানাতে ইতোমধ্যে রাজনৈতিক
দলগুলোকে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ইসি সূত্র জানায়, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন
সামনে রেখে নির্বাচন ও আচরণ বিধিমালায় ব্যাপক সংশোধন আনা হয়েছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণের
জন্য দলীয় ও স্বতন্ত্র দুই ধরনের সুযোগই রাখা হয়েছে। তবে এ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি
বাড়াতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ছাড় দিয়ে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। নির্বাচনে যাতে
অধিকসংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী অংশ নিতে পারেন, সেজন্য প্রার্থীর মনোনয়নপত্রের সঙ্গে
২৫০ ভোটারের সমর্থন সূচক স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা সংযুক্তির বিষয়টি বাতিল করা হয়েছে। এ
ছাড়া নির্বাচনী পোস্টার, নির্বাচনী প্রচারণা এবং প্রার্থীদের জামানতসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ
বিষয়ে বড় ধরনের সংশোধন আনা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণে নিবন্ধিত
৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে বিএনপিসহ ১০টি দল। দলীয় প্রতীকে
অংশ নেবে ১১টি দল। প্রতীক ছাড়া অংশ নেওয়ার পক্ষে দুটি। এখনো নির্বাচনে অংশ গ্রহণ বিষয়ে
সিদ্ধান্তহীনতায় পাঁচটি রাজনৈতিক দল। সব মিলিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পথেই নিবন্ধিত
বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল। তারা ইতোমধ্যে উপজেলাসহ স্থানীয় সরকারের সব পর্যায়ের নির্বাচনে
অংশ নিতে প্রার্থীও ঠিক করতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, বিএনপির নেতৃত্বাধীন যুগপৎ
আন্দোলনে থাকা দলগুলোর মধ্যে ছয়টি নিবন্ধিত। এসব দলের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, তারা
উপজেলা নির্বাচনও বর্জন করবেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলে আটটি নিবন্ধিত
দল। একটি ছাড়া সবগুলোই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক। এ ছাড়া সংসদের প্রধান
বিরোধী দল জাতীয় পার্টি দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়েছে।
জাপার দপ্তর সম্পাদক রাজ্জাক খান জানিয়েছেন,
দলীয় প্রতীকে তারা স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে দুই সিটিতেও
তারা প্রার্থী দিয়েছেন। রংপুর সদর উপজেলা পরিষদে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে বলেও জানান
তিনি।
জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে
অংশ নেওয়া নিবন্ধিত দলগুলোর বেশিরভাগই উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। আবার সিদ্ধান্তহীনতায়
রয়েছে কোনো কোনো দল।
এর আগে ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে
অংশ না নিলেও বিএনপি পরে উপজেলার ভোটে অংশ নিয়েছিল। যদিও তখন পর্যন্ত স্থানীয় সংসদ
নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেওয়ার বিধান চালু হয়নি। পরে ২০১৯ সালে উপজেলায় দলীয় প্রতীকে
নির্বাচন হলেও বিএনপি সেখানে প্রার্থী দেয়নি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জন করার পর এবার
স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও অংশ না নেওয়ার দলীয় সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে রেখেছেন তারা।
তবে নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক
তৃণমূল বিএনপি। দলটির চেয়ারপারসন শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, ‘দল হিসেবে উপজেলা নির্বাচনে
অংশ নেওয়ার একটা মনোভাব আছে। যারা অংশ নিতে চায় তাদের আমরা উৎসাহিত করছি। তবে দলীয়ভাবে
এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মহাসচিব দেশের বাইরে রয়েছেন। ঈদের পর দেশে ফিরলে তখন চূড়ান্ত
সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে এখনো কোনো
সিদ্ধান্ত নেয়নি আরেক নতুন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম)।
এ তথ্য জানিয়ে দলটির মহাসচিব ড. মো.
শাহজাহান বলেন, ‘আসন্ন উপজেলা নির্বাচনও বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো হলে, সেখানে
অংশ নেওয়ার কোনো অর্থ হয় না। তবে আমরা এখন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। শিগগির এ ব্যাপারে
দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে
যাওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হলে দলীয় প্রতীকে, নাকি প্রতীক ছাড়া যাব, তখন সে
সিদ্ধান্তও হবে।’
কল্যাণ পার্টিও নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে
ইতিবাচক বলে জানা গেছে। জানতে চাইলে দলটির চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম
বলেন, ‘কল্যাণ পার্টি নির্বাচনমুখী দল। শিগগির উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত
নেওয়া হবে।’
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে
গেলে দলীয় হাতঘড়ি প্রতীকে ভোট করবেন তাদের প্রার্থীরা।’
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (কাঁঠাল প্রতীক)
মহাসচিব জাফর আহমেদ জয় বলেন, ‘তারা দলীয় প্রতীকে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন।’
তবে চেয়ারম্যান পদে ১ লাখ টাকা জামানত
নির্ধারণ সঠিক হয়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনে আগে জামানত ছিল ১০ হাজার
টাকা। তাই জামানতের টাকা আগের অবস্থায় নেওয়ার জন্য শিগগির রিট করা হবে।’
ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান
শেখ ছালাউদ্দিন ছালু বলেন, তারা আনুষ্ঠানিকভাবে উপজেলা নির্বাচনে যাবেন না। তবে দলের
কোনো প্রার্থী চাইলে তিনি নির্বাচন করতে পারবেন, কোনো বাধা থাকবে না।’
দলীয় ‘একতারা’ প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ
করবে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)। অন্যদিকে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) নির্বাচনের
বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
এদিকে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণের
ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বাংলাদেশ কংগ্রেস। ডাব প্রতীকের দলটির চেয়ারম্যান কাজী
রেজাউল হোসেন কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত
জানাব।’
তবে ১৪ দলের শরিক সাম্যবাদী দলের সাধারণ
সম্পাদক দীলিপ বড়ুয়া জানিয়েছেন, তিনি এ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেননি।
দলীয় প্রতীক ছাড়া অংশ নেবে গণতন্ত্রী
পার্টি। দলটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. শহীদুল্লাহ সিকদার বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন
দলীয় প্রতীক ছাড়াই হওয়া উচিত।’
ওয়ার্কার্স পার্টি উপজেলা নির্বাচন
করবে দলীয় হাতুড়ি প্রতীক নিয়ে। একই অবস্থানে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলও (জাসদ)।
নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত
নিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবিসহ পাঁচ দলের সমন্বয়ে গঠিত বাম গণতান্ত্রিক
জোট। জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘পরিবেশ না থাকায় আমরা উপজেলা
নির্বাচনেও অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত
নিয়েছে ড. কামাল হোসেনের দল গণফোরাম। দলটির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা
নির্বাচনে যাচ্ছি না।’
দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে যেতে চায় কৃষক
শ্রমিক জনতা লীগ। একই পথে হাঁটছে তরীকত ফেডারেশন। দলটির চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর
মাইজভান্ডারী বলেন, ‘আমাদের কেউ নির্বাচনে আগ্রহী হলে সুযোগ দেওয়া হবে।’
উপজেলা নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর
এমন অবস্থানের বিষয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী নূরুল আমিন ব্যাপারী বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করছি
সংসদ নির্বাচনে যেভাবে দলগুলোর অবস্থান ছিল উপজেলা নির্বাচনেও সে রকমই আছে। অর্থাৎ
যারা সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল তারা এবারের নির্বাচনেও শরিক হচ্ছে। তবে নির্দলীয়
নির্বাচন করতে আওয়ামী লীগ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এতে হয়তো প্রার্থী কিছুটা বাড়তে পারে।
বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো থেকে অনেকেই স্বতন্ত্র হয়ে অংশ নিতে পারেন।’
নির্বাচন কমিশন ইসি বিএনপি আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
বিএনপি মেজর হাফিজ উদ্দিন কর্নেল অলি আহমেদ মাহমুদুর রহমান মান্না
মন্তব্য করুন
১৪ দল আওয়ামী লীগ ভারতীয় পণ্য বর্জন
মন্তব্য করুন
সরকার বিরোধী জিএম কাদের জাতীয় পার্টি
মন্তব্য করুন
বিএনপি ভারত বিরোধী ভারতীয় পণ্য বর্জন
মন্তব্য করুন
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে বিরত থাকা বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন, সিপিবিসহ ১৪টি নিবন্ধিত দল উপজেলা নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে না। দেশের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থানে তেমন কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। আর সংসদ নির্বাচনে ভোটের মাঠে থাকা বেশিরভাগ দলই থাকছে উপজেলায়। এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকলেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ তা ব্যবহার করছে না। তাদের পথেই হাঁটছে ১৪ দলীয় জোটের শরিক গণতন্ত্রী পার্টি।
বিএনপি এখন দলে এবং তাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করছে এমন অনেক নেতাকেই বিশ্বাস করে না। বিএনপির নীতিনির্ধারকদের কাছে এ রকম তথ্য উপাত্ত আছে যে, তারা আসলে সরকারের সঙ্গে গোপনে আঁতাত করেছে এবং বিএনপির সঙ্গে থেকে আন্দোলনকে দুর্বল করেছে বা বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এই সমস্ত নেতাদের কেউ কেউ বিএনপির দলের আবার কেউ কেউ দলের বাইরে।
বিএনপির ভারত বিরোধী কর্মসূচির পাল্টা হিসেবে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪ দলকে আবার নতুন করে সাজানো এবং সক্রিয় করার জন্য দলটির সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। আগামী ঈদের পরপরই ১৪ দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাবে এবং দলটির ভিতর যে মান অভিমান, ক্ষোভ, হতাশা ইত্যাদি দূর করে দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে কাজ শুরু করা হবে বলে একাধিক সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে নিশ্চিত করেছে।
জিএম কাদের এখন ঘরে বাইরে প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে তার দলের ভরাডুবি হয়েছে। গত নির্বাচনের চেয়ে তিনি উল্লেখযোগ্য কম আসন পেয়েছেন। দলের ভিতরে তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জাতীয় পার্টি একটা বড় ধরণের ভাঙনের মুখে পড়েছে। রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির একটি বড় অংশ আলাদা জাতীয় পার্টি গঠন করছে। এত কিছুর পর দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা জিএম কাদের এখন একটা বড় সমস্যা। কিন্তু তারপরও জিএম কাদের তাদের সরকার বিরোধিতাকে আঁকড়ে ধরে থাকতে চাইছেন।
মুখে ভারত বন্দনা আর ভিতরে ভিতরে ভারত বিরোধিতাকে উস্কে দেওয়া- বিএনপির এই পুরনো কৌশল আবার নতুন করে চালু করতে যাচ্ছে। ভারতকে চাপে রাখার কৌশল গ্রহণ করেছে দীর্ঘ ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি। বিএনপি গতকাল তাদের দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক করেছে। এই বৈঠকে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে এবং এই আলোচনা থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে, তা হল বিএনপি এখন ভারতকে চাপে রাখতে চায়।